ধর্ম-দর্শন
গোঁড়া ধার্মিকদের নিয়ে কোন কালেই সমস্যাটা ছিল না। তারা ধর্ম সাধনাতেই নিমজ্জিত থাকে। প্রতিটা ধর্মেরই নিজস্ব আচার বিচার ব্যাপ্তি ও গরিমা এতোটাই বিশাল যে, প্রকৃত ধার্মিকের অন্য গৃহে উঁকি দেবার সময় বার করা প্রায় অসম্ভব।
সমস্যা অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী দের নিয়ে। বক ধার্মিকদের নিয়ে। অপব্যাখ্যাদ্বারা জারিত ধার্মিকদের নিয়ে। যারা যুক্তির থেকে আবেগকে প্রাধান্য দেয় বেশী। যে সমাজে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বেশী, পাতি কথায় বেকার, সেই সমাজে ধর্মাচার নিয়ে মাতামাতি অত্যন্ত বেশী। কারন তাদের হাতে খরচ করবার মত সময় অগাধ। উল্টোটাও সত্য, যাদের হাতে অগাধ ধনসম্পত্তি রয়েছে, তারাও ধর্মের মত মুচমুচে বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু করে। জীবনের সাথে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলা আম জনগনের পেটের চিন্তায় রাতে যেখানে ঘুম হয়না, সেখানে ধর্ম নিয়ে আদিখ্যেতা করার সময় কোথায়?
একটা উদাহরন, বেসরকারী ব্যাঙ্কে বা বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত কোন কর্মচারিকে কখনো কোথাও ধর্ম নিয়ে মাতামাতি করতে দেখেছেন? দেখবেন না। কাজের চাপের চোটে তাদের চিড়েচ্যাপ্টা জীবনে এমনিতেই ত্রাহি ত্রাহি রব। ক্যাচালি করার সময় কোথায়?
ধর্ম মানে যাহাকে ধারন করা যায়। যারা ধর্মকে অস্বিকার করে, তাঁরা আসলে নিজের বর্তমানকে নিয়ে অস্তিত্বসঙ্কটে ভুগছেন, নতুবা অযোগ্যোতার দরুন অকৃতকার্য হতে হতে, একমাত্র বিক্ষোভের ব্যাক্তি(!) ঈশ্বরের প্রতি ক্ষোভের হেতু ধর্মের বিরুদ্ধাচারন শুরু করেছেন। এরা দীশাহিন জীবনযাপনের হেতু, নিজেরাই নিজেদের সবচেয়ে বড় শত্রু। ধর্মকে অস্বিকার করা, আসলে হাঁটুতে বুদ্ধি রেখে বিজ্ঞানচর্চার সামিল। জ্ঞান না থাকলে বিজ্ঞান হয়না। তেমনই ধারন ক্ষমতা না থাকলে ধর্ম হয় না। ধর্ম কখনই বিজ্ঞানকে অস্বিকার করেনি। ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের কোন বিরোধ নেই। ভন্ডরা বিভেদ সৃষ্টি করেছে আর করেছে ধর্ম ব্যাবসায়িরা। ধর্ম কে বাদ দিয়ে বিজ্ঞানের অস্তিত্ব নেই। ধর্ম বিনা রাষ্ট্রব্যাবস্থা টিকতে পারে না। সকল হানাহানিই ভোগের জন্য। ধর্ম ত্যাগ শেখায়, তাই প্রকৃত ধার্মিক কখনই হানাহানি করবে না। যারা করেন, তারা আর যাই হোক ধার্মিক হতে পারেন না।
ব্যাক্তি স্বাধীন অনেক ব্যাক্তিই নিজেকে নাস্তিক বলে থাকেন। অথচ ধর্মের সাথে জড়িত যাবতীয় আমোদের মজা নেন তারিয়ে তারিয়ে। এ এক অদ্ভুত মানসিক বিকার। যাকে আমি স্বিকার করিনা, যা আমার বিশ্বাসের পরিপন্থী, যে ঘটনা পরম্পরা আমার জীবনধারর সাতে খাপ খায় না।, সেখানে আমার যেকোন ধরনের উপস্থিতিই স্ববিরোধিতার সামিল। আর এটাও এক ধরনের স্বাধিকার ভঙ্গ। এই প্রজাতির মানুষবর্গ দেখতে আপাত নিরিহবাদী হলেও, এদের মানসিক স্থিরতা খুবই ভঙ্গুর, যে কোন মুহুর্তে যে কোন দিকে বাঁক নিতে পারে। কারন নীতিহিততা হয়ে জীবনধারন মৃত্যুরই সামিল। ধর্মীয় মৌলবাদীদের থেকে এনাদের ফারাক খুবই কম। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নাস্তিকের দল উৎসেচকের ভুমিকা পালক করে, খুচিয়ে ঘা করে এনারা মজা লোটেন।
ধর্মের উৎপত্তি মানব সভ্যতার বিকাশের জন্য। মানব সংহতিকে একটি গঠনমূলক রুপ দিতে। ভিন্ন ভিন্ন মানসিকতার, ভিন্ন চরিত্রের মানুষদের মানুষদের এক সুত্রে বাঁধিতে ধর্মের উৎপত্তি। ধ্রুবক জীবনধারাকে সর্বত্র সমান ভাবে ছরিয়ে দিতে ধর্মের উৎপত্তি। ভালো আর মন্দের ফারকটা বোঝানোর পন্থাকে সার্বজনীন রুপ দিতে ধর্মের উৎপত্তি।
অনেকের মতে সংগঠিত ধর্ম ব্যাবস্থা মানব সভ্যতার বিচারে এক্কেবারে আধুনিক ঘটনা, মাত্র ৩ হাজার বছরের পুরাতন। তাহলে তার আগের মানুষেরা কিভাবে বিনা ধর্মে জীবনিপাত করতেন?
আসলে এটা একটা গোড়ায় গলদ প্রশ্ন। প্রথম পালটা প্রশ্ন, আপনি কবে এই প্রশ্নটা তুলছেন? ২০১৬ সালে দাঁড়িয়ে। ৩০০০ বছর আছে পৃথিবীতে মানব সভ্যতার ধারনাটা কেমন ছিল? সেই আমলে লড়াই টা ছিল মূলত মানবদের সাথে পশুদের। কারন একএকটি ছোট জনগোষ্ঠী জঙ্গলে থাকতো জংলী জানোয়ারদের সাথে। খাদ্য বলতে গাছপালা বা কাঁচা মাংস, আর থাকার স্থান বড় গাছ বা তার কোটোর বা গুহা। যেগুলো পশুরাও ব্যাবহার করতো। তাই তখনকার মূল যুদ্ধটা ছিল খাদ্য আর বাসস্থানের, আর বাসস্থানের। সেই পরিসরটা ছিল বিশাল, আর মানুষের সংখ্যা টা ছিল অত্যান্ত মুষ্টিমেয়।
আজকের পৃথিবীতে এই জনবিষ্ফোরনে মানুষের সবথেকে বড় শত্রু মানুষই। সেখানে অনুশাষনের জন্য ধর্ম ভিন্ন কোন উপাই নেই। আজকের যুগে মানুষ দু ধরনের রোজগার করে, এক গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য, দ্বিতীয় বাহুল্য বিলাশিতার জন্য। দ্বিতীয় শ্রেণী তাদের মনরঞ্জনের জন্য নিরন্তর রোজগারের সাপ্লাই লাইনটা চালু রাখতে যে কোন কিছু পন্থা অবলম্বন করতে পারে। মানুষকে পন্য বানিয়ে মানুষের কাছেই বিক্রি করে তারা। তাই এদের প্রলভোন থেকে ও হানাহানি থেকে রক্ষা করতে ও মানুষজাতিকে একতার সুত্রে বাঁধতে ধর্ম নামক পৃথক পৃথক সমাজের উতপত্তি হয়েছিল বোধহয়।
ধর্ম আর ধর্মান্ধতাকে একই ছাঁচে ফেললে হবে না। যুদ্ধ বাজেরা ধর্মের দোহায় দিয়ে কাজ হাসিল করে। কারন ধর্ম বিষয়টা সকল সময় শান্তির কথা বলে ও আদর্শ জীবনযাত্রার কথা বলে। তাতেই সাধারণ মানুষ তাতে আকৃষ্ট হয়।বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই কোন না কোন ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তার মধ্যে কতজন ধার্মিক সেটা প্রশ্ন যোগ্য নিশ্চই। আর এই আকৃষ্টতার সুযোগটা ব্যাবসাদারেরা নেয়। কারো বিশেষ অপছন্দতার বিষয়গুলো প্রকট করে , বার বার তাতে সুরুসুরি দিয়ে বিরুদ্ধমতকে খুচিয়ে জাগিয়ে, গনমাধ্যমে সেই ঘটনার বারংবার সম্প্রচারের মাধ্যমে, অপপ্রচারকে সত্যির মোড়কে বাজারজাত করে, ফায়দা লোটে অধিকাংশ রাষ্ট্রনেতারা। সাথে থাকে স্বার্থান্বেশি কিছু চামচা শ্রেনির ভেকধারী ধর্মগুরুর দল।
প্রায় সমস্ত ধর্মের গ্রন্থ গুলো সহস্র বছর প্রাচীন ভাষায় মুদ্রিত, তাই কোন নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বী, বেশিরভাগ মানুষের কাছে ধর্মের মূল প্রতিপাদ্য গুলো অধরা থেকে যায়। ব্যাবসারেরা মেকি ধর্গুরুদের দ্বারা নিজেদের স্বার্থের অনুকুলে মিথ্যা বিশ্লেষণ করে সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের কাম্য বিভেদ সৃষ্টি করে। অর্থের শক্তির কাছে দূর্বৃত্তের কখনো অভাব হয় না। দুর্বৃত্তের সাথে আসল ধার্মিকেরা কখনই পেরে ওঠে না, কারন ধার্মিক কখনই ছল চাতুরি মিথ্যার আশ্রই নেবেন না, নিতান্ত জীবন সংশয় ব্যাতিরেকে। ধর্মের আড়ম্বর দীর্ঘায়িত হয় ধর্মের মূল মন্ত্র থেকে। এখন ধর্মকে যারা মানেন না, বিশেষত নাস্তিকেরা। তারা অবুঝ, তাতে ধর্মের কি দোষ?
গুহামানবের বুদ্ধির থেকে আজকের মানুষের বুদ্ধি মেধা একতা চাহিদা লক্ষ্যগুন বেশী, তাই প্রতিযোগিইতাও বেশী। ধর্মের আস্তরন উঠে গেলে মানুষ পশুর থেকে বেশী ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। ধর্ম তো একটা পোষাক স্বরূপ।
তাই প্রকৃত ধার্মিকের প্রকটতা অত্যন্ত প্রয়োজন। আর দরকার কিছু যোগ্য নেতার। যিনি ব্যাক্তি স্বার্থের উর্ধে গিয়ে মানব ধর্মের প্রচার করবেন, হানাহানি বন্ধ করতে পারবেন। সেটা যে আঙ্গিকেই হোক না কেন!