উন্মাদীয় রবিবাসর
~:খোরাক:~
~~~~~~~~~
একটা দিন মোটে পরে পাওয়া ছুটি, তাতে রবিরার হলেও কিন্তু শান্তি নেই,
সকালের ঘুম ভাঙতেই চাই না । সকাল সকাল বাজারে না গেলে মাছ পাওয়া যাবে না,
টাটকা সবজি পাওয়া যায় না, দুধ, পৌরসভার ট্রাক্টারের শোধন করা জল... আরো কত
কি। সব থেকে বড় কথা, বেলা হয়ে গেলে, চেনা জানা লোক গুলো কে পাওয়া যায় না,
যে জমিয়ে একটু আড্ডা মেরে আগামী সপ্তাহের জন্য পাড়াতুতো “খোরাক” সংগ্রহ করা
যাবে।
অগত্যা গিন্নির তারস্বরে চিৎকারে, শুকনো আদার মত অবশিষ্ট
প্রানে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠার আগে ঘুম থেকে উঠাই শ্রেয়। এখানে পুরূষের বয়স
ভেদে, চীৎকার এর খোরাক যোগানকারি ব্যাক্তির পরিবর্তন ঘটে। শিশু বয়সে ভোর
বেলা মায়ের চিৎকার, উঠ স্কুল কখন যাবি! যুবক বয়সে মায়ের সাথে বাবাও যুক্ত
হন। কলেজ লাইফ বা তার পরবর্তী কিন্তু বিবাহ পূর্ব্ববর্তী সময় কালে মায়েরা
কোন এক অজানা কারনে শান্ত হয়ে যান, আর বাবা রা দ্বিগুন তৎপরতার সাথে চিৎকার
শোনানোর কাজটুকু নিপুন ভাবে অধিগ্রহন করেন।
যারা দূর্ভাগা তাদের
প্রেমিকারা ও অনেক সময় চেঁচামেচির সু অভ্যাস টা প্রেমিক জীবনেও বজায় রাখিয়ে
দেন। এক্ষেত্রে একটি জীবনিকালে বাবার এই ভুমিকায় অবতীর্ন হওয়া টা অনেকটা
ডেপুটেসনে শিক্ষন নিয়োগের মত। জানেন অল্প দিনের কিন্তু বুঝতে চান না।
এর পর বিবাহ। প্রথম সন্তান অথবা সর্বাধিক ৩ বৎসর, যেটি আগে ঘটবে, সেটির
উপর নির্ভর করে স্ত্রীর সর্বেসর্বা হবার শুভরাম্ভটি। যদিও সেই
মহেন্দ্রক্ষনের প্রতীক্ষায় খুব বেশী দিন অপেক্ষা করতে হয় না, কারন বিবাহের
পর, আকস্মাৎ বাবারা কেমন যেন নেতানো পাঁপড় হয়ে যান, কোন কথা ই আর সামনা
সামনি বলেন না, সবটাই মা এর মাধম্যে। এদিকে মায়েরাও একটি, বছর ৫-৭ (কমবেশী)
শীতঘুম দিয়ে , নব উদ্যমে বৌমার সহিত সহ- শাষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
নিজেদের মধ্যে ওয়াটার-লু সহ।
বৃদ্ধ বয়সেও এই আজীবন চিৎকার শোনার
অভ্যাসের রেওয়াজ টা অক্ষুন্ন থাকে, গিন্নি বেঁচে থাকলে তো কথাই নেই, তিনি
একাই যথেষ্ট, যদি কোন কারনে তিনি অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে হয় বৌমা বা
নিদেনপক্ষে বাড়ির পুরাতন চাকর কে দিয়েই সেই পুরাতন সু অভ্যাস বজায় রাখানো
হয়।
এমতাবস্থায়, বাঙালী পুরুষের মনোরঞ্জনের উপায় কি?? ঘরে?? নৈব
নৈব চ। যেটুকু মন-চোখ ও মুখের মানে ভাষার আগল খুলে একটু খেয়াল খুশির আমোদ,
একটু তাস, বা দাবা খেলা বা ক্যারাম বা নিদেন পক্ষে লুডো, তারই ফাঁকে একটু
ফুকুফুকু বা ঢুকুঢুকু। সবটাই তো আড্ডা খানায়। এই তো জীবন... যাক না যেদিকে
যেতে চাই প্রান। আর হ্যাঁ এই প্রানের টানেই ক্লাস নাইনের, বছর ষোলোর পটলার
সাথে, মধ্যচল্লিসের LIC এর দাদাল পরেশ দা, আর অবসর প্রাপ্ত কেরাণী হরিপদ
বাবু, জমিদার বাড়ির বখে যাওয়া বড় খোকা নগেন মানে নগেন্দ্রনারায়ণ সিংহ রায়ের
সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কলব্রিজ খেলে যেতে পারেন, একটা বিড়ি চারজনে শেয়ারিং
করতে করতে। হাজার অমিল হোক, ইনারা জড় ও নন, পর ও নন, এনার আসলে আপনজন।
এখন প্রত্যেকের সাথে থাকে নিজস্ব জগতের যন্ত্রনা। যেমনঃ পর্যানুক্রমে...
“কি যে বলি, শালা মাস্টার গুলোও হয়েছে আজকাল, আরে দু বছর আগেই যদি আমাকে
নাইনে পাশ করিয়ে দিতিস , কার এমন ক্ষতি টা হতো শুনি? বলি সরকার থেকে কি
মানা ছিল? পর পর ইচ্ছা করে আমাকে ফেল করালো, জানো। আরে আমায় ফেল করিয়ে তদের
কি লাভ হলো?? মন্টু মাস্টারের মেয়ে, ওই সে বাসন্তী, যাকে তোমরা ফ্যাসন
বাসন্তী বলো গো, ওর সাথে ইন্টু-মিন্টু টা ধরে ফেলাতেই যত্ত কেলো, বাড়িতে
জানলো, ইস্কুলে জানলো। বাপটাও যেমন আমার, যেন কাল সাপ, আমার বেলাতেই যেন সব
টাকাপয়সা ফুরিয়ে যায়, বলি, একটু তো শুধু বিড়িই খায়, পেলে পাব্বনে একটু
মাল, আর তোমাদের সৎসঙ্গে না এসে আমি একা একা কোনোদিন বাবা খেয়েছি? তোমরাই
বলো।
মা টা ও টুকি মানে বোনটা বড় হতেই, আমাকে নিয়ে যেন ভাবা ছেরে দিয়েছে,
তবে রাত বিরোতে দরজা টা এখনো উনিই খুলে দেন। একদিন এমন দিন আসবে , যে দেখবে
এই প্রহ্লাদ চন্দ্র সেন কে সবাই স্যালুট করবে। অমন চোখ কপালে তোলার কি
আছে! আমার ই তো ভালো নাম, লোকে ভালো বেসে পটলা বলে ডাকে আর কি। আমি
ব্যাবসাই করবো। চাকরি বাকরি কেউ করে?? ছ্যাঃ... বিয়েটাও তো করতে হবে না
কি!! তাছারা ওই হতচ্ছারা মাস্টার গুলোর জন্য কি ডিগ্রি পাবো?? যে চাকরির
এপ্লিকেশন করবো!! ছ্যাঃ ছ্যাঃ...
সত্যি বলছি কি জীবনে ঘেন্না ধরে গেল।
ভাবলাম চিটফান্ড বন্ধ হলে, আমাদের একটু সুরাহা হবে, কিন্তু কোথায় কি,
সেই... যে কলু সে কলুই। সব ভোগাস, এঁড়ে বাবার সপ্ত জন্তুর, ‘ওই খান কার’
লোম দিয়ে তৈরি, অব্যার্থ মাদুলিও ফেল মেরে গেলো। মাঝ খান থেকে কয়েক হাজার
টাকাই পন্ড গেল। আমার ব্যাড লাক টাই খারাপ মনে হয়। ওদিকে ছেলের ৪ টে
টিউসুনি, মেয়ের আবার দুকাঠি বাড়া, নাচের ইস্কুল গানের মাস্টার, ফ্যাসাদের
কি আর শেষ আগে, মাসে ৩-৪ টে নিমন্ত্রণ লেগেই আছে বাঁ_, তার উপরে গিন্নি,
ফরমাইসের শেষ আছে? বাবা মায়ের ওষুধ কি কম টাকার কিনতে হয়? খুকির বিয়ের
গয়নার জোগার টাও তো এখন থেকেই করতে হবে, ভাবছি একটা নতুন ব্যাবসা করবো।
হাত
খরচাতেও একটু রাশ টানতেই হবে মনে হচ্ছে। আজ কাল আর একটু বিদেশী টেষ্ট
করবো, তার ও আর উপায় নাই। গিন্নির নতুন ঘোড়ারোগ, বেড়াতে যেতে হবে। না হলে
নাকি পাড়ায় আর মান থাকছে না। ঘোষজা ছেলে স্বামী নিয়ে গত বছর পূরি গিয়ে
বাবার পায়ে প্রেসাদ দিয়ে এসেছেন, এবার আমাদের কমপক্ষে দিঘাও যেতে হবে, না
হলেই গৃহযুদ্ধ। আবার নতুন খরচা, টাকা কি আর গাছে ফলে? LIC বড় বাবুদের টানা
টার্গেট পূরনের চাপে চাপে জর্জরিত, সারা দিন লোকের সাথে বকবকানি, ঘরে এসে
নানান অভাব অভিযোগ। জ্বলে গেলো দাদা, সব জ্বলে গেলো। এই তোমাদের এখানেই
একটু যা শান্তি। বাকি টা তো সেই খাড়া-বড়ি-থোর।
সত্যি বলছি কি জীবনে ঘেন্না ধরে গেল।
কদিন থেকেই বড় খোকা কে বলছি, ওর ও আর সময় হচ্ছে না, শেষের দুটো তো আমাকে
এখন আর গ্রাহ্যি করে না। চোখের পাওয়ার টা বেড়েছে মনে হচ্ছে। শালা ইস্কাবনের
বিবি কে, মোল্লা পাড়ার জরিনা বিবির মত দেখছি। একটু শখ করে যে, আলাদা তোদের
সাথে একদিন রাত্র খাসির মাংসের মোচ্ছোব খাবো, দাঁত গুলোর জন্যে সে উপায় ও
নেই, শুধু ঝোল খেয়ে আর চেটেই মজা, অবিশ্যি পেনসানের টাকাটা তো ওষুধ খেতেই
চলে যায় বুড়োবুড়ির। জমানো টাকা যা আছে, অদিনের জন্য ওটুকু আর হাতছারা করতে
সাহষ হয় না। তীর্থ করতে যাওয়ার শখ এখন কে মেটায় দেখি।
রমলার শ্বশুর মানে বড়
জামাই এর বাবা একটা সৎসঙ্গ দলের সাথে কাশী বৃন্দাবন ঘুড়ে এলো, উনি
বিপত্নীক ওনার যা সম্ভব , আমাকে তো আর সেটা সাজে না। কমলা বলেছে, যে বাবা
ভরষা রাখো আমার উপর, তোমার তিন ছেলে যদি তোমায় তির্থে নাও পাঠায়, তোমার ছোট
মেয়ে জামায় পাঠাবেই, এখন এটাই ভরষা। সামনেই অমাবস্যা, গাঁটের ব্যাথাটা
আবার বাড়বে। পেসার আর সুগার ঠিক রাখতে গিয়ে লুঙিই ঠিক রাখতে পারি না। আচ্ছা
দেখ তো, আমার চামরায় কালো কালো ছোপ পরছে কি রকম। নাহ কলপ করা টা এবার
ছেরেই দেবো ভাবছি। এখন এই সারাদিন সময় কাটানো টাই বড় মুসকিল। বাড়ি গেলেই
সেই গিন্নি-বৌমাদের কিটকিট, নিউজ চ্যানেল ই বা আর কতক্ষন দেখবো? ভাবছি একটা
ছোট খাটো ব্যাবসা ই করবো ভাবছি, তাতে কিছু আমদানি ও হবে, সাথে সময় টা ও
কাটবে। শান্তি নেই ভাই শান্তি নেই। এই তোদের সাথেই যা একটু শান্তি পাই...
সত্যি বলছি কি জীবনে ঘেন্না ধরে গেল।
নাহ, এই জন্যই তো দেশ থেকে রাজা জমিদার রা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আরে বাওয়া
যুগের হাওয়া কে মনতে হবে না?? ব্যাটা যত গো-মুখ্যের দল। বলি ওই ২০ বিঘে
জমির উপর পেল্লাই বাড়ি টা রেখে হবে টা কি?? তার উপরে হাজার ট্যাক্সের
বায়ানাক্কা। এই পানিহাটির গঙ্গাপাড়ে এমন একটা জাইগা ভালো প্রোমোটার কে
দিলে, এমনিতেই ২-৪ টে ফ্লাট ফ্রিতে পাওয়া যাবে, তার উপরে নগদ টাকার পাহাড়।
কিন্তু চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। আরে বাব্বা সেই হাফ প্যান্ট পড়া অবস্থা
থেকে রাজনীতি করছি, আমি বুঝি না??
কাউন্সিলারের আপন মামাতো ভাই, জগাই দা
পর্যন্ত মাঝ রাতে আমার কাছে পরামর্শ নেন, যে নগেন এটা কি করবো বল তো?? আর
আমার ফ্যামিলির এই হা-ভাতে কটা কে শুধু বোঝাতে পারলাম না। লজ্জা লজ্জা,
আমার নয় এদের, গোটা দেশের। কাল যখন এই নগেন যখন MLA হবে বা নিদেনপক্ষে
কাউন্সিলর বা এক্কেবারে ছোট্ট করেও পার্টির কোন পোষ্টে যাবো, সেদিন এরা
বুঝবে ,কেন যে আমরা হিরে চিনতে পারিনি! মামলার খরচ জোগাতে গিয়েই তো জমি
বিক্রির টাকা গুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে, এবার একটা কিছু না করলেই নয়। ভাবছি একটা
ব্যাবসা ই করবো।
মহান রাজনীতি বিদরা কি আর চাকরি করে বাছা?? ব্যাবসা
ব্যাবসা। সব্বাই ব্যাবসা করে। তবে আমি যেদিন ব্যাবসা করবো, সকলের চোখ
ধাধিয়ে যাবে। এখন তো বাড়ি গেলেই অশান্তি, আমায় বলে নাকি বুড়ো ভাম, ছোঃ...
সবে তো চল্লিশ। মেয়েরা দেখে তো অনেকেই আমাকে কলেজের ছেলে বলে ভুল করে। আমি
বিয়েই করবো না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী, দেখো এদের। ইনারা
কেও বিয়ে করেছেন? বা পুরাতন ইতিহাস?? ক জন বিয়ে করেছিলেন?? এই ঝঞ্ঝাটের
জন্যই বাড়ি যেতেই মন চায় না। তোমাদের এই সাথ টুকু ছারা কোঠাও দুদন্ড শান্তি
নেই। তোমরাই আমার আপনজন।
সত্যি বলছি কি জীবনে ঘেন্না ধরে গেল।
এর পর পরে থাকে একসাথে সমবেত ভাবে খুশী হবার পালা, কারন আসলি মাজা সাব কে
সাথ আতা হ্যায়। শুধু মাত্র IPL ই সব্বাই কে এক স্থানে বসায় না, নির্ভেজাল
পরনিন্দা-পরচর্চা আর পাড়াতুতো খোরাক পাড়ার বাঘ আর গরুকেও এক বারকোসে হালুয়া
খাওয়ায়। তাহলে চলো আজ কুছ তুফানি করতে হ্যায়। সকলেই ভাবে মেরা নাম্বার কাব
আয়েগা বাওয়া। যে যেমন পারে, এ্যামেচার শিল্পী সেজে পারফর্ম করতে শুরু করে
দেয়। যেমনঃ-
“বংসীধরের বড় মেয়ে, আরতিটা তো যথেষ্ট সুন্দুরী, তাহলে
এই মধ্য তিরিশে ও কেন বিয়ে করছে না? কোথাও কোন গোপন একাউন্ট নেই তো? পলান
মিত্রের হাফের টান বলে ফি হপ্তায় যে গড়িয়া যেতেন, ওটা আসলে অর্শ জাতীয় কিছু
ছিল। আরে এই বাষট্টি বছর বয়েসে হাপানি তেল না জাপানি তেল, কি যে উনি কেনেন
কে জানে!! ব্যাঙ্কের নতুন ম্যানেজার বুলবুল মন্ডল বাবু কোন জেতের লোক?
হিঁদু না মোচোরমান, রামরতনের ছোট ছেলে কোলকাতায় অদৌ কি চাকরি করে! না রেলে
হকারি করে? আব্বাস মিঞা যতই জ্যান্ত মুরগি ঝুলিয়ে বাড়ি যান না কেন, গরুর
মাংস নিশ্চই খান।
মদু বাঙালের নাতনি কাজলি, কেমন তরতরিয়ে বড় হয়ে গেল বল
দেখি। ভবেশ কে দেখেছো? বেটার আঙুল ফুলে কলাগাছ,নিশ্চই বেটার দুনম্বরি
ধান্দা আছে। শুনেছো প্রনবেশ নাকি চাকরি পেয়েছে, মাস্টারি, ব্যাটা টুকে পাশ
করেও আজ কাল লোকে মাস্টার পোপেসার হচ্ছে। সেটাই বা বলি কেন, দুলে পাড়ার
সুশলে মাণ্ডির মেজ ছেলে, সে নাকি আবগাড়ি দপ্তরে চাকরি পেয়েছে, কোটা...
কোটা... সব কোটা বাজি আর রাজনীতি।
দেশের যে কি হবে, যারা ধরবে সব ব্যাটারাই
তো চোর, সাথে আছে নেতারা। নাহ, সারাজীবন সততা করে আর কিচ্ছু হলোনা। কষ্ট
তো হয় অবিনাষ দার জন্য, অমন চাঁদপানা মুখের মেয়ে, কিন্তু দেখো, যেন লগার
আধখানা, বলি অতো লম্বা মেয়ের ছেলে পাবে কোথায়!! মিনু বৌদিকে খেয়াল করেছো?
মেয়ে টাকে নিয়ে স্কুলে নিয়ে যাওয়া আসার সময় খেয়াল করে দেখো, পাছাদুটো যেন
কোলা ব্যাঙের তরাক তরাক করে লাফায় (সাথে অট্টহাস্য)। এ পটলা, দুটো কীর্তনের
ক্লিপিং দে না, আর কি ই বা আছে জীবনে ...... ইত্যাদি ইত্যাদি”।
এই হল বাঙালী পুরুষ জীবনের মোটামুটি আড্ডা। যুগে যুগে এর বিবর্তন হয়েছে।
বটতলা থেকে, চন্ডীমন্ডপ, হয়ে বৈঠক খানায় খানিক বিশ্রাম নিয়ে, পাড়ার রক আর
‘আমরা ক জন’ ক্লাব কে ছুঁয়ে আজ অন্তর্জালে বন্দি হয়েছে। যেহেতু অন্তর্জাল,
তাই সীমা ও অনেকটাই বেড়েছে। নানুড় থেকে নন্দীগ্রাম লাটাগুড়ি থেকে
হিঙ্গলগঞ্জ, সর্বত্রই এই পটলা-পরেশ দা, হরিপদ বাবুদের সাথে নগেন্দ্র
বাবুদের নিত্য ওঠাবসা। এখানেও সেই মডিফায়েড রক কালচার। কিছু ব্যাতিক্রম
বাদে।
সক্কলেই তো আসলে আমরা নিজেদের টা বলা হয়ে গেলেই, বাঁচার জন্য
খোরাক খুঁজতে থাকি। একটা চোর্ব্য চোষ্য লেহ্য পেয় করে উদরস্থ করার মত খোরাক
চাই। আর তার ব্যাবস্থা ও আছে , যুদ্ধবাজ আমেরিকা থেকে নটি আমেরিকা, ভানু
সিংহের পদাবলী থেকে সানি লিওনির নামাবলী, সব রেডিমেড ব্যাবস্থা প্রস্তুত।
আবার ঘন্টায় ৫০০ টাকা ইনকামের হাতছানির পাশাপাশি ঘন্টায় ৫ লাখ ঊড়ানোর হদিস,
সব রেডি।
শুধু খুঁজে নিলেই কেল্লাফতে। আগে টেবিলে বসে খেলা হত এখন মাউসে
বসে জুয়া। সস্তায় এবং সর্টকাটে আখের গুছানো থেকে পরীক্ষা পাসের সহজ উপায়।
নিখাদ চুটকুলা ঢামালি হয়ে কথার মায়াজাল। এখানে বোঝা মুশকিল কে মেয়ে আর কে
ছেলে। রাবনের পুত্র ইন্দ্রজিত , যিনি মেঘের আড়ালে থেকে যুদ্ধ বিদ্যায়
পারদর্শী ছিলেন, এই যুগে জন্মালে যিনি নির্ঘাত ফেল মেরে যেতেন , বর্তমান
ফেবু বাবুবিবি দের কেত্তন দেখে।
আসলে নগেন বাবুর মত, সময়ের সাথে
তাল মিলিয়ে সব্বাই ছুটে চলেছি, কিন্তু মুসকিলটা হয় হরিপদ বাবুদের। একে অবসর
জীবন, হাতে তুলনামূলক অনেকটা অতিরিক্ত সময়। অনেকেই অনেক সুন্দর সুন্দর
সম্পর্ক তৈ রি করে ফেলেন। তার সাথে তৈরই হয় চাহিদাও। আগেকার দিনে বটতলা বা
চন্ডীমন্ডপেও হতো। কিন্তু সেখানে হাঁ- টা খুব বেশী করার সমস্যা ছিল। এটা
ইন্দ্রজিতের দেশ, চোখের আড়ালেই সকল কিছু। একটু এক্সট্রা এক্সাইটমেন্টের
তারনায়, খোরাক করতে গিয়ে,কখনো কখনো, পুরো গুয়েগোবরে হয়ে গিয়ে নিজেই খোরাক
হয়ে যান।
গুজব। নানা কারনে সৃষ্টি হয়। যেকোন আড্ডাখানা একটা সমমনস্ক
দের স্থান, সর্বকালে, সর্বদেশে। এখানে কারো কারো ব্যাক্তিগত বিষয়, সমষ্টির
পাত্তা পাওয়া আর না পাওয়ার মাঝ খানে গুজব তৈরি বা সৃষ্টি হয়। যিনি সমষ্টির
পাত্তা পান না, তিনি আড্ডাখানায় উপস্থিতি কময়ে দেন, আর নানান বিকৃত ভাবনায়
সাজানো খোরাকের জন্ম দেন, বাকি লোক গুলো যারা আড্ডা খানায় অবশিষ্ট রয়ে
গেলেন, তারাও আলাদা আলাদা ভাবে ঐ সকল পাত্তা না পাওয়া ব্যাক্তি দের
সাম্বন্ধে নানান মুখরোচক জল্পনা ফেঁদে, খোরাকের সৃষ্টি করেন। যদিও সকলেই
আপনজনের চাদর চড়িয়েই থাকেন।
যে হরিপদ বাবু, বংশীর মেয়ে আরতির জন্য
ভেবে আকুল, সেই আরতিকে যদি কখনো কোন দিন নগেন্দ্র বাবু সাথে দেখা যায়,
দূর্ঘটনাবসত, বা হয়ত ইচ্ছাকৃত , সমপাড়ার বাসিন্দা হিসাবে কোন নিতান্ত
প্রয়োজনে, তাহলে এই হরিপদ বাবুই নৈতিক আরক্ষাবাহিনীর অবৈতনিক কর্মী সেজে
পটলা কে এসিস্ট্যান্ট করে গুজব রটাতে শুরু করে দেবেন। আর এটাই বাস্তবে ঘটে
থাকে। এখন গুজবের সুত্র টা হয়তো খুব নিরীহ ভাবে উনি শুরু করলেন, কিন্তু
পটলা খোরাকের জন্য ওদের মাঝখানে পরেশ দা কে শিখন্ডি করে রেখে আরতিকে গুজব
দ্বারাই গর্ভবতী করে দিয়ে আরও চুটুল খোরাকের সৃষ্টি করে দিলো। এক্সট্রা
মসলা। এক্সট্রা উত্তেজনা। এক্সট্রা খোরাক।
রসালো ও মুচমুচে খাদ্য বা
খোরাক সকল বয়সের সকল শ্রেনির মানুষ দের কাছে প্রিয়, আর যাদের দাঁত নেই,
তাদের কাছে তো এটাই একমাত্র সোয়াদিষ্ট খাদ্য। তাতে তিনি রসিক হন বা না হন।
অনেকেই নিজে কখনোই খোরাকের অংশিদারিত্ব নিতে চান না। তিনি শুধু শ্রবনে আর
দর্শনে উপভোগ করতে চান, মানে নীল ছবি দেখার সুখ আর কি। সামান্য তম পোড়া
গন্ধ কানে শুনলেও, বৃহন্নলা বৃত্তি সাধন করে আগে পলায়ন করবেন। এখন সেটা
হাস্যকর স্থান পর্যন্ত সহনীয়।
কিন্তু কখনো কখনো কেউ কেউ, এক্সট্রা রসালো
মুচমুচে খোরাকের জন্য, এক্তিয়ার ভুলে, নৌতিকতার দোহায় দিয়ে কাওকে কাওকে যখন
চাটনি বানিয়ে ফেলেন, তখন সেই খোরাক পচে গিয়ে মদে পরিণত হয়। যে পরিস্থিতি
কারো কারো জীবনে নিঃসঙ্গতা বয়ে নিয়ে আসে। সেই ব্যাক্তিও অনেক সময় এর হাত
থেকে নিস্তার পান না।
খোরাকের চোটে যেন কখনোই আড্ডার প্রাসঙ্গিকতা
নিয়েই প্রশ্ন না উঠে যায়। তাই উন্মাদীয় আবেদন, খোরাক নিশ্চই থাক, খোরাকের
মত করে , কখনোই সেটা যেন খোঁয়াড়ে পরিনত হয়।
সকলে সুস্থ থাকুন।
(প্রাপ্তমনস্কদের জন্য, উন্মাদীয় বানানবিধিতে সজ্জিত একটি সম্পূর্ন উন্মাদীয় ভাবনার ফসল)
_____________________________________________________