Sunday, 16 August 2015

অসামাজিক- প্রথম পর্ব



উন্মাদীয় রবিবাসর
*******************

অসামাজিক
~~~~~~~~~

সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা পিপীলিকার উপর গবেষণা করিয়াছেন বলে সংবাদে প্রকাশ, তাহাদের বসবাসের একটি মানচিত্রও প্রস্তুত করিয়াছেন। পিপীলিকা সমাজবদ্ধ জীব। তাহারাও খাদ্য অন্বেশন করিয়া থাকে, তাহাদের বাসস্থানের প্রয়োজন হয়। প্রজনন হেতু যৌনতা ও গোচরিত হয়, প্রতিযোগিতা হয়, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে। মানুষের ও তাই, শুধু শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে শত যোজন দূরে সরিয়া যায়।

প্রসঙ্গঃ সমাজ।

কে বানাইয়াছে এই সমাজ? কিভাবে বানাইয়াছে? কাহার জন্য বানাইয়াছে? কতদিন লাগিয়াছিল বানাইতে?? আর সেই সমাজের আয়ুষ্কাল ই বা কতদিনের নিমিত্ত? আর কে ই বা সেই দিননির্ধারন টা নির্নয় করিবে? হাজারো প্রশ্নের ভিড়। এখন সমাজ যখন থাকিবে, অসামাজিকতা ও থাকিবে, নির্ধারিত ভাবেই। এবার প্রশ্ন ইহা নির্ধারন করিবে কে?? ইহা করিবে সমাজের মাথারা। কাহারা তবে এই সমাজের মাথা? সর্ব প্রথমেই আসিবেন ধনপতিরা। সর্বশেষেও তারাই, কিছু চুরান্ত ব্যতিক্রম ছারা। একে একে এইখান হইতে ভিন্ন ভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়... রাজনীতিক, উচ্চপদস্থ আমলা, বিভিন্ন পেশার শিক্ষিত জ্ঞানীগুনী বুদ্ধিজীবি, প্রমুখরা। বর্তমান কালে নির্ধনী ও উক্ত সমাজের কক্ষস্থলে পৌছাইয়া গেলে ধনপতি হইতে বিশেষ সময় লাগে না, যাহার মানে গিয়ে দাঁড়ায়, সমাজপতি ও ধনপতি বর্তমানের আরশিতে অভিন্ন।

অভিধানিক মতে সমাজ হল কিছু মানুষের সমষ্টি যারা সর্বসম্মতির ভিত্তিতে চিন্তা-ভাবনার বিনিময় করে কর্মের বন্টন নির্ধারন করে সকলের হিতার্থে একত্রে বসবাস করে। তাহলে গনতন্ত্র কি, এ প্রশ্ন উঠবেই। এটাই গনতন্ত্র। রাজতন্ত্রে সমাজের শিখরে পৌছাতে হয় ক্ষমতার ব্যাবহার হতো নতুবা উত্তরাধিকার সুত্রে, গনতন্ত্রে সমাজের শিখরে পৌছাতে জনগনের দয়া প্রয়োজন। তবে এখানে সমাজের শীর্ষ মানেই ক্ষমতার কেন্দ্রস্থল। কিন্তু গনতন্ত্রে কি সর্বসম্মতির ভিত্তিতে সমাজ গঠিত হয়!! হয় না। এখানে শতাংশের হারে বৃহত্তর স্বার্থের সর্বসম্মতি ক্রমে মিলন হয়ে সমাজ গঠিত হয়। যারা গ্রাম, শহর, নগর মহকুমা, জেলা, রাজ্য হয়ে দেশ পরিচালনা করে। সকলের হিতার্থে সমাজের গঠনের হেতু হলেও যারা সেই বৃহত্তর সম্মিলিত স্বার্থের বিপক্ষে ছিলেন, প্রাথমিক ভাবে তারাই অসামাজিক ও গনশত্রু রুপে চিহ্নিত হন।

কিন্ত অসামাজিকতার এ একান্তই প্রাথমিক স্তর। আবহমান কাল ধরে চলে আসা কোন আচার বা বিধি কে ও অনেক সময় সমাজিক বলে মানি। সেটার বিরুদ্ধ মত হলে তো বটেই, সমানুপাতিক কোন মত উপস্থাপিত হলেই, অসামাজিকতা বলে চিহ্নিত হয়। তাহলে সাদা চোখে সমাজের বড় শত্রু কে? যার একটা চিন্তাশীল মস্তিষ্ক আছে, যার আবেগ আছে, এবং চিন্তাশক্তিকে বাস্তবে প্রতিফলিত করে একটা রুপ দিতে পারেন, সর্বোপরি চলমান সমাজ যার যা যাদের জীবনে গভীর ছাপ ফেলেছে, এবং তাঁরা অন্য বিকল্পের সন্ধান করছেন তারাই অসামাজিক। ততক্ষন পর্যন্ত যতক্ষন না তাঁরা, শতাংশের বিচারে একটা বৃহত্তর পরিসর সৃষ্টি করতে পারছেন।

এখন আবার প্রশ্ন উঠবে, তাহলে অসামাজিক বা ‘Anti Social’ রা কি সকলেই বিপ্লবী। আসলে আমরা যারা নিতান্তই ছাপোষা, মানে সমাজের দ্বারা লালিত পালিত, মননে চিন্তাশীল, কিন্তু বিচ্ছুরন নেই, তাদের মনেই প্রশ্নেরা ভির করে। যারা চিন্তাশীল নন, তাদের সমাজ নিয়ে অতো দায় নেই। পেট ভরে খাবার, শান্তির ঘুম পেলেই সন্তুষ্ট, কারন অভিযোজনের ক্রমবর্ধমান প্রক্রিয়া তাদের মেরুদন্ডকে এতোটাই নমনীয় করে তুলেছে যে, পরিস্থির সাথে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে আপস করে নিতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের বাজারে তাঁরা হাসতে হাসতে জনপ্রতি ১৫০০ টাকার ইলিশ উৎসবে মেতে উঠতে পারেন।

এখন ‘Anti Social’ দের ও চারভাগে ভাগ করা যায়,
১) সমাজের শীর্ষ ব্যাক্তিদের শত্রু রাজশত্রু।
২) সমাজের শীর্ষ ব্যাক্তি সহ গোটা সমাজের শত্রু গনশত্রু।
৩) সমাজের শীর্ষ ব্যাক্তি বাদে গোটা সমাজের শত্রু।
৪) নিজের শত্রু।

১...
প্রতিটি জীবই জন্মগত ভাবেই স্বার্থপর। লক্ষকোটি শুক্রাণুর মধ্যে ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে, জয়লাভের মধ্য দিয়ে প্রথম স্বার্থসিদ্ধির সূচনা। তাই স্বার্থপরায়নতা থাকবেই, তা সেটা সমাজের যেখানেই অবস্থান করি না কেন। আর যখন শীর্ষ মানেই ক্ষমতা, তখন এক্ষেত্রে অনেক সময় ই নির্লজ্জতার সীমা অতিক্রম করে যায়, সুতরাং সমাজের শীর্ষস্তর ও তার ব্যাতিক্রম নেই। বর্তমান যুগে সমমনভাবাপন্ন বলে আসলে কিছু হয় না, অন্তত এই স্তরে, সবটাই সমস্বার্থভাবাপন্ন। কিছু সমস্বার্থের মানুষ জনহিতের উদ্দেশ্যে কর্মসম্পাদন করছেন, নিজ স্বার্থ সম্পূর্ন বজায় রেখে, এখন কোন একজনের ভাগে যদি কম পরিয়া যায়( তাতে, তার নিজস্ব মতামত ও হতে পারে), তিনি বিদ্রোহী হয়ে উঠেন, এবং সমষ্টির বাকি সকলে সঠিক ঔষধি দিয়ে তাঁকে ক্ষান্ত করিতে না পারলেই, অসামাজিক বলে প্রতিপন্ন করে দেন। সুতরাং তিনি রাজশত্রু। প্রতিটা মানুষই মনে করেন তাঁরা যেটা করছেন, সেটা সঠিক, সমষ্টির ক্ষেত্রেও সেটা সমান ভাবে গ্রাহ্য। তাই সমাজপতি রা বিরুদ্ধমত সইতে পারেন না, যদি না জনপ্লাবন বা বিপ্লবের সৃষ্টি হয়। কিন্তু বিপ্লব ক্ষনজন্মা। সকাল বিকাল জন্ম নেয় না। তাই সমাজ পতিদের দেখানো পথ ভিন্ন অন্য যে কোন পথ বা মতাদর্শের মালিকই হল অসামাজিক। রাজশত্রু কে সহজে চিহ্নিত করা যায়, কারন সমাজপতি দের গনদরবারে পৌছানোর জন্য জনকরের দ্বারা চালিত বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম, বারংবার নানান ধরনের সত্য-মিথ্যা-নাটুকে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আপাত নিরীহ, কঠিন রোজগার ক্লিষ্ট জনগন কে বুঝিয়ে দিয়ে সমর্থ হন। এর মধ্যে কোন ভিন্ন মতের বিশ্লেষণ কারি থাকলেও, সমস্বর ঢাক্যনিনাদে তার স্বর চাপা পরে যায়, অথবা যদি সেই স্বর ছাপিয়ে যাবার চেষ্টা করে, তখন তাকেও অসামাজিকতার দায়ে দন্ডিত করা হয়।

২...
যাহারা, অতিমাত্রায় স্বার্থসচেতন তারাই দ্বিতীয় পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত হন। তিনি সমাজের যে কোন স্তরের হতে পারেন। নির্লজ্জতা সর্বসমক্ষে প্রাকাশ পেয়ে গেলে, যদি তিনি পরিস্থিতি তার জন্য সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রন না করিতে পারেন, তিনি নিশ্চিন্ত ভাবে অসামাজিক হিসাবে প্রতিপন্ন হন। চোর-ডাকাত –খুনি-উগ্রপন্থী-ধর্ষনকারী- বা এই ধরনের সকলেই এই গোত্রভুক্ত।

এখন এরা সমাজপতি সহ বাকি অবশিষ্ট সমাজের কাছে অসামাজিক হলেও, তাদের নিজেদের ও একটা সমাজ আছে, যেমন চৌর্যসমাজ, দস্যুসমাজ, শোষক সমাজ, ঘাতক সমাজ, উগ্রপন্থাসমাজ, সন্ত্রাসবাদ সমাজ, উৎকোচগ্রাহক সমাজ, নির্জাতক সমাজ ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই সমাজের বীর দের তারা নিজেদের মতন করে শ্রদ্ধা বা সম্মান করেন কিন্তু এই চোরেরা বা এই অসামাজিকেরা যদি সংগঠিত হতে পারে কোনক্রমে, তাহলে তারা ই তৎকালীন সমাজপতিদের অসামাজিক হিসাবে ঘোষিত করবে, আর অভিযোজিত নমনীয় মেরুদন্ডীযুক্ত, অবশিষ্ট মনুষ্যকুল সেটাই মেনে নেবে।
অতএব ইনারাই গনশত্রু বা পরিস্থিতির সাপেক্ষে গনশত্রুর নির্বাচক।

৩...
শাষন করাতে কিবা মজা, যদি শোষন ই না করা গেল! বশ্যতা স্বিকার করানো সমাজপতি দের এক সার্বভৌম চরিত্র। যেনতেন উপায়ে বেবাগা কে বাঁধন দেওয়াতেই হবে, না হলে অস্তিত্বের প্রশ্ন উঠে যাবে, অন্তত পদমর্যাদার। এ হলো মুদ্রার একপিঠ। অন্য পিঠানুযায়ি, মানব চরিত্রের অন্যতম দুর্বলস্থান হলো তোষামোদ, বা আত্মখ্যাতি। বুদ্ধিমান(!) ব্যক্তিরা এই তরনী তে সওয়ার হয়ে, বিভিন্ন রকমারি উপায়ে শুধুমাত্র সমাজপতিদের সন্তুষ্ট করে, বিবিধ স্বার্থসিদ্ধি করে থাকে। তাতে সেটা বৃহত্তর সমাজে জন্য যতই ক্ষতিক্ষারকই হোক না কেন। এরা সমাজিক আর অ-সামাজিক এর মধ্যে দুর্দান্ত ভাবে সাম্যতা বজায় রেখে চলে, এবং পালটি খাওয়াতে এরা সাধারনত উস্তাদ গোত্রের হন, তাই এরা প্রকাশ্য অসামাজিক হয়েও, সমাজপতিদের কাছে স্বযাচিত হয়ে বশ্যতা স্বীকার করে “বুদ্ধিজীবি” নামের বিশেষ বিশেষনে ভূষিত হয়ে যান।

৪...
যাহারা কারোর সাতে পাঁচে সাধারনত থাকেন না, তাদের ভালোমন্দের বিষয়ে ও সাধারনত কেও থাকে না, না সমাজপতি বা অবশিষ্ট বৃহত্তর উন্মুক্ত সমাজ। এরা সমাজের পরজীবির ন্যায়। থাকা বা না থাকার মাঝে তেমন কোন ব্যবধান নেই। ইনারা কাব্যবাগিস ও শান্তিপ্রিয় নাম্নী বিচিত্র প্রজাতির ভুক্ত। মানসিক বিস্ফোরণ যে কখোনো ঘটে না, তেমন টা নয়, কিন্তু তা কখনোই চারিদেওয়ালের বাহিরে প্রকাশ পায় না। ইনারা বিবেক নামক এক ধরনের বিশিষ্ট বর্মের আড়ালে বসবাস করেন। যাদের জীবনের মূল লক্ষ্যই হলো যেকোন মুল্যে ভালো ভালো হয়ে থাকে। আস্তিনে লুকিয়ে রাখা সাপের গালে চুমু খেতে খেতে ওঝার সাথে প্রাতঃরাশ করতে পারার অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। ভোগ সর্বস্ব জীবনদর্শনে ইনারা অজান্তেই নিজেকে বলিকাঠে চড়িয়ে বসে থাকে। এদের ই সমাজ নিয়ন্ত্রন করে। এনারাই রাজতন্ত্রের প্রজা, গণতন্ত্রের জনগন। ইনারাই নিজেদের শত্রু।

অনেক বিশুদ্ধবাদি হয়তো নাক শিটকাবেন, আমাকেও হয়তো প্রথম তিনটের কোন একটার মধ্যে ফেলবেন। তাদের আশ্বস্ত করি, এ নেহাতই উন্মাদীয় ভাবনা ও বিচ্ছিনভবে। তাই বৃহত্তর সমাজে এর কোন প্রভাব পড়বে না। কারন আমরা রুপকথা শুনে বড় হয়েছি, কল্পনার জগতে বিচরন করতে ভালোবাসি। তাই কালো কে কালো বলে মানবো কেন?? বিজ্ঞানিরা বলেছেন, সব রঙ মিলে কালো রঙের উৎপত্তি, তাই তার মধ্যে থেকেই আমরা নীল রঙ খুঁজতে থাকি।

ক্রমশ...
(উন্মাদীয় বানানবিধি অনুসারে)



No comments:

Post a Comment