উন্মাদীয় রবিবাসর
*******************
বন্ধু।
মিত্র।
विद्या मित्रं प्रवासेषु भार्या मित्रं गृहेषु च।
व्याधितश्यौषधं मित्रं धर्मो मित्रं मृतस्थ च।।
শব্দটি বুৎপত্তি গত ভাবে বহু পুরাতন। এক্ষেত্রে বন্ধন শব্দটিই বোধকরি সর্বাপেক্ষা, বন্ধু শব্দটির উপর অধিকার দাবি করিতে পারে। বন্ধুত্ব সুবিশাল, তার মাহত্ব, তৎসহ সেই নামের ভার। ইহা পারস্পরিক বিশ্বাস, সমর্থন, যোগাযোগ, আনুগত্য, অন্য কে বোঝা, সহানুভূতি, এবং অন্তরঙ্গতার মিশ্রনে গড়ে ওঠা একটি গভীর জৈবিক সম্পর্ক। মনুষ্যজাতী জন্মাবধি আসলে পরজীবী প্রানী। সম্পর্কের বিবিধ জটিলতার মাঝে পথের সন্ধান পাইবার নিরন্তন প্রচেষ্টাতে নিবিষ্ট থাকে।
বন্ধুত্ব হইলো সেই সরাইখানা , প্রতি পথের বাঁকেই যে দ্রব্যটির নিয়মিত দেখা মিলিয়া থাকে। কিছু বন্ধুত্ব, বাকি অবশিষ্ট জনমের মত সঙ্গী বনিয়া যায়, তখন উহা নূতন নামে সম্ভাষিত হইয়া থাকে। কিছু পথি মধ্যি অকালেই হারাইয়া যায়। কিছু বন্ধুজনকে স্বজ্ঞানেই ত্যাজ্য করিতে হয়। বন্ধুত্বের তালুকে স্বার্থের উপস্থিতি, বন্ধুত্বসাধনের ক্ষেত্রে বিঘ্নকারক হয় না, কিন্তু অসদভিসন্ধি তথা প্রবঞ্চনার উদয় হইলেই, উহার অকাল মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।
নির্দিষ্ট বিশেষ কোন কারন ছাড়া উদ্ভুত বন্ধুত্বের বন্ধন, কোন অবস্থাতেই সমূলে উৎপাটিত হইতে পারে না। লালসা তে আরক্ত চক্ষুর উপস্থিতি, বন্ধুত্বের স্থায়িত্ব কালের সাথে ব্যাস্তানুপাতিক।
আজিকাল অন্তর্জালীয় বন্ধুত্বের হাতছানি আমাদের ন্যায়, অন্তর্মূখি, কিছুটা আনাড়ি উন্মাদদের সম্মুখে এক সুবিশাল বাতায়ন উন্মুক্ত করিয়া দিয়াছে। বাস্তবের রূঢ মৃত্তিকা, পরিবার পরিজনের মঙ্গলার্থে দৈনন্দিন রোজগারের প্রচেষ্টার নিমিত্ত, বড় স্বার্থ সচেতন মানব জাতি, নিষ্ফলা লঙ্গুল আষ্ফালন করিয়ায় ক্ষান্ত রহিয়া যান। মুক্ত বন্ধুত্বের সোনালি রোদ্দুর তাহাদের আবশিষ্ট জীবনে অধরাই রহিয়া যায়।
এই শূন্য স্থান পূরনের উদ্দেশ্যেই আপনজন এর বিশেষ প্রয়োজন। অগোছালো ম্যারাপ, অবিন্যস্ত আলুথালু কতিপয় তথাকথিত নিঃসঙ্গ “অর্কিড” এর শাখাগত আবাসস্থল। ভদ্রজনে স্নানাহার সারিয়া নিদ্রা সুখের উদ্দেশ্যে শ্বয়নমন্দিরে স্থিত পর্যঙ্কের দিকে ধাবিত হয়, তখন এই বন্ধুরা অপার বিস্ময়ের উদ্রেগ ঘটাইয়া স্নানাহারের সহিত, প্রতিনিয়ত বিমাতৃসুলভ আচরনের চরম নিদর্শন দর্শাইয়া বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বয় একত্রে করিয়া , মুষ্টি তে আবদ্ধ দুরাভাষ যন্ত্রের উপর বিলীন হইয়া যায়। অনেকেই আপনি “ক্রোড়োস্থিত উচ্চ” যন্ত্র টি ও সম্যক ভাবে ব্যাবহার করিয়া থাকেন। চলিতে থাকে অকপট আড্ডার মিলনসমিতি।
একজন ব্যাক্তি কেবলমাত্র তখনি বিশ্বস্ত ও সত্যবাদি হইয়া থাকেন, যখন তাহাকে বন্ধু বলিয়া স্বিকৃতি প্রদান করিয়া থাকি। ইহা ‘সত্য’ যে ‘শিল্পী’ মনের না হইলে বন্ধুত্বের শিখর “জয়” করা অসম্ভব। ‘প্রশান্ত’ চিত্তে ‘সুমন’ এর অধিকারী হইতে হলে “নির্মল” চিত্তে বন্ধুত্বের আবাহন হরিতে হয়। তাহলেই এই শিল্পে ‘ভাষ্কর; এর ‘রজত’কমল সোন্দর্য , জনগন ‘তন্ময়’ হয়ে অবলোকন করিবে। ‘আফরোজি’ সুগন্ধ ‘সুধা’ , ‘যামান’আ ছারিয়ে যাই একমাত্র এই পরিসরে আসিয়া। ‘প্রেমানন্দের’ আতিসায্য অবলোকনের মাধ্যম হইল এই ‘রম্য’ ‘সাগর’।
বন্ধু নামক ‘চন্দনের’ ‘সৌরভে’ চিরিতরে ‘লেখা’ হইয়া যায় ‘প্রিতমের’ নাম। প্রখর রৌদ্রে ‘বরুনের’ তেজে, ছত্রধারী ‘অমলিন’ রা বন্ধুত্বের কারাগারে চিরতরে বিশ্রাম করিয়া। অমিয় পরিতোষের অধিকারিগন বন্ধুত্বের ক্যাংসাপাত্রে সহ ভোজনের ‘শ্রিতোষ’, কূট প্রশ্ন উত্থাপন ব্যাতিত ই সম্পাদিত করিয়া থাকেন। অকথিত বাক্যধারা, প্লিহায় পরিপূর্ন উদরের ন্যায় ফুলিয়া উঠে, শুধু মাত্র বন্ধু নামক প্রানীই তাহার এই ব্যামো উপশম করিতে সক্ষম।
বন্ধুত্বের আবহ তে ই, বিষপূর্ন কটাক্ষও মধুর ধ্বনিত হইয়া থাকে। নিষ্কলঙ্ক ‘তুহিন শুভ্রের” ন্যায়। বন্ধুত্ব সদা যৌবন পূর্ন, বৈধব্যের মলিনতা ইহাকে স্পর্শ করিতে পারে না। ‘নীলমাধব’ ‘শিব’ বা বৃষভারূঢ় এর উন্মত্ততা বন্ধ্বুত্বের অধরে পরতে পররে জড়িয়া থাকে। জীবন সঙ্গমে আগত সকল-সকল মানবাত্মারা, স্বার্থপরতার ঘোরান্ধকারের মধ্যে বিরহস্নতপ্তা লোলায়মান মন নেত্রপাত করিয়া থাকেন, মিত্রতা ভিন্ন আর বাকি সকল কিছুই মিথ্যা বলিয়া, বলিয়া পরিগনিত হয়। এ অনন্ত সংসারে পুর্বজন্মার্জিত সুকৃত সৌন্দর্য বলিয়া কিছু, রহিয়া থাকে , তাহা হইলে সে, বন্ধুত্ব ভিন্ন আর কিছু হইতে পারে না। জীবনের কুসুমিত কুঞ্জবনে একমাত্র চম্পররাজী নির্মিত কাঞ্চনগৌড় হইল মিত্রতা।
দুর্বিপাক দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত একজন ব্যক্তির জীবনে “একটি প্রকৃত বন্ধু” ই একমাত্র বহুমূল্য ঔষধি।
*******************
व्याधितश्यौषधं मित्रं धर्मो मित्रं मृतस्थ च।।
No comments:
Post a Comment