Saturday, 28 January 2017

কবিগুরু ও নাটক

নাটক কাহাকে বলে?

একটা কাহিনীকে যখন অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের সামনে ফুটিয়ে তোলা হয় তখন তাকে নাটক বলে। যার মধ্যে মুলত চারধরনের উপাদান থাকতেই হয়, যথা- একটা গল্প বা কাহিনী, একটা মঞ্চ, মঞ্চ ও তার পিছনের কুশীলবগন, আর দর্শক।
এখন প্রশ্ন আসবে নাটক ঠিক কত ধরনের হয়! হাস্যরসাত্বক, ঐতিহাসিক, বিয়োগান্তক , এবং প্রহসন কৌতুক আঙ্গিকে, নাটক পরিবেশিত হয়ে থাকে। অভিনেতারা শারীরিক ও সংলাপ দিয়ে যখন কোন গল্পের চরিত্র গুলোকে দর্শকদের সামনে বিশ্বাসযোগ্য আকারে ফুটিতে তোলেন তখন তাকে অভিনয় বলা হয়। আর নাট্য অভিনয়ে যে ধারা গুলো দেখা যায়, সেগুলি মুলত মূকাভিনয়, ফলিত নাটক, বিনোদন মূলক, কৃষ্টি মূলক প্রমুখ ধরনের নাটকের পাশাপাশি গীতিনাট্যও একটি নাটকের ধারা, যার অভিনয়ে আঙ্গিক, সাত্বিক, বাচিক ও আহার্য সহ সকল বিষয়গুলিই উপস্থিত থাকে।
আজকে এই মঞ্চে বিশ্বকবি রবিঠাকুরকে আলাদা করে ভণিতা সহকারে প্রজ্ঞাপন করার ধৃষ্টতা আমার নেই। তবুও কিছু কথা, পূনঃ রোমন্থন করার ভঙ্গিতে বলি- 
তাঁর কবিতা ও গান, হাস্যকৌতুক, ব্যঙ্গকৌতুকসহ, ছোটগল্প, উপন্যাস ইত্যাদি বিভিন্ন সাহিত্য সৃষ্টি নিয়ে কিছু বলার অবকাশ নেই, তবে এগুলোর পাশাপাশি তিনি একাধারে ছিলেন অভিনেতা ও নাট্যকার। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পারিবারিক নাট্যমঞ্চে মাত্র ষোলো বছর বয়সে তিনি নাটকে অভিনয় করেছিলেন। অগ্রজ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, মলিয়ের লা বুর্জোয়ার জাঁতিরোমঅবলম্বনে রচনা করেছিলেন নাটক হঠাৎ নবাব। নাটকের এক বিশেষ চরিত্রে রবীন্দ্রনাথ অভিনয় করে সাড়া জাগিয়ে ছিলেন।
রবীন্দ্রনাথের অভিনয় প্রতিভা ছিল অসাধারণ। ঠাকুরবাড়ির নিজস্ব নাটকের প্রায় সবগুলোতেই তিনি অভিনয় করেছেন। নিজের লেখা বাল্মীকিপ্রতিভা’, ‘বিসর্জন’, ‘রাজা-রানী’, ‘চিরকুমার সভায় যেমন অভিনয় করেছেন, তেমনি অভিনয় করেছেন স্বর্ণকুমারী দেবী ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথের লেখা নাটকেও। রবীন্দ্রনাথের প্রথম গীতিকাব্য বাল্মিকী প্রতিভামঞ্চস্থ হয় ১৮৮১ সালে। রামায়ণের মূলপ্রণেতা আদিকবি বাল্মিকীর জীবনের অংশ নিয়ে এই গীতিনাট্য। এতে বাল্মিকীর ভূমিকায় স্বয়ং নিজে অভিনয় করেছিলেন। তার লেখা উল্লেখযোগ্য নাটক হলো শারদোৎসব’ (১৯০৮), ‘রাজা ’(১৯১০), ‘ডাকঘর’ (১৯১২), ‘অচলায়তন’ (১৯১২), ‘ফাল্গুনী’ (১৯১৬), ‘মুক্তধারা’ (১৯২২), ‘রক্তকরবী’ (১৯২৬), ‘তাসের দেশ ’(১৯৩৩), ‘কালের যাত্রা’ (১৯৩২) ইত্যাদি।
রামায়ন আমরা কমবেশি সকলেই পড়েছি। তারই একটা অংশ এইরূপ- অন্ধমুনির কিশোর ছেলে নদীতে গেছে জল আনতে। কলসীতে জলভরার শব্দ শুনে অরণ্যে শিকাররত রাজা দশরথ ভাবলেন বুঝি বুনো জন্তু জলপান করছে। শব্দ শুনে লক্ষ্যভেদ করার ক্ষমতা ছিল রাজা দশরথের। তিনি তীর ছুড়লেন। কিশোর ছেলেটির বুকে বিদ্ধ হলো মরণবাণ। এদিকে দৃষ্টিহীন মুনি অপেক্ষা করছেন পাতার কুটিরে কখন তার একমাত্র সন্তান জল নিয়ে আসবে। রামায়ণের এই করুণ উপাখ্যান নিয়ে ১৮৮২ সালে রবীন্দ্রনাথ লেখেন নাটক কালমৃগয়া। স্বয়ং গুরুদেবও এই নাটকে অন্ধ বৃদ্ধ মুনির চরিত্রে অভিনয় করেছিলে।


No comments:

Post a Comment