Sunday, 23 March 2014

পাগলী


*****পাগলি*****

কাল হাইকোর্টের কাজ শেষ করতে করতে একটু বেলাই হয়ে গেছিলো।যা গুমোট গরম, সারাদিনিই তো আকাশের মুখ ভার। আদ্রতার মাত্রা শরীরের যেখান সেখান দিয়ে জল বেড় করিয়ে ছারছে। সাড়ে চারটে নাগাদ কাজ শেষ হলো সেই দিনের মত, সেই সকাল সাড়ে দশটাই ঢুকেছি। লাষ্ট দুমাস এটাই যেন ভাত ঘড় হয়ে গেছে। বাড়ি ফিরবো, বেড়োবো বেড়োবো করছি, এমন সময়...
দক্ষিণেশ্বরে একটা ছোট্ট কাজের কথা মনে পরে যাওয়ায় সেই পথেরই পথিক হলাম। রাস্তায় মাত্রা ছারা ট্রাফিক। এটাই তো আমাদের তিলোত্তমার পরিচিতি। যাই হোক CR Avenue ধরে গন্তব্যে পৌছালাম। এবার কাজ সেরে ফেরার পালা। সাধারনত সেকেন্ড হুগলি ব্রিজ দিয়েই বাড়ি ফিরি। আর ওই বিভীষিকা পেরিয়ে সেকেন্ড হুগলিব্রিজ যাওয়ার প্রশ্নই ছিল না। তাই বালি ব্রিজ হয়েই NH-2 ধরার পরিকল্পনা নিলাম। ও বাবা সামান্য এগোতেই গোদের উপর বিষফোঁড়া ...
বালিব্রিজের এন্ট্রান্স মানে ডানলপ ব্রিজের নিচের জ্যামটা লাষ্ট ৪০ মিনিট নট নরনচরন। অগত্যা কল্যানি এক্সপ্রেসওয়ে।

হাঁড়ীচাঁচা কপাল। কল্যানি এন্ট্রাসের আগে যে রেলব্রিজটা আছে, সেটাও নাকি মেরামতির জন্য বন্ধ।
শেষমেশ, কাচরাপাড়া রোড, ব্যারাকপুর হয়েই রুটটা দাঁড়ালো।
যারা হাইকোর্ট বা ব্যাঙ্কশাল কোর্টে গেছেন, তাঁরাই একমাত্র জানেন যে কি আজব ঘুলঘুলাইয়া জাইগা। একবার ওই ফাঁদে ভাগ্যদোষে আটকা পরলে, দশ চক্র লাগবে না, একচক্রেই ভগবানকে ভুত বলে মনে হতে বাধ্য। পকেটে লাখ টাকা থাকলেও পেটে খাবার জুটবে না, কপালে না থাকলে।
শরীরটাও খারাপ বর্তমানে, কদিন ধরেই জ্বরে কাহিল। ডাক্তারে বলেছে স্ত্রী মশার চুম্বনের লেঙ্গিতে নাকি ডেঙ্গি হয়েছে। হতেও পারে... তা বলে তো আর কাজ থেকে থাকে না।
সন্ধ্যা সোয়া আটটা, পেটে বেশ কয়েকটি মুষিকের কথাকলি নৃত্যানুষ্ঠান চলছে, এক্কেবারে লাইভ। রোল বা চাউমিনের খোঁজ চলছিলো। তখন ব্যারাকপুর স্টেশনের বাঁক টা জাষ্ট ঘুরছিলাম। ঘুরেই বাঁ হাতে একটা খাবারের দোকান দেখলাম।
দাদা বৌদির হোটেল। উপরে ভিনাইল বোর্ডে জ্বলজ্বল করছিলো।
বাপরে বাপ। সে কি ভিড়। বিরিয়ানি বিলাসীদের ভিড়। রীতি মত লাইন দিয়ে লোকে পার্সেল নিচ্ছে ও বসে খাচ্ছে। ড্রাইভার গাড়ি নিজেই থামালো। আমার বিরিয়ানি বিলাসের খবর তার কাছেও ছিল। আমার একজন এটেডেন্ট মানে সহচর, বিরিয়ানি সংগ্রহের লাইন লাগালো, আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে সুখটানের মৌতাত নিচ্ছিলাম, দীপ-অয়ন্তিকার ম্যাডলি মেলোডি শুনতে শুনতে।
হঠাৎ গাড়ির ডিকিতে একটা দরাম করে বেশ বিকট আওয়াজ। বাঁকের মোড়, সরু রাস্তা তার উপরে ভীর। পিছন থেকে কেউ ঠুকে দিলো নাকি!! মৌতাতের ঘোর কেটে, তৎক্ষণাৎ লাফ মেরে নেমে দেখি, এক পাগলি ডিকির প্রশস্ত জাইগাটাকে ড্রাম হিসাবে ব্যাবহার করছে, তূরীয় বেপরোয়া মেজাজে। দেখেই মটকা গরম হয়ে গেলো, কিছু বলতে যাবো, দেখি আমার ড্রাইভারের সাথে ইতিমধ্যেই ধাক্কাধাক্কি পর্ব শুরু হয়ে গেছে।
মাঝখান থেকে বেশ কিছু সমাজসেবির কোত্থেকে না জানি দুম করে আমদানি হয়ে গেলো। এবং তাঁরা পাগলির পক্ষ নিয়ে নিলেন অচিরেই। ফলস্বরুপ আমার ড্রাইভার ফ্রিতে একটা মাঝারি সাইজের থাপ্পর, অযাচিত উপহার স্বরূপ গ্রহন করে ফেলেছে। সমগ্র ঘটনাটার সময়কাল দু মিনিটেরও কম সময়ে।
সে যাই হোক, আসন্ন বিরিয়ানির খুশবুতে খানিকটা যে চোনা ফেলে দিলো তাতে সন্দেহ নেই।
তখনও আমার সহচরের সিরিয়াল ৬ জনের পর। দেখলামাবার ওই পাগলিটা কে কেন্দ্র করেই ফের একটা জটলা হচ্ছে। মুড ছিলো না, তাই যাবার প্রশ্নও ছিলো না। মাঝখান থেকে ওই দাদাবৌদি হোটেলের স্টাফ গুলোও দেখি ওই ভিরে সামিল হয়েছে। অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হচ্ছিল মিছিমিছি। লাইনে দাঁড়ানো ছেলেটাকে ডাকবো বলে গাড়ি থেকে নামতেই দেখি পাগলিটাকে বেধরক পেটাচ্ছিলো, সেই... সমাজসেবীর দলটা। প্রায় উলঙ্গ হয়ে আমার গাড়ির কাছটাতে আত্মরক্ষার্তে আসতেই , আমার ড্রাইভারও দেখি, পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা ঝাল মেটাতে উদ্যোত। একটা ধমকি দিতেই , ও গজগজ করতে করতে থামতে না থামতে সেই দলটা এসে হাজির। কে আবার ফালতু লাপরা চাই বলুন।
আমার পিছনে পাগলিটা আশ্রয় নিয়েছে, এবং উচ্চস্বরে অপর পক্ষের উদ্দেশ্যে অশ্রাব্য গালি বর্ষন চলছে। তখন খেয়াল করলাম, একজন মাঝ বয়সী অত্যান্ত ফর্সা, স্বল্প উচ্চতার শীর্ণ চেহারার এক মহিলা। তাকে ধরতে হলে আমাকে টপকে ধরতে হয়। আমার বিশাল বপু দেখেই হবে বোধ হয়, ওই সেবাদলটির অগ্রাশন কিছুটা প্রতিহত হয়েছে। ওদেরই শুধালাম যে, ব্যাপারটা কি??
ওই দল থকেই একজন বাতুল গোছের ছোকরা জবাব দিলো, সে "ভবিপাগলি" নাকি আমার গাড়ি দেখে, একটা আইডিয়া করে আসে, উদ্দেশ্য বিরিয়ানি খাওয়া বা পেট ভরানো। খুশির চোটে পাগলির আভ্যন্তরিন মিউজিক সিস্টেম চালু হয়ে যায়, তবলার যোগ্য সঙ্গতের জন্য আমার গাড়ির ডিকিটিকে ব্যাবহার করে, তার পরে্র ঘটনা পূর্বেই উল্লেখিত।
এখন ওই পাগলির চরম রাগ ওই সেবা দলের লোক গুলোর উপর, কারন তারাই গাড়ির ড্রাইভারটিকে মেরেছিলো। পাগলির বিশ্বাস এই গাড়ি মালিকই তাকে বিরিয়ানির বা অন্নসংস্থান করে মাঝে মধ্যে, ঘটনাক্রমে সেটা যে আমি নই বা বেশিরভাগ সময়েই আলাদা আলাদা ব্যাক্তি থাকে সেটা পাগলির বুদ্ধিতে আসার কথা নয়, তাই গাড়ির ড্রাইভারকে চড় মারার দরুন ব্যাথাটা আসলে পাগলিটারই লেগেছিলো, সুতরাং তাদের মানে সেবাদলের উপরে খিস্তি বর্ষন হচ্ছিলো, সঙ্গত কারনেই। পরিনাম স্বরূপ ওই গনপ্রহার।
পয়সা মেটানো হয়ে যাবার জন্য, বিরিয়ানি শেষ পর্যন্ত নিতে হলো ঠিকিই। কিন্তু ততক্ষনে খাওয়ার মুড চলে গেছে। আস্তে আস্তে ভিড় টাও পাতলা হয়ে গেল। পাগলিটাও স্টেশনের দিকে এগিয়ে ভিড়ের মাঝে হারিয়ে গেলো। একটা প্যাকেট তাকে খুব দিতে ইচ্ছা করছিল, কিন্তু কেন জানিনা দিতে পারলাম না। বোধহয় একটা নিকৃষ্ট শ্রেনির লজ্জা ক্রিয়াশীল ছিল আমার ভিতরে...
আবার কোন গাড়ি আসবে, পাগলিটা এসে খিদের জ্বালায় কিছু পাগলপনা করবে। কিন্তু কি জুটবে জানা নেই, সাধারনত ধোলাইই খাবে, ভাগ্য ভালো হলে কিছু উচ্ছিষ্ট জুটে যাবে আর খুব ভালো হলে গোটা এক প্লেট খাবার। এভাবেই দিন চলে যাবে, হোটেলটার, ওই সরু বাঁকের রাস্তার, সাথে ওই পাগলিটারও। মাঝখান থেকে কিছু সেবাদল আর কিছু আমার মত অনিয়মিত পথিক মজা নিতে থাকবে, ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত।
আসতে আসতে ভাবছিলাম, ওই সেবাদলটির কথা। কি দরকার ছিল বাবা, প্রথমে বাঁচানো ও পরে ওই বিচ্ছিরি ভাবে গন প্রহার করার। শেষে একটা সিদ্ধান্তে পৌছালাম...

আমিও তো ওই দলেরই তো প্রতিনিধি। মেরুদণ্ডহীন স্বার্থপর কাপুরুষ।
আবার নির্লজ্জের মত লিখেও ফেললাম।
পাগলটা আসলে কে ছিল!!!!!!!!

Saturday, 15 March 2014

মামলার চাপ


জুতোর সুখতলা.....
সে কবেই গেছে ক্ষয়ে
আমার আদালত যাত্রা
চলছে নিজের লয়ে।

উকিলের ফুলঝুরি বানী
প্রানে আনন্দধারা বয়,
হাকিমের নিষ্কম্প বাক্যবাণে
শিরদাঁড়ায় হিমেল ভয়।
আ-তে আনাগোনা নিরন্তর
দা-য়ে দায়ভার সাথে দেনাপাওনা,
ল-য়ে লানছনা গঞ্জনা
ত-য়ে তোষামোদ করো আছে যতজনা।
এই ধ্যানজ্ঞানে দিনকাল আজ
বাকি সব বরবাদ,
মামলার চাপে গামলা বন্দি
উন্মাদ হোলস্কয়ার হার্মাদ।