আজকের পাঠক ও বই বিলাস
আমার বইয়ের গন্ধটা শুঁকতে ভারি ভাল লাগে, আনকোরা নতুন বইয়ে কত রকমের আলাদা আলাদা গন্ধ।শুকে দেখবেন কখনো, আঠার গন্ধ, কাগজের গন্ধ, ছাপার কালির গন্ধ, কাঠ মলাটের গন্ধ, মলাটের রঙিন রঙের গন্ধ, বইপোকা তারানোর কীটনাশকের গন্ধ সহ আরো কত্তো রকমের নিজশ্ব গন্ধে ভরপুর। পুরাতন হলেও কত মানুষের হাতের স্পর্শের গন্ধ। বড় পাগল করা সেই গন্ধ। যে বই শতছিন্ন, মানে সে বই বহু পাঠকের মগজে মননে স্থান পেয়েছে, সুতরাং সেই বইয়ের গন্ধ আমি প্রানপনে নিই, যে কোন সুগন্ধি ফুলের গন্ধের থেকে এমন বইয়ের গন্ধ আমার কাছে ভীষণ মন্ত্রমুগ্ধকর। এরপর যদি ওই বইয়ের লেখা যদি মনে ধরে গেল, তখন সব গন্ধ ছাপিয়ে সাহিত্যের গন্ধেই অনেকবার ওই বই বারবার খুলতে ইচ্ছা করে, হৃদয়ের কৌটোতে ভরে রেখেদিই চিরদিনের তরে।
আজকাল বই উপহার দেবার চল অনেকটাই কমেগেছে। ছোটবেলায় জন্মদিন, কুইজ প্রতিযোগিতা সহ বিভিন্ন ছুতোতে বইই উপহার দেওয়া হত। এখন অবশ্য মেকি উচ্চসামাজিকতা আর বিপণন সর্বস্ব যুগের প্রভাবে ক্যাডবেরি, সফট টয়, কিন্ডারজয়ের যুগ। এতেকরে শিশুদের তাৎক্ষনিক আনন্দ প্রদান করা যায় ঠিকিই, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি জ্ঞানমূলক কোন ভাল হয় কি? সুঅভ্যাসের জন্য শিশুকালের থেকে বড় ভাল সময় আর কিইবা আছে। আমাদের গুরুজনেরা আমাদের শিশুকালে রামায়ন মহাভারত, জাতকের গল্প, ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী, নন্টেফন্টে, মহাপুরুষদের জীবনি সহ কত্তো দারুন দারুন বই উপহার দিতেন। কিন্তু আমরা কি আমাদের আগামী প্রজন্মকে সেরকম কিছু দিয়েছি? আসলে আমাদের অধিকাংশের নিজেদেরই তো পড়ার অভ্যাস নেই, তাহলে শিশুদের কিভাবে উৎসাহিত করব? ওরা কেন পড়াশোনাটাকে একটা দুর্বোধ্য কিছু ভাবনে না? কারন পাঠ্যপুস্তক তো সমস্ত পৃথিবিতেই প্রায় রসকষহীন। সেই পাঠ্যপুস্তকের বাইরে তাদের জন্য লোভনীয় পড়ার বই তো আমাদেরই যোগান দিতে হবে তাদের। আমাদের না পড়ার রোগটাই আগামী প্রজন্মের কাছে কিন্তু মহামারি রূপে ফেরত আসবে।
ছোট বেলায় মা ঠাকুমারা বলতেন আজ সিনেমা হলে অমুক বই এসেছে, টিভিতে তমুক বই দেবে ইত্যাদি। মানে তখন সিনেমাতেও একটা একটা বই থাকত, গল্প থাকত, মৌলিকতা থাকত। আর সেগুলো সেই দর্শক মনের স্মৃতিকোঠায় আজীবন রয়ে যেত। সিনেমা নাটক যাত্রা অবশ্যই আজকের ভাষায় এন্টারটেনমেন্ট, কিন্তু সেটা অবশ্যই একটা কাহিনী নির্ভর হওয়া উচিৎ। আজকের প্রজন্ম আর সিনেমাকে বই বলে না, মুভি বলে। ঠিকিই তো একটা নতুন মুভি এলেই পুরাতনটা মন থেকে মুভ হয়ে মানে সরে যায়, তারপর মুছে যায়। প্রতিটি বইয়ের ভিতরে তো একটা করে কাহিনী থাকে, আজকালকার প্রায় সব সিনেমায় ওই কাহিনী টা ছাড়া সবকিছু থাকে, তাই ওটার আর বই হওয়া হয়না। সিনেমাকে বই বানাতে হলে শুধু শিক্ষিত হলে হবেনা, পাঠক হতে হবে, পড়তে হবে, প্রচুর প্রচুর পড়তে হবে। তবে না মনের ভিতর একটা গোটা লাইব্রেরি তৈরি হবে। আর তারপরে সেই এক মস্তিষ্ক লাইব্রেরি সমৃদ্ধ পরিচালক সিনেমা বানাবেন, তখন শুধু সেটা এন্টারটেনমেন্ট না হয়ে আবার একটা বই হবে।
আমাদের কিশোর বেলাতেও উৎসবের মরসুমগুলোতে একটা উন্মাদনা থাকত। পত্রিকার উন্মাদনা। কত লিটিলম্যাগ ছাপা হত পাড়ায় পাড়ায়। তাতে বড়রা কবিতা প্রবন্ধ ছাপাতেন, তাদের ভিতরেও একটা উন্মাদনা থাকত। একটু বড় আকারের পত্রিকা গুলোতে নামী লেখকদের পাশাপাশি কত অনামি লেখকদের লেখা পাঠক হৃদয় হরন করত। আজকাল সে সবই সুখস্মৃতি। কার্টুন নেটওয়ার্ক, এংরিবার্ড বা ক্যান্ডিক্রাশ, বা আরেকটু সাহসি দের কাছে অবাধ সহজলভ্য পর্ণের পাঁকে আটকা পরা আজকের কৈশর কি জানে, যে লিটিলম্যাগ কি? পূজো সংখ্যা পত্রিকা কি? সুতরাং ছাপানো পত্র পত্রিকার সংখ্যা স্বভাবতই খুব কমে গেছে, মুষ্টিমেয় কর্ম পাগল মানুষ সেই সভ্যতাকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আগামীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে। অনেকাংশেই নিজের পকেটের পয়সা ধ্বংসে। যারা হয়ত সারাজীবনে নিজের জমাখরচের খাতা ছাড়া, কোনদিনিই কোথায় এক কলমও লিখতেননা, বা সুযোগও পেতেননা, এই বর্তমান বৈদ্যুতিন সভ্যতার বিকাশের ফলে তাদের সামনে সেই জগৎ টা খুলে দিয়েছে। আজকের দিনে ভাললেখার পাঠক খুবই কম। কারন বেশিরভাগ জনই দুলাইনের চুটকি বা মস্করার ঝোঁক বেশি, অথবা বাকিরা লেখক। তারা অন্যের লেখা পড়েনও না, মন্তব্য করা তো দুরস্থান। তাহলে পাঠক কই?
আজকের যুগে যদি কেও ভাবেন লেখালেখিকে পেশা করবেন তাহলে তিনি মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। আরে বাবা সবাই কি আর জেকে রাউলিং বা চেতন ভকত হতে পারেন! নিদেনপক্ষে একটা শ্রীজাত! সেটাও সম্ভব নয় যে লেখার জন্য চাকুরি বা পেশা ছেরে দেবেন। আগেকার দিনে বই বিক্রির একটা অংশ লেখকেরা পেতেন, ভাল লেখকের বই বিক্রি বেশি, সুতরাং দিন চলে যেত। আজকাল তো বইই কেনেননা কেও তাহলে প্রকাশক লেখককে টাকা দেবে কি করে ? সুতরাং অন্য পেশা না থাকলে লেখক হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া অসম্ভব।পেটচালানোর জন্য নিদেনপক্ষে রেলস্টেশনে মাদুলিও বিক্রি করতে হতে পারে।আর বাকি সকল পেশাই তো আগামীর চেষ্টার জন্য পরে রইল। তবে ওই মাদুলি বিক্রির পরে কবি বা সাহাত্যিক মন কতটা অবশিষ্ট থাকবে সেটা বলাই বাহুল্য। তবে তার পরেও অনেকেই সাফল্য লাভ করেন, তাই তো তাঁরা বুদ্ধিজীবি হিসাবে গন্য হন। ,
সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনি যখন বইয়ের ছবি আপলোড দেবেন। দেখবেন কত পাঠক, কত বন্ধু বলবে আমারও আছে, কেও বলবে-- ইশ, আমার যদি থাকতো। অনেক বুক রিডার গ্রুপে দেখি, লাইব্রেরীর ছবি
দিলেই লোকজন আহ-উহ করে বলে উঠে, আহা আমি
যদি যেতে পারতাম তোমাদের ওই খানে। কিন্তু যায় কজন মানুষ? আর পড়েই বা কই? সামান্য ফেসবুকেই একটা সামান্য লম্বা পোষ্ট হলে সেটাকে দায়িত্ব নিয়ে সবার আগে এড়িয়ে গিয়ে অন্যস্থানে আড্ডা বা চুটুল জোকস খোঁজে। লেখক যদি পড়াবার জন্য ট্যাগ জোড়েন এবং সেই ভুলক্রমে ওই যদিপোষ্টে লাইক পরে গেল, তাহলে পরে পড়তে হবার ভয়ে নোটিফিকেসন অফ করে দেয় সেই পোষ্টের। ইনারা আসলে পাঠক নামের জোচ্চোর। চায়ের
দোকান হাটে মাঠে ঘাটে অনেকের সাথেই তো আমাদের সামাজিকতা করতে হয় রোজ, হাতে বই দেখলেই
প্রশ্ন। 'এখনো এই সব পড়িস? আর পড়ে কি হবে? ব্যাবসা ভাল চলছেনা নাকি? বাড়িতে ঝগড়া? তীক্ষ্ণ আর চটুল সব প্রশ্নবানে জর্জরিত। ভাবখানা এমন যে, জেনে জেনে জানোয়ার হবার মানে
কি?' আরে সত্যজিৎ রায় তো হীরক রাজার দেশেতে বলেই দিয়েছেন মর্মকথা, জানার কোনো শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই। পড়াশোনা করে যে, অনাহারে মরে সে।
সিনেমাতে তো পলাতক
শিক্ষকও ছিল তার কথা কেউ মনে রাখে নি। মনে রেখেছে একজন একনায়ক রাজার কথা। আর সেই রাজার অন্তিম পরিনতির কথাও বেমালুম ভুলে মেরেছে।আর সেই শিক্ষকের জয়ের কথাটাও।তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায়, ভাবের ঘড়ে চুরি কেন? আমার বন্ধুদের মধ্যে আরেকটা বহুল প্রচলিত বুলি, আগে খুব পড়তাম,
রবীন্দ্র-সমরেশ- সুনীল- শ্রীজাত। এখন আর পড়ি না, পড়ার অভ্যাস ও গেছে। সময়
না পেলে ভিন্ন কথা। কিন্তু আগে পড়ার অভ্যাস ছিল এখন নাই, এ কি কথা? আরে প্রেম কি দুম করে পালানোর বস্তু নাকি? বিশেষ করে বইয়ের প্রতি প্রেম হল বাল্যপ্রেম ও উভমুখী, যে প্রেম কিছু না কিছু দেবেই। সুতরাং সেই প্রেম কে ভুলে যাওয়া?? তার মানে হলো সেই
মানুষ কোনোকালেই ভালোবেসে পড়তো না বা পড়ার প্রেমে পড়েনি। আমরা চিরকালই পড়ুয়া জাতি হিসাবে সমাদর লাভ করেছি। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মে আমাদের
পাঠভ্যাসও নির্জলা পাঠ্যপুস্তক কেন্দ্রিক। আমরা তো বয়ঃসন্ধিতে বা স্কুল জীবনের শেষের দিকে বটতলার চটি বইও গোগ্রাসে গিলতাম। যদিও ব্যাপারটা নির্লজ্জ কিন্তু সত্যিই আমরা পাঠক ছিলাম। এখনও মানুষ বই পড়েন, পাঠক কমেনি কমছে শুধু
মার্গশ্রেনির পাঠকের সংখ্যা, কিন্তু জনসংখ্যা বেশ কয়েক কোটি বেড়েছে ।
মনে হতে পারে আমি নিজের ঢোলই পেটাচ্ছি। আসলে ভার্চুয়াল দুনিয়াই এতো বন্ধুর মাঝেও যখন কয়েকদিন পোষ্ট না করলে, কয়েকজন হাতেগোনা বন্ধু খোঁজ নেন, কিছু হল নাকি? আমি ভালো আছি তো? সুতরাং মুখোশের পৃথিবিতেও খোঁজ খবরের আওতায় রয়েছি। আবার ক্রমাগতভাবে উৎসাহ দিয়ে যাওয়া আপনজনেরা, অকপটুরা, বিশেষ করে আমার বড়দাসম জয়দা, অমলিন দা, ভাস্করদা, পটল, সুব্রত সহ প্রায় জনা পঞ্চাশ ষাট মানুষ, এনারা না থাকলে এই আঙ্গুলের ডগার পৃথিবী টাও পানসে হয়ে যেত। এদের জন্যই এই বাজনা, এনারা সহ্য করেন বা প্রশ্রয় দেন বলেই। আমার লেখালেখি মূলত নিতান্তই "নেই কাজ তো খই ভাজ" প্রজাতির, এর মাঝে দয়া করে কেও কর্ষতা খুজবেন না, সাহিত্য রস তো ছেরেই দিন। আমি পড়তে ভীষণ ভালবাসি, মোবাইল হাতে পেলে কিছু সময় ফেসবুক আর জরুরী মেল আদানপ্রদানের সময়টুকু বাদ দিয়ে, সারাক্ষন উইকিপিডিয়া ঘাটতে থাকি। একবার ওই রসে মজলে বাকি সব নেশা মিথ্যা মনে হবে।সারাদিনে গোটা দু-তিন খবরের কাগজ ও মুখস্ত করে ফেলি। সময় কেটে যায় কোথা দিয়ে। আমি মেধাগতভাবে অত্যন্ত নিন্মশ্রেনির, তার একটা কারন আমার চরম ভুলো মন, শত্রুর সাথেও যেচে কথা বলি। কারন, হয় ভুলে গেছি যে কেন তার সাথে ঝগড়া হয়েছি, বা আদৌ ঝগড়া হয়েছিল তো!!! এই কারনে এই পড়ার অভ্যাস না থাকলে কবেই গজনীর আমির খান হয়ে যেতাম।
তবুও এত
ফেসবুক, টুইটার, মোবাইল, চায়ের দোকান,আড্ডাবাজি, ব্লগিংয়ের কূটকচালি ফকচেমির ফাঁকেও আমার পড়তে বেশ
ভালই লাগে। সব ট্রলেই যে ভাল লেখা থাকে তা নয়, বরং যারা লেখেন আমার খুব শ্রদ্ধা হয় তাদের দেখে। অন্তত এদের জন্যই সাহিত্যচর্চাটা এখনও টিকে আছে। কোন মহান কবি বা সাহিত্যিক কি মাতৃগর্ভ থেকে বেড়িয়েই কালি দোয়াত চেয়েছিলেন? তারাও আমাদেরই মত সাধারন মানুষই হিসাবে জন্মেছিলেন, নিষ্ঠা, অধ্যাবসায়, প্রেম, আর পড়ার অভ্যাসের গুনে ভাগ্য বা অদৃষ্ট তাদের খ্যাতির চুড়োয় পৌছে দিয়েছে। সুতরাং আজ যারা চেষ্টা চালাচ্ছেন, কাল তাদেরই মধ্যে থেকে কেউ কেউ বিখ্যাত হয়ে যাবেন বলেই বিশ্বাস রাখি। প্রয়োজন -লেগে থাকা আর আরো আরো বেশি করে পড়া। ভাল হোক বা খারাপ, আগে তো পড়তে হবে, তারপর তো ভালমন্দের বিচার, তাই আমি প্রায় সব কিছুই পড়ি। তার কোনোটা থেকে কস্তূরীর গন্ধ বিচ্ছুরিত হয় তো কোনোটা স্বাদগন্ধহীন। সময় বের করতে না পারলে মন খারাপ হয়। পড়ার জন্য মন উশখুশ করে। অনেক ভাল ভাল অন্তর্জালীয় ঠেকে তো শুধু ভাল ভাল লেখা পড়ার শখেই অনলাইনে আসি। আর
যখন সম্পূর্ন পড়ার মুডে থাকি তখন মনে হয় বাকি পৃথিবীই মিথ্যা, পড়াই সত্য। সবই তো প্রায় এখনো
পড়ার বাকি! মোবাইলের ঘন্টি সবসময় তাল কেটে দেয় সেই মহেন্দ্রক্ষন গুলোর, সেই পেট ও সংসারের দায়। সব বই কিনে পড়া সম্ভব হয় না। অতো সমর্থ বা সাধ্য কোনোটাই নেই। লাইব্রেরী যাব? সে সময় নেই। পেটের জ্বালায় কিছু তো কর্ম করতে হয়, সুতরাং গ্রন্থাগার নৈব
নৈব চ।
ভাগ্যিস আমার বই ধার দেওয়ার কয়েকজন বন্ধু আছে, তারাই ভরসা। তাঁরা দিয়ে খুশি হন, আর আমি পেয়ে ধন্য নই। আর বই
মেলার জন্য তো আগে পার্থ-প্রদীপের মত গুটিকয় মানুষ ছিল, এখন কৌশিক দা আছে। যাদের সাথে ওই সৎসঙ্গ গুলো ঘোরা হয় নিয়ম করে।।এমন ভাবেই দিন চলে যাচ্ছে গড়িয়ে গড়িয়ে। আজকাল আনন্দ
পাব্লিসার্স, পেঙ্গুইন, সহ নানা প্রকাশনা হাউজ ছাড়াও আমাজন ফ্লিপকার্ট থেকে তো অনলাইনে অর্ডার দেওয়া যাচ্ছে, সেই সুযোগও মাঝে মধ্যে নিই। শুধু পছন্দ আর পকেটের যুগলবন্দি হলেই হল।তবে আমার ওই একই রোগ, আমি কোন কাজেই একদম নিয়মিত করতে পারিনা। তবে অন্যকাজ শুরুকরে শেষ না করার ঘোড়ারোগ থাকলেও পড়াটা ঠিকিই শেষ করি, নাহলে যে সারারাত উশখুশ করব।
খাপছারা উদভ্রান্ততা তো আমার চরিত্রের মুকুট। তাই আমি বই কিনলে কলেজ স্ট্রিট থেকেই কিনতে ভালোবাসি, রীতিমত দড়দাম করেই কিনি, দিলে দাও না হলে অন্য দোকান, ওর মজাই আলাদা। তবে আমাকে যারা বই ধার দেয় গুটি চারপাঁচ মানুষ, তাঁদের ভালোবাসাতেই আমি
মুগ্ধ, আর আমার বইয়ের নেশার কারিগরও তাঁরাই। তাদের বাড়ি গেলেই এক গাদা বই বগলদাবা করে নিয়ে আমি বাড়ি ফিরি। তাঁদের আলমারীর
সেল্ফ ভর্তি শুধু বই আর বই। চিন্তা করেই আনি, কারন যত্ন করে পড়ে ফেরত দিতে
হবে। ভুলো মন, সব সময় ফিরত দেবার কথা মনেও থাকেনা, ওই নতুন বই আনতে গেলে, তবেই ফিরতের কথা মনে পড়ে।
আমার ঘরে বই রাখার স্থান বড়ই অপ্রতুল কারন আমার রুম ভর্তি নানা রকম জিনিস, বেশিরভাগই অদরকারী। মেয়েদের দুষ্টুমির জন্য বই সাধারন ভাবে শোবার ঘরে সুরক্ষিত নয়, আর সেলফের অভাব না থাকলেও তাতে অন্তত বই রাখার জায়গা নাই, মেয়ে ও তার মায়ের
সামগ্রী তেই ভর্তি। ওদের খেলনা, সাজ, পোষাক ইত্যাদির দাপটে আমিই এককোনে কোনমতে ঠাই নিয়ে আছি উদ্বাস্তুর মত। তাই বই পড়ে থাকে- জানালার স্লপে, DTH মেসিনের উপরে, ফ্রিজের মাথায়, বিছানার
ফাঁসে, বৈঠকখানার চা টেবিলে, অফিসের চেয়ার টেবিল আলমারি ফ্লোর সর্বত্র বই আর বই আর ভীষণ অগোছালো। মেয়েরা কথা বলতে পারেনা তাই তারা শাষন করেনা, নতুনা, আমি এই "বই ও অগোছালো" শির্ষক বিষয়ে সকলের কাছে শাষনের পাত্র। একলাট বই শেষ মানেই আবার নতুন বই ধার আনতে হবে। আমার সাথের মানুষেরাও এটা জানে, আর আমার এই রোগের কথা মানেন ও প্রশ্রয়ও দেন, তাই আমার এই বাহুল্যতা কিছুটা সাজে, আমার অগছালো জীবন তো তারাই পরিপাটি করে রেখেছে আর এদের উপরে ভর করেই চলছে আমার
দিনযাপন।
তবে এই সুখ খুব বেশিদিন থাকবে বলে মনেহয়না। আজকাল অনলাইন গ্রন্থাগারে ইংরাজি সহ বিদেশী বইয়ের অভাব নেই। সেদিন আর দেরিনেই, বা হয়ত এসেই গেছে, যেদিন বাংলা বই পড়ার জন্য আর পাঠাগার বা বন্ধুর বাড়িতে ছুটতে হবেনা। কলেজস্ট্রিট ইতিহাস না হলেও গুরুত্ব হারাবে। অনলাইনেই সব পাওয়া যাবে। বাংলা ফন্ট এখন সহজলভ্য ইন্টারনেটে বা মোবাইল ডিভাইস গুলোতে। বাংলা হরফে লেখা স্ট্যাটাস বা মন্তব্যের তুফান তোলা পোষ্টে খুব শিজ্ঞিরই ছেয়ে যাবে বলেই আমার বিশ্বাস। বড় দুঃখের হবে সে দিন আমার মত উন্মাদদের জন্য। সবই থাকবে,লেখক- পাঠকের সম্পর্কের পরিধি অনেক বেড়ে যাবে, শুধু থাকবে না নতুন বইয়ের গন্ধ। থাকবেনা আমার বই সংক্রান্ত অগোছালতা, প্রয়োজন হবেনা সেলফের। আর তার সাথে সাথে হারাবো আমার কাছের মানুষগুলোর ভালবাসা মিশ্রিত কপট রাগান্বিত শাষন।
উন্মাদীয় বানানবিধিতে দুষ্ট