Friday, 16 May 2014

আধুনিক পোষ্টমাস্টার ~ ১

কবিপক্ষের পূন্যলগ্ন চলিতেছে, উন্মাদীয় সাহিত্যচর্চার প্রত্যক্ষ পক্ষাঘাতের জন্য কি মাননীয়/মাননীয়া গন প্রস্তুত??? সামান্য প্রহসনের আশ্রয়ে , আজ উন্মাদের পাল্লায় পড়িয়া, গুরুদেবের অঙ্কিত কিছু চরিত্র মন্দ হইল, ...
একটি সম্পূর্ন উন্মাদীয় ভাবনার ফসল


আধুনিক পোষ্ট মাষ্টার 



প্রথম কিস্তি

প্রথম কাজ আরম্ভ করিয়াই সিঙ্গুর গ্রামে পোস্টমাস্টারকে আসিতে হয়। গ্রামটি অতি সামান্য। কিছুকাল পূর্বে যদি টাটা দের বিতারিত না হইতে হইতো, তাহলে বলা যায় না, এখন আর এ গ্রাম অদৌ গ্রাম থাকিত কি না। নিকটে একটিই নতুন কৃষকমান্ডি গজাইয়াছে, তাই উন্নয়নের স্বার্থে রবিবাবুর কৃপায় ও ও উনার অনুপ্রেরনায়, বহু কষ্ট করিয়া এই পোস্টআপিস টি বন্ধের হাত থেকে রক্ষা করা গিয়াছে, সুতরাং কৃষক মান্ডির অভ্যন্তরেই আপাতত ঠিকানা।

আমাদের পোস্টমাস্টার কলিকাতার ছেলে। জলের মাছকে ডাঙায় তুলিলে যেরকম হয়, এই শহীদের পূন্যভুমি তথা বিশ্ববাঙলা গ্রামের মধ্যে আসিয়া পোস্টমাস্টারেরও সেই দশা উপস্থিত হইয়াছে। একখানি শিলাপ্রেথিত অর্ধসমাপ্ত কৃষকমান্ডির পলেস্তারা বিহীন ঘরের মধ্যে তাঁহার দপ্তর; অদূরে একটি “পার্টি অফিস” এবং তাহার চারি ধারে বিশেষ গোত্রের পুষ্পরাজি শোভিত নিশান পতপত করিয়া অহঙ্কারের প্রামানই দিতেছে। পিছনে অবশিষ্ট স্ফটিক নির্মিত সুরা পাত্রের ধ্বংস স্তুপ। পার্টি অফিসে সে সকল ক্ষুদ্র বৃহৎ, কুচো প্রভৃতি যে-সকল নেতৃবৃন্দ আছেন, তাহাদের ফুরসত প্রায় নাই এবং তাহারা ভদ্রলোকের সহিত মিশিবার উপযুক্তও মনে করেন না, কারন উনি এ অঞ্চলে ভোটাধিকার প্রদানের অধিকারী নন।

বিশেষত কলিকাতার ছেলে ভালো করিয়া মিশিতে জানে না, যেটুকু যোগাযোগ, কেবল মাত্র অন্তর্জালেই সীমাবদ্ধ, অথবা মস্তকশ্রবণ যন্ত্র কর্ণকুহরে লইয়া সংগীতের আস্বাদন। অপরিচিত স্থানে গেলে, হয় উদ্ধত নয় অপ্রতিভ হইয়া থাকে। এই কারণে স্থানীয় লোকের সহিত তাহার মেলামেশা হইয়া উঠে না। অথচ হাতে কাজ অধিক নাই। কখনো কখনো দুটো-একটা কবিতা লিখিতে চেষ্টা করেন, মুখপুস্তকে। এখানে অন্তর্জালের “দ্বিতীয় প্রজন্মের” গতি ও অত্যান্ত মন্থর। সমস্ত দিন মুখপুস্তকে প্রজ্ঞাপনের কম্পন এবং “ভিক্টোরিয়ার গোপন দেবীদের ” দেখিয়া জীবন বড়ো সুখে কাটিয়া যায়— কিন্তু অন্তর্যামী জানেন, যদি সানি লিওনের মতো কোনো উষ্ণবালিকা আসিয়া এক রাত্রের মধ্যে এই যাবতীর গোপনীয়তার সমস্ত লতাবিতানগুলা কাটিয়া চক্ষুতে রঙ্গিন কাজল পরাইয়া দেয় এবং “ও বেবি ডল ম্য সোনে দি” বলিয়া দ্বার রুদ্ধ করিয়া রাখে, তাহা হইলে এই আধমরা ভদ্রসন্তানটি পুনশ্চ নবজীবন লাভ করিতে পারে।

পোস্টমাস্টারের বেতন অতি সামান্য, পূর্বে কিছুদিন “শ্যামল নাগরিক স্বেচ্ছাসেবক” এর দ্বায়িত্ব পালন করিয়াছিলো। আজিকাল কেউ ই আর তেমন কাগজে কলমে চিঠিপত্র লেখালাখি করে না। তবুও ভবিষ্যতে আর্থনৈতিক লেনদেনের প্রতিষ্ঠান হইলে, বেতনের কিছু সুরাহা হইবে এই আশায় এই চাকুরিতে বহাল হইয়াছে।

মুষ্ঠিবার্তালাপ যন্ত্রের পূনর্জীবন, অন্তর্জালীয় মোড়ক, ধুম্রপান, দুর্গন্ধবিতারনকারক ইত্যাদি সহ, সপ্তাহয়ান্তে একবার বহুবিধ গৃহে  একা একা নৈশকালিন বিলাতী ছবি দেখার রোজগার টুকু হইলেই হইলো। দুপুরে নিজে রাঁধিয়া খাইতে হয়, সকালে ভূট্টার পরত ও রাত্রে ম্যাগি বানাইয়া খাইয়া থাকে। গ্রামের একটি পিতৃমাতৃহীন চপলা বালিকা তাহার কাজকর্ম করিয়া দেয়, আধুনিক কেতার বিলিতি গান শুনতে পাওয়ার লোভ আর, দ্বিপ্রহরে পোষ্ট মাস্টারের বাড়িতে স্টারজলসা বা জি-বাঙলা দেখিতে পাইবার সুযোগ, কোনরূপ পিছুটান ব্যাতিরেকে। মেয়েটির নাম রতন। বয়স উনিশ-কুড়ি।

বিবাহের বিশেষ সম্ভাবনা দেখা যায় না। সারাদিন কাজের ফাঁকে, অন্তত ছয় সাতটি পুরুষ মানুষের সহিত মুষ্ঠিবার্তালাপ যন্ত্রে সদা প্রেমালাপ করিতে থাকে।

সন্ধ্যার সময় যখন স্টারজলসা হইতে দিদি নাম্বার ওয়ান এর শীর্ষসঙ্গীত বাজিয়া উঠিত, পাখিকে দেখিবে বলিয়া গ্রামের সকল রমণীকুল, হেঁসেলের কর্ম দ্রুত গুছাইয়া লইতো , দূরে গ্রামের পার্টির দাদাদের দল “ডিজে-ব্যাঞ্জো” বাজাইয়া উচ্চৈঃস্বরে গান জুড়িয়া দিত— যখন ৫ ওয়াটের পিএল এর আধো অন্ধকার দাওয়ায় একলা বসিয়া কোন পূর্নযৌবনা রমনীকে, মুষ্ঠিবার্তালাপ যন্ত্রে তীব্র উষ্ণ বার্তালাপ শুনিলে কবিহৃদয়েও ঈষৎ হৃৎকম্প উপস্থিত হইত, তখন ঘরের কোণে একটি এন্ড্রোয়েড মোবাইলের স্ক্রিন জ্বালিয়া পোস্টমাস্টার ডাকিতেন 'রতন' ।

রতন দ্বারের আড়ালে বসিয়াই মুষ্ঠিবার্তালাপ যন্ত্রে প্রেমালাপ করিতে থাকিত কিন্তু এক ডাকেই ঘরে আসিত না- বলিত,
- “কী গা বাবু, কেন ডাকছ।”
পোস্টমাস্টার- তুই কী করছিস।
রতন। (দ্রুততার সাথে মুষ্ঠিবার্তালাপ যন্ত্র লুকাইতে লুকাইতে)—এখনই আপনার কফি টা বানাইতে যেতে হবে ___ হেঁশেলের—
পোস্টমাস্টার। তোর হেঁশেলের কাজ পরে হবে এখন— এক প্যাকেট বাদাম আর এক বোতল শীতল পানীয় আনিয়া দে তো।

অনতিবিলম্বে ঝোলা দোলাইয়া অতিরিক্ত একটি “কুরকুরের” থলি সহ রতনের প্রবেশ। হাত হইতে সকল বস্তু কটা লইয়া লইয়া পোস্টমাস্টার ফস্‌ করিয়া জিজ্ঞাসা করেন,
- “আচ্ছা রতন, তোর প্রেমের কথা কইতে ইচ্ছে করে না ? ”

- সে অনেক কথা; কতক মনে পড়ে, কতক মনে পড়ে না। পাড়ার ছেলেদের চেয়ে বেপাড়ার ছোকড়ারাই তাহাকে বেশি ভালোবাসিত, দুলে পাড়ার ষষ্টিকে অল্প অল্প মনে আছে। পরিশ্রম করিয়া যাহাকিছু রোজগার করিত সন্ধ্যাবেলায় আমার ঘরে আসিইয়া সকই ই দিয়া যাইতো, তাহারই মধ্যে দৈবাৎ দুটি-একটি সন্ধ্যা তাহার মনে পরিষ্কার ছবির মতো অঙ্কিত আছে। এই কথা হইতে হইতে ক্রমে রতন পোস্টমাস্টারের পায়ের কাছে মাটির উপর বসিয়া পড়িত। মনে পড়িত, তাহার একটি শিশুপ্রেম ছিল— বহু পূর্বেকার বর্ষার দিনে একদিন একটা ডোবার ধারে দুইজনে মিলিয়া গাছের ভাঙা ডালকে ছিপ করিয়া মিছামিছি মাছধরা খেলা করিয়াছিল, দু এক বার আরো অন্য কিছু প্রাপ্তবয়স্ক ক্রীড়া ও খেলিয়াছিলো— অনেক গুরুতর ঘটনার চেয়ে সেই কথাটাই তাহার মনে বেশি উদয় হইত।

এইরূপ কথাপ্রসঙ্গে মাঝে মাঝে বেশি রাত হইয়া যাইত, তখন আলস্যক্রমে পোস্টমাস্টার শুধু পানাহার করিয়াই সন্তুষ্ট থাকিত। রতন সকালের বাসী ব্যঞ্জন গুলা হিমায়ক যন্ত্রের অভ্যন্তরে ভরিয়া, নির্মেদ শরীর রক্ষার্তে সামান্য “লবন শর্করা” পান করিয়া, পুনরায় মুষ্ঠিবার্তালাপ যন্ত্রে মন নিবিষ্ট করিত। এভাবেই উভয়ের দিবারাত্রের নির্ঘন্ট চলিয়া যাইত।

.........ক্রমশ

****************************************
(নিজ দায়িত্বে পাঠ করিয়া মর্ম্নদ্ধার করিবেন, কারন ইহার বানান বিধিও উন্মাদীয়)
####################################################

No comments:

Post a Comment