উন্মাদীয় সোমরস
(উন্মাদীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে বর্নিত প্রতি সোমবারের জন্য নতুন সিরিজ)
অবলায়ন
নারী।
নারী মা, নারী স্ত্রী, নারী কন্যা, নারী ভগিনী, প্রকৃতিকেও আমরা নারী রুপেই পূজিত করিইয়া থাকি। কিন্তু আজিকের যুগে নারী মানে রক্তমাংসের ভোগ্যসামগ্রী। কর্মরত চাকুরীজিবী মহিলা বা উদ্যোগপতি থেকে বারবনিতা হয়ে নিতান্ত গৃহবধু, প্রায় সকলেই অধিকাংশ পুরুষের চোখে জৈবিক লালসা চরিতার্থ করিবার জীবন্ত যন্ত্র।
নারী মাত্রেই অবশিষ্ট মানবকুলের নিকটে সৌন্দর্যাভিমানিনী কামিনীকুল। গরবিনী আবেগিনি স্ত্রী রত্ন ললিতলবঙ্গলতা। ধর্ম মানবকে ধারন করুক বা মানবকুল ধর্মকে আহোরন করিয়া থাকুক, ধর্মচরিতানুসারে প্রায় সকল ধর্মেই নারী মানেই অবলা, প্রায় করুনার পাত্র, এবং তাহাদিগকে লইয়া ভাবনার অন্ত নাই। নিজ নিজস্ব সংবিধানানুসারে নারী মাত্রেই অশান্তির কারকের সহিত সমান্তরালভাবে দেবী রুপেও পূজিতা।
শারীরিক ক্ষমতার বিচারে প্রাকৃতিক নিয়মেই রমণীকুল পূং জাতি হইতে সামান্য পিছিয়ে। আর ইহা লইয়া দ্বন্দের অবকাশ নাই। আর বিভেদের বিষবৃক্ষ এই জমিতেই খুব সম্ভবত অঙ্কুরোগমিত হইয়াছিল। রমনী পেলব, মোহিনী শক্তিধারী, কৌমুদীয় রসময়ী, শরীরিসঞ্চালক লাবণ্যলীলাময়ী, সর্বপরী নারীই একমাত্র প্রজননক্ষম। সুতরাং মমত্ব নারীত্বের অন্যতম গুন, কিন্তু সবথেকে বৃহৎ গুনপনা সহ্যশক্তিতে। জীবজগতের সর্বাপেক্ষা সহ্য ও ধৈর্যশীলা জীব।
কবিগন যুগে যুগে নারী কে লইয়া কাব্যরচনা করিয়াছেন, কেহ সিন্ধুহিল্লোল চন্দ্রিকার সহিত, তো কেহ প্রভাকিঙ্করি উচ্ছলাভানুমতী, কোথাও রুপ হংসগামিনী তো কেহ গজেন্দ্রগামিনীর সহিত তুলনা করিয়াছে মৃগনয়নাদিগকে। সাহিত্যিক, ভাষ্কর, চিত্রকরেরা নারী শরীরকে মনুধ্যায়ের ছুরিকাঘাতে ভিন্নভিন্ন অংশে কর্তিত করিয়া সুললিত কাব্যে রসসঞ্চার করিয়াছেন যুগে যুগে। নারীই ভাবনার উৎস। শিল্পসাহিত্যের ভাণ্ডার উচ্ছলিত চিররঙ্গীনি তরঙ্গনী রসবতী দ্বারাই সজ্জিত, কখনো যদি তাহা মানসে তো কখনো প্রতীয়মানে।
কিন্তু ক্ষমতার প্রশ্নে অবলায়নের ইতিহাস অত্যন্ত দ্বীনদরিদ্র। নিতান্তই ব্যাতিক্রম কিছু অধ্যয় ব্যাতিরেকে রমনীদের সহিত রমনীমোহনদের দুরত্ব বেশ কয়েক আলোকবর্ষের। হাতসেপসু, নেফারতিতি, ক্লিওপেট্রা, ইসাবেলা, এলিজাবেথ, ভিক্টোরিয়া, আফ্রিকার আমিনা বা জিঙ্গা, রাশিয়ান এম্পেয়ারের ক্যাথরিন, চাইনিস তু-সাই, বা হাওয়ায়ের লিলিউকালানি হয়ে আমাদের দেশের সুলতানা রিজিয়া বা ইন্দিরা গান্ধী। আর কতিপয় ইতিইতি বিক্ষিপ্ত নাম ব্যাতিত এই তালিকা প্রায় সমাপ্ত। কথিত প্রচলন আমাদিগকের সমাজব্যাবস্থা নাকি ‘পূরুষশাষিত’। কিন্তু সৃষ্টির আদিতে শুধুমাত্র পুরুষ তো আর একা তো এই সমুদায় মানবজাতির বংশবিস্তার ঘটাইতে পারেনি, প্রথম মানবের আবির্ভাবের সাথে সাথেই প্রথম নারীরও নিশ্চিত আগমন ঘটিয়াছিল। নতুবা এই বংশবিস্তার সম্ভবপর হইতো না।
সুতরাং একই সাথে যাত্রা শুরু করিয়াও, স্ত্রীজাতি ক্রমপশ্চাদাভিমুখে প্রত্যাবর্তন করিয়াছে বা বলা ভাল প্রায়ংশে পত্তনাঘটেই রহিয়া গিয়াছে। কেহ বলিবে স্বল্পবুদ্ধাঙ্কের কারনে বা কেহ বলিবে পুরুষের সমকক্ষ দৈহিক বলশালিতা না রহিবার হেতু এই পশ্চাদবিলাশ তথা স্থবিরতা। কারন সে যাহাই হউক এই বর্তমান প্রযুক্তি বিজ্ঞানের যুগেও, যেখানে মঙ্গলকাব্য মঙ্গলগ্রহের লালমাটিতে বসিয়া রচিত হয়, সেই যুগেও সামাজিক বিন্যাসের প্রতি পদক্ষেপে নারীশক্তি কে আলাদাভাবে উল্লেখ করিতে হয়। নারী ক্ষমতায়নের জন্য পৃথকভাবে ভাবনা করিতে হয়।এবং তাহা পুরুষ জাতিই করিয়া থাকেন, অনেকটা দাক্ষিণ্য হিতৈষিতাবৎ।
ক্ষমতা কাহাকে বলে? সমাজবিজ্ঞানের পরিভাষায় ও রাজনৈতিক মতানুযায়ী, নিজস্ব পরিমণ্ডলে কতৃত্বের অধিকারকে ক্ষমতা বলিয়া গন্য করা হয়। বৈধ সামাজিক পরিকাঠামোতে কতৃত্ব সাধনের পথটি একাকি সংগঠিত হইবার পরিসর অত্যন্ত ঋজু। কতিপয় ব্যাতিক্রম ব্যাতিরেকে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই কতৃপক্ষ নামের একটি সমবায় ক্ষমতার ব্যাবহারিক প্রয়োগগুলি করিয়া থাকেন সদস্যদিগের যোগ্যতার বিন্যাসানুসারে।
এবার যোগ্যতা। যোগ্যতা হইল একটি অতি আপেক্ষিক বিষয়। কোন একটি ধ্রুবক যোগ্যতাস্থানে অন্য একটু উচ্চমার্গীয় যোগ্যতার আবির্ভাব হইলে, সেই ক্ষনেই সেই ধ্রুবক যোগ্যতার পদাবনতি ঘটে। অপরপক্ষেও উচ্চযোগ্যতার অপসারনের সাথে সাথেই, নিম্নযোগ্যতা ধ্রুবক মান হিসাবে পরিগনিত হয়। সুতরাং ক্ষমতার কক্ষকেন্দ্রও যে কোন মুহুর্তে পরিবর্তিত হয়। এখন এই যোগ্যতা মান নির্ধারন হইয়া থাকে বলের উপরে ভিত্তি করিয়া। বাহুবল, বুদ্ধিবল আর অর্থবলই যাহার মধ্যে মুখ্য।
নারীকে সন্তানের জন্মদান থেকে তাহাদের লালনপালন করার হেতু, কর্মজীবনের এক বৃহৎ অংশ গৃহুভ্যন্তরেই অতিবাহিত হয়। অরণ্য বাসী জনগোষ্ঠীতে স্ত্রীজাতীও পুরুষদিগের সহিত স্কন্ধ্যে স্কন্ধ জুরিয়া শিকার হইতে যুদ্ধ সকল দৈন্দদিন কর্মই করিত, যাহা আজও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্যমান। এবং যাহা একমাত্র শিশু ব্যাতিত সকল সদস্যদের জন্যই অবধারিত। প্রাচীনকালে একাধিক সন্তান সন্ততি জন্মদান ও পালনের হেতু যৌবনের এক বিস্তৃত অধ্যায় পক্ষান্তরে অধিকাংশ অধ্যয়ই কোথাও বা সমস্ত যৌবনই স্বামী-পরিবার পরিজনের উপরে নির্ভরশীল হইতে হইতেই আজকের রমনী বহুলাংশে কেবলমাত্র গৃহিণী রুপেই রহিয়া যান। অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুরক্ষাই নারীর ক্ষমতায়নের মূল অংশ, যাহা তাহাদের মৌলিক অধিকারও বটে। তাহাদের ব্যাক্তিগত সমস্ত কিছুই স্বামী-সন্তান- আর পরিবার পরিজনদিগকে আবর্ত করিয়া সংগঠিত হইয়া থাকে। বর্তমান সভ্যতাতেও নারী কেবলিমাত্র পুরুষের ভোগ্যবস্তু, সন্তানজন্মদাত্রী ও গৃহকর্মের জন্য বিশ্বস্ত অবৈতনিক সেবিকা রুপেই স্বীকৃতি লভিয়াছে।
এই অবনতির পিছনে প্রধান দায়ী প্রকৃতি, নারীকে সৃষ্টিগত ভাবেই বেশ খানিকটা দুর্বল রুপে আত্মপ্রকাশ করিয়াছে। যাহার কৌশলগত লাভ পুরুষজাতী চতুরতার সহিত করায়ত্ব করিয়াছে। এই ভাবেই ধীরে ধীরে ক্ষমতার মূলস্রোত হইতে বিচ্ছন্ন হইতে হইতে , রমণীকুল নিজ স্পর্ধাকে প্রায় ভুলিয়া পুরুষের পদতলে নিজেকে সঁপিয়া দিয়াছে। অভ্যাস বড় বিষম বস্তু। সুতরাং শত সহস্র বৎসরের যুগাভিযোজনের মধ্যদিয়ে এই স্ত্রীস্বত্তা অতিবাহিত হইতে হইতে বর্তমানে অন্তঃপুরের বস্তুসামগ্রীতে পরিনত হইয়াছে, যাহার নিজস্ব মত প্রকাশের সেরুপ স্বাধীনতা নেই। লৌহখণ্ড নির্মিত ধারালো তরিবারিও অব্যাবহারে মরিচা ধরিয়া চূর্নবিচূর্ন হয়। স্ত্রীশক্তিও বর্তমানে সেই ক্ষয়িষ্ণু দশায় উপনীত।
আমরা দেবীরুপে স্ত্রী জাতির পূজা অর্চনা করিয়া থাকি। শক্তির প্রতিক রূপে মান্যতা দিই। কিন্তু ব্যাবহারিকি ক্ষেত্রে এই প্রয়োগ উল্লেখযোগ্য ভাবেই অন্তর্হিত। ইহার কারন নিশ্চিত রুপেই সেই ‘কতৃপক্ষ’ নাম্নী প্রতিষ্ঠান। কারন মানব সমাজবদ্ধ জীব। কতিপয় ক্ষমতাবান ব্যাক্তি, পূর্বে উল্লেখিত ক্ষমতার উৎপত্তি ও বিন্যাস অনুসারে তাহাদের সংবিধান রচনা করিয়া আসিয়াছে। মানব চরিত্রে স্বার্থ ও তৎসম্বলিত অধ্যয় বিচিত্র বিন্যাসে সজ্জিত। আর এই স্বার্থ চরিতার্থ করিবার উদ্দেশ্যে ও অযোগ্যকে যোগ্য করিয়া তুলিবার অভিপ্রায়ে রাজনীতির ছল-চাতুরীর প্রনয়ন ঘটে। সাংসারিক ও প্রাকৃতিক বাধ্যবাধকতার কারনে সৃষ্ট অনুপস্থিতি হেতু কতৃপক্ষ নামক সমিতিতে, মহিলা সদ্যসের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম। নীচস্বার্থের কায়ীমি রাজত্ব রক্ষার্তে অযোগ্য পুরুষ কতৃপক্ষ গন, কখনো সামাজিক বিধান, কখনো ধর্মীয় বিধান বা কখনো নিতান্তই বলপূর্বক, ক্ষমতার অপব্যাবহার করিয়া নারীকে যোগ্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করিতে করিতে, সেই চলমান ঘরানাকেই বিধান রূপে স্থাপনা করিতে সক্ষম হইয়াছে।
বিজ্ঞানের নিয়মেই, কেহ মূলকক্ষপথ থেকে বিচ্ছিন্ন হইয়া গেলে পুনরায় নতুন কোন বল ব্যাতিরেকে সেই পুরাতন কক্ষপথে পুণঃস্থাপিত হইবার আশা নাই বলিলেই চলে। এক্ষনে এই বল বাহ্যিক বা আভ্যন্তরিন, যেকোনটিই হইতে পারে। মাঝে মধ্যেই আমরা ইতিস্তত যে নারী শক্তির উত্থান পরিলক্ষিত করি তাহা নিতান্তই কোন এক বিশেষ ব্যাক্তির আভ্যন্তরিন বলের দ্বারা প্রাপ্ত শক্তির জয়। যাহা ওই নারীকে ক্ষমতার কেন্দ্রস্থলে লব্ধপ্রতিষ্ঠ করিতে সক্ষম হইয়াছে।
আজিকে চতুর্দিকে একটা গুরুগম্ভীর ঢক্কানিনাদ, যে নারীকে ক্ষমতা প্রদান করিতে হইবে। বর্তমান বিশ্বলোকে ইহাই অন্যতম সার্বজনীন বিষয়। কিন্তু আমরা এই নির্লজ্জ উদযাপন করিয়া কি রমনীকুলকে অনুকম্পা দেখাইতেছি না! নারীর মৌলিক ক্ষমতা, তাহাদের জন্মগত অধিকার, বাকি সমাজ অনৈতিক উপায়ে যারা রুদ্ধ করিয়া রাখিয়াছিল, তাহা সলজ্জ ও সসম্মানে নারীজাতিকে ফিরিইয়া দেয়ার মধ্যেই গৌরব, সলাঙ্কার অনুষ্ঠানের মধ্যে নহে। উন্মাদীয় মতে সেটা নিশ্চিত রুপেই স্ত্রীজাতীর অপমান। কারন নারী কখনই অনুগ্রহের পাত্র নহে। দান করা বস্তুর উপরে দাতার একটা আমিত্ব ভাব লুকাইয়া থাকিবেই। অনেক ক্ষেত্রে দানকৃত বস্তু কারিয়া বা ছিনিয়া লইবার নিকৃষ্ট উদাহরনেরও অভাব নাই। তাই ক্ষমতায়ন দান বা প্রদান নয়, নারীকে স্বীয় বলে তাহা অধিকার করিতে হবে। তবেই তাহা কায়েমি ও গরিমাময় হইবে।
নারীর ক্ষমতায়ন শুধুমাত্র নিজস্ব স্বার্থ বা স্ত্রীজাতীর স্বার্থ সুরক্ষিত করিবার উদ্দেশ্যে হইলে, তাহা অল্পদিনেই আবার হাতছারা হইতে বাধ্য। পরিবার ও সংসারই হইল রাজনীতির সুতিকাগৃহ, আর সেই সংসদের অধিপতি নিঃসন্দেহে রমনীগন। তাহা হইলে সঠিক শিক্ষা ও পরিচর্চা পাইলে স্ত্রী জাতির অসাধ্য কোন কোন কর্ম নাই এই ভূলোকে, যাহার সম্পাদন করিতে অক্ষম। ক্ষমতাবান নারীগনদিগকে গোটা সমাজের জন্য ভাবিবার অভ্যাস করিতে হইবে। এমন এক পরিবেশের জন্ম দিতে হইবে যেখানে প্রভুত্বের বদলে মমত্বের রাজত্ব চলিবে। উদাহরণস্বরূপ একজন মহিলা আরক্ষা কর্মীর পিছনে যেন তিন জন পুরুষ কর্মীকে পাহারা দেবার জন্য না থাকিতে হয়। উক্ত পেশায় যথেষ্ট পরিমানে প্রশিক্ষিত মহিলা কর্মীর সংস্থান থাকিলে তাঁহারা নিজেরাই নিজেদের রক্ষা করিবার পাশাপাশি সমাজকে সুরক্ষা প্রদান করিতে সক্ষম। কারন এই নারীই নিতান্ত অসহায় শিশুকে আপন ক্রোরে সুরক্ষা প্রদান করিয়া তাহাকে পৃথিবীর উপযুক্ত করিয়া তোলে। অন্যথায় এই দূর্দশাগ্রস্থ বৈষম্য ঘুচিবার নহে।
অনেক পন্ডিতগন সমাজের সর্বস্তরে নারীদের সমান অধিকারের দাবী উঠাইয়া থাকেন। কিন্তু তাহা সমাজের পক্ষে আরো ভয়াবয়। অধিকারের দাবি যদি তুলিতেই হয়, তাহা হইলে মহিলাদের জন্য উচ্চশিক্ষা আবশ্যিক করার দাবি করা হউক। প্রয়োজনে প্রকৃত দুঃস্থদের জন্য নিঃখরচায় তাহার বন্দ্যবস্ত করা হউক। স্বভিমান জাগ্রত না হইলে, সমান অধিকার কখনই রক্ষিত হইতে পারে না। আর স্বধিকারকে প্রকৃত শিক্ষা বিনা জাগ্রত করিবার দ্বিতীয় পন্থা নাই।
সরকার বাহাদুর আইন প্রনয়ন করিয়া, স্বীয় পছন্দ ও স্ববিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতাকে নারীদের মধ্যে আনয়ন করিয়া, ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরনের একটা সৎ প্রয়াস চালাইতেছেন, নিঃসন্দেহে সাধু প্রয়াস, কিন্তু কতজন নারী সেই পর্যন্ত পৌছাইতে পারিতেছেন! ইহা কেবলিমাত্র কয়েক শতাংশ দপ্তরী রমনীকুলের ক্ষেত্রেই লাগু। বিভিন্ন সামাজিক , সরকারি ও ধর্মীয় মানদন্ডের যাঁতাকলে পিষ্ট, গৃহ ও কর্মস্থলের মধ্যেকার দুঢ়হ সমন্বয় রক্ষা করিবার কর্মটি অত্যন্ত বন্ধুর, তাহার উপরে চলমান লিঙ্গবৈষম্যের এক অলঙ্ঘ্যনীয় বেড়াজাল নাগপাশের ন্যায় বেশকয়েকটি প্রজন্মকে ঘিরিয়া রহিয়াছে, সেই প্রাচীরকে সকলের পূর্বে বিলীন করিতে পারিলে, তবেই কর্মস্থল কে নিরাপদ বানানো যাইতে পারে।
স্ত্রীলোকাদিগনে ক্ষমতাবান হইতে গেলে নিশ্চিত রুপেই সৌন্দর্যের অধিষ্ঠাত্রী রুপে আত্মজাহির করিতে হইবে। এই সৌন্দর্য মোটেই রঙ ও প্রসাধন সর্বস্ব কোমোলাঙ্গী নহে, বিদ্যা বুদ্ধি ব্যাক্তিত্ব ও সুস্থ সক্ষম শরীর দ্বারা প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতাকে পরাক্রান্ত করিয়া সৌন্দর্যের বিকাশ ঘটানোর নামই সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ। এবং এই পদ্ধতিটিকে ব্যাক্তিকেন্দ্রিক আবদ্ধ না রাখিয়া সমাজের প্রত্যন্ত স্তরে পৌছাইইয়া দেবার মধ্যেই এর ক্ষমতায়নের সফলতা নির্ভর করিবে। কারন কতৃপক্ষ নামক সমিতিতে যতক্ষন না সমসংখ্যক বা পুরুষের অধিক স্ত্রী ক্ষমতার উপস্থিতি থাকিবে, ততক্ষন পর্যন্ত ক্ষমতায়নের বিন্যাস পরিষ্ফুটিত হইতে পারেনা। আর শিক্ষাই এই ক্ষমতায়নের প্রাথমিক শর্ত। কারন শিক্ষা ব্যাতিত জ্ঞানের উন্মোচন সম্ভবপর নহে। অধিকার বোধ সঞ্চারিত করিতে আত্মপ্রত্যয়ের প্রয়োজন, আর সেই শক্তি অবশ্যই মানসিক। যাহা চরিত্র গঠনের অনুশীলনের মাধ্যমে গঠিয়া উঠে। সহিষ্ণুতা নারী চরিত্রের অন্যতম গুন, যাহা পুরুষ অপেক্ষা কয়েকগুন বেশী। সতরাং সহিষ্ণু ব্যাক্তির নিকটে ক্ষমতা ন্যাস্ত থাকাটা, সকল ক্ষেত্রেই সামাজিক সুরক্ষা প্রদান করিয়া থাকে।
শিশুর প্রথম শিক্ষা মাতৃক্রোড়েই। তাই স্ত্রীশক্তির জাগরন বিনা বীর জন্ম নিতে পারেনা, ব্যাতিক্রম রহিত। নারীর শৃঙ্গার নিশ্চই থাকিবে, সনাতনী ভ্রুপল্লবের ছুরিকাঘাতের সাথে সাথে অসিবিদ্যাতেও পারঙ্গম হইতে হইবে। স্তন- যোনী-নিতম্বের অধিকারিণীগন শুধুই শয্যাসঙ্গিনী নয়ে, তাহা প্রমানের দায়িত্বভার স্ত্রীজাতিরই। সলজ্জ অবগুণ্ঠন উঠাইয়া জ্ঞানের আলোককে প্রবেশের অধিকার দিতে হইবে। যে পুরুষ নারীকে অবদমিত করিয়া রাখিয়াছে, তাহারা ওই নারীর যোনীদ্বার হইতেই ভুমিষ্ট হইয়া স্তনযুগল হইতে অমৃত সুধা পানকরাইয়া দৈহিক শক্তি প্রদান করিয়াছে। সুতরাং যাহারা পুরুষের জন্ম দেন, তাঁহারা কোন অংশেই পুরুষ হইতে কম যোগ্যতার হইতে পারেনা। শুধু আত্মবিশ্বাসটুকু প্রয়োজন।
আমরা যারা নারী ক্ষমতায়নের জন্য চিৎকার করছি, তাঁহারা সর্বপ্রথমে নিজ গৃহের ভগিনী, কন্যা, ও স্ত্রীকে শিক্ষিত করিয়া তুলি। তাহার পর নিজ পড়শিগনকে, স্পম্ভপর হইলে আত্মীয়স্বজনদিগকে। এইভাবে সম্মিলিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সমবেত ভাবে শুভারাম্ভ করিলে অচিরেই নবরুপে ক্ষমতার বিন্যাস হইবে। যাহার প্রত্যক্ষ সুফল গোটা সমাজের সাথে সাথে বিশেষ করিয়া পুরুষ জাতিই উপভোগ করিবে। দায়িত্বের বাঁটোয়ারা হইবে। প্রদেয় ক্ষমতা হইতে স্বহস্তারোপিত ক্ষমতা অনেক অধিক ইজ্জতের।
কারন ক্ষমতা মানে শুধুই প্রভুত্ব নহে, ক্ষমতা মানে স্কন্ধে ভরষার হস্ত অর্পন করিয়া, সকল পরিস্থিতিতে সাথে থাকিবার আশ্বাস।
তবেই হইবে ক্ষমতার প্রকৃত অবলায়ন।
~~~~~~~~~
বিঃদ্রঃ- উন্মাদীয় বানানবিধি অনুসৃত।
উন্মাদ হার্মাদ
১৪/১২/২০১৫
~~~~~~~~~
বিঃদ্রঃ- উন্মাদীয় বানানবিধি অনুসৃত।
উন্মাদ হার্মাদ
১৪/১২/২০১৫