*****উন্মাদীয় রবিবাসর*****
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
দুই দুগুনে চার.........................
“আতা গাছে তোতা পাখী , ডালিম গাছে মৌ।
হীরে দাদার মড়মড়ে থান, ঠাকুরদাদার বউ”।
হীরে দাদার মড়মড়ে থান, ঠাকুরদাদার বউ”।
আর সে সুখ নাই কত্তা , আর সে সুখ নাই। আমাদের শিশুকালীন ছড়া গুলো কত প্রাসঙ্গিক ছিলো। কি সুন্দর লাগে এখনো এ গুলো শুনলে, কিন্ত আজকাল কেও আর পড়ে না এগুলো সাধারনত। হ্যা, কিছু গোমুখ্যের দল তো চিরদিনই থাকবে, তারাই পড়ে। তবে একটা কথা কি আমরা তো প্রগতিশীল, তাই সময়ের সাথে সাথে বর্তমান প্রজন্মের কাছে এই সকল ছড়ার গ্রহনযোগ্যতা হারিয়েছে। তারই একটু উন্মাদীয় ধারায় বিষ- Lesson।
এর দুটো কারন হতে পারে, একঃ- বাজারে নতুন নতুন ছড়া এসেছে, এখন তো আবার সারা পৃথিবী আমার ড্রয়ংরুম টাইপ। তাই বাপ মায়েদের কলার টিউন “খেলিছো এ বিশ্ব লয়ে...” গোছের, সেখানে ছেলেকে পাক্কা খেলোয়ার বানাতে, তাকে সেই আদ্দিকালের রদ্দিমার্কা ছড়া না পড়িয়ে “চলো নতুন কিছু করি” গোছের ভাবনার পথিক, তবে বাপ-মায়ের আবার ওই সব ছড়ার প্রতি ভীষন দুর্বলতা, আমারই মত, হতভাগা। কারন তারা তো ওগুলো পড়েই বয়েসে বেড়েছে, তারা ভাবেন আমি আমার বাচ্চাদের, না পড়ালেও কি হবে! কেও না কেও ঠিক পড়াবে, আর বাকি ওই নষ্টালজিকতার দায়!! গা-গঞ্জের হা ভাতের দল গুলো ঠিক জিইয়ে রেখে দেবে। কিন্তু দুধপুকুরে মবাই মিলে জল ঢাললে যা হয়, এখানেও তাই, ক্রমবলুপ্তির পথে এই শিশুপাঠ্য।
দুইঃ- পাঠ্য আর পরিবেশের মধ্যে মিল খুঁজে না পাওয়া। বাচ্চা যদি জানতে চাই, পাপা পাপা, What is Ata gach?? কিম্বা মাম্মা মাম্মা what is dalim ghach?? তখন বাবা বা মা উত্তর দেবেন , হয় গুগুলে সার্চ মেরে বেটা কে ছবি দেখিয়ে, নিজেকে ও বাচ্চাকে ধন্য করবে, নতুবা বলবে, বেটা ছুটি পরুক তখন চিড়িয়াখানা বা বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে গিয়ে তোমাকে আতা গাছ, ডালিম গাছে চিনিয়ে আনবো, তোতা পাখী দেখাবো জ্যান্ত। বাচ্চা মোটেই এই বস্তুগুলোর সাথে নিজেকে রিলেট করতে পারে না। আজকালকার বাচ্চাদের কাছে মৌমাছি আর মিশরের পিরামিডের মধ্যে যে কোন ফারাক নেই। কারন তারা দুটোকেই চর্মচক্ষুতে দেখিনি, তাই রিলেট করতে পারে না।
বাকি রইলো হিরে দাদার থান, মৃত ব্যাক্তি ছারা থান আর ব্যাবহার করে কে? সকলেই সুটেট বুটেড মানে পুরুষেরা, আর ললনাগন, খিক খিক...... যদি হও সুজন , তেঁতুল পাতায় ন জন। একটা থান কেটে ৭০ জনের অবলার পোষাক। তবে মা মাসিরা এখনো শড়ির চল কেও কেও রেখে ছিয়েছেন বটে, তবে তার মেয়াদ দীর্ঘদিন আর নেই, সেটা বলাই বাহুল্য। শেষের টা, ঠাকুর দাদা আর তার বউ, মানে ঠাকুমা। তারা কোথায়?? আনবিক পরিবারে তাদের ঠিকানা তো বৃদ্ধাশ্রম।
সুতরাং বাচ্চারা কেন এই ছড়া পড়বে!!
এবার গুরুদেবের রচনা, মানে কবি গুরুর সহজ পাঠের কথায়। নিজগুণে মার্জনা করিবেন, স্পর্ধা করার জন্য।
শুরুটাই তো ভুল, “ছোট খোকা বলে “অ-আ”, কে বলে আজকাল!! সবাই ABC , Mamma , DADDA বলে। একটু বড় হলে Jonny jonny, yes papa। “হ্রস্ব-ই দীর্ঘ-ঈ, বসে খায় ক্ষীর খই”। কি যন্ত্রনার কথা বলুন তো! বসে খাওয়ার সময় কার আছে?? বাপ – মা- বাচ্চা, কারো নেই। তাছারা ক্ষীর খাওয়ার জন্য কি আর বসার লাগে!! বুদ্ধি লাগে আর রুলিং পার্টির সাথে লেগে থাকতে হয়। তাছারা ক্ষীরে চিনি আর ঘি থাকে, ডায়েটের জন্য খাওয়া মানা। আর বাই দা ওয়ে , ‘খই’ টা কি চাইনিজ ডিস!! কেমন যেন নামটা শোনা শোনা লাগছে না?
তবে যাই বলুন, “ডাক পারে ও ঔ, ভাত আনো বড় বৌ”। কি যে বলি মেসো, এই একটা কথা কে বাপ-মায়ে মিলে গুরুদেব কে মাথায় তুলে রেখেছে, কি ভাবছেন! ইন্দ্রানী-সিনা-পিটার? আরে নাহ, স্টার জলসা-প্লাস- সহ বাকি গুলো দেখেছেন কখনো? ডেলি সোপ, সব একটা ছেরে দুই বা ততোধিক। কোন ভরষায় বাচ্চারা এগুলো পড়বে বলুন তো। যাই হোক স্বরবর্ণ পর্যন্তই থাক, ব্যাঞ্জন বর্নের বিচিত্রদৃকের বর্নন ধাপে ধাপে আসবে।
“বনে থাকে বাঘ,
গাছে থাকে পাখী,
জলে থাকে মাছ,
ডালে থাকে ফল”
বুঝুন কান্ড, বন বলে আর কিছু আছে? দু চারটে বাঘ যাও বা আছে, সে চিড়িয়াখানায়, আর পাখী খাঁচায় থাকে বা এ্যানিম্যাল প্লানেট বা ন্যাশানাল জিওগ্রাফীকে। মাছ থাকে বাজারে বা একোরিয়ামে, কারন জলা সব বুজে গেছে প্রায় বা বুজিয়ে দিয়েছে, নদী মজে গেছে। আর গাছ? কই? থাকলে তো সেখানে ফল ধরবে বা পাখী থাকবে! সত্যি বলতে তো বিছুটি বা এলাকুশি ও পর্যন্ত দেশে অমিল।
“আলো হয়, গেলো ভয়”। বা “বাঁশ গাছ, করে নাচ”, বা “পাতু পাল, আনে চাল”। এখন পরমানু চুল্লি বা সৌর শক্তির কল্যানে আলো প্রায় জাইনা বললেই চলে, তাই ভয় ও বিদায় নিয়েছে, অন্তত গুরুদেব যে ভয়ের কথা ভেবে লিখেছিলেন। আর বাঁশ গাছ... হে হে হে। ওটার নেত্তই তো চলছে, খালি বাঁশ আর বাঁশ। সার্থক গুরুদেব, কি অসাধারন দূরদৃষ্টি। পাতু পাল... পাল বাবু পেশা পরিবর্তন করেছেন, উনি এখন মানবসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরে রয়েছেন। ছেলেপিলে পাঠান আর কি। আর চাল এখন দু টাকা কেজি। সবুজ রেশনকার্ড থাকলেই পাওয়া যাবে।
“রাম বনে ফুল পাড়ে. গায়ে তার লাল শাল. …।।
জবা ফুল তোলে. বেল ফুল তোলে. বেল ফুল সাদা. জবা ফুল লাল. জলে আছে নাল ফুল”.
রাম তো দূরস্থান খোদ দশরথ বা বাল্মিকীর ও অসাধ্য ফুলে হাত দেওয়া। দিলেই নতুন রামায়ন রচিত হবে। এক মিনিটে ফিনিশ। আর লাল ফুল?? আর ফোটে না। ওদের এ্যনিমিয়া হয়েছে। জবার রঙ ও নীল। আর যারা রামকে তুলে রেখেছেন, তাদের তো সব ফুলের রঙ ই গেরুয়া। বড্ড বিতর্কিত, তাই... এগুলোও পড়া মানা বাচ্চাদের। তবে বেশ কিছু জিনিস একটু অন্যভাবে ফুটে উঠেছে, যেমন, “লাল বাতি নীল বাতি, কত লোকে খাবে, কত লোক গান হবে, সাত দিন ছুটি”। অব্যার্থ ভবিষ্য কথন। আচ্ছা গুরুদেবও কি বুদ্ধিজীবি ছিলেন? নাহলে এই সব উৎসবের কথা টের পেয়েছিলেন কেমন করে!
“নাম তার মতিবিল, বহুদুর জল...... ডিঙি চড়ে আসে চাষী, কেটে লয় ধান, বেলা গেলে গাঁয়ে ফেরে গেয়ে সারিগান”। বর্তমানে কোথায় এমন বিল আছে? যার বহু দূর জল? যদিও বা কিছু জল থেকে থাকে, দূষণের চোটে তাতে হাঁস মাছ থাকে? চাষী এখন সবুজ সাথী চড়ে আসে বা ট্রাক্টারে। জাতীয় জামাই মানে ভদ্র বাবু তো আবার হেলিকপ্টারে চড়ে আসেন, উনিও চাষী কিনা। ধান কাটার মেসিনে ধান কেটে নেয়। আর বেলা শেষ হলে শহর পানে ধায় চাষীর দন, কানে হেডফোন গুঁজে, আর তাতে বাজে-হাপ্তে মে চার শনিবার হোনা চাহিয়ে। বাচ্চারা এসব পড়বে!! এর থেকে তো ক্লাস ওয়ানে পিথাগোরাস সহজ মনে হবে।
“ছায়ার ঘোমটা মুখে টানি, আছে আমাদের পাড়া খানি” , এ পর্যন্ত ঠিকিই আছে। কিন্ত তালবন, বাঁশবন, ঝুরু ঝুরু পাতা, টলটল জলে ভরা দিঘী কোথায়? এখন তো সব লম্বা লম্বা আবাসনের ছায়া, আর টলটলে নীল জল একোয়াটিকায়। “ঢেকি পেতে ধান ভানে বুড়ি” আরে ঢেকী তো কার্টুনে নারদমুনির গলায় দেখেছে বাচ্চা, ওতে আবার ধান ও ভাঙা হয় বুঝি! তাছারা ধান ভেঙে হয় টা কি? বাচ্চারা খায় তো কর্নফ্লেক্স আর পিৎজা বার্গার। মাঝে সাজে রাইস খায়, কিন্তু ধানের সাথে তার কি সম্পর্ক।
“আমাদের ছোট নদী চলে আঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে” ছোট নদী কোথায়? সব তো হেজে গেছে, নতুবা ড্রেনের জল এসে প্রাকৃতিক হাই ড্রেনে পরিনত হয়েছে, সেখানে নেমে হাটু মেপে দেখবে কে? সব তো মশা মাছি আর জীবানু তে থিক থিক করছে। ভাইরালে আক্রান্ত করার তাল নাকি! “চিক চিক করে বালি কোথা নাই কাদা”, গুরুদেবের কি দোষ, তখন কি আর বালি মাফিয়া ছিল দেশে! “আঁচলে ছাকিয়া তারা ছোট মাছ ধরে”, ছোট মাছ টা কি বস্তু? কারো জানা থাকলে হেল্প মি প্লিজ। আমরা চোখে দেখিনি যে সব প্রাগৈতিহাসিক বস্তু, বাচ্চা রা সেই সব পড়বে! এতো ইতিহাস মহায়।
“বেলা যায়। তেল মেখে ড়ুব দিয়ে আসি। তার পরে খেলা হবে। একা একা খেলা যায় না”। সম্পূর্ন ইরোটিক। বাবা মা তেলের বিজ্ঞাপনে বাচ্চাদের বলেছে যে, বাবুসোনা ওই তেল বড়দের খেলার তেল বাবা। তাই এগুলোও টোটাল অযৌক্তিক। হ্যাঁ, একটু বড় হলে যৌন শিক্ষার কাজে চলতেই পারে। এই “এসেছে শরৎ হিমের পরশ, লেগেছে হাওয়ার পরে” এটাতে সিজেন খানিক টা পিছিয়ে গেলেও বাচ্চাদের পড়ানোর একটা জাইগা আছে।
“কাল ছিলো ডাল খালি, আজ ফুলে যায় ভরে। বল দেখি তুই মালী, হয় সে কেমন করে”। এটার রচনাকালে সেটিং শব্দটা ছিল না বোধ হয়, একবার সেটিং ঠিকঠাক হয়ে গেলে, সব রাতারাতি ফুলে ট্রান্সফার হয়ে যায়। তবে বাচ্চাদের এই সব পলিটিক্যাল মালমসলা না পড়ানোই ভালো। “নদীর ঘাটের কাছে , নৌকা বাঁধা আছে”। এখন নৌকা থাক বা না থাক, মদের বোতল- প্রতিমার কঙ্কাল- প্লাস্টিকের প্যাকেট- পচা গলা দেহ- কন্ডোম-ন্যাকপিন ইত্যাদি, আবার শহরে হলে যুগল-মিলন, সাট্টা-চুল্লুর ঠেক সব পাওয়া যায়। ছ্যাঃ- ম্যাগো... কি বলে বাচ্চাদের ওসব পড়াবো! যদি নদীর পাড়ে যাবার জেদ ধরে তখন!। “বাঁশগাছে কত বাঁদর, যত ঝাঁকা দেয় ডাল তত কাঁপে” , বাঁদর খুঁজতে আর গাছে কেন, লেখকই বা কম কি, তবে ঝাঁকা দিলে নিজে নিজেই কাঁপি, এই যা ফারাক।
“কতদিন ভাবে ফুল উড়ে যাবো কবে, যেথা খুশী সেথা যাবো ভারী মজা হবে” এতো পুরো কল্পনা মানে ফিক্সন। আরে বাওয়া বাচ্চা এ সব ই যদি শিখবে ছোটাভীম দেখুক, বা ডিজনিল্যান্ড যাক। ওখানেও তো ভরপুর কল্পনা আর মস্তি। উপরন্তু মায়েরা ও একট সেই ফাঁকে সোশ্যাল মিডিয়াতে একটু চড়েখুটে আসতে পারে। যাক এই ভাবে প্রথম ভাগের দায়মুক্ত।
এবার দ্বিতীয় ভাগ।
বেটা সব কুৎসা কারির দল, নীলসাদা দেখে সব হেদিয়ে গেলো, ওদিকে দ্বিতীয় ভাগের প্রথম সহজ পাঠের শুরুই তো হচ্ছে “বাদল করেছে, মেঘের রঙ ঘন নীল”। এখান থেকে শুরু করলেও করা যেতে পারে। দ্বিতীয় পাঠে সেই আদ্যনাথ বাবুর কন্যার বিয়ে, মানে তখনও কন্যাশ্রী। অবশ্যই শিশু পাঠ্য। বড় প্রাসঙ্গিক। এখানে দান ধ্যানের কথাও আছে। আবার নেত্ত করার কথাও, মন খুশী হলে ব্যাটবল খেলা কে উৎসাহ সেওয়ার কথাও। এটাকেই জাতীয় প্যারাগ্রাফ হিসাবে ঘোষণা করার উপযুক্ত।
আর বেশী লম্বা করবো না, এটার একটু বিশ্লেষণ করেই শেষ করবো। এর পরেও যদি বেঁচে থাকি, মানে আপনারা বাচিয়ে রাখেন, তখন বাকি টুকুর শ্রাদ্ধ করার দুঃসাহষ করবো।
এবারে সেই মহান রোবিনদো সংগীত। আরে বাবা, বাচ্চা কে এটাই সুর করে শেখান দেখবেন, বড় হয়ে অন্নু মালিক বা জিৎ গাঙ্গুলি হয়ে গেছে।
কুমোর-পাড়ার গোরুর গাড়ি —
বোঝাই-করা কল্সি হাঁড়ি ।
গাড়ি চালায় বংশীবদন ,
সঙ্গে-যে যায় ভাগ্নে মদন ।
হাট বসেচে শুক্রবারে
বক্সীগঞ্জে পদ্মাপারে ।
জিনিষপত্র জুটিয়ে এনে
গ্রামের মানুষ বেচে কেনে ।
উচ্ছে বেগুন পটল মূলো ,
বেতের বোনা ধামা কুলো ,
সর্ষে ছোলা ময়দা আটা ,
শীতের র্যা পার নক্মশাকাটা ।
ঝাঁঝ্ রি কড়া বেড়ি হাতা ,
শহর থেকে সস্তা ছাতা ।
কল্সি-ভরা এখো গুড়ে
মাছি যত বেড়ায় উড়ে ।
খড়ের আঁটি নৌকো বেয়ে
আনল ঘাটে চাষীর মেয়ে ।
অন্ধ কানাই পথের ‘ পরে
গান শুনিয়ে ভিক্ষে করে!
পাড়ার ছেলে স্নানের ঘাটে
জল ছিটিয়ে সাঁতার কাটে ।
প্রথমত, কুমোর পাড়া আর নেই, পাল বাবুরা ওই... আগেই বলেছি। গরু হলো গিয়ে মাতা, সুতরাং তাঁকে দিয়ে গাড়ি চালানোর কথা ভাবাও পাপ। তাছারা দুর্গাপুজোর সময় মন্ডপসজ্জা বা সংসদে বিক্ষোভ দেখানো, এ সব ছারা হাঁড়ি কলসি কোথায় লাগে! কোচবিহারের বংশীবদন জেলের ঘানি টানছে। সঙ্গের মদন টি ... হি হি হা হা হা, আমি আর বললুম না সব্বাই জানে। বাচ্চাদের না পড়ালোই ভালো, কচি মাথায় সারদা-রোজভ্যালি-পিয়ালি, কত প্রেশার ভাবুন তো। হাট এখন শুক্রবারে বসে না, হপ্তাকে সবসে সস্তা দিন “উইডনেস-ডে বাজার” বা “উইকএন্ড ধামাকা’ সেটাও বক্সীগঞ্জের পদ্মাপারে নয়, নেট গঞ্জে ও সপিং মলে। জিনিসপত্র এখন বহুজাতিক সংস্থাগুলো জুটিয়ে আনে, কেনার কাজটা শুধু গাঁয়ের মানুষ গুলো করে।
উচ্ছে-বেগুন-পটল- মুলো, এই সব গুলো নাম এক নিঃশ্বাসে যদি কেও নিয়ে ফেলেন প্রকাশ্যে, সেই রাত্রেই তোলা চেয়ে দুবাই থেকে ভাই এর ফোন আসবে, এতটাই দুর্মুল্য সম্পদ এগুলো। আর বেত কোথায়? যে ধামা কুলো বাধবে। তবে হ্যাঁ, যে কটা বাধে ওই সংসদে ঠিক খায়াল রাখলে দেখা যায়। সর্সে ছোলা ময়দা আটা- এগুলো নিজ নিজ স্থানেই এখনো পর্যন্ত আপাতত রয়েছে। শীতের র্যা্পার, সেটা কি? আমরা তো ব্লাঙ্কেট গায়ে দিই। ছারো ও কথা, পরের লাইনে আসি। ঝাঁঝরি কড়া বেড়ি হাতা, ও সব তো রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় , ক্যান্টিন মালিকের ছেলে বা হোটেল ম্যানেজমেন্টের বিষয় এটা, বাচ্চাদের পড়িয়ে কি লাভ! আমরা তো উইকডে তে ক্যান্টিনে খায়, বাচ্চারা ক্রেশে বা ডে বোর্ডিং এ। উইকএন্ডে রেস্তোরাতে। এগুলো পড়া মানে অহেতুক লোড বাড়ানো।
কলসি ভরা এখো গুড়ে, মাছি যত বেড়াই উঠে, এই সব আনহেলদি ব্যাপার বাচ্চাদের শেখানো মানে সেটা এক ধরনের ক্রাইম। একে তো হেলথ কনসাস্নেস বাড়ানোর জন্য সুগারফ্রিও খাওয়াই বারন, সেখানে জীবানু সম্মিলিত মাছি ভর্তি এখো গুড়। হাও ক্যান আই বিলিভ দিস, গুরুদেব এগুলো বাচ্চাদের জন্য লিখে গেছেন! খড়ের আঁটি তো যারা কুশপুতুল দাহ করবে বা যার ঘরে গরু আছে বা যাদের ঠাকুর গড়ার ব্যাবসা তাদের সাবজেক্ট, এগুলো বাচ্চারা জেনে কি করবে! জাষ্ট রিডিকিউলাস।
অন্ধ কানাই এখন ট্রেনে গান করে, পথের ধারে সে থাকে না, ওখানে এখন ফাস্টফুড সেন্টার। তাছারা ওরা অনেক সময় পলিটিক্যাল ক্যাম্পেনিং ও করে শুনেছি, তাই বাচ্চাদের ও সব থেকে শতহস্ত দূরে রাখায় ভালো। পাড়ার সাতার কাটা ছেলে গুলোর আর সময় কই! তারা গেমস খেলে, ক্লিপিংস দেখে, এক্টিভিটিস করে, কেও কেও আমার লেখাও পড়ে। তাই ওটাও গুরুত্বহীন। আর গুরুত্বহীন বিষয় পয়ে কি লাভ!
এবার বলুন , গুরুদেব বেচে থাকলেও কি, নিজে নিজেই ট্রাফিক পোষ্টের মাথায় চড়ে বসে থাকতেন না?
এখন শত্তুরে শুনলে বলবে, হ্যাঁরে মর্কটোন্মাদ, তোর নিজের ত্যানা আগে ঠিক কর, একে তো ছাইভস্ম লিখিস, দুর্বোধ্যো সব ভাষার প্রয়োগ সহ বানান এর অবস্থা কি! সহজপাঠ পড়েই কি শেখা এই উন্মাদীয় বানানবিধি! ব্যাটা নরসুন্দর।
আরে না বাবু, আত্মপক্ষ সমর্থন না, সমর্পন করে বলছি, এটা তো আমার নিজশ্বপাঠ, সহজপাঠ সত্যিই সহজপাঠ্য, আমিও তাই পড়েছিলাম। এতে গুরুদেবের কি দোষ। বদলেছি আমরা, সময় বদলায় নি। আজও সুর্য ওঠে, মেঘ করে, মানুষ প্রেম করে, ঘুম পায়, খিদে পায়, কবিতা পায়। সব কিছু জোর করে বদলেছি আমরা, নিজেদের স্বার্থে। আমরা যে Ctrl+c & Ctrl+V এর জামানার মানুষ, নিজের সম্পদ ছেরে দুর্দমনীয় অন্য হবার চেষ্টা। ভালো মন্দ বাছার দায় নেই।
আমার সাহিত্য তো ইস্কনের খিচুড়ি। যৌবনে বঙ্কিম কঠিন প্রেমের ব্যামো বাধালো, তার পর এই... দুকাপ সহজপাঠ, আড়াই টেবিল চামচ বঙ্কিমি সাহিত্য মিশিয়ে, সুকুমারি পাত্রে গুলে চার ঢোঁক খেয়ে নিন। সাথে মুখশুদ্ধি হিসাবে বিভুতি-সুনীল-শরৎ এক-দুদানা করে চুষে নিন, ব্যাস। পরেরদিন কোঁথ আসার আগে উন্মাদীয় বানানবিধি এসে যাবে, আই শপথ।
একবার টিরাই মেরেই দেখুন না।