উন্মাদীয় রবিবাসর
*************
^^^^^^^^^^^^^^
উন্মাদীয় বানানবিধিতে দুষ্ট
*************
অ-সুখ ৯
এ এক অতি বিষম বস্তু। একটি অসম্পূর্ন, অবাস্তব, এবং অস্পষ্ট একটা জৈবিক
অনুভুতি। সুখের সংজ্ঞা ও তাই সুখের মতই অধরা। কখন যে কাকে কোন রুপে ধরা
দেবে, তার আর কোন নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই। সুখ বস্তুটি শান্তির পরিমাপ অনেক
ক্ষেত্রেই নির্ধারন করে। তবে সকল ক্ষেত্রে নয়।
আমরা ভাবি সেটা বোধ
হয় হৃদয় থেকে চালিত হয়, বা উহাতে উপলব্ধ হয়। কিন্তু সুখ আসলে মস্তিষ্কের
একটা অনুভুতি।বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক রোজনামচা তে উল্লেখ পাওয়া যায় যে,
এন্ডোরফিন্স নামে এক ধরনের রাসায়নিক যৌগের প্রত্যক্ষ প্রভাবের ফলে,
মস্তিষ্কের স্নায়বিক অবস্থার যে পরিবর্তন, যা কি না আমাদের, মানে জীবের
মনের বেদনা কে প্রতিস্থাপিত করে, সেই সুক্ষ কার্যকালাপ কে ই সুখ বলে থাকি।
সুখের নানা, প্রকার থাকে। জড় সুখ আর জ্যান্তব সুখ। যার মধ্যেও নানা ভাগ।
এবং প্রতি আলাদা জীবের জন্য তা আলাদা আলাদা সংজ্ঞা বহন করে। যাদের মধ্যে
ইন্দ্রিয় সুখ, অনুভুতি সুখ, অলীক সুখ অন্যতম। সুখের কোন নির্দিষ্ট চিত্র হয়
না। একই সুখ সময়ের সাথে বদলাতে থাকে, কখনো কখনো তা দুঃখেও পর্যবাসিত হয়।
ছোটবেলায় খেলার মাঠে অকারনে ছোটাছুটির সুখ অনন্য। যেটা বড় বয়সে খোঁজা
অর্থহীন। আবার ছোট বয়সের পরিজনদের শাসনের নিরন্তন দুঃখ, মধ্য বয়সে হটাৎ মনে
পরলে যে, এ কি পরিমান সুখের সঞ্চার ঘটায়, তা বলাই বাহুল্য।
আসলে
সকলেই সুখী হতে চাই। নিজের মতন করে সুখের চিত্রপট আঁকতে চাই। কেউ ভোগ করে
সুখ মেটায়, কেও বা ত্যাগে। ওমর খৈয়ামের একটা বানী উল্লেখ করা যায়- “ আমি আজ
সুখী, আমি আজ বেঁচে আছি”। এখানে বেঁচে থাকার জন্যই সুখী হওয়া যায়, আবার
সুখী থাকার জন্যই বাঁচা যায়। আবার দলাই লামার মতানুসারে- “ সুখ আমরা কেও ই
তৈরি করতে পারি না, ইহা আমাদের কর্মের দ্বারা আমরা অর্জন করি”। এখন এটা
নিয়েও বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু আমরা সুখ অর্জন করতেই পারি। যদি আমি বেশ
কিছু ভাল রোজগার করি, একটা শীততাপনিয়ন্ত্রন যন্ত্র ক্রয় করার ও তাঁকে আমি
প্রলম্বিত করার ক্ষমতা রাখি, তাহলে আমরা এই দাবদাহ গ্রীষ্মেও শীতলতার সুখ
পেতে পারি, এক্ষনে মন যদি অশান্ত থাকে তাহা হলে নিদ্রা সুখ থেকে বঞ্চিত
থাকতেই হবে। আর মনে যদি কোন কারনে চরম প্রশান্তি লাভ করি, তাহা হইলে শীতলতা
ব্যাতিতই নিদ্রাসুখ উপোভোগ করিতে পারি।
রাম বাবুর প্রচুর কিছু আছে,
সুখের ভান্ডার উপচে পরছে, কিন্তু পড়শি শ্যাম বাবুর আবার যদি একটু বেশী
সুখের কথা রাম বাবুর কানে পৌছায়, রাম বাবু অ-সুখী হয়ে পরেন। এ এক আজব
মনস্তত্ব। এবং ঈর্শা সুখ। আসল কথা টা হলো, চমক হীন অনারম্বর জীবনে আমরা সকল
সমই ই সুখের অন্বেষন করে চলেছি।
আমি নিজের টা দিয়ে বলতে পারি,
একজন মানুষ, সে মাঝ সমুদ্রে(সংসার) বিভ্রান্ত ভাবে ভাষতে ভাষতে তার মননের
সঠিক পরিমাপ যোগ্য সাথী না খুঁজে পেয়ে হার্মাদ (জলে থাকতে থাকতে জলদস্যু)
হয়ে উঠেছে, আর ধীরে ধীরে সেখান থেকে উন্মাদ। এবং এই উন্মাদনা টা আসার পর
পেলাম এক আশ্চর্য সুখ। নিজের অক্ষমতা গুলোকে ও যেন অনিন্দসুন্দর দেখতে
পেলাম। চারপাস টা টুক করে কেমন রঙিন হয়ে উঠলো। নিজেকে নতুন করে জন্ম দেবার
সুখ, নতুন ভাবনা ভাবার সুখ, লুকিয়ে থাকার সুখ, আসল আমি-র না বলা কথা গুলো
কে নির্দিধায় বলতে পারার সুখ। যার অস্বিত্ব কেবল মাত্র আন্তর্জালীয় হলেও এ
এক অবর্ননীয় বাস্তব সুখানুভুতি।আমার অতি পরিচিত এক দম্পতি আছেন, যাদের সুখ
আমাদের মতন কতক গুলো দের কে নিয়েই। আর কেউ থাকেন যারা আমাদের অস্বিকার করেই
সুখে আছেন।
সুখের খোঁজ নিরন্তর চলাচ্ছে মানুষ। আর এই দ্রুত
পরিবর্তন শীল দুনিয়ায়, সুখের ঠিকানা ও ক্রমাগত বদলে যাচ্ছে। সকল সময় সুখের
পিছনে লেগে থাকা টা ও আসলে এক প্রকার অসুখ। দীর্ঘমেয়াদী সুখ কে করায়ত্ত
করতে হলে স্বল্পকালীন সুখ কে ত্যাগ করতে হয়, যেটা তাৎক্ষনিক ক্ষেত্রে মোটেও
সুখকর নয়।
কিন্তু ঘটনা হচ্ছে সুখ কে কি কখনো পরিমাপ করা যায়?? একটা সুখ পেয়ে গেলে , আমরা কি আরেকটা সুখের জন্য অসুখে পড়ে যায় না??
সুখের উল্লাস ত জীবনের নানা ক্ষেত্রে প্রদর্শিত হয়, অন্ধকারের যৌনতা তে
একাএকা সুখী হওয়া, বন্ধু দের সাথে পার্টি করে সুখী হওয়া, সুস্বাদু খাবারের
প্রতি, লোভের পূর্তি সুখ, সন্তান সুখ, নামের সুখ, নাম লূকানোর সুখ, বদনামের
সুখ, অর্থ সুখ, অনর্থ সুখ, পাওয়ার সুখ, চাওয়ার সুখ, কিন্তু সবচেয়ে বড় সুখ
ত্যাগে। কারন সেখানেই প্রকৃত ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে। আর ভালবাসার সুখ হলো
অনুভুতিতে। আবার এই ভালবাসা যখন ঘৃনায় পর্যবাসিত হয়, সেখানে ঘৃনা সুখ। সেই
সুখের উদযাপন হয়েগেলেই অনুশোচনা সুখ হাজির হয়। তার পরেই ক্ষমা সুখ। তাতে
চাওয়া বা দেওয়া, দুটোই সমান সুখের।
উষ্ণতার সুখ, শীতলতা তে পৌছালে তবেই, তা পূর্ন সুখের শিখরে পৌছে দেয়।
কেউ আছেন অন্যকে অত্যাচার করে সুখি হয়, কেও বা ধর্ষন করে, যেটা শারীরিক বা
মানসিক উভয় ই হতে পারে। কেও মিথ্যা বলে সুখ পায়। কেও সত্য বলে। কেও সত্য
গোপন করে, বা কেউ অহেতুক কথার ফানুষ উড়িয়ে। কেও নিজ সুখ ভাগ করে সুখের
পাল্লা ভারী করে, কেও অন্যের দুঃখ বুকে নিয়ে সুখের রাজ্যে বিরাজ করে। কেউ
বিকৃত সুখ লাভ করে জবরদখল করে, কেও শুধু মাত্র একটা মনের মাধুরি কে সম্বল
করেই সুখের খোঁজ চালিয়ে যায়।
ছোট্টো বেলাকার অবুঝ সুখ, মাঝ বয়েসের
খরিদ করা সুখের থেকেও অনন্য। একটা সুন্দর ফুল, বা একপাল হরিন, একটি
নিষ্পাপ শিশু, একটি আধ খাওয়া মেঘেঢাকা চাঁদ, মনের মধ্যে অপার মিষ্টি সুখের
সৃষ্টি করে। আবার বাঞ্জি জাম্পিং, প্যারাগ্লাইডিং, ট্রেকিং, বা সিংহের
দর্শন, বা স্কুবা ডাইভিং নিদেন পক্ষে ভৌতিক কাহিনী, এরা এক ভয়ঙ্কর সুখের
আবেশ সৃষ্টি করে।
আসলে আমরা যা কিছু দেখি, সেটা চর্মচুক্ষু বা মানস
চক্ষু যেটাই হোক না কেন। আমরা সেটা পাওয়ার চেষ্টা করি। সেটা কাছে পাওয়া
থেকে শুরু করে, দেখতে পাওয়া, যে কোন কিছুই ‘পাওয়া’ হতে পারে। এবার মস্তিষ্ক
যখন বুঝতে পারে যে, সে যেটা চাইছে- , সেটা সে লাভ করতে পেরেছে বা তার অতি
নিকটে পৌঁছেছে তখন ই সমগ্র শরীর জুরে একটা স্নায়বিক শৈথিল্য দেখা যায়,
যেটার আবেশ ১ সেকেন্ড থেকে ১ ঘন্টা-১দিন -১ বছর বা একটা গোটা জীবন ধরেও
বহমান থাকে। আমাদের সন্তুষ্টির মাত্রা, যখন পূর্নতার দিকে ধাবিত হয়, তখন
অন্তরাত্মা তৃপ্তি বলে এক ধরনের অবস্থার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়ে সুখের
রাজ্যের দিকে চালিত হয়।
নিজের একাকীত্বের অসুখ, বিনামুল্যে অন্যকে,
জ্ঞান দানের মাধ্যমে প্রানে সুখের পরশ লাভ করে। কেউ বা আবার অন্যের থেকে
জ্ঞান নিয়ে সুখ লাভ করে। সাধারন ব্যাক্তি জীবনে যখন মনে হয় “আমার ত সকল
কিছুই আছে, কি ই বা আমার প্রয়োজন”, এই আপাত নিরীহ প্রশ্নের মধ্যেই অসুখের
বীজ লুকিয়ে থাকে। আর ওই প্রচুর সুখের ‘কি’ খুজতে খুজতেই অসুখী হয়ে উঠা।
প্রত্যেক জীবের ই স্বতন্ত্র ও মৌলিক চাহিদা থেকে থাকে। কিছু পুর্ন হয় বাকি
টা অধরায় থেকে যায়। আর এই অধরা মাধুরী কে ধরতে গিয়েই আমরা যে সুখগুলো
পেয়েছি, সেগুলো ভুলে যায়। মনস্তাত্বিক গবেষনা অনুযায়ি, “জীবন সন্তুষ্টি’ এর
মাত্রা কে ই সুখের সুচক হিসাবে উপস্থাপন করা হয়।
উন্মাদীয়
মতানুসারে সুখ হচ্ছে, আপনার ‘এই মুহুর্তের’ চিন্তা ভাবনারা, এখন আমি কি
ভাবছি, সেটাই সুখের মূল প্রতিপাদ্য। এরাই মানে এই “মুহুর্তরা’ ই আপনাকে
সুখী করে তোলে আবার সুখ খোয়ানোর জন্য ও এরাই দায়ি। এবং এগুলো খুবই
আপেক্ষিক। যখন কোন সুখ নিজের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না তখন , সেটা আমরা
আপনজনের মধ্যে খোঁজার চেষ্টা করি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যথাযত পরিশ্রম না করেই
সহজলভ্য সুখের আশায় পরশ্রীকাতর হয়ে প্রাপ্ত সুখের জলাঞ্জলি দিয়ে দিই।
সাময়িক বিভ্রম ই সুখের পথের বড় কাঁটা। খ্যাতি, পরিস্থিতি ও বাস্তবতা সকলের
সম্মিলিত সহাবস্থান ই প্রকৃত সুখের চাবিকাঠি।
সন্তুষ্টি, আনন্দ,
হাসি, তৃপ্তি, সাফল্য, সমৃদ্ধি, সম্মান, স্বীকৃতি, ভালবাসা, যত্ন -এগুলোই
সুখের অবয়ব। প্রজাপতি রঙীন ডানা, প্রেমিকার দুষ্টু হাসি, মায়াভরা চোখ,
সন্তানের সান্নিধ্য, পরিজন দের শাসন, অন্যের চোখের বসন, ভোর রাতের রঙীন
স্বপ্ন, চায়ের কাপে উষ্ণ চুমুক, গ্রীষ্মের শ্রান্ত দুপুরে এক ঢোক শীতল জল,
কর্মব্যস্ত দিনের শেষে মননের গান, রিমঝিম বৃস্টির শব্দ, ফাঁকা ছাতের উপর
নিষ্পলকে রাত্রের আকাশ দেখা, তপ্ত সন্ধ্যায় দক্ষিণা বাতাসের আলতো ছোঁয়া,
মুঠো ফোনের সেই নোটিফিকেশনের টুং টাং, উৎসব মুখর রাত্রীর আলোর বন্যা, গাঢ
অন্ধকারের লেপটে থাকা, নিস্তব্ধপ্তার সুর, অপেক্ষার অকস্মাৎ অবসান, নিস্পলক
দৃস্টি, গাঢ লিপস্টকের স্বাদ, প্রেমিকের লোমশ বুকের ঘামের দুর্গন্ধ, একলা
নিজের সাথে পালিয়ে যাওয়া, কান্না লুকানো, অভিনয়ের দেঁতো হাঁসি, লুকিয়ে
অভিসার, ............ এগুলোই তো সুখ। আসলে কি জানেন, আমরা সুখের ঘেরাটোপের
মাঝেই বসবাস করি, শুধু গায়ে মেখে নিতে হয় পরিমান মত, আপন মনের মাধুরী
মিশিয়ে তাকে লালন করলেই সুখি থাকা যায়।
বেশির ভাগ মানুষ ই পৃথিবী তে
আছেন, যারা সারা জীবন ভর উন্মাদনার নাগাল পান না, আর এক আমি, যার উন্মাদনা
বা তার হ্যাংওভার মলেও যায় না। এ ও এক অব্যাক্ত বিচিত্র সুখ।
সবাই সুখে থাকুন, সুখে রাখুন।
^^^^^^^^^^^^^^
উন্মাদীয় বানানবিধিতে দুষ্ট