কবিপক্ষের অবসান হইয়াছে, উন্মাদীয় সাহিত্যচর্চার প্রত্যক্ষ পক্ষাঘাতের জন্য
সুধী মাননীয়/মাননীয়া গন আপনারা হারেহারে জর্জরিত??? সামান্য প্রহসনের
আশ্রয়ে , গুরুদেবের পোষ্টমাস্টারের চরিত্রটি আগেই মন্দ হইয়াছে, উন্মাদের
পাল্লায় পড়িয়া...
আধুনিক পোষ্টমাস্টার
রোগসেবা হইতে নিষ্কৃতি পাইয়া রতন দ্বারের বাহিরে আবার তাহার স্বস্থান
অধিকার করিল। কিন্তু পূর্ববৎ আর তাহাকে ডাক পড়ে না; মাঝে মাঝে উঁকি মারিয়া
দেখে, পোস্টমাস্টার অত্যন্ত অন্যমনস্কভাবে চৌকিতে বসিয়া অথবা খাটিয়ায় চিৎ
হইয়া শুইয়া আছেন। এযাবৎ এক টানা বেশ কিছু দিন সেবা করিয়া রতনের মনের কোণেও
যেন একটি গোপন অভিসারের জন্ম হইয়াছিলো। রতন চঞ্চলা, প্রগলভ, অস্থির চিত্ত,
চপলমতি, নিত্যগতীশিল মননের অধিকারিণী সন্দেহ নাই, কিন্তু তাহারও বক্ষের
বামপার্শে মর্ম বলিয়া একটি মাংস পিন্ড বর্তমান, যাহা কাম ব্যাতিরেকেও অন্য
কিছুর সন্ধান দেয়, প্রনয়ের অনুরাগ তার হৃদেও দোলা দিয়ে যায়।
রতন যখন
দ্বারের বাহিরে আহ্বান প্রত্যাশা করিয়া বসিয়া আছে, তিনি তখন অধীরচিত্তে
তাঁহার তরঙ্গায়িত দরখাস্তের উত্তর প্রতীক্ষা করিতেছেন। যুবতী কন্যা দ্বারের
অভ্যন্তরে আসিয়া পরিগনক যন্ত্র টিকে চালু করিয়া, খটাং খটাং স্তনন সহকারে,
পরিগনকের নিজস্ব বাকপ্রণালি সমূহ, বহুবার পরিমার্জন করার হেতু পোষ্ট
মাষ্টারের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করিল। পোষ্টমাষ্টার এর হৃদয়ের স্মৃতিপটে
নিজের একটি প্রশংসনীয় উৎকর্ষিসম্পন্ন চিত্র অঙ্কনের জন্য, পাছে যেদিন সহসা
ডাক পড়িবে সেদিন তাহার অবিন্যস্ত বর্নসজ্জা ও পরিগনকের বাকেরা নির্বাক না
হইয়া যায়। তাহার মধ্যে কি নারীস্বত্তার বিকাশ পূর্ন মাত্রায় ঘটে নাই!! সে
কি সত্যিই কুৎসিত তথা কি চরিত্রের অধিকারিণী? তাহার মধ্যে কি কমনীয়তা নেই?
তাহা হইলে যে সকল দয়িতের দল তাহার পিছনে, মুষ্ঠি যন্ত্রে, ঈশারায় পঙ্গপালের
ন্যায় ক্রমাগত ধাওয়া করে চলেছে, তাহারা কি ধর্ষকামি মনের অধিকারী সকলে? না
হলে এই বাবু টি কেন তাহাকে এতো কাছে পাইয়া ও এই রুপে নির্লিপ্ত থাকিতে
পারে? ইহাতে রতনের মনে প্রবল শঙ্কার উদ্রেগ হইলো।
অবশেষে
সপ্তাহখানেক পরে একদিন সন্ধ্যাবেলায় ডাক পড়িল। উদ্বেলিতহৃদয়ে রতন গৃহের
মধ্যে প্রবেশ করিয়া বলিল, “দাদাবাবু, আমাকে ডাকছিলে? ”
পোস্টমাস্টার বলিলেন, “রতন, কালই আমি যাচ্ছি।”
রতন। কোথায় যাচ্ছ, দাদাবাবু।
পোস্টমাস্টার। বাড়ি যাচ্ছি।
রতন। আবার কবে আসবে।
পোস্টমাস্টার। আর আসব না।
রতন আর কোনো কথা জিজ্ঞাসা করিল না। পোস্টমাস্টার আপনিই তাহাকে বলিলেন,
তিনি বদলির জন্য দরখাস্ত করিয়াছিলেন, নবান্ন তাহা নামঞ্জুর করিয়াছে; তাই
তিনি কাজে জবাব দিয়া বাড়ি যাইতেছেন। অনেকক্ষণ আর কেহ কোনো কথা কহিল না।
মিটমিট করিয়া জ্বলিত থাকা নিবিড় প্রতিপ্রভ বাতিটিও যেন রতন কে দ্বগ্ধ করিতে
লাগিল এবং খোলা বাতায়ন দিয়ে দূরে কোথাও কোন এক রাজনৈতিক দলের সভাস্থল হইতে
রোজ সন্ধ্যার মত উচ্চস্বরের প্রলাপ ভিন্ন নিশুতি যেন গ্রাস করিয়াছিলো।
কেননা এই সিঙ্গুর গ্রামটিতে কেবিল মাত্র পড়িয়া থাকিবার জন্য অনেক কিছুই
আছে, ১০০০ বিঘা জমি সহ তাহার সুদীর্ঘ প্রাচীর। টাটা গোষ্ঠীর চতর্চক্রজানের
কারখানার অবশিষ্ট কঙ্কাল সহ অনেক কিছু। পোষ্টমাস্টারের জীবন তো পাশ দিয়ে
বয়ে চলা ঐ চতুর্গলি বিশিষ্ট পাকা রাস্তার ন্যায় হতে যায়, যাঁহার অবসান
বলিয়া কোন শব্দবন্ধ থকিবে না, অবিরাম অবিরত ছুটে চলাই হবে যার জীবন। এই
সিঙ্গুর তাহাকে নিঃসঙ্গ অবসন্নতা ভিন্ন কিছুই দেইনি। যদিও ইহা লইয়া তাহার
তেমন কোন ক্ষোভ নাই, এই সিঙ্গুর আন্দোলনের ভারে আজ ক্লান্ত, আমাত্ব আজ
শিক্ষকতা ছারিয়া ধীবরে পর্যবাসিত হইয়াছে, অবরোধ অনশনের প্রহসনে ঋদ্ধ আজ
৬০০-৪০০ এর দ্বন্দ্ব ভুলে রুজির সন্ধানে দিশেহারা।
ইহার কাছে তাই
কোন কিছুর প্রত্যাশা করা নিতান্তই বাতুলতা, তাহা সম্বন্ধে পোস্টমাস্টার
সথেষ্ট ওয়াকিবহাল। কিন্তু রতন? তাহার কাছে তো বিপুল প্রত্যাশা ছিলো, তাহার
আবেগময় মনের সঙ্গিনী হিসাবে তো সে রতন কেই অঙ্কন করিয়াছিলো, তাহার মধ্যে তো
কোনরূপ কুরুচিপূর্ন অমার্জিত কিছু ছিলো না, তাহা হইলে এতো নিরুত্তাপ কেন!!
এই ভাবনা তাহারে ঘুণ পোকার ন্যায় কুরিয়া খাইতে লাগিল।
কিছুক্ষণ পরে
রতন আস্তে আস্তে উঠিয়া রান্নঘরের হিমায়িত যন্ত্র হইতে ওবেলার বাসি
ভক্ষ্যসামগ্রী গুলো উত্তাপ করনের জন্য উনুনের নিকট নিয়ে গেলো, শরীর ও
অনেকটা এই রকম ই, যখন খুশি তাহাতে উত্তাপের সঞ্চারণ ঘটানো যায়, কিন্তু মন??
একটি দ্বীর্ঘশ্বাস ভিন্ন আর কোন আওয়াজ ই শোনা যাইলো না। অন্যদিনের মতো
তেমন চট্পট্ হইল না। বোধ করি মধ্যে মধ্যে মাথায় আরো অনেক ভাবনা উদয়
হইয়াছিল। পোস্টমাস্টারের আহার সমাপ্ত হইলে পর যুবতী তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল,
“দাদাবাবু, আমাকে তোমাদের বাড়ি নিয়ে যাবে?”
এই প্রশ্ন শুনিয়া
পোস্টমাস্টারের তাহার মনের কোনে দলা পাকিয়ে থাকা অপূর্নতার বাষ্প যেন শ্বাস
নালি অবরুদ্ধ করিবার উদ্যম করিতেছিলো। পোস্টমাস্টার তাচ্ছিল্যের হাসি,
হাসিয়া কহিলেন, “সে কী করে হবে।” ব্যাপারটা যে কী কী কারণে অসম্ভব তাহা আর
বুঝানো আবশ্যক বোধ করিলেন না।
সমস্ত রাত্রি স্বপ্নে এবং জাগরণে যুবতীর
কানে পোস্টমাস্টারের তাচ্ছিল্যভরা হাস্যধ্বনির কন্ঠস্বর বাজিতে লাগিল— ‘সে
কী করে হবে’। জীবনে সে ও বহু সংগ্রামের সাক্ষী, জয় পরাজয়ের নানা লেখচিত্রে
ভরা তার জীবন। কি আজিকের মত এত যন্ত্রনা বোধ হয় আগে কখনো সে অনুভব করেনি।
ভোরে উঠিয়া পোস্টমাস্টার দেখিলেন, তাঁহার স্নানের জল ঠিক আছে; কলিকাতার
অভ্যাস-অনুসারে তিনি গগনচন্দ্রাতপে অবস্তিত আধারের জলে স্নান করিতেন। এই
স্থানে সেই সুবিধা নাই, তাই তোলা জলেই প্রত্যত স্নানাকার্য সম্পন্ন করিত।
কিন্তু কখন তিনি যাত্রা করিবেন সে কথা ওই যুবতী কী এক অজানা কারণে জিজ্ঞাসা
করিতে পারে নাই; পাছে প্রাতঃকালে জলের আবশ্যক হয় এইজন্য রতন তত রাত্রেই সে
পার্শবর্তী নলকূপ হইতে তাঁহার স্নানের জল তুলিয়া আনিয়াছিল। স্নান সমাপন
হইলে রতনের ডাক পড়িল।
রতন নিঃশব্দে গৃহে প্রবেশ করিল এবং আদেশপ্রতীক্ষায়
একবার নীরবে প্রভুর মুখের দিকে চাহিল। কহিল দাদাবাবু আপনার মুষ্ঠিবার্তালাপ
যন্ত্রের চিহ্নিতকরণ অঙ্ক টি কহিবেন? আমি আপনার জন্য অন্তর্জাল হইতে আপনার
যাত্রাপথের রেল অংশের নিদর্শন পত্র টি সংগ্রহ করিতে সক্ষম হইয়াছি, আপনার
শিক্ষায় শিক্ষিত হইয়া, এখন যদি আজ্ঞা করিয়া আপনি আমার নিকট হইতে এই বার্তা
টি আপনার যন্ত্রে প্রেরণ করিতে সক্ষম হই, তাহা হইলে আমি অত্যন্ত পরিতুষ্ট
হইবো। পোস্টমাস্টার যত না বেশী আনন্দিত হইল, তাহার থেকেও অনেক বেশী বিস্মিত
হইল। ইহা কি অস্ফুট প্রেমের বহিঃপ্রকাশ না কি তাহার উপস্থিতি চরম ভাবে
উপেক্ষা!
পোষ্ট কহিলেন, “রতন, আমার জায়গায় যে লোকটি আসবেন তাঁকে বলে
দিয়ে যাব, তিনি তোকে আমারই মতন যত্ন করবেন; আমি যাচ্ছি বলে তোকে কিছু
ভাবতে হবে না। আগামিতে এস্থান মুদ্রালেনদেনের প্রতিষ্ঠান হইবে, তোর চাকুরিও
পাকা হইয়া যাইবে, ভালো বেতন পাইবি ” এই কথাগুলি যে অত্যন্ত স্নেহগর্ভ এবং
দয়ার্দ্র হৃদয় হইতে উত্থিত সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই, কিন্তু নারীহৃদয় কে
বুঝিবে। রতন অনেকদিন প্রভুর অনেক তিরস্কার নীরবে সহ্য করিয়াছে কিন্তু এই
নরম কথা সহিতে পারিল না।
একেবারে উচ্ছ্বসিত হৃদয়ে কাঁদিয়া উঠিয়া কহিল, “না না, তোমার কাউকে কিছু বলতে হবে না, আমি থাকতে চাই নে।”
পোস্টমাস্টার রতনের এরূপ ব্যবহার কখনো দেখেন নাই, তাই অবাক হইয়া রহিলেন।
ক্রমশ.....
একটি সম্পূর্ন উন্মাদীয় ভাবনার ফসল
****************************************
(নিজ দায়িত্বে পাঠ করিয়া মর্ম্নদ্ধার করিবেন, কারন ইহার বানান বিধিও উন্মাদীয়)