Sunday, 12 October 2014

নামান্তর


উন্মাদীয় রবিবাসর
**************


একটি সম্পূর্ন উন্মাদীয় ভাবনার ফসল


নামের আমি নামের তুমি নাম দিয়ে যায় চেনা, শিশুকালেই আমরা আমাদের গুরুজন দের নিকট হইতে আমরা এই নাম নামক বস্তুটি পরিচয় হিসাবে সম্পূর্ন বিনামুল্যে পাইয়া থাকি, এটাই সামাজিক নিয়ম, এবং এই নামের মাহত্বেই, এই কোটি কোটি মানুষের ভীরে, একে অন্যের থেকে নিজেদের পৃথক করিয়া থাকে। কিন্তু ইহাতেই এই কাহিনির পরিসমাপ্তি ঘটে না। নিকটাত্মীয় গন তাহাদের নিজ নিজ পছন্দের নামেই ডাকিতে থাকেন। পিতামহ বা তদসম্পর্কীয়, খুড়োমহাশয় বা তদসম্পর্কীয়, মাতুল গৃহে নানাপ্রকারের চেনা অচেনা, তাহাদের নিজ নিজ পছন্দের প্রভুত নামে আমরা নামাঙ্কিত হইয়া থাকি। 

নানা সকল নামের অভ্যন্তরে “ভালো নাম” বা “বিদ্যালয়ের নাম” বলিয়া একটি নাম থাকে, যাহার দ্বারাই সমগ্র বাকি জীবন, পৃথিবীর নিকট সেই ব্যাক্তিটি পরিচিত হইয়া থাকেন। তার শৃষ্ট কর্মের মাধম্যে নির্ধারিত হয়, সেটি সুনাম না বদনাম, কোন হিসাবে পরিগনিত হইবে। মানব তার জীবন ধারার গুণে ভিন্ন ভিন্ন এবং অনন্য। প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব সত্তা বর্তমান, বিদ্বান হোক, বা নৃপতি, বা সনির্বন্ধ প্রার্থী, নিতান্তই  সে তষ্কর বৃত্তিতে যুক্ত থাকিলেও তাহার মাঝে কোন না কোন মৌলিকতা থাকবেই। ইহাই পরমেশ্বরের সৃষ্টির মাধুর্য।

কুকার্যে নিযুক্ত ব্যাক্তিরা কখনো কখনো পিতৃদত্ত নামের পরিবর্তন করিয়া থাকেন। খুব সীমিত সংখ্যক মানব শুধু মাত্র “বিশেষ” নাম পছন্দ হইয়াছে বলিয়া ও পিতৃদত্ত নামের পরিবর্তন ঘটাইয়া থাকেন, চলচিত্র তথা অভিনয় শিল্পের সাথে যুক্ত কেহ, কেহ জ্যোতিষ এর পাল্লায় পড়িয়া ভবিষ্যত সুরক্ষার তাগিদে, কোনো অনাথ নিজস্ব পরিচয় ফিরত পাইয়া, কেহ বিবাহসুত্রে, কেহ আবার নিজ অস্তিত্ব রক্ষার্তে। উন্মাদীয় মতে কোন ব্যাক্তিই নিজ নাম হঠাৎ পরিবর্তন করিয়া মানসিক সুখ পাইতে পারেন না, নিতান্ত নিরুপায় হইয়াই উহা করিয়া থাকেন, যদিও ইহার মধ্যে ব্যাতিক্রম অবশ্যই রহিবে।

মহান ব্যাক্তিরা অবশ্য সমাজ বা রাষ্ট্র হইতে বিশেষ সম্মানিত নাম লভিয়া থাকেন। পরবর্তী সমগ্র জীবন, এমনকি মৃত্যুর পরও তাঁরা সেই নামেই অমর হয়ে যান। অবশ্য অধিকাংশ পিতাশ্রীর আপন কিশোর সন্তানের উদ্দেশ্যে, মুখনিঃসৃত সুললিত বানী সহযোগে প্রায় সারাটা জীবনই একবিশেষ ধরনের সার্বজনীন নামেই অবিহিত হয়ে থাকেন। যথা বরাহনন্দন, গাঁড়ল, ইত্যাদি ইত্যাদি।  

আর এক বিশেষ ধরনের ব্যাক্তি গন, স্বেচ্ছায় নাম পরিবর্তন করিয়া থাকেন, যাহারা মুলত লেখালেখির সহিত যুক্ত। এখানে উল্লেখ্য যে, আমি কিন্তু শুধু মাত্র বিখ্যাত লেখক গনদের উল্ল্যেখ করিতেছি না। সকল প্রকার লেখক দের কথাই বলিতে চাইছি, যাহারা প্রতিষ্ঠা পাইয়াছেন, তাহারা তো প্রাতঃস্বরনীয়। বাকি যাহারা ইহাকে পার্শ্ব পেশা হিসাবে লইয়াছেন, বা যাঁহারা ব্যার্থ হইয়াছেন, যাঁহারা নানান প্রতিবন্ধকতার মাঝেও নতুন শিকড় অন্বেশনের তরে অহরহ প্রচেষ্টা চালাইতেছেন, তাহাদের নাম সাধারন মানুষ না জানিলেও, নাম পরিবর্তনের সাধু প্রচেষ্টা তাহারাও করেছিলেন।

তবে সে যাহাই হউক, আমার আজিকের মুল বিষয় হইলো এই “ছদ্মনাম” যাহাকে ইংরেজিতে “পেন নেম” নামে অবিহিত করা হইয়া থাকে।

কেহ বা আমাদিগের ন্যায়, বাস্তবে যাহাদের কোন অস্তিত্বই নেই, যাহারা মূলত অন্তর্জাল বিপ্লবী, শখের লেখক। ইন্টারনেট না এলে যাদের নাম নিজেদের কাছেই অজ্ঞাত হহিয়া যেত।শখের লেখা লিখতে এসে দুইচারিজনে সেই লেখনি নামের বমনিচ্ছার অন্তিমসংস্কার সম্পন্ন করিবার তরে, মদীয় লেখনীর পাঠোদ্ধার করিয়া ধন্য করেন। নামের মায়ায় আমরা লেখা ছারতে অপারগ, আবার আমাদেরকৃত লেখনি, প্রথম দিনের শ্মশানযাত্রী হয়, কারন যে মাত্র দু এক জন কষ্টপাঠ করেন, তাহারাও যে দ্বিতীয় আরেকটিবার ছুঁয়ে দেখেননা। 

আমরা কি নীললোহিত, কালকূট, বনফুল, যাযাবর, মৌমাছি প্রমুখ নামগুলো সম্বন্ধে কম কিছু জ্ঞাত আছি!! সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ বসু, বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায়, বিনয় কৃষ্ণ মজুমদার, বিমল ঘোষ নাম গুলো কি অযোগ্য!! সমাজে অচল!! তাহারা কি খুনে আসামি ছিলেন!! তাহলে তারা কেন ছদ্ম নামের আড়াল গ্রহন করিয়াছিলেন।

শুধু মাত্র সাহিত্যের মাধুর্যের টানে।

এই ছদ্ম নামের কারন বিভিন্ন বিভিন্ন হইতেই পারে। উন্মাদীয় মতানুসারে তিন ধরনেরঃ-

১) ভিন্ন ভিন্ন পেশার ব্যাক্তিত্ব, সাহিত্যের জগতে পদার্পন করিলে, এই দুই টি স্বত্তার ভিতর , আসল পিতৃদত্ত পরিচয় ও পেশা টি কে, এবং লেখক মনন টি কে স্বতন্ত্র ভাবে রক্ষা করিবার প্রয়োজনের নিমিত্তে নামের পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী হয়। সেই ব্যাক্তি নিজ পেশা ক্ষেত্রে সুখ্যাতি বা কুখ্যাতি (অল্প, বা বিস্তর যাহাই হউক না কেন) নিশ্চই লভিয়াছেন যাহা তার পিতৃদত্ত স্বনামে রচনা সৃষ্টিতে অন্তরায় হইতে পারে সুতরাং এই ভাবনা থেকেও অনেক ছদ্মনামের সৃষ্টি হইয়া থাকে। 

স্বাধীন রচনার কোন নির্দিষ্ট ধারা হয় না। জীবন ধারার সুক্ষ সুক্ষ অনুভুতি গুলো, সুন্দর ও নিপূন ভাবে তাদের লেখনিতে ব্যাবহারকরার দরুন কেহ কেহ নির্দিষ্ট ধারার রচনা লিখিয়া খ্যাতি লাভ করিয়া যান। এখন সেই সমস্ত রচনা,  কাল্পনিক, ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, যুক্তিবাদি, পৌরাণিক, ক্রীড়া বিষয়ক, সমকালীন ইত্যাদি নানাধরনের প্রজাতির হইতেই পারে। 

একটি নির্দিষ্ট রচনা সকলেই যে তুষ্ট হইবেই তাহার কোন নিশ্চয়তা নাই, সমালোচনামূলক হইলে, বিরুদ্ধ মতের প্রকাশ থাকিলে, এবং তাহা হইতে কেহ আঘাত পাইলে, সেই ব্যাক্তি বা সম্প্রদায় প্রতিহিংসা পরায়ন হইয়া ব্যাক্তি জীবনের ক্ষতিসাধন করিতে পারে।অনেক ক্ষেত্রেই অত্যচারি শাসকের ভয়ে এমনটা হামেশাই পরিলক্ষিত হয়। সেই ভীতি ও রোষানল, ছদ্মনাম গ্রহনের ক্ষেত্রে অনেক সময় কারক হইয়া থাকে। আমা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রম্যরচনার লেখকেদিগের মধ্যে, যারা বেশ ভালই পরিচিতি লভিয়াছেন ইতমধ্যে, স্বজ্ঞানে ছদ্মনামের মায়াজাল ব্যাবহার করিয়া থাকেন। পরিচিত বেশ কয়েকজন ব্যাক্তি, আপন স্ত্রী পুত্র, নিজ সমাজের কাছে শুধুমাত্র লজ্জা গোপনের উদ্দেশ্যেই এই পদ্ধতির অবলম্বন। খুজিলে দেখা যাইবে যিনি হয়ত পাঠক মহলে " রমন রায়" নামে ভীষন ভাবে জনপ্রিয় মুচমুচে রচনার লেখক, দেখা যাইবে তাহার আসল নাম কানাইলাল পাকড়াশি, ইত্যাদি।

২) স্বনাম ধন্য লেখকেরা তাহাদের ভিন্ন ভিন্ন  ধারার রচনার মধ্যে স্বাতন্ত্রতা আনিবার জন্য , অথবা কখনো কখনো লেখনির গুন পরখ করিবার তরে ছন্মনাম ব্যাবহার করিয়া থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে জনপ্রিয় কবি বা সাহিত্যিকের নামে প্রকাশিত, কোন সাধারন মানের রচনাও সমাদর লাভ করিয়া যায়, লেখকের পূর্বপরিচয়ের সুবাদে। তাই সেই প্রতিষ্ঠিত ও আত্মবিশ্বাসী কবি বা লেখকে, নিজের যোগ্যোতা যাচাই করিবার এক মস্ত বড় সুযোগ করিয়া দেয় এই ছদ্মনামের আড়াল। অনেক ক্ষেত্রে বহু প্রকাশক সংস্থাও ভিন্ন স্বাদ সৃষ্টির জন্য লেখককে ছদ্ম নাম ব্যাবহারে উদ্দীপিত করিয়া থাকেন।অনেক বৃহৎ আন্তর্কাজতিক কোম্পানি যেমন “ব্রান্ড” এর রচনা করিয়া থাকেন, স্বনামধন্যরাও সেই সৃষ্টিশীলতার মধ্যে নিজেকে ঢলিয়া দেন।

৩) কখনো কখনো কোনো লেখক একটি নির্দিষ্ট ঘড়ানার লেখনির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকিয়া যান। অন্য কিছু ভাবনার লেখনি উদ্ভাবন করিলেই, পাঠক কুল হয়তো তাহাকে নিরাশ করিইয়া দেন। বা পূর্বের কোন নেতিবাচক লেখনীর দরুন সমাজে ঘৃণিত হইয়াছেন, ইত্যাদি। সেক্ষেত্রে এই ছদ্মনামের আড়াল, তাহাকে নতুন করিয়া, উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয়ে, পাঠক মহলে পরিচিত লভিতে  সাহায্য করিয়া থাকে। উদাহরন স্বরুপ উল্লেখ করা যাইতেই পারে যে, এরিক আর্থার ব্লেয়ার বলিলে অধিকাংশ জনগনই ভাবিবেই, ইহা নিশ্চই আন্দামানের পোর্টব্লেয়ার এর নিকটবর্তী কোন স্থান হইবে, নতুবা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের কোন আত্মীয়। কিন্তু মজার ঘটনা হইলো, বিখ্যাত লেখক জর্জ অরওয়েল আর এরিক আর্থার ব্লেয়ার একই ব্যাক্তি। যিনি পশুখামার নামক পৃথিবী বিখ্যাত নাটকের রচয়িতা। জর্জ অরওয়েল নামটাই হল ছদ্মনাম।

আমাদের বর্তমান কাল হইলো তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যাবস্থার স্বর্নযুগ, আজকাল ছাপা পুস্তকের ব্যাবহার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যাতিরেকে, খুবই নগন্য। তথ্য আদানপ্রদান হইতে ব্যাবসায়িক ও দৈনন্দিন কর্ম সকলই “কম্পিউটার আর সফটওয়্যার” তথা ইন্টারনেট এর সুবিশাল দুনিয়ায় আটকা পড়িয়াছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যামও উদ্ভূত হইয়াছে, ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদির ন্যায়। এই সকল ক্ষেত্রে একজন ব্যাক্তি বিভিন্ন নামে (স্বনামে সহ) “একাউন্ট খুলিয়া থাকেন।

এক্ষেত্রেও সেই নানা প্রকারের কারন।কিন্তু তাহার এতো বিশাল ব্যাপ্তি, যে, আমার মত উন্মাদের পক্ষে সেই সকল কারন লিপিবদ্ধ করা, একান্তই অসাধ্য। তথাপি উপরোল্লেখিত ছদ্মনাম গ্রহনের সকল কারন গুলি, এই ক্ষেত্রেও যে সমান ভাবে প্রযোজ্য, তাহা বলাই বাহুল্য।

উন্মাদীয় মতে “ নকল আদরা বা Fake Profile” বলিয়া কিছুই আসলে হয় না। কোন না কোন ব্যাক্তি এই একাউণ্টটিকে পরিচালনা করিতেছে, তাহার উদ্দেশ্য সাধু অসাধূ যাহাই হউক না কেন। ফেক বলিয়া যদি কিছু হইয়া থাকিয়া থাকে, তাহা হইলো তাহার উদ্দেশ্য, সেই ব্যাক্তির মানসিকতা। এই বিষয়ে গবেষনা তথা বিতর্কের প্রচুর অবকাশ লুকাইয়া আছে। আবার কোন এক নিষ্কর্মা দিবসে, এই বিষয়ের উপর। উন্মাদীয় ভাবনা প্রসুত আলোচনার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা করা করা যাইবে।

সর্বশেষে বলি, উন্মাদ হার্মাদ নামটিও আমার একান্ত পছন্দের একটি নাম, যাহা কিনা নিজে নিজেই প্রদত্ত। ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যরো কে দেখে অনুপ্রানিত হইয়া গ্রহন করা নাম, অনেকের নানা কৌতুহল, ঘৃনা, ভালোলাগা, ভালোবাসা, হাসি, ঠাট্টা, প্রেম, অভিমান, পুর্বরাগ, কলহ, অবিশ্রান্ত গালিবর্ষন, আমিষ নিরামিষ নানা প্রকারের পদের মধ্য দিয়ে দুই বর্ষ অতিক্রান্ত করিলাম। সকলের আশির্বাদ, প্রশ্রয়, আর ভালবাসার মেঘচ্ছায়ায় সমালোচোনার কেদারাতে আগামীর অন্তর্জালীয় জীবন উত্তরন করিবার প্রতিশ্রুতি দিলাম।

No comments:

Post a Comment