Sunday, 27 April 2014

আমরা স্বাধীন?

একটা যা......তা......
*************
আমরা স্বাধীন?

অন্তত খাতায় কলমে ১৯৪৭ সালে আমরা তা নাকি লাভ করেছি। আজ দীর্ঘ ৬৬ বছর অতিক্রান্ত। ইতিহাসের বিচারে হয়তো এ সময় কাল টা হয়তো কিছুই নয়, কিন্তু গড়পড়তা আম মানুষের অনেকের কাছে, এটা একটা গোটা আয়ুষ্কাল। তাই যখন বিশেষ বিশেষ কিছু ঘটনা দেখি, স্বাধীনতা টা কেমন যেন অলঙ্কারিক মনে হয়। স্বাধীনতার বোড়খার আড়ালে যখন একটা বিশেষ সমাজ কে , গোটা অবশিষ্ট বিশ্ব বা বলা ভাল রাষ্ট্র অবিরত ধর্ষন করে চলেছে, তখন নিজেদের সত্যিই কেমন আতাকেলানে কূষ্মাণ্ড বলে মনে হয়।মনে হয় স্বাধীন বলে কি সত্যিই কি কোন শব্দ অভিধানে থাকা উচিৎ??

ঘটনার সুত্রপাত একটু অন্যভাবে হলো। এক অতি ঘনিষ্ট বন্ধুর সাংসারিক সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে আমি আর আমার আরেক ঘনিষ্ট সহচর রামচন্দ্র, বর্ধমানে কুচুট বলে এক স্থানের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম। ঝড় বৃষ্টির দিন আবার যখন তখন ভুমিকম্প হচ্ছে। তাছারা বাড়ি ফিরে “আত্মা”র উপর একটা জাম্পেশ করে রচনা লিখবো বলে মনে মনে তার ভাঁজছিলাম।

পথি মধ্যে ইসলামপুর নামক এক গ্রামে, সেই সুত্রেই গমন। গ্রামে যাবার রাস্তা টা, পাকা রাস্তা থেকে হঠাত সরু হয়ে গেছে MGNRSY এর রাস্তায় এসে, আর এটাও জীর্ন হতে হতে ৮-১০ কিলোমিটারের মাথায় এক্কে বারে কাঁচা আল পথে পরিনত হয়েছে। অনেক কষ্টে আমাদের ড্রাইভার কালু, সে পথ অতিক্রম করে প্রায় ১২-১৫ কিলোমিটার পর গন্তব্যে পৌছালাম, আশ্চর্য হবার তখনো অনেক বাকি ছিলো। এই সকল গ্রামে সাধারনত মোটরবাইক ছাড়া কোন গাড়ি ঢোকে না। তাই বাচ্চা বা বয়স্কদের চারচাকা গাড়ির প্রতি একটা উৎসুখ থাকে, বাচ্চারা তো পিছনে উড়ে চলা ধুলোর সাথে পাল্লাদিয়ে দৌড়ায়। আজকেও দৌড়াচ্ছিলো।

গন্তব্যের একেবারে দোরগোড়ায় আমার হাল ফ্যাসানের সেডান কার পৌছাতে পারলো না, রাস্তা না থাকার দরুন। একটা মোড়ের মাথায় যখন দাড়ালাম। ততক্ষনে আমার দুধসাদা গাড়ি ধুলো আর কাদাতে মোটামুটি পিঙ্গল বর্ণ ধারন করে তার পূর্ব রুপ হারিয়েছে। গাড়ি থেকে নামতেই বেশ কিছু ছেলে চায়ের দোকান থেকে সেচ্ছাসেবকের কাজ করার জন্য দৌড়ে কাছে চলে এলো। গৃহ কর্তার নাম বলাতে , অতি উৎসাহে একটা দঙ্গল সামনে আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল।

তাদের ই মধ্যে মোমিন বলে একটা ছেলের সাথে পরিচয় হলো। রাস্তা নেই কেন জিজ্ঞাসা করাতে , খুব তাচ্ছিল্যের সুরে উত্তর দিলো “শালো দের খেই নিবার পর থাকিলে তো দেবে, প্যেত্যেক সময় ভোটের বাবুরা যখন আসে, তখন বর্ষা, নৌকায় চড়ে আসে, তাই ওরা রাস্তা দেখতি পান না। তবে আমাদের কুনু অসুবিদা নেই, ছোটো থেকে একানেই মানুষ তো” । সরল স্বীকারোক্তি।

যেতে যেতে দেখলাম পুকুর ঘাটে সব ইলেকট্রিকের পোষ্ট গুলো শোয়ানো, গ্রামের ছেলে বউরা স্নান করা থেকে কাপর কাঁচা সবই করছে। ইলেকট্রিকের পোল এখানে কেন, জিজ্ঞেস করতে মোমিনের আবার উত্তর , “আর বোলো নি বাবু, কারেন দেবে বলে সেই কবে সরকার থেকে এগুলো পুতে দিয়ে গেছিলো, আমার ই বয়েস এই ধরো ২০ হতে চল্লো, তো আব্বারা সবাই মিলে ওই পুকুরে নাবিয়ে দিয়েচে, কিচু তো একটা কাজে আসচে, আমরা তো আবার মাজে ভেঙে নিয়ে ফুটবলের তেকাঠির বাঁশ বানিয়েছি” ।

কারেন্ট আছে না নেই সেটা জিজ্ঞাস করার সাহস পেলাম না। “হ্যারে তো কত ঘড়ের বাস তোদের এখানে??” , জবাবে পিছন থেকে একজন বলল, তা ধরুন গিয়ে ইসলামপুর-আকবপুর-নিমের-খুজারি-কোদপাড়া মিলে হাজার পনেরো লোকের বাস তো হবেই। মনে মনেই ভাবলাম, ১৫০০০ লোকের বাস, রাস্তা নেই – ইলেকট্রিক নেই!!!! এই পশ্চিমবঙ্গেই!! হায় রে স্বাধীনতা!!

হ্যারে তো মোবাইল চার্জ কোথায় দিস?? না এখানে কারো মোবাইল ই নেই?? আমি শুধালাম। মোমিন বললো,- নেই মানে? বরং বলো একেকজনের কটা করে আছে, একোন তো সব বাড়িতে ২-১ জন একোন কেরল গুজরাত দুবাই এ থাকে গো, টেকার গাদা সবার কাছে। ওই সকালে বাজারে গিয়ে চাজ দিয়ে নিয়ে আসে, ছোরা ছূরিরা তো আবার চাইনা মোবাইল নিয়েচে, ২-৩ টে করে বেটারি।

অভিষ্ট গন্তব্যে পৌছে মিনিট দশেকের একটা সাক্ষাতপর্ব সেরে নিয়ে, সদর দিয়ে বেড়োতেই একটা জটলা চোখে পড়লো। পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতেই – একজন মধ্যবয়স্কা বৃদ্ধা পিছু থেকে ডাক দিলেন, “এ বাবু, সব লিয়া হয়ে গেচে”। আমি কিছু টা হকচকিয়ে গিয়ে বললাম, আ...আমি তো কিছু নিতে আসিনি। এই এরসাদ চাচার সাথে একটু দেখা করতে এসেছিলাম। আবার বললেন “তো আমাদের নিয়ে যান না কেনে”। আমি আমল না দিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ালাম। তার পর খুব করে কাকে বা বলা ভালো কাদের উদ্দেশ্যে, ঐ মহিলা গালি দিতে লাগলেন, উচ্চশ্বরে বিলাপ করে।

ব্যাপার টা আরো পরিষ্কার হলো যখন গাড়ির কাছে পৌছালাম, দেখি বেশ কিছু গ্রাম মেয়ে আমার গাড়ি প্রায় ঘেড়াও করে রেখেছে। সকলের ই বয়স অই ১৪-২০ এর মধ্যেই হবে। কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে, একটু এদিক ওদিক তাকাতেই আমার ড্রাইভার, কালু কে ক্লিষ্ট অবস্থায় আবিষ্কার করলাম। আমি ওকে ডেকে একটু খাটো গলায় বললাম, এরা কারা?? এক্সিডেন্ট করেছিস নাকি?? কালুর বেদনাতুর জবাব, “এরা সব পুবে খাটতে এসেছে, আমন ধান কাটার মুনিষ। ঝাড়খন্ড মেদনিপুর, মুর্শিদাবাদ আসাম থেকে সব এসেছে”।

আমি কিছুটা বিরিক্ত হয়ে বললাম, তো আমার আছে আবার চাঁদা টাদা নেবে নাকি?? দশ বিশ টাকা দিয়েই তো ঝামেলা বিদেয় করতে পারতিস। কালুর উত্তরটা আসা করিনি। বলল, “ওরা কাজের জন্যে এসেছে, তোমার খামারে ওরা কাজ করবে। এখন তুমিই ওদের বিদেয় করো”। যাই হোক, আমার তো জমি সব ভাগে দেওয়া আছে, আমার নিজের কোন চাষ নেই, এখানে এমনিই এসেছিলাম... ইত্যাদি বলে, ওদের হাতে ৫০০ টাকার একটা নোট ধরিয়ে বললাম , এগুলো ভাগ করে নিস, ৯-১০ জন ছিলো। ওরা মোটেও খুশি না হয়েই সরে দাঁড়ালো। এগিয়ে চললাম কুচুটের দিকে, এখান থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার।

যেতে যেতে রামচন্দ্র বললো, কাকা এরা কেন তোমার কাছে এসেছিলো বলো তো?? বললাম কেন? বলল, তোমার দামি গাড়ি দেখে, বড় গেরেস্ত বাড়ি কাজে যাবার বাসনায় এসেছিলো। এরা ওই সুদুর দেশ থেকে কেউ কেউ ৪-৫ দিন আগে, এক্কেবারে অক্ষম বৃদ্ধ ছাড়া পুরো ফ্যামিলি এই বর্ধমান জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পরে, রোজগারের আশায়। জিজ্ঞেস করলাম, কার বাড়ি আসে? এদের চেনাজানা কে আছে? রাম বলল , কেউ নাই কাকা, এমনিই এরা আসে, বিভিন্ন বড় গ্রামের মোড়ের মাথায়, বট তলায় বা বাসস্ট্যন্ডের বিশ্রামাগারে, কারো বৈঠকখানার বারান্দা- পোড়ো বাড়ী, যেখানে সেখানে এরা বসে থাকে, ১ দিন, ২ দিন ৩ দিন। তার পর কোন গেরেস্তর সাথে চুক্তি হয়ে গেলে, তাদের বাড়ির গোয়াল ঘরের পাসে অস্থায়ি ত্রিপল বেঁধে আগামি ১৫-২০ দিনের ঠিকানা হবে, তারপর মজুরি আর সিধের চাল নিয়ে যে যার দেশে ফিরে যাবে। আবার বললাম এতে করে পোষায়?? ও বলল, নিশ্চই পোষায় না হলে আসে কেন!!

তাছারা ওই আছে তো, আমি বললাম কি?? ওই গো। যার জন্যে ওই ছুঁড়ি গুলো তোমার কাছে এসেছিলো।
- কি জন্য রে?
- ভালো বাবু পেলে সুন্দুরীদের খাতির একটু বেশী হয়, তাহলেই খেপে ৫০০-১০০০ টাকা বেশী রোজগার। খেয়াল করো নি, যে ওরা কেমন সেজেগুজে ছিলো!!
- না রে, কই তেমন তো কিছু খেয়াল করিনি। আর আমার ও সব দিকে নজর ও ছিলো না, তোর যেমন বিশাক্ত নজর।এবার তোর বিয়ে না দিলেই নয় দেখছি।

- আরে না গো, ওরা কি আর তোমার আমার বাড়ির মেয়ে বউ দের মত সাজবে, না সে সমর্থ ওদের আছে?? ওরা হাতে কাঁচের চুড়ি পরেছিলো, চুলে খোপা বেধেছিলো লাল কৃষ্ণচূড়া দিয়ে, ১ -২ জন তো আবার ঠোঁটে লিপস্টিক ও দিয়েছিলো। আর ওই মেয়ে মানুষ টা তো এদের কে ই গাল দিচ্ছিলো।

- কেন রে?
- এদের জন্যেই নাকি ওরা শাঁসালো বাবু পাচ্ছে না। বুড়ি হয়ে যাচ্ছে না।

রামচন্দ্র আরো অনেক কিছুই বলছিল। আমার আর সে দিকে মন ছিলো না। ভাবছিলাম, এই কি ৬৮ বছর বয়স্ক আমাদের স্বাধীনতা!! এ আমাদের কেমন অর্থব্যাবস্থা?? এতো সরকারি প্রকল্প, এতো উন্নয়নের বন্য, আচ্ছে দিনের প্রতিশ্রুতি। সব মিথ্যা। পৌরসভা নির্বাচন, IPL, মোদীর মেট্রো যাত্রা, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণ নীতি, নেপালে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের সংখ্যা--- সব মিথ্যা।

পেটই শুধু সত্য। আর খিদে, ভাতের খিদে। আজ ও মানুষ কে কুকুর বেড়ালের মত অন্য মানুষের মত দুয়ারে দুয়ারে ঘুড়ে বেড়াতে হয়, কাজের জন্য। খোঁয়াড়ের মধ্যে শুতে হয়। নির্লজ্জের মত সুন্দরী সাজতে হয়। মজার বিষয় হলো এই কাজ করতে আসা মানুষ গুলো নিজেদের মানুষ ভাবতে ভরষা হয় না, আর প্রায় অধিকাংশ গেরেস্ত এদের মানুষ বলে স্বিকার করে না। কারন এরা তো মুনিষ।

এরা জানে!! স্বাধীনতা কি?? মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধই হোক বা আমেরিকার বিদেশ নীতি বা আমাদের এই ভার্চুয়াল দুনিয়া, এরা হয়ত নাম ই শোনেন নি। কেও শুনে থাকলেও সেটা বড়লোকের খেয়াল ব্যাতিত আর কিছু এরা ভাবতে পারবে না। সর্বগ্রাসী পেটের তারনায় এরা ছুটে বেড়াচ্ছে, এদেশ থেকে ওদেশ। এদের জন্য বিমা নেই, এদের জন্য কেও অনশন করে না, এদের ইউনিয়ন নেই, হরতাল নেই, বুদ্ধিজীবি-মোমবাত্তি- ফি সন্ধ্যায় টিভি চ্যানেলে কুকুর কেত্তন। কিচ্ছু নেই। তবে এরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। এনারাও গনতন্ত্রে বাস করেন।অনেকে আবার ভোট নাকি দেন, কাজ না থাকলে।


অন্ধকার হয়ে আসছিলো, ঘন কালো করে মেঘ করেছে... তাই মুখ লুকাতে কষ্ট করতে হলো না। এসি চলছিলো বলে আগেই জানালার কাঁচ তোলা ছিলো। এসির ঠান্ডা হাওয়াতেই বোধহয় চোখে একটু জল এসেছিলো। আমার আবার ঠান্ডায় এলার্জির ধাত আছে কিনা, আসলে সুখী মানুষ তো!! ওরা হয়তো এর তার বাড়ির দাওয়াত কোনমতে মাথা গুঁজেছে। আচ্ছা, ওই মেয়ে গুলো কি মনের মোতো কোন বাবু পেল?? আর ওই মধ্যবয়সী মেয়েমানুষ টা?? আর ওদের সাথে থাকা বাচ্চা গুলো, যারা তাদের বাবা মায়ের নিয়ে আসা যথসামান্য মালপত্রের বস্তার উপরে বসে, আদতে সেটা পাহাড়া দিচ্ছিলো?? সব কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো...............

দু এক ফোঁটা বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো, এক্ষুনি ওরা ঝমঝমিয়ে এসে পরবে, ওরা তো স্বাধীন। ওদের গনতন্ত্র লাগেনা। বৃষ্টির জলে রাস্তার সমস্ত ধুলো কাদা ধুয়ে আরো নিকশ কালো অজগরের মত শুয়ে রয়েছে। স্বাধীনতা আরো নতুন নতুন পাঁকের মাঝে রোজ একটু একটু করে ডুবে যাচ্ছে। রামচন্দ্র তখন ও কিছু একটা বলেই চলেছে। দু ধারে সোনালী ধানের ক্ষেত ওই দূরে দিগন্ত কে স্পর্শ করেছে। গাড়ির সাদা রঙ টা নিশ্চই এতোক্ষনে আবার ফিরে এসেছে।

মোবাইলের ঘন্টিতে, হঠাত চকিতে ঘোর কাটলো, উইন্ডস্ক্রিনে বৃষ্টির ধারা প্রচন্ড ক্রুদ্ধতার সাথে করাঘাত করছে। ওয়াইপার গুলো যেন “ওদের” মত একবার এদেশ আর ওদেশ করে চলেছে, নিরন্তর ভাবে। কুচুট ও এসে পরব খানিকক্ষণের মধ্যেই। এর মধ্য কালু বাবা দেখি মিউজিক সিষ্টেমে গান লাগিয়েছে......

“ভগবান হ্যায় কাহা রে তু......” কে জানে ইনি স্বাধীন কি না!!!


*********
উন্মাদ হার্মাদ 
*********

Sunday, 6 April 2014

অবার্চীন ডুয়ার্স



উন্মাদীয় রবিবাসর



সালটা ২০০৮ এর সেপ্টেম্বর। মাঝরাত্রে হঠাৎ ই উন্মাদী খেয়াল মাথায় ভর করলো। অগত্যা গন্তব্য সেই ভাঙাকুলো সন্তু। ভাল নাম দেবব্রত। তখন রাত বোধহয় দেড়টা, ল্যান্ড ফোনের অপর প্রান্তে ঘুম জরানো গলায় “হ্যালো কে বলছেন”,


এই আমি রে...

সাথে সাথেই অবস্থার পরিবর্তন, আষাঢ়ের বর্ষনের ন্যায়, বড় কুটুম্ব, বোকাহাদা, কার যেন ভাই ইত্যাদি তে ভুষিত করে, শেষে শুধালো, বল কি খবর, বললাম..., “আমার না খুব বেড়ানো পেয়েছে, কোথাও গেলে হয় না রে! ঘরে খুব দম বন্ধ লাগছে”
...কোথায় যাবি?
...তা জানি না, ঠিক করিনি, এক কাজ কর ভোরে স্টেশনে গিয়ে ঠিক করবো।


সে যাই হোক, বাড়িতে কাওকে কিচ্ছুটি না বলেই ভোর বেলা হাওয়া। সকালে যথারিতী ট্রেনের টিকিট পেলাম না, অগত্যা ঠিক করলাম, প্রথম বাস টা যে দিকের পাবো সেটাতেই চাপবো। দেখলাম বহরমপুরের। চলো দিল্লি। যেমন ভাবা তেমন কাজ। চেপে পড়লাম। ৩৪ নং জাতীয় নরক থুরি সড়ক ধরে প্রায় চার ঘন্টার অসহ্য যন্ত্রনার পর বেলা ১১ টা নাগাদ বহরমপুর পৌছালাম। সাথে লাগেজ বলতে সাকুল্যে একটি, দুজনের মিলিয়ে, যার ভিতর শুধু ২ টো করে হাফ প্যান্ট, রুমাল, স্যান্ডো গেঞ্জি আর অন্তর্বাস ,আমার ছিলো। পরনের গুলো বাদে এক্সট্রা একটাই টি সার্ট ছিলো। দরকার পরলে কিনে নেবো, এই ভেবে রওনা দিয়েছিলাম আর কি। আর হ্যাঁ, নমিতা বিড়ি ছিলো প্যাকেট ৪০ মত, আর আমার প্রিয় ব্রান্ডের সিগারেট গোল্ডফ্লেক গোটা দশ প্যাক। সাবান, চিরুনি, টর্চ, ক্রিম, টিসু পেপার, বমি-মাথাব্যাথা-পায়খানার-অ আর এস- গ্লুকোজ, মানে জরুরি ঔষুধ পত্র আমার রুকস্যাকেই থাকে। আর আমার চিরসখা ল্যাপটপ। সাথে দূটো ফোন আর তাদের চার্জার। গোটা কয়েক এটিএম কার্ড।



দুপুরে লাঞ্চ টা বহরমপুরেই সারা হলো, বহরমপুরের গঙ্গার ব্রিজে কাজ চলার দরুন প্রায় সারাটা দিনই, ওখানেই কেটে গেলো, রোড জ্যামে। বৈকালে গঙ্গার পাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে শিলিগুড়ির বাস দে হাওয়া। অগত্যা একটা আলুর লড়ির ড্রাইভার কে ম্যানেজ করে ডালখোলা পর্যন্ত যাওয়া নিশ্চিত করলাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই গাড়ির নাগর দোলায় এক্কে বারে মরণ ঘুম, টানা ১০ ঘন্টা। ডালখোলা এসেই খালাসি টার ডাকে চোখ খুললাম। তাদের নগদ বখশিশ দিয়ে বিদেয় করে চা জল খাবার খেয়ে আবার বাসে করে শিলিগুড়ি। ঘন্টা তিনেক লাগলো।



শিলিগুড়ি বাসস্ট্যান্ডে হাজার ট্রাভেল দালালের ভিড়। কোথায় যাবো পাজেল হয়ে গিয়ে শেষে সন্তুর কথায় টস করে সিদ্ধান্ত হলো জঙ্গলে। তাহলে চলো লাটাগুড়ি। পথের দুধারে অবিশ্রান্ত সবুজ। ঢেউ খেলানো নির্সগবিস্তৃত সবুজ চা বাগান, ছোট ছোট সোঁতা-সাঁকো, চড়াই উৎরাই রাস্তা। যেন একটা ভাললাগার বই নিজে হতেই আপনা আপনি পড়া হয়ে যাচ্ছে, যার নিজে থেকে পাতা উলটে যাচ্ছে। রাস্তার দুপাসে স্থানীয়রা চা- বাগানে কর্মরত, ক্ষেতে কাজ করছে কেউ বা মাছ ধরছে...



গাড়ি থামিয়ে তাদের এক আধটা ছবিও তুলছি, কিন্তু ওরা যেন কেমন একটা তাচ্ছিল্য ভরা দৃষ্টি তে আমাদের উপস্থিতি কে অগ্রাহ্য করছিলো। মানে মানে পাততাড়ি গুটিয়ে আবার চলাতে মনোনিবেশ করলাম। অপূর্ব সুন্দুরী ডুয়ার্স তুমি। অদ্ভুত এক ভালোলাগার মুখোমুখি আমি আর আমার কল্পনারা।



একটা ছোটো বাংলো বুকিং ঐ বাসস্ট্যান্ডের দালাল বাবুদের কৃপাতেই করা হয়েছিলো। আর জঙ্গল সাফারির গাড়িটা ও। মূল জঙ্গল থেকে ৫-৬ কিমি দূরে বাংলো টা, ছোট্ট করে। আসার পথের চারিদিকে অগুন্তি ছোট বড় কাঠ চেরাই কল। কেন জানি না ওগুলো দেখে খুব ভেতরে ভেতরে যন্ত্রনা হচ্ছিল।



তখন বেলা প্রায় ৩ তে। বাংলোতে পৌছে স্নানাহার সেরে দে ঘুম। এমনিতেই সেপ্টেম্বর মাস, খুব একটা গরম ছিলো না। ওদিকে সন্তু বাবা কত্থেকে দেখি একটা নিপ জোগার করে এনেছে, ও জানে আমি ও রসের রসিক নই, তাই আমাকে চানাচুর শশা আর লেইজের প্যাকেট টা এগিয়ে দিয়ে ও একা একাই চিয়ার্স করে খানিক পরেই ফুটুর দুম। আমি আর কি করি রাত ন টা পর্যন্ত একা একাই টিভির চ্যানেল সার্ফ করে অনিচ্ছার ঘুম।



ভোরে ড্রাইভারের ডাকে ঘুম ভাঙলো। একটা সাফারি জিপ ভাড়া করেছিলাম। ১৫-১৬ বছরের বাচ্চা ছেলে, নাম সুজয়। বললো , চলুন স্যার, সক্কাল সক্কাল না গেলে অনেক কিছুই মিস করবেন। প্রথমেই এন্ট্রি ফি। এক ধারে জঙ্গল আর অন্য ধারে চা বাগান। সবে সূর্য হামাগুড়ি দিচ্ছে, কি যে এক মায়াবী আবেশ...



এবার আমাদের সাথে একজন গাইড কে দেওয়া হলো, নাম মংলু, আদিবাসী সুঠাম ছেলে, আমাদের সমবয়সীই হবে। সে বললো, পশুপাখিদের কোন খাবার দেওয়া যাবে না, প্লাস্টিক ফেলা যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। গায়ে জলপাই ছোপের পোশাক, আমারাও হাফ প্যান্ট পরে, ফুলস্লিভ টিসার্ট, আর পায়ে স্নিকার্স, সন্তুর পিঠে রুকস্যাক, আমার গলায়, বাইনোকুলার আর ছবি তোলার জন্য হাতে ক্যামেরা আর হালে কেনা আইফোন টা। এক দিনের জন্য চার জনের পর্যাপ্ত খাবারদাবার আর জল।



প্রথমে লাল সুড়কি বিছানো পথ। আসতে আসতে চলছি যতটা নিঃশব্দে যাওয়া যায়।। যত এগোই পথের লাল সুড়কিও ধীরে ধীরে এল্যিফ্যান্ট ঘাসের দখলে যেতে যেতে ক্ষীণকায় গাড়ির চাকার রেখাতে পরিনত হয়েছে। পথের দুধারে গামারি, লুম্পাতি, সিমুল, পানিসাস, চিকরাসি , টুন কত অজস্র আরো নাম না জানা গাছের সারি, না গুলো গাইড ই চেনাচ্ছিলো। মাঝে মাঝেই এক দুটো ময়ুরের দেখা মিলছে , নানা ধরনের চেনা অচেনা পাখীর দল এই জঙ্গলের নীরবতা ভঙ্গ করে চলেছে। গাছে গাছে কত নিত্য নতুন ধরনের লতানে ফুলের সাথে সুন্দর অর্কিড। পাতারই যে এতো বাহার হতে পারে, যে না এসেছে তিনি কল্পনাও করতে পারবেন না। উঁচু লম্বা লম্বা গাছ গুলোর শাখা প্রশাখা আর সবুজ ভেদ করে সূর্য কখনো কখনো ই মাটিতে এসে পৌছাচ্ছে, তাই হালকা সবুজের সাথে গাঢ় সবুজ এই আলো আধারীর সাথে মিলেমিশে এক অদ্ভুত সম্মোহিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।



আশেপাশে আমরা চারজন ছারা কেও কোথাও নেই। অরন্য যেন নিশির ডাকের মত হাতছানি দিয়ে ডাকছে।গন্তব্য ছিলো মেদলা, হাতি সাফারি করার জন্য। যাত্রামঙ্গল ওয়াচ টাওয়ার থেকে শূন্য হাতে রওনা দিলাম চুকচুকি ওয়াচ টাওয়ারের দিকে। সেখানে মূর্তি নদীর তীরে গোটা কয়েক গন্ডার আর দু একটা হরিণ ছারা আর কিছুই দেখতে পেলাম না। মনটা কেমন যেন উতালা হয়ে গেল। আমি আর সন্তু মুখ চাওয়াচাওয়ি করে নিলাম।



চুকচুকি থেকে ফেরার পথে আমার আর সন্তুর মাঝে টেলিপ্যাথিতে আলোচনা পর্ব টা শেষ হয়ে গেলো, চোখ ছিলো মাধ্যম। মিনিট পনেরো পরেই মারলাম গাড়ি থেকে ঝাঁপ। আর নেমেই দুজন মিলে উদ্ধশ্বাসে দৌড়।এখানে একা একা জঙ্গলে যাওয়ার পার্মিসন পাওয়া যায় না। প্রায় টানা মিনিট পনেরো কুড়ি ওই জঙ্গলের মাঝ খান দিয়ে এক উন্মাদ আর তার সাথী মাতালের মত দৌড়াচ্ছে, সে এক চুরান্ত উন্মাদীয় এডভেঞ্চার। পিছন পিছন ড্রাইভার আর গাইড খানিকটা এসেই হাল ছেরে দিয়েছিলো।



একটা বড় গাছের গুড়ির নিচে বসলাম, এটা রিজার্ভ ফরেষ্ট হওয়ার জন্য মরা গাছ গুলোও কঙ্কাল সমেত এখানেই পরে থাকে। কত নানারকমের পোকামাকরের যে ভিড় তার ইয়াত্তা নেই। একটু হালকা টিফিন খেয়ে নিয়ে জুড়লাম হাটতে।পথের ধারে কত রংবেরঙের লতা, পাতা ফুলের সমাহার, সত্যিই এভাবে না এলে জঙ্গল কে জানাই হলো না। পাইকারি হারে প্রচুর ছবি তুললাম। বিকালের দিকে একটা নদীর ধারে পৌছালাম, জানি না কি তার নাম। সারাদিন হেঁটে বেশ ক্লান্ত ও লাগছিলো। সামান্য কিছু খেতে বসলাম। নদীর জল প্রচন্ড রকমের পরিষ্কার। পাসের গাছগুলোতে বাঁদরের দল জিমনাষ্টিক দেখাচ্ছিলো।



কিছুটা এ্যালিফ্যান্ট ঘাস ছিড়ে নিয়ে তার উপর একটু চিৎ হয়ে শুলাম, আকাশ শরৎ এর আকাশের মত, বনটিয়া-ময়না-বসন্তগৌড়ি- তিতির- কাঠঠোকরা- ছাতারে- বুলবুল- দোয়েল, কত্তোরকম পাখীরা গাছের ফাঁকফোকরে লুকোচুরি খেলছে। আর হ্যাঁ, একটা ক্যাচ ক্যাচ আওয়াজ সারাক্ষণ এই জঙ্গলে শোনা যায়, সেটা ধনেশ পাখীর উপস্থিতি। রাতের বেলায় এই জঙ্গলে ভ্রমনের অনুমতি জোগাড় খুবই কষ্টসাধ্য, মন চাইছিলো রাতে থেকে যেতে, কিন্তু তক্ষনি জঙ্গল থেকে কি ভাবে লোকালয়ে ফিরবো, সেই ভাবনাই মাথায় জেঁকে বসল। এই জঙ্গলে তো চারটি নদী, এটা কোন নদী! মূর্তী না জলঢাকা না গরাতী না ইংডং?? মাথা ভোঁ ভোঁ করতে লাগলো, সাথে সন্তুর অজস্র বাক্যবাণ।



এই জঙ্গলে ল্যেপার্ড ও থাকে বলে শুনেছি, হাতি যেখানে সেখানে থাকতে পারে, বাঘ- সিংহ নেই তো আবার?? নিদের পক্ষে পাইথন!! গোখুরো, চন্দ্রবোড়া কেউটে তো দু চার খানা দেখেও ফেলেছি, কি জানি ও গুলো দাঁড়াস সাপ ও হতে পারে, ভয়ের চোখে সব যেন জাত সাপ দেখছি। সকালেই তো মাতাল গাউর দের খ্যাপামি দেখেছি। কাদা পাঁকে ভরা নদী তীর, ইতস্তত বেতের ঝাড় , মুলিবাসের বন। ওদিকে সূর্য ডুবেছে, আলোর রেশ টুকুও মিলানোর পথে। টর্চ টা হাতে নিলাম, সারাদিন মোবাইলে ছবি তুলে চার্জ খতম, সন্তুর নোকিয়া ১১০০ সেট, সিগনাল নেই। সম্পূর্ন দিশাহারা। তবে আজ ভাবি... ঠিক এটাই তো চেয়েছিলাম।



তখন চাঁদ উঠেছে, আধ খাওয়া, এখন জঙ্গল ঘন অন্ধকার। হাতড়ে হাতড়ে পথ খুজে চলেছি, একটা মর্কটের দল আমাদের পিছন পিছন চলেছে, বোধ হয় তাদের হেব্বি মজা লাগছে আমাদের এই উন্মাদীয় পরিস্থিতি। মাঝে মাঝে এক আধটা বনমুরগির ডানার ঝটপট আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, ভাম বা বনবিড়ালের হাত থেকে পরিত্রান পেতে বোধ হয়।

কিছু দুরেই ঝোপ টা খানিক নড়ে উঠলো, আর একটা অদ্ভুত ধরনের আওয়াজ, আঁতকে উঠে দুপা পিছিয়ে গেলাম, এমনিতেই আজ মশাদের নর রক্তের নিমন্ত্রনের দিন, আমরা তাদের নিমন্ত্রন না করলেও তারা কিন্তু দলবেধে আসতে ভুল করেনি। আবার ঝোপটা নড়ে উঠলো। সাহষ করেই টর্চ টা মারলাম। ভূত দেখার মত চমকে উঠলাম। দেখি একটা মিসমিশে কালো মানুষের মতই কিছু একটা, ভূত হয় তো?? আমাদের শহরে তো তেমন আর জাইগা নেই হয়তো ভূতেদের, তাই জঙ্গলেই আশ্রয় নিয়েছে। সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো। আবার লাইট টা মারলাম, এবার সেই জন্তু(!) টি দৌড় লাগালো সামনে। তখন বুঝলাম ওটা মানুষ ই। দু চার সেকেন্ড পর সম্বিৎ ফিরিতেই আমরাও মরিয়া দৌড় শুরু করলাম, আর তার সাথে সন্তুর গগনভেদী চ্যাঁচানো, দাঁড়া ব্যাটা দাঁড়া।


মিনিট পাঁচ সাত ওই রকম দৌড়ের পর মানুষ টি থামলো। কাছে গিয়ে টর্চ টা জ্বালাতেই দেখি একটা বালক, ১০-১২ বছরের বেশী বয়স হবার কথা নেই। কিন্ত এখানে এই জঙ্গলে মানুষ!! এই রাত্রিবেলা! শিশু টারজান নয় তো! চোখে পিচুটি, মাথার চুল গুলো যেন হাসুয়া দিয়ে কাঁটা, পাঁজরের সব কটি হাড় গোনা যাচ্ছে, কয়লা ও এর গায়ের রঙ দেখে লজ্জায় লাল হয়ে যেতেই পারে। পড়নে... কি আবার , কিচ্ছু নেই। আমি যা প্রশ্ন করলাম তাকে, সন্তু করলো তার চার গুন। কিন্তু সেই ব্যাটা নিরুত্তর। আচ্ছা ধারিবাজ তো রে।



তারপর কিছু নতুন ভাবার আগেই বালকটি হাটা জুড়লো, এমন ভাবে যে, শেষ আধা ঘন্টায় যেন কিছুই হয় নি। আমরা উপায়ান্তর পিছু নিলাম। এখানে চাঁদের আলো স্পষ্ট। রাস্তা বলে কিছু নেই, দুধারে মালাসা আর চেপাটি ঘাসের পুরু বন সরিয়ে সরিয়ে যাওয়া। মিনিট ৪০ হাটার পর একটা তুলনা মুলক পরিষ্কার স্থানে এলাম। টর্চের আলোয় যেটুকু বুঝলাম, এটি একটি পল্লী। এদিকে কিছু শাল, শিরিষ,আমলকি চালতা নানা ধরনের গাছ। কিন্তু গ্রাম বটে, নিচে কোন ঘর নেই। খানিক পরে জনা কুড়ি পুরুষ মহিলার আগমন, এবং তাদের মধ্যে একজনই পরিষ্কার, মানে আমাদের বোধগম্য বাংলা জানেন, তার অজস্র প্রশ্নমালা রাহুল্ল দ্রাবিড়ের স্টাইলে খেলে, মনে হল ওনারা মোটামুটি সন্তুষ্ট হয়েছে।



ওদিকে সন্তু এই গ্রামে আশা ইস্তকই, মাঝে মাঝেই মুর্চ্ছা যাচ্ছে। ভেবেই নিয়েছে আজ জংলী দের হাতে প্রান যাচ্চছেই, কনফার্ম। ওকেই নাকি শিক কাবাব করে খাবে। ভেউ ভেউ করে কাঁদছে মাঝে মাঝে। আমার মনেও যে সে ভাবনা আসেনি, তা নয়, তবুও তারমধ্যেই কিছুটা নার্ভ শক্ত রেখেছিলাম। খানিক পর আমাদের একটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো। চারিধারে সুপারি বা ঐ শ্রেনির খূটি জাতীয় গাছ, মাটি থেকে কমপক্ষে ১৫-২০ ফুট উচুতে, বাস-কাঠ-আর বেত দিতে ছোট্ট ছোট্ট খুপরি ঘর। পাতি বাংলায় ‘ট্রি-হাউস’। উপরে শন- আর শুকনো ঘাস দিয়ে ছাওয়া। বন্য জন্তুদের রক্ষা পাবার একটা প্রয়াস। কষ্ট বলতে শুধু একটু বোটকা গন্ধ।



রাতেই আমাদের রাজসিক নৈশভোজের ব্যাবস্থা হল। পোড়া মাটি-আলু, হালকা নুন আর লংকার পেষ্ট দিয়ে ঝলসানো বুনোমুরগি, আর জীবনে প্রথম খাওয়া পিঁপড়ের ডিম। সারাদিনের ক্লান্তিতে সেটাই গোগ্রাসে খেলাম। কেমন যেন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছিল। খেতে খেতেই শুনলাম, ওই ছেলেটি বোবা। সারাদিন বনে বনেই ঘুড়ে বেড়াই। নামটা কি যেন একটা বলেছিল।



ওরা নাকি আদিবাসী নয়। তারা আর্য। সেটা নিয়ে দেখলাম বেশ একটা গর্ব আছে। আরো অনেক কথাই বলেছিলো, প্রচণ্ড ঢুলুনির চোটে সে সব আর খেয়াল নেই। সকালে এক জন বিট অফিসের কিছু কর্মীর ডাকেই ঘুমটা ভাঙলো। তাদের জিপে করেই রওনা দিলাম, ওই পল্লীকে বিদায় জানিয়ে। বহুকিছু জানার ইচ্ছা অপূর্ন রেখেই রওনা দিলাম। এর পর সরকারি মুচলেকা আর জরিমানা দিয়ে, বনবাংলো হয়ে সন্ধের সময় NGP তে এসে উপস্থিত হলাম। রাতের ট্রেনে বাড়ি।



সেদিন বাড়িতে খড় জাতীয় কুছুর নরম গদিতে শুয়ে একটা স্বপ্ন দেখে ছিলাম, দেখি সেই জংলী ছেলেটা আমাকে বলছে জাগো... উন্মাদ জাগো, সেদিন তুমি অনেক প্রশ্ন করেছিলে , আজ আমি এসেছি তোমাকে সেই সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে... জাগো... বলেই সে বলতে শুরু করলো...



আমি মণ্ডলীর শ্রেনিবিন্যাসের খন্দ, 
যার স্পর্শতে সদা সর্বদা শঙ্কা,
মদীয় সৃষ্ট অশৌচ গুপ্তি, প্রক্ষালিত ঋষভ 
বিষ্ঠাতে লব্ধকাম, মানবতার ডঙ্কা।



শ্লীলতার উপকন্ঠ হইতে বিযুক্ত আমি, দূরে...
কোন স্বতন্ত্র পল্লিতে, গোষ্ঠীগত;
ইতিহাস সাক্ষ্য, বেদের নির্যাস আরোপিত,
অচ্ছুৎ সংজনন, চর্তুবর্ণে নিহত।



জগুপ্সিত অভিধেও, প্রসব কালের সাথেই,
মদীয় ভগিনী প্রনরেনি ভার্যা,
রমন ক্রীড়া সরঞ্জাম তুল্য, অতিন্দ্র অস্পৃশ্য !
অঘোরীয় নহে, অতীব পূন্য কার্যা।



দীপনের রশ্মিবিচ্ছুরণ, দেবসেবা, আত্ম তেজ! 
যদিত্ত সকলি ব্রাম্ভন্য সম্পদ;
আমরা জন্মদোষে দোষী, অস্বীকৃত কর্মযোগী
নিপীড়নের বর্ণশ্রম, শ্বাপদ।



মনুস্মৃতি আকর শাস্ত্র, যুদ্ধে কেবল ক্ষত্রীয়
অসূয়াভর শুশ্রূষা, কিন্তু আমি আর্য,
উৎপীড়নের সাধনি অঙ্গ, উদ্গমাখ্যান?
মঙ্গল্য হরষে উচ্ছিষ্ট যত বীর্য।



বেনিয়া চাতুর্য কুসীদ! তালুক! স্থাবর-অস্থাবর
অলীক কল্পন; সবই বৈশ্য কুক্ষিগত;
বাকি সমাজের যাহা কিছু বর্জ্য, উহাই মদীয়
নিষ্কার্য, আয়ুস্কালভর শুদ্ধিরত।



অনুলোম পরিপূরণে সবর্ণা সিদ্ধ, নষ্ট কেবলি
স্বীয়নারী, ভোগ্যবস্তু আরত্তা;
ব্রহ্ম পাদ সৃষ্ট মোরা, রদবার্ত্ম ধনোপার্জন,
আগড়া বসনে অস্তিমান সুদত্তা।



উন্নাসিক মনোবৃত্তি! সে আমারে নাহি সাজে,
আমি দীন, অতি হীন ক্ষুদ্র, 
নীদাঘের কৃষ্ণবর্ন অম্বুদ রাজীর ন্যায় বৈভাষিক
আমিই সমাজের নিকৃষ্টতম! “শূদ্র”।




হঠাৎ ধরপড়িয়ে ঘুম টা ভেঙ্গে গেল, দেখি সামনে মা বলছেন, মানা করলে তো শুনবি না, ঘুমের ঘোরে কি রকম ভুলভাল বকছিলি বল দেখি। আরো অনেক কিছুই বলছিলেন, কিন্তু মন টা কি রকম যেন একটা অদ্ভুত ভাললাগার গ্রাসে ছিলো যে সে সব আর শোনাই হয়ে উঠেনি।



(প্রাপ্তমনস্কদের জন্য, উন্মাদীয় বানানবিধিতে সজ্জিত একটি সম্পূর্ন উন্মাদীয় ভাবনার ফসল)
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

উন্মাদীয় প্রেম বিশ্লেষণ


প্রেম, বড় মধুর......

 বিষ-lesson

দুজন মানুষের মধ্যে, হৃদয়ের টানে গড়ে ওঠে যে সম্পর্ক, তা হলো প্রেম। কোনো সময় এ সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কেও নস্যাৎ করে দেয়। মানবতা, প্রেমকে আখ্যা দিয়েছে একটি মহান সম্পর্ক হিসেবে। কিন্তু, সমাজ ভিন্ন কথা বলে। আমাদের সমাজে প্রেমকে দেখা হয় নেতিবাচক দৃষ্টিতে, অনেক সময়ই ঠাট্টার ছলে। প্রেমের গভীরতা যতই হোক না কেন, তা আজও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পারেনি। সমাজের তালেবরদের কাছে, প্রেম মানেই সেখানে একজন পুরুষ ও একজন স্ত্রীর উপস্থিতি আবশ্যিক। 

বিষয় টা কি অদৌও শুধু মাত্র সেই ভাবনাতেই কি আটকে রয়েছে(!) প্রেম মানেই তো হল নতুন করে নিজের জন্য নিয়ম তৈরি করা, নিজের জন্য বাঁচা। কিছু ভিন্নধর্মী প্রেমকে আমাদের সমাজ দিয়েছে নিষিদ্ধ রূপ।
এই প্রেম ঈ হল, সকল শৃষ্টির আদি। প্রেম কে কখনো “পূর্ন – অপূর্ণতার” মাত্রা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। ইস্পিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারলেও প্রেম, না পারলেও। হোক না তাৎক্ষনিক, তাতে কি!! প্রেম কি কখনো কারো পরোয়া করেছে??? প্রেম যদি মিলনের রাস্তা ধরে তার যাত্রা শেষ করে, তবে তা সুখী জীবনের একটা অধ্যায় হিসাবে থেকে যায়। আর যদি বন্ধুর পথে বারংবার পরিক্ষার সম্মুখীত হতে হতে, মাঝপথে বিলীন হয়ে যায়, তাহলে সেটা ওই মানুষটিরজীবন ইতিহাসের পাতায় স্বর্নাক্ষনে অমরত্ব লাভ করে।

পরম করুনাময় ঈশ্বর, যদি তার শৃষ্ট মনু প্রজাকুলদের প্রেমের আগলে যদি বেঁধে না রাখতেন, আস্তিক মতে, তাহলে কবেই নাকি এই ধরাধাম থেকে মনুষ্যজাতি বিলুপ্ত হয়ে যেত। সেক্ষেত্রে প্রেম ই কি সৃষ্টির একমাত্র রহস্য নয়!!

“প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে ,কখন কে ধরা পরে কে জানে!
সকল গর্ব হায়, নিমেষে টুটে যায়,সলিল বয়ে যায় নয়ানে”।


তাই কে যে কখন এই ফাঁদে আঁটকা পরবে, তার গননা করা বোধহয় অতিবড় গনৎকার এর ও অসাধ্য। প্রেমের যে কোন আকার নাই। কোন নির্দিষ্ট সুত্র ও নেই। প্রত্যেক টি প্রেম, তার নিজের নিজের মত করে সতন্ত্র। তবুও আমরা ও আমাদের বৃহত্তর সমাজ, সব সময়ই চেয়েছি, একটা চিরচেনা গন্ডির মধ্যে, নির্দিষ্ট পরিচয়ের ঘেরাটোপে প্রেমের ঠিকানা এঁকে দিতে।
প্রেম অবাধ্যকে বাধ্য করে। ধৈর্য শক্তির ক্ষমতা বাড়ায়, দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করে। প্রেম ক্ষমা করতে শেখায়। আমিত্ব ভাবের অবসান ঘটিয়ে আমরা তে ও তো উতীর্ন ঘটায় এই প্রেমেরই বন্ধন।
বিভিন্ন ধর্মের মাঝে একমাত্র সেকুলার ধর্ম :-

প্রেম 
***********************************************
ভালোবাসা মানে না কোনো বাঁধন। আর প্রেমাতুর হৃদয় হলো কোমলগান্ধার। তাই অনেক ক্ষত্রেই প্রেম ছাড়িয়ে যায় ধর্মের গণ্ডিকেও। দুজন ভিন্ন ধর্মের মানুষ জড়িয়ে পড়ে প্রেমের সম্পর্কে। মানুষ তো মানুষই। মাতৃ জঠর থেকে, সে তো ধর্ম নিয়ে জন্মায় নি, সে জন্মেছে হৃদয় নিয়ে। আর অন্তরের ডাকে বিমুখতা দেখানোর সাহস, সন্ত ভিন্ন, অসম্ভব। এ ব্যাপারটিই কাজ করে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে, প্রায় প্রত্যেক ভিন্ন ধর্মের সমাজের ক্ষেত্রে। পশ্চিমি সভ্যতার দেশগুলো এটা কে অনুমোদন করলেও, এমন প্রেমকে আমাদের সমাজের বৃহৎ অংশ তো এখনো একে অনুমোদন দেয় না। শুধু সমাজই বা কেন, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব সকলেরই রক্তচক্ষু পতিত হয়, যখন দুই ধর্মের দুটি মানুষের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে।

মহাকাব্য
লেখক যখন নিখতে বসেন, তিনি কি জানেন, যে তার এই লেখাটা পাঠক কুলের কাছে সমাদৃত হবে, কি না। ঠিক সেরকম ঈ, প্রেমের কোন পাটিগনিত নেই।উপপাদ্য নেই। হিসাব-নিকাষ করে আসলে প্রেম হয় না। তাই বয়সের হিসাবটাও মাঝে মাঝে বাদ পড়ে যায় প্রেমের সম্পর্কে। বয়সে ছোট কোনো ছেলেকে দেখা যায় বয়সে বড় কোনো মেয়ের প্রেমে পড়তে। এই অসম বয়সের প্রেমও আমাদের সমাজ নিষিদ্ধ বলে আখ্যায়িত করে। প্রেমিকযুগলকে যেতে হয় বিভিন্ন বিব্রতকর ও দুঃখজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে। সমবয়সী নারী-পুরুষের প্রেম তো হরহামেশাই দেখা যায়, বর্তমানে বেশি বয়সী নারী ও কম বয়সী পুরুষের মধ্য প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে প্রায়শই। কত প্রেম যে অধরা মাধুরী হয়ে থেকে যায়, শুধু মাত্র এই কারনে। যদিও প্রকাশ্যে এই মাধুরীর উদাহরণ, দেয়ার মতো সংখ্যায় বেশি নয়। তাছারা প্রেমের কোন অবস্থান নেই যে ভুগোলের ম্যাপে ফেলে তাকে ল্যাট-লং দিয়ে তাকে চিহ্নিত করা যায়। তাই মনের গহীন অন্তরালেই লুকিয়ে লুকিয়া শ্বাস বায়ু ত্যাগ করে যায়।
মাঝ বয়সি প্রেম
****-************
অনেক নারী ও পুরুষ রয়েছেন, যাঁদের অনেক বয়স হয়ে গেলেও বিভিন্ন কারণে বিয়ে না করে সমাজে বসবাস করছেন। কঠোর বাস্তবের মাটি হয়তো যৌবনের দ্বীপ্ত দ্বিপ্রহরে দায়বোধের যাঁতাকলে পিশতে পিশতে কখন যে জীবনের অপরাহ্নে পৌছে গেছেন। সেটা খেয়াল ঈ করা হয়নি।কিন্তু মনের মধ্যে সঞ্চিত প্রেম সুধা, তীব্র গড়লের ন্যায় পান করে বসে থাকেন। পুরুষদের ব্যাপারে সমাজ অতটা মাথা না ঘামালেও নারীদের প্রতিনিয়ত হতে হয় অসংখ্য প্রশ্নের সম্মুখীন। নারী ও পুরুষ উভয়কেই মুখোমুখি হতে হয় বিব্রতকর পরিস্থিতির। এহেন অবস্থায় যদি মধ্য বয়সী কোনো নারী বা পুরুষ প্রেমে পড়ে যায়, তাতেও রয়েছে সমাজের চোখ রাঙানি। এই বয়সে এসে প্রেমকে যেন নিষিদ্ধই ঘোষণা করা হয় নারী-পুরুষদের জন্য। কিন্তু কেন??? কথিত আছে ৪৫ বছরের পর নাকি, মানব জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় রচিত হয়। তাহলে প্রথম ভাগে প্রেমের স্থান স্বিকৃত হলে, দ্বিতীয় ভাবে ওটা বিকৃত বলিব কেন?? শুধু মাত্র বিবাহ ঈ কি প্রেমের পরিনতি! প্রেমের গন্তব্য কি শারিরিক চাহিদার সাথেই নির্ধারিত হয়!! যদি তা না ঈ হয়, তাহলে বরং মানুষটি নতুন করে তাঁর জীবনে প্রেমাঙ্কুর বপন করলে, তীর্যক দৃষ্টি কি অতিপ্রয়োজনীয়। আমাদের সামাজিক অবস্থাটা এমন যে, মধ্য বয়সের প্রেমকে স্বীকৃতি তো দেয়াই হয় না, বরং দেখা হয় নেতিবাচক দৃষ্টিতে আরো অহরহ সামাজিক ভাবে তাদের বিবস্ত্র করা হয়। জীবন্ত লাশ হয়ে শুধু মাত্র ফাঁপা সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার মধ্যে যৌতিকতা কতটুকু!!


পরকীয়া
~~~~~~
এমনিতেই নিষিদ্ধ বস্তু বা দ্রব্যের প্রতি মানব প্রজাতির অমোঘ টান। তাহার উপর "পর" শব্দ টা বোধ হয়, মনুষ্য জাতীর সর্বাপেক্ষা প্রিয় শব্দ, আর পরচর্চা যখন, তখন তো তা চোর্ব্য চোষ্য লেহ্য। আর পরকিয়া!!! এ রশের মিষ্টতা সে ঈ জানে, যে চেখেছে। কী পাশ্চাত্য কী প্রাচ্য, পরকীয়া প্রেম সকল সমাজেই নিষিদ্ধ একটি সম্পর্ক রুপে গনিত হয়। এটা এমন একটি সম্পর্ক, য্রখানে ভাবা হয় কখনোই ঐ সমস্ত ব্যাক্তিবর্গের পরিবারে নাকি শুভ ফল বহন করে না। পরকীয়ায় ভিন্ন মানুষ ভিন্ন কারণে জড়িয়ে পরেন। কখনো এর পেছনে কাজ করে বিবাহিত জীবনে অসুখী হওয়াটা, কখনো কাজ করে শুধুই ভালো লাগা বা নিগুঢ় হৃদয় এর টান, আবার কখনো কাজ করে শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা। অনেকেই এই প্রেম কে সর্বনাশা বলে অবিহিত করেন। সংসারে ভাঙ্গন, অশান্তি, নৈতিক অবনতি – এ সব কিছুর পেছনেই দায়ী করা হয়ে থাকে পরকীয়া নামক সর্বনাশা প্রেমের সম্পর্ককে। পরকীয়ায় জড়িয়ে পরা মানুষগুলিকে সামাজিক ভাবেও হেনস্থা হতে হয়।
আমরা যখন ভোজন করি তখন ভিন্ন ভিন্ন রকমের তরিতরকারি দিয়ে পরিবেশিত খাবার নোলা ডুবিয়ে খেয়ে তৃপ্তির সাথে ঢেকুর তুলি। কিন্তু প্রতিনিয়ত সংসারের ঘানি টানতে টানতে, একজন পুরুষ বা মহিলা যখন তার সংসারে কাছে, সুধুই মাত্র এটিম কাউন্টার হয়ে যায়। তখন হয় তাকে হৃদয় কে পাষানে পরিনত করে মূকবধীর সেজে যেতে হয়, নতুবা বিশাল ধরনীতলে সেই ব্যাক্তিটির মননের সাথে মিল যুক্ত সে রকম ঈ পাষান বিগলনে সমর্থ কোন তৃতীয় হৃদয় এর সন্নিকটে চলে আসে।

বিবাহের পূর্বে ভালো কে ভালো বলার, সুন্দর কে সুন্দর বলার অধিকার থাকে, কিন্তু বিবাহ যাঁতাকলে পড়ে গেলেই, এই মানবীয় গুন গুলো কে আকস্মাৎ ত্যাজিতে হবে। এ বড় ২১ শে আইন।পরকিয়া শুরু হয়, কোন একজন “পর” কে দিয়ে। কিন্তু একবার এ প্রেম শুরু হয়ে গেলে, তখন সে কি আর পর থাকে?? সে তো তখন, কখন মনের অজান্তে আপন হয়ে বসে আছে, গোপনে!! হোক না সে তো প্রমের শিকলে হৃদয়ে বন্দি। তাহলে পরকিয়া বলে কিছু আছে কি!!!


বিচ্ছিন্নতা এবং প্রেম
******************** 
একজন সুস্থ মানুষের জীবনে বিবাহ খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। এই বিবাহ বন্ধন ও ভেঙে যেতে পারে নানাবিধ কারণে। বিবাহ যদিও মোটেই ঠুনকো কোনো বন্ধন নয়, তবুও মতের অমিল, কলহ, মূল্যবোধের পার্থক্য অথবা নানা অজানা কারণে বিবাহের মতো একটি সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে। বিবাহ ভেঙে যাওয়ার পর সেই দুর্বল মানুষ টি যখন একাকিত্বের গহ্বরে তলিয়ে যেতে থাকে, অবিশ্বাসের গোলোকধাঁধায় পাক খেতে খেতে, সেই মানুষটির আবার স্বপ্ন দেখার ইচ্ছাই হলো প্রেম। বেঁচে থাকার রসদ খোঁজা, প্রান ভরে মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নেওয়া, এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কিন্তু আমাদের সমাজ ডিভোর্সড মানুষের প্রেমের ব্যাপারে বড্ড কৃপন।যেন এটা একটা মানসিক বিকার। তাঁদের প্রেমে পড়াটা যেন নিষিদ্ধ একটা কাজ করা! বিবাহ ভেঙে যাবার পর আবার সম্পর্কে জড়াতে চাইলেই শুরু হয় হাজারো মানসিক লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, কখনো কখনো শারিরিক ও। সমাজের দ্বারা প্রতি নিয়ত গন ধর্ষিত এই মানুষ গুলো যখন সমাজ থেকে বিতারিত মনে করতে শুরু করে, এই প্রেমই তাকে আবার সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনে। চতুর্দিকের ক্রমবর্ধমান চারিত্রিক খুঁতের অন্ধ কানাগলিতে, নিজের জীবন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেও সইতে হয় নানান কটু কথা। সমাজ তাঁকে বিবেচনা করা অপরাধী হিসেবে।

কতটুকু লেখা সম্ভব এই প্রেমকে নিয়ে! তাই এখানেই ইতি... 


কিন্তু প্রেম চির মধুর।


(উন্মাদীয় বানানবিধি ও ভাবনায় পুষ্ট তথা দুষ্ট)