Wednesday, 30 August 2017

।। বচনামৃত- ১ ।।

দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি জাপানী তেল কি বাবা কামদেব ভারতের বাজারে আনবেন?
যদি আনেন কি তার নাম হতে পারে? আপনারা কি সাজেষ্ট করবেন? ইন্ডিয়াল ওয়েল! হবে না, লাল তেল! হবে না, ভারত - হিন্দুস্থান...... নো চান্স স্যার। সব অলরেডি বুকড।

আমার সাজেসন : "পতন-জলী মহালিঙ্গম তেল"
বিজ্ঞাপনে দেখানো হোক পুঁই এর দরজা জানালার ফ্রেম। মানে পুঁই শাকের গাছে এই তেলের প্রভাবে প্রভাবে উহা শাল কাঠের মত মজবুত হয়ে গেছে।
এবং এর সাথে নির্দিষ্ট ধনুষ্টঙ্কার আসন শাষন করলে, পুঁইএর মিচুরির মত থোকা থোকা পুরুষ্ট *ন্ডকোষ জন্মাবে। যাহা স্বাস্থবান সেবকের জন্ম দেবে। এমনকি বাজারেএ পাতিলেবুর উপর দুফোঁটা ফেললেই সাথে সাথে উহা বাতাবি লেবুর আকার ধারন করিবে। বা পৌরসভার জল লাইনের পাইপের মুখে দিলেই.... বিদ্যুত বেগে হদহদ করে ধারা প্রবাহিত হবে। ইত্যাদি ইত্যাদি.....

যদিও বাবার নিজশ্ব কক্ষে বাবার প্রসাদ খেয়ে ২-৩ ঘন্টার কোর্স করলে তিনি নিজেকে গর্ভবতী রুপে আত্মপ্রকাশ করাতে পারবেন। ইহা পুরুষদের জন্য নহে। কা-পুরুষ, মহাপুরুষ ও মহিলারাই প্রযোজ্য। (লেসবো ব্যাতিরেকে, ওনার জন্য আধে-মা আছেন)

বি:দ্র:- ইহা কেবলিমাত্র 'গো' ও 'শাখামৃগ' সন্তানদের জন্যই প্রযোজ্য।


Monday, 28 August 2017

।। প্রাণের অকপট ।।

মনখারাপের রাতে, জোনাকপোকার সাথে
যখন স্বপ্ন পাকায় জট;
হাট্টিমাটিম রবে, ঝাঁপিয়ে পরে সবে
তার, নামটি অকপট।
প্রেমের গলি কানা, তাই প্রশ্ন করা মানা
হৃদয় করছে যে ছটপট;
আরাম পাবে মনে, স্বেচ্ছা বা আনমনে
লীলার ক্ষেত্র অকপট।
পদ্য আসে খাসা? মনে জমাট বাঁধা আশা!
প্রসব করো ঝটাপট;
যদি উৎরিয়ে যায় মানে, প্রাণ জুড়ায় শুনে কানে
জেনো ছাপবে অকপট।
একলা ঘরে কোনে, মোটেই শান্তিটা নেই মনে
নি:সঙ্গ জীবন তট,
নতুন বন্ধুরাযে ঠাঁই, আছে তোমার অপেক্ষায়
জেনো সাকিন অকপট।
কূটকচালের ভিড়ে, যখন ক্লান্তি ধরে ঘিরে
ডোবে মানবতার ঘট;
মুক্ত বাতাস চাই? ভুলে ক্লান্তির সব দায়!
সদা উন্মুক্ত অকপট।
তমাল তরুর মাঝে, কৌলিণ্যের সাজে
পলাশ, ছাতিম, বট;
গুল্ম কিম্বা লতা, যখন জাত চেনানো কথা
ঔষধি অকপট।
আর্ত অসহায়, হাতে হাত রাখে ভাই
দেখায় সংহতি দাপট;
সকলের ছোট্ট প্রচেষ্টা, মেটায় দু:স্থের তেষ্টা
নবরূপে অকপট।
বন্ধু হয়ে দেখো, মননের নরম পৃষ্ঠে রাখো
মঞ্চে কেউ নটী বা নট
ফকির হোকবা রাজা, ভাবেভিজে তরতাজা
এ সাম্রাজ্য অকপট।
উৎসবেতে দড়, সবাই আপন নেইযে পর
ঈদ, দেওয়ালি ছট;
বড় দিনের কেকে, ফাগের রঙে মেখে
মিলন মঞ্চ অকপট।
হরেক মতের কুম্ভমেলা, সবাই গুরু সবাই চ্যেলা
সাওয়ারি দ্বন্দের সকট;
হিংসা বিভেদ ভুলে, অহং পোষাক খুলে
মেলায় অকপট।

Wednesday, 23 August 2017

।। এনিমি রিকোয়েষ্ট ।।

মহানুভব কাহারে কয়?
সবাই বলে, সমালোচনা হজম করতে শিখুন; তবে নিজের ক্ষেত্রে মানতে হলেই চিল্লিয়ে চিল্লানোসোরাস বনে যেতে দেরি হয়না।
ফেবু পাড়ায় সুপ্রভাতে আপনি আমি প্রায় মিনি মহাপুরুষ। কমোডে বসে, বিবেকানন্দ এন্ড সিক্সটিনাইন আদার্স করে টাইমলানে যেই না একটা বানী ঝাড়লেন অমনি পেট খোলসার প্রথম কিস্তি জলশিক্ত হল।
ঠিক ধরেছেন, এটাই হল কাঠিন্য, জ্ঞানকাঠিন্য যেটা কোষ্ঠনালিতে হরতাল ডেকেছিল।
আপনি শিল্পী মানুষ, ওয়ার্ক স্যাটিসফিক্সন ছাড়া কোনো কাজে উৎসাহী হবেন কেন? হোকনা সেটা বাহ্যকর্ম। টয়লেটের নামে সিনেমা তৈরি হচ্ছে, সুপারহিটও, আমি আপনি হাগাতে সুখ খুঁজলে দোষ?
মোটেই নয়, আপনি সেই সিক্সটিনাইন এণ্ড আদার্স পোষ্টটিকে আপনার সাধ্যে- যত্তো গ্রুপ আছে সবকটাতে সেঁটে দিন। এরই মাঝে নিরবে যে কখন প্যান ভরে উঠবে টেরই পাবেননা, একটিবার যখন সেই দিকে দৃষ্টিপাত করবেন.....
"এতোটা মাল? আমি? এতো বড় সত্যি?"
ইয়েস এটাই সেই ওয়ার্ক স্যাটিসফিক্সন।
স্টার হতে চান? না কত্তা শুধু কোবতে কোপচে হচ্ছেনি, হবার জো নেই। তবে হতাশ হবারও কিছুটি ঘটেনি।
পেরথমে একটা সাবজেক্ট বাছুন, সেটা লাল চিনের গরম বুলি থেকে গর্দানের দেদো ছুলি সব জায়েজ। এবারে তার সাথে লোকাল অডিয়েন্স থেকে একটা আপাত নিরীহ প্রজাতিকে বাছুন। তাপ্পরে আঠাকাঠি দিয়ে লাগাতার ৩৩ প্রহর যা খুশি কপচাতে থাকুন। তবে হ্যাঁ, প্রতিটি আপডেটে সাবজেক্টকে ছুঁয়ে থাকা মাষ্ট। রাতারাতি না হলেও কয়েকটা দিন আর রাত পর বেশ কিছু ফ্যান-এসি না হোক নিদেনপক্ষে তালপাতার হাতপাখা তথা ফলোয়ার জুটে যাবেই যাবে,বালক ব্রহ্মচারীর দিব্যি।
যাদের আভিধানিক নাম "দাঁত ক্যালানে বাঞ্চারাম"।
এতো গেল সব ভাল ভাল কথামালা, কিন্তু যদি ধরুন এমন নিয়ম হত যে, আপনি যা কিছু করবেন তার একটা সমানুপাতিক হারে বিরুদ্ধমতকে মর্যাদা দিতেই হবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে মান্যতা দিয়ে।
আপনার ১০ জনকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালেন ঝিঙ্কু মামনি সহ, ওমনি সিস্টেম নিজে থেকেই ৩জন কে এনিমি রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিল, ৩০% রেশিও হারে। ফ্রেন্ড হলে যেমন পিঠচুলকানি মাষ্ট তেমনই এনিমি হলেই পিছনে কাঠি ম্যান্ডেটারি নতুবা কমেন্ট লাইক অটো রিপোর্টেড হয়ে ব্লক খাবেন। ব্লকের ক্ষেত্রে রিভার্স নিয়ম অর্থাৎ পুরো শোলে সিস্টেম। তুম এক মারোগে সিস্টেম ৪ মারেগা, বহুত ইয়ারানা লাগতা হ্যায়.... আব আয়েগা মাজা।
কেউ বন্ধুদের নিজের "লোমের যত্ন নিন" গ্রুপে এডাচ্ছে, ওমনি সিস্টেম আপনার গ্রুপে "অবাঞ্চিত লোম মুক্তির সহজ উপায়" গ্রুপের সদস্যদের লেলিয়ে দেবে। লে বাওয়াল, টোটাল সাম্য।
ধরুন কেউ পোষ্টালো –
সুপ্রভাত বন্ধুরা। - ফিলিং এলোন এ্যাট কোলকাতা।
ফ্রেন্ডস কমেন্ট আমাদের সকলেরই জানা।
এনিমি কমেন্ট-
১) ওর ব্যাটা বোকাসোডা, আমি মুম্বইতে আর এখানে এখনও ভোর। ডিলিট কর পোষ্ট শ্লা।
২) সুধীরভাই একখান। ঘরে বৌ নেই নাকি!
এছাড়া, জঘন্য, ফালতু, অসভ্য, মার ভাঁড়ে লাথ, লিচি কপালে উঠিয়ে দেব, বৃহন্নলার সন্তান, নরসুন্দর, শাখামৃগ ইত্যাদি কমেন্টের বন্যা বয়ে ফিলগুড ব্যাপারটাতে সাম্যবস্থা আসত।
বোঝা যেত কিসকে বামমে কিতনা দম আর কতটা সমালোচনার আপনি আচারি ধর্মের পালক।
তো কাকাবিপ্লব হবে নাকি সাম্যের জন্য?

Saturday, 12 August 2017

।। ওয়াক থু... রাজনীতি ।।

গোরক্ষপুর নামটা আমি প্রথম শুনি শ্রীমদ্ভাগত গীতা নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখার সময়, তখন নিতান্তই শিশু বয়স। গোরক্ষপুরের একটা প্রেসে অনেক বই ছাপানো হয়, যেগুলো বড় বড় বইএর দোকানে নজরে পড়ত। এভাবেই নামটা হৃদয়ে গাঁথা।
এখন অবশ্য গোরক্ষপুর অন্য নামে শিরোনামে।
টাকা বাকি, অক্সিজেনের সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়ে উচিৎ শিক্ষা দেওয়া গেছে। ৩০টি কচি প্রাণের কি আর কোনো মুল্য আছে?
থাকতো, যদি ওদের ভোটাধিকার থাকত। কুকুরের মত নেতানেত্রীদের কামড়াকামড়ি শুরু করে দিত লাশগুলো নিয়ে। বাছুর হলে অবশ্য তাদের জন্য বাহিনী রয়েছে।

নাহ, কেউ প্রশ্ন তোলেনি শিশুগুলোর জাত নিয়ে। সম্ভবত তারা এখনও গরু বা শুয়োর কি জানতনা তাই।
অবশ্য গোরক্ষপুরের MLA তথা প্রদেশের মূর্খমন্ত্রী কম ব্যস্ত নয়। মাদ্রাসাতে পতাকা তোলাটা অনেক বেশি জরুরী, হয়ত এটাই দেশের একমাত্র প্রায়োরিটি। ক্ষমতাতে টিকে থাকতে পুরকি প্রয়োজন। শিশুমৃত্যুতে নজর দেবার সময় কোথায়, দেশপ্রেমের মামড়িতে ঢেকে যাবে সব ক্ষত। বাপের বিয়ের বরযাত্রীতে খাঁকি হাফপ্যান্ট আর সিল্কের চেক লুঙ্গির সমযোজী বন্ধন।
বলি বেঁচেই যদি না থাকে ভবিষ্যত প্রজন্ম, দেশপ্রেম কি পোঁদে গুঁজবে?
কে জানে কাল আবার না সরকারি ফতোয়া জারি করে বলে বসে, বাচ্চাদের মাকে পাঠিয়ে দাও- "বসে *দো" প্রতিযোগিতা করে বলবে; নাও বাচ্চা বানিয়ে দিচ্ছি সম্পূর্ণ স্বদেশী বীর্য দিয়ে। মজার বিষয় হল কিছুজন এতেই এমন আপ্লুত হয়ে যাবে যে নিজেও পাছা উদোম করে দেবে পায়ুসঙ্গম করার জন্য। বিশ্বাস মিলায় বস্ত, অতএব তেজশ্বী পবিত্র বীর্য (কা) পুরুষদের গর্ভবতী বানিয়ে তুলবেনা তাতে অবিশ্বাসের কি আছে! সাধে কি আর বদল বা ষাঁড়দের জন্য আলাদাকরে কেউ ভাবেনা, তাদের অবস্থা না ঘরকা না ঘাটকা।
গরু, জ্যোতিষ, গোমাংস, দলিত, কাশ্মীর, JNU, মাদ্রাস, নোটবন্দী, মন্দির ওহি বানায়েঙ্গে, আচ্ছেদিন, হিন্দুত্ব, আরেকজনের নাম নিজগুনে বুঝে নিন। ব্যাস ঘড়িতে এই ভাবেই কাঁটা ঘুড়ে চলেছে মহান ভারতবর্ষের।
রাজ্যে শিক্ষিত বেকারদের মৃত্যু মিছিলে সবে নাম লিখিয়েছে দুজন, অফিসিয়ালি। মৃত্যুর পরে নিজেকে অমর করে তুলতে অনেকেই চাইবে। পিসির নেকনজরে এদের বাবা দাদা মায়েদের কেউ কেউ না আবার ভোটে দাঁড়িয়ে পরে। উত্তরবঙ্গ ভাষছে, সব্জিতে আগুন, DA নিষিদ্ধ শব্দ, বাটপারের দল দাঁত কেলিয়ে কেপমারির কথা কবুল করছে, দক্ষিন বঙ্গে ত্রান অপ্রতুল।
তিনি ব্যস্ত দিল্লি আর ভাইপো নিয়ে। ওদিকে মুকুল হেল মাড়ছে, জ্বালা কি কম!
বাম নিশ্চিন্তযাপনে সুরক্ষিত সোস্যালমিডিয়াতে, বাকিটা পলিটিবুর‍্যোতে। কিছু ভাষন আর লোক দেখানো শাসন ব্যাস.... লক্ষ্যহীনের বৃত্ত সম্পূর্ন। পরবর্তী ঐতিহাসিক ভুলের জন্য গভীর প্রস্তুতিতে মগ্ন।
আমি আপনিও আছি, পোষ্ট লিখছি কালেক্ষণে ঠিকিই। কিন্তু টেস্টনি, সারহা তে কি ছিলামনা? নাকি অরিন্দমে নেই? বিল্পব হচ্ছেতো।
সারাটিক্ষন সোনাপোনা আর স্বাদফেরাতে সোনাগাছি-
.........বেঁচে আছি বস, বেঁচে আছি।
ওয়াক থু: রে দেশের রাজনীতি

Sunday, 6 August 2017

।। স মা লো চ ক ।।


আপনি চোর বা ডাকাত? কেপমারি করেন? হাতেনাতে ধরা পড়েছেন? জেল জরিমানা খেটে সমাজের পরিচিত বা বিখ্যাত (!) বা কুখ্যাত মুখ! 
তাহলে চিন্তা নেই, নিশ্চিন্তে ফেসবুক করুন।
ধর্ষন করেছেন? রাজনীতিও করেন! আরিব্বাস, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, পিছনে হাঁড়িচাঁচার দল ভিড় জমাবে শিগগীরই, নিশ্চিন্তে ফেসবুক করুন।
আপনি কোনো উগ্রবাদী দলের সমর্থক? গরম গরম বিস্ফোরক লাইন ঝাড়ছেন নিজ সংগঠনের সমর্থনে? তাহলে তো কথাই নেই বস, আপনাকে যমেও ছোঁবেনা। উপরন্তু কিছু গুয়ের মাছি ভনভনিয়ে ভিড় জমাবে আপনাকে কেন্দ্র করে। 
কিন্তু.........

যদি আপনি দুকলম লিখে ফেলেন এই সকলের বাইরে? কি লিখেছেন সেটা বড় কথা নয়, কেন লিখেছেন সেটাই বড় কথা। অতএব আপনিই হলেন সেই বিষয়।
এবার আসি একটু অ-দরকারি ইতিহাসচর্চাতে।
সদ্য ব্যাবসাতে ঢুকেছি তখন, গোঁফের রেখা স্পষ্ট আর সোশ্যাল মিডিয়া বলতে অর্কুটকেই বুঝি। তখনও ওয়াল বিষয়টা বাজারে আসেনি, ছিল স্ক্র্যাপবুক। কলেজের বন্ধু অয়ন তখনও ছাত্র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের, গবেষণারত। কোলকাতাতে কোনো কাজে গিয়ে মেসের কথা মাথাতে আসতেই পাড়ি লাগালাম ঝিল রোডের সেই মেসের উদ্দেশ্যে, যেখানে আমার ৩ টি বছর কেটেছিল।
ইন্টারনেট তখনও চাঁদমারি, সন্ধ্যাতে এক রেস্টুরেন্টে টিফিন খেয়ে ঢুকলাম এক ইন্টারনেট কাফেতে। আমি অর্কুট খুলছি, অয়ন বলল নতুন একটা অর্কুটের মত এসেছে, নাম ফেসবুক; সেই শুরু আজও চলছে।
ফেসবুক
দিনের অনেকটা অংশই আমাদের এই মুহূর্তের হাত ধরে কেটে যায়। সেই ২০০৮ এর প্রায় শুরুর দিন থেকে থাকার সুবাদে এই প্রায় এক দশকে অভিজ্ঞতাটা নিতান্ত কমও নয়। কত নতুন বন্ধু, কত পুরাতন বন্ধু আত্মীয় পরিজন ভাই-বন্ধু-বান্ধবী নিয়ে এই সংসার। আমার মত অনেকেই শুরুর দিকে ভীষণ ন্যালা-পাগলা থাকে ও ছিল। আমি টানা ৩ বছর প্রায় তেমন কিছুই জানতাম না বা বুঝতাম না; বলাভাল চেষ্টাও করিনি জানার। অধিকাংশেই আমারই মতন। পুরাতন অনেক সদস্যদেরই আমি চিনি তারা আমাকে না চিনলেও বা আমাকেও অনেকেই স্বনামে বেনামে চেনেন বা জানেন আমি না চিনলেও। বয়সটাও বাড়ছে, তাই কালের নিয়মেই হয়তো এখন সামান্য অল্প অল্প কিছু বুঝি এই আর কি, তাহলে কিরকম সেই অভিজ্ঞতা!
বছর পাঁচেক আগেও ফেসবুক ধারণাটা তেমন জেঁকে বসেনি সমাজে, আজকের মত। অনেকে অনেককিছুই করে তার সাথে ফেসবুকও। মানুষের চরিত্রই হল পরিবেশের সাথে খাপ খেয়ে বাকিটা নিজের আয়ত্তে নিয়ে চলে আসা, ফেসবুককেও তেমনই করে নিয়েছে। বাংলাতে লিখছে, বাংলাতে পড়ছে আর কি চাই! একটা টিপিক্যাল বাঙালিয়ানা কালচারের ঘরানা বাঙালীরা ফেসবুকে আনতে সক্ষম হয়েছে। মানুষ তিন ধরনের সাধারণত এই ফেসবুকে; এক ধরনের মানুষ বিনোদন জগতের সাথে যুক্ত, বিনোদনের পসরা সাজিয়ে বসেন। অন্যদল নিজ নিজ পছন্দের বিনোদন সামগ্রী চয়ন করে নিজেকে বিনোদিত করে থাকেন। এখানে কারোর সাথে কোনো বিরোধ নেই। মুশকিলটা তৃতীয় লিঙ্গদের নিয়ে থুড়ি তৃতীয় পন্থা অবলম্বনকারীদের নিয়ে। এনারা খান কম ছড়ান বেশি, শোনেন কম বলেন বেশি, এনারা পরামর্শ দানের নিমিত্তেই মূলত জন্মগ্রহন করেছেন। কি বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন, সেটা বড় কথা নয়, কাকে দিচ্ছেন সেটাও নয়; কিভাবে দিচ্ছেন সেটাই বড় কথা। অনু থেকে অনুব্রত হয়ে জ্যোর্তিবিদ্যা থেকে জ্যোতিষচর্চা সকল বিষয়েই এনাদের অবাধ যাতায়াত, গতিবেগ আলোর চেয়েও সময়ে সময়ে বেশি। খাটের তলা থেকে ঝাপানতলা সর্বত্র।
এনাদের পোষাকি নাম সমালোচক।
সনাতন ধর্ম মতে বিদেহী আত্মারা পুণরায় ধরাধামে জীবদেহে জন্মগ্রহণ করেন। পাপী আত্মারা কাক, শৃগাল বা সারমেয় রূপে এলেও অতৃপ্ত আত্মারা মনুষ্যরূপেই ধরাধামে অবতীর্ন হন। এনাদের থেকেই যোগ্যতমের উদবর্তনের নিয়ম মেনে সমালোচক নামক প্রানীটি বিকাশ লাভ করে। এমনিতে এদের বিশেষ কোনো বিশেষত্ব নেই চরিত্রে বা রূপে। এদের দুইটি অবস্থার সামান্যতম তারতম্যকে খুব দ্রুত অনুধাবন করতে পারে, তাই দ্রুত পাল্টি খেতে এনারা উস্তাদ। একটি নাসিকা, যেটা মিষ্টতার আস্বাদ পেলেই সেইমুখে দ্রুত ধাবিত হয়ে পারেন। একটি জিভ, চাটার জন্য বিশেষভাবে অভিযোজিত। দুইটি কান থাকলেও সেটা এপেনডিক্সের ন্যায় নিষ্কর্মা, কারণ সমালোচকরা কারো কোনো কথা শুনেছেন বলে কেউ বদনাম দিতে পারবেনা। দুটো প্রসারিত হাত রয়েছে এই প্রজাতির, একই সাথে একটি গলাতে ও অন্যটি পদযুগল স্পর্শ করার মত বিলুপ্তপ্রায় ক্ষমতা যুক্ত। প্রয়োজন অনুসারে এনারা যে হাতটা দরকার সেটাই ব্যবহার করে থাকেন। এদের দুইটি রিকেটগ্রস্থ কিন্তু সবল পা বর্তমান, যা পলায়নে উপযুক্ত। ঝামেলা লাগিয়ে দিয়ে ভদ্রতার দোহাই দিয়ে এনাদের পালানোর কৌশল বিশ্ববন্দিত। বাকি জননাঙ্গ সম্ভবত ক্লীব শ্রেণীর, বা ক্লাউন ফিসের মত বদলিযোগ্য। সম্ভবত বললাম এইজন্য, কারণ ব্যক্তিগতভাবে কখনও এদের সাথে মৈথুনের সুযোগ পাইনি, পেলে সেই বিষয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ চটি লেখার অগ্রিম প্রতিশ্রুতি দিলাম।
রিস্তে মে তো হাম সবকে বাপ লাগতে হ্যাঁয়, নাম হ্যাঁয় সমালোচক।
এই প্রজাতিটির এমনই গুণ যে কঠিনপণ তপস্যাকারীকেও এনারা নির্বীজ করে দিতে সক্ষম এনাদের জিহ্বা নামক অস্ত্র প্রয়োগে। আমাদের আজকের আলোচ্য ফেসবুকীয় সমালোচক, অতএব তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক। ধরা যাক একজন বিজ্ঞানী যিনি ইসরো মঙ্গলযান প্রোজেক্টের সাথে যুক্ত, কিন্তু মনের দিক থেকে ইনি কবিও বটে, ফেসবুকে কবিতা লিখতে শুরু করেছেন হালফিল। তার গুণমুগ্ধ পাঠকের সংখ্যাও নেহাত কম নেই, অতএব সমালোচকের নজর গেল, ব্যাস। বিজ্ঞান চর্চা বিষয়ে জ্ঞান থাকতেই হবে এমন মাথার দিব্যি যেহেতু কেউ দিইনি অতএব সমালোচক তাঁর সমালচোনা শুরু করেদিলেন। তার বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া ঘটনা দিয়ে রটনা স্টার্ট, বিজ্ঞানী জ্ঞানী হলেও প্যান্টের ভিতরে জাঙ্গিয়া পড়েননা, এবং বাসর রাতে ইনি নাক খুঁটে হাত ধোননি। আর কি চাই, লাইক- কমেন্ট- শেয়ারের বন্যা। ফেসবুকে অধিকাংশ সময়ই সত্যতা প্রমানের দায় থাকেনা, তাই স্বঘোষিত অভিভাবক হতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়না। সমালোচনা ব্যবসা পচা ছানার মত ফুলে ফেঁপে উঠতে দেরি হয়না।
মন্টু মাতব্বর আমাদের চেনাজানা এ রকমই একজন বিশিষ্ট বিদ্বজন তথা সমালোচক। ইনি সম্ভবত সেই হিমু ট্রমার শিকার, যিনি বিশ্বাস করেন তালিম দিলেই মহাপুরুষ হওয়া সম্ভব। কিন্তু তেমন ইস্কুল কি আর এই পোড়া ভূ-ভারতে আছে! অগত্যা নিজে থেকেই শুরু করে দিলেন ইস্কুল, যেখানে তিনিই অধ্যাপক আবার তিনিই ছাত্র। যথারীতি তিনি ফেসবুকের পাড়াতে নিজের অস্তিত্ব জাহির করলেন। ইনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, গান লেখেন, গান গান, বাজনা বাজান, ছবি আঁকেন, পুতুল গড়ান , কবিতা লেখেন, গদ্য বমি করেন। তবে এনার পছন্দের বিষয়টা হল জীবনশৈলী। ধর্মে নাস্তিক, নাম দেখে বোঝার উপায় নেই ইনি কোন জাতের। তাই সর্ব ধর্মকে নিয়ে খিল্লি করার লাইফটাইম লাইসেন্স এনার কোঁচড়ে বাঁধা আছে। আর সেটাই করেন ফেসবুকের দেওয়াল জুড়ে তাঁর বিজ্ঞাপনএর রেতঃপাতে রঞ্জিত করে চলেন মুহুর্মুহ।
ফেবু সমালোচক হওয়ার অন্যতম বড় গুণ হচ্ছে প্রায় সর্বত্র এনাদের নীরব উপস্থিতি। অকুস্থলে এনারা কেউই কিছু বলেননা বা করেননা। এনারা সর্বঘট থেকে কাঁড়া আকাঁড়া খুদ কুঁড়ো নিয়ে বেশ গুছিয়ে নিজের পাড়ায় এসে গোছা করে কালিপটকার পেটো ফাটান। কপি পেষ্টে এনাদের দড় মেলা ভার, এনারা সর্বত্র মন্তব্য করেননা তাতে নাকি ইজ্জতের হানি হয়! মেকুরের মত মাটি যদি নরম বোঝেন তবেই সেখানে বাহ্য করেন রীতিমত আঁচড় কেটে নচেৎ নয়। হ্যাঁ, জ্ঞানত ইনারা জ্ঞান আর রেচন পদার্থ ছাড়া কিছুই ত্যাগ করেন না।
মন্টুবাবুদের মত নমুনাগুলো নিজেকে নিন্মমেধার বলেই পরিচয় দেন স্বগর্বে। এখন আপনি ভবঘুরে ফেসবুকার, মেধার গভীরতা খুঁজতে গিয়ে গুগুলে মেধা পাটেকরের জীবনীতে পি এইচ ডি করে ফেলেছেন প্রায় ,তবুও মেধার পরিভাষা রপ্ত করতে পারেননি। অগত্যা মন্টুদার দেওয়াল ভুলে গ্রুপে ঢুঁ মারলেন। হ্যাঁ, এই গ্রুপ। কদিন আগেও সমালোচক বাবুদের একটা প্রসিদ্ধ খিল্লি করার বিষয় ছিল গ্রুপবাজি। আশ্চর্যজনক ভাবে এনারা প্রত্যেকেই নিজেরা একাধিক গ্রুপ খুলে বসেছিলেন, বা গ্রুপ, পেজের এডমিন। অধিকাংশ জন হালে সেভাবে পানি না পেয়ে গণেশ উল্টিয়ে আবার পুনঃর্মুষিক ভব, পেশাদারীভাবে সমালোচনার ব্যাবসাতে মন দিয়েছেন। সমালোচনার খেয়ালে মুতে চলেন দেওয়ালে।
ফেসবুকের সংসারে মুখ্য যে কয় ধরনের পাবলিক দেখা যায় তাদের দিকে একটু দৃষ্টিপাত করা যাক। কিছু লোক শুধুই জোকসের ভক্ত, কেউ প্রিয়জনের মৃত্যু সংবাদ দিলেও এনারা একটা অট্টহাস্যের ইমোজি সেঁটে দেবেন। একদল সারাদিনই কমেন্ট করেন, এনারা মূলত কমেন্টার। জেনিভা চুক্তি থেকে হরপ্পা সভ্যতা হয়ে আমস্টারডামের ব্রথেল হোক বা তৃতীয় বিশ্বের দারিদ্রতা সকল বিষয়েই এনাটা চটপট কমেন্ট করে দেন, তীব্র জ্বালাময়ী সব ভাষণ দিয়েই এনারা বিখ্যাত। অন্যান্য সমমতাদর্শীরা তর্কস্থলে এদের নাম উল্লেখ করে ডেকে এনে রীতিমত স্টারের মর্যাদাও প্রদান করে থাকেন। সারা বছরে কালে ভদ্রে এনারা পোষ্ট বা শেয়ার করেন।
একদল শুধুই কবিতা গল্প উপন্যাস লেখেন, নিজেরটা টুক করে পোষ্ট করে দিয়ে ফেরারি আসামির মত গায়েব হয়ে যান পরবর্তী পোষ্টের আগে পর্যন্ত। একদল পেজ বা গ্রুপের এডমিন, এনারা সারাদিন ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর ব্রতে দীক্ষিত। এনারাই আসলে মিনি সেলিব্রিটির মর্যাদা ভোগ করে নিজ নিজ এলাকাতে। এদের আচরণ অনেকটা আমলা বা মন্ত্রী সুলভ, যদিও যাবতীয় নিত্যনতুন আইডিয়া গুলো এদেরই মস্তিষ্কপ্রসুত।
একদল আছেন, যারা সারাদিন শেয়ার করেন। সেটা ধর্ষনের খবর হোক বা বর্ষনের, ডোন্ট কেয়ার। একদলের আবার গ্যালপিং চিন্তাভাবনা, তাও আবার হাই লেভেলের, এদের ছোটখাটো ষ্টেশন ধরেনা। এদের বিষয় পানাগরিয়ার কত গুলো নীতি মোদী এপ্রুভ করবেন! ডোকোলাম নিয়ে চিনের আভ্যন্তরীণ কূটনীতি কী ভাবছে! রাশিয়ার উপরে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা বিশ্ব বানিজ্য মানচিত্রে কতটা এফেক্ট ফেলবে ইত্যাদি।
একদল নিজের ও নিজের পরিবারের বস্তা বস্তা ছবি শেয়ার করেই সেলিব্রিটি, কেউ কেউ আবার ওই করেই এক আধটা পেজও খুলেছেন বলে খবর আছে। শেষের দলটি আমি আর ফেসবুক করব না’, সুপ্রভাত শুভরাত্রি, ‘এতো কষ্ট কেন”, এই ধরনের আঁতেল পোষ্ট করেই মানসিক তৃপ্তি লাভ করেন।
বাপে বলেছে সুধীরভাই, আনন্দের আর সীমা নাই, এই একটা প্রজাতীর প্রাণী ফেসবুকের সমাজে সবর্ত্র বিরাজমান, এবং এরাই সংখ্যাধিক্য। এরা সকল কিছুতেই ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর জটিল, বাছা বাছা কঠিন অব্যয় আর বিশেষণ ব্যবহার করেন। এরাই সমালোচকদের মূল খদ্দের। কারন বাকি সকলেই নিজ নিজ কর্মে ব্যস্ত, সুতরাং মধু আর মালতির এ এক বিচিত্র গন্ধ শোঁকাশুঁকি।
 
বাকিরা? নাহ এখানেই শেষ নয়, শেষেরও একটা শেষ থাকে, বাকি হলে তারা...
আরে বাওয়া, এরাই তো হলেন ওই মন্টু বাবু, বিদগ্ধ সমালোচক। নাম না দিয়ে কেউ যদি একটা রবি ঠাকুরের কবিতা বা সেক্সো কবির ড্রামা পোষ্ট করে ফেলেছেন, এনারা নির্দ্বিধার তার মা মাসি উদ্ধার করে দেবেন অবলীলাক্রমে।
কবি ঠাকুরের কথায় মনে এল ইনি অনেক বই ছাপিয়েছিলেন বা প্রকাশকে এনার বই ছাপে। আজকের এই ট্যাকস্যাভি যুগে আড্ডার পরিসরটা বা চেনা পরিচিতের গন্ডিটা ফেসবুক ভায়া হয়েই বস্তু দুনিয়ার প্রান্তে উন্মুক্ত হচ্ছে। অনামি তথা শখের লেখকেরাও একটা চটজলদি পাঠক প্রতিক্রিয়াও পাচ্ছেন, হ্যাঁ-না করতে করতে কিছু জন বইও ছাপিয়ে ফেলছেন। ঘটনা হচ্ছে ছাপাছাপির বিষয়টা আগের চেয়ে অনেক অনেক কমে গেছে যেটা বই পাড়াতে যাতায়াত করলেই মালুম হয়। কিন্তু ছাপার অক্ষরে নিজেকে দেখার বাসনা কার না হয়! উন্নত যোগাযোগ ব্যাবস্থার সুবাদেই ফেসবুকের মঞ্চ থেকে আরো অনেক সংগঠিত কর্মের মত বই ছাপানোও হচ্ছে।
তাহলে আর বলছি কি!! সমালোচকেরা কি বসে থাকবেন হাত গুটিয়ে? আলবাত নয়, ইজ্জতের প্রশ্ন আছে না বস! অতএব লাগাও কাঠি।
ফিরে যাই শুরুর লাইনে, আপনি যদি রাজনৈতিক নেতা হল, চোর, ডাকাত, খুনী, ধর্ষন হোন আপনি অনেকটা সেফ সমালোচকদের থেকে। কারণ কোষ বলতে এদের শুধুই অন্ড, বাকিটা চর্বি আর জ্ঞান। সুতরাং পাল্টা আসতে পারে এমন বাক্সের ধারেকাছে এনারা যাননা। কিন্তু যদি আপনি নিরীহ নির্বিরোধী লেখক হন? তাহলে আর আপনার রক্ষে নেই। আপনার যাবতীয় সকল কিছু ঠিকেদারি এনারা নিজ দায়িত্বে কাঁধে তুলে নেবেন। শুরু হয়ে যাবে নিরন্তর কাঠিবাজী, কাঠির টান পরলে হাতে পায়ে কুড়িটা আঙুল হ্যায় না...
কেউ মদের নেশা করেন, কেউ মেয়েছেলের, কেউ রেসের মাঠে যান। গাঁজা, চরস, হেরোইন তো আছেই। একটাকেও সমাজ ভাল চোখে নেয়না। কিন্তু আপনি যদি বই লেখা বা ছাপানোর মত নিরীহ নেশা করেছেন!! অমনি সমালোচকের দল এমন ফেনাতে শুরু করে দেবে, যে আপনার খাটের তলা অবধি পৌঁছে যাবে। আপনি হয়ত বিনিদ্র রজনীতে পেটে অম্বলের দোষ করে বসে আছেন। আনন্দের বিষয় হল আপনার পায়ুরন্ধ্রে সমালোচকের দল হয় কাঠি বা আঙুল কিছু একটা গুঁজে রেখেই দিয়েছেন। সমালোচোকরা সেটা টেনে মাঝে মাঝে বের করে শুঁকবেন, দেখবেন গন্ধটা ঠিকঠাক মনমতো ঝাঁঝালো হল কিনা।
সমালোচক সকল কিছুই করেন শুধু এটুকু বোঝেননা, আঙুল বা কাঠি করতে করতে আঙুলের ডগাতে যে হলুদ বর্ণটা শোভা বর্ধন করে ওটা তরল কাঞ্চণ নয়, পাতি নরগোবর। কিন্তু বিজ্ঞ সমালোচককে  কে বোঝাবে! তিনি তাতেই মোক্ষ লভেছেন।
ফেসবুকের পরাকাষ্ঠা, স্ট্যাটাসের ভিড়ে অক্ষম রমনের প্রয়াসে নিত্যনতুন খুঁত খুঁজে ফেরা অতৃপ্ত আত্মা।


******* 

Saturday, 5 August 2017

।। অংশুমানের গল্প ।।

রোববারের সকালে একটু বেলা করেই ঘুম ভাঙে অংশুর। এসিটা ২৪শেই আছে, সুতরাং ঘরটা মিনি দার্জিলিং এ পরিণত; এখানেই হানিমুন চলছে ওদেরআসলে করবীর সাথে লাভ ম্যারেজটা গত পরশুই করেছে অংশুমান।

ব্যাঙ্গালোরে এসেছে বছর পাঁচেক হল, IT Sector এ এক বিদেশি কোম্পানির উচ্চপদস্থ চাকুরে। পুরুলিয়ার ঘটিব্রাহ্মন সন্তান সে, ছুটির দিনেও মন্দিরে যাওয়ার ভক্তিতে কমতি ছিলনা অংশুমানের। বছর তিনেক আগে এক ভোরে সে করবীকে দেখে। সূর্যের নরম আলোতে কোনো রকম প্রসাধন ছাড়া এক অপরুপ দেব প্রতিমা মনে হয়েছিল অংশুর। তারপর থেকে ওই সপ্তাহে এক আধবার দেখা সাক্ষাৎ কয়েক মুহুর্তের তরে ব্যাস এটুকুই। ওদিকে বাড়িতে অংশুর মা তার রায়গঞ্জের সইএর একমাত্র মেয়ে অমলার সাথে যে বিয়ে প্রায় পাকা করে ফেলার উপক্রম। একথা জানতেই কিছু বন্ধুর সাহায্যে বিয়েটা চটাপট সেরে নেয় অংশু। তারপর বাড়িতে বাবাকে ফোন করে খবরটা দেয়। যাই হোক এ খবর শুনে তারা আর কালক্ষেপ না করে আজই দুপুর ১২টা কুড়ির ফ্লাইটে চড়ে বসেছেন।
চাদরের বাইরে বেড় হয়ে থাকা মুখটুকুতে হঠাত বৃষ্টির ফটা মত পরতেই আধাঘুমের ম্যাড়ম্যাড়ে চোখে চেয়ে দেখলো করবী ওর দাড়ি সেভ করা ছোট্ট আয়নাটা নিয়ে কপালে সোহাগের সিঁদুর লাগাচ্ছে। আর সেই ভিজে চুল থেকেই শিশিরবিন্দুর মত জল ঝরে পরছে। চাদর থেকে হাতদুটো বের করে যেইনা কোমরটা ধরছে, অমনি পাঁকাল মাছের মত শরীরটাকে হিলহিলিয়ে কপট রাগ সহ চোখ বড় বড় করে করবী ইশারা করল অংশুকে ফ্রেশ হয়ে নিতে। পটে আঁকা সুন্দরী না হলেও, যে রূপ থেকে চোখ ফেরানো যায়না, করবী সেই সুন্দরী।

প্রাতঃরাসে পোহা মানে চিড়ের একটা পদ সাথে একটা ডিমের পোচ আর এক পেয়ালা চা। লাঞ্চের জন্য বাবা মায়ের পছন্দের সব্জি আর মাছ এনে, পাশের ফ্ল্যাটের বাঙালী সহকর্মীর বাঙালী স্ত্রী ইশানী বৈদিকে ডাকতেই, তিনি সোৎসাহে রান্নাবান্না করে দিয়ে গেলেন।

বৌদিই করবীকে একটা ঢাকাই জামদানি শাড়ি সুন্দর করে পরিয়ে দিয়ে গেল। ত্রয়োবিংশি করবীর চোখেমুখে শিশুসুলভ উচ্ছ্বাস। যথা সময়ে হৈ হৈ করে অংশুর বাবা ফ্ল্যাটে পৌঁছে গেলেন ওর মাকে সাথে করে। করবী শ্বশুর শাশুড়িকে টিপ করে প্রণাম করে এক্কেবারে লজ্জাবতী লতার মত ঘরের এক কোনে সরে দাঁড়িয়ে রইল। এদিকে মা বাবার সাথে অংশু, শরীর স্বাস্থ্য, চাকুরি, এলাকা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা মগ্ন রইল। করবী সবটাই দেখছে কিন্তু সে অংশগ্রহন করলনা। অংশুর মাও যেন বৌমা হিসাবে করবীকে ঠিক মেনে নিতে পারছিলনা। যাই হোক, ক্লান্ত শরীরে বাবা মা ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নিতে গেলে করবীও একটু গা এলিয়ে দিল।

হঠাতই অফিস থেকে বসের জরুরী একটা ফোনের জন্য অংশু বেড়িয়ে গেল। মা বাবা, করবী তিনজনেই ঘুমাচ্ছে, ‘এই যাব আর এই আসব, অযথা জাগিয়ে লাভ কি’ এই ভেবে অংশু বেড়িয়ে গেল। ঘুমভাঙা শ্বাশুড়ি বৌমার দরজার সামনে গিয়ে অনেক ডেকেও সারা না পেয়ে রুষ্ট মনে বললেন-
-       বাব্বা, মেয়েছেলের এতো দেমাক কেন বাবা। ছেলেটা যেন আমার নয়, টিকলে হয়।
সন্ধ্যার দিকে অংশুর সাথে ফোনে কথা বলে ওর বাবা জানলো তার আসতে লেট হবে। ওদিকে ওর মা স্থানীয় বাজারে যাবার জন্য উদগ্রীব, বিবাহ আশীর্বাদের লোকাচারের সামগ্রী কেনার জন্য। তিনি অংশুকে সে কথা বলতেই অচেনা জাইগার জন্য করবীকে সাথে নিয়ে যেতে বললেন-
-       মা, আমি করবীকে মেসেজ দিয়ে দিচ্ছি। ওর সাথে চলে যাও।
মায়ের ঠিক মনপুতঃ নাহলেও ছেলের কথাটা ফেলতে পারলেন না। তিনি বৌমার ঘরের দিকে যাওয়ার আগেই দেখেন করবী একটা শালোয়ার স্যুট পড়ে এক্কেবারে তৈরি। শ্বাশুড়ি কোনো কথা বাড়ালেন না, চুপচাপ করবীর পিছনে অনুসরণ করল।

ব্যাঙ্গালোরের ভিড় রাস্তাতে করবী, শ্বাশুরির হাতটা কয়েকবার ধরার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তিনি বললেন-
-       থাক, আর আদিখ্যেতা করতে হবেনা, আমিও গড়িয়াহাটে সপিং করি। গেয়ো ভূত ভেবোনা। উঁ, আমার সোনার টুকরো ছেলেটার উপরে কালাজাদু করে বস করে আবার ঢং হচ্ছে।
ফেরার সময় রাস্তাটা শ্বাশুরি বৌমা পার হচ্ছিলেন, হঠাত দড়াম করে একটা শব্দ। তার পর লোকে লোকারণ্য।

আউটার রিং রোডের একটা হাসপাতালের মর্গের সামনে লাশ শনাক্ত করছে অংশু। ওর স্ত্রী করবী গাড়ি এক্সিডেন্টে মৃত। যাকে তিন দিন আগে একটি মন্দিরের অনাথ আশ্রম থেকে বিবাহ করেছিল। অংশুর মা ও কপাল চাপড়ে কেঁদে চলেছেন,
-       যদি জানতাম বৌমা আমার মুক ও বধির, আমি কি ওর হাত ছাড়তাম?