Friday, 23 December 2016

উন্মাদি নামা - ২৭

অক্ষরজ্ঞান মানুষের জ্ঞানের পরিধিকে বিস্তারে সাহায্য করে, আর জীবন বোধ গড়ে উঠে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, মুল্যবোধ ও আত্মসম্মানযুক্ত সামাজিক শিক্ষা আর অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। যার প্রাথমিক পাঠশালা শিশুকালের পরিবার, যেটা একটা পরিপুর্ন জীবনগঠনে সাহায্য করে।
পুঁথিগত সু- শিক্ষা লব্ধ জ্ঞান যতক্ষন না নিজের জীবনের উপর ব্যাবহারিক প্রয়োগ হচ্ছে, ততক্ষন সেটার উপর জীবনবোধ লাগু হওয়া অসম্ভব।
পরিবর্ত পরিস্থিতির সাথে সাথে অন্যের নুন্যতম ক্ষতিসাধন না করে, নিজ স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে সামাজিক আদর্শ প্রতিষ্ঠার নামই হল সুনাম। আর জীবনবোধের ভীতের উপরেই এই সুনামের অট্টালিকা দাঁড়িয়ে থাকে। এখন এখানে যত সুশিক্ষার আগমন ঘটবে, সেই অট্টালিকা ততই সুউচ্চ ও কারুকার্যখচিত গৌরবশালী হয়ে উঠবে।


Saturday, 17 December 2016

।। উন্মাদনামা ~ ২৬ ।।

চুরান্ত শৈতপ্রকোপে জনজীবন শ্লথগতিপ্রাপ্ত হইয়াছে। এতিক্ষনে অংশুমালী তাহার অনলতাপপ্রবাহ বিচ্ছুরনাকার্যাদি সম্পাদনে, রূধিত কুহেলিকা দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হইতেছে। ইহারই সহিত জুটিয়াছে উত্তরী পবনঝঞ্ঝা, তদহেতু প্রাতঃকাল স্বনিয়মে হইলেও, বঙ্গজীবনে গড় প্রত্যুষকাল সাড়ে আটঘটিকায় অবতরন করিয়াছে। নিশীথকালিন পরিস্থিতিও সূচনা ভানুরশ্মির ম্রিয়মাণ উপস্থিতিতেই সংঘঠিত হইতেছে মহাসারম্বরে। অনুষ্ণজাড় তাহার জয়ধ্বজ্জার ডঙ্কা তারস্বরে বাজাইতেছে নিরবিচ্ছিন্ন অনুচ্চার্য প্রশান্তির অভ্যন্তরে। অতিদ্রুতার সহিত বালাপোষন্নিধান প্রণালিতে স্ববোধানকে চালান করিলে, তবেই হিমপিড়নাশক্তি হইতে তাৎক্ষনিক মুক্তি, তদভিন্ন উপায়ান্তর নাই।পয়ঃ সংক্রান্ত বিবিধ খর্জুরাচারে ব্যবহৃত নীরপরিমান যথাকিঞ্চিৎসম্ভব হ্রস্বত্বর করিবার মধ্যেই উদ্যোগপতিসম মহিমান্তিত বোধজাগ্রত হওয়াই স্বাভাবিক।

এমতাবস্থাতে বাষ্পাকুললোচনে গাঢ় আলিঙ্গন বড়ই সুখানুভরদায়ী এক প্রকারের নর্মতৃপ্তি। তথাপিও রসিককুলধিপতি গলাবন্ধ দস্তানা ও উষ্ণতাভূষনদ্বারা পরিবেষ্টিত হইয়া হৃদয়ে সেই রেশ পৌছাইয়া দিতেছে।

এক্ষনে একটি নিরীহ প্রশ্নঃ "কামত্তেজনা সৃষ্টিকারি আদিরসাত্বক চলচ্চিত্রের খন্ডিতাংশ" গুলি নিবিষ্টচিত্তে অবলোকন করিয়া রমনসুখের পাশাপাশি আমত্তনিষ্কাশন সম্ভব?
বিদ্বজ্জনের টিকাসম্বলিত ভাষ্যের প্রত্যাশায় রহিলাম।

বিনীত-
উন্মাদ হার্মাদ

Wednesday, 14 December 2016

একটি নস্টালজিয়া- গ্রামবাংলার যাত্রাপালা



শীতকাল মানেই সোয়েটার টুপি নতুন গুড় আর নবান্নের স্বাদ। শহরে বইমেলা, পিঠেপুলি উৎসব হয়তবা আরো অনেককিছু। কিন্তু গ্রামে শীতের সাথেই কোলকাতার চিৎপুর থেকে বাস ভর্তি করে হাজির হত পরিযায়ী যাত্রাপালার দলগুলি। ছরিয়ে পড়ত বাংলার প্রতন্ত গ্রাম মফ:স্বলের মঞ্চে মঞ্চে। অগ্রহায়ণ এর কেটে নেওয়া ধানের জমির উপরেই তৈরি হত অস্থায়ী মঞ্চ বা মাচা। করোগেটেট টিন দিয়ে ঘিরে তৈরি হত অডিটোরিয়াম, যার মাথার উপরে থাকত বাঁশের খুটির বলে ছাওয়া চটের ছাওনি। তিন চার ঘন্টার সে এক মনোজ্ঞ পারিবারিক বিনোদন। শুকনো খটখটে জমিতে কাটা ধানগাছের গোঁড়া গুলোকে বিছিয়ে, চটিজোড়া খুলে তার উপরে বাবু হয়ে বসে চাদর মুড়ি দিয়ে চিনে বাদাম চিবোতে চিবোতে চার ঘন্টা কাবার।
আজকাল স্যাটেলাইট টিভির রমরমা আর আধুনা মোবাইলেই শত মনোরঞ্জের ভিরে যাত্রার সেই সুদিন আজ অতীত। কিছু স্থানে টিমটিম করে টিকে আছে ঠিকিই, কিন্তু সেখানেও টালিগঞ্জের সিরিয়াল শিল্পীদের দাপট। শুধুমাত্র এই পেশাদিয়ে আজ আর পেট চালানো যায়না, তাই পেশাদার যাত্রা শিল্পী আজ বিরল। যাত্রাশিল্পটা কলা হিসেবে বহু প্রাচীন, ভারতের শিল্পসংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্দ্য অঙ্গ। ভারতীয় নাট্যশাস্ত্র তো বটেই, মহাভারত, হরিবংশ, শ্রীচৈতন্য ভাগবতে, এমনকি গ্রীক ভূপর্যটক মেগাস্থিনিসের বিবরণেও যাত্রাপালার উল্লেখ রয়েছে। বালক নরেন্দ্রনাথও গোবিন্দ অধিকারীর পালা দেখে সেই মত হাঁটাচলা কথাবার্তা বলতেন, এই যাত্রাপালাতেই বুঁদ হয়ে আপ্লুত হয়েছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। যার জন্য আজও যাত্রালক্ষী নামে বীনা দাশগুপ্তের স্মৃতি বাবা কাকাদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল।
সেকালে, গ্রামের মাতব্বর স্থানীয় দাদু জ্যাঠারাই এই যাত্রানুষ্ঠানের যাবতীয় দৌড়ঝাপের দায় দায়িত্ব নিতেন। পরবর্তী কালে পাড়ার ক্লাব সেই স্থান দখল করে। তখন যেকোন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে পাড়ার পাড়ায় এ্যমেচার যাত্রারও একটা জনপ্রিয় চল ছিল। তখনই জেনেছিলাম যাত্রা দলের মালিককে অধিকারী বলা হয়, প্রম্পটারকে মাস্টার, আর ভিকিরি থেকে রাজার পোষাক সবই ভাড়া পাওয়া যায়।
পেশাদার ভাড়ার নায়িকাদের সাথে নিজেরাই সেই পালার নায়ক খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করতাম। এমনই সব শীতের সন্ধ্যাগুলোতে মেতে থাকতাম যাত্রার মহলাতে। আর আমাদের মায়েদের কাছ থেকে, আমাদের কাকার দল সেই অনুমতি যোগার করে আনত। তবে ওই নায়িকার সাথে যাত্রার দিন দুপুরেই একমাত্র মহলা হত। সেই নায়িকাদের দেখার জন্য পাড়ার ছেলে ছোকরাদের সে কি উঁকিঝুঁকি আর আগ্রহ। আমাদের মত ছেলে ছোকরাদের কাছে সেই কালে মেয়ে মানেই ভিনগ্রহের বাসিন্দা ছিল। কারন মা বোন তো মা বোনই, তারা তো আর মেয়েমানুষ নয়। তাই পর মেয়েমানুষ নিয়ে, নকল গোঁফ দাড়ি লাগিয়ে, সকল গুরুজনেদের সামনে আড়ষ্ট অভিনয়, সে এক মিষ্টি অভিজ্ঞতা।
বছর পাঁচেক আগে একবার চারচাকা করে তামিলনাড়ুর ভেলোরে গেছিলাম এমনই এক শীতকালে। বাংলা-উড়িষ্যা-অন্ধ্রের বিস্তির্ন গ্রামাঞ্চল পেরিয়ে সে যাত্রা কোন ভ্রমণের থেকে কম কিছু ছিলনা। সেই পথেই দেখেছিলাম যাত্রা পালা আজও জীবিত। জানিনা সেখানেও আর কত দিন প্রাসঙ্গিক থাকবে। আজকাল আমাদের রাজ্য সরকার অবশ্য যাত্রা একাডেমি গঠন করে, তার মাধ্যমে একগুচ্ছ সঞ্জীবনি প্রকল্প ঘোষনা করে এই সুপ্রাচীন সংস্কৃতিকে অক্সিজেন যোগানোর সৎ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
কিছুবছর আগে আমাদের গ্রামবাংলার পথঘাট মুখরিত থাকত যাত্রা তথা বিচিত্রানুষ্ঠান এর প্রচারব্রম্ভে। ভ্যান, রিক্সা, এমনকি এম্বাসেডর গাড়ির ছাদে মাইকের চোঙা বেঁধে চলত সেই অপরূপ বাচন ভঙ্গির প্রচার। দেওয়ালে দেওয়ালে রঙিন লিথো পোষ্টার। যেপাড়ায় যাত্রাপালা হবে, সেই পাড়ার বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয় অভ্যাগতদের ভীর জমে যেত যাত্রা দেখার জন্য। যাত্রার দিন সকালেই সামনের উইন্ডস্ত্রিনে পালার নাম লেখা বাসে করে বাজনাদারেরা আর সহ কলাকুশলীরা এসে যেত। নায়ক নায়িকা বা কোন বয়স্ক বিখ্যাত শিল্পী থাকলে তিনি প্রাইভেট গাড়িতে দুপুরের দিকে গ্রামে ঢুকতেন। আর কোন মাতব্বর গোছের লোকের বাড়িতে বিশ্রাম নিতেন। আর এর দরুনই সেই বাড়ির ছেলে মেয়েরা বন্ধু মহলে কলার উঁচু করে চলত আর ভীষণ সমাদৃত হত মাস খানেক।
সেই সুমধুর প্রচার ভঙ্গির কিছুটা তুলে দেবার চেষ্টা করলামঃ
সুধী যাত্রামোদী বন্ধুগন, ভুল করবেননা ভুলে যাবেননা, আগামী অমুক তারিখে তমুক স্থানের রঙ্গমঞ্চে, তিনরাত্রী ব্যাপি বিশাল যাত্রানুষ্ঠানে, ঝলমল করে ফুটে উঠতে চলেছে, জাপানী আলোকমালায় সজ্জিত সুপার সাইক্লোরামা পদ্ধতিতে এ যুগের সবচেয়ে সারাজাগানো অশ্রুসজল সামাজিক যাত্রাপালা... শ্বশুর কেন অসুর....
যাতে অভিনয় করতে আসছেন যাত্রাজগৎের উদিতসূর্য, গায়ক নায়ক কুমার ইন্দ্র, সাথে বোম্বে থেকে আগত সিনেমার গ্লাম্যারকুইন যৌবনবতী লাস্যময়ী নায়িকা মিস খিলখিল, খলনায়কের ভুমিকায় জীবন্ত সন্ত্রাস কামাক্ষ্যা প্রসাদ, আর হাসির ডালি সাজিয়ে মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন হাসির রাজা... হোঁচট কুমার...
বিশেষ করে মনেরাখবেন, মহিলাদের বসিবার আর সাইকেল রাখিবার পৃথক বন্দোবস্ত রয়েছে। পালা শেষে তিনটি রুটে ফেরার জন্য বিনামুল্যে বাসের ব্যাবস্থাও থাকবে।
এবারের আমাদের বিশেষ আকর্ষন, যাত্রা শুরুর পূর্বে ৩০ মিনিট ব্যাপি, মিস ডলি, মিস মাধুরী, মিস ববিতা আর মিস কুমকুক (নামগুলো উচ্চারনের সময় গলার স্বরের তারতম্য, নেশা ধরিয়ে দেবার পক্ষে যথেষ্ট) দ্বারা পরিবেশিত বোম্বে ড্যান্স হাঙ্গামা
টিকিটের দাম কাউন্টারে, জমিন ৩০ টাকা, চেয়ার ৫০ টাকা, সিজন টিকিট জমিন ৭০ টাকা, চেয়ার ১২০ টাকা । সুতরাং, ভীড় এড়াতে আজই টিকিট কেটে রাখুন। অগ্রিম টিকিটে, দৈনিকে ৫ টাকা আর সিজন টিকিটে ১০ টাকার বিশাল ছার পেতে আজই ঠিকিট কাটুন। অগ্রিক টিকিটের উপরে থাকলে আকর্ষনীয় পুরস্কার। লটারির মাধ্যমে তিন ভাগ্যবানকে বেছে নেওয়া হবে। টিকিট আমাদের প্রচার গাড়িতেই পাওয়া যাচ্ছে।
সত্যিই আজ এই শিল্পটা প্রায় লুপ্তপ্রায়। তার বদলে ফি সন্ধ্যায় সংবাদ চ্যানেলে চ্যানেলে রাজনৈতিক বিশ্লেষণের নামে চড়া দাগের যাত্রাপালা। দেশের সংসদ ভবন থেকে পাড়ার পার্টির নেতা পর্যন্ত, সেই চড়া মেলোড্রামার যাত্রা প্রতিনিয়ত সহ্য করছি আমরা।
মাচার যাত্রাপালাতে সত্যের কথাটা বলার জন্য অন্তরালে বিবেকবলে একটা শিল্পী থাকত। আমাদের দুর্ভাগ্য আজকালকার এই রোজনামচা যাত্রাপালাগুলোতে উত্তেজনা বিনোদনে আবেগের কোন মশলার ঘাটতি নেই, অভাব শুধু বিবেকের
বিশেষ ধন্যবাদ বন্ধু ধুর্জটিকে। ওর পোষ্ট থেকেই এই লেখার প্রেরণা।
(উন্মাদীয় বানানবিধি অনুসৃত)

_______
উন্মাদ হার্মাদ


Monday, 12 December 2016

খাজনা - ভারতীয় করব্যাবস্থা




কালো টাকা কালো টাকা করে দেশ উত্তাল। যার প্রতক্ষ্য আঁচ দেশের সংসদভবন থেকে প্রতিটি আমজনতার হেসেলে গিয়ে পৌছেচে। কিন্তু কালো টাকা কিভাবে জমা হয় জানা আছে? অবশ্যই জানেন। রাষ্ট্রকে কর ফাঁকি দেওয়া সম্পদই কালোধন।
আপনি বেনেকর হোন বা তেন্ডুলকর, চিত্রকর হোন বা জাদুকর বা সরকারের চা-কর বা গনৎকর, আপনি মুম্বইকর হোন বা বর্ধমানের মানকর নিবাসী , এমনকি পারিকর হলেও কর আপনাকে দিতেই হবে যদি তার আওতাভুক্ত হন। নাহলেই আপনার সমস্ত রোজগারই কালোটাকা হিসাবে জমা হবে। সেই আ-করে, পাতে কাঁ-কর পরার দরুন এ-কর এ-কর পরিমান জমি কেঁদে ভাসালেও, শেষে দুঃখ ভুলতে বাঁ-কর জলে তেষ্টা মেটাতে হবে। সুতরাং কর-জোড়ে অনুরোধ কর জমা করে সু নাগরিক হন। নিজে বাচুন ও দেশকে আগামীর জন্য সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে অংশিদারিত্ব করুন। নাহলে কর ফাঁকির দায়ে হাত-কর-আ পড়তে হবে, এবং জরিমানা সহ সবটা কর-আই-গন্ডায় উশুল করে নেবে সরকারি পেয়াদা। আর বলবে- বাকি রাখা খাজনা, মোটে ভাল কাজ না।
রাজ রাজরা আমলেও খাজনা ব্যাবস্থা ছিল, আজও রয়েছে। আজকের দিনেও আমাদের দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যাবস্থা সকলের জন্যই প্রায় বিনামুল্যে । খাদ্য সুরক্ষাতে গরীব প্রান্তিক মানুষদের জন্য নাম মাত্র মুল্যে খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হয়। শত্রুদের থেকে আমাদের দেশের সার্বভৌমতা রক্ষা করতে প্রতিরক্ষা খাতের বিপুল বরাদ্দ থেকে সারা দেশ জুড়ে লক্ষ লক্ষ কিলোমিটার সড়কপথ রেলপথের সব খরচাটাই রাষ্ট্রকে বহন করতে হয়। এছারাও আরো হাজার হাজার সরকারি প্রকল্প আছে যেগুলো আমরা আম-মানুষ সকলে সবটা জানিও না। তাহলে এগুলোর উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে এবং দেশকে আরো উন্নত করতে বিপুল অর্থের যোগানের প্রয়োজন। আর দেশের একমাত্র রোজগার এই কর ব্যাবস্থা থেকে। এখন দেশ মানে আমরা সকলেই।
তাহলে কর দেওয়া ছাড়া যেখানে গতি নেই , সেখানে আপনি-আমি কতটা ওয়াকিবহাল সার্বিক কর ব্যাবস্থা সম্বন্ধে! আসুন উন্মাদের নজরে একবার সেইজ্ঞানটা ঝালিয়ে নেওয়া যাক।
ভারতের কর ব্যাবস্থা নিয়ন্ত্রন করে ভারতের রাজস্বমন্ত্রক। এই মন্ত্রকের আওয়ায় নানান সংস্থা, ভিন্নভিন্ন খাত থেকে কর সংগ্রহ করে রাষ্ট্রের তহবিলে জমা করে। কিছু কর প্রতক্ষ্য কেন্দ্র সরকারের অধীনে, কিছু কর রাজ্যের হাতে। এখন ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতি ব্যাবস্থার মাধ্যমে স্থানীয় পঞ্চায়েত বা পুরসভাও তাদের কর আদায় করে থাকে।
কর মূলত তিন প্রকারের হয়ে থাকে।
i) প্রতক্ষ্য কর
ii) পরোক্ষ কর
iii) অন্যান্য বা বিবিধ কর।

প্রতক্ষ্য কর
-----------
প্রতক্ষ্য করের প্রায় সবকটিই ভারতের কেন্দ্রিয় সরকারের সংস্থা সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্স” (CBDC) নামক সংস্থা নিয়ন্ত্রন করে। এই প্রতক্ষ্য করের অধীনে থাকে যথাক্রমেঃ-

১) আয়কর
~~~~~~~
আয়কর বা ইনকাম ট্যক্সের নাম শোনেননি এমন মানুষ বিরল। ভারতের যেকোন বাসিন্দা, বা বিদেশী কোন নাগরিক ভারত থেকে রোজগার করলে, বাৎসরিক হিসাবে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের বেশি আয় করলে তার একটা অংশ সরকারকে কর হিসাবে জমা করতে হয়। আয় যত বেশি করের পরিমানও তত বেশি। আয়কর দপ্তরের আইন অনুযায়ী ভারতের বসবাসকারী প্রতিটি ব্যক্তি, HUF অর্থাৎ অবিভক্ত হিন্দু পরিবার, AOP তথা (ব্যক্তি এসোসিয়েশন, বিনিয়োগ বোর্ড, ব্যক্তিদের গোষ্ঠী), করপোরেট সংস্থাগুলো, কোম্পানি, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য সকল আইন, পেশার সাথে যুক্ত ব্যক্তি কে সরকার নির্ধারিত নুন্যতম আয়ের বেশি আয় করলেই তিনি আয়কর দিতে বাধ্য। পূর্ববর্তী বছরের মোট আয়ের উপর সহ, চলতি অর্থবছরের উপরে এস্যাসমেন্ট করে, করের পরিমান ধার্য করা হয়। একজন পুরুষ- মহিলা এবং বয়স্ক নাগরিকদের জন্য করের হার আলাদা আলাদা।

২০১৬-১৭ অর্থ বছরে হিসাবটা যেমন ছিল-
পুরুষঃ বাৎসরিক হারে 
,৫০,০০০/- টাকা পর্যন্ত করমুক্ত
,৫০,০০১/- থেকে ৫,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত ১০% হারে
,০০,০০১/- থেকে ১০,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত ২০% হারে
১০,০০,০০১/- থেকে ১,০০,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত ৩০% হারে
,০০,০০,০০০/- টাকা বা ততোধিক পরিমান ৪০% হারে (অতিরিক্ত ১০% সারচার্জ)

বয়স্ক নাগরিক বাৎসরিক হারে 
,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত করমুক্ত
,০০,০০১/- থেকে ৫,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত ১০% হারে
,০০,০০১/- থেকে ১০,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত ২০% হারে
১০,০০,০০১/- থেকে ১,০০,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত ৩০% হারে
,০০,০০,০০০/- টাকা বা ততোধিক পরিমান ৪০% হারে (অতিরিক্ত ১০% সারচার্জ)

অতি বয়স্ক অর্থাৎ ৮০ বছর বা ততোধিক বয়স্কদের জন্য করছারের উর্দ্ধসীমার মাত্রা ৫,০০,০০০/- টাকা। বাকিটা অন্যাদের মত একই।
আয়করের অধীনস্ত আরো দুই প্রকারের কর রয়েছে
ক) বেতনকর বা পে-রোল ট্যাক্স 
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ 
বেতনকর আসলে একজন চাকুরীজীবির বেতন কেন্দ্রিক যাবতীয় আর্থিক রেকর্ডের সমষ্টি কর। আদপে Paysheet এর উপরে উল্লেখিত, যেমন মজুরি, বোনাস, এবং সমস্ত রকমের ডিডাকসনের যোগফলের উপরে নির্ধারিত হয় এই ধরনের ট্যাক্স। সরকারি হোক বেসরকারি চাকুরি, সকল নিয়োগকর্তাকে তার কর্মচারীদের, নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণের মাধম্যে বেতনকর সরকারি খাতে জমা করতে হয়।

খ) উইথহোল্ডিং ট্যাক্স বা প্রতিসংহার কর
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
এই ধরনের করে, করের পরিমান টাকা আগেই কেটে নিয়েই বেতন প্রদান করা হয়। এছারা বিভিন্ন কমিশন ব্যাবসা, ভাড়া ব্যাবসা, পেশাদারি পরিষেবা, এগ্রিমেন্ট, প্রতক্ষ্য বেতন ইত্যাদির উপরে লাগু হওয়া করও এই প্রকারের করের অধীনেই গনিত হয়।



দ্বিতীয় কিস্তি
~~~~~~~~
২) মূলধনী ট্যাক্স বা ক্যাপিট্যাল গ্যেইন ট্যাক্স
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
১৯৬১ সালের আয়কর আইন অনুযায়ী, স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদ থেকে অর্জিত যে কোনো প্রকার আয় মূলধনী থেকে আয়' হিসাবে বিবেচিত হয়। আর সেই আয়ের উপরে ধার্য হওয়া করকেই মূলধনী কর বলে। আরো সহজভাবে বললে, কোন মূলধনী সম্পত্তিথেকে তখনই আয় পাওয়া সম্ভব যখন সেটা বিক্রি বা ট্রান্সফার বা লিজ দেওয়া হয়। আর তা থেকে প্রাপ্ত অর্থরাশির উপরেই কর লাগু হয়।
ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স, স্বল্পমেয়াদী লাভ এবং দীর্ঘমেয়াদী লাভ- এই দুই ধরনের ভাগে বিভক্ত। যেমন কোন কোম্পানীর শেয়ার , বা সরকারি বা বেসরকারি বন্ড ইত্যাদি।
অবশ্য ব্যালেন্স সিট বা বাৎসরিক জমা খরচের খাতায় যদি উপরোক্ত লেনদেনকে মূলধনী সম্পদের আওতাতে দেখানো হয় , কেবলমাত্র তখনি এই কর ব্যাবস্থা লাগু হয়। অনেক সময় স্ক্রুটিনির সময় কর দপ্তরের অফিসারেরা হিসাবে অসঙ্গতি খুঁজে পেলে, রোজগারকৃত অতিরিক্ত অর্থ কে ক্যাপিট্যাল গ্যেইন হিসাবে দেখিয়ে দেয়।
৩)সম্পদকর বা ওয়েলথ ট্যাক্স
~~~~~~~~~~~~~~~
কোন ব্যাক্তির বা পরিবারের নিট সম্পদের পরিমান ছাড়িয়ে গেলে, সম্পদের তুল্যমুল্য ভ্যালুয়েসন করে তার উপরে ১% হারে কর ধার্য হয়। এটাই সম্পদ কর। কিন্তু কোন রাজনৈতিক দল, বা ট্রাষ্টি, কো-অপারেটিভ সোসাইটি ইত্যাদি সংস্থারা যত খুশি সম্পত্তি নিজেদের নামে রাখতে পারে, এরা সম্পদকরের আওতার বাইরে। যদিও এস্যাসেমেন্ট বছর 2016-2017 সাল থেকে কারোর ক্ষেত্রেই এই সম্পদকর আর প্রযোজ্য হবে না।
৪) সিকিউরিটিজ লেনদেন কর: -
অনেক মানুষ তাদের শেয়ার বা বন্ড কেনাবেচা সংক্রান্ত লেনদেন আয়কর দপ্তরের কাছে ঘোষনা করেনা ট্যাক্স ফাঁকি দেবার জন্য। এই পরিস্থিতিতে সরকার শুধু মাত্র এই মানুষগুলোর জন্য এক বিশেষ ধরনের করব্যাবস্থা চালু করেছে, যার নাম সিকিউরিটি ট্রানজাংসন ট্যাক্স (STT)স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিটি লেনদেনের উপরে লাগু হয় এই খুব নুন্যতম কর, যেমন শেয়ার কেনাবেচা, ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ডের ডিভিডেন্ট ইত্যাদি লেনদেনের উপরে ০.০১৭% থেকে ০.১২৫% পর্যন্ত সর্বোচ্চ হয়ে থাকে।
৫) কর্পোরেট ট্যাক্স
~~~~~~~~~~
প্রতিটি নথিভুক্ত ব্যাবসায়িক সংস্থা সারা বছরের মুনাফার উপরে একটি নির্দিষ্ট কর দিতে বাধ্য থাকে। এটাই কর্পোরেট ট্যাক্স। মোট রোজগার থেকে, উৎপাদন জাত খরচা, ডেপ্রিসিয়েসন, দৈনন্দিন অফিসিয়াল খরচা ইত্যাদি বাদে নিট আয়ের উপরে কর ধার্য হয়। এই করের হার দেশীয় আর বিদেশী কোম্পানীগুলোর জন্য আলাদা আলাদা। 
 
কোম্পানী- বাৎসরিক মুনাফা এক কোটির নিচে- বাৎসরিক মুনাফা এক কোটির উপরে-
দেশীয় কোম্পানী- ৩০% হারে + শিক্ষা সেস- ৩০% হারে + শিক্ষা সেস+ সারচার্য 
বিদেশী কোম্পানী- ৪০% হারে + শিক্ষা সেস - ৪০% হারে + শিক্ষা সেস + সারচার্য
ফ্রিঞ্চ বেনিফিট ট্যাক্স ট্যাক্স আর ডিভিডেন্ট ডিস্ট্রিবিউসন ট্যাক্স নামের দুটি প্রতক্ষ কর রয়েছে, যেগুলি এই কর্পোরেট ট্যাক্সের অধীনেই তথা সম্পর্ক যুক্ত।

তৃতীয় কিস্তি
~~~~~~~~~

পরোক্ষ কর বা ইনডাইরেক্ট ট্যাক্স
---------------------- 

যে কর কোন ব্যাক্তি বা কোম্পানির আয়ের সাথে প্রতক্ষ্য সংযোগ থাকেনা সেই ধরনের করই হল পরোক্ষ কর। যেমন বিভিন্ন ধরনের দ্রব্য বা পরিষেবার উপরে লাগু হওয়া রাষ্ট্র নির্ধারিত রাশি, সেই দ্রব্য ক্রয় বিক্রয়ের উপরে বা পরিসেবার মানের উপরে ধার্য হয়। 

১) এক্সাইজ ডিউটি বা আবগারি কর
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ 

দেশে উৎপাদিত পন্যের উপর লাগু হওয়া একধরনের করকে আবগারি কর বা অন্তঃশুল্ক বলা হয়। সেন্ট্রাল বোর্ড অফ এক্সাইজ আন্ড কাস্টমস (CBEC) নামক সংস্থার অধীনে রাষ্ট্র এই কর আদায় করে থাকে। এই করের অপর নাম CANVAT ২০১৬ সালের বাজেট অনুযায়ী একমাত্র রুপোর গহনা ছাড়া যেকোন ধরনের গহনা হিরে জহরতে ইনিপুট ট্যাক্স ক্রেডিট ছাড়া ১% আর ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট সহ ১২.৫০% কেন্দ্রকে দিতে হয়। একমাত্র মদ, স্পিরিট জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্যাদি, চেতনানাশক এলকোহোলিক দ্রব্যে লাগু এক্সাইজ ডিউটি রাজ্য সরকার সংগ্রহ করে তাই একে স্টেট এক্সাইজ ডিউটিবলা হয়ে থাকে। বাকি সকলই কেন্দ্রীয় এক্সাইজ ডিউটির অধীনস্ত। যেমন- ১৬ই অক্টোবর ২০১৬ তারিখে ১ লিটার পেট্রোলের উপরে এক্সাইজ ডিউটির পরিমাণ ছিল ২১ টাকা ৪৮ পয়সা। 

২) আমদানি শুল্ক বা কাস্টমস ডিউটি
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ 

বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পন্যের উপরে লাগু হওয়া করকে আমদানি শুল্ক বা কাস্টমস ডিউটি বলা হয়। যেমন- ১৬ই অক্টোবর ২০১৬ তারিখে ১ লিটার পেট্রোলের উপরে কাস্টমস ডিউটির পরিমাণ ছিল ০৩ টাকা ৯২ পয়সা। 

৩) সার্ভিস ট্যাক্স বা পরিষেবা কর
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

দেশের মধ্যে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে কোন ব্যাক্তি, অপর কোন ব্যাক্তি বা সংস্থা দ্বারা পরিষেবা গ্রহন করলে সরকারকে একটা কর প্রদান করতে হয় , যার নাম সার্ভিস ট্যাক্স বা পরিষেবা কর। টেলিফোন, ট্যুর অপারেটর, আর্কিটেক্ট, গৃহসজ্জা, বিজ্ঞাপন, বিউটি পার্লার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ব্যাংকিং ও যেকোন আর্থিক সেবা, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, রেস্টুরেন্ট, রক্ষণাবেক্ষণ সেবা, পরামর্শ সেবা ইত্যাদি এই পরিষেবা করের আওয়ার অন্তর্ভুক্ত। এর সবচেয়ে চালু অঙ্কটি হল ১৪.৫০%, যেটা আমরা অনেকেই দিয়ে থাকি।

৪) বিক্রয় কর বা সেলস ট্যাক্স
~~~~~~~~~~~~~~~~~~ 

কয়েকটি বিশেষ পন্য ব্যাতিরেকে দেশের যেকোন স্থানে কোন অস্থাবর পন্য তথা দ্রব্য বা পরিষেবা বিক্রয় করতে হলে সরকারকে নির্দিষ্ট পরিমাণ একটা কর দিয়ে তবেই সেটা ক্রেতাকে হস্তান্তর করতে পারেন। সেলস ট্যাক্সের- রাজ্য ও কেন্দ্র বন্টন রয়েছে। কিছু কর আন্তঃরাজ্য বিক্রয়কর হিসাবে রাজ্য সরকার গুলো ভিন্ন ভিন্ন হারে আদায় করে থাকে। রাজ্যগুলিতে একে VAT বলে উল্লেখিত বর্তমানে, আর কেন্দ্রেরটা CST নামে পরিচিত। এর জন্য প্রতিটি বিক্রেতাকে VAT বা CST রেজিস্ট্রেসন করিয়ে নির্দিষ্ট নাম্বার নিতে হয় এবং সেই খাতে কর প্রদান করতে হয়। কারন এই কর অন্তিম বিক্রেতা দ্বারা পয়েন্ট অফ সেল থেকে বিক্রেতার থেকে ডাইরেক্ট কালেক্ট করা হয় পন্য বা পরিসেবার মূল দরের সাথে জুড়ে। এবং সেই অন্তিম বিক্রেতার দ্বারাই সরাসরি সরকারের কোষাগারে জমা হয়। 
যেমন- ১৬ই অক্টোবর ২০১৬ তারিখে , রাজ্যগুলিকৃত ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ ছিল, ১ লিটার পেট্রোলের উপরে সেলস ট্যাক্সের ২৭% এবং ডিজেলের উপর ১৬.৭৫%। এর উপরে অতিরিক্ত ২৫ পয়সা পলিউসন সেস। 

৫) মার্কেটিং কমিশন বা চুঙ্গী কর
~~~~~~~~~~~~~~~~~~ 

আন্তঃজেলা পরিবহনের নিমিত্ত জেলা মার্কেটিং কমিসনের তত্বাবধানে এবং রাজ্য কৃষিবিপনন মন্ত্রকের অধীনে সকল প্রকার কৃষিজাত পন্য বিপননের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পন্যের উপরে ভিন্নভিন্ন শতাংসের হারে কর প্রদান করতে হয়। একেই মার্কেটিং ট্যাক্স বলা হয়। বিভিন্ন জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার মূল রাস্তার পাশে বাঁশের চুঙ্গী টাঙ্গিয়ে এই ধরনের কর পণ্যবাহী ট্রাকগুলো থেকে আদায় করা হয়, তাই একে চুঙ্গী করও বলা হয়।


বিবিধ কর
***********
১) প্রফেশনাল ট্যাক্স বা পেশাগত কর
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
উপার্যনক্ষম প্রতিটি স্বতন্ত্র ব্যাক্তিকে একটি নির্দিষ্ট হারে কর প্রদান করতে হয় রাজ্য সরকারকে। যেমন, উকিল, ডাক্তার, চাটার্ড একাউন্টটেন্ট, কোম্পানির চাকুরে ইত্যাদি ব্যাক্তিরা এই করের আওতায় পরেন। অনেক রাজ্যে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেসন দ্বারাও এই কর সংগ্রীহিত হয়ে থাকে, তবে এর হার রাজ্য ভেদে আলাদা আলাদা হয়।
২) উপহার কর
~~~~~~~~~
একজন জীবিত ব্যাক্তি অপর কোন জীবীত ব্যাক্তি বা করের আওয়ায় থাকা প্রতিষ্ঠানকে কোন সম্পত্তি বা অর্থ দান করলে গ্রহীতা ব্যাক্তির উপরেও কর লাগু হয়, যদিনা সেই অর্থের উপরে আয়কর বা সম্পত্তির উপরে সম্পত্তিকর প্রদান করা হয়ে থাকে। ১৯৫৮ সাল থেকেই এই কর ব্যাবস্থা সারা দেশে বলবৎ রয়েছে , জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য ছাড়া।
৩) স্বচ্ছভারত ট্যাক্স
~~~~~~~~~~~~
কেন্দ্রীয় সরকারের স্বচ্ছ ভারত মিশনকে সফল করতে ও তার জন্য তহবিল গঠন করতে ১৫ই নভেম্বর ২০১৫ থেকে যেকোন প্রকার করযোগ্য পরিমানের উপর ০.৫% হারে এই স্বচ্ছভারত ট্যাক্স আদায় করে ভারত সরকার। শৌচালয়, ওয়েষ্টবিন, থেকে শুরু করে পাবলিক প্লেস পরিচ্ছন রাখা কর্মীবন্ধুদের বেতন সহ আধুনা অমিতাভ বচ্চনের বিজ্ঞাপনের খরচও এই তহবিল থেকে খরচ করা হয়ে থাকে।
৪) কৃষি কল্যান কর
~~~~~~~~~~~~
নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে, দেশের কৃষিক্ষেত্রে গবেষনা ও বিবিধ ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য তহবিলের স্বার্থে, পয়লা জুন ২০১৬ সাল থেকে কেন্দ্রীয় সরকার সকল করযোগ্য পরিমানের উপর ০.৫% হারে অতিরিক্ত কর আদায় করে থাকে।
৫) প্রমোদকর বা এন্টারটেনমেন্ট ট্যাক্স
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যেকোন প্রকার সিনেমার মুক্তিতে কেন্দ্রসরকার এই কর আরোপ করে থাকে। তাছারা সিনেমার টিকিট, বেসরকারি উৎসব, মেলে-খেলা, জলসা, বানিজ্যিক বিনোদন, প্রমোদভ্রমন ইত্যাদির উপর থেকে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার এই কর আদায় করে থাকে।
৬) স্ট্যাম্প ডিউটি, রেজিস্ট্রেশন ফি, মিউটেশন কনভার্সন ফি, ও ট্র্যান্সফার ফি 
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ভারত রাষ্ট্রের আইন মোতাবেক, যেকোন সম্পত্তির আইনানুগ দলিল বানানোর উপরে আরোপিত ট্যাক্সকেই স্ট্যাম্প ডিউটি হলা হয়। এরপর এই দলিলটিকে ১২০ দিনের মধ্যে কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে আইনানুগ নথিবদ্ধ করতে দলিল বানানোর যে কর দিতে হয় , তাকেই রেজিস্ট্রেশন ফি হলা হয়। জমি, বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদি প্রতি ক্ষেত্রেই এই রেজিস্ট্রেশন ফি আবশ্যক। পরবর্তীতে উক্ত দলিলটির রেজিস্ট্রেশন হস্তান্তর বা মালিকানা পরিবর্তন হলে সেক্ষেত্রে সরকারকে ট্র্যান্সফার ফি প্রদান করেই নতুন রেজিস্ট্রেশন নাম্বার পাওয়া সম্ভব। জমির ক্ষেত্রে তার মান (কৃষি থেকে বাস্তু বা ইন্ড্রাট্রিয়াল) বা নাম (পরচাতে) পরিবর্তনের জন্য ভুস্বামীকে যে কর দিতে হয় তাদের যথাক্রমে মিউটেশন ও কনভার্সন ফি বলা।
৭) প্রবেশ কর
~~~~~~~~ 
আন্তঃরাজ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে, অর্থাৎ একরাজ্যের পন্য অন্য রাজ্যে প্রবেশ করার জন্য, কয়েকটি বিশেষ পন্য ব্যাতিরেকে সকল প্রকার পন্যের জন্য, একটি নির্দিষ্ট হারে গন্তব্য রাজ্য সরকারকে কর প্রদান করতে হয়। ভারতের অনেক শহরেও প্রবেশ করতে হলে, সেই শহরের নাগরিক ছাড়া অন্য নাগরিকদের ট্যাক্স দিতে হয় সংশ্লিষ্ট পুরসভাকে, এটাও এক ধরনের প্রবেশ কর।
৮) শিক্ষা কর
~~~~~~~~~ 
ভারতবর্ষের বিভিন্ন অবৈতনিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলির পরিকাঠামো, শিক্ষা সরঞ্জাম ইত্যাদির উন্নতিকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার কতৃক এই কর সাধারনত আয়করের সাথেই আদায় করা হয়ে থাকে।
৯) পুরকর
~~~~~~~ 
দেশের প্রতিটি পুরসভাতে বসবাসকারি প্রতিটি নাগরিক সংশ্লিষ্ট পুরসভাকে পুর পরিসেবার জন্য পুরকর দিতে বাধ্য।
১০) রোড ট্যাক্স, পলিউসন ট্যাক্স, টোল ট্যাক্স
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ 
ইঞ্জিনচালিত সকল প্রকার যানবাহনকে রাজ্যের অধীনে চলার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের ভিত্তিতে কর প্রদান করতে হয়, একে রোড ট্যাক্স কবে। দুষন পরিষদের ছারপত্রের জন্য প্রদেয় করকে পলিউসন ট্যাক্স বলে। কিছু কিছু রাস্তায় চলাচলের জন্য ইঞ্জিনচালিত গাড়িকে নির্দিষ্ট দুরত্বের ভিত্তিতে প্রদেয় করকে টোল ট্যাক্স বলে।
১১) পরিকাঠামো বা ইনফ্রাস্ট্রাকচার ট্যাক্স
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ 
দেশে উৎপাদিত সকল প্রকার জ্বালানি চালিত যানবাহনের উপর এই কর আদায় করে থাকে। পেট্রোল, CNG বা LPG চালিত গাড়ির ক্ষেত্রে ১% হারে, ছোট ডিজেল গাড়ির ক্ষেত্রে ২.৫% হারে, SUV বা তদুর্ধ গাড়ির ক্ষেত্রে ৪ % হারে কর নেওয়া হয়। প্রসঙ্গত চলতি আর্থিক বছরে যার লক্ষ্যমাত্রা ৩০০০ কোটি টাকা।
১২) ভুমি রাজস্ব কর
~~~~~~~~~~~~
জমি, পুকুর, বাগান, বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান, কারখানা, সহ সকল প্রকার ভুমি সম্পর্কিত সম্পত্তির উপরে আরোপিত করকে ভুমি রাজস্ব কর বলা হয়। রাজ্য সরকারের অধীনে ভূমি ও রাজস্ব দপ্তর এই কর আদায় করে থাকে।
বর্তমানে পরোক্ষ সকল করগুলিকে একত্রিভুত করে কেন্দ্রীয় সরকার পন্য ও পরিষেবা করনামক একটি কর সারা দেশ ব্যাপী লাগু করতে সংসদে বিল এনেছে। যদিও এই বিলটি পূর্বতন কেন্দ্রীয় সরকারই প্রবর্তন করতে চেয়েছিল, রাজনৈতিক জটিলটার কারনে যেটি এখনও ঝুলে রয়েছে। এই বিলটি পাস হয়ে গেলে কর ব্যাবস্থাতে অনেকটাই পরিবর্তন হবে, বিশেষ করে পরোক্ষ কর ব্যাবস্থাতে। বর্তমানে সবটাই প্রস্তাবিত ও আলোচোনার টেবিলে রয়ছে। সেটার বাস্তবায়ন হলে আরেকটা আলোচনা সকলের জন্যা তোলা রইল।
সমাপ্ত
উন্মাদ হার্মাদ
(
উন্মাদীয় বানানবিধি অনুসৃত)
বিভিন্ন সরকারি পোর্টাল ঠেকে তথ্য সংগৃহীত