জগদ্বিখ্যাত ননসেন্স কমেডির রচয়িতা প্রণম্য সুকুমার রায়েরবিখ্যাত সৃষ্টি 'অবাক জলপান' নাটকটিকে আজকের ফেসবুকীয় সংস্কৃতির পরিমন্ডলে ভাবার বিনম্র স্পর্ধা...
-----------------------------------
চশমা চোখে সরু গোঁফের ছবিওয়ালা এক পাঠকের প্রবেশ। আপাতত “স্পর্শযোগ বার্তালাপ” যন্ত্রের মাধম্যে এই অন্তর্জালে প্রবেশ। যদিও মাঝেমধ্যে “শীর্ষ অধিস্থাপন সুবিধাযুক্ত পরিগনক” যন্ত্রও ব্যাবহার করেন। উষ্কখুষ্ক চুল, শ্রান্ত চেহারা সহ প্রজ্ঞাপিত চিত্রে, সুসজ্জিতের ছাপ মোটেই পরিলক্ষিত হয়না
পাঠকঃ নাহ- ভাল পোষ্ট না পেলে আর চলছেনা। সেই ছুটি পরা থেকে ঘেঁটে আসছি, ছুটি শেষ হতে এখনও বেশ কয়েকদিন বাকি । একঘেয়ে চুটকি আর ‘বখরার’ সুতোর জ্বালায় মগজের ঘিলু শুকিয়ে উঠল । কিন্তু পোষ্ট চাই কার কাছে ? চেনা যারা আছেন তারা সবই তো সেই সবজান্তা ‘পরিপালক’। অষ্টম শ্রেণীর নমুনা ন্যায় ‘সম্পাদনা’ ‘উপদলচক্র’ সব।
নামিদামি উপদলচক্র সব নিজেদের গর্বেই ফুলে ফুলুরি হয়ে আছে। ‘অনুমোদনের’ যাঁতাকলে আঁটকে “সম্পৃক্তি অনুরোধ” শীত ঘুম দিচ্ছে, যে কয়েকটা অমন “পৃষ্ঠগ্রন্থ উপদলচক্র” সন্ধানে ছিল। পরিপালকদের “ঝাঁকানি” দিলেও সাড়া দেয় না । ‘পেটিকাভ্যন্তরে’ চেঁচাতে গেলে হয়তো বাকি লোকজন জানিয়ে নিয়ে ‘স্থায়ী প্রতিবন্ধন’ করে দেবে । ‘সময়সরণী’তেও ত লোকজন দেখছিনে যিনি পোষ্ট লিখতে পারেন । যাই হোক এর একটা সুলুকসন্ধান চেয়ে ‘হা-পিত্যেশ’ নাম্নী একটা অধিচক্রে, সমাধানহেতু ‘সুত্র’ খুলিলেন।
পাঠক লিখিলেন : “মশাই, ভাল ভাল পোষ্ট আর পাই কোথায় বলতে পারেন” ?
‘গুরুভার অনুগামী’ সহ এক ব্যাক্তির প্রথম মন্তব্য।
অনুগামীওয়ালা : পোষ্টার ? পোষ্টার এখানে কোথায় পাবেন ? এ ত ‘চিত্র-বিপনির’ শিল্পকাজ, সে আমার কম্ম নয় । চলচ্চিত্রের পোষ্টার নিতে চান তো অন্তর্জাল থেকে দিতে পারি‒
পাঠক : না না, আমি তা বলিনি‒
অনুগামীওয়ালা : না... চলচ্চিত্রের পোষ্টার আপনি বলেননি, কিন্তু পোষ্টার চাচ্ছিলেন কিনা, তা ত আর আমার কাছে পাওয়া যাবে না, তাই বলছিলুম‒
পাঠক : না হে আমি পোষ্টার চাচ্ছিনে‒
অনুগামীওয়ালা : চাচ্ছেন না ত 'কোথায় পাব' 'কোথায় পাব' কচ্ছেন কেন ? খামকা এরকম করবার মানে কি ?
পাঠক : আপনি ভুল বুঝেছেন‒ আমি পোষ্ট চাচ্ছিলাম‒
অনুগামীওয়ালা : পোষ্ট চাচ্ছেন তো 'পোষ্ট' বললেই হয়‒ 'পোষ্টার' বলবার দরকার কি ? পোষ্ট আর পোষ্টার কি এক হল ? আলু আর আলুবোখরা কি সমান ? মাছও যা মাছরাঙাও তাই ? বরকে কি আপনি বরকন্দাজ বলেন ? চাল কিনতে এসে চালতার খোঁজ করেন ?
পাঠক : ঘাট হয়েছে মশাই । আপনার সঙ্গে কথা বলাই আমার অন্যায় হয়েছে –
অনুগামীওয়ালা : অন্যায় তো হয়েছেই । দেখছেন হা-পিত্যেশ অনুগামীদের সাথে সমাযোজন করছি‒ তবে পোষ্টই বা চাচ্ছেন কেন ? আমার অনুগামী সংখ্যা গুরুভারযুক্ত বলেই কি ভাল পোষ্ট এর সন্ধান রাখতে হবে ? লোকের সঙ্গে কথা কইতে গেলে একটু বিবেচনা করে বলতে হয় ।
পাঠক : দেখলে ! কি কথায় কি বানিয়ে ফেললে ! যাক, ঐ বুড়ো ‘স্বরূপ’ দেখিয়েছে, ওকে একবার বলে দেখি।
হাতে কলম, কবি সুকান্তের মত গালে হাত দিয়ে অঙ্গবিক্ষেপিত ‘বিকশিত চিত্র’ সম্পন্ন এক ‘বিঘতবৃদ্ধের’ মন্তব্য
বৃদ্ধ : কে ও ? গোপ্লা নাকি ?
পাঠক : আজ্ঞে না, আমি সামাজিক মাধ্যমে নতুন সংযোজিত হয়েছি, নব্য হা-পিত্যেশি ‒ একটু ভাল পোষ্টের খোঁজ কচ্ছিলুম‒
বৃদ্ধ : বল কিহে ? পূজোর ছুটিতে বেড়াতে যাওয়া ছেড়ে এখেনে রয়েচ পোষ্টের খোঁজ করতে ? ‒ হাঃ, হাঃ, হাঃ । তা, যাই বল বাপু, অমন পোষ্ট কিন্তু কোথাও পাবে না । খাসা পোষ্ট, তোফা পোষ্ট, চমৎকা-র-র পোষ্ট ।
পাঠক : আজ্ঞে হাঁ, সেই ছুটি পরা থেকেই ঘাঁটতে ঘাঁটতে বেজায় হাফিয়ে গেছি, ভাল ন্তুন পোষ্ট আর পাইনে, ভাল ভাল লেখা, পড়ার বড় পঠন নেশা পেয়ে গেছে -
বৃদ্ধ : তা ত পাবেই । ভালো পোষ্ট যদি হয়, তা দেখলে অধ্যয়ন পায়, নাম করলে পঠন পায়, ভাবতে গেলে পঠন পায় । তেমন তেমন পোষ্ট ত পড়নি কখনো ! – বলি ‘আপন বাপন চৌকি চাপনের’ পোষ্ট চেখেছো কোনোদিন?
পাঠক : আজ্ঞে না, তা চাখিনি-
বৃদ্ধ : চাখনি ? অ্যাঃ ! ‘আপন বাপন চৌকি চাপনের’ হচ্ছে আমার নিজের উপদলচক্র‒ আদত পোষ্টের জায়গা । সেখানকার যে পোষ্ট, সে কি বলব তোমায় ? কত পোষ্ট চাখলাম‒ মজার পোষ্ট, সাজার পোষ্ট, নাচার পোষ্ট, কাঁদার পোষ্ট‒ কিন্তু আমাদের ‘আপন বাপন চৌকি চাপনের’ যে পোষ্ট, অমনটি আর কোথাও পেলাম না । আহা কি সোয়াদ, ঠিক যেন চিনির পানা, ঠিক যেন কেওড়া-দেওয়া সরবৎ !
পাঠক : তা মশাই আপনার পোষ্ট আপনি মাথায় করে রাখুন‒ আপাতত এখন এই অবসর সময়, যা হয় কিছু নতুন পোষ্ট আমায় পড়ালেই চলবে‒
বৃদ্ধ : তাহলে বাপু তোমার সময়সারনীতে বসে পোষ্ট খুঁজলেই ত পারতে ? সারা মাসটা ধরে বেকার বেকার পোষ্ট চাইতে আসবার দরকার কি ছিল ? 'যা হয় একটা হলেই হল' ও আবার কি রকম কথা? আর অমন তচ্ছিল্য করে বলবারই বা দরকার কি ? আমাদের পোষ্ট পছন্দ না হয়, পোড়ো না- বাস্ । গায়ে পড়ে নিন্দে করবার দরকার কি ? আমি ওরকম ভালোবাসিনে । হ্যাঃ-
রাগে গজগজ করিতে করিতে বৃদ্ধের প্রস্থান
সর্বজনীন আর এক হনুগোছের বান্ধব উপস্থিত হইয়া ‘সচিত্র আবেগ ফুটকি’ জাহির করিলেন, নাম ‘তথাকথিত জনপ্রিয়’
জনপ্রিয় : কি হে ? এত তর্কাতর্কি কিসের ?
পাঠক : আজ্ঞে না, তর্ক নয় । আমি পোষ্ট চাইছিলুম, তা উনি সে কথা কানেই নেন না- কেবলই সাত পাঁচ গপ্প করতে লেগেছেন । তাই বলতে গেলুম ত রেগে মেগে অস্থির !
জনপ্রিয় : আরে দূর দূর ! তুমিও যেমন ! জিজ্ঞেস করবার আর লোক পাওনি ? ও হতভাগা জানেই বা কি, আর বলবেই বা কি ? ওর যে পরামর্শদাতা তথা বন্ধু, এক পঞ্চাশ হাজারি ‘পৃষ্ঠগ্রন্থ শিক্ষক উপদল চক্রের’ ‘সহ-নিয়ামক’ , সেটাই ত একটা গাধা । ও মুখ্যুটা কি বললে তোমায় ?
পাঠক : কি জানি মশাই- পোষ্টের কথা বলতেই মজার পোষ্ট, সাজার পোষ্ট, নাচার পোষ্ট, কাঁদার পোষ্ট, ‘আপন বাপন চৌকি চাপনের’ পোষ্ট, ব'লে পাঁচ রকম ফর্দ শুনিয়ে দিলে-
জনপ্রিয় : হুমঃ ‒ ভাবলে খুব বাহাদুরি করেছি । তোমায় বোকা মতন দেখে খুব চাল চেলে নিয়েছে । ভারি ত ফর্দ করেছেন । আমি লিখে দিতে পারি, ও যদি পাঁচরকম পোষ্টের নাম বলে থাকে তা আমি এক্ষুনি পঁচিশটা বলে দেব-
পাঠক : আজ্ঞে হ্যাঁ । কিন্তু আমি বলছিলুম কি একটু সুপাঠ্য পোষ্ট‒
জনপ্রিয় : কি বলছ ? বিশ্বাস হচ্ছে না ? আচ্ছা শুনে যাও । কবিতার পোষ্ট, বিরহের পোষ্ট, অনুগল্পের পোষ্ট, সংগ্রীহিত পোষ্ট, সমকালীন পোষ্ট, উষ্কানীমূলক পোষ্ট, চুরিকরা পোষ্ট, আবেগময় পো-ষ্ট, উন্মাদীয় পো-ষ্ট, দেশপ্রেমিক পো-ষ্ট, অবুঝ পো-ষ্ট-
মনে ধরলনা বুঝি?
-তাহলে আরো শোনো- চমৎকার পোষ্ট, খুব সুন্দর পোষ্ট, অসাম পোষ্ট, হেব্বি পোষ্ট, ওয়াও পোষ্ট, এক্সিলেন্ট পোষ্ট, অনবদ্য পোষ্ট, সুপার্ব পো-ষ্ট, দা-রুন পো-ষ্ট, ব্যা-পক পো-ষ্ট, ছুঁয়ে গেল পো-ষ্ট ‒ কটা হল ? গোনোনি বুঝি ?
পাঠক : না মশাই, গুনিনি‒ আমার আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই‒
জনপ্রিয় : তোমার কাজ না থাকলেও আমাদের কাজ থাকতে পারে ত ? যাও, যাও, মেলা বকিও না । ‒একেবারে অপদার্থের একশেষ ! [ একটা নিন্মাভিমুখী বৃদ্ধাঙ্গুলির চিত্রাঙ্কন সহ পলায়ন]
পাঠক : নাহ, আর পোষ্টফোষ্ট চেয়ে কাজ নেই‒ এগিয়ে যাই, দেখি কোথাও পুরাতন পোষ্ট খুজেখাজে পাই কি না ।
সরিষার তেল দিয়ে পরিপাটি আঁচড়ানো চুল, মধ্যিখানে সিঁথি, পাঞ্জাবি পরিহিত এক সাদাকালো প্রদর্শিত চিত্রের ভদ্রলোক উপস্থিত।
লোকটি নেহাৎ এসেই পড়েছে যখন, একটু জিজ্ঞাসাই করে দেখি । বলি ও কাকা, আমি নতুন হাপিত্যেসি, অনেকক্ষন থেকে সন্ধান করছি, বলি একটু ভাল নতুন পোষ্ট মিলবে না কোথাও?
কবিবর : কি বলছেন ? কাকা? বেআক্কেলে নচ্ছার বেল্লিক, আমাকে কাকা মনে হল! আমি শান্তিনিকেতনী সাজে উঠতি কবি-
পাঠকঃ আজ্ঞে ঘাট হয়েছে, মাফ চাইছি কবিবর, দয়াকরে যদি আপনার দ্বারা একটা পোষ্টের সন্ধান মিলে যায়-
কবিবরঃ 'পোষ্ট' মিলবে না ? খুব মিলবে । একশোবার মিলবে ! দাঁড়ান, এক্ষুনি মিলিয়ে দিচ্ছি‒ পোষ্ট- রোষ্ট- টোষ্ট- ঘোষ্ট- মোষ্ট- কোষ্ট ‒ মিলের অভাব কি ?
রিপোষ্ট-ল্যাম্পপোষ্ট-ভ্যাকেন্সিপোষ্ট
পিওনপোষ্ট-স্তম্ভপোষ্ট- পুলিশপোষ্ট,
বিরহপোষ্ট ছল্ছল্ ,
মজারপোষ্ট কল্কল্ ,
হাসি শুনি খল্খল্,
অ্যাঁকানল বাঁকানল,
আগল ছাগল পাগল‒
-কত চান ?
পাঠক : এ দেখি আরেক পাগল ! মশাই, আমি সে রকম মিলবার কথা বলিনি ।
কবিবর : তবে কি রকম মিল চাচ্ছেন বলুন ? কি রকম, কোন ছন্দ, সব বলে দিন‒ যেমনটি চাইবেন তেমনটি মিলিয়ে দেব ।
পাঠক : ভালো বিপদেই পড়া গেল দেখছি‒ মশাই ! আর কিছু চাইনে, ‒আরো বললেন শুধু একটু ভাল পোষ্ট পড়তে চাই !
কবিবর : ও বুঝেছি । শুধু-একটু-পোষ্ট-পড়তে-চাই । এই ত ? আচ্ছা বেশ । এ আর মিলবে না কেন ?
‒ শুধু একটু পোষ্ট পড়তে চাই
‒পঠন তেষ্টা প্রাণ আই-ঢাই ।
-চাই কিন্তু কোথা গেলে পাই
‒বল্ শীঘ্র বল্ নারে ভাই ।
কেমন ? ঠিক মিলেছে ত ?
পাঠক : আজ্ঞে হ্যাঁ, খুব মিলেছে‒খাসা মিলেছে‒ নমস্কার । নাহ, বকে বকে মাথা ধরিয়ে দিলে‒ ‘দর্শন চুঙ্গিতে’ একটু গান শুনে মাথাটা ঠাণ্ডা কনে নি । [একটু পংক্তি বিরাম নিলেন]
কবিবর : (খুশী হইয়া লিখিতে লিখিতে) মিলবে না ? বলি, মেলাচ্ছে কে ? সেবার যখন বিষ্টুদাদা 'বৈকাল' কিসের সঙ্গে মিল দেবে খুঁজে পাচ্ছিল না, তখন 'নৈপাল' বলে দিয়েছিল কে ? নৈপাল কাকে বলে জানেন ত ? নেপালের লোক হল নৈপাল । (পাঠককে ‘পংক্তি অভিমুখে জাগ্রত’ না দেখিয়া) লোকটা গেল কোথায় ? দুত্তোরি ! [প্রস্থান]
‘পংক্তি অভিমুখে জাগ্রত’ হইতেই, বাদামি কালোতে ছাপা চুল, চোখ রসগোল্লার মত গোল করে চাহনি, হাঁসের মত ঠোঁট করা উর্ধমূখী প্রদর্শিত চিত্র সম্বলিত, একটি মামনি পছন্দ বোতামে ঠোকা দিয়ে উপস্থিতি জানান দিলেন।
মন্তব্যে লিখলেন-
‒ পৃষ্ঠগ্রন্থের তিন ভাগ পোষ্ট চিত্র এক ভাগ রচনা । দীর্ঘ রচনাধর্মী পোষ্ট বিরক্তিকর, অতি বিস্বাদ।
পাঠক : ওহে খুকি ! একটু এদিকে শুনে যাও ত ?
রুক্ষমুর্তি, সবজান্তাভাব, মাথায় টাক, ফরাসী দেশীয় কায়দায় ছাঁটা দাড়ি, খুকির ধর্ম দাদাই পরবর্তী মন্তব্যটি করলেন।
ধর্ম দাদাই : কে হে ? আলাপচারীর সময় ডাকাডাকি করতে এয়েছ?‒ (পাঠককে দেখিয়া) ও! আমি মনে করেছিলুম পুরাতন কোন সভ্য বুঝি । আপনার কি দরকার?
পাঠক : আজ্ঞে , পুরাতন আর একঘেয়ে পোষ্ট পড়ে পড়ে বড় মানসিক কষ্ট পাচ্ছি‒ তা একটু নতুন ভাল পোষ্টের খবর কেউ বলতে পারলে না ।
ধর্ম দাদাই : (তাড়াতাড়ি পেটিকাভ্যন্তরে বার্তা পাঠিয়ে) কেউ বলতে পারলে না ? আসুন, আসুন । কি খবর চান, কি জানতে চান, বলুন দেখি ? সব আমায় জিজ্ঞেস করুন, আমি বলে দিচ্ছি ।
ওই পেটিকাভ্যন্তরেই তিনি পাঠাতে লাগলেন, তিনি কোন কোন উপদলচক্রে কবে কবে সেরা মোননিত হয়েছিলেন তার ভিন্ন ভিন্ন সংযোগ সুতিকা ইত্যাদি।
-কি বলছিলেন ? পোষ্টের কথা জিজ্ঞেস করছিলেন না?
পাঠক : আজ্ঞে হ্যাঁ, সেই কখন একটা সুত্র খুলে জানতে চেয়েছিলাম হাপিত্যেসে‒
ধর্ম দাদাই : আ হা হা ! কি উৎসাহ ! শুনেও সুখ হয় । এ রকম পড়বার আকাঙ্খা কজনের আছে, বলুন ত? বসুন ! বসুন ! [ কতকগুলি শংসামূলক, কিছু পুস্তক আর কিছু টুকরো পুঁথির পৃষ্ঠাচ্ছাদনের চিত্র প্রেরন করলেন]
-পোষ্টের কথা জানতে গেলে প্রথমে জানা দরকার, পোষ্ট কাকে বলে, পোষ্টের কি গুণ‒
পাঠক : আজ্ঞে, একটু অনন্য পোষ্ট যদি‒
ধর্ম দাদাই: আসছে‒ ব্যস্ত হবেন না । একে একে সব কথা আসবে । পোষ্ট হচ্ছে এক ভাগ পদ্য, এক ভাগ গদ্য, এক ভাগ চিত্র আর এক ভাগ ছেঁদা ঠুনকো বা অকর্মণ্য ‒ [ সাথে কোষ্ঠী ছকের মত একটা অনুষঙ্গ চিত্র জুড়ে দিলেন ]
পাঠক : এই মাটি করেছে !
ধর্ম দাদাই: বুঝলেন? রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পোষ্টকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে দুটো বস্তু‒ অনুভুতি আর খরচযোগ্য সময় । খরচ করার মত সময় আর টাটকা অনুভূতির ( তা সে নিজের হোক বা লোকের অনুভূতি) রাসায়নিক সংযোগ ঘটাতে পারলেই জন্মায় পোষ্ট ! শুনছেন ত?
পাঠক : আজ্ঞে হ্যাঁ, সব শুনছি । কিন্তু কিছু অনুপম পোষ্ট যদি পড়তে দেন, তাহলে আরো মন দিয়ে শুনতে পারি ।
ধর্ম দাদাই: বেশ ত ! অনুপম পোষ্টের কথাই নেওয়া যাক না । অনুপম পোষ্ট কাকে বলে ? না, যে পোষ্ট ঝকঝকে লেখা, চোখা শব্দবিন্যাস, যাতে উষ্কানির সুড়সুড়ি নাই, অন্য পোষ্টের অনুকরন নাই‒ কেমন ? এই দেখুন একটা ‘বহনযোগ্য দলিল বিন্যাসাকারে’ পোষ্ট‒
-আহা, ব্যস্ত হবেন না । পড়লে মনে হবে বেশ পরিস্কার, কিন্তু অনুবীক্ষন সন্ধিৎসু মন দিয়ে যদি পড়েন, দেখবেন অশ্লীলতার পোকা সব কিলবিল করছে । কেঁচোর মতো, কৃমির মতো সব পোকা‒ এমনি চোখে দেখা যায় না, কিন্তু অনুবীক্ষন নজর দিয়ে দেখায় ঠিক এত্তো বড় বড় । এই ‘ঠিকানা শিকলিটার’ মধ্যেই দেখুন, ওই ‘হাহাকার উপদল চক্রের’ পোষ্ট আছে এতে; আমি এইমাত্র পরীক্ষা করে দেখলুম; ওর মধ্যে বিদ্বেষ রোগের বীজ সব গিজ্গিজ্ করছে‒ ধর্মীয় উস্কানি, গালিগালাজ, যৌনতা, নির্লজ্জতা ‒ও পোষ্ট পড়েছেন কি মরেছেন ! এই ছবি দেখুন‒ এইগুলো হচ্ছে রাজনৈতিক সুড়সুড়ির বীজ, এই মেরুকরন, এই ব্যাক্তি আক্রমন, কুরুচি ‒সব আছে । আর এই এনারা সব হচ্ছে পোষ্টের হোতা‒ পোষ্টের মধ্যে দুর্গন্ধি ময়লা যা কিছু থাকে ওরা সেইগুলো চেটেপুটে খায় । এই পোষ্টটার কি দুর্গন্ধ শুঁকুন ! পচা মনের লেখকের পোষ্ট‒ সম্পাদনা করে দুর্গন্ধী ছেঁকে নিয়েছি, তবুও গন্ধ।
পাঠক : উঁ হুঁ হুঁ হুঁ ! করেন কি মশাই ? ওসব জানবার কিচ্ছু দরকার নেই‒
ধর্ম দাদাই: খুব দরকার আছে । এসব জানতে হয়‒ অত্যন্ত দরকারী কথা !
পাঠক : হোক দরকারী‒ আমি জানতে চাইনে, এখন আমার জ্ঞান আরোহণ করার প্রয়োজন নেই‒
ধর্ম দাদাই: এই ত জানবার সময় । আর দুদিন বাদে যখন বুড়ো হয়ে মরতে বসবেন, তখন জেনে লাভ কি ? পোষ্টে কি কি দোষ থাকে, কি করে সে সব দোষ ধরতে হয়, কি করে তার শোধন হয়, এসব জানবার মতো কথা নয় ? এই যে সব বড় লেখকের সুপাঠ্য পোষ্ট পৃষ্ঠগ্রন্থে অহরহ মুদ্রিত হচ্ছে, পৃষ্ঠগ্রন্থের সেই সকল পোষ্ট, সব বাস্প হয়ে উঠছে, মেঘ হয়ে সেই অনুপ্রেরণা ঢুকে যাচ্ছে নব্য লেখকদের মননে, নতুন লেখার বৃষ্টি ঝরছে‒ এরকম কেন হয়, কিসে হয়, তাও ত জানা দরকার?
পাঠক : দেখুন মশাই ! কি করে কথাটা আপনাদের মাথায় ঢোকাব তা ত ভেবে পাইনে। বলি, বারবার করে বলছি‒ নতুন পোষ্টে পড়ার নেশায় মনটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল, সেটা ত কেউ কানে নিচ্ছেন না দেখি। একটা লোক নতুন নতুন পোষ্ট পড়ার জন্য ছটপট করছে তবু একটাও পোষ্টের সন্ধান পায় না, এরকম কোথাও শুনেছেন?
ধর্ম দাদাই: শুনেছি বৈকি‒ চোখে দেখেছি । ‘ধামাধরা’ নামের উপদল চক্রে মড়ক নামের একজন সভ্য একটা পোষ্ট করল, অমনি সানাইবাদক নামের আরেকজন সভ্য পুলিশপোষ্টে অভিযোগ জানিয়ে দিল। মড়কের হল শ্রীঘরবাস‒ শুদ্ধমন্ডলীদের শুরু হল পোষ্টাতঙ্ক। যেকোন ধরনের পোষ্ট না গুছিয়ে লিখতে পারেন, না টিপন্নি করতে‒ যেই কোন পোষ্ট পড়ে, মন্তব্য করতে মন চাইল, অমনি আঙুলে খিঁচ ধরে যায়। মহা মুশকিল !‒ আমুদেরা উল্লাস শেষে ক্লান্ত হলে, শেষটায় অনেক বিদ্বজনে প্রতিবাদ করল, আদালত মুচলেকা দেওয়ালো, ‒ তারপর আবার নতুন পোষ্ট বমি করে বাঁচল লেখকের দল। ওরকম হয়।
পাঠক : নাঃ‒ এদের সঙ্গে আর পেরে ওঠা গেল না‒ কেনই বা মরতে এসেছিলাম এখেনে? বলি, মশাই, আপনার এখানে নোংরা পোষ্ট আর দুর্গন্ধ পোষ্ট ছাড়া ভালো খাঁটি পোষ্ট কিছু নেই?
ধর্ম দাদাই: আছে বৈকি! এই দেখুন না ‘সূক্ষনরম শব্দ বিন্যাসে” টাটকা খাঁটি গল্পের নিষ্কর্য'‒ যা থেকে তৈরি হবে একটা গোটা 'রসাল পোষ্ট' ।
পাঠক : (ব্যস্ত হইয়া) এ পোষ্ট কি পাঠ করা যায়?
ধর্ম দাদাই: না, ও পোষ্ট পাঠযোগ্য না‒ ওতে স্বাদ নেই‒ একেবারে বোবা পোষ্ট কিনা, এইমাত্র তৈরি করে আনল‒ এখনো গরম রয়েছে। ওতে কোন ঘাতপ্রতিঘাত শব্দ ঝঙ্কার অনুপ্রাস সংলাপ ইত্যাদি মেশানো নেই।
[পাঠকের হতাশ ভাব]
তারপর যা বলছিলাম শুনুন‒ এই যে দেখছেন গন্ধওয়ালা নোংরা পোষ্ট‒ এর মধ্যে দেখুন এই প্রেমের গোলাপী বানী ঢেলে দিলুম‒ বাস, গোলাপী রঙ উড়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেল । দেখলেন ত?
পাঠক : না মশাই, কিচ্ছু দেখিনি‒ কিচ্ছু বুঝতে পারিনি‒ কিচ্ছু মানি না‒ কিচ্ছু বিশ্বাস করি না।
ধর্ম দাদাই: কি বললেন ! আমার কথা বিশ্বাস করেন না?
পাঠক : না, করি না। আমি যা চাই, তা যতক্ষণ দেখাতে না পারবেন, ততক্ষণ কিচ্ছু শুনব না, কিচ্ছু বিশ্বাস করব না।
ধর্ম দাদাই: বটে ! কোনটা দেখতে চান একবার বলুন দেখি‒ আমি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি‒
পাঠক : তাহলে দেখান দেখি । নির্ভেজাল, খাঁটি চমৎকার, সুপাঠ্য, এক নতিদীর্ঘ অনন্য পোষ্ট পড়িয়ে দেখান দেখি । যাতে ধর্মপোকা নেই, রাজনীতির পোকা নেই, কুরুচিকর কিচ্ছু নেই, তা পড়িয়ে নিজেকে প্রমান করে দেখান দেখি । খুব মনোজ্ঞ এক অনবদ্য কাহিনী সমৃদ্ধ পোষ্টের সন্ধান দিন দেখি ত।
ধর্ম দাদাই: এক্ষুনি দেখিয়ে দিচ্ছি‒ ওরে ট্যাঁপা (ইনিও হাপিত্যেশের অন্যতম নিয়ামক), চটকরে পুরাতন সংগ্রহথেকে আমার সংগ্রহ করা একটা প্রকৃষ্ট পোষ্ট খুঁজে বের কর ত।
হাপিত্যেশ উপদল চক্রের সময় সারনীতে তখন বৎসর অতিক্রান্ত গুচ্ছের বিভিন্ন পোষ্ট পুনঃউত্থাপন হয়ে চলেছে।
বের করুক তারপর দেখিয়ে দিচ্ছি । ঐ পোষ্টে কি রকম হয়, আর এই নোংরা পোষ্টে কি রকম তফাৎ হয়, সব আমি এক্সপেরিমেন্ট করে দেখিয়ে দিচ্ছি।
একটি বিশিষ্ট লেখকের এক সমৃদ্ধশালী পোষ্টের মন্তব্যস্থানে, অনুভুতি চিত্রাঙ্কনের মাধমে উহাকে সর্বসম্মুখে পুনরাত্থাপিত করিয়া ট্যাঁপা ক্ষান্ত হইল।
নতুন পোষ্ট দেখিবামাত্র পাঠকের যাবতীয় মনোযোগ তাহাতে উপবিষ্ট হইল‒ ধর্ম দাদাই এর উপস্থিতিকে অগ্রাহ্য করে, সম্পূর্ণ পোষ্টটি এক নিঃশ্বাসে বার কয়েক পড়িয়া দারুন পাঠক মানসিক তৃপ্তি পাইলেন।
পাঠক : আঃ ! একটা নির্ভেজাল রচনা পড়া গেল !
ধর্ম দাদাই: (চটিয়া) এটা কি রকম হল মশাই?
পাঠক : পরীক্ষা হল‒ এক্সপেরিমেন্ট ! এবার আপনি নোংরা পোষ্টটা একবার গেয়ে শোনান ত, শুনি কি রকম হয়?
ধর্ম দাদাই: (ভীষণ রাগিয়া) কি বললেন !
পাঠক : আচ্ছা থাক, এখন নাই বা পড়লেন‒ পরে পড়বেন নাহয় । আর এই উপদলচক্রে মধ্যে আপনার মতো আনকোরা পাগল আর যতগুলো আছে, সব কটাকে খানিকটা করে গেয়ে শোনাবেন । তারপর গারদে ভরার দরকার হলে আমার খবর দেবেন‒ আমি খুশী হয়ে ছুটে আসব‒ হতভাগা জোচ্চোর কোথাকার !
দ্রুত প্রস্থান]]
সময়সারনীতে ছন্দ মিলাইয়া কে যেন একজন কবিতা পোষ্টালো‒ 'সবাক পোষ্টপাঠ'
*******************
@উন্মাদীয় বানানবিধি অনুসৃত