জাতীয়তাবাদের হিড়িগ কি শুধু মাত্র খেলার মাঠেই আবদ্ধ? যদি সেটাই হয় তাহলে ক্রিকেট ছাড়া অন্য খেলাগুলোর দোষ কি? সেখানে দেশপ্রেমিক দের ভীর কোথায়?
সেখানে জয় ভারত মাতা বলে চিৎকার করলে, এথলিট গুলো অন্তত খেতে পায়। স্পনসর পায়, যাতে যাতাওয়াতের খরচটা উঠে। এদিনিই তো সৌরভের দাদাগিরি অনুষ্ঠানে এক ভারত্তোলক মহিয়সী কে দেখছিলাম। পয়সার অভাবে তিনি বিদেশ যেতে পারেননি, অথচ উনি জাতীয় চ্যান্মপিয়ন, নিজের বিভাগে।
উনি বিজ্ঞাপনের মুখ হবার যোগ্য হয় বলে, যদি ওনার কীর্তিটা দেশপ্রেম দেখানোর অযোগ্য হয়, তাহলে ধিক এই দেশপ্রেমকে।
আমি যতই ভারতীয় হইনা কেন, একমাত্র ভারতের বিপক্ষে না খেললে, আমি চিরদিনিই ওয়েষ্ট ইন্ডিজের ফ্যান। বিশেষ করে ওদের কেয়ারলেস ফিল্ডিং স্টাইটা আমায় দারুন আকর্ষন করে। ভাবটা এমন যেন "আরে দূর আমরা তো বোল্ড করব, বা যতই রান করনা কেন, আমাদের গেইল আছে, জাষ্ট উড়িয়ে দেব"। আমি এটাকে তীব্রভাবে উপভোগ করি। তার জন্য দেশপ্রেমিক হবার প্রয়োজন নেই। ক্রিকেটকে ভাল বাসলে, সচীন-সৌরভ কে তাকে তুলে রেখে, আক্রম-জয়সুরিয়া- সাকলিন- এন্ডি ফ্লাওয়ার- ম্যাকুলাম- হেডেন- গিলক্রিষ্ট- ডিভিলিয়ার্স বা জন্টিকে ভাসবাসতে হলে দেশদ্রোহী হবার প্রয়োজন নাই, ক্রিকেট প্রেমিক হলেই হবে।
আজকাল সব দেশেই একটা ট্রেন্ড চালু হয়েছে। জনপ্রীয় দেশীয় প্রোডাক্টের সাথে দু চামচ দেশপ্রেম গুলে দাও। সেটা বাবা রামদেবের পতঞ্জলী হোক বা বাবা আদমের জামানার BSNL। এদের রকমাত্র সম্পদ উগ্র দেশপ্রেমিকরা। পরিসেবা যেমন নিকৃষ্টই হোক না কেন। দেশপ্রেমের এক ডোজ বাটিকা থাকলেই প্রোডাক্ট হিট।
সেখানে ক্রিকেট অলরেডি হিট, এখানে দেশপ্রেমকে সংগঠিত করে অন্য প্রোডাক্ট বেচা যায়।
যতই ক্রিকেট তৃতীয় বিশ্বের মাত্র ১৬ টা দেশ খেলুক, জনসংখ্যার বিচারে সেটা চিন বাদে অবশিষ্ট পৃথিবীর জনসংখ্যার থেকে অনেক বেশি।
তেলা মাথায় তেল দেবার পদ্ধতিটি সকলের জানা।
ফ্যান হিসাবে আমিও ক্রিকেটের অন্ধ ভক্ত। ম্যাচ দেখতে এক সময় ঢাকাতেও গেছিলাম। ভারতের অধিকাংশ স্টেডিয়ামেও গেছি তীর্থ দর্শনের ঢং এ। সেটা অবশ্যই ক্রিকেটের প্যাশনে। এর সাথে অন্ধ জাতীয়তা বাদ গুলিয়ে ফেলিনি কোন দিন।
আজ কি আমাদের দেশে, কি বাংলাদেশে কি পাকিস্থানে, খেলাটা আর খেলার জাইগায় রাখেনি। কি সব তীক্ষ্ণ অসহ্য গালিগালাজ। সোস্যাল মিড়িয়ার অবস্থা আরো ভয়াবহ।
কাল ইডেনে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে, জাতীয় সঙ্গীত গাইবার সময়, পাকিস্থানে টা আগে কেন গাওয়া হবে, এই মর্মে আমার D ব্লকের কিছু জাতীয়তাবাদী(!) তীব্র চিৎকার জুড়ে দেন, আর শাফকাত আমানত আলি গানটা ধরার সাথেই "জয় মাতা দি" বলে কি তীব্র হুঙ্কার। হয়তবা লজ্জা পেয়েই হবে, ২০-৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ব্যাপারটার পরিসমাপ্তি ঘটে, মিনিট দুয়েকের মধ্যে অমিতাভের সাথে সকলে গলা মিলালাম।
অন্যকে অসম্মান করে এটা কোন জাতীয়তাবাদ? অন্তত খেলার মাঠে "স্পোর্টসম্যান স্পিরিট" বলে যে শব্দটা আছে, সেটার কি আসপাস দিয়েও যায় এই ঘটনাক্রম গুলো?
বাংলাদেশ না হয় নোংরামির চুরান্ত রুপ প্রদর্শন করছে, জাতীয়তাবাদের নামে। আমরাও তো পাল্লা দিচ্ছি সমান তালে। তাহলে পার্থক্য কোথায় থাকলো?
ক্রিকেট ছারাও অনেক খেলা আছে, যারা সত্যিই রুগ্ন। তাদের সরকারও দেখেনা ঠিকঠাক। আমরা যদি তাদের জন্য "জয় হিন্দ ধ্বনি তুলি, তাদের পিছনেও কর্পোরেট হাউস গুলো তাকার থলে নিয়ে দৌড়াবে।
সম্মান পরে জানাবেন, আগে একটা নুন্যতম চাহিদা পুরনের জীবনটা তাদের দেওয়া যায় কিনা ভেবে দেখি। তারা বিরাট কোহলির সম্মান না পাক, অন্তত "রণদেব বসু" মার্কা আয় জুটলেই বর্তে যাবেন।
যাঁরা টিভিতে ম্যাচ দেখেছেন, তাঁদের না জানারই কথা। আমরা যারা মাঠে গেছিলাম, বিশেষত আমি, সন্ধ্যা পাঁচটাই মাঠে মানে ইডেনে ঢুকেছি, পাঁচটা দুই থেকেই তীব্র বৃষ্টি, মুষলধারে। মোট তিনবারে শেষবারের মতন ছারল ০৬:৩৫ এ। এর পর প্রায় দেড়শো জনের মত একটা দল, যারা সেই পাঁচটা থেকেই সমানে মাঠে বসে বসে ভিজচ্ছিলো, তাদের অমানুষিক পরিশ্রম। খেলাটা চালু করার জন্য। তারা একবারও পাকিস্থান মুর্দাবাদ বলেনি, বা জয় মাতাদি ও বলেনি। অথচ ওই মানুষগুলো না থাকলে আমরা এই আমোদ করার সুযোগই পেতাম না।
আসলে কর্তব্য আর ক্যালামো এক নয়। ওদের কে ধন্যবাদ দিয়েছে আমার জানা নেই। না দেওয়াটাই যে আমাদের রেওয়াজ।
দেশপ্রেমিক তো ওরাই, দেশকে জেতানোর জন্য মঞ্চ প্রস্তুত করে দেওয়া। আমরা যারা মর্কট নাচ নাচছিলাম, তারাও কি একবার তাদের জন্য মেক্সিকান ওয়েভ তুলেছি? ক্যামেরা ব্লিঙ করেছি? করিনি, কারন ওরা যে বিজ্ঞাপনের মুখ নন, ছাপোষা কতগুলো গরীবগুর্বো। ওটাই তো ওদের কাজ রোদে পিড়বে জলে ভিজবে।
আর আমরা ২০ টাকা প্যাকেট জলের পাউচ সাথে নিয়ে, জাঙ্গিয়ায় লুকিয়ে আনা সিগারটে কাউন্টার নিতে নিতে (আশ্চর্যজনকভাবে কেও কাওকে শুধান নি যে কোন জাত, মহার্ঘ সিগারেট আনা ব্যাক্তি হসাবে আমি এমনিতেই তাদের কাছে বীরের মর্যাদা পাচ্ছি, সেখানে জাতের কথা মনে আছে কার? চার ঘন্টা সিগারেট না খেয়ে থাকার চেয়ে, চার ঘন্টা জাতীধর্ম ভুলে থাকাটাই বুদ্ধুমানের কাজ। আর কে না জানে অভাবে বুদ্ধি বেশি কাজ করে) সুন্দরী মহিলার পুরুষ সঙ্গীটি, তাদের জন্য বরাদ্দ সিটের জবরদখলকারি ব্যাক্তিটিকে টিকিট দেখাতে বলায় " দেখি আপনার টা" এই বলার অপরাধে প্যান্টের চেন খুলে লিঙ্গ প্রদর্শন করে ও অট্টহাস্যে মেতে উঠে দেশপ্রেমিক বনে যায়, আর বাকিদেরো ঠিক করে দিই, কারা কারা দেশদ্রোহী
এথলেটিক্স এর প্লেয়ারদের নুন্যতম মজুরি টুকু কি তাঁরা পান, বিশ্বমঞ্চে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করে?
অবশ্য জিতে গেলে তাঁকে পুরষ্কারের বন্যায় ভাষানো হয়, আর না হলে! সে নিজেই সময়ের স্রোতে ভেষে যায়।
অবশ্য জিতে গেলে তাঁকে পুরষ্কারের বন্যায় ভাষানো হয়, আর না হলে! সে নিজেই সময়ের স্রোতে ভেষে যায়।
এটা কি বিকিয়ে যাওয়া পঙ্গু দেশপ্রেম নয়? নাকি এ সবই বিজ্ঞাপনী চমক মাত্র।
কে না জানে দেশপ্রেমের কাটতি এখন বেশ তেজী। হোক, সাথে সাথে এথলিট রা ও মর্যাদা পাক, নুন্যতম ইনকামের গ্যারান্টি সহ।
@উন্মাদ_হার্মাদ