Sunday, 6 April 2014

উন্মাদীয় প্রেম বিশ্লেষণ


প্রেম, বড় মধুর......

 বিষ-lesson

দুজন মানুষের মধ্যে, হৃদয়ের টানে গড়ে ওঠে যে সম্পর্ক, তা হলো প্রেম। কোনো সময় এ সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কেও নস্যাৎ করে দেয়। মানবতা, প্রেমকে আখ্যা দিয়েছে একটি মহান সম্পর্ক হিসেবে। কিন্তু, সমাজ ভিন্ন কথা বলে। আমাদের সমাজে প্রেমকে দেখা হয় নেতিবাচক দৃষ্টিতে, অনেক সময়ই ঠাট্টার ছলে। প্রেমের গভীরতা যতই হোক না কেন, তা আজও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পারেনি। সমাজের তালেবরদের কাছে, প্রেম মানেই সেখানে একজন পুরুষ ও একজন স্ত্রীর উপস্থিতি আবশ্যিক। 

বিষয় টা কি অদৌও শুধু মাত্র সেই ভাবনাতেই কি আটকে রয়েছে(!) প্রেম মানেই তো হল নতুন করে নিজের জন্য নিয়ম তৈরি করা, নিজের জন্য বাঁচা। কিছু ভিন্নধর্মী প্রেমকে আমাদের সমাজ দিয়েছে নিষিদ্ধ রূপ।
এই প্রেম ঈ হল, সকল শৃষ্টির আদি। প্রেম কে কখনো “পূর্ন – অপূর্ণতার” মাত্রা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। ইস্পিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারলেও প্রেম, না পারলেও। হোক না তাৎক্ষনিক, তাতে কি!! প্রেম কি কখনো কারো পরোয়া করেছে??? প্রেম যদি মিলনের রাস্তা ধরে তার যাত্রা শেষ করে, তবে তা সুখী জীবনের একটা অধ্যায় হিসাবে থেকে যায়। আর যদি বন্ধুর পথে বারংবার পরিক্ষার সম্মুখীত হতে হতে, মাঝপথে বিলীন হয়ে যায়, তাহলে সেটা ওই মানুষটিরজীবন ইতিহাসের পাতায় স্বর্নাক্ষনে অমরত্ব লাভ করে।

পরম করুনাময় ঈশ্বর, যদি তার শৃষ্ট মনু প্রজাকুলদের প্রেমের আগলে যদি বেঁধে না রাখতেন, আস্তিক মতে, তাহলে কবেই নাকি এই ধরাধাম থেকে মনুষ্যজাতি বিলুপ্ত হয়ে যেত। সেক্ষেত্রে প্রেম ই কি সৃষ্টির একমাত্র রহস্য নয়!!

“প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে ,কখন কে ধরা পরে কে জানে!
সকল গর্ব হায়, নিমেষে টুটে যায়,সলিল বয়ে যায় নয়ানে”।


তাই কে যে কখন এই ফাঁদে আঁটকা পরবে, তার গননা করা বোধহয় অতিবড় গনৎকার এর ও অসাধ্য। প্রেমের যে কোন আকার নাই। কোন নির্দিষ্ট সুত্র ও নেই। প্রত্যেক টি প্রেম, তার নিজের নিজের মত করে সতন্ত্র। তবুও আমরা ও আমাদের বৃহত্তর সমাজ, সব সময়ই চেয়েছি, একটা চিরচেনা গন্ডির মধ্যে, নির্দিষ্ট পরিচয়ের ঘেরাটোপে প্রেমের ঠিকানা এঁকে দিতে।
প্রেম অবাধ্যকে বাধ্য করে। ধৈর্য শক্তির ক্ষমতা বাড়ায়, দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করে। প্রেম ক্ষমা করতে শেখায়। আমিত্ব ভাবের অবসান ঘটিয়ে আমরা তে ও তো উতীর্ন ঘটায় এই প্রেমেরই বন্ধন।
বিভিন্ন ধর্মের মাঝে একমাত্র সেকুলার ধর্ম :-

প্রেম 
***********************************************
ভালোবাসা মানে না কোনো বাঁধন। আর প্রেমাতুর হৃদয় হলো কোমলগান্ধার। তাই অনেক ক্ষত্রেই প্রেম ছাড়িয়ে যায় ধর্মের গণ্ডিকেও। দুজন ভিন্ন ধর্মের মানুষ জড়িয়ে পড়ে প্রেমের সম্পর্কে। মানুষ তো মানুষই। মাতৃ জঠর থেকে, সে তো ধর্ম নিয়ে জন্মায় নি, সে জন্মেছে হৃদয় নিয়ে। আর অন্তরের ডাকে বিমুখতা দেখানোর সাহস, সন্ত ভিন্ন, অসম্ভব। এ ব্যাপারটিই কাজ করে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে, প্রায় প্রত্যেক ভিন্ন ধর্মের সমাজের ক্ষেত্রে। পশ্চিমি সভ্যতার দেশগুলো এটা কে অনুমোদন করলেও, এমন প্রেমকে আমাদের সমাজের বৃহৎ অংশ তো এখনো একে অনুমোদন দেয় না। শুধু সমাজই বা কেন, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব সকলেরই রক্তচক্ষু পতিত হয়, যখন দুই ধর্মের দুটি মানুষের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে।

মহাকাব্য
লেখক যখন নিখতে বসেন, তিনি কি জানেন, যে তার এই লেখাটা পাঠক কুলের কাছে সমাদৃত হবে, কি না। ঠিক সেরকম ঈ, প্রেমের কোন পাটিগনিত নেই।উপপাদ্য নেই। হিসাব-নিকাষ করে আসলে প্রেম হয় না। তাই বয়সের হিসাবটাও মাঝে মাঝে বাদ পড়ে যায় প্রেমের সম্পর্কে। বয়সে ছোট কোনো ছেলেকে দেখা যায় বয়সে বড় কোনো মেয়ের প্রেমে পড়তে। এই অসম বয়সের প্রেমও আমাদের সমাজ নিষিদ্ধ বলে আখ্যায়িত করে। প্রেমিকযুগলকে যেতে হয় বিভিন্ন বিব্রতকর ও দুঃখজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে। সমবয়সী নারী-পুরুষের প্রেম তো হরহামেশাই দেখা যায়, বর্তমানে বেশি বয়সী নারী ও কম বয়সী পুরুষের মধ্য প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে প্রায়শই। কত প্রেম যে অধরা মাধুরী হয়ে থেকে যায়, শুধু মাত্র এই কারনে। যদিও প্রকাশ্যে এই মাধুরীর উদাহরণ, দেয়ার মতো সংখ্যায় বেশি নয়। তাছারা প্রেমের কোন অবস্থান নেই যে ভুগোলের ম্যাপে ফেলে তাকে ল্যাট-লং দিয়ে তাকে চিহ্নিত করা যায়। তাই মনের গহীন অন্তরালেই লুকিয়ে লুকিয়া শ্বাস বায়ু ত্যাগ করে যায়।
মাঝ বয়সি প্রেম
****-************
অনেক নারী ও পুরুষ রয়েছেন, যাঁদের অনেক বয়স হয়ে গেলেও বিভিন্ন কারণে বিয়ে না করে সমাজে বসবাস করছেন। কঠোর বাস্তবের মাটি হয়তো যৌবনের দ্বীপ্ত দ্বিপ্রহরে দায়বোধের যাঁতাকলে পিশতে পিশতে কখন যে জীবনের অপরাহ্নে পৌছে গেছেন। সেটা খেয়াল ঈ করা হয়নি।কিন্তু মনের মধ্যে সঞ্চিত প্রেম সুধা, তীব্র গড়লের ন্যায় পান করে বসে থাকেন। পুরুষদের ব্যাপারে সমাজ অতটা মাথা না ঘামালেও নারীদের প্রতিনিয়ত হতে হয় অসংখ্য প্রশ্নের সম্মুখীন। নারী ও পুরুষ উভয়কেই মুখোমুখি হতে হয় বিব্রতকর পরিস্থিতির। এহেন অবস্থায় যদি মধ্য বয়সী কোনো নারী বা পুরুষ প্রেমে পড়ে যায়, তাতেও রয়েছে সমাজের চোখ রাঙানি। এই বয়সে এসে প্রেমকে যেন নিষিদ্ধই ঘোষণা করা হয় নারী-পুরুষদের জন্য। কিন্তু কেন??? কথিত আছে ৪৫ বছরের পর নাকি, মানব জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় রচিত হয়। তাহলে প্রথম ভাগে প্রেমের স্থান স্বিকৃত হলে, দ্বিতীয় ভাবে ওটা বিকৃত বলিব কেন?? শুধু মাত্র বিবাহ ঈ কি প্রেমের পরিনতি! প্রেমের গন্তব্য কি শারিরিক চাহিদার সাথেই নির্ধারিত হয়!! যদি তা না ঈ হয়, তাহলে বরং মানুষটি নতুন করে তাঁর জীবনে প্রেমাঙ্কুর বপন করলে, তীর্যক দৃষ্টি কি অতিপ্রয়োজনীয়। আমাদের সামাজিক অবস্থাটা এমন যে, মধ্য বয়সের প্রেমকে স্বীকৃতি তো দেয়াই হয় না, বরং দেখা হয় নেতিবাচক দৃষ্টিতে আরো অহরহ সামাজিক ভাবে তাদের বিবস্ত্র করা হয়। জীবন্ত লাশ হয়ে শুধু মাত্র ফাঁপা সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার মধ্যে যৌতিকতা কতটুকু!!


পরকীয়া
~~~~~~
এমনিতেই নিষিদ্ধ বস্তু বা দ্রব্যের প্রতি মানব প্রজাতির অমোঘ টান। তাহার উপর "পর" শব্দ টা বোধ হয়, মনুষ্য জাতীর সর্বাপেক্ষা প্রিয় শব্দ, আর পরচর্চা যখন, তখন তো তা চোর্ব্য চোষ্য লেহ্য। আর পরকিয়া!!! এ রশের মিষ্টতা সে ঈ জানে, যে চেখেছে। কী পাশ্চাত্য কী প্রাচ্য, পরকীয়া প্রেম সকল সমাজেই নিষিদ্ধ একটি সম্পর্ক রুপে গনিত হয়। এটা এমন একটি সম্পর্ক, য্রখানে ভাবা হয় কখনোই ঐ সমস্ত ব্যাক্তিবর্গের পরিবারে নাকি শুভ ফল বহন করে না। পরকীয়ায় ভিন্ন মানুষ ভিন্ন কারণে জড়িয়ে পরেন। কখনো এর পেছনে কাজ করে বিবাহিত জীবনে অসুখী হওয়াটা, কখনো কাজ করে শুধুই ভালো লাগা বা নিগুঢ় হৃদয় এর টান, আবার কখনো কাজ করে শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা। অনেকেই এই প্রেম কে সর্বনাশা বলে অবিহিত করেন। সংসারে ভাঙ্গন, অশান্তি, নৈতিক অবনতি – এ সব কিছুর পেছনেই দায়ী করা হয়ে থাকে পরকীয়া নামক সর্বনাশা প্রেমের সম্পর্ককে। পরকীয়ায় জড়িয়ে পরা মানুষগুলিকে সামাজিক ভাবেও হেনস্থা হতে হয়।
আমরা যখন ভোজন করি তখন ভিন্ন ভিন্ন রকমের তরিতরকারি দিয়ে পরিবেশিত খাবার নোলা ডুবিয়ে খেয়ে তৃপ্তির সাথে ঢেকুর তুলি। কিন্তু প্রতিনিয়ত সংসারের ঘানি টানতে টানতে, একজন পুরুষ বা মহিলা যখন তার সংসারে কাছে, সুধুই মাত্র এটিম কাউন্টার হয়ে যায়। তখন হয় তাকে হৃদয় কে পাষানে পরিনত করে মূকবধীর সেজে যেতে হয়, নতুবা বিশাল ধরনীতলে সেই ব্যাক্তিটির মননের সাথে মিল যুক্ত সে রকম ঈ পাষান বিগলনে সমর্থ কোন তৃতীয় হৃদয় এর সন্নিকটে চলে আসে।

বিবাহের পূর্বে ভালো কে ভালো বলার, সুন্দর কে সুন্দর বলার অধিকার থাকে, কিন্তু বিবাহ যাঁতাকলে পড়ে গেলেই, এই মানবীয় গুন গুলো কে আকস্মাৎ ত্যাজিতে হবে। এ বড় ২১ শে আইন।পরকিয়া শুরু হয়, কোন একজন “পর” কে দিয়ে। কিন্তু একবার এ প্রেম শুরু হয়ে গেলে, তখন সে কি আর পর থাকে?? সে তো তখন, কখন মনের অজান্তে আপন হয়ে বসে আছে, গোপনে!! হোক না সে তো প্রমের শিকলে হৃদয়ে বন্দি। তাহলে পরকিয়া বলে কিছু আছে কি!!!


বিচ্ছিন্নতা এবং প্রেম
******************** 
একজন সুস্থ মানুষের জীবনে বিবাহ খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। এই বিবাহ বন্ধন ও ভেঙে যেতে পারে নানাবিধ কারণে। বিবাহ যদিও মোটেই ঠুনকো কোনো বন্ধন নয়, তবুও মতের অমিল, কলহ, মূল্যবোধের পার্থক্য অথবা নানা অজানা কারণে বিবাহের মতো একটি সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে। বিবাহ ভেঙে যাওয়ার পর সেই দুর্বল মানুষ টি যখন একাকিত্বের গহ্বরে তলিয়ে যেতে থাকে, অবিশ্বাসের গোলোকধাঁধায় পাক খেতে খেতে, সেই মানুষটির আবার স্বপ্ন দেখার ইচ্ছাই হলো প্রেম। বেঁচে থাকার রসদ খোঁজা, প্রান ভরে মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নেওয়া, এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কিন্তু আমাদের সমাজ ডিভোর্সড মানুষের প্রেমের ব্যাপারে বড্ড কৃপন।যেন এটা একটা মানসিক বিকার। তাঁদের প্রেমে পড়াটা যেন নিষিদ্ধ একটা কাজ করা! বিবাহ ভেঙে যাবার পর আবার সম্পর্কে জড়াতে চাইলেই শুরু হয় হাজারো মানসিক লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, কখনো কখনো শারিরিক ও। সমাজের দ্বারা প্রতি নিয়ত গন ধর্ষিত এই মানুষ গুলো যখন সমাজ থেকে বিতারিত মনে করতে শুরু করে, এই প্রেমই তাকে আবার সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনে। চতুর্দিকের ক্রমবর্ধমান চারিত্রিক খুঁতের অন্ধ কানাগলিতে, নিজের জীবন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেও সইতে হয় নানান কটু কথা। সমাজ তাঁকে বিবেচনা করা অপরাধী হিসেবে।

কতটুকু লেখা সম্ভব এই প্রেমকে নিয়ে! তাই এখানেই ইতি... 


কিন্তু প্রেম চির মধুর।


(উন্মাদীয় বানানবিধি ও ভাবনায় পুষ্ট তথা দুষ্ট)



No comments:

Post a Comment