Tuesday, 31 July 2018

।। উন্মাদনামা- ৩২ ।।


Disclaimer: কাঁচা খিস্তিতে যাদের এলার্জি তারা এই বাটিকা সেবন থেকে বিরত থাকুন।
™™™™™™™™™™™™™™™™™™

চিন্তাটা আসলে আপনি ঘটি না বাঙাল সেটা নিয়ে নয়, সমস্যা হল আপনি নাগপুরের বলদগুলোর পূজারী কি না। ওখানেই যাবতীয় সিদ্ধান্ত লুকিয়ে। আসলে কি জানেন, একটা লোকেরও বাল ছিড়তে পারবেনা এই বিজেপি এন্ড কোম্পানি। আইন পালটা আইনের গ্যাঁড়াকলে পাবলিক ভুলে যাবে- কে কি ও কেন। কিন্তু এটাকে কেন্দ্র করে যে প্রবল আলোচনার সামিয়ানা খাটানো হয়েছে দেশ জুড়ে তার তলাতে মোদী সরকার আরো বেশ কিছু অবৈধ কাজ সেরে হাত ধুয়ে নেবে।

ওদের উপরে চোখ বুজে ভরষা করুন, কারন ওরা পেশাদার উন্নতশ্রেনীর চুতিয়া ধাপ্পাবাজ আর আমরা বোকাচোদা গান্ডু।
মিডিয়া, প্রোপাগান্ডা আর হুজুকে পাবলিকের এখন ত্রিসাম চোদনলীলা চলছে, মাল খসলে সবাই দেখবে আসলে সবাই যার যার লাভ ঘরে তুলেছে, শুধু পাবলিকের পোঁদ মারা গেছে আর রাষ্ট্রীয় বীর্যে গর্ভবতী সরি ঋণবতী হয়েছে। আবকি বার ফিরসে মোদী সরকার, কেন? যে জাতি নিজের পোঁদ মারিয়ে সুখ পায় তার জন্য এমন জুমলাবাজই আদর্শ নেতা।

মলম লাগাতে মিডিয়া মাসির কন্ডোম তো আছেই, যেটা আপনার মুখে গুঁজে দেবে। অপেক্ষা করুন, কোন জুমলা প্রকাশ পেল এই অসমিয়া জুমলার পাঁকে। কারো থেকে মন্তব্যের আশা রাখছিনা, তবুও জানতে চাই "মন্দির ওহি বানেঙ্গে" মাগর কাবতক!!

।। উদ্বাস্ত ও সমুদ্রগড় ।।

লেখকঃ তন্ময় হক 

আমাদের সমুদ্রগড়
এমন বর্ষাদিনে আমাদের মায়েরা তখন স্কুল পর্যন্ত পৌঁছে দিতেন হাতে ধরে। ক্লাস ফাইভে উঠেছি , স্কুল বাড়ি থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে, তবুও। সেটা ১৯৯৩-৯৪ সাল, আমাদের বিবিরহাট গ্রামের অদূরে একটা মোল্লারবিল নামক গ্রামে বেশ কিছু বাঙালবাসা বেঁধেছে শুনেছি, শেষ ১৫-২০ বছরের হতদরিদ্র মানুষজনের কলোনি। সমুদ্রগড় মূলত হাঁড়ি, ধাঙড়, কিছু অত্যন্ত দরিদ্য শ্রেনীর মুসলমানদের সাথে কালীনগর ও জালাহাটির অবস্থাপন্ন সদগোপ চাষাদের বাস। দাদুর কাছে শোনা, ৭১ এর আগেই মোদকরা বর্তমান পূর্ব পাকিস্থান থেকে এসে কালীনগরের অদূরে কালীতলাতে বসবাস শুরু করে। ৭১ এর পরে দেবনাথ, বিশ্বাস, সরকার, হালদার, মজুমদার, মণ্ডল, ইত্যাদি পদবীর বাংলাদেশী লোকজন অল্প আকারে গ্রামের বাইরের দিকে চূড়ান্ত হতদরিদ্র পরিবেশে কেউ কেউ জলাজংলার মধ্যেই বসবাস শুরু করে, যেখানে যাতায়াতের কোনো রাস্তাঘাটও ছিলনা। আমি তখনও জন্মায়নি অবশ্য। জন্মের আগের একদশকের মাঝেরকার ঘটনা, তখনকার মিস্ত্রি পরিবারটিকে ঘিরেই সমুদ্রগড় নামক গা-গঞ্জের দিনাতিপাত। এটা নবদ্বীপ শহর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে, তবুও অজ পাড়াগাঁ বলতে ঠিক যা বোঝায় ঠিক তাই ছিল।
নবাব আমল, গৌড়রাজ, বর্ধমানরাজ, কৃষ্ণনগরের রাজা হয়ে বৃটিশদের সাথে চলাচলি হরেক চিঠিপত্র, সম্পত্তির দলিল, ব্যবসায়িক দস্তাবেজ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আমাদের মিস্ত্রি বংশের (পরবর্তীতে হক্‌) বাস এই অঞ্চলে প্রায় ৩০০ বছরেরও অধিক। যদিও মাঝে একবার এনারা মানে আমার পূর্বপুরুষেরা সুলুন্টু নামক একটা স্থানে থাকতেন, যেটা বর্তমান সমুদ্রগড় থেকে ১৬ কিমি উত্তরে। কোনো এক মড়কের কবলে সেই গ্রাম উলা হয়ে গেলে এরা বর্তমান এই স্থানে বসতি স্থাপন করে, সেটাও কমপক্ষে ২০০ বছর আগে। তারপরে কোম্পানির সাহেবইঞ্জিনিয়ারদের নক্সাতে তৈরি আমাদের দু-দুখানা কোঠাবাড়ি আজও ৩০ শতাংশ বসবাস যোগ্য হয়ে ইতিহাস বহন করে চলেছে। আমাদের বংশের অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষয়িষ্ণু দুটো ধারা আজও সেখানে বসবাস করে, এই ২০১৮ তেও।
আমিও বেশ কিছু কথা লিখে ফেললাম আবেগে, আসলে এই আচ্ছেদিনের ভারতে যেখানে প্রমথেশ বড়ুরার পরিবার থেকে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির পরিবার সুরক্ষিত নয় সেখানে আমাদের মত বালস্য বাল তায় মুসলমান- কিভাবে আতঙ্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারি?
হ্যাঁ, চলুন ফিরি সেই নব্বই এর দশকে। বামফ্রন্টের বর্গাতে এই অঞ্চলের যাদের একমাত্র ক্ষতি হয়েছিল সেটা আমাদের পরিবারের। কারন তখন একলপ্তে এতোটা জমি এখানে কারোই ছিলনা। জমিই বা বলছি কেন! বলা ভাল চাষযোগ্য জমি, পুকুর, বাগান আর বনবাদাড়। বর্গা শুধু চাষ জমিতে হয়েছিল, তাই ওই মধ্য ৯০ এর দশকেও বনবাদাড় সাফ করে আবার প্রভূত জমি জন্মেছিল দাদু সহ তার ভাই দের হাতে, যেগুলো বিক্রয়যোগ্য। তখনও আজকের "সমুদ্রগড় বাজার" নামক স্থানটির জন্ম হয়নি, বিবিরহাটই স্থানীয় ব্যবসার ভরকেন্দ্র। যেটা আগামী ২৫ বছর পর ভারতবর্ষের এক নম্বর তাঁত কাপড়ের বাজার হবে, শত কোটি টাকা রোজ বাজারে উড়ে বেড়াবে, গোটা ভারত থেকে হাজারে হাজারে কারিগর, ফোড়ে, মহাজন, তাঁতিরা ভাগ্য অন্বেষণে এসে পসার জমিয়ে বসবে ইত্যাদি।
আজকের দিনে সন্ধ্যার সমুদ্রগড় বাজারের দু কিলোমিটারের যা যানজট তা কোলকাতার বড়বাজারকেও টেক্কা দেয় সময় সময়। নান্দাই গাবতলা থেকে নবদ্বীপের দিকে নিমতলা বাজার পর্যন্ত এই ৩-৪ কিলোমিটারে বিক্রিযোগ্য ফাঁকা জমিই অবশিষ্ট নেই রাস্তার ধারে, একচিলতে কারো বাড়ির উঠোন বা ছাঁচতলা থাকলেও তার যা দাম তাতে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে দিব্ব্যি একটা ফ্ল্যাট কেনা যাবে এমন অবস্থা। মূলকথা উদ্বাস্তুদের স্বস্তার শ্রম পুঁজিকে টেনে এনেছিল আমাদের সমুদ্রগড়ে, যার সুফল সবচেয়ে বেশি পেয়েছে ঘটিরাই। পুঁজি জাত, ধর্ম, রাষ্ট্র মানেনা কখনই, জীবনযাত্রার মান দ্রুত হারে বদলেছে এই 'অবৈধ অনুপ্রবেশকারী' দের কল্যাণে। তাই কেউ ট্যাঁ ফুঁ করেনি।
কেন এমন অবস্থা?
নব্বই এর শুরু থেকেই আমাদের বাড়ির পূর্বদিকটা মানে যেদিকে বাংলাদেশ সেই বরাবর রেললাইনের ধার পর্যন্ত পতিত অঞ্চলগুলোতে ওপাড় বাংলার মানুষেরা পাটকাঠি, বাঁশের দরমা, তালপাতার ছাউনি দিয়ে ঘর বানিয়ে বাস শুরু করে। কেউই শনি খ করে এমন জীবন যে বেছে নেয়নি সেটা বলাই বাহুল্য। আজকের বিজেপির ভারতে যাদের পরিচয় অনুপ্রবেশকারী, এবং অবশ্যই অবৈধ।
ওপাড় থেকে যারাই এসেছিল বা আসে, তারা দুম করে কেউ আসেনি বা আসেনা। নির্দিষ্ট রুট মেনে এরা সকলেই গেদে-বসিরহাট বর্ডার হয়ে বনগাঁ বসিরহাট বারাসাত হয়ে নদীয়াতে অনেকটা দিন কাটিয়ে তবে ঢোকে। সে সমুদ্র গড়ে আসতে গিয়ে নদীয়া বা শান্তিপুরের জীবিকাটা কিছুটা চেনা ছিল। এই উদবাস্তুদের অলিখিত রাজধানী হল কল্যাণী, এর পর হাতে মজুদ অর্থের উপরে ভিত্তিকরে নিজেরাই ঠিক কর নিত তারা কলকাতা শহরতলিপান যাবে না গ্রামের দিকে। আজও কোনো বাঙাল দুম করে এখানে ওখানে ঘাঁটি গাড়েনা, তারা বর্ডার থেকে এক পা এক পা করে এসেই দু চার বছরে দই জমিয়ে নেয়। জীবন জীবিকার স্বার্থে এরা যা খুশি কিছু করতে তৈরি ছিল সে সময়। এভাবেই শান্তিপুর, ফুলিয়ার তাঁত শিল্পের পাশাপাশি নবদ্বীপের গামছা বয়ন শিল্পের মতন করে টাঙ্গাইল, বরিশাল, ফরিদপুর ও ঢাকার আশেপাশের দেবনাথ- বসাকেরা সামুদ্রগড়কে কেন্দ্রকরে পাইকারি হারে বসতি স্থাপন করতে শুরু করল। যে ধারা আজও বহমান। সমুদ্রগড়ে তাঁতশিল্পের রমরমা শুরু হয়ে গেল।
৯৩-৯৪ সালে মা ছেলেকে হাতে ধরে স্কুলে পৌঁছে দিতেন, পাছে শেয়ালে, নেকড়ে বা হায়নাতে টেনে না নিয়ে যায়, বা বনে জঙ্গলে ছেলেধরা বা ভুতে ধরে নিয়ে যায় সেই ভয়ে; সেখানে রীতিমত এখন গোটা ৮-১০ সিভিক পুলিস থাকে যানজট পাহাড়া দিতে, নতুন পুলিস থানাও হয়েছে স্কুল চত্বরেই। জনসংখ্যার নিরিখে আসানসোল দূর্গাপুর শহরের চেয়েও বেশি জনঘনত্ব সমুদ্রগড়-ধাত্রীগ্রাম অঞ্চলে, কালনা-নবদ্বীপ তো অনেক পিছনে। এই অঞ্চলের সমুদ্রগড়ের রেশন ডিলারটি আমাদের পরিবারের হওয়ার সুবাদে, কিভাবে কোন কৌশলে নতুন রেশন কার্ড পেয়ে যেত সেই উদ্বাস্তু মানুষজন সে সকলও মুখস্ত। যেটা লিখতে গেলে বড় রোমঞ্চকর উপন্যাস হয়ে যাবে। এটা কিন্তু আধার আর এই ডিজিটাল যুগের অনেক আগের গল্প, তখন পরিচয় পত্র বলতে রেশনকার্ডই মুখ্য ছিল।
তাহলে এরা কারা? এই উদ্বাস্তুদের কাছে বনবাদাড়কে বাস্তু জমি হিসাবে বেচে ঘটিরা একসময় লাল হয়ে গেছিল, কিন্তু আজকের দিনে আমাদের এলাকার গোটা অর্থনীতিটা এই নব্যভারতীয়দেরই দখলে। রাজনৈতিক দল হিসাবে এরা প্রথমে সব সিপিএম ছিল, তৃনমূল কংগ্রেস দলটার জন্মের পর থেকে ওদিকে ধাত্রীগ্রাম আর এদিকে কালেখাতলা (পূর্বস্থলী) পর্যন্ত প্রায় সবকটা অঞ্চলের গ্রাম পঞ্চায়েতই বামেদের হাতছাড়া হয়ে যায় বছর পাঁচেকের মধ্যে। কারন এই উদ্বাস্তুরাই ঠিক করে দিত রাজনৈতিক ভবিষ্যত। যেটা বাম নেতারা কোনোদিনিই ধরতে পারেনি। পরবর্তী আরো বছর পাঁচেকের মধ্যেই সেটার রং পাল্টাতে পাল্টাতে আজকের দিনে এই অঞ্চলগুলো বিজেপির অন্যতম শক্ত ঘাঁটি। আমরা যারা ব্যবসাদার মানুষ, আপাত রাজনীতির রঙ বিহীন, তাই সকলের সাথেই যথেষ্ট ঘনিষ্টতা রয়েছে, জাতি ধর্ম ও রাজনৈতিক সম্পর্কের উর্ধ্বে। কিন্তু তারও পরে আজকের এই হোয়াটসএপ ফেসবুক প্রজন্মের ছেলেরা যারা ২৫ বছর আগের সমুদ্রগড় অঞ্চলের বনবাদাড় দেখেনি, ভাল বা খারাপ সিপিএম কি জানেনা, এরা বোধ হয়ে অবধি অল্প সময় দাপুটে বিরোধী মমতা ব্যানার্জীকে দেখেছে তার পরে শাসক মমতাকে, এই মায়েরা বা মেয়েরা যারা হায়না, ছেলেধরা, ভুত বা শেয়ালের ভয় পায়নি তাদের এই পৈশাচিক উন্মত্ততা স্বাভাবিক আর সেটা আমাদের ভাবায় বৈকি, ভাবতে বাধ্য করে।
আজকের দিনে তো সমুদ্রগড়ের জনসংখ্যার ৯৫%ই বিগত ২৫ বছরে পূর্ববঙ্গ থেকে আসা মানুষজন। আর তাদের ধর্মবিশ্বাস? এটুকু জানুন তারা কেউ মুসলমান অন্তত নয়। কেন তারা নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে এদেশে এসেছেন সেটা তারা আর তাদের ছেড়ে আসা রাষ্ট্রই ভাল বলতে পারবে। এটা বলা যায় কেউ মহানন্দে এই চ্যালেঞ্জ নিতে আসেনি। আমাদের ঘটিরা তাদের আপন করে নিতে, মিশে যেতে তেমন একটা অসুবিধা হয়নি। এরা প্রথম প্রথম উদাস্তু হয়ে এর তার বাগানে বাঁদাড়ে থাকত, স্থানীয়রা মেনেও নিত সানন্দে, পরবর্তীতে নিজ নামে পাট্টা বেড় করেছিল।
আজই হিসাব করছিলাম, এরাই পরবর্তীতে ভারত সরকারের যাবতীয় চাকরীর কোটাগুলো দখল করে নিয়েছে। তারও পরে এদেরকে প্রতিদ্বন্দী বা উড়ে এসে জুড়ে বসেছে মনে হয়নি কখনো, কিন্তু আজ হচ্ছে। কারন এদেরই উত্তরপুরুষদের, আসামের ঘটনার প্রেক্ষিতে ও তার সমর্থনে যেভাবে তারস্বরে উল্লাস ও মিছিল করছে, তাতে মনে করিয়ে দিচ্ছে- তোদের ঠিক আগের পুরুষটাই ছিন্নমূল হয়ে এই মাটিতে শেকড় গেড়েছিল। এই মডিফায়েড হুজুকে প্রজন্মটাই আসামে বিপদ ডেকে এনেছে।
এরা জানেনা সমুদ্রগড় ও তার পাশ্বর্বর্তী অঞ্চলে যাবতীয় প্রাচীন শিবমন্দির গুলো জনৈক সেখ বাবুলাল মিস্ত্রি ও তার তনয় নকিবুদ্দিন মিস্ত্রির অর্থব্যায়ে নির্মিত। যিনি তার কায়েমি প্রজাজের জন্য সমসংখ্যখ মসজিদ নির্মানের জন্যও অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন। প্রতিটি নির্মানের গায়ে আজও মর্মর পাথরে লিখিত সেই ব্যবসায়ীদের ইতিহাস ধরে রেখেছে। আমার টাইমলানে আমার অনেক স্থানীয় বন্ধুবান্ধব আছেন, কিছু ভুল বলে থাকলে শুধরে দিতে অনুরোধ রইল। আজকের এই হুজুকে প্রজন্মটা হিন্দুত্বের সেনা, জাতির সেনা নয়; হলে ইতিহাসকে পড়ে দেখত যে কোন জমিতে আমাদের সৃষ্টি। তাই ইতিহাস ভুলতেই হবে এবং গুলিয়েও দিতে হবে। কারন ভোটের রজনীতির কারবারিরা সেটাই চায়, সাথে ধর্মনিরপেক্ষতার ভেকধরে আধুনা উন্নয়নের দলের দিকপালেরা ক্ষমতা ধরে রাখতে এই বিষবৃক্ষে সমানে সার-খোল দিয়ে চলেছে। ফলাফল আজকের এই উল্লাস।
আমাদের শৈশবের সমুদ্রগড় থেকে কালনা যেতে ভরষা ছিল একটা ক্ষয়ে যাওয়া ঝামা ফেলা রাস্তা, কোথাও সামান্য পিচ অবশিষ্ট ছিল। সেখানে চুপি-কালনানামের একটা লজ্ঝ্বরে বাস চলত, সাথে সামনে হ্যান্ডেল মারা একটা আপছদ্দির ডজ, কুঁতিয়ে চলাটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছিল যে বাসটি। কোলকাতা বা বর্ধমান গিয়ে দিনের দিন ফেরার কল্পনা ছিল চ্যালেঞ্জ নেবার নামান্তর। ট্রেন বলতে সকালের দিকে তিনটে- ফার্ষ্ট ট্রেন, সেকেন্ড ট্রেন, আর থার্ড ট্রেন, মাঝে ক্যাস গাড়ি, কিউল, একটা নলহাটি ব্যাস। ফেরার গাড়িও ওই গুলোই, নাম অবশ্য আলাদা হয়ে যেত। এই ছিল চালচিত্র। রেশন অফিসের জন্য সপ্তাহে নিয়ম করে কালনা যেতে হত দাদুকে, যাতায়াত মানে গোটা দিনের গেঁড়ো। আমার বিষয়ী দাদু তাই আমার বাবার বিয়ে কালনা শহরে দিয়েছিলেন, বোঝাই যায় একটা ঠেকের জন্য। এত কিছু বলা, আসলে এই ২৫ বছরের ফারাকটা বোঝানোর জন্য, আর এই সবটাই সম্ভব হয়েছে মূলত পূর্ববঙ্গ থেকে এসে ভারতীয় হওয়া মানুষদের কল্যাণে। নতুবা আজও পুরুলিয়া বা বাঁকুড়ার কোনো প্রতন্ত্য অঞ্চলের মত হয়ে থাকত আমাদের সমুদ্রগড়। তাই ওদের আসার একটা যেমন নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট আছে তেমনই পজিটিভ দিকও প্রচুর। জীবন যেমন সুখ দুঃখ মিলিয়ে, এটাও যেন তাই। আর এটাকে আমরা যে মেনে নিয়েছি সহজে, সেটাই নির্লজ্জভাবে বিজেপি নামের কীটেরা রোজ কুড়েকুড়ে খাচ্ছে ঘুন পোকা সেজে।
উপসংহারে বলি , আজকের এই লেখাটা লিখতামই না, কালকেই এক দাদা তথা বন্ধুকে ফোনে বলছিলাম আমি কিছু লিখবনা এই সম্বন্ধে, কিন্তু আজকে সব্জি বাজারে গিয়ে পরিস্থিতি আঁচ করে লিখতে বাধ্য হলাম। বিশ্বাস করুন আজও কখনো মনে হয়না বা হয়নি এরা আমাদের স্বদেশী নয়। আমরা কিন্তু ঘরের মাঝে ভিডিও গেম খেলে বড় হয়নি, রীতিমত মাঠে ঘাটে বাঁদরামো করেই বড় হয়েছি। ৮ বছরের স্কুল জীবনে কত বাংলাদেশী ছেলেকে ডাইরেক্ট ভর্তি হতে দেখেছি, কখনো মনে হয়নি আমার ভাগে ভাগ বসালো। আমাদের বাড়ির সামনেই ডাক্তার দাদু, ভীষন গরীব অবস্থা থেকে ছেলে দুটোকে বড় করতে দেখেছি। সম্পর্কেই দাদু, কিন্তু বাবার বয়সী। আমার শৈশব কৈশরের প্রায় সমস্ত স্মৃতি জুড়েই উদ্বাস্তুদের বাস। কারন দাদুদের পূর্বপুরুষ ছোটোনাগপুরের আদিবাসী এনে রেখেছিল জমিতে কাজ করাবার মুনিশ হিসাবে, তারা ফেরেনি আর। এসেছে মুর্সিদাবাদ কান্দির কিছু বাগদি, গঙ্গাপাড়ের কপালি, সুন্দরবন অঞ্চলের মাহাতো সহ- ছেলেদের সাথে ঝগড়া করে আমার দাদু ফজলুল হক্‌ সাহেব- ২২ ঘর হতদরিদ্র চৌধুরী এনে মাগনা বসিয়ে যায় প্রজা হিসাবে। বিহারের ছাপরা জেলা থেকে। কিন্তু গঙ্গারপাড়ের জলমাটির এমনই গুণ যে, সকলেই আমরা সমুদ্রগড়ের লোকহয়ে যেতে সময় নিইনি।
আজকে যুব সমাজের একটা অংশ ভীষণ উল্লাসিত, এখানেও আসামের মতন করে উদ্বাস্তু হাঠাও অভিযান করবে। কারন তাঁত ব্যাবসার টানে বহু দেশ দুনিয়ার লোক বাসা গেড়েছে আমাদের সমুদ্রগড়ে, সেটা আসাম ত্রিপুরা সহ অন্যান্য প্রতিবেশী রাজ্য থেকে ও বিপুল পরিমাণে। তাদের তাড়াতে হবে। এরা পারবে কিনা, সে প্রশ্ন অবান্তর, কিন্তু এই যে উল্লাস; এটাই অশনী সঙ্কেত। কারন কাদের তাড়াবে এরা? এদের বাপ মায়েরাই তো উদ্বাস্তু হয়ে খুদ কুঁড়ো খেয়ে বনে বাদাড়ে এদের জন্ম দিয়েছিল। আমি দেশের তো দুরস্থান এ রাজ্যেরই অন্য অঞ্চলের বিষয় পরিস্থিতি সম্বন্ধে বিশদে ওয়াকিবহাল নই। তাই কোথায় মুসলমান অনুপ্রবেশ আছে জানিনা, আমি জানি আমাদের এলাকার মতই বাকিরাও হয়ত নমঃশুদ্র। কিন্তু আমি জানি এখানে এমন কিছু পরিকল্পনা করলে আসলে কিন্তু নিজেরাই নিজেদেরই সাম্প্রতিক অতীতকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বসবে। ইতিমধ্যেই হিন্দু সংহতির ছায়াতলে তিন তিনবার মিনি দাঙ্গা ঘটে গেছে নসরতপুরের বুকে, সমুদ্রগড় বাজার নামক স্থানটা যে পঞ্চায়েতের অধীনে, সেখানে। আজ থেকে ১০ বছর আগেও যেটা ভাবা ছিল কষ্টকল্পনা মাত্র। আজকের একটা প্রজন্মের মজ্জায় মজ্জায় হিংসা আর বিভেদের বিষ ভরে দিতে সক্ষম হয়েছে RSS ও তার শাখা সংগঠন গুলো।
এখন এই কোটি কোটি রাষ্ট্রহীন মানুষ বর্তমান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ নেবে, বা আলাদা ভুখন্ডের দাবি করবে কিনা তা ইতিহাসের গর্ভে। আমার নয় জের বিশ্বাস কিস্যু হবেনা, বা বলা ভাল মোদী-সর্বানন্দ জুটি একটা পরিবারেও লোম বাঁকাতে পারবেনা। হয়ত তাদের উদ্দেশ্যও সেটা নয়, কারন ভারতীয় আইন ব্যবস্থার দীর্ঘসুত্রত্রিতা এতই দীর্ঘ যে গোটা প্রজন্মই হয়ত পাড় হয়ে যাবে সিদ্ধান্তে পৌছাতে। কিন্তু বিজেপির এই তাৎক্ষণিক হুলাবিলা মাচিয়ে দেওয়াটাই মুখ্য উদ্দেশ্য। কিছু মানুষকে সবসময় আতঙ্কগ্রস্ত করে রেখে লাভের রাজনীতি করা। আদপে কিন্তু জাতি ধর্ম নির্বিশেষে অন্য সকল জুমলার মত আমাদের আমআদমিকেই কালীদাস করে ছাড়ছে। মজা হল যতক্ষণে এটা এই উল্লাসকরেরা বুঝবে ততক্ষণে নিজেরাই হয়ত আসামের ওই চল্লিশ লক্ষের পরবর্তী মিছিলে নিজেকে খুঁজে পাবে কিনা কে জানে!
ছোটোবেলা থেকে ভিটেমাটিহীন উদ্বাস্তদের সাথে থেকে ও দেখে যেটা উপলব্ধি করেছি, সেটা বড় ভয়াবহ। তা থেকে বলতে পারি- আগামীটা কিন্তু আমরা নিজেরাই পছন্দ করছি, যার শেষটা ভয়াবহ। এমনটা চলতে থাকলে আবার কিন্তু দেশভাগের ভ্রূকুটি খাঁড়া হবে, পেট কিন্তু জাত মানেনা, যেমন কবরে কাঁদলে কবর সাড়া দেয়না। তাই সময় থাকতে আশ্রয়স্থল হিসাবে সংবেদনশীল জ্যান্ত বুক খুঁজে তাতে আশ্রয় নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের। বিজেপি হচ্ছে সেই কবর, যেখানে ফাঁদ আছে, পরিনতিও আছে, কিন্তু সেটা একমুখী, যা বিভাজন ও নিজের অস্তিত্ব বিলয়ের মধ্যেই সম্পৃক্ত। যেখান থেকে ফেরার রাস্তা নেই। তাই সিদ্ধান্তটা এখনই নিন, কি করবেন, অন্তত যে এলাকা গুলো আমাদের সমুদ্রগড়ের মত তাদের প্রতি আবেদন রাখলাম। হিন্দুত্ববাদী হয়ে বাঁচবেন নাকি ভারতবাসী হিসাবে! যেমনটা এতদিন বেঁচে এসেছেন!
অসমের একজনও এমন বন্ধু আছেন যিনি দাবি করবেন তার বাড়িতে এই ৪০ লক্ষের একজনকে স্থান দিয়েছিলেন? একজনেরও খাদ্যের দায়িত্ব নিয়েছিলেন? তাহলে তারা গেল আর এলো আপনার কি এসে যায়? ভাত দেবার ভাতার নয় কিল মারার গোঁশাই। বহু ফেবু বিপ্লবীদের মাবাপ বৃদ্ধাশ্রমে পচছেন, কিজানি তারা কি নিয়মে অবৈধ। মারোয়ারিরা গোটা ভারত জুড়ে ছড়িয়ে আছে জাতের দোয়ায় বা দয়াতে নয়, ব্যবসায়িক বুদ্ধিতে, সুতরাং এদের সাফল্যে বা ব্যার্থতাতে নিজের অন্ডকোষ চুলকানো উন্মাদ ছাড়া আর আপনি কিছুটি নন। আজ এদের তাড়ালেও আপনারা কিছু করতে পারবেননা, কারন আপনারা সেই কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। আপনার জীবনটা হিন্দু-মুসলমান, গরু-শূয়োর, মিথ্যা দম্ভ আর অক্ষমের শিৎকারে ঘেরা, এখান থেকে বেড়োতে মনুষত্ব লাগে।
আচ্ছা এমন কোনো প্রতিবেদন কি কোনো আসমিয়া বন্ধু কি লিখেছেন? বোধনয় না, কারন তারা এখন মাথার ঘায়ে কুকুর পাগল অবস্থা, প্রতিবেদন বিলাস তাদের মানায়না, তবে খোঁজ নিয়ে দেখবেন, এমন অনেক সমুদ্রগড়ও আসামের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে লুকিয়ে রয়ে গেছে। আমরা অনেকেই এমন প্রতিবেদন বিলাস করছি, করবও। কিন্তু কতক্ষণ?
বৈধ অবৈধের মাপকাঠি কি? আর কে মাপবে তৃনমূল স্তরে?


Wednesday, 18 July 2018

।। শিশুর ভালোবাসা ।।

ভালবাসার কোনো ভাষা হয়না, শর্তও হয়না। আবারও তা প্রমাণিত।
আমার ছোট মেয়ে সারাহ, বয়স সবে চার শেষ করেছে, কয়েক মাস হল স্কুলও যাচ্ছে। কথাবার্তা এখনও আধোআধো।
আজ স্কুল থেকে আসা অবধিই সমানে ফুঁপিয়ে কান্না। এমনিতে দস্যি, কোথাও না কোথাও চোট লাগাবেই। প্রথমে ওর মা ভেবেছিল তেমনই কিছু। কারন সারাহ এখনও গুছিয়ে কিছু বলতে পারেনা, মাঝেমাঝেই খেলা করছে - আবার কাঁদছে।
ভুল ভাঙল সন্ধ্যার পর। ওর স্কুলের ম্যাম ফোন করেছে সারাহকে। তার মন খারাপ, তাই সারার সাথে কথা বলবেন।
প্রথমে যবে শুধিয়েছিলাম তোমার মিসের নাম কি বাবু? সারাহ বলেছিল “পারোতা আর তিসিটা ম্যাম”।
এর মাঝে পাকা পেয়ারা, টফি, লজেন্স ইত্যাদি মাঝেমাঝেই দেখি ঘরে আসে, মেয়ের ব্যাগ বয়ে। মেয়ের গালেও লিপস্টিকের দাগ, পোষাকে সুগন্ধি পায় মেয়ের মা। বুঝতে অসুবিধা হয়না, ক্লাস টিচারের কোনো একে জন বা দুজনেই এই দুগ্ধপোষ্য শিশুটির বা শিশুগুলোর মনে অনেকটা স্থান করে নিয়েছেন।
আজকাল শিক্ষিক শিক্ষিকারা বড় ভয়ে ভয়ে থাকেন, এই বুঝি অতিরিক্ত আদর দিলে বা কিছু এদিক সেদিক হলে গার্জেনকুল সহ স্কুল কতৃপক্ষ বাপান্ত করে তোলেন। কারন সময় বড় অস্থির, নরম সম্পর্কগুলোর মাঝে কিছু জানোয়ার বিষাক্ত বাতাস ঢুকিয়ে দিয়েছে। সেখানে সারাহর মায়ের তরফে এই ভালবাসা গ্রহনে কোনো আপত্তি না থাকাতে সম্পর্কটা এতোটাই গভীরে, যে আজকের পরিস্থিতি। ইয়ে, আমি অবশ্য এতো কিছুর খবর জানতামই না। আপনাদের মতই আমিও খানিক আগেই জানলাম।
জানিনা এই প্রাইভেট ইংরাজি মাধ্যমের স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা কত বেতন পান, নিশ্চই যোগ্যোতার তুলনাতে অতি সামান্য। অনেকেই দূর দুরান্ত থেকে আসেন, শুধু মাত্র বেকার বদনাম ঘোচাতে বা সত্যকারের কিছু ভদ্রস্থ রোজগারের কারনে। শিক্ষাগত যোগ্যোতার সাথে কিন্তু এনাদের অতিরিক্ত যেটা থাকে সেটা হল এই আপন করে নেবার ক্ষমতা। শিশু চারাগাছে এনারাই জ্ঞানের প্রাথমিক সার-খোলটা দিয়ে আগামীকে তৈরি করেন।
আজ সেই তিসিটা ও পারোতা ম্যাম, সরি পারমিতা ও তিস্তা ম্যাডাম সারাহ’র গলা জড়িয়ে কেঁদেছে, বেলুন দিয়েছে, চকলেট দিয়েছে, সারাহর নোটবুকে ফোন নাম্বারও লিখে দিয়েছে আর অনেক অনেক আদর করে বলেছে- আমি আর আসবনা।
হয়ত কোনো বেটার অপারচুনিটি পেয়েছে মেয়েদুটি, বা হয়ত কোনো পারিবারিক অসুবিধা বা সুবিধার কারনে তারা আমাদের মেয়েদের মন ভেঙে নিজের দেশে বা অন্যত্র চলে যাচ্ছে। কিন্তু এই অবোধ শিশুর কান্না ওদের কর্মের সার্থকতা বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। শিশুরা স্বার্থ বোঝেনা, তারা ভালোবাসা বোঝে, তাই একটা ক্ষণে আমার নিজেরও মনটা একটু ভারি হয়ে গেছিল। শিশু মন নিশ্চই অচিরেই তার পারোটা আর তিসিটা ম্যামকে ভুলে যাবে- ম্যামও কালের নিয়মে সারাকে ভুলবেন।
মেয়েদুটি আমার বোনের চেয়েও বয়সে অনেক ছোট, ২১-২২ এর কোঠায়, আগে কোনোদিন দেখিনি ভবিষ্যতেও কখনো আর দেখা হবেনা, কিন্তু তারা ভালবাসার গুণে, সারাহর শিশুকালের সাথে আমাদের স্মৃতিপটে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিল। যতটা ভাবনা মনের মাঝে ছিল ততটার ২০%ও লিখতে পারলাম না। একটা অদ্ভুত খুশি অনুভূত হচ্ছে এই ভেবে যে, মেয়ে আমার আদরে শিখছে। এটাই চাই, শাসনের আদরে বড় হোক। শাষন করা তারই সাজে আদর করে যে।
কোমল নিঃস্বার্থ ভালবাসার প্রকৃত উদাহরন। ব্যাবসাতেও লেনদেন হয়, পেশাদারিত্বের মোড়কেও অনেক কিছু বিকিয়ে যায়, কিন্তু ভালোবাসার বন্ধন থাকলে তা জীবনের মাত্রা পায়, দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। অম্লান হোক এমন সকল শিশু-দিদিমনি সম্পর্ক।
থ্যাঙ্কু “পারোতা ম্যাম তিসিটা ম্যাম”, আপনারা দুজনে গিয়ে জানিয়ে গেলেন ভালবাসার পথটাই একমাত্র পথ, বাকি সব শূন্যগর্ভ বা মানিয়ে নেওয়া মাত্র।