Monday, 29 October 2018

।। একটি শীতকালীন ছ্যাঁচোড় ।।

হিম পরেছে উঠোন জুড়ে
শীতল আবেশ ছেয়ে,
ছুঁয়ে দেখ আমি আজও বেঁচে
তোর প্রেমে, ও মেয়ে।
তোর বক্ষ মাঝের উপত্যকায়
ছিল, অনুভুতির চাষ;
ও মেয়ে তুই নিড়েন দিলি
হল আমার সর্বনাশ।
কোমর বেয়ে নাভিপদ্ম,
যেথা সুখের বসবাস;
সেখানে আজ অনুপ্রবেশ
জবরদখল, খাস।
নিঃশ্বাস জুড়ে ছিলাম আমি
তোর শিক্ত ঠোঁটের খাঁজে;
অনিঃশেষ জিহ্বা বিলাস
বিনি সুতোর সাজে।
কাম রসেতে সাঁতার কেটে
রাত সাগরে পাড়ি,
সোহাগপুরের সাকিন ভুলে
কেমনে দিলি আড়ি?
ও মেয়ে তুই কই হারালি
কোন সে অন্ধ বাঁকে!
আলিঙ্গনে বাঁধব কারে
দুইটি বাহুর ফাঁকে?
কঠিন শৈত্য, আপন হারা
মৃত্যুময় এ বাঁচা,
গচ্চা যাবে বসন্তদিন
শূণ্য হৃদয় খাঁচা।
তোর, চোখের শাসন ফিরুক আবার
প্রখর গ্রীষ্ম বেয়ে!
চেনা ঘামের গন্ধ মেখে.....
শুনলি কি! ও মেয়ে?
________________
মিস্ত্রিঃ উন্মাদ হার্মাদ

Thursday, 25 October 2018

।। ...ও মেয়ে ।।

তোর সুখেতে মাতাল সুখী,
দুঃখে পাগলপারা;
তোর পিপাসায় চাতক আমি,
উন্মাদ তোকে ছাড়া।
প্রতীক্ষাতে ক্ষণযাপন, কখন-
প্রেমের ভেলা ভাসবে!
ও মেয়ে বল আমার মত
তোকে আর কে ভালবাসবে!
কে ভাঙাবে তোর অনুরাগ
কার ছোঁয়াতে জাগবি
ও মেয়ে তুই জীবনটা ভর
আমার সাথে থাকবি?
টক ঝাল মিঠে ঝগড়া মাখা
আদর পাবি সারাক্ষণ;
ও মেয়ে তুই খুঁজে পাবিনে
আমার মত আপনজন!
বন্ধু হয়ে থাকবি পাশে?
মানিয়ে নিবি সব ধারে?
ও মেয়ে তুই সব ভুলবি
যদি, আঁকড়ে ধরিস আমারে।

Sunday, 14 October 2018

।। ব্যতিক্রমী শারদ শুভেচ্ছা ।।

নির্দিষ্ট কাউকে উদ্দেশ্য করে এই পোষ্ট নয়। ছ্যাকা খাওয়ার পর হতভম্বতা কাটিয়ে উঠে খানিক বার্ণল লাগালাম নিজের ক্ষতস্থানে।.
বলা ভাল এটা ডিসক্লেইমার টাইপ।

 সকল বন্ধু ও সদস্যদের জন্য।

আমি আপনাদের কাছে বিনীত আবেদন/অনুরোধ করছি, আমার কোনো পোষ্টে, আমার কমেন্টের প্রত্তুতরে, আমার সাথে একসাথে মেনসন করে কাউকে ডাকার আগে, তাঁর থেকে অনুমতি নিয়ে নেবেন। তাঁর সাথে আপনার কোনো ক্ষার থাকলে বা বিশেষ সম্পর্ক (ঝগড়া বা ভালোবাসা যা ই হোকনা কেন) আমার পোষ্টে কাউকে 'মেনসন' করে কোনো পোষ্ট বা মন্তব্য করবেননা। কে কোথায় কার সাথে কি করে রেখেছেন সেটা আমি জানিনা, জানার আগ্রহও নেই (তর্কে গেলে জেনে নেবার সম্পূর্ণ অপশন খোলা রয়েছে)। কিন্তু সেটার দায় নিয়ে হলে খুব কষ্ট হয় বৈকি।
আমি চাইনা আমার জন্য কেউ অপ্রস্তুতে পড়ুক।
কারন কারোর চার পয়সা উপকার করতে পারিনি, অহেতুক ক্ষতিই বা কেন করব?
ফেসবুকে একই সাথে আমি সকলের কাছে ভালো থাকতে পারবনা, তাই বিগত ১০ বছরে আমার ঘোষিত শত্রুর সংখ্যা অনেকের বন্ধু চেয়ে বেশি। যাদের সাথে আপনাদের অনেকেরই যথেষ্ট দহরম মহরম, এতে আমার কোনো গাত্রদাহ নেই। কারন আমি যাকে ছুড়ে ফেলেছি জীবন থেকে, সেটা জেনে ছুঁড়েছি। লোম যতক্ষন শরীরে আছে, ততক্ষণই তাঁর পরিচর্যা, তাই ছুঁড়ে ফেলা মালগুলো অবাছিত লোক। কারোর থেকে ১ পয়সার হেল্প নিইনি, বা কে আমার কাছে বকেয়া কিছু রেখে যায়নি। আপনাদের কখনো কাউকে আমি কোনোদিনও মানা করিনি, যে ওর সাথে আমার এতো ঝামেলা- আপনি দয়াকরে মিসবেননা, - নাহ একটিবারও বলিনি। বলবও না। কারন আমার ঝগড়ার দায় আমার, আপনার নয়।
প্রত্যেকের নিজস্ব স্পেস, ভাবধারা, ও মতামত আছে। যেটা আমি অত্যন্ত সম্মান করি।
আমি ফেসবুককে যথেষ্ট সিরিয়াসলিই নিই, এখানে বন্ধু পেয়েছি, প্রেম করেছি, ঝগড়া করেছি, ব্যাবসা পেয়েছি, ইনভেষ্টর পেয়েছি, সব সব সব পেয়েছি। মজা আর আড্ডাই হচ্ছে এর ধারক, মজা বা হালকা চটুলতা গুলো বাদ দিলে জীবন পানশে এটা আমি মানি ও জানি। বন্ধুদের কাছে আমার সকল কিছু ওপেন। নিজের মত চাপিয়েও দিইনা, অন্যের মতকেও গিলে নিইনা।
এরও পর যদি কেউ কিছু কমেন্ট , পোষ্ট করেন তার দায় সম্পূর্ণ যিনি যিনি লিখছেন তাঁর। আমার মেনশন কৃত সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তির নয়। তারও পরে যদি কিছু অসঙ্গতি হয়- তখন পুরাতন ফর্মে ফিরে BAD BOY হয়ে "তুমি আমি এক দেহে লীন' ভেবে নিয়ে চোখ বুজে 'তুমি' সেজে যাওয়া কিছুক্ষণের জন্য। তারপর? ব্রহ্মা জানে গোপন কম্মটি।
যারা ২০১৫ সাল ও তার আগের উন্মাদকে দেখেননি, তারা দয়া করে এই পোষ্ট পড়বেননা। এটা আপনার কমেন্টের উপযোগী নয়, এবং আপনি মিসিং লিঙ্ক গুলোর সন্ধান জানেননা। জাষ্ট এটাকে ইগনোর করুন।
এই পোষ্ট যিনি সিরিয়াসলি নেবেন, তাঁর জন্য সিরিয়াস, মজা ভাবলে মজা। কারন স্পষ্ট কথাতে আমার কোনো কষ্ট নেই।
আমি পৃথিবীতে সকলের কাছে ভাল হতে পারবনা, ইচ্ছা ও ক্ষমতা কোনোটাই নেই। যার কাছে আমি ঋণী তাঁর/ তাঁদের ছাড়া বাকিদের নিয়ে আমার এতটুকু আগ্রহ নেই, এক্সট্রা মান ইজ্জতেরও স্টক নেই। 'বন্ধু'দের কাছে আমার জীবন উতসর্গীত, এবং জীবনের শেষদিন পর্যন্ত জ্ঞানত জুতোজোড়া বয়ে দেব, এমন মানসিকতা যুক্ত। যেটা কখনই বদলাবেনা, মস্তিষ্কে আঘাত পেয়ে স্মৃতি (ইরানি নয়) না হারালে।
প্রসঙ্গ অকপটঃ এখানে কেউ যখন থাকেন, সেটা সম্পূর্ণ তাঁর ইচ্ছাতেই থাকেন। এখানেও কোনো জোর নেই। অকপটে থাকাটা আমার দুর্বলতাও নয়, শক্তিও নয়। এটা আমার প্যাশনের জাইগা, এখানে টাকা ও সময় উভয়ই খরচা করি অকাতরে। এর পরেও অকপট পার্ট অফ লাইফ ভায়া ফেসবুক, হার্ট অফ লাইফ নয়। কাল অকপট না থাকলেও আমি ও আপনি থাকব। সুস্থ সম্পর্কটা টিকে যাবে আজীবন।
ছোট পরামর্শঃ মজা ততটাই করুন, যতটা আপনি নিজে নিতে সক্ষম।
উপসংহারঃ আমার যাবতীয় সকল ভাল কিছুর দায় বা কৃতিত্ব যেমন আমার, তেমনই আমার খিস্তি, দুর্ব্যবহার, অসামাজিকতা, মাগিবাজি, এক্সট্রা গাড়পেয়াজি, ক্যালোয়াতি, সবজান্তা গেঞ্জিওয়ালাভাব, অন্যের পিছনে কাঠিবাজি, ফাঁপা ডায়লোগবাজি, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, সহ যাবতীয় খারাপ কিছুরও সমস্ত দায়ভার আমার একান্ত নিজস্ব। কেউ এর জন্য দায়ী নেই, বা দায় নিয়ে হয়না। বিগত দিকে কাউকে নিতে হয়নি, আগামীতেও কাউকে নিতে হবেনা।
ধন্যবাদ।
শারদীয়ার শুভেচ্ছা।

Wednesday, 10 October 2018

।। দুর্গাপূজা ।।





শ্রী শ্রী চন্ডি গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ের কাহিনী অনুসারে:- প্রলয়কালে পৃথিবী একবিরাট কারণ–সমুদ্রে পরিণত হলে শ্রীবিষ্ণু সেই সমুদ্রের উপর অনন্তনাগকে শয্যা করেযোগনিদ্রায় মগ্ন হলেন। এই সময় বিষ্ণুর কর্ণমল থেকে মধু ও কৈটভ নামে দুই দৈত্যে নির্গত হয়ে বিষ্ণুর নাভিপদ্মে স্থিত ব্রহ্মাকে বধ করতে উদ্যত হল। ভীত হয়ে ব্রহ্মা বিষ্ণুকে জাগরিত করবার জন্য তাঁর নয়নাশ্রিতা যোগনিদ্রাকে স্তব করতে লাগলেন। সন্তুষ্ট হয়ে দেবী শ্রীবিষ্ণুকে জাগরিত করলে তিনি পাঁচ হাজার বছর ধরে মধু ও কৈটভের সাথে মহাযুদ্ধে রত হলেন। পিতৃপক্ষ আর দেবীপক্ষর সন্ধক্ষিণ হচ্ছে মহালয়া৷ ভাদ্র মাসের কৃষ্ণা প্রতিপদ শুরু হয়ে পরর্বতী অমাবস্যা র্পযন্ত সময়কে দেবীপক্ষ বল৷ পুরাণ মতে ব্রহ্মার নির্দেশে পিতৃপুরুষরা এই ১৫ দিন মনুষ্যলোকের কাছাকাছি চলে আসনে৷ তাই এই সময় তাঁদরে উদ্দেশ্যে কিছু র্অপণ করা হলে তা সহজেই তাদের কাছে পৌছায়। তাই গোটা পক্ষকাল ধরে পিতৃপুরুষদেব স্মরণ ও মননের মাধ্যমে র্তপণ করা হয়৷ যার চূড়ান্ত প্রকাশ বা মহালগ্ন হল এই মহালয়া৷
অনেকেই এই দিনটিকে দেবীপক্ষের সূচনা বলে থাকেন। যদিও এটি একটি জনপ্রিয় ভ্রান্ত ধারণা৷ মহালয়া পিতৃপক্ষরে শেষ দিন৷ পরের দিন শুক্লা প্রতিপদে দেবীপক্ষের সূচনা হয়৷ সেই দিন থেকে কোজাগরী পুর্ণিমা পর্যন্ত ১৫ দিনিই হল দেবীপক্ষ৷
মহালয়া শব্দরে র্অথ অনুসন্ধান করলে দখো যাবে মহান+আলয় =মহালয়৷ সঙ্গে স্ত্রীকারাত্মক আযুক্ত হয়ছে, আবার মহ শব্দের র্অথে পায় পুজা এবং উত্সব৷ অর্থাৎ মহালয়া একটি র্অথে দাঁড়ায় পুজা বা উত্সবের আলয়৷ অন্যদিকে, মহালয়া বলতে পিতৃলোককে বোঝায়৷ যখন, বিদেহী পিতৃপুরুষ অবস্থান করেন৷ সেক্ষত্রে পিতৃলোককে স্মরণের অনুষ্ঠানই মহালয়া৷ এই দিনটিকে পিতৃপূজা ও মাতৃপূজার পরম লগ্ন বলে মনে করা হয়৷
মহালয়ার মূল মন্ত্রের দিকে যদি তাকানো যায়, তাহলে তারমধ্যে এক বিশ্বজনীন চেতনা লক্ষ্যকরা যাবে, সেখানে বলা হচ্ছে, “ময়া দত্তনে তোয়নে তৃপ্যান্ত ভুবনত্রয়ম”৷ অর্থাৎ র্স্বগ, র্মত, পাতাল এই তিন ভুবনকে এই মন্ত্রর মাধ্যমে স্মরণ করা হয়৷ এই মন্ত্রোচ্চারণ করে তিন গণ্ডুষ জল অঞ্জলি দেওয়াই রীতি। এর মাধ্যমে বিদেহী পিতৃপুরুষ ও তাঁদরে র্পূবপুরুষকে স্মরণ করা হয়৷ এখানে কোনও জাতপাত বা শ্রেনীবৈষম্য নেই। আত্মীয়– অনাত্মীয় ভেদ নেই৷ হিন্দু অহিন্দু দ্বন্দ্ব নেই৷ দেশ–কালের সীমা নেই৷ আব্রহ্ম স্তম্ভ পর্যন্ত জগত তৃপ্যতু৷ এই মন্ত্র উচ্চারন করলে ব্রহ্ম থেকে পদতলে তৃণ র্পযন্ত সকলরে উদ্দেশ্যে র্তপণ করা হয়৷ মহালয়ার এই র্তপণ ভারতীয় সংস্কৃতির অন্যতম ঐতহ্যি, যা র্সবজনীন তথা বশ্বিজনীন চেতনা থেকে উদ্ভূত।
মহালয়ার আগের পনেরটি তিথী হলো - প্রতিপদ, দ্বীতিয়া, তৃতীয়া, চতুর্থা, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী, একাদশী, দ্বাদশী, ত্রয়দশী, চতুর্দশী, ও অমাবশ্যা।
মহালয়ার দিন মা দূর্গা সন্তানাদি,সখী জয়া ও বিজয়াকে নিয়ে দলবলসহ পৃথিবীতে আগমন করেন। এইদিন চন্ডীপাঠ করে মা দূর্গাকে আমন্ত্রন জানানো হয়।
সনাতন হিন্দু সমাজের বেশীরভাগ বাড়িতে ঘট,ফুল, জল,নৈবদ্য সহকারে মা কে আমন্ত্রন জানানো ভক্তি এবং সাথে আলপনা এঁকে মায়ের ধরনীতে ও গৃহে আসার পথকে শোভনীয় করতে শিল্পমনের পরিচয় বহন করেন।

পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি এই পূজার আয়োজন করায় দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজাও বলা হয়। কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে যাওয়ার আগে শ্রীরামচন্দ্র শরৎকালে দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন। অকালে তথা শরৎকালে অনুষ্ঠিত হওয়া এই পূজা তখন থেকেই অকালবোধন নামে পরিচিত ।
স্কন্দপুরান বর্ননা অনুসারে রুরু দৈত্যর পুত্র দূর্গকে বধ করেছিলেন বলেই পার্বতীর নাম হয়েছে দেবীদূর্গা। তবে বাঙ্গালীর দূর্গোৎসবে দেবী কিন্তু স্কন্দপুরানের বর্ননামতে দূর্গাসুর বধকারী রুপে তিনি পূজিত নন। এখানে তিনি পূজিত হন মহিষাসুর মর্দিনী রুপে। দেবী দূর্গার এই আবির্ভাবের পরিচয় পাওয়া যায় মার্কন্ডেয় পুরানে। ভাগবত পুরান অনুসারে ব্রম্মার মানস পুত্র মনু পৃথিবীর শাসনভার পেয়ে ক্ষীরোদ সাগরের তীরে মৃম্ময়ী মুর্তি নির্মান করে দেবী দূর্গার আরাধনা করেন। মার্কন্ডেয় পুরান মতানুসারে এই দুগোৎসবের আয়োজন করেন রাজা সুরথ। আর রাজা সুরথ এই দূর্গাপূজা করেছিলেন বসন্তকালে।
“যা চন্ডি মধুকৈটভারী, দৈত্য দলনী, যা মহিষমর্দিনী, যা দূর্গে চন্ড মুন্ডোমালিনী, যা রক্ত বিজশ্বরী, শক্তি সুন্দরী সুন্দর দৈত দলনী—যা—“। আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেঁজে উঠেছে আলোক মঞ্জিল, ধরনীর বর্হিআকাশে–অন্তরিত মেঘমালা, প্রকৃতির অন্তর আকাশে জাগরিত জোর্তিময়ী জগৎমাতার আগমন বার্তা, আনন্দময়ী মহামায়ার পদ্ধধ্বনি অসিম ছন্দে বেজে ঊঠে রুপলোক ও রশলোকে আনে নবভাব মাধুরীর সঞ্জিবন, ত্রাহি আনান নন্দিতা শামলী মাতৃকার চিন্ময়ীকে–মৃন্ময়ীকে আবাহন। আজ শক্তিরুপীনি বিশ্বজননীর শারদও শ্রীমন্ডিত প্রতিমা মন্দিরে মন্দিরে ধ্যানগ্রহিতা।
কথিত রয়েছে মহালয়ার দিন ঘট বসে। সেদিন থেকেই নিয়মিত ঘট পুজো করা হয়। মহাষষ্ঠীর দিন মায়ের বোধন হয়। সেদিনই বোধনের ঘট বসে। মহাসপ্তমীর দিন নিয়ম মেনেই কলাবউ স্নান ও পুজোর অন্য আচার পালন করা হয়। মহাষ্টমীতে পুজোর পাশাপাশি সন্ধিপুজোরও আয়োজন করা হয়। তন্ত্রমতেই করা হয় সন্ধিপুজো। নিয়মমেনে ১০৮ প্রদীপ ও পদ্ম দেওয়া হয়। হোম ও যজ্ঞ করা হয় নবমীতেও। দশমীর দিনই প্রতিবার নিয়ম মেনে বিসর্জন দেওয়া হয়।
উপমহাদেশে জমিদারী প্রথা বিলোপের পর শারদীয় দূর্গপূজায় জমিদারদের অংশ গ্রহন স্বাভাবিক ভাবেই অনেকটা কমে যায়। নব্য ধনীক শ্রেনীর উদ্ভবের পরিপ্রেক্ষিতে দূগোৎসব আয়োজক কমিটিতে যুক্ত হয় অনেক নতুন নতুন মূখ। তবে প্রতিটি দুর্গোৎসবই তখনকার সময় আয়োজিত হত সম্পূর্ন একক উদ্যোগে। আনুমানিক ১৭৯০ খ্রীষ্টাব্দে অবিভক্ত বাংলার পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার গুপ্তিপাড়ায় ঘটে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
গুপ্তিপাড়ার একটি ধনী পরিবারের আকস্মিক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ফলে অনিশ্চয়তার সন্মূখীন হয় ঐ বাড়ীটির বাৎষরিক দূর্গাপূজার আয়োজন। তখন গুপ্তিপাড়ায়ার ১২ জন বন্ধু মহলের যুবক এগিয়ে আসেন যৌথ উদ্যোগে দূর্গাপূজা পালন করার জন্য। এই ১২ জন ইয়ার বা বন্ধু সংঘবদ্ধভাবে গ্রহন করে পূজা পালনের সার্বিক দায়িত্ব। আর গুপ্তিপাড়ার এই পূজাটি মানুষের কাছে পরিচিত হয় “বারোইয়ারী” বা বারোয়ারী পূজা নামে। এই বারোয়ারী পূজার সুত্র ধরে একক উদ্যোগে সম্পাদিত দুর্গাপূজাই আজ পরিনত হল সার্বজনীন শারদীয় উৎসবে। ধনীর আঙ্গিনা থেকে দূর্গাপূজা নেমে এলো অনেকটা সাধারন মানুষের সাধ্যের মাঝে। গুপ্তিপাড়ার আদর্শ অনুসরন করে সম্মিলিত উদ্যোগে বারোয়ারী পূজা ছড়িয়ে পড়ল ভারতীয় উপমহাদেশসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রের এই নৈকট্য সাধারন মানুষকে সাহস জোগালো র্দূগাপূজা মতো সর্ববৃহৎ ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্টানে বিত্তশালীদের একচেটিয়ে অধিকারে ভাগ বসানোর। ব্যক্তি বা বারোয়ারীর সীমা ছাড়িয়ে দূর্গাপূজা আজ পরিনত হল সার্বজনীন শারদীয় উৎসবে।
উরিষ্যার রামেশ্বরপুরে একই স্থানে ৪০০ শত বছর ধরে সম্রাট আকবরের আমল থেকে দূর্গা পূজা হয়ে আসছে। ১৯১০ সালে সনাতন ধর্মউৎসাহিনী সভা ভবানীপুরে বলরাম বসু ঘাট লেনে এবং একই জেলায় অন্যান্যরা রামধন মিত্র লেন, সিকদার বাগানে একই বছরে ঘটা করে প্রথম বারোয়ারী পুজার আয়োজন করে।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে দূর্গা স্বাধীনতার প্রতীক হিসাবে জাগ্রত হয়। বিংশ শতাব্দির প্রথমার্ধে এই পূজা ঐতিহ্যবাহী বারোয়ারী বা কমিউনিটি পূজা হিসাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। আর স্বাধীনতার পর এই পূজা পৃথিবীর অন্যতম প্রধান উৎসবের মর্যাদা পায়।

ভারতের দ্রাবিড় সভ্যতায় মাতৃতান্ত্রিক দ্রাবিড় জাতির মধ্যে মাতৃদেবীর পূজার প্রচলন ছিল। সিন্ধু সভ্যতায় (হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা) দেবীমাতা, ত্রিমস্তক দেবতা, পশুপতি শিবের পূজার প্রচলন ছিল। দূর্গা শিবের অর্ধাঙ্গিনী সে হিসাবে অথবা দেবী মাতা হিসাবে পূজা হতে পারে। তবে কৃত্তিবাসের রামায়নে আছে, শ্রী রাম চন্দ্র কালিদহ সাগর (বগুড়ার) থেকে ১০১ টি নীল পদ্ম সংগ্রহ করে সাগর কূলে বসে বসন্তকালে সীতা উদ্ধারের জন্য সর্বপ্রথম শক্তি তথা দুর্গোৎসবের (বাসন্তি পূজা বা অকাল বোধন) আয়োজন করেছিলেন। মারকেন্দীয়া পুরান মতে, চেদী রাজবংশের রাজা সুরাথা খ্রীষ্ট্রের জন্মের ৩০০ বছর আগে কলিঙ্গে (বর্তমানে উরিষ্যা) নামে দূর্গা পুজা প্রচলন করেছিল। যদিও প্রাচীন উরিষ্যার সাথে নেপালের পূজার কোন যোগসূত্র আছে কিনা জানা নাই।
ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায় মধ্য যুগে বাংলা সাহিত্যে দূর্গা পূজার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ১১শ শতকে অভিনির্ণয়-এ, মৈথিলী কবি বিদ্যাপতির দূর্গাভক্তিতরঙ্গিনীতে দূর্গা বন্দনা পাওয়া যায়। বঙ্গে ১৪শ শতকে দুর্গা পূজার প্রচলন ছিল কিনা ভালভাবে জানা যায় না। ১৫১০ সালে কুচ বংশের রাজা বিশ্ব সিংহ কুচবিহারে দূর্গা পূজার আয়োজন করেছিলেন। ১৬১০ সালে কলকাতার বারিশার রায় চৌধুরী পরিবার প্রথম দূর্গা পূজার আয়োজন করেছিল বলে ধারণা করা হয়। ১৭৯০ সালের দিকে এই পূজার আমেজে আকৃষ্ট হয়ে পশ্চিম বঙ্গের হুগলি জেলার গুপ্তি পাড়াতে বার জন বন্ধু মিলে টাকা পয়সা (চাঁদা) তুলে প্রথম সার্বজনীন ভাবে আয়োজন করে বড় আকারে দূর্গা উৎসব। যা বারোইয়ার বা বারবন্ধুর পূজা নামে ব্যাপক পরিচিতি পায়।
দেবী দূর্গা হলেন শক্তির রূপ, তিনি পরব্রহ্ম। অনান্য দেব দেবী মানুষের মঙ্গলার্থে তাঁর বিভিন্ন রূপের প্রকাশ মাত্র। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র অনুসারে দেবী দূর্গা ‘দূর্গতিনাশিনী’ বা সকল দুঃখ দুর্দশার বিনাশকারিনী। পুরাকালে দেবতারা মহিষাসুরের অত্যাচারে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর’র শরীর থেকে আগুনের মত তেজরশ্মি একত্রিত হয়ে বিশাল এক আলোক পূঞ্জে পরিণত হয়। ঐ আলোক পুঞ্জ থেকে আর্বিভূত এক দেবী মূর্তি। এই দেবীই হলেন দুর্গা। দিব্য অস্ত্রে সজ্জিত আদ্যাশক্তি মহামায়া অসুর কুলকে একে একে বিনাশ করে স্বর্গ তথা বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে শান্তি স্থাপন করেন।
দেবী দূর্গা ত্রি-নয়না বলে তাঁকে ‘ত্রৈম্বক্যে’ বলা হয়। তাঁর বাম চোখ হলো বাসনা (চন্দ্র), ডান চোখ কর্ম (সূর্য) ও কেন্দ্রীয় চোখ হলো জ্ঞান (অগ্নি)। দূর্গার দশ বাহুতে যে দশটি অস্ত্র রয়েছে, সেই অস্ত্রসমূহও বিভিন্ন প্রতীকের ইঙ্গিতবাহী। শঙ্খ ‘প্রণব’ বা ওঙ্কার ধ্বনির অর্থবহতা নির্দেশ করে। তীর ধনুক দেবীর শক্তিমত্তার প্রতীক। মায়ের হস্তে ধৃত বজ্রাগ্নি হলো ভক্তের সঙ্কল্পের দৃঢ়তা। দূর্গা’র হাতের পদ্ম বা ‘পঙ্কজ’ অর্থ হলো পদ্ম যেমন কাদামাটির ভেতর হতে অনাবিল হয়ে ফোটে, তেমনি দেবীর উপাসকরাও যেন লোভ-লালসার জাগতিক কাদার ভেতর হতে আত্মার বিকাশ ঘটাতে পারে। দেবীর তর্জনীতে ধরা সুদর্শন চক্র তাঁর শুভতার লালন ও অশুভের বিনাশের ইচ্ছার প্রকাশ। দূর্গার হাতে ধরা তলোয়ার জ্ঞানের ইঙ্গিত ও ত্রিশুল হলো সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ গুণের প্রকাশ। হিন্দু শাস্ত্র মতে, দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও ভয়-শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা।
নেউর ও ধেঙুড় ছিলেন দুই ভাই ও তারা কর্মসূত্রে ছিলেন তান্ত্রিক। আনুমানিক ১৪৫০ খ্রিষ্টাব্দকালে তাঁরা খড়দহের শ্মশান ঘাটে তন্ত্র সাধনা করতে আসতেন। পণ্ডিত কামদেব যিনি ছিলেন রাধাকান্ত মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা, তাঁর একদিন গঙ্গাস্নান করতে এসে এদের দুজনের সাথে পরিচয় হয়। তারপর তিনি তাদের সেই রাধাকান্ত মন্দির দর্শন করাতে নিয়ে যান। কিছু সময়ের আলাপ আলোচনার পর পণ্ডিত কামদেব দুই ভাই কে খড়দহে বসবাসের জন্যে অনুরোধ করেন আর একই সাথে অনুরোধ করেন রাধাকান্তের সেবার জন্যে। বিনা পয়সা তে জমি নেবেন না বোলে মোট একুশ গণ্ডা কড়ি দিয়া খড়দহের একটি জায়গা কেনেন যা আজ ভট্টাচার্য পাড়া নামে খ্যাত। তারপর ওনারা সেখানে বসবাস শুরু করেন।
কিছুদিন পর হঠাৎ নেউর স্বপ্নাদেশ পান খড়দহের কোন অরণ্যে এক সাধকের কাছে যাওয়ার। সেখানে সেই দুই ভাই যান ও সত্যিই সেখানে সেই সাধকের দেখা পান। সেই সাধক তাদের একটি শিবলিঙ্গ দেন এবং সেটিকে তাদের গৃহে প্রতিষ্ঠা করার অনুরোধ করেন। তাঁর অনুরোধে প্রতিষ্ঠিত হয় সেই শিবলিঙ্গ। সেই শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠানের ৩ বছরের মধ্যেই শুরু হয়ে দেবী দুর্গার পূজা। এই পূজা নেউর ও ধেঙুড় নিজেরাই মন্ত্র পাঠ করে করতেন এবং এই পুজ হত এবং আজও হয়ে আসছে 'তান্ত্রিক মতে'। এবং এই দুর্গাপূজাটি হল ২৪ পরগণার সবচেয়ে পুরানো পূজা। এই পূজাতে আগে মহিষ বলি হত। তারপর নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর অষ্টম গর্ভের সন্তান বীরচন্দ্রের অনুরোধে তা বন্ধ করা হয় এবং তার পরিবর্তে ফল বলি শুরু হয়।
◘ পূজার বৈশিষ্ট্য –
ক) কলাবৌ কে গঙ্গাজলে স্নান কোরানোর পরিবর্তে ১০৮ টি ঘটের জলে স্নান করানো হয় এবং এই ১০৮ টি ঘটে ১০৮ রকমের জল থাকে।
খ) এই পূজাতে আগে মহিষ বলি হত। তারপর নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর অষ্টম গর্ভের সন্তান বীরচন্দ্রের অনুরধে তা বন্ধ করা হয়ে এবং তার পরিবর্তে ফল বলি শুরু হয়।
গ) বীরচন্দ্র গোস্বামীর কথায় দেবী দুর্গার পূজার সময়ে শ্রী শ্রী গোপাল ও নারায়ণ এর ও পুজ হয়।
ঘ) সন্ধিপুজার সময়ে দেবীর ভোগ হিসাবে এঁচোর দাওয়া হয়।
মহাষষ্ঠীর দিন প্রতিমাকে লুচি ও বিভিন্ন নিরামিষ তরকারি ভোগ হিসেবে দেওয়া হয়। ওইদিন বাড়ির মায়েরা উপবাস করেন। মহাসপ্তমীর দিন থাকে খিচুড়ি ভোগ। সঙ্গে থাকে বেগুনি, লাবড়া, আলুর দম, বাঁধাকপির তরকারি, চাটনি ও তিন রকমের মিষ্টি। মহাষ্টমীর দিন থাকে লুচি ভোগ। সঙ্গে ধোকার ডালনা, ছোলার ডাল, কুমড়ো-আলুর ছক্কা, চাটনি ও তিন রকমের মিষ্টি। নবমীর দিন মাকে পুষ্পান্ন (বৈষ্ণব মতে পোলাওকে পুষ্পান্ন বলা হয়) এছাড়া পনিরের পকোড়া ও তরকারি, আলুর দম, ছানার ডালনা, চাটনি ও তিন রকমের মিষ্টি দেওয়া হয়।
সনাতন ধর্ম বিশ্বাস করে, “মানুষের দেহ পাঁচটি উপাদান দিয়ে তৈরি”। যথা: আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল ও মাটি। তাই মৃত্যুর পর এই দেহ আগুনে দাহ করা হয় অথবা মাটি দেওয়া হয়। অর্থাৎ যে উপাদান দিয়ে এই দেহ তৈরি, মৃত্যুর পর আবার সেই একই উপাদানে মিশে যায়।
তেমনি প্রতিমার ক্ষেত্রেও তাই, তা মাটি দিয়ে তৈরি। মাটির প্রাণহীন মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করলে সেটি প্রতিমা হয়। আর পূজা শেষে দেবীকে বিদায়ের পর সেই প্রতিমাটি আবার প্রাণহীন মূর্তি হয়ে যায়। আর তাই তাকে আবার পঞ্চতত্ত্বের একটি, সেই জলেই বিসর্জন দেওয়া হয়।
এই প্রতিমা পূজার সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে বিসর্জন। জলের মাধ্যমেই যেন মাটির প্রতিমা পুনরায় প্রকৃতিতে মিশে যায়, সেই জন্যই আমরা গঙ্গার জলে প্রতিমা বিসর্জন দেই। আমাদের হৃদয়ে যে নিরাকার ঈশ্বর রয়েছে, উপসনার জন্য মাটির প্রতিমা তৈরি করে তাকে “সাকার রূপ”দেওয়া হয়।
পূজা শেষে পুনরায় সেই “সাকার রূপ”কে বিসর্জন দিয়ে নিরাকার ঈশ্বরকে হৃদয়ে স্থান দেওয়া হয়। সেই কারণেই দুর্গা পূজার সময় যখন প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় তখন মায়ের প্রতি আমাদের প্রার্থনা থাকে, “মা, তুমি আবার এসো আমাদের মাঝে।
যে জন্ম নিয়েছে, তার মৃত্যু অনিবার্য ৷ এটাই প্রকৃতির শাশ্বত নিয়ম ৷ ঠিক তেমনি যাকে আবাহন করা হয়, তার বিসর্জনও অনিবার্য ৷ বিসর্জনের মাধ্যমেই “পুনরায় আগমনের” আশা সঞ্চারিত হয় ৷ এটিই প্রতিমা পূজা ও প্রতিমা বিসর্জনের মূল তাৎপর্য।
___________
সংকলনঃ উন্মাদ হার্মাদ
তথ্যঃ ইন্টারনেট