Friday, 30 May 2014

সময় চর্চা ~ ১




সময় চর্চা 

প্রথম খন্ড

কদিন ধরেই মনটা বেশ খারাপ, দিন দিন সেটা আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। 




আসলে আমরা প্রতেকেই কিছু না কিছু বিষয়ের সাথে জুরে বা জরিয়ে থাকতে ভালোবাসি।


ভোট শুরু হবে শুরু হবে করে ২০ দিন কাটলো, দিন ঘোষনার উৎকন্ঠা শেষ হতে না হতেই চারিদিকেতে সাজসাজ রব, প্রচার প্রচার আর প্রচার। লাল সবুজ হলুদ গেরুয়া আরো কত রঙ। দেশপ্রেমী থেকে দেশদ্রোহী প্রতেকেই ভীষণ ভাবে ব্যাস্ত হয়ে পরল।তর্ক, তর্কের পিঠে তর্ক, আক্রমন প্রতি আক্রমন, প্রতিশ্রুতিপত্র, থেকে হিংসা।



রক্তপাতযুক্ত অথচ মৃত্যুবিহীন, সেই দিন প্রবল ভাবে উপস্থিত হল, একটা লুকানো ভয়ের পরিবেশের সাথে নিয়ে। আমরা যথারিতি সমোৎসাহে উৎযাপন করলাম, আরো একটা সরকারি ছুটির দিন, দুপুরে ভাত ঘুম, টিভি তে লাইভ ভায়োলেন্স,। কম্পলিট প্যাকেজ।


ভোটদিয়ে বাড়ি ফিরে শুরু অনন্ত প্রতিক্ষা, আবকি বার কে??? বাম না রাম?? দিদি না দাদা?? ইত্যাদি ইত্যাদি। এর ঈ মাঝে ভোর থেকে শেষ রাত পর্যন্ত ফেসবুক টুইটার ব্লগ ইত্যাদিতে বিপ্লবের বমনক্রিয়া। ঘামাচির ন্যায় পোষ্ট বপন, ভার্চুয়াল জীবনের অন্যতম শর্ত, " লাইক " বোতামে ধাক্কা। ফি সন্ধ্যে বৈদুতিন মাধ্যমে পরচর্চা পরনিন্দার চর্বিত চর্বণ, ঢকঢক করে গিলেছি। এর মাঝে বড় কোন হিন্দি সিনেমা রিলিজ নেই। সুতরাং চাপ কম।

বেশ ছিলাম,

তার আরো কারন আছে।

আই পি এল -৭


...............চলবে

Friday, 23 May 2014

আধুনিক পোষ্টমাস্টার ~ ৩


কবিপক্ষের অবসান হইয়াছে, উন্মাদীয় সাহিত্যচর্চার প্রত্যক্ষ পক্ষাঘাতের জন্য সুধী মাননীয়/মাননীয়া গন আপনারা হারেহারে জর্জরিত??? সামান্য প্রহসনের আশ্রয়ে , গুরুদেবের পোষ্টমাস্টারের চরিত্রটি আগেই মন্দ হইয়াছে, উন্মাদের পাল্লায় পড়িয়া...

আধুনিক পোষ্টমাস্টার 

রোগসেবা হইতে নিষ্কৃতি পাইয়া রতন দ্বারের বাহিরে আবার তাহার স্বস্থান অধিকার করিল। কিন্তু পূর্ববৎ আর তাহাকে ডাক পড়ে না; মাঝে মাঝে উঁকি মারিয়া দেখে, পোস্টমাস্টার অত্যন্ত অন্যমনস্কভাবে চৌকিতে বসিয়া অথবা খাটিয়ায় চিৎ হইয়া শুইয়া আছেন। এযাবৎ এক টানা বেশ কিছু দিন সেবা করিয়া রতনের মনের কোণেও যেন একটি গোপন অভিসারের জন্ম হইয়াছিলো। রতন চঞ্চলা, প্রগলভ, অস্থির চিত্ত, চপলমতি, নিত্যগতীশিল মননের অধিকারিণী সন্দেহ নাই, কিন্তু তাহারও বক্ষের বামপার্শে মর্ম বলিয়া একটি মাংস পিন্ড বর্তমান, যাহা কাম ব্যাতিরেকেও অন্য কিছুর সন্ধান দেয়, প্রনয়ের অনুরাগ তার হৃদেও দোলা দিয়ে যায়।

রতন যখন দ্বারের বাহিরে আহ্বান প্রত্যাশা করিয়া বসিয়া আছে, তিনি তখন অধীরচিত্তে তাঁহার তরঙ্গায়িত দরখাস্তের উত্তর প্রতীক্ষা করিতেছেন। যুবতী কন্যা দ্বারের অভ্যন্তরে আসিয়া পরিগনক যন্ত্র টিকে চালু করিয়া, খটাং খটাং স্তনন সহকারে, পরিগনকের নিজস্ব বাকপ্রণালি সমূহ, বহুবার পরিমার্জন করার হেতু পোষ্ট মাষ্টারের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করিল। পোষ্টমাষ্টার এর হৃদয়ের স্মৃতিপটে নিজের একটি প্রশংসনীয় উৎকর্ষিসম্পন্ন চিত্র অঙ্কনের জন্য, পাছে যেদিন সহসা ডাক পড়িবে সেদিন তাহার অবিন্যস্ত বর্নসজ্জা ও পরিগনকের বাকেরা নির্বাক না হইয়া যায়। তাহার মধ্যে কি নারীস্বত্তার বিকাশ পূর্ন মাত্রায় ঘটে নাই!! সে কি সত্যিই কুৎসিত তথা কি চরিত্রের অধিকারিণী? তাহার মধ্যে কি কমনীয়তা নেই? তাহা হইলে যে সকল দয়িতের দল তাহার পিছনে, মুষ্ঠি যন্ত্রে, ঈশারায় পঙ্গপালের ন্যায় ক্রমাগত ধাওয়া করে চলেছে, তাহারা কি ধর্ষকামি মনের অধিকারী সকলে? না হলে এই বাবু টি কেন তাহাকে এতো কাছে পাইয়া ও এই রুপে নির্লিপ্ত থাকিতে পারে? ইহাতে রতনের মনে প্রবল শঙ্কার উদ্রেগ হইলো।

অবশেষে সপ্তাহখানেক পরে একদিন সন্ধ্যাবেলায় ডাক পড়িল। উদ্‌‌বেলিতহৃদয়ে রতন গৃহের মধ্যে প্রবেশ করিয়া বলিল, “দাদাবাবু, আমাকে ডাকছিলে? ”


পোস্টমাস্টার বলিলেন, “রতন, কালই আমি যাচ্ছি।”
রতন। কোথায় যাচ্ছ, দাদাবাবু।
পোস্টমাস্টার। বাড়ি যাচ্ছি।
রতন। আবার কবে আসবে।
পোস্টমাস্টার। আর আসব না।


রতন আর কোনো কথা জিজ্ঞাসা করিল না। পোস্টমাস্টার আপনিই তাহাকে বলিলেন, তিনি বদলির জন্য দরখাস্ত করিয়াছিলেন, নবান্ন তাহা নামঞ্জুর করিয়াছে; তাই তিনি কাজে জবাব দিয়া বাড়ি যাইতেছেন। অনেকক্ষণ আর কেহ কোনো কথা কহিল না। মিটমিট করিয়া জ্বলিত থাকা নিবিড় প্রতিপ্রভ বাতিটিও যেন রতন কে দ্বগ্ধ করিতে লাগিল এবং খোলা বাতায়ন দিয়ে দূরে কোথাও কোন এক রাজনৈতিক দলের সভাস্থল হইতে রোজ সন্ধ্যার মত উচ্চস্বরের প্রলাপ ভিন্ন নিশুতি যেন গ্রাস করিয়াছিলো।

কেননা এই সিঙ্গুর গ্রামটিতে কেবিল মাত্র পড়িয়া থাকিবার জন্য অনেক কিছুই আছে, ১০০০ বিঘা জমি সহ তাহার সুদীর্ঘ প্রাচীর। টাটা গোষ্ঠীর চতর্চক্রজানের কারখানার অবশিষ্ট কঙ্কাল সহ অনেক কিছু। পোষ্টমাস্টারের জীবন তো পাশ দিয়ে বয়ে চলা ঐ চতুর্গলি বিশিষ্ট পাকা রাস্তার ন্যায় হতে যায়, যাঁহার অবসান বলিয়া কোন শব্দবন্ধ থকিবে না, অবিরাম অবিরত ছুটে চলাই হবে যার জীবন। এই সিঙ্গুর তাহাকে নিঃসঙ্গ অবসন্নতা ভিন্ন কিছুই দেইনি। যদিও ইহা লইয়া তাহার তেমন কোন ক্ষোভ নাই, এই সিঙ্গুর আন্দোলনের ভারে আজ ক্লান্ত, আমাত্ব আজ শিক্ষকতা ছারিয়া ধীবরে পর্যবাসিত হইয়াছে, অবরোধ অনশনের প্রহসনে ঋদ্ধ আজ ৬০০-৪০০ এর দ্বন্দ্ব ভুলে রুজির সন্ধানে দিশেহারা।

ইহার কাছে তাই কোন কিছুর প্রত্যাশা করা নিতান্তই বাতুলতা, তাহা সম্বন্ধে পোস্টমাস্টার সথেষ্ট ওয়াকিবহাল। কিন্তু রতন? তাহার কাছে তো বিপুল প্রত্যাশা ছিলো, তাহার আবেগময় মনের সঙ্গিনী হিসাবে তো সে রতন কেই অঙ্কন করিয়াছিলো, তাহার মধ্যে তো কোনরূপ কুরুচিপূর্ন অমার্জিত কিছু ছিলো না, তাহা হইলে এতো নিরুত্তাপ কেন!! এই ভাবনা তাহারে ঘুণ পোকার ন্যায় কুরিয়া খাইতে লাগিল।

কিছুক্ষণ পরে রতন আস্তে আস্তে উঠিয়া রান্নঘরের হিমায়িত যন্ত্র হইতে ওবেলার বাসি ভক্ষ্যসামগ্রী গুলো উত্তাপ করনের জন্য উনুনের নিকট নিয়ে গেলো, শরীর ও অনেকটা এই রকম ই, যখন খুশি তাহাতে উত্তাপের সঞ্চারণ ঘটানো যায়, কিন্তু মন?? একটি দ্বীর্ঘশ্বাস ভিন্ন আর কোন আওয়াজ ই শোনা যাইলো না। অন্যদিনের মতো তেমন চট্পট্ হইল না। বোধ করি মধ্যে মধ্যে মাথায় আরো অনেক ভাবনা উদয় হইয়াছিল। পোস্টমাস্টারের আহার সমাপ্ত হইলে পর যুবতী তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, “দাদাবাবু, আমাকে তোমাদের বাড়ি নিয়ে যাবে?”

এই প্রশ্ন শুনিয়া পোস্টমাস্টারের তাহার মনের কোনে দলা পাকিয়ে থাকা অপূর্নতার বাষ্প যেন শ্বাস নালি অবরুদ্ধ করিবার উদ্যম করিতেছিলো। পোস্টমাস্টার তাচ্ছিল্যের হাসি, হাসিয়া কহিলেন, “সে কী করে হবে।” ব্যাপারটা যে কী কী কারণে অসম্ভব তাহা আর বুঝানো আবশ্যক বোধ করিলেন না। 


সমস্ত রাত্রি স্বপ্নে এবং জাগরণে যুবতীর কানে পোস্টমাস্টারের তাচ্ছিল্যভরা হাস্যধ্বনির কন্ঠস্বর বাজিতে লাগিল— ‘সে কী করে হবে’। জীবনে সে ও বহু সংগ্রামের সাক্ষী, জয় পরাজয়ের নানা লেখচিত্রে ভরা তার জীবন। কি আজিকের মত এত যন্ত্রনা বোধ হয় আগে কখনো সে অনুভব করেনি।


ভোরে উঠিয়া পোস্টমাস্টার দেখিলেন, তাঁহার স্নানের জল ঠিক আছে; কলিকাতার অভ্যাস-অনুসারে তিনি গগনচন্দ্রাতপে অবস্তিত আধারের জলে স্নান করিতেন। এই স্থানে সেই সুবিধা নাই, তাই তোলা জলেই প্রত্যত স্নানাকার্য সম্পন্ন করিত। কিন্তু কখন তিনি যাত্রা করিবেন সে কথা ওই যুবতী কী এক অজানা কারণে জিজ্ঞাসা করিতে পারে নাই; পাছে প্রাতঃকালে জলের আবশ্যক হয় এইজন্য রতন তত রাত্রেই সে পার্শবর্তী নলকূপ হইতে তাঁহার স্নানের জল তুলিয়া আনিয়াছিল। স্নান সমাপন হইলে রতনের ডাক পড়িল। 

রতন নিঃশব্দে গৃহে প্রবেশ করিল এবং আদেশপ্রতীক্ষায় একবার নীরবে প্রভুর মুখের দিকে চাহিল। কহিল দাদাবাবু আপনার মুষ্ঠিবার্তালাপ যন্ত্রের চিহ্নিতকরণ অঙ্ক টি কহিবেন? আমি আপনার জন্য অন্তর্জাল হইতে আপনার যাত্রাপথের রেল অংশের নিদর্শন পত্র টি সংগ্রহ করিতে সক্ষম হইয়াছি, আপনার শিক্ষায় শিক্ষিত হইয়া, এখন যদি আজ্ঞা করিয়া আপনি আমার নিকট হইতে এই বার্তা টি আপনার যন্ত্রে প্রেরণ করিতে সক্ষম হই, তাহা হইলে আমি অত্যন্ত পরিতুষ্ট হইবো। পোস্টমাস্টার যত না বেশী আনন্দিত হইল, তাহার থেকেও অনেক বেশী বিস্মিত হইল। ইহা কি অস্ফুট প্রেমের বহিঃপ্রকাশ না কি তাহার উপস্থিতি চরম ভাবে উপেক্ষা!

পোষ্ট কহিলেন, “রতন, আমার জায়গায় যে লোকটি আসবেন তাঁকে বলে দিয়ে যাব, তিনি তোকে আমারই মতন যত্ন করবেন; আমি যাচ্ছি বলে তোকে কিছু ভাবতে হবে না। আগামিতে এস্থান মুদ্রালেনদেনের প্রতিষ্ঠান হইবে, তোর চাকুরিও পাকা হইয়া যাইবে, ভালো বেতন পাইবি ” এই কথাগুলি যে অত্যন্ত স্নেহগর্ভ এবং দয়ার্দ্র হৃদয় হইতে উত্থিত সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই, কিন্তু নারীহৃদয় কে বুঝিবে। রতন অনেকদিন প্রভুর অনেক তিরস্কার নীরবে সহ্য করিয়াছে কিন্তু এই নরম কথা সহিতে পারিল না।

একেবারে উচ্ছ্বসিত হৃদয়ে কাঁদিয়া উঠিয়া কহিল, “না না, তোমার কাউকে কিছু বলতে হবে না, আমি থাকতে চাই নে।”


পোস্টমাস্টার রতনের এরূপ ব্যবহার কখনো দেখেন নাই, তাই অবাক হইয়া রহিলেন।



ক্রমশ.....

একটি সম্পূর্ন উন্মাদীয় ভাবনার ফসল
****************************************
(নিজ দায়িত্বে পাঠ করিয়া মর্ম্নদ্ধার করিবেন, কারন ইহার বানান বিধিও উন্মাদীয়)

Friday, 16 May 2014

আধুনিক পোষ্টমাস্টার ~ ১

কবিপক্ষের পূন্যলগ্ন চলিতেছে, উন্মাদীয় সাহিত্যচর্চার প্রত্যক্ষ পক্ষাঘাতের জন্য কি মাননীয়/মাননীয়া গন প্রস্তুত??? সামান্য প্রহসনের আশ্রয়ে , আজ উন্মাদের পাল্লায় পড়িয়া, গুরুদেবের অঙ্কিত কিছু চরিত্র মন্দ হইল, ...
একটি সম্পূর্ন উন্মাদীয় ভাবনার ফসল


আধুনিক পোষ্ট মাষ্টার 



প্রথম কিস্তি

প্রথম কাজ আরম্ভ করিয়াই সিঙ্গুর গ্রামে পোস্টমাস্টারকে আসিতে হয়। গ্রামটি অতি সামান্য। কিছুকাল পূর্বে যদি টাটা দের বিতারিত না হইতে হইতো, তাহলে বলা যায় না, এখন আর এ গ্রাম অদৌ গ্রাম থাকিত কি না। নিকটে একটিই নতুন কৃষকমান্ডি গজাইয়াছে, তাই উন্নয়নের স্বার্থে রবিবাবুর কৃপায় ও ও উনার অনুপ্রেরনায়, বহু কষ্ট করিয়া এই পোস্টআপিস টি বন্ধের হাত থেকে রক্ষা করা গিয়াছে, সুতরাং কৃষক মান্ডির অভ্যন্তরেই আপাতত ঠিকানা।

আমাদের পোস্টমাস্টার কলিকাতার ছেলে। জলের মাছকে ডাঙায় তুলিলে যেরকম হয়, এই শহীদের পূন্যভুমি তথা বিশ্ববাঙলা গ্রামের মধ্যে আসিয়া পোস্টমাস্টারেরও সেই দশা উপস্থিত হইয়াছে। একখানি শিলাপ্রেথিত অর্ধসমাপ্ত কৃষকমান্ডির পলেস্তারা বিহীন ঘরের মধ্যে তাঁহার দপ্তর; অদূরে একটি “পার্টি অফিস” এবং তাহার চারি ধারে বিশেষ গোত্রের পুষ্পরাজি শোভিত নিশান পতপত করিয়া অহঙ্কারের প্রামানই দিতেছে। পিছনে অবশিষ্ট স্ফটিক নির্মিত সুরা পাত্রের ধ্বংস স্তুপ। পার্টি অফিসে সে সকল ক্ষুদ্র বৃহৎ, কুচো প্রভৃতি যে-সকল নেতৃবৃন্দ আছেন, তাহাদের ফুরসত প্রায় নাই এবং তাহারা ভদ্রলোকের সহিত মিশিবার উপযুক্তও মনে করেন না, কারন উনি এ অঞ্চলে ভোটাধিকার প্রদানের অধিকারী নন।

বিশেষত কলিকাতার ছেলে ভালো করিয়া মিশিতে জানে না, যেটুকু যোগাযোগ, কেবল মাত্র অন্তর্জালেই সীমাবদ্ধ, অথবা মস্তকশ্রবণ যন্ত্র কর্ণকুহরে লইয়া সংগীতের আস্বাদন। অপরিচিত স্থানে গেলে, হয় উদ্ধত নয় অপ্রতিভ হইয়া থাকে। এই কারণে স্থানীয় লোকের সহিত তাহার মেলামেশা হইয়া উঠে না। অথচ হাতে কাজ অধিক নাই। কখনো কখনো দুটো-একটা কবিতা লিখিতে চেষ্টা করেন, মুখপুস্তকে। এখানে অন্তর্জালের “দ্বিতীয় প্রজন্মের” গতি ও অত্যান্ত মন্থর। সমস্ত দিন মুখপুস্তকে প্রজ্ঞাপনের কম্পন এবং “ভিক্টোরিয়ার গোপন দেবীদের ” দেখিয়া জীবন বড়ো সুখে কাটিয়া যায়— কিন্তু অন্তর্যামী জানেন, যদি সানি লিওনের মতো কোনো উষ্ণবালিকা আসিয়া এক রাত্রের মধ্যে এই যাবতীর গোপনীয়তার সমস্ত লতাবিতানগুলা কাটিয়া চক্ষুতে রঙ্গিন কাজল পরাইয়া দেয় এবং “ও বেবি ডল ম্য সোনে দি” বলিয়া দ্বার রুদ্ধ করিয়া রাখে, তাহা হইলে এই আধমরা ভদ্রসন্তানটি পুনশ্চ নবজীবন লাভ করিতে পারে।

পোস্টমাস্টারের বেতন অতি সামান্য, পূর্বে কিছুদিন “শ্যামল নাগরিক স্বেচ্ছাসেবক” এর দ্বায়িত্ব পালন করিয়াছিলো। আজিকাল কেউ ই আর তেমন কাগজে কলমে চিঠিপত্র লেখালাখি করে না। তবুও ভবিষ্যতে আর্থনৈতিক লেনদেনের প্রতিষ্ঠান হইলে, বেতনের কিছু সুরাহা হইবে এই আশায় এই চাকুরিতে বহাল হইয়াছে।

মুষ্ঠিবার্তালাপ যন্ত্রের পূনর্জীবন, অন্তর্জালীয় মোড়ক, ধুম্রপান, দুর্গন্ধবিতারনকারক ইত্যাদি সহ, সপ্তাহয়ান্তে একবার বহুবিধ গৃহে  একা একা নৈশকালিন বিলাতী ছবি দেখার রোজগার টুকু হইলেই হইলো। দুপুরে নিজে রাঁধিয়া খাইতে হয়, সকালে ভূট্টার পরত ও রাত্রে ম্যাগি বানাইয়া খাইয়া থাকে। গ্রামের একটি পিতৃমাতৃহীন চপলা বালিকা তাহার কাজকর্ম করিয়া দেয়, আধুনিক কেতার বিলিতি গান শুনতে পাওয়ার লোভ আর, দ্বিপ্রহরে পোষ্ট মাস্টারের বাড়িতে স্টারজলসা বা জি-বাঙলা দেখিতে পাইবার সুযোগ, কোনরূপ পিছুটান ব্যাতিরেকে। মেয়েটির নাম রতন। বয়স উনিশ-কুড়ি।

বিবাহের বিশেষ সম্ভাবনা দেখা যায় না। সারাদিন কাজের ফাঁকে, অন্তত ছয় সাতটি পুরুষ মানুষের সহিত মুষ্ঠিবার্তালাপ যন্ত্রে সদা প্রেমালাপ করিতে থাকে।

সন্ধ্যার সময় যখন স্টারজলসা হইতে দিদি নাম্বার ওয়ান এর শীর্ষসঙ্গীত বাজিয়া উঠিত, পাখিকে দেখিবে বলিয়া গ্রামের সকল রমণীকুল, হেঁসেলের কর্ম দ্রুত গুছাইয়া লইতো , দূরে গ্রামের পার্টির দাদাদের দল “ডিজে-ব্যাঞ্জো” বাজাইয়া উচ্চৈঃস্বরে গান জুড়িয়া দিত— যখন ৫ ওয়াটের পিএল এর আধো অন্ধকার দাওয়ায় একলা বসিয়া কোন পূর্নযৌবনা রমনীকে, মুষ্ঠিবার্তালাপ যন্ত্রে তীব্র উষ্ণ বার্তালাপ শুনিলে কবিহৃদয়েও ঈষৎ হৃৎকম্প উপস্থিত হইত, তখন ঘরের কোণে একটি এন্ড্রোয়েড মোবাইলের স্ক্রিন জ্বালিয়া পোস্টমাস্টার ডাকিতেন 'রতন' ।

রতন দ্বারের আড়ালে বসিয়াই মুষ্ঠিবার্তালাপ যন্ত্রে প্রেমালাপ করিতে থাকিত কিন্তু এক ডাকেই ঘরে আসিত না- বলিত,
- “কী গা বাবু, কেন ডাকছ।”
পোস্টমাস্টার- তুই কী করছিস।
রতন। (দ্রুততার সাথে মুষ্ঠিবার্তালাপ যন্ত্র লুকাইতে লুকাইতে)—এখনই আপনার কফি টা বানাইতে যেতে হবে ___ হেঁশেলের—
পোস্টমাস্টার। তোর হেঁশেলের কাজ পরে হবে এখন— এক প্যাকেট বাদাম আর এক বোতল শীতল পানীয় আনিয়া দে তো।

অনতিবিলম্বে ঝোলা দোলাইয়া অতিরিক্ত একটি “কুরকুরের” থলি সহ রতনের প্রবেশ। হাত হইতে সকল বস্তু কটা লইয়া লইয়া পোস্টমাস্টার ফস্‌ করিয়া জিজ্ঞাসা করেন,
- “আচ্ছা রতন, তোর প্রেমের কথা কইতে ইচ্ছে করে না ? ”

- সে অনেক কথা; কতক মনে পড়ে, কতক মনে পড়ে না। পাড়ার ছেলেদের চেয়ে বেপাড়ার ছোকড়ারাই তাহাকে বেশি ভালোবাসিত, দুলে পাড়ার ষষ্টিকে অল্প অল্প মনে আছে। পরিশ্রম করিয়া যাহাকিছু রোজগার করিত সন্ধ্যাবেলায় আমার ঘরে আসিইয়া সকই ই দিয়া যাইতো, তাহারই মধ্যে দৈবাৎ দুটি-একটি সন্ধ্যা তাহার মনে পরিষ্কার ছবির মতো অঙ্কিত আছে। এই কথা হইতে হইতে ক্রমে রতন পোস্টমাস্টারের পায়ের কাছে মাটির উপর বসিয়া পড়িত। মনে পড়িত, তাহার একটি শিশুপ্রেম ছিল— বহু পূর্বেকার বর্ষার দিনে একদিন একটা ডোবার ধারে দুইজনে মিলিয়া গাছের ভাঙা ডালকে ছিপ করিয়া মিছামিছি মাছধরা খেলা করিয়াছিল, দু এক বার আরো অন্য কিছু প্রাপ্তবয়স্ক ক্রীড়া ও খেলিয়াছিলো— অনেক গুরুতর ঘটনার চেয়ে সেই কথাটাই তাহার মনে বেশি উদয় হইত।

এইরূপ কথাপ্রসঙ্গে মাঝে মাঝে বেশি রাত হইয়া যাইত, তখন আলস্যক্রমে পোস্টমাস্টার শুধু পানাহার করিয়াই সন্তুষ্ট থাকিত। রতন সকালের বাসী ব্যঞ্জন গুলা হিমায়ক যন্ত্রের অভ্যন্তরে ভরিয়া, নির্মেদ শরীর রক্ষার্তে সামান্য “লবন শর্করা” পান করিয়া, পুনরায় মুষ্ঠিবার্তালাপ যন্ত্রে মন নিবিষ্ট করিত। এভাবেই উভয়ের দিবারাত্রের নির্ঘন্ট চলিয়া যাইত।

.........ক্রমশ

****************************************
(নিজ দায়িত্বে পাঠ করিয়া মর্ম্নদ্ধার করিবেন, কারন ইহার বানান বিধিও উন্মাদীয়)
####################################################

Thursday, 8 May 2014

উন্মাদ নামা ~ ১২

যৌনতা কি কোন ট্যাবু বা নিষিদ্ধ কাজ? না তা তো মোটেই নয়।
বরং এ হল সভ্যতা ও বংশ রক্ষার একমাত্র উপায়, কিছু নিকৃষ্ট জীব ব্যাতিরেকে।
তাহলে সেচ্ছায়, কোন একান্ত মুহুর্তে, দুটো প্রেমাষ্পদ মানুষ, উপচে পরা সোহাগের বালতি, মন যেখানে বাঁধা পরে গেছে, সেখানে শরীর নিয়ে ছুৎমার্গ কেন?

মানুষ ছারা যদিও, প্রানীকুলে আর কারোর মধ্যে এই ঢাকঢাক গুড়্গুড় নেই। খাওয়া, সুসু বা পটির মতই এটা একটা দৈনন্দিন কর্ম। বা হাঁসি কান্না বা রাগের মতই একটা অনুভুতি, যেটার মানিসিক তৃপ্তি, শারিরিক স্খলনে।
যার সাথে সব কিছু ভাগ করে নেওয়া যায়, শুধু শরীরের বেলায় সতীত্ব!
এ জিনিস ভাবের ঘরে চুরি।
তাছারা, কেনা নাঙল জিরোতে দিতে, খুন্তি দিয়ে চাষ করার কোন মানে হয়?
তাই নারী-পুরুষের গভীর প্রেম কখনই গভীর হতে পারে না, চামরার স্পর্শ ছারা। মনের গভীরে পৌছানোর সাথে সাথে, সেটাকে স্থায়ীত্ব দেয়, শরীরের গভীর অংশে পোছানো বা পৌছতে দেবার মধ্যে। মানে, বিনা অস্ত্রপ্রচারে যতটা যায় আর কি..........
প্রেমের বিশ্বস্ততা বেড়ে কি যায় না, যখন এটা শুনি:- "এই সব কিছু, এ তো শুধুই তোমার জন্য.........." ইত্যাদি ইত্যাদি....