Sunday, 30 August 2015

দুই দুগুনে চার


*****উন্মাদীয় রবিবাসর*****

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
দুই দুগুনে চার
.........................
“আতা গাছে তোতা পাখী , ডালিম গাছে মৌ।
হীরে দাদার মড়মড়ে থান, ঠাকুরদাদার বউ”।

আর সে সুখ নাই কত্তা , আর সে সুখ নাই। আমাদের শিশুকালীন ছড়া গুলো কত প্রাসঙ্গিক ছিলো। কি সুন্দর লাগে এখনো এ গুলো শুনলে, কিন্ত আজকাল কেও আর পড়ে না এগুলো সাধারনত। হ্যা, কিছু গোমুখ্যের দল তো চিরদিনই থাকবে, তারাই পড়ে। তবে একটা কথা কি আমরা তো প্রগতিশীল, তাই সময়ের সাথে সাথে বর্তমান প্রজন্মের কাছে এই সকল ছড়ার গ্রহনযোগ্যতা হারিয়েছে। তারই একটু উন্মাদীয় ধারায় বিষ- Lesson।

এর দুটো কারন হতে পারে, একঃ- বাজারে নতুন নতুন ছড়া এসেছে, এখন তো আবার সারা পৃথিবী আমার ড্রয়ংরুম টাইপ। তাই বাপ মায়েদের কলার টিউন “খেলিছো এ বিশ্ব লয়ে...” গোছের, সেখানে ছেলেকে পাক্কা খেলোয়ার বানাতে, তাকে সেই আদ্দিকালের রদ্দিমার্কা ছড়া না পড়িয়ে “চলো নতুন কিছু করি” গোছের ভাবনার পথিক, তবে বাপ-মায়ের আবার ওই সব ছড়ার প্রতি ভীষন দুর্বলতা, আমারই মত, হতভাগা। কারন তারা তো ওগুলো পড়েই বয়েসে বেড়েছে, তারা ভাবেন আমি আমার বাচ্চাদের, না পড়ালেও কি হবে! কেও না কেও ঠিক পড়াবে, আর বাকি ওই নষ্টালজিকতার দায়!! গা-গঞ্জের হা ভাতের দল গুলো ঠিক জিইয়ে রেখে দেবে। কিন্তু দুধপুকুরে মবাই মিলে জল ঢাললে যা হয়, এখানেও তাই, ক্রমবলুপ্তির পথে এই শিশুপাঠ্য।

দুইঃ- পাঠ্য আর পরিবেশের মধ্যে মিল খুঁজে না পাওয়া। বাচ্চা যদি জানতে চাই, পাপা পাপা, What is Ata gach?? কিম্বা মাম্মা মাম্মা what is dalim ghach?? তখন বাবা বা মা উত্তর দেবেন , হয় গুগুলে সার্চ মেরে বেটা কে ছবি দেখিয়ে, নিজেকে ও বাচ্চাকে ধন্য করবে, নতুবা বলবে, বেটা ছুটি পরুক তখন চিড়িয়াখানা বা বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে গিয়ে তোমাকে আতা গাছ, ডালিম গাছে চিনিয়ে আনবো, তোতা পাখী দেখাবো জ্যান্ত। বাচ্চা মোটেই এই বস্তুগুলোর সাথে নিজেকে রিলেট করতে পারে না। আজকালকার বাচ্চাদের কাছে মৌমাছি আর মিশরের পিরামিডের মধ্যে যে কোন ফারাক নেই। কারন তারা দুটোকেই চর্মচক্ষুতে দেখিনি, তাই রিলেট করতে পারে না।

বাকি রইলো হিরে দাদার থান, মৃত ব্যাক্তি ছারা থান আর ব্যাবহার করে কে? সকলেই সুটেট বুটেড মানে পুরুষেরা, আর ললনাগন, খিক খিক...... যদি হও সুজন , তেঁতুল পাতায় ন জন। একটা থান কেটে ৭০ জনের অবলার পোষাক। তবে মা মাসিরা এখনো শড়ির চল কেও কেও রেখে ছিয়েছেন বটে, তবে তার মেয়াদ দীর্ঘদিন আর নেই, সেটা বলাই বাহুল্য। শেষের টা, ঠাকুর দাদা আর তার বউ, মানে ঠাকুমা। তারা কোথায়?? আনবিক পরিবারে তাদের ঠিকানা তো বৃদ্ধাশ্রম।
সুতরাং বাচ্চারা কেন এই ছড়া পড়বে!!

এবার গুরুদেবের রচনা, মানে কবি গুরুর সহজ পাঠের কথায়। নিজগুণে মার্জনা করিবেন, স্পর্ধা করার জন্য।

শুরুটাই তো ভুল, “ছোট খোকা বলে “অ-আ”, কে বলে আজকাল!! সবাই ABC , Mamma , DADDA বলে। একটু বড় হলে Jonny jonny, yes papa। “হ্রস্ব-ই দীর্ঘ-ঈ, বসে খায় ক্ষীর খই”। কি যন্ত্রনার কথা বলুন তো! বসে খাওয়ার সময় কার আছে?? বাপ – মা- বাচ্চা, কারো নেই। তাছারা ক্ষীর খাওয়ার জন্য কি আর বসার লাগে!! বুদ্ধি লাগে আর রুলিং পার্টির সাথে লেগে থাকতে হয়। তাছারা ক্ষীরে চিনি আর ঘি থাকে, ডায়েটের জন্য খাওয়া মানা। আর বাই দা ওয়ে , ‘খই’ টা কি চাইনিজ ডিস!! কেমন যেন নামটা শোনা শোনা লাগছে না? 


তবে যাই বলুন, “ডাক পারে ও ঔ, ভাত আনো বড় বৌ”। কি যে বলি মেসো, এই একটা কথা কে বাপ-মায়ে মিলে গুরুদেব কে মাথায় তুলে রেখেছে, কি ভাবছেন! ইন্দ্রানী-সিনা-পিটার? আরে নাহ, স্টার জলসা-প্লাস- সহ বাকি গুলো দেখেছেন কখনো? ডেলি সোপ, সব একটা ছেরে দুই বা ততোধিক। কোন ভরষায় বাচ্চারা এগুলো পড়বে বলুন তো। যাই হোক স্বরবর্ণ পর্যন্তই থাক, ব্যাঞ্জন বর্নের বিচিত্রদৃকের বর্নন ধাপে ধাপে আসবে।


“বনে থাকে বাঘ,
গাছে থাকে পাখী,
জলে থাকে মাছ,
ডালে থাকে ফল”

বুঝুন কান্ড, বন বলে আর কিছু আছে? দু চারটে বাঘ যাও বা আছে, সে চিড়িয়াখানায়, আর পাখী খাঁচায় থাকে বা এ্যানিম্যাল প্লানেট বা ন্যাশানাল জিওগ্রাফীকে। মাছ থাকে বাজারে বা একোরিয়ামে, কারন জলা সব বুজে গেছে প্রায় বা বুজিয়ে দিয়েছে, নদী মজে গেছে। আর গাছ? কই? থাকলে তো সেখানে ফল ধরবে বা পাখী থাকবে! সত্যি বলতে তো বিছুটি বা এলাকুশি ও পর্যন্ত দেশে অমিল।

“আলো হয়, গেলো ভয়”। বা “বাঁশ গাছ, করে নাচ”, বা “পাতু পাল, আনে চাল”। এখন পরমানু চুল্লি বা সৌর শক্তির কল্যানে আলো প্রায় জাইনা বললেই চলে, তাই ভয় ও বিদায় নিয়েছে, অন্তত গুরুদেব যে ভয়ের কথা ভেবে লিখেছিলেন। আর বাঁশ গাছ... হে হে হে। ওটার নেত্তই তো চলছে, খালি বাঁশ আর বাঁশ। সার্থক গুরুদেব, কি অসাধারন দূরদৃষ্টি। পাতু পাল... পাল বাবু পেশা পরিবর্তন করেছেন, উনি এখন মানবসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরে রয়েছেন। ছেলেপিলে পাঠান আর কি। আর চাল এখন দু টাকা কেজি। সবুজ রেশনকার্ড থাকলেই পাওয়া যাবে।


“রাম বনে ফুল পাড়ে. গায়ে তার লাল শাল. …।।
জবা ফুল তোলে. বেল ফুল তোলে. বেল ফুল সাদা. জবা ফুল লাল. জলে আছে নাল ফুল”.

রাম তো দূরস্থান খোদ দশরথ বা বাল্মিকীর ও অসাধ্য ফুলে হাত দেওয়া। দিলেই নতুন রামায়ন রচিত হবে। এক মিনিটে ফিনিশ। আর লাল ফুল?? আর ফোটে না। ওদের এ্যনিমিয়া হয়েছে। জবার রঙ ও নীল। আর যারা রামকে তুলে রেখেছেন, তাদের তো সব ফুলের রঙ ই গেরুয়া। বড্ড বিতর্কিত, তাই... এগুলোও পড়া মানা বাচ্চাদের। তবে বেশ কিছু জিনিস একটু অন্যভাবে ফুটে উঠেছে, যেমন, “লাল বাতি নীল বাতি, কত লোকে খাবে, কত লোক গান হবে, সাত দিন ছুটি”। অব্যার্থ ভবিষ্য কথন। আচ্ছা গুরুদেবও কি বুদ্ধিজীবি ছিলেন? নাহলে এই সব উৎসবের কথা টের পেয়েছিলেন কেমন করে!

“নাম তার মতিবিল, বহুদুর জল...... ডিঙি চড়ে আসে চাষী, কেটে লয় ধান, বেলা গেলে গাঁয়ে ফেরে গেয়ে সারিগান”। বর্তমানে কোথায় এমন বিল আছে? যার বহু দূর জল? যদিও বা কিছু জল থেকে থাকে, দূষণের চোটে তাতে হাঁস মাছ থাকে? চাষী এখন সবুজ সাথী চড়ে আসে বা ট্রাক্টারে। জাতীয় জামাই মানে ভদ্র বাবু তো আবার হেলিকপ্টারে চড়ে আসেন, উনিও চাষী কিনা। ধান কাটার মেসিনে ধান কেটে নেয়। আর বেলা শেষ হলে শহর পানে ধায় চাষীর দন, কানে হেডফোন গুঁজে, আর তাতে বাজে-হাপ্তে মে চার শনিবার হোনা চাহিয়ে। বাচ্চারা এসব পড়বে!! এর থেকে তো ক্লাস ওয়ানে পিথাগোরাস সহজ মনে হবে।

“ছায়ার ঘোমটা মুখে টানি, আছে আমাদের পাড়া খানি” , এ পর্যন্ত ঠিকিই আছে। কিন্ত তালবন, বাঁশবন, ঝুরু ঝুরু পাতা, টলটল জলে ভরা দিঘী কোথায়? এখন তো সব লম্বা লম্বা আবাসনের ছায়া, আর টলটলে নীল জল একোয়াটিকায়। “ঢেকি পেতে ধান ভানে বুড়ি” আরে ঢেকী তো কার্টুনে নারদমুনির গলায় দেখেছে বাচ্চা, ওতে আবার ধান ও ভাঙা হয় বুঝি! তাছারা ধান ভেঙে হয় টা কি? বাচ্চারা খায় তো কর্নফ্লেক্স আর পিৎজা বার্গার। মাঝে সাজে রাইস খায়, কিন্তু ধানের সাথে তার কি সম্পর্ক।
“আমাদের ছোট নদী চলে আঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে” ছোট নদী কোথায়? সব তো হেজে গেছে, নতুবা ড্রেনের জল এসে প্রাকৃতিক হাই ড্রেনে পরিনত হয়েছে, সেখানে নেমে হাটু মেপে দেখবে কে? সব তো মশা মাছি আর জীবানু তে থিক থিক করছে। ভাইরালে আক্রান্ত করার তাল নাকি! “চিক চিক করে বালি কোথা নাই কাদা”, গুরুদেবের কি দোষ, তখন কি আর বালি মাফিয়া ছিল দেশে! “আঁচলে ছাকিয়া তারা ছোট মাছ ধরে”, ছোট মাছ টা কি বস্তু? কারো জানা থাকলে হেল্প মি প্লিজ। আমরা চোখে দেখিনি যে সব প্রাগৈতিহাসিক বস্তু, বাচ্চা রা সেই সব পড়বে! এতো ইতিহাস মহায়।
“বেলা যায়। তেল মেখে ড়ুব দিয়ে আসি। তার পরে খেলা হবে। একা একা খেলা যায় না”। সম্পূর্ন ইরোটিক। বাবা মা তেলের বিজ্ঞাপনে বাচ্চাদের বলেছে যে, বাবুসোনা ওই তেল বড়দের খেলার তেল বাবা। তাই এগুলোও টোটাল অযৌক্তিক। হ্যাঁ, একটু বড় হলে যৌন শিক্ষার কাজে চলতেই পারে। এই “এসেছে শরৎ হিমের পরশ, লেগেছে হাওয়ার পরে” এটাতে সিজেন খানিক টা পিছিয়ে গেলেও বাচ্চাদের পড়ানোর একটা জাইগা আছে।
“কাল ছিলো ডাল খালি, আজ ফুলে যায় ভরে। বল দেখি তুই মালী, হয় সে কেমন করে”। এটার রচনাকালে সেটিং শব্দটা ছিল না বোধ হয়, একবার সেটিং ঠিকঠাক হয়ে গেলে, সব রাতারাতি ফুলে ট্রান্সফার হয়ে যায়। তবে বাচ্চাদের এই সব পলিটিক্যাল মালমসলা না পড়ানোই ভালো। “নদীর ঘাটের কাছে , নৌকা বাঁধা আছে”। এখন নৌকা থাক বা না থাক, মদের বোতল- প্রতিমার কঙ্কাল- প্লাস্টিকের প্যাকেট- পচা গলা দেহ- কন্ডোম-ন্যাকপিন ইত্যাদি, আবার শহরে হলে যুগল-মিলন, সাট্টা-চুল্লুর ঠেক সব পাওয়া যায়। ছ্যাঃ- ম্যাগো... কি বলে বাচ্চাদের ওসব পড়াবো! যদি নদীর পাড়ে যাবার জেদ ধরে তখন!। “বাঁশগাছে কত বাঁদর, যত ঝাঁকা দেয় ডাল তত কাঁপে” , বাঁদর খুঁজতে আর গাছে কেন, লেখকই বা কম কি, তবে ঝাঁকা দিলে নিজে নিজেই কাঁপি, এই যা ফারাক।

“কতদিন ভাবে ফুল উড়ে যাবো কবে, যেথা খুশী সেথা যাবো ভারী মজা হবে” এতো পুরো কল্পনা মানে ফিক্সন। আরে বাওয়া বাচ্চা এ সব ই যদি শিখবে ছোটাভীম দেখুক, বা ডিজনিল্যান্ড যাক। ওখানেও তো ভরপুর কল্পনা আর মস্তি। উপরন্তু মায়েরা ও একট সেই ফাঁকে সোশ্যাল মিডিয়াতে একটু চড়েখুটে আসতে পারে। যাক এই ভাবে প্রথম ভাগের দায়মুক্ত।
এবার দ্বিতীয় ভাগ।
বেটা সব কুৎসা কারির দল, নীলসাদা দেখে সব হেদিয়ে গেলো, ওদিকে দ্বিতীয় ভাগের প্রথম সহজ পাঠের শুরুই তো হচ্ছে “বাদল করেছে, মেঘের রঙ ঘন নীল”। এখান থেকে শুরু করলেও করা যেতে পারে। দ্বিতীয় পাঠে সেই আদ্যনাথ বাবুর কন্যার বিয়ে, মানে তখনও কন্যাশ্রী। অবশ্যই শিশু পাঠ্য। বড় প্রাসঙ্গিক। এখানে দান ধ্যানের কথাও আছে। আবার নেত্ত করার কথাও, মন খুশী হলে ব্যাটবল খেলা কে উৎসাহ সেওয়ার কথাও। এটাকেই জাতীয় প্যারাগ্রাফ হিসাবে ঘোষণা করার উপযুক্ত।

আর বেশী লম্বা করবো না, এটার একটু বিশ্লেষণ করেই শেষ করবো। এর পরেও যদি বেঁচে থাকি, মানে আপনারা বাচিয়ে রাখেন, তখন বাকি টুকুর শ্রাদ্ধ করার দুঃসাহষ করবো।

এবারে সেই মহান রোবিনদো সংগীত। আরে বাবা, বাচ্চা কে এটাই সুর করে শেখান দেখবেন, বড় হয়ে অন্নু মালিক বা জিৎ গাঙ্গুলি হয়ে গেছে।

কুমোর-পাড়ার গোরুর গাড়ি —
বোঝাই-করা কল্‌‍সি হাঁড়ি ।
গাড়ি চালায় বংশীবদন ,
সঙ্গে-যে যায় ভাগ্নে মদন ।
হাট বসেচে শুক্রবারে
বক্সীগঞ্জে পদ্মাপারে ।
জিনিষপত্র জুটিয়ে এনে
গ্রামের মানুষ বেচে কেনে ।
উচ্ছে বেগুন পটল মূলো ,
বেতের বোনা ধামা কুলো ,
সর্ষে ছোলা ময়দা আটা ,
শীতের র্যা পার নক্ম‌শাকাটা ।
ঝাঁঝ্ ‌রি কড়া বেড়ি হাতা ,
শহর থেকে সস্তা ছাতা ।
কল্‌‍সি-ভরা এখো গুড়ে
মাছি যত বেড়ায় উড়ে ।
খড়ের আঁটি নৌকো বেয়ে
আন‌ল ঘাটে চাষীর মেয়ে ।
অন্ধ কানাই পথের ‘ পরে
গান শুনিয়ে ভিক্ষে করে!
পাড়ার ছেলে স্নানের ঘাটে
জল ছিটিয়ে সাঁতার কাটে ।

প্রথমত, কুমোর পাড়া আর নেই, পাল বাবুরা ওই... আগেই বলেছি। গরু হলো গিয়ে মাতা, সুতরাং তাঁকে দিয়ে গাড়ি চালানোর কথা ভাবাও পাপ। তাছারা দুর্গাপুজোর সময় মন্ডপসজ্জা বা সংসদে বিক্ষোভ দেখানো, এ সব ছারা হাঁড়ি কলসি কোথায় লাগে! কোচবিহারের বংশীবদন জেলের ঘানি টানছে। সঙ্গের মদন টি ... হি হি হা হা হা, আমি আর বললুম না সব্বাই জানে। বাচ্চাদের না পড়ালোই ভালো, কচি মাথায় সারদা-রোজভ্যালি-পিয়ালি, কত প্রেশার ভাবুন তো। হাট এখন শুক্রবারে বসে না, হপ্তাকে সবসে সস্তা দিন “উইডনেস-ডে বাজার” বা “উইকএন্ড ধামাকা’ সেটাও বক্সীগঞ্জের পদ্মাপারে নয়, নেট গঞ্জে ও সপিং মলে। জিনিসপত্র এখন বহুজাতিক সংস্থাগুলো জুটিয়ে আনে, কেনার কাজটা শুধু গাঁয়ের মানুষ গুলো করে।

উচ্ছে-বেগুন-পটল- মুলো, এই সব গুলো নাম এক নিঃশ্বাসে যদি কেও নিয়ে ফেলেন প্রকাশ্যে, সেই রাত্রেই তোলা চেয়ে দুবাই থেকে ভাই এর ফোন আসবে, এতটাই দুর্মুল্য সম্পদ এগুলো। আর বেত কোথায়? যে ধামা কুলো বাধবে। তবে হ্যাঁ, যে কটা বাধে ওই সংসদে ঠিক খায়াল রাখলে দেখা যায়। সর্সে ছোলা ময়দা আটা- এগুলো নিজ নিজ স্থানেই এখনো পর্যন্ত আপাতত রয়েছে। শীতের র্যা্পার, সেটা কি? আমরা তো ব্লাঙ্কেট গায়ে দিই। ছারো ও কথা, পরের লাইনে আসি। ঝাঁঝরি কড়া বেড়ি হাতা, ও সব তো রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় , ক্যান্টিন মালিকের ছেলে বা হোটেল ম্যানেজমেন্টের বিষয় এটা, বাচ্চাদের পড়িয়ে কি লাভ! আমরা তো উইকডে তে ক্যান্টিনে খায়, বাচ্চারা ক্রেশে বা ডে বোর্ডিং এ। উইকএন্ডে রেস্তোরাতে। এগুলো পড়া মানে অহেতুক লোড বাড়ানো। 


কলসি ভরা এখো গুড়ে, মাছি যত বেড়াই উঠে, এই সব আনহেলদি ব্যাপার বাচ্চাদের শেখানো মানে সেটা এক ধরনের ক্রাইম। একে তো হেলথ কনসাস্নেস বাড়ানোর জন্য সুগারফ্রিও খাওয়াই বারন, সেখানে জীবানু সম্মিলিত মাছি ভর্তি এখো গুড়। হাও ক্যান আই বিলিভ দিস, গুরুদেব এগুলো বাচ্চাদের জন্য লিখে গেছেন! খড়ের আঁটি তো যারা কুশপুতুল দাহ করবে বা যার ঘরে গরু আছে বা যাদের ঠাকুর গড়ার ব্যাবসা তাদের সাবজেক্ট, এগুলো বাচ্চারা জেনে কি করবে! জাষ্ট রিডিকিউলাস।
অন্ধ কানাই এখন ট্রেনে গান করে, পথের ধারে সে থাকে না, ওখানে এখন ফাস্টফুড সেন্টার। তাছারা ওরা অনেক সময় পলিটিক্যাল ক্যাম্পেনিং ও করে শুনেছি, তাই বাচ্চাদের ও সব থেকে শতহস্ত দূরে রাখায় ভালো। পাড়ার সাতার কাটা ছেলে গুলোর আর সময় কই! তারা গেমস খেলে, ক্লিপিংস দেখে, এক্টিভিটিস করে, কেও কেও আমার লেখাও পড়ে। তাই ওটাও গুরুত্বহীন। আর গুরুত্বহীন বিষয় পয়ে কি লাভ!

এবার বলুন , গুরুদেব বেচে থাকলেও কি, নিজে নিজেই ট্রাফিক পোষ্টের মাথায় চড়ে বসে থাকতেন না?
এখন শত্তুরে শুনলে বলবে, হ্যাঁরে মর্কটোন্মাদ, তোর নিজের ত্যানা আগে ঠিক কর, একে তো ছাইভস্ম লিখিস, দুর্বোধ্যো সব ভাষার প্রয়োগ সহ বানান এর অবস্থা কি! সহজপাঠ পড়েই কি শেখা এই উন্মাদীয় বানানবিধি! ব্যাটা নরসুন্দর।

আরে না বাবু, আত্মপক্ষ সমর্থন না, সমর্পন করে বলছি, এটা তো আমার নিজশ্বপাঠ, সহজপাঠ সত্যিই সহজপাঠ্য, আমিও তাই পড়েছিলাম। এতে গুরুদেবের কি দোষ। বদলেছি আমরা, সময় বদলায় নি। আজও সুর্য ওঠে, মেঘ করে, মানুষ প্রেম করে, ঘুম পায়, খিদে পায়, কবিতা পায়। সব কিছু জোর করে বদলেছি আমরা, নিজেদের স্বার্থে। আমরা যে Ctrl+c & Ctrl+V এর জামানার মানুষ, নিজের সম্পদ ছেরে দুর্দমনীয় অন্য হবার চেষ্টা। ভালো মন্দ বাছার দায় নেই।

আমার সাহিত্য তো ইস্কনের খিচুড়ি। যৌবনে বঙ্কিম কঠিন প্রেমের ব্যামো বাধালো, তার পর এই... দুকাপ সহজপাঠ, আড়াই টেবিল চামচ বঙ্কিমি সাহিত্য মিশিয়ে, সুকুমারি পাত্রে গুলে চার ঢোঁক খেয়ে নিন। সাথে মুখশুদ্ধি হিসাবে বিভুতি-সুনীল-শরৎ এক-দুদানা করে চুষে নিন, ব্যাস। পরেরদিন কোঁথ আসার আগে উন্মাদীয় বানানবিধি এসে যাবে, আই শপথ।
একবার টিরাই মেরেই দেখুন না।

Sunday, 23 August 2015

অসামাজিক - শেষ পর্ব


উম্মাদীয় রবিবাসর
********************
অসামাজিক (শেষ পর্ব)
~~~~~~~~~~~~~~~

একটা সময় কাল ছিলো, যখনকার সামাজিকতাতে সম্মান টা লজ্জাকে নিয়ন্ত্রের উপর নির্ভর করতো, এখন বিশ্বায়নের সমাজ, কত ভাবে লজ্জাকে লজ্জিত করা যায়, তার উপর সামাজিকতা নির্ভর করে। হ্যাঁ লজ্জাও আজকাল লজ্জিত হয়, কিন্তু মানুষের তাতে দায় নেয়, কারন সময়ের নিরিখে একজন মানুষের আয়ু কতটুকু?? নদীর পারে বালীর মত। আর সমাজে এই ধরনের মানুষের ভীর ই বেশী।  

সংগ্রামে ভরপূর সমাজে, সকলে সমাজপতি হতে পারেন না, সকলের সেই ইচ্ছাও থাকে না, কিছু জনের ই থাকে, এদের মধ্যেও কিছু জনই কাঙ্খিত সাফল্য লাভ করেন, বাকিরা... এখানে সমাজের অনেক দিক খুলে যায়। যারা সাফল্য পেলেন, সেই সাফল্য কে ধরে রাখতে, অধিকাংশ জন নিজের প্রানপাত ছারা, বাকি সবকিছুই করতে পারেন। এখান থেকে ক্রোধ, ঘৃনা, হানাহানি, রক্তারক্তি যুদ্ধের আবহ তৈরি হয়। তার মানে কি অসফল ব্যাক্তিরা এ সব করে না?? না, তারাও করেন, কিন্তু তাদের ক্ষমতা এতো টাই সীমিত থাকে যে ক্ষতিটা তাঁকে ছারিয়ে খুব বেশী দূর ছরায় না। কারন অর্থবল ও লোকবল, বলার মত তার কাছে কিছুই থাকে না। যেখানে সমাজপতিদের স্বার্থ কে গোটা সমাজের স্বার্থ হিসাবে দেখাটাই রেওয়াজ। কারন তাদের কাছে থাকে রাষ্ট্রযন্ত্র।

যারা সাফল্য পান নি, তাদের হারাবার ও কিছু থাকে না। তাই তাদের নিয়ে সমাজের বিশেষ ভয়ের কিছু থাকে না। তাদের কাছে অবশিষ্ট বলতে থাকে সামান্য জীবনিশক্তি, যেটা আবার পঙ্গু। 

কখনো কোন পাগলাগারদে গেলে মনে হয়, সত্যিই তো... কারা সামাজিক?? পাগলগুলো?? না ডাক্তার বা স্বাস্থকর্মী রা। তারাও তো এই ভরা সমাজের মধ্যে কাওকে ভীষনরকম ভালোবেসে, মানসিক স্থিরতা খুইয়ে পাগল হয়েছে। অসামাজিক শব্দ টা এই সকল স্থাকে বড্ড মেকি মনে হয়।  

সমাজ তো একটা আয়না স্বরূপ। একটু উপর থেকে ফেলে দিন এই আয়না টা কে, দেখবেন কত রূপে কত ভাবে কত এঙ্গেল থেকে নিজেকে দেখা যাবে। একটা সমাজ কে টিকে থাকতে গেলে পারস্পারিক বিশ্বাস টা থাকা একদম প্রাথমক শর্ত। সেখানে কম বেশী হতেই পারে। আর বিশ্বাসের জন্য চাই ভালোবাসা। যেটার অভাবে আজকের সমাজে একান্নবর্তী পরিবার প্রায় নেই বললেই চলে। যার জন্য এক সমাজের মধ্যেও হাজার টুকরো সমাজের বাস। 

বৈষম্য। যা সমাজের এক চির প্রতিষ্ঠিত ব্যাধি। সামাজিক ও অসামাজিকের দ্বন্দ্বের মাত্রাটা এটা দ্বারাই পরিমাপ করা হয়ে থাকে। সমাজ মানে তো সহোযোগিতা, সহচর্য, ও সহভাগিতার একটি সম্মতিসুচক সহাবস্থান। সুতরাং বৈষম্য এলে সমাজ অসামাজিক ব্যাক্তিতে ভরে উঠবেই। সমবায় ও অনুসঙ্গ, এই দুই ছারা অসামাজিকতা কে রোধ করা অসম্ভব। তাতে সেটা কে আপনি যে ছাচেই উচ্চারন করুন না কেন।    

শিল্পকর্ম চলমান সমাজের প্রতিচ্ছবি। যুগে যুগে সমাজপতিদের এ এক বিচিত্র যোগাযোগ যে, সেই সময়কার সকল কিছু শিল্পকর্মই যেন তাদের বন্দনা গাথার এক রুপকথা হয়। মানলে রাজমন্ড , অন্যথায় অসামাজিকতার দায়ে রাজদন্ড। বৃহত্তর সমাজ সকল সময় ক্ষমতাবান দের অনুসরন করে, কিছুক্ষেত্রে অন্ধ ভাবে। রেশ টুকু রয়ে যায় শুধু। সেকালের রামমোহন থেকে রবীন্দ্রনাথ, দীর্ঘ মুসলমান শাসনকালের রেশের দরুন পোষাক পরিচ্ছদ তাদের মতই পরতেন, যেমন টি আমরা ব্রিটিশ দের অনুকরন করে থাকি। এককালে অবিভাবকরা সন্তানদের নাম দেবদেবী দের নাম ও উপনাম অনুযায়ী রাখতেন, সেটাই ছিলো সামাজিকতা, এখনো দক্ষিন ভারতে যেটা চরম ভাবে চালু, কিন্তু অবশিষ্ট ভারতে বিচিত্র তথা প্রথমবার ব্যাবহৃত কোন আবিধানিক শব্দ বা ধরেমুড়ো সন্ধি করে কোন শব্দ কে নাম বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আর এটাই আধুনিক সামাজিকতা বলে স্বীকৃতি পেয়েছে।

সমাজ বিবর্তিত হয়ে চলেছে অবিরত, তার সাথে পাল্লা দিয়ে সামাজিকতার সংজ্ঞাও বদলে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু জিনিস ধ্রুবক হিসাবেই থেকে যায়, যেমন উত্তরে রামের ভজনা তো দক্ষিনে রাবনের। ধর্মের নামে নিরীহ মানুষের বলি। জান্নাতের লোভ দেখিয়ে মগজ ধোলাই করে, সাধরানের কল্পনার অতীত অপকর্ম কে সামাজিকতার মর্যাদা দিয়ে, গোটা সমাজকে সন্ত্রস্ত করে রাখা। অস্ত্র ব্যাবসায়িরা মুনাফার লোভে উৎকোচ প্রথাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে “ভয় দীর্ঘজীবি হোক” মন্ত্রে সমাজ কে দিক্ষিত করা। এগুলোর কোন পরিবর্তন হয় নি। 

আজকের বিজ্ঞাপন সর্বস্ব সমাজে, সামাজিকতাও বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা পন্য হিসাবে বিক্রি করে, যেমন “সোস্যাল পার্টি” “গেট টোগেদার” “কিটি পার্টি” ইত্যাদি ইত্যাদি। যেখানে আপনাকে অনেক জরুরি পন্যের সাথে, এক্সট্রা ডটেড ফ্লেভারড কন্ডোমের গুনাবলী থেকে কোন কোন সুগন্ধিতে একই লগ্নে বহু ললনা রা আকৃষ্ট হবেন, বা সাতদিনে ভাঙবে না, এমন খাটের প্রদর্শনী। এগুলো একজন মাকে তার অষ্টাদশী কন্যার সাথে অত্যন্ত সাবলীল ভাবে দেখতে হবে, নাহলে ওখানে অসামাজিক হবার ভয় থাকবে।

সীমান্তের এপার, ওপারের মা বোন সহ গোটা সমাজকে তীব্র ভাষায় আক্রমন করবে এবং ওপার ও একই ভাষায় প্রত্যুত্তর দিয়ে সামাজিকতার দায় রক্ষা করবেন। আজকের সমাজে ধর্ষন থেকে পিতার খুন, অর্থের বিনিময়ে ক্ষতপূরণ হয়ে যাচ্ছে। ক্ষতি পূরন নয়, ক্ষতপূরন। এটাই আধুনিক সামাজিকতা। 

সামাজ কে থাকতে গেলে তার বংশবৃদ্ধি প্রয়োজন, তার জন্য বিগত সকল সমাজেই বিবাহকে সামাজিকতার অন্যতম স্তম্ভ রুপে মর্যাদা দিয়েছিলো, বর্তমানে পুরুষে-পুরুষে বা নারীতে নারীতে বিবাহ স্বীকৃত, এটাই সামাজিকতা। এনাদের ভবিষ্যতের দায় নেই, কারন বর্তমান সমান নিজের জন্য বাঁচে। একটা সময় প্রকৃতিকে সমাজ পূজা করতো সমবেত ভাবে, এর পরের পর্বে সমাজ প্রকৃতিকে গনধর্ষন করেছে, প্রকৃতি এখন শোধ নিচ্ছে, তার রুদ্র রোষের মাধ্যমে। এটাও সামাজিকতা। 

ভারতের কোন স্থানে অগ্নেয়াস্ত্র সহ চলাফেরা করা যতটা অসামাজিক, পশ্চিম আফ্রিকা সহ মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশেই এ অত্যন্ত সামাজিক। এক সময় কোনো ব্যাক্তির একটি মোটর সাইকেল আর ঘরে রঙ্গিন টেলিভিসন থাকা মানে, শুধু ওই বস্তু গুলির জন্যই তিনি সমাজের উচ্চকোটি তে অবস্থান করতেন। এখন একটি হ্যাচব্যাক চারচাকা মোটর থাকলেও তিনি তেমন সম্মান লাভ করেন না। পুরুরঘাট বা কলপাড়ের গপ্প বা আটচালা বা বেড়ার ক্লাব ঘরের নিখাদ আড্ডা আজ সকলই তালুবন্দি। মুঠোফোন খুললেই আপনি ইচ্ছামত স্থানে পৌছেযাবেন, শুধু গন্তব্যের ঠিকানাটা জানা চাই। এটাই আধুনিক সামাজিকতা, আপনি মানাতে না পারলেই বাতিলের দলে নাম লেখাবেন, অসামাজিক হয়ে যাবেন। 

ধর্ম গুরু থেকে শিল্প জগত, আধুনিক কালে সমাজের শীর্ষ স্থানীয় যারা, সমাজের উন্নতি সাধনের জন্য প্রত্যেকেই রাজনীতির আশ্রয় নেন, কারন রাজনীতিতে একটা তৈরি সংগঠন পাওয়া যায়, তাই অপর পক্ষে রাজনীতির কারবারিরাও এই জগতের লোকেদের খোঁজে, তাৎক্ষনিক জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগানোর জন্য। কিন্তু সামাজিকতার সাথে মুনাফা শব্দ টা যে যায় না। তখন ই ভোল বদলের প্রয়োজন হয়। সমাজের সকল স্তরের প্রতনিধিত্বমূলক অংশগ্রহন তথা কেন্দ্রীভূত পরিকল্পনায় সকল স্তরের মতামত কে গুরুত্ব দেওয়া গেলে অসামাজিকতা কে দূর করা সম্ভম। 

প্রথমে প্রানী সমাজ। তারপর মনুষ্য সমাজ, সাদা কালো সমাজ, হিন্দু সমাজ মুসলমান সমাজ, আদিবাসী সমাজ, খ্রিষ্টীয় সমাজ  শিখ সমাজ, ইত্যাদি ধারায় বিভক্ত ছিলো।  বর্তমানে সুশীল সমাজ সংবাদ শিরোনামে, বুদ্দিজীবি সমাজ ও একটা স্থান দখল করেছে। এ সবটাই পুঁজিবাদী সমাজের শোষণ কৌশল, অবশিষ্ট গাড়ল সমাজ কে ক্রীতদাস সমাজে পরিনত করা। সামাজিকতাকে মান্যতা দিতে হলে সমাজতন্ত্র কে প্রতিষ্ঠা করতে হবে সর্ব প্রথমে। 

সমাজতন্ত্র কে একটা গঠন মূলক রুপ দিতে, রাজা মান্ধাত্বা থেকে শুরু করে রাজা ভরত, শ্রীকৃষ্ণ হয়ে খ্রীষ্ট ও মুহাম্মদের সারনী বেয়ে, শ্রী চৈতন্য, মার্কস, এঙ্গেল ও হাল আমলের রাজা রামমোহন, প্রভুপাদ বা আন্না হাজারে। জনগন দেকেছে, ইতিহাস সাক্ষী। সকলেই বিগরে যাওয়া সমাজ কে শোধরানোর পন্থা নিজের নিজের দৃষ্টিভঙ্গিতে বাতলে গেছেন বা যাচ্ছেন। বর্তমানে ও আছে , কোথাও আইসিস বা লস্কর, তো কোথাও বজরঙ্গ সেনা। কারন তারা শক্তিশালী। আর জনগন?? তারা চার দেওয়ালের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে, কেও কেও এই সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিপ্লব ও হচ্ছে, ইথারে, মিলিয়েও যাচ্ছে, ইথারেই। সমাজবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ আর জাতীয়তাবাদ এখন সমান্তরাল সরলরেখায় অবস্থান করছে, সেখানে অসামাজিক শব্দ টা অবসর নিয়েছে।
এখন তো রাজনীতিতে সমাজবাদী কথা টাই বেশী জনপ্রিয়। সমাজতন্ত্র কে বাদ দিয়ে গনতন্ত্র কখনো প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। হলেও সেটা হয় ক্ষনস্থায়ী হয় বা কালক্রমে রুপান্তরিত রাজতন্ত্রে পরিনত হয়।  ভাষাভেদ থাকতে পারে, কিন্তু দেশে দেশে এটাই শেষ্ঠ খুড়োর কল কিন্তু সেই “সমাজবাদী” শব্দ টি, কারন ইহাই ব্রম্ভ।  সেখানে মুলায়ম সিং বাবুরা পরিস্থিতির লাভ উঠিয়েছেন মাত্র। কারন এই লিষ্ট (https://en.wikipedia.org/wiki/Socialist_Party ) টা থেকেই দেখা যায়, পৃথিবীর সর্বত্র এই নামের রাজত্ব। 
শ্রেনি হীন সমাজ , সোনার পাথর বাটি। অলীক স্বপ্নের পিছনে ধাওয়া করলে বাস্তব আছার মেরে ফেলে দেবেই। তখন সমাজের দোষ দেওয়া ছারা হা-হুতাস করার কিছু থাকে না। তাহলে প্রশ্ন, জনগন এদের ই কেন নির্বাচিত করছে না?? কারন আদর্শগত ফারাক, সমাজের সকল স্তরের সাথে এবং নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের ও সমন্বয়ের অভাব। এবং পুঁজিপতি দের ক্রমবাড়বারন্ত। এনাদের সকলের ই যদি, ভালো করার ক্ষমতা থাকতো তাহলে দক্ষিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ সহ চীন বা উত্তর কোরিয়া তে বা আমাদের এই পোড়া বাংলাতে সমাজবাদে ঝান্ডা ধরা সমাজপতিরা কিছু করতে না পারুক সকলের সুষ্ঠ রোজগারের পথটা অন্তত বাতলাতে পারতেন। পারেন নি কারন ব্যাক্তি স্বার্থ এক সময় সমাজ থেকে ব্যাক্তিদের পৃথক করে দেয়। তাই সমাজের অহর্নিশ ঘটে চলা পরিবর্তনে নিজেকে প্রস্তুত করতে না পেরে, দমনের রাস্তা বেছে নেয়, ফলশ্রুতি হিসাবে বিপ্লবের জন্ম হয়। নতুন সমাজ সৃষ্টি হয়। আসে পরিবর্তন।   

এখন চাই উন্নতশীল সমাজ। দ্রুত উন্নয়ন। দ্রুত উন্নতি মানেই, সমানে পরিবর্তন কে স্থান করে দেওয়া। কিন্তু শাষকের পছন্দ অচলায়তন। তাই সেটা কে অগ্রাহ্য করে সমাজ কিভাবে সামাজিক হয়ে উঠে, সেই ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ইতিহাস। আর আমরা!! আমাদের লক্ষ্য থাকুক দৈনিকের পাতায় বা বৈদ্যুতিন মাধ্যমে বা এই ... সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এর বেশী আর আমরা কি ই বা করতে পারি।

সেবাই হল সমাজিকতার শ্রেষ্ঠ কর্ম। সেটা নিঃস্বার্থ না হয়ে স্বার্থসম্মিলিত হলেও তা সমাজের জন্য মঙ্গলদায়ক ই হয়। কারন বাস্তবতা কে স্বিকার করে নেওয়াটাও উন্নতশ্রেনির সামাজিকতা। চলমান সামাজিকতাতে উদ্দিপনা কম, কিন্তু পরিসর অনেক বেশী, জনহিত করার। মুক্তবাজারের বিশ্বে সহজলভ্য ঋণের হাতছানি, ক্ষনকালিক ব্যাক্তিকে অহঙ্কারি করে তুলছে, সুনিশ্চিত রোজগার না থাকার দরুন, দেওলিয়া হতে বেশী সময় লাগছে না, দড়ি টানাটানির খেলা শুরু হয়ে যাচ্ছে ব্যাক্তি আর প্রতিষ্ঠানের মধ্যে, যেখানে সমাজপপতির দল প্রতষ্ঠানের পক্ষে, সেখানে অসামাজিকতার বীজ ছরিয়ে পরছে কর্কট রোগের ন্যায়গোটা সমাজের বুকে।

সমাজপতিরা সহ গোটা সমাজের দায়বদ্ধ থাকা উচিৎ অসামাজিক দের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে, সুস্থ বাঁচার পরিবেশ প্রদান করতে। সমাজ চাই তার নিরাপত্তা, সমাজপতিদের কাছে রাষ্ট্রের কাছে। স্বাধীন চিন্তাভাবনাদের প্রসব কে সুরক্ষিত করতে হবে সমাজ পতিদেরই। সেটা যতই ব্যাক্তিস্বার্থের পরিপন্থী হোক না কেন। তবেই অসামাজিকতার করাল গ্রাস থেকে সমাজ সুরক্ষিত থাকতে পারবে।  

পরিশেষে অসামাজিক বলে আর কিছুদিন পর হয়তো কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না , কারন সেটাই তখন উন্নতশীল সামাজিক প্রবনতা বলে গ্রাহ্য হবে। এ নিতান্তই উন্মাদীয় ভাবনা। সুতরাং নির্ভয়ে উন্নীত হবার বাসনা নিয়ে সমাজের ভিতরে ঝাপিয়ে পরুন। 

জয় হিন্দ
(উন্মাদীয় বানানবিধি অনুসৃত)

উন্মাদ হার্মাদ​


Sunday, 16 August 2015

অসামাজিক- প্রথম পর্ব



উন্মাদীয় রবিবাসর
*******************

অসামাজিক
~~~~~~~~~

সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা পিপীলিকার উপর গবেষণা করিয়াছেন বলে সংবাদে প্রকাশ, তাহাদের বসবাসের একটি মানচিত্রও প্রস্তুত করিয়াছেন। পিপীলিকা সমাজবদ্ধ জীব। তাহারাও খাদ্য অন্বেশন করিয়া থাকে, তাহাদের বাসস্থানের প্রয়োজন হয়। প্রজনন হেতু যৌনতা ও গোচরিত হয়, প্রতিযোগিতা হয়, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে। মানুষের ও তাই, শুধু শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে শত যোজন দূরে সরিয়া যায়।

প্রসঙ্গঃ সমাজ।

কে বানাইয়াছে এই সমাজ? কিভাবে বানাইয়াছে? কাহার জন্য বানাইয়াছে? কতদিন লাগিয়াছিল বানাইতে?? আর সেই সমাজের আয়ুষ্কাল ই বা কতদিনের নিমিত্ত? আর কে ই বা সেই দিননির্ধারন টা নির্নয় করিবে? হাজারো প্রশ্নের ভিড়। এখন সমাজ যখন থাকিবে, অসামাজিকতা ও থাকিবে, নির্ধারিত ভাবেই। এবার প্রশ্ন ইহা নির্ধারন করিবে কে?? ইহা করিবে সমাজের মাথারা। কাহারা তবে এই সমাজের মাথা? সর্ব প্রথমেই আসিবেন ধনপতিরা। সর্বশেষেও তারাই, কিছু চুরান্ত ব্যতিক্রম ছারা। একে একে এইখান হইতে ভিন্ন ভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়... রাজনীতিক, উচ্চপদস্থ আমলা, বিভিন্ন পেশার শিক্ষিত জ্ঞানীগুনী বুদ্ধিজীবি, প্রমুখরা। বর্তমান কালে নির্ধনী ও উক্ত সমাজের কক্ষস্থলে পৌছাইয়া গেলে ধনপতি হইতে বিশেষ সময় লাগে না, যাহার মানে গিয়ে দাঁড়ায়, সমাজপতি ও ধনপতি বর্তমানের আরশিতে অভিন্ন।

অভিধানিক মতে সমাজ হল কিছু মানুষের সমষ্টি যারা সর্বসম্মতির ভিত্তিতে চিন্তা-ভাবনার বিনিময় করে কর্মের বন্টন নির্ধারন করে সকলের হিতার্থে একত্রে বসবাস করে। তাহলে গনতন্ত্র কি, এ প্রশ্ন উঠবেই। এটাই গনতন্ত্র। রাজতন্ত্রে সমাজের শিখরে পৌছাতে হয় ক্ষমতার ব্যাবহার হতো নতুবা উত্তরাধিকার সুত্রে, গনতন্ত্রে সমাজের শিখরে পৌছাতে জনগনের দয়া প্রয়োজন। তবে এখানে সমাজের শীর্ষ মানেই ক্ষমতার কেন্দ্রস্থল। কিন্তু গনতন্ত্রে কি সর্বসম্মতির ভিত্তিতে সমাজ গঠিত হয়!! হয় না। এখানে শতাংশের হারে বৃহত্তর স্বার্থের সর্বসম্মতি ক্রমে মিলন হয়ে সমাজ গঠিত হয়। যারা গ্রাম, শহর, নগর মহকুমা, জেলা, রাজ্য হয়ে দেশ পরিচালনা করে। সকলের হিতার্থে সমাজের গঠনের হেতু হলেও যারা সেই বৃহত্তর সম্মিলিত স্বার্থের বিপক্ষে ছিলেন, প্রাথমিক ভাবে তারাই অসামাজিক ও গনশত্রু রুপে চিহ্নিত হন।

কিন্ত অসামাজিকতার এ একান্তই প্রাথমিক স্তর। আবহমান কাল ধরে চলে আসা কোন আচার বা বিধি কে ও অনেক সময় সমাজিক বলে মানি। সেটার বিরুদ্ধ মত হলে তো বটেই, সমানুপাতিক কোন মত উপস্থাপিত হলেই, অসামাজিকতা বলে চিহ্নিত হয়। তাহলে সাদা চোখে সমাজের বড় শত্রু কে? যার একটা চিন্তাশীল মস্তিষ্ক আছে, যার আবেগ আছে, এবং চিন্তাশক্তিকে বাস্তবে প্রতিফলিত করে একটা রুপ দিতে পারেন, সর্বোপরি চলমান সমাজ যার যা যাদের জীবনে গভীর ছাপ ফেলেছে, এবং তাঁরা অন্য বিকল্পের সন্ধান করছেন তারাই অসামাজিক। ততক্ষন পর্যন্ত যতক্ষন না তাঁরা, শতাংশের বিচারে একটা বৃহত্তর পরিসর সৃষ্টি করতে পারছেন।

এখন আবার প্রশ্ন উঠবে, তাহলে অসামাজিক বা ‘Anti Social’ রা কি সকলেই বিপ্লবী। আসলে আমরা যারা নিতান্তই ছাপোষা, মানে সমাজের দ্বারা লালিত পালিত, মননে চিন্তাশীল, কিন্তু বিচ্ছুরন নেই, তাদের মনেই প্রশ্নেরা ভির করে। যারা চিন্তাশীল নন, তাদের সমাজ নিয়ে অতো দায় নেই। পেট ভরে খাবার, শান্তির ঘুম পেলেই সন্তুষ্ট, কারন অভিযোজনের ক্রমবর্ধমান প্রক্রিয়া তাদের মেরুদন্ডকে এতোটাই নমনীয় করে তুলেছে যে, পরিস্থির সাথে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে আপস করে নিতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের বাজারে তাঁরা হাসতে হাসতে জনপ্রতি ১৫০০ টাকার ইলিশ উৎসবে মেতে উঠতে পারেন।

এখন ‘Anti Social’ দের ও চারভাগে ভাগ করা যায়,
১) সমাজের শীর্ষ ব্যাক্তিদের শত্রু রাজশত্রু।
২) সমাজের শীর্ষ ব্যাক্তি সহ গোটা সমাজের শত্রু গনশত্রু।
৩) সমাজের শীর্ষ ব্যাক্তি বাদে গোটা সমাজের শত্রু।
৪) নিজের শত্রু।

১...
প্রতিটি জীবই জন্মগত ভাবেই স্বার্থপর। লক্ষকোটি শুক্রাণুর মধ্যে ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে, জয়লাভের মধ্য দিয়ে প্রথম স্বার্থসিদ্ধির সূচনা। তাই স্বার্থপরায়নতা থাকবেই, তা সেটা সমাজের যেখানেই অবস্থান করি না কেন। আর যখন শীর্ষ মানেই ক্ষমতা, তখন এক্ষেত্রে অনেক সময় ই নির্লজ্জতার সীমা অতিক্রম করে যায়, সুতরাং সমাজের শীর্ষস্তর ও তার ব্যাতিক্রম নেই। বর্তমান যুগে সমমনভাবাপন্ন বলে আসলে কিছু হয় না, অন্তত এই স্তরে, সবটাই সমস্বার্থভাবাপন্ন। কিছু সমস্বার্থের মানুষ জনহিতের উদ্দেশ্যে কর্মসম্পাদন করছেন, নিজ স্বার্থ সম্পূর্ন বজায় রেখে, এখন কোন একজনের ভাগে যদি কম পরিয়া যায়( তাতে, তার নিজস্ব মতামত ও হতে পারে), তিনি বিদ্রোহী হয়ে উঠেন, এবং সমষ্টির বাকি সকলে সঠিক ঔষধি দিয়ে তাঁকে ক্ষান্ত করিতে না পারলেই, অসামাজিক বলে প্রতিপন্ন করে দেন। সুতরাং তিনি রাজশত্রু। প্রতিটা মানুষই মনে করেন তাঁরা যেটা করছেন, সেটা সঠিক, সমষ্টির ক্ষেত্রেও সেটা সমান ভাবে গ্রাহ্য। তাই সমাজপতি রা বিরুদ্ধমত সইতে পারেন না, যদি না জনপ্লাবন বা বিপ্লবের সৃষ্টি হয়। কিন্তু বিপ্লব ক্ষনজন্মা। সকাল বিকাল জন্ম নেয় না। তাই সমাজ পতিদের দেখানো পথ ভিন্ন অন্য যে কোন পথ বা মতাদর্শের মালিকই হল অসামাজিক। রাজশত্রু কে সহজে চিহ্নিত করা যায়, কারন সমাজপতি দের গনদরবারে পৌছানোর জন্য জনকরের দ্বারা চালিত বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম, বারংবার নানান ধরনের সত্য-মিথ্যা-নাটুকে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আপাত নিরীহ, কঠিন রোজগার ক্লিষ্ট জনগন কে বুঝিয়ে দিয়ে সমর্থ হন। এর মধ্যে কোন ভিন্ন মতের বিশ্লেষণ কারি থাকলেও, সমস্বর ঢাক্যনিনাদে তার স্বর চাপা পরে যায়, অথবা যদি সেই স্বর ছাপিয়ে যাবার চেষ্টা করে, তখন তাকেও অসামাজিকতার দায়ে দন্ডিত করা হয়।

২...
যাহারা, অতিমাত্রায় স্বার্থসচেতন তারাই দ্বিতীয় পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত হন। তিনি সমাজের যে কোন স্তরের হতে পারেন। নির্লজ্জতা সর্বসমক্ষে প্রাকাশ পেয়ে গেলে, যদি তিনি পরিস্থিতি তার জন্য সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রন না করিতে পারেন, তিনি নিশ্চিন্ত ভাবে অসামাজিক হিসাবে প্রতিপন্ন হন। চোর-ডাকাত –খুনি-উগ্রপন্থী-ধর্ষনকারী- বা এই ধরনের সকলেই এই গোত্রভুক্ত।

এখন এরা সমাজপতি সহ বাকি অবশিষ্ট সমাজের কাছে অসামাজিক হলেও, তাদের নিজেদের ও একটা সমাজ আছে, যেমন চৌর্যসমাজ, দস্যুসমাজ, শোষক সমাজ, ঘাতক সমাজ, উগ্রপন্থাসমাজ, সন্ত্রাসবাদ সমাজ, উৎকোচগ্রাহক সমাজ, নির্জাতক সমাজ ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই সমাজের বীর দের তারা নিজেদের মতন করে শ্রদ্ধা বা সম্মান করেন কিন্তু এই চোরেরা বা এই অসামাজিকেরা যদি সংগঠিত হতে পারে কোনক্রমে, তাহলে তারা ই তৎকালীন সমাজপতিদের অসামাজিক হিসাবে ঘোষিত করবে, আর অভিযোজিত নমনীয় মেরুদন্ডীযুক্ত, অবশিষ্ট মনুষ্যকুল সেটাই মেনে নেবে।
অতএব ইনারাই গনশত্রু বা পরিস্থিতির সাপেক্ষে গনশত্রুর নির্বাচক।

৩...
শাষন করাতে কিবা মজা, যদি শোষন ই না করা গেল! বশ্যতা স্বিকার করানো সমাজপতি দের এক সার্বভৌম চরিত্র। যেনতেন উপায়ে বেবাগা কে বাঁধন দেওয়াতেই হবে, না হলে অস্তিত্বের প্রশ্ন উঠে যাবে, অন্তত পদমর্যাদার। এ হলো মুদ্রার একপিঠ। অন্য পিঠানুযায়ি, মানব চরিত্রের অন্যতম দুর্বলস্থান হলো তোষামোদ, বা আত্মখ্যাতি। বুদ্ধিমান(!) ব্যক্তিরা এই তরনী তে সওয়ার হয়ে, বিভিন্ন রকমারি উপায়ে শুধুমাত্র সমাজপতিদের সন্তুষ্ট করে, বিবিধ স্বার্থসিদ্ধি করে থাকে। তাতে সেটা বৃহত্তর সমাজে জন্য যতই ক্ষতিক্ষারকই হোক না কেন। এরা সমাজিক আর অ-সামাজিক এর মধ্যে দুর্দান্ত ভাবে সাম্যতা বজায় রেখে চলে, এবং পালটি খাওয়াতে এরা সাধারনত উস্তাদ গোত্রের হন, তাই এরা প্রকাশ্য অসামাজিক হয়েও, সমাজপতিদের কাছে স্বযাচিত হয়ে বশ্যতা স্বীকার করে “বুদ্ধিজীবি” নামের বিশেষ বিশেষনে ভূষিত হয়ে যান।

৪...
যাহারা কারোর সাতে পাঁচে সাধারনত থাকেন না, তাদের ভালোমন্দের বিষয়ে ও সাধারনত কেও থাকে না, না সমাজপতি বা অবশিষ্ট বৃহত্তর উন্মুক্ত সমাজ। এরা সমাজের পরজীবির ন্যায়। থাকা বা না থাকার মাঝে তেমন কোন ব্যবধান নেই। ইনারা কাব্যবাগিস ও শান্তিপ্রিয় নাম্নী বিচিত্র প্রজাতির ভুক্ত। মানসিক বিস্ফোরণ যে কখোনো ঘটে না, তেমন টা নয়, কিন্তু তা কখনোই চারিদেওয়ালের বাহিরে প্রকাশ পায় না। ইনারা বিবেক নামক এক ধরনের বিশিষ্ট বর্মের আড়ালে বসবাস করেন। যাদের জীবনের মূল লক্ষ্যই হলো যেকোন মুল্যে ভালো ভালো হয়ে থাকে। আস্তিনে লুকিয়ে রাখা সাপের গালে চুমু খেতে খেতে ওঝার সাথে প্রাতঃরাশ করতে পারার অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। ভোগ সর্বস্ব জীবনদর্শনে ইনারা অজান্তেই নিজেকে বলিকাঠে চড়িয়ে বসে থাকে। এদের ই সমাজ নিয়ন্ত্রন করে। এনারাই রাজতন্ত্রের প্রজা, গণতন্ত্রের জনগন। ইনারাই নিজেদের শত্রু।

অনেক বিশুদ্ধবাদি হয়তো নাক শিটকাবেন, আমাকেও হয়তো প্রথম তিনটের কোন একটার মধ্যে ফেলবেন। তাদের আশ্বস্ত করি, এ নেহাতই উন্মাদীয় ভাবনা ও বিচ্ছিনভবে। তাই বৃহত্তর সমাজে এর কোন প্রভাব পড়বে না। কারন আমরা রুপকথা শুনে বড় হয়েছি, কল্পনার জগতে বিচরন করতে ভালোবাসি। তাই কালো কে কালো বলে মানবো কেন?? বিজ্ঞানিরা বলেছেন, সব রঙ মিলে কালো রঙের উৎপত্তি, তাই তার মধ্যে থেকেই আমরা নীল রঙ খুঁজতে থাকি।

ক্রমশ...
(উন্মাদীয় বানানবিধি অনুসারে)