আপনি চোর বা ডাকাত? কেপমারি করেন? হাতেনাতে ধরা
পড়েছেন? জেল জরিমানা খেটে সমাজের পরিচিত বা বিখ্যাত (!) বা
কুখ্যাত মুখ!
তাহলে চিন্তা নেই, নিশ্চিন্তে ফেসবুক করুন।
ধর্ষন করেছেন? রাজনীতিও করেন!
আরিব্বাস, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, পিছনে হাঁড়িচাঁচার দল ভিড় জমাবে শিগগীরই, নিশ্চিন্তে
ফেসবুক করুন।
আপনি কোনো
উগ্রবাদী দলের সমর্থক? গরম গরম বিস্ফোরক লাইন ঝাড়ছেন নিজ সংগঠনের সমর্থনে? তাহলে
তো কথাই নেই বস, আপনাকে যমেও ছোঁবেনা। উপরন্তু কিছু গুয়ের
মাছি ভনভনিয়ে ভিড় জমাবে আপনাকে কেন্দ্র করে।
কিন্তু.........
যদি আপনি দুকলম
লিখে ফেলেন এই সকলের বাইরে?
কি লিখেছেন সেটা বড় কথা নয়, কেন লিখেছেন সেটাই
বড় কথা। অতএব আপনিই হলেন সেই বিষয়।
এবার আসি একটু
অ-দরকারি ইতিহাসচর্চাতে।
সদ্য ব্যাবসাতে
ঢুকেছি তখন, গোঁফের রেখা স্পষ্ট আর সোশ্যাল মিডিয়া বলতে অর্কুটকেই বুঝি। তখনও ওয়াল
বিষয়টা বাজারে আসেনি, ছিল স্ক্র্যাপবুক। কলেজের বন্ধু অয়ন
তখনও ছাত্র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের, গবেষণারত। কোলকাতাতে
কোনো কাজে গিয়ে মেসের কথা মাথাতে আসতেই পাড়ি লাগালাম ঝিল রোডের সেই মেসের
উদ্দেশ্যে, যেখানে আমার ৩ টি বছর কেটেছিল।
ইন্টারনেট তখনও
চাঁদমারি, সন্ধ্যাতে এক রেস্টুরেন্টে টিফিন খেয়ে ঢুকলাম এক ইন্টারনেট কাফেতে। আমি
অর্কুট খুলছি, অয়ন বলল নতুন একটা অর্কুটের মত এসেছে, নাম ফেসবুক; সেই শুরু আজও চলছে।
ফেসবুক
দিনের অনেকটা অংশই
আমাদের এই মুহূর্তের হাত ধরে কেটে যায়। সেই ২০০৮ এর প্রায় শুরুর দিন থেকে থাকার
সুবাদে এই প্রায় এক দশকে অভিজ্ঞতাটা নিতান্ত কমও নয়। কত নতুন বন্ধু, কত পুরাতন বন্ধু
আত্মীয় পরিজন ভাই-বন্ধু-বান্ধবী নিয়ে এই সংসার। আমার মত অনেকেই শুরুর দিকে ভীষণ
ন্যালা-পাগলা থাকে ও ছিল। আমি টানা ৩ বছর প্রায় তেমন কিছুই জানতাম না বা বুঝতাম না;
বলাভাল চেষ্টাও করিনি জানার। অধিকাংশেই আমারই মতন। পুরাতন অনেক
সদস্যদেরই আমি চিনি তারা আমাকে না চিনলেও বা আমাকেও অনেকেই স্বনামে বেনামে চেনেন
বা জানেন আমি না চিনলেও। বয়সটাও বাড়ছে, তাই কালের নিয়মেই
হয়তো এখন সামান্য অল্প অল্প কিছু বুঝি এই আর কি, তাহলে কিরকম
সেই অভিজ্ঞতা!
বছর পাঁচেক আগেও
ফেসবুক ধারণাটা তেমন জেঁকে বসেনি সমাজে, আজকের মত। অনেকে অনেককিছুই করে তার সাথে ফেসবুকও।
মানুষের চরিত্রই হল পরিবেশের সাথে খাপ খেয়ে বাকিটা নিজের আয়ত্তে নিয়ে চলে আসা,
ফেসবুককেও তেমনই করে নিয়েছে। বাংলাতে লিখছে, বাংলাতে
পড়ছে আর কি চাই! একটা টিপিক্যাল বাঙালিয়ানা কালচারের ঘরানা বাঙালীরা ফেসবুকে আনতে
সক্ষম হয়েছে। মানুষ তিন ধরনের সাধারণত এই ফেসবুকে; এক ধরনের
মানুষ বিনোদন জগতের সাথে যুক্ত, বিনোদনের পসরা সাজিয়ে বসেন।
অন্যদল নিজ নিজ পছন্দের বিনোদন সামগ্রী চয়ন করে নিজেকে বিনোদিত করে থাকেন। এখানে
কারোর সাথে কোনো বিরোধ নেই। মুশকিলটা তৃতীয় লিঙ্গদের নিয়ে থুড়ি তৃতীয় পন্থা
অবলম্বনকারীদের নিয়ে। এনারা খান কম ছড়ান বেশি, শোনেন কম বলেন
বেশি, এনারা পরামর্শ দানের নিমিত্তেই মূলত জন্মগ্রহন করেছেন।
কি বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন, সেটা বড় কথা নয়, কাকে দিচ্ছেন সেটাও নয়; কিভাবে দিচ্ছেন সেটাই বড়
কথা। অনু থেকে অনুব্রত হয়ে জ্যোর্তিবিদ্যা থেকে জ্যোতিষচর্চা সকল বিষয়েই এনাদের
অবাধ যাতায়াত, গতিবেগ আলোর চেয়েও সময়ে সময়ে বেশি। খাটের তলা
থেকে ঝাপানতলা সর্বত্র।
এনাদের পোষাকি
নাম সমালোচক।
সনাতন ধর্ম মতে
বিদেহী আত্মারা পুণরায় ধরাধামে জীবদেহে জন্মগ্রহণ করেন। পাপী আত্মারা কাক, শৃগাল বা সারমেয়
রূপে এলেও অতৃপ্ত আত্মারা মনুষ্যরূপেই ধরাধামে অবতীর্ন হন। এনাদের থেকেই যোগ্যতমের
উদবর্তনের নিয়ম মেনে সমালোচক নামক প্রানীটি বিকাশ লাভ করে। এমনিতে এদের বিশেষ কোনো
বিশেষত্ব নেই চরিত্রে বা রূপে। এদের দুইটি অবস্থার সামান্যতম তারতম্যকে খুব দ্রুত
অনুধাবন করতে পারে, তাই দ্রুত পাল্টি খেতে এনারা উস্তাদ।
একটি নাসিকা, যেটা মিষ্টতার আস্বাদ পেলেই সেইমুখে দ্রুত
ধাবিত হয়ে পারেন। একটি জিভ, চাটার জন্য বিশেষভাবে অভিযোজিত।
দুইটি কান থাকলেও সেটা এপেনডিক্সের ন্যায় নিষ্কর্মা, কারণ সমালোচকরা
কারো কোনো কথা শুনেছেন বলে কেউ বদনাম দিতে পারবেনা। দুটো প্রসারিত হাত রয়েছে এই
প্রজাতির, একই সাথে একটি গলাতে ও অন্যটি পদযুগল স্পর্শ করার
মত বিলুপ্তপ্রায় ক্ষমতা যুক্ত। প্রয়োজন অনুসারে এনারা যে হাতটা দরকার সেটাই
ব্যবহার করে থাকেন। এদের দুইটি রিকেটগ্রস্থ কিন্তু সবল পা বর্তমান, যা পলায়নে উপযুক্ত। ঝামেলা লাগিয়ে দিয়ে ভদ্রতার দোহাই দিয়ে এনাদের পালানোর
কৌশল বিশ্ববন্দিত। বাকি জননাঙ্গ সম্ভবত ক্লীব শ্রেণীর, বা
ক্লাউন ফিসের মত বদলিযোগ্য। সম্ভবত বললাম এইজন্য, কারণ
ব্যক্তিগতভাবে কখনও এদের সাথে মৈথুনের সুযোগ পাইনি, পেলে সেই
বিষয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ চটি লেখার অগ্রিম প্রতিশ্রুতি দিলাম।
রিস্তে মে তো হাম
সবকে বাপ লাগতে হ্যাঁয়,
নাম হ্যাঁয় সমালোচক।
এই প্রজাতিটির
এমনই গুণ যে কঠিনপণ তপস্যাকারীকেও এনারা নির্বীজ করে দিতে সক্ষম এনাদের জিহ্বা
নামক অস্ত্র প্রয়োগে। আমাদের আজকের আলোচ্য ফেসবুকীয় সমালোচক, অতএব তাদের দিকে
দৃষ্টিপাত করা যাক। ধরা যাক একজন বিজ্ঞানী যিনি ইসরো মঙ্গলযান প্রোজেক্টের সাথে
যুক্ত, কিন্তু মনের দিক থেকে ইনি কবিও বটে, ফেসবুকে কবিতা লিখতে শুরু করেছেন হালফিল। তার গুণমুগ্ধ পাঠকের সংখ্যাও
নেহাত কম নেই, অতএব সমালোচকের নজর গেল, ব্যাস। বিজ্ঞান চর্চা বিষয়ে জ্ঞান থাকতেই হবে এমন মাথার দিব্যি যেহেতু কেউ
দিইনি অতএব সমালোচক তাঁর সমালচোনা শুরু করেদিলেন। তার বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া ঘটনা
দিয়ে রটনা স্টার্ট, বিজ্ঞানী জ্ঞানী হলেও প্যান্টের ভিতরে
জাঙ্গিয়া পড়েননা, এবং বাসর রাতে ইনি নাক খুঁটে হাত ধোননি। আর
কি চাই, লাইক- কমেন্ট- শেয়ারের বন্যা। ফেসবুকে অধিকাংশ সময়ই
সত্যতা প্রমানের দায় থাকেনা, তাই স্বঘোষিত অভিভাবক হতে খুব
বেশি বেগ পেতে হয়না। সমালোচনা ব্যবসা পচা ছানার মত ফুলে ফেঁপে উঠতে দেরি হয়না।
মন্টু মাতব্বর
আমাদের চেনাজানা এ রকমই একজন বিশিষ্ট বিদ্বজন তথা সমালোচক। ইনি সম্ভবত সেই হিমু
ট্রমার শিকার, যিনি বিশ্বাস করেন তালিম দিলেই মহাপুরুষ হওয়া সম্ভব। কিন্তু তেমন ইস্কুল
কি আর এই পোড়া ভূ-ভারতে আছে! অগত্যা নিজে থেকেই শুরু করে দিলেন ইস্কুল, যেখানে তিনিই অধ্যাপক আবার তিনিই ছাত্র। যথারীতি তিনি ফেসবুকের পাড়াতে
নিজের অস্তিত্ব জাহির করলেন। ইনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, গান
লেখেন, গান গান, বাজনা বাজান, ছবি আঁকেন, পুতুল গড়ান , কবিতা
লেখেন, গদ্য বমি করেন। তবে এনার পছন্দের বিষয়টা হল জীবনশৈলী।
ধর্মে নাস্তিক, নাম দেখে বোঝার উপায় নেই ইনি কোন জাতের। তাই
সর্ব ধর্মকে নিয়ে খিল্লি করার লাইফটাইম লাইসেন্স এনার কোঁচড়ে বাঁধা আছে। আর সেটাই
করেন ফেসবুকের দেওয়াল জুড়ে তাঁর ‘বিজ্ঞাপন’ এর রেতঃপাতে রঞ্জিত করে চলেন মুহুর্মুহ।
ফেবু সমালোচক
হওয়ার অন্যতম বড় গুণ হচ্ছে প্রায় সর্বত্র এনাদের নীরব উপস্থিতি। অকুস্থলে এনারা
কেউই কিছু বলেননা বা করেননা। এনারা সর্বঘট থেকে কাঁড়া আকাঁড়া খুদ কুঁড়ো নিয়ে বেশ
গুছিয়ে নিজের পাড়ায় এসে গোছা করে কালিপটকার পেটো ফাটান। কপি পেষ্টে এনাদের দড় মেলা
ভার, এনারা
সর্বত্র মন্তব্য করেননা তাতে নাকি ইজ্জতের হানি হয়! মেকুরের মত মাটি যদি নরম বোঝেন
তবেই সেখানে বাহ্য করেন রীতিমত আঁচড় কেটে নচেৎ নয়। হ্যাঁ, জ্ঞানত
ইনারা জ্ঞান আর রেচন পদার্থ ছাড়া কিছুই ত্যাগ করেন না।
মন্টুবাবুদের মত
নমুনাগুলো নিজেকে নিন্মমেধার বলেই পরিচয় দেন স্বগর্বে। এখন আপনি ভবঘুরে ফেসবুকার, মেধার গভীরতা খুঁজতে
গিয়ে গুগুলে মেধা পাটেকরের জীবনীতে পি এইচ ডি করে ফেলেছেন প্রায় ,তবুও মেধার পরিভাষা রপ্ত করতে পারেননি। অগত্যা মন্টুদার দেওয়াল ভুলে
গ্রুপে ঢুঁ মারলেন। হ্যাঁ, এই গ্রুপ। কদিন আগেও সমালোচক
বাবুদের একটা প্রসিদ্ধ খিল্লি করার বিষয় ছিল গ্রুপবাজি। আশ্চর্যজনক ভাবে এনারা
প্রত্যেকেই নিজেরা একাধিক গ্রুপ খুলে বসেছিলেন, বা গ্রুপ,
পেজের এডমিন। অধিকাংশ জন হালে সেভাবে পানি না পেয়ে গণেশ উল্টিয়ে
আবার পুনঃর্মুষিক ভব, পেশাদারীভাবে সমালোচনার ব্যাবসাতে মন
দিয়েছেন। সমালোচনার খেয়ালে মুতে চলেন দেওয়ালে।
ফেসবুকের সংসারে
মুখ্য যে কয় ধরনের পাবলিক দেখা যায় তাদের দিকে একটু দৃষ্টিপাত করা যাক। কিছু লোক
শুধুই জোকসের ভক্ত, কেউ প্রিয়জনের মৃত্যু সংবাদ দিলেও এনারা একটা অট্টহাস্যের ইমোজি সেঁটে
দেবেন। একদল সারাদিনই কমেন্ট করেন, এনারা মূলত কমেন্টার।
জেনিভা চুক্তি থেকে হরপ্পা সভ্যতা হয়ে আমস্টারডামের ব্রথেল হোক বা তৃতীয় বিশ্বের
দারিদ্রতা সকল বিষয়েই এনাটা চটপট কমেন্ট করে দেন, তীব্র
জ্বালাময়ী সব ভাষণ দিয়েই এনারা বিখ্যাত। অন্যান্য সমমতাদর্শীরা তর্কস্থলে এদের নাম
উল্লেখ করে ডেকে এনে রীতিমত স্টারের মর্যাদাও প্রদান করে থাকেন। সারা বছরে কালে
ভদ্রে এনারা পোষ্ট বা শেয়ার করেন।
একদল শুধুই কবিতা
গল্প উপন্যাস লেখেন, নিজেরটা টুক করে পোষ্ট করে দিয়ে ফেরারি আসামির মত গায়েব হয়ে যান পরবর্তী
পোষ্টের আগে পর্যন্ত। একদল পেজ বা গ্রুপের এডমিন, এনারা
সারাদিন ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর ব্রতে দীক্ষিত। এনারাই আসলে মিনি সেলিব্রিটির
মর্যাদা ভোগ করে নিজ নিজ এলাকাতে। এদের আচরণ অনেকটা আমলা বা মন্ত্রী সুলভ, যদিও যাবতীয় নিত্যনতুন আইডিয়া গুলো এদেরই মস্তিষ্কপ্রসুত।
একদল আছেন, যারা সারাদিন শেয়ার
করেন। সেটা ধর্ষনের খবর হোক বা বর্ষনের, ডোন্ট কেয়ার। একদলের
আবার গ্যালপিং চিন্তাভাবনা, তাও আবার হাই লেভেলের, এদের ছোটখাটো ষ্টেশন ধরেনা। এদের বিষয় পানাগরিয়ার কত গুলো নীতি মোদী
এপ্রুভ করবেন! ডোকোলাম নিয়ে চিনের আভ্যন্তরীণ কূটনীতি কী ভাবছে! রাশিয়ার উপরে
আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা বিশ্ব বানিজ্য মানচিত্রে কতটা এফেক্ট ফেলবে ইত্যাদি।
একদল নিজের ও
নিজের পরিবারের বস্তা বস্তা ছবি শেয়ার করেই সেলিব্রিটি, কেউ কেউ আবার ওই
করেই এক আধটা পেজও খুলেছেন বলে খবর আছে। শেষের দলটি ‘আমি আর
ফেসবুক করব না’, সুপ্রভাত শুভরাত্রি, ‘এতো
কষ্ট কেন”, এই ধরনের আঁতেল পোষ্ট করেই মানসিক তৃপ্তি লাভ
করেন।
বাপে বলেছে
সুধীরভাই, আনন্দের আর সীমা নাই, এই একটা প্রজাতীর প্রাণী ফেসবুকের
সমাজে সবর্ত্র বিরাজমান, এবং এরাই সংখ্যাধিক্য। এরা সকল
কিছুতেই ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর জটিল, বাছা বাছা কঠিন অব্যয় আর বিশেষণ
ব্যবহার করেন। এরাই সমালোচকদের মূল খদ্দের। কারন বাকি সকলেই নিজ নিজ কর্মে ব্যস্ত,
সুতরাং মধু আর মালতির এ এক বিচিত্র গন্ধ শোঁকাশুঁকি।
বাকিরা? নাহ এখানেই শেষ নয়, শেষেরও একটা শেষ থাকে, বাকি হলে তারা...
আরে বাওয়া, এরাই তো হলেন ওই
মন্টু বাবু, বিদগ্ধ সমালোচক। নাম না দিয়ে কেউ যদি একটা রবি
ঠাকুরের কবিতা বা সেক্সো কবির ড্রামা পোষ্ট করে ফেলেছেন, এনারা
নির্দ্বিধার তার মা মাসি উদ্ধার করে দেবেন অবলীলাক্রমে।
কবি ঠাকুরের কথায়
মনে এল ইনি অনেক বই ছাপিয়েছিলেন বা প্রকাশকে এনার বই ছাপে। আজকের এই ট্যাকস্যাভি
যুগে আড্ডার পরিসরটা বা চেনা পরিচিতের গন্ডিটা ফেসবুক ভায়া হয়েই বস্তু দুনিয়ার
প্রান্তে উন্মুক্ত হচ্ছে। অনামি তথা শখের লেখকেরাও একটা চটজলদি পাঠক প্রতিক্রিয়াও
পাচ্ছেন, হ্যাঁ-না করতে করতে কিছু জন বইও ছাপিয়ে ফেলছেন। ঘটনা হচ্ছে ছাপাছাপির
বিষয়টা আগের চেয়ে অনেক অনেক কমে গেছে যেটা বই পাড়াতে যাতায়াত করলেই মালুম হয়।
কিন্তু ছাপার অক্ষরে নিজেকে দেখার বাসনা কার না হয়! উন্নত যোগাযোগ ব্যাবস্থার
সুবাদেই ফেসবুকের মঞ্চ থেকে আরো অনেক সংগঠিত কর্মের মত বই ছাপানোও হচ্ছে।
তাহলে আর বলছি
কি!! সমালোচকেরা কি বসে থাকবেন হাত গুটিয়ে? আলবাত নয়, ইজ্জতের প্রশ্ন
আছে না বস! অতএব লাগাও কাঠি।
ফিরে যাই শুরুর
লাইনে, আপনি
যদি রাজনৈতিক নেতা হল, চোর, ডাকাত,
খুনী, ধর্ষন হোন আপনি অনেকটা সেফ সমালোচকদের
থেকে। কারণ কোষ বলতে এদের শুধুই অন্ড, বাকিটা চর্বি আর
জ্ঞান। সুতরাং পাল্টা আসতে পারে এমন বাক্সের ধারেকাছে এনারা যাননা। কিন্তু যদি
আপনি নিরীহ নির্বিরোধী লেখক হন? তাহলে আর আপনার রক্ষে নেই।
আপনার যাবতীয় সকল কিছু ঠিকেদারি এনারা নিজ দায়িত্বে কাঁধে তুলে নেবেন। শুরু হয়ে
যাবে নিরন্তর কাঠিবাজী, কাঠির টান পরলে হাতে পায়ে কুড়িটা
আঙুল হ্যায় না...
কেউ মদের নেশা
করেন, কেউ
মেয়েছেলের, কেউ রেসের মাঠে যান। গাঁজা, চরস, হেরোইন তো আছেই। একটাকেও সমাজ ভাল চোখে নেয়না।
কিন্তু আপনি যদি বই লেখা বা ছাপানোর মত নিরীহ নেশা করেছেন!! অমনি সমালোচকের দল এমন
ফেনাতে শুরু করে দেবে, যে আপনার খাটের তলা অবধি পৌঁছে যাবে।
আপনি হয়ত বিনিদ্র রজনীতে পেটে অম্বলের দোষ করে বসে আছেন। আনন্দের বিষয় হল আপনার
পায়ুরন্ধ্রে সমালোচকের দল হয় কাঠি বা আঙুল কিছু একটা গুঁজে রেখেই দিয়েছেন।
সমালোচোকরা সেটা টেনে মাঝে মাঝে বের করে শুঁকবেন, দেখবেন
গন্ধটা ঠিকঠাক মনমতো ঝাঁঝালো হল কিনা।
সমালোচক সকল
কিছুই করেন শুধু এটুকু বোঝেননা, আঙুল বা কাঠি করতে করতে আঙুলের ডগাতে যে হলুদ
বর্ণটা শোভা বর্ধন করে ওটা তরল কাঞ্চণ নয়, পাতি নরগোবর।
কিন্তু বিজ্ঞ সমালোচককে কে বোঝাবে! তিনি
তাতেই মোক্ষ লভেছেন।
ফেসবুকের
পরাকাষ্ঠা, স্ট্যাটাসের ভিড়ে অক্ষম রমনের প্রয়াসে নিত্যনতুন খুঁত খুঁজে ফেরা অতৃপ্ত
আত্মা।
*******