Thursday, 10 September 2015

নায়ক বনাম অভিনেতা



নায়ক বনাম অভিনেতা



তেরোর গেঁড়ো, অনেকের অশুভ হলেও অনেকের পৌষমাস। কি আশ্চর্য আজ নাকি মানবাধিকার দিবস। কি ন্ত কে মানব? যে ফুটপাতে গাড়িচাপা পরে মারা গেছে, নাকি যারা পঙ্গু হয়েছেন? নাকি সাক্ষী রবীন্দ্র পাতিল? নাকি ভাইজান মানে সুলতান।

প্রথম প্রশ্নঃ ফুটপাতে মানুষ শোবে কেন?
দ্বিতীয় প্রশ্নঃ গাড়ি কে চালাচ্ছিল?
তৃতীয় প্রশ্নঃ সালমান খান মদ্যপ ছিলেন কি না!!
উত্তরঃঃ সালমান খান বেকসুর খালাস।
অর্থনৈতিক বৈষম্য দ্বন্দ্ব কারী দুই ব্যাক্তির মধ্যে আসমান জমিনের ফারাক হলে, অনেক প্রশ্ন করতে নেই, যেমন মৃত্য বা অঙ্গহানির প্রশ্নই এখানে মোটেই বিবেচ্য নয়। আরে বাবা পায়সা তো দিয়ে দিয়েছে। ভাইজান। বজরঙ্গী ভাইজান।
পুলিস গ্রহনযোগ্য তথ্যপ্রমান দিতে পারেনি। সেটাই কি স্বাভাবিক নয় কি? ভারতবর্ষের আইন কচ্ছপের গতিতে এগোয়, কিন্তু মানুষ তো আর কচ্ছপের আয়ু বিশিষ্ট নয়। তাই আইন আইনের পথেই চলে। মাঝখানে ভাইজানের দেহরক্ষী রবীন্দ্র পাতিল সাক্ষ্য দেওয়ার দরুন চাকরি যায়, না মানে চাকরি যাবার জন্য অবশ্য অন্য অজুহাত ছিল।
এর পর কোন এক অজানা ক্ষয়রোগে রবীন্দ্র আক্রান্ত হয়, পুলিস উল্টে রবীন্দ্রর নামে হুলিয়া জারি করে। এরপর ২০০৭ সালে সঠাত মুম্বই এর রাস্তায় সেই রবীন্দ পাতিলকে দেখা যায়। এর পর সব শেষ। শেষ দিন পর্যন্ত সে নিজে অবশ্য তাঁর বয়ানে অটুট ছিল। যদিও পুলিস সেটা মানেনি।
সাক্ষীর অভাবে সালমান খান মুক্ত। নিশ্চই আইনের প্রতি ভরসা বাড়বে। অন্তত যারা প্রভাবশালী, ও বিপুল অর্থ আছে খরচ করার মত। অন্ধ আইনকে সময়ের আবর্তে ফেলে সময়মত বেড়িয়ে আসতে পারবে। আইন আইনের পথে চিরকালই চলে।
সব কিছু একটু থিতিয়ে গেলেই বেকসুর খালাস। আর সাক্ষী? রাখেন আপনার সাক্ষী। সব হাপিস হয়ে যাবে।
আইন কখনোই যে প্রশ্ন টি দেখবে না (কারন আইনের চোখ বাধা): ফুটপাত বাসী ওই মৃত মানুষ টি মৃত হল কিভাবে? নাকি ওই লোকটি মাতৃগর্ভ থেকেই গাড়িচাপা পড়ে মৃত বড় হয়ে ছিল।
"বিয়িং হিউম্যান"
নাহ রবীন্দ্র পাতিল বা তাঁর পরিবার কখনো এই নাম শুনেছেন বলে জানা যায় নি। বিয়িং হিউম্যান ও কখনো রবীন্দ্র পাতিল নামের কারোর নাম শোনেনি।
সালমান খান দুরন্ত সফল অভিনেতা নিঃসন্দেহে, "নায়ক" নন।
~উপরের ছবিটি ইন্টারনেট থেকে নিয়ে এডিট করা, রবীন্দ্র পাতিলের, সুস্থাবস্থার ও ক্ষয় রোগগ্রস্থ অবস্থার। 

উন্মাদ হার্মাদ

Sunday, 6 September 2015

একটি শিক্ষক দিবস


*****উন্মাদীয় রবিবাসর*****

(উন্মাদীয় বানানবিধি অনুসারে)


এটা একটা স্কুল পালানো আমোদগেড়ে- অর্ধশিক্ষিতের শিক্ষক দিবস উদযাপন। সক্কাল সক্কাল স্নানটান করে, গলায় পাওডার ও বগলে ডিও মেখে ভাবতে বসে যায়, কার গলায় ঠিক মালাটা চড়াবো? কারন যার জন্মদিন উপলক্ষে, এই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, তাঁর নামটা উচ্চারনেও তো জিভ জড়িয়ে যায়। আর ঠিক কি কি ভাবে উদযাপন টা করবো! শিক্ষার ব্যাপ্তি ও গভীরতা যাহেতু মোটেই নেই , তাই ভাবনারা মাঝপথেই অনাথ হয়ে যায়। তবুও কিছু তো একটা করতে হবে তাই আর কি, তবে কেও ব্যাক্তিগত ভাবে নেবেন না, এটাও অনুরোধ.........

সকালে একটা পোষ্ট দেখলাম, জনৈক ব্যাক্তির করা সেটি...

“স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলছিল। 'যেমন খুশি সাজো' ইভেন্ট। বিভিন্ন জন নানারকম সেজেছে। হঠাৎ একজন ছাত্র সামনে বসে থাকা শিক্ষকদের ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে, চেয়ার টেবিল উলটে ফেলে দিল। সুললিত খিস্তি সহকারে শিক্ষকদের পরিবারের এমনকি স্বর্গত সদস্যদের প্রতি সমভাষায় তর্পন করে চলেছে। সকলে মিলে তাকে আটকানোর চেষ্টা করছে। তখন ছাত্রটি চিৎকার করে উঠলো ' আমি সরকারি দল সেজেছি, আমি রাজ্যপাটে থাকা দলের প্রতিনিধি সেজেছি'”।

তবুও, আপনি কিন্তু কিচ্ছু দেখেন নি মাষ্টার মশাই...

এটা একটা দারুন প্রবাদ, যদিও আমদের কিছু অগ্রজ শিক্ষকেরাই এটাকে বাস্তবায়িত করেছি। বর্তমান প্রজন্মের বৃহদাংশ সেই পতাকাটাকে বয়ে নিয়ে চলেছেন স্বগর্বে।

শিক্ষক দিবস, এটাকে কি উদযাপন করা যায়? না কি শিক্ষক জাতির উদ্দেশ্যে অবশিষ্ট জাতির বাৎসরিক তর্পন। আচ্ছা শুধু মাত্র একটা বিশেষ দিনে শিক্ষকদের পেন বা বই উপহার দিয়ে আর তাঁদের সম্বন্ধে দু-চারটে বাছা বাছা শব্দবন্ধ প্রয়োগ করেই কি সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি পূর্নতা পায়! বোধয়হয় আমরা দায় মুক্ত হতে যায়, আমরা প্রত্যেকেই তো স্বাধীনচেতা, তাই এটাকে সাধ্যমত ঋণশোধের একটা নির্লজ্জ প্রয়াস হিসাবেও দেখা যেতেই পারে। নাহলে আজকাল প্রায় প্রতিদিনই সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামে শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনা। কিছুকাল আগেও জনমানসে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হতো, এখন এমন অবস্থা যে রোজকার এই ক্রমবৃদ্ধিমান এই ঘটনাপরম্পরা শিক্ষকেরাও মেনে নিয়েছেন, বা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন, দৈনন্দিন প্রাতঃকর্মের মত।

শিক্ষার সাথে দানের সম্পর্ক অঙ্গাগীভাবে জড়িত। বিদ্বানরা বলে থাকেন, শিক্ষা এমন একটা সম্পদ যা দান করলে, উক্ত সম্পদের ক্রমবৃদ্ধি ঘটে, অর্থাৎ শিক্ষাদানের সাথে যুক্ত ব্যাক্তি ধনী হয়ে উঠেন, অন্তত জ্ঞানগত ভাবে। কিছু কাল পুর্বেও, প্রণামী হিসাবে যা জুটতো, তাতে করে শিক্ষকদের উনোনে কোনমতে জল গরম হত। সাহিত্যের পন্ডিত মশাইদের লক্ষ্য করুন, দেখবেন প্রায় সকলেরই এক একজন মহান পন্ডিত রুপে বর্নিত ও সাথে সাথে দরিদ্র ও বটে। কেও কেও হতদরিদ্র। মানে সমাজচিত্র টা এমন , যেন শিক্ষকের দরিদ্র হওয়াটা শিক্ষাপেশার অন্যতম চারিত্রিক ও সামাজিক গুন। নাহলে আপনি শিক্ষক নন। আর এইটাই আমাদের মনে বদ্ধমূলে প্রেথিত, যে শিক্ষককে ধনী হইতে নাই।

পণ্ডিত নেহেরু বলেছিলেন, ‘আগামী দিনের ভারত কেমন হবে, তা নির্ধারিত হবে শ্রেণীকক্ষসমূহে।’ কথাটা কালজয়ী, কারন এটা আজও সত্য।

শিক্ষার্থীদের কাছে বিদ্যালয় আনন্দদায়ক করে তুলতে হবে, এটাই নীতিতিত্ব। শুধু পুঁথিগত বিদ্যায় প্রাণের স্পন্দন জাগবে না। যদিও শিখিয়ে পড়িয়ে একটা রবীন্দ্রনাথ তো দূরঅস্ত একটা সচেতন রবীন্দ্ররচনার বোদ্ধা বা তাঁর দর্শনের আলোকে আলোকিতো করা যেতেই পারে। শিক্ষাকে ফুর্তিময়, আনন্দঘন, করে তুলতে পারলে শিক্ষার্থীরা নিজের জীবনের জন্য শিক্ষাতে উদ্ভূত হবে নিজে থেকেই, তাঁর জন্য শিক্ষকদের উদ্যোগ নিতে হবে।

পেশাদারিত্বের মোড়কে স্নেহশীল পিতার মত শিক্ষার্থীদের মনের কাছাকাছি পৌছে তাদের সমস্যার সমাধান করতে হবে। নীতিহীন শিক্ষা আর অশিক্ষার মধ্যে ফারাক সামান্যই, দুটোই সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর। নিজেদের ভুল নিজেরা না শোধরালে অন্যের ক্ষমতাও নেই পরিবর্তন আনা। আমাদেরে বেশিরভাগ শিক্ষকেরাই মিথ্যে হলফ খাচ্ছেন আর প্রাইভাট টিউশনের নামে, মোটা বেতনের বিনিময়ে লক্ষীলাভ করছেন। তবুও দষ শুধু ছায়া প্রকাশনীর। মেঝেতে টাইলস বসছে, ঘরে এসি বা চারচাকা গাড়ি। এখনো আমরা মানে শিক্ষকেরা যে বেতনই পাই না কেন , তাতে করে এই দুর্মুল্যের বাজারে সংসার চালিয়ে ওই বাহুল্য করা যায় না, যদি না শিক্ষক পরিচয় টা আমরা বেচতে পারি। ক জন আছেন এমন? যারা বিনামুল্যে শিক্ষাদান ব্যাবস্থার সাথে যুক্ত। মানে নিজেকে দাতা হিসাবে তুলে ধরতে!

বর্তমানে সমাজ বদলেছে, নানান আন্দোলন ও গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষকরা সমাজের মধ্যবিত্ত সমাজের সর্ব্ববৃহৎ প্রতিনিধি। বিশ্বায়নের বাজার কর্তাদের অন্যতম লক্ষ্য শিক্ষক সমাজ। কারন তাঁদের কে শিক্ষার্থীসমাজ অনুসরণ এর সাথে সাথে অনেক অবিভাবকগন অনুকরনও করেন। মহার্ঘভাতা সহ কেন্দ্রস্তরের সাথে রাজ্যস্তরের বেতন কাঠামোর ও অসামঞ্জস্য থাকতে পারে, তবুও অতীতের আরশিতে মুখ দেখলে, বর্তমান শিক্ষকেরাই নিজেদের ভাগ্যবান দেখবেন। ইহা বিতর্কিত ও প্রমানিত সত্য।

শিক্ষকতা বর্তমানে একটা পেশাও বটে। কারন ক্ষুধা বলে অধ্যয়টা জীবন নামক পুস্তকের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ অধ্যায়। সেখানে শিক্ষকেরা ব্রাত্য থাকেন কেমনে! শিক্ষকেরাও মানুষ, আমার বা আপনার ঘরেরই ছেলে বা ভাই। বণিককুল, রাজনীতিক বা সমাজবিরোধী সহ আমার মত উন্মাদদের মত চাহিদার উন্মত্ততা না থাকলেও, যেটা থাকে সেটাও একজন সামাজিক জীব হিসাবে সমপরিমানের এবং কম কিছুনা। তাঁদের জীবনেও নিত্যচাহিদা, লোভ, লালসা, কাম, ক্রোধ, ক্লান্তি, ইত্যাদি সহ সবকিছুই আছে, যা শিক্ষা ছারা অন্যপেশার মানুষজনদের ভিতরেও বিদ্যমান। সর্বপরি বিজ্ঞাপনের নির্লজ্জ ও দুর্দমনীয় হাতছানিকে উপেক্ষা করা, অতিবড় সন্তেরও যেখানে অসাধ্য, সেখানে বেচারা শিক্ষককুল আর কি করে। গা বাঁচানো যে অসম্ভব। তাছারা শিক্ষকের পরিবারের বাকি সদস্যগণ, তাদেরও চাহিদা বিশ্বায়নের সুত্র মেনেই, কিন্তু প্রত্যেকে উপার্যনাক্ষম নন। তাই শিক্ষকদের, উপায়ান্তর ভাবে শিক্ষাকে পন্য হিসাবে বাজারজাত না করা ছারা বিকল্প পন্থা কি আছে?

বেচারা শিক্ষক...
একজন মুদি দোকানি, বা কাপড়ের ফিরিওয়ালা বা চিকিৎসক, তাদের টা ও পেশা, কিন্তু সেখানে অনুকরন বা অনুসরণ খুবই নগন্য পরিমানে, কিন্তু শিক্ষা পেসার সাথে যুক্ত মানুষজন! সদা সর্বদা শিক্ষার্থী আর তাদের অবিভাবক সহ রাষ্ট্র যন্ত্রের আণুবীক্ষণিক নজরের আওতায়। জীবনিসুত্রের নুন্যতম তাৎক্ষনিক প্রতিবর্ত ক্রিয়াগুলোও অদৃশ্য সেন্সরের হাতে বাঁধা। বাকি পৃথিবী যেগুলো কে আমোদ হিসাবে মান্যতা দিয়েছে, উতশৃঙ্খল না হলেও, প্রকাশ্যে সেগুলোর বহু কিছুতেই, শিক্ষকদের কিন্ত উদযাপনে মানা। পেশাগত কারনেই অনেক ছোট ছোট সামাজিক বা ব্যাক্তিগত চাওয়াপাওয়া কে বলি কাষ্ঠে চড়াতে হয় বা আপস করে নিতে হয়। প্রথম প্রথম বাধ্য হলেও পরবর্তীতে অভ্যস্ত হয়ে যান।

এখন সাফল্য নির্ভর করছে আপনি কি, তাঁর উপর। যদি শিক্ষাজিবী হন তাহলে শুধুমাত্র শিক্ষা কে পন্য হিসাবে বাজারজাত করে পেশা তথা রুজি রক্ষা র তাগিদ, এতে করে সর্বচ্চ বুদ্ধিজীবির খেতাবটা পেতে পারেন। আর বৃহস্পতি তুঙ্গে থাকলে ঠাটবাটে রাজপুত্তুর কেও হার মানানোর ক্ষমতা রাখবেন। মুশকিল দ্বিতীয় পন্থীদের নিয়ে , যিনারা শিক্ষাবিদ। এনাদের চাকুরি থেকে অবসরের পর পেনসনের টাকা ঠিক আটকাবেই আটকাবে। আসলে বিদ্যাটাকে ইনারা দানের বস্তু হিসাবেই দেখেছেন, আর বেতন কে সাম্মানিক হিসাবে। যারা জীবনে একটাবারও প্রমোদ ভ্রমনে যেতে পারেননি, কষ্টে সৃষ্টে কোনমতে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। তবে এনাদের নিয়ে শিক্ষার্থীমহলে একটা গর্ব করার মত ব্যাপার থাকে। রাস্তাঘাটে যেখানে সেখানে টুক করে মিলে যায়, এক আধটা, কান পর্যন্ত এঁটো করা হাসি সহ পেন্নাম।

কিন্তু ক জন দ্বিতীয় শ্রেনিভুক্ত হতে পারেন?? আমাদের অনেক শিক্ষকেরাই নগন্য ব্যক্তি স্বার্থের জন্য, ব্যাক্তিত্ব খুইয়ে প্রায় চরিত্রহীন হয়ে ক্ষমতাবানদের কাছাকাছি গা ঘেঁষা ঘ্যেষি করে বসছি। মেরুদন্ডকে বিক্রি করেদিচ্ছি। রাষ্ট্রের তৈরি চিত্রনাট্য অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পরিচালিত করার ভাবনা পোষন করে চলেছি। এই চরিত্রের কিন্তু কোন আমরা ওরা নেই, সব দশকেই এটা সত্য। শাষক বদল হয়েছে, চিত্রপটের পরিবর্তন হয়নি, বরং নির্লজ্জতার মাত্রা অনেক ক্ষেত্রেই সহ্যের সীমা ছারিয়েছে। শিক্ষিকেরা নিজেদের নিজেরা হেও করলে, বাকি সমাজের কি দায় থাকে সম্পূর্ন শ্রদ্ধা প্রদর্শনের? সমস্যা হলে, কুকর্ম করে মুষ্টিমেয় কয়েকজন, কিন্তু দুর্নামের ভাগীদার হয় গোটা শিক্ষক সমাজ।

এই লেখার শুরুটা ঠিক কোন স্থান থেকে করা উচিৎ এটা ভাবতে গিয়ে বিষয়টা ওভাবেই শুরু হয়ে গেলো। কেন শিক্ষকদের মধ্যে এমন শ্রেনি বিন্যাস ঘটলো? সেই ঘটনার দিকে দৃষ্টি পাত করলে দেখা যাবে - ‘বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন বাঙালিদের মধ্যে প্রথম গ্র্যাজুয়েট। কিন্তু অবাক করা মত বিষয় যে, তিনি বাংলা ভাষায় অনুত্তীর্ন হবার দরুন, কৃপা স্বরূপ কিছু নাম্বার ধরে দিয়ে তাঁকে উত্তীর্ন করানো হয়েছিল। এভাবে বাঙালি গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে তিনি প্রথম গ্র্যাজুয়েট হওয়ার গৌরব লাভ করেন। অথচ তাঁর লেখা বাংলা পড়েই কতজন উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করছেন। আমার মত উন্মাদ ও বঙ্কিমি সাহিত্য দ্বারা অনুপ্রানিত হয়ে এই কাকের বাসার মত প্রবন্ধ লিখতে উৎসাহিত হয়েছি।’

কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্র এর মত প্রতিভাসম্পন্ন মানুষ কেন এমন ফলাফল করলেন? কারণ, বাংলা ছিল তখন দারুণ সংস্কৃত ঘেষা। সেই সংস্কৃতের কঠিন ও দুরূহ বিষয়গুলো তাদের পক্ষে মুখস্ত করা ছিল কঠিন। মুখস্ত বিদ্যা শুধু একটি মুখস্ত জাতি উপহার দিয়েছে তা নয়, বরং কালের পর কাল জাতিকে পিছিয়ে দিচ্ছেও। আর সেই শিক্ষায় বলিয়ান আমাদের বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষকেরাও। কবিগুরুর ভাষায় ‘যে ছাত্র পকেটে করে নকল নিয়ে পরীক্ষার হলে ঢোকে তাকে তোমরা বিদ্যালয় থেকে খেদিয়ে দাও, আর যে মগজের ভেতর চুরি করে নিয়ে ঢোকে তাকে তোমরা শ্রেষ্ঠ ছাত্রের সম্মান দাও, এটাই প্রকৃত শিক্ষা ব্যাবস্থা।’ শুধুই বা ছাত্র কেন, শিক্ষকেরাও তো অনেকেই এই পথেরই পথিক, বা সরক্ষনের প্রতক্ষ ফসল।

আজকের বিদ্যালয় গুলোতে যারা কৃতী হচ্ছেন, তাদের কে জাঁকজমকপূর্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে, পুরস্কারও দেয়া হচ্ছে। কিন্তু যারা তুলনামূলক খারাপ ফলাফল করেছে বা পাশ করতেই পারেনি সেই বৃহৎ অংশের হিতের জন্য কতজন শিক্ষক কি কি ধরনের উদ্যোগ নেন, ওই রকম ঘটা করে?। শিক্ষার আলো থেকে অপসৃত, অকালে হারানো বা অনগ্রসর প্রচুর শিক্ষার্থীরা পরিবারের কাছে তো দায় স্বরুপ। হতাশা আর অবহেলা থেকে এরা সমাজের অন্ধকার পথে পা বাড়ায়। অথবা শিশু শ্রম, ভিক্ষাবৃত্তি বা ওই ধরনের দুষ্কর্মের সাথে জড়িয়ে পরে। সমাজের শান্তিশৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটায়। অথচ এই অকালে ঝরে পড়া, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের যদি সমাজমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করা যেতো, তাহলে নিজেদের পছন্দমত পেশা বেছে নিয়ে তারা সুন্দর জীবন যাপন করতে পারতো। কিন্তু সেই শিক্ষা দেবে কে? আজ যারা শিক্ষক বলে নিজেদের দাবি করেন, তাঁরা কতটা ওয়াকিবহাল, এই সকল বিষয়ের উপর? নিজের পেশা নিয়ে কজন কতটুকু গবেষনা করেছেন, নিজেকে সহ সম্পূর্ন ব্যাবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে।
শিক্ষকরা যদি এই বিষয়ে আরো মনোযোগী হতেন , তবেই বোধ হয় প্রকৃত শিক্ষক হয়ে উঠতে পারতেন। অন্যেরা শিক্ষকদের আর তাদের পেশাকে এতো হেও করতে পারতো না।

শিক্ষার উদ্দেশ্য মানুষকে বিকশিত করা, তাই শিক্ষক জাতির মেরুদন্ড। আর মেরুদন্ডের নিজেই যদি ক্যালসিয়ামের অভাবে ভোগা রুগী হন, পুরো সমাজটাই ঝাঁঝরা হয়ে যাবে, শিক্ষার্থীরা দক্ষ মানবসম্পদের জাইগায় দক্ষ অসুরে রূপান্তরিত হবে। তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রেই এই মেরুনন্ড কথাটা কেমন যেন আত্মশ্লাঘার মত শোনায়, আয়নার সামনে দারিয়ে অনেক শিক্ষকই বলতে পারবেন না যে আমিই সেই , যাকে আদর্শ শিক্ষক বলা চলে, আসলে নিজেকেই নিজে ধাপ্পা দেওয়ার মত ঘটনা। কবিগুরু বলেছিলেন, ‘জীবন যেমন হওয়া উচিত, শিক্ষাও তেমন হওয়া উচিত।’ জীবন ও শিক্ষা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তাই জীবনের চাহিদা মেটাতে সক্ষম সেরকম শিক্ষা চাই। আর শিক্ষার মান উন্নয়ন, শিক্ষক বিনা কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়। আজকের ভারত দ্রুত উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। কিন্তু অধিক জনসংখ্যার ভারে নুজ্ব। তাই শিক্ষকদেরই এগিয়ে আসতে হবে সামাজিক পরিবর্তন আনতে। আমরা যারা শিক্ষক, তাঁরা নিজেদের একটু সম্মান করার পাশাপাশি নিজেদের পেশাদার করে তুলতে পারলে সত্যিকারের শিক্ষক হিসাবে পরিচিতি পাবো বা পরিচয় দিয়েও গর্ব অনুভব করতে পারবো।

এখানেও শেষ হয়ে গেল, আসলে আমি এর বেশী আর জানিই না যে।

~ উন্মাদীয় বানানদোষে দুষ্ট 


Saturday, 5 September 2015

।। প্রতিষ্ঠান ।।

বদলে চলা সমাজের চলচ্ছবির সাথে আমরাও অবিরাম বদলে চলেছি। সভা সমিতিও আমাদের প্রযুক্তিময়। আমাদের বন্ধুমহল সংঘ অন্তর্জালের মাধ্যমে শয়নকক্ষের কুঠুরিতে বন্দি। সেখানে কিছু দূরদৃষ্টি সম্পন্ন সভ্য, এই বহুজনের সমাগমকে নিছক সময় অতিবাহনের মাধ্যম হিসাবে না দেখে, নিজেদের চাওয়া পাওয়া দুঃখ আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার পাশাপাশি, ইতস্তত বিক্ষিপ্ত, সমাজের সকল বুনিয়াদি পেশার সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত মানুষদের , লেখক, পাঠক, সমালোচক,  ছাত্র,  শিক্ষানুরাগী, মাতাল, দাঁতাল সহ অনেককে বিশেষত একটি নতুন বন্ধুবৃত্তকে একত্র করে, এক ঘাটে এসে পর্যালোচোনার জন্য ভিন্ন নামের ভিন্ন চরিত্রের গ্রুপ নামক প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি করেছেন। সময়ের সাথে আরো গুনীজনের সমাগম ঘটে সেই ভাবনাদের পরিস্ফুটন ঘটায়।

এমনই এক গ্রুপে হঠাৎ করেই আমার জন্ম। যেখানে গ্রুপের বিষয়টা কেবলমাত্র এই বুড়োঙুলের ডগাতে না থেকে পারিবারিক সম্পর্কের বাধনে জড়িয়ে পড়েছি। এটা শুরুটা অন্তর্জালীয় হলেও সময়ের দাবি মেনেই আজ আমরা আত্মীয়, তা আমরা যেখানেই থাকিনা কেন। সেই দিনের খেয়ালে নামহীনতার বাইরে গিয়ে সম্পূর্ন শুন্য থেকে শুরু করার মাধ্যমে যে ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাট এই কিম্ভূত নামের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই... গ্রুপ নামক 'পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে', আজ তা সকলের ভালোবাসা, শুভেচ্ছা আর আস্কারাতে তৃতীয় বর্ষ অতিক্রম করল। দেখতে দেখতে নানান ওঠাপড়ার মাধ্যমে, বন্ধুত্বের সংযোজন বিয়োজন সহকারে, নিত্যনতুন অস্থানে কুস্থানে নোঙর ফেলে আবার গুটিয়ে এই বান্দর বন্দর খোঁজার চেষ্টায় মুহ্যমান। বহুবার কিছু বন্ধু(!) অস্তিত্বটাকেই মুছে দিতে চেয়েছেন, কিন্তু আপনাদের এই আঁশটে সোহাগের লোভে সেই বিনাশের চিতা থেকেই পূনর্জন্ম লভেছি। এটাই উন্মাদের আনন্দ আর সাফল্য। কারন আমি একা উন্মাদ নই। আমার সাথের সকলেই একটা গন ভাবনার শরিক, যেটার নাম উন্মাদনা। দুঃখ ক্লেশ বিরহ ব্যাথা কার জীবনে নেই, সেটাকে দূরে রেখে জীবনকে উপভোগ করার উন্মাদনা। হাজার ব্যাস্ততার ফাঁকে নিজেকে সময় দেবার উন্মাদনা, নিজেকে বিনোদন দেবার উন্মাদনা, যেটার মুখ্যভাগে মর্কট নাচটা আমি নাচি প্রকাশ্যে এই যা ফারাক।  এই তৃতীয় বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আমার একটি ক্ষুদ্র প্রবন্ধ বিনম্র উৎসর্গ সকল গ্রুপ নামক পরিবারের কর্মকর্তাদের প্রতি-

প্রতিষ্ঠা
-------

প্রচলিত ব্যাখ্যা অনুযায়ী, কিছু জীব বা মনুষ্য একান্তিভূত বা একত্রিভূত হয়ে, ব্যক্তিলক্ষ্যে বা যৌথ লক্ষ্যে, সঠিক সাথী বা পাথেয় বা গুনগত সদস্য নির্বাচন করে, কোন লক্ষ্যকে নির্দিষ্ট করে, যে কোন উদ্দেশ্যে, সাক্ষাৎ বা কয়েক জন কে নেতা নির্বাচন করার মাধ্যমে, একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের সংস্থাপন কে প্রতিষ্ঠা হিসাবে উল্লেখ করা যেতে পারে।

প্রতিষ্ঠা নানা ধরনের হতে পারে, প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম প্রতিষ্ঠান। ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠা হতে পারে, সমষ্টিগত প্রতিষ্ঠা হতে পারে। ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠার অভ্যন্তরে ব্যক্তিজীবনের সকলকিছুই, যা নিত্যপ্রয়োজনীয় বা বিনোদনমূলক দৈনন্দিন কার্যকলাপ, প্রচেষ্টা ও অনুশীলনের মাধ্যমে বিকাশ লাভ করে। কিন্তু একজন ব্যক্তি আরো কয়েকজন সমমনষ্কদের সাথী করে, সমভাবনার যাত্রী হয়ে, সমস্বার্থে একটি সমবায় গঠনের মাধম্যে পরিষেবা দিতে বা পেতে শুরু করে তখন তাকে প্রতিষ্ঠান বলে।

ব্যক্তিস্বার্থের খাতিরেই নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার তাগিদে পথ চলার সূত্রপাত হয়। কিন্তু কোথায় আছে একা মানে বোকা। চলার পথে সহকারি প্রয়োজন, ব্যাধি, ক্লান্তি ও একঘেয়েমি দূর করার জন্য সাথী প্রয়োজন, উৎসাহ দান হোক বা সমালোচোনা তার জন্যও দ্বিতীয় ব্যক্তি বা বহু ব্যক্তিবর্গের প্রয়োজন। এর জন্যই একক ক্ষমতার অধিকারী সত্ত্বার প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির ও বহুল সমাগম সমৃদ্ধ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন। সেখানে যোগ্যতা অনুসারে দায়িত্বের বন্টন হয় এবং সমাহারে অর্থনৈতিক লাভের ফসল ঘরে তোলেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে সম্পূর্ন প্রয়াসে দৈহিক ও মানসিক শ্রম প্রতিষ্ঠানে প্রদান করে।

প্রতিষ্ঠানের একবার শুরু হয়ে গেলে থাকে বলপূর্বক না থামালে তাহা কখনই থামে না। এখন নিউটনের সুত্রানুসারে সেই বল আভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক যে কোন প্রকারেরই হতে পারে। বিশুদ্ধবাদীরা ভ্রু কোঁচকাবেন। প্রত্যহই সকাল সন্ধ্যা হাজার প্রতিষ্ঠানের জন্ম হচ্ছে আবার সমহারে বন্ধ ও হয়ে যাচ্ছে। বিদ্বজ্জন বলবে ভাবনার পরিসর টা কে আরো বিস্তৃত করুন। লক্ষ্য করুন বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলোর দিকে, মানব সভ্যতার ইতিহাসে আজ পর্যন্ত কোন প্রতিষ্ঠানই কি বন্ধ হয়েছে? রুপান্তরিত হয়েছে, তাও খুবই সামান্য রুপে। ইসলামের মত কোন কোন প্রতিষ্ঠানে তো বদল তো দূরস্থান, বদলের কথা বলাই অন্যয়, ও প্রতিষ্ঠান বিরোধীতার চরমতম ধাপ।

যে কোন প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা একটি গুরুত্বপূর্ন শর্ত তার দীর্ঘমেয়াদিত্বের জন্য। আর তার জন্য প্রয়োজন অনুশাসন। যে প্রতিষ্ঠান যত বড়, জানতে হবে সেই প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবনী প্রক্রিয়ার প্রসূতি গাহ ততটাই উন্নত। ক্রমউদ্ভাবনী শক্তি ভিন্ন, সমাজে টিকে থাকা দুরুহ।

যিনি প্রতিষ্ঠানকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন বা যার মস্তিষ্কপ্রসূত এবং যারা তার সহকর্মী তথা সহউদ্যোগী ছিলেন তারা প্রত্যেকেই সর্বোচ্চ প্রসংসার যোগ্য, এবং তারাই মুখ্য উদ্ভাবক। তবে প্রতিষ্ঠানের জন্মদাতার দায় থাকে প্রতিষ্ঠান কে মসৃণ গতি প্রদানের। প্রতিষ্ঠান কে চালাইবার দায় তার উপরেই সবচেয়ে বেশি বর্তায়। একটা প্রতিষ্ঠানকে চালনা করার জন্য পরিচালন মণ্ডলী আবশ্যক। যেখানে ভালো নেতার সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারদর্শী বৃত্তাংশ কে জুড়তে সক্ষম হলে তবেই একটি উদ্ভাবক রসশালাতে পরিনত করা সম্ভব।

নেতা কে সকল বিষয়ে পারদর্শী না হলেও চলবে, কিন্তু তাৎক্ষণিক বিচক্ষনতা সহ প্রত্যুৎপন্নমতিত্বাও নেতৃত্বের গুণটা থাকা আবশ্যক। যিনি যে কোন পরিস্থিতিতে, উদ্ভূত সমস্যার হাল ধরে তার সুষ্ঠ সমাধান করতে পারেন। কিন্তু কালের নিয়মে মেধায় স্থবিরতা আসে, মস্তিষ্ক নতুন ভাবনার জন্ম দিতে পারে না, তার জন্য উদ্ভাবনী শক্তির সরবরাহের প্রতিবিধান টাও জরুরী। এবং এটা বর্তমান পরিচালকমণ্ডলীদের সহ নেতার দায়িত্ব, সেই সরবরাহের পথটা সকল সময় ক্রিয়াশীল রাখা। যেখানে ওই পরিচালকমন্ডলী বুদ্ধ্যাঙ্ক ও শ্রমের নিরিখে মেয়াদ উত্তীর্ণ করলেও, প্রতিষ্ঠান স্বমহিমায় বিরাজ করে।

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একটা ভিত্তি থাকে। আর সেই ভিত্তি ততটাই মজবুত যতটা বেশি ওই প্রতিষ্ঠানের শিকড় মাটির অন্তরে প্রেথিত। প্রতিষ্ঠান যত উচুতেই উঠুকনা কেন, তাকে টিকে থাকতে গেলে যেটা বা যিনি বা যারা মূল কাঠামো, সেটা বা তাদের মাটির সাথে সম্পর্ক আরো নিবিড় করতে হয়, আর এই সম্পর্কে ছেদ মানেই ধরাশায়ী হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।

নির্মান করা আর টিকিয়ে রাখার মাঝখানের অংশটুকুর নাম পরিচালনা। নির্মানের পিছনে থাকে একটি অভিলাষের রেখচিত্র আর শ্রমিকের শ্রমের সংমিশ্রণ। টিকিয়ে রাখতে চাই নিখুঁত দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, এবং সাথে জুড়ে থাকা সকলের স্বার্থ সুরক্ষিত করা। আর এই জ্ঞানটুকুর নামই প্রাতিষ্ঠানিক ভাষায় ‘কৌশলি তদারক’। তারাই আসলে সমাদের অভিমুখ নির্ধারন করে দেয়।

একজন শিল্পী, যার শিক্ষনিবিশি কালে অথবা শিল্পকে যখন পেশা হিসাবে বাছলেন তখন তিনি এক্কেবারেই অচেনা। কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া, তাদের সেই সংগ্রামের পিছনে এই তথাকথিত প্রতিষ্ঠানেরাই আর্থিক ও যোগাযোগের উপস্থাপক রূপে কাজ করেন। আর এই প্রতিভাকে খুঁজে বের করেন সেই কৌশলি তদারকের দল যারা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনার দায়িত্বে। একজন শিক্ষক, ডাক্তার, বড় শিল্পী, অভিনেতা, জননেতা যে কেউই এই তদারকের ভুমিকাতে উত্তীর্ন হতে পারেন। হয়ত তাঁরা কোন ঘোষিত আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানের অংশ নন। কিন্তু একটু গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করলেই দেখা যাবে আসলে এগুলো বা ওই ব্যাক্তি বর্গরা নিজেই এক ধরনের প্রচ্ছন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান বা তার অংশ, যার সাথে আমাদের দৈনন্দিন ভালমন্দ গুলো জড়িয়ে থাকে। বিনোদনের ক্ষেত্রেও একই।  

বিশাল ধরাধামে বিপুল জনরাশি, এখানে স্থান কাল পাত্র ভেদে সমাজ একেক রকমের। তাদের জীবনধারনের নূন্যতম শর্ত থেকে চাহিদা, মূল্যবোধ সকল কিছুই আলাদা আলাদা। তাই পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠানেরও শেষ নেই। বিভিন্ন রকমের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিছু মূল প্রতিষ্ঠানের উল্লেখ করলাম, যাহার মধ্যে প্রায় সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানই ঠাঁই পেয়ে যাবে।

একক প্রতিষ্ঠানঃ যেমন রাষ্ট্র, বা সংঘ, দাতব্য সংস্থা ইত্যাদি। এরা প্রায়শই স্বয়ংসম্পন্ন।

সহকারি প্রতিষ্ঠানঃ যেমন রাজনৈতিক দল, ধর্ম সমাজ ইত্যাদি। এদের কেবল মাত্র জনগনকে প্রয়োজন।

বৃহত্তর সমযোজী প্রতিষ্ঠানঃ যেমন পরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সর্বোপরি প্রশাসন সহ ইত্যাদি ইত্যাদি, এটা রাষ্ট্রের বা রাষ্ট্র অনুমোদিত ব্যক্তি মালিকানাধীনস্ত, এবং রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গুলোর সাথে সমন্বয় রেখে চলার মধ্যেই তাদের অস্তিত্ব। বিবাহও কিন্তু এক ধরনের সমযোজী প্রতিষ্ঠান।

পরজীবী প্রতিষ্ঠানঃ ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, ইউনিসেফ, কর্মী ইউনিয়ন, ইত্যাদি। এরা সকল সময়েই কারো না কারোর উপর বিভিন্ন ভাবে নির্ভরশীল।

কিছু ব্যাতিক্রমি ব্যাক্তিবর্গ, বিশ্বব্যাপি কোন নতুন যুক্তিবাদের আবির্ভাব ঘটিয়ে, বিশ্বসমাজ কে নতুন পথে চালিত করে, এবং তাদের ভাবনা কে বিভিন্ন বৃহত্তর প্রতিষ্ঠান , যেমন রাষ্ট্র ... নির্দ্বিধায় মেনে নেয় বা মানাতে বাধ্য করে তারাও একটা গোটা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পেয়ে থাকে। যেমন ম্যান্ডেলা বা গান্ধী, বা আইনস্টাইন বা লিঙ্কন বা মার্ক জুকেরবার্গ বা স্টিভ জোবস।

সমগোত্রীয় বা সমস্বার্থের জন্য একটি সমাজে গড়ে উঠা প্রতিষ্ঠান গুলির মধ্যে সংঘাত অবশ্যম্ভাবী। সেটা স্বাস্থ্যকর বা হানাহানি যে কোন স্তরের হতে পারে, যতই উভয়েই সমাজের পক্ষে কল্যানকর হোক না কেন।
ডারউইনের তত্ব এক্ষেত্রেও সমান প্রযোজ্য। যোগ্যতমের উদবর্তন। সে ই টিকে থাকবে, যে বা লড়াই করে বিজয়ী হবে। এবং এই লড়াই নিরন্তর ঘটে চলা একটা প্রক্রিয়ার নাম। কখনো কখনো যা নিজের সঙ্গেও হতে পারে। টিকে থাকার জন্য উতকর্ষের কোন বিকল্প নেই।

প্রতিষ্ঠা হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া কোন বিশেষ ক্ষনের নাম নয়, প্রতিষ্ঠা হলো একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, সেখানে ইচ্ছাশক্তির ফলিত রুপ লক্ষ্যিত হয়। প্রতিষ্ঠালব্ধ মনুষ্য হইবার বাসনা উন্মাদ ভিন্ন সকলেই পোষণ করে থাকে। বুদ্ধি-শ্রম-ভাগ্য এই তিনের সঙ্গম সঠিক সময়েই হইলে, প্রতিষ্ঠা পাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। প্রতিষ্ঠা লাভ করার জন্য পূর্বসুরি সফল প্রতিষ্ঠান গুলির নিয়ম বিধি গুলি কে অনুসরণ করার প্রয়োজন, অনেকে অনুকরন করে ফেলেন, কিন্ত পরিস্থিতি ভেদে অনুকরন বিপদ সৃষ্টি বা বৃদ্ধি করে, কিন্তু অনুসরণ সঠিক লক্ষ্যে পৌছারোর পথ সুগম করে।

_______
@উন্মাদ হার্মাদ