কপাটরুদ্ধ দ্বিপ্রহর, সোঁ-সোঁ ধ্বনিতে
ম্লেচ্ছ বাতাস দিশাহীনভাবে দুয়ারে কষাঘাত করিয়া চলিতেছে। আশেপাশে দর্শককুল কমবেশি
উৎকণ্ঠাতে, কি হয় কি হয়, ভাবিতে ভাবিতে
ঘামিতেছেন, ঘামিতে ঘামিতে ভাবিয়া ক্লান্ত হইতেছেন পুনরায়।
কণ্ঠনালী শুকাইয়া জৈষ্ঠমধুর ন্যায় কাষ্ঠল, সামান্য রসের
সঞ্চার হইলেই মিষ্টতার আগমন ঘটে।
বৈশাখস্য
শুক্লাভূ তীযাযা” অক্ষত্তীষাব্রত
তস্য শুক্লা দ্বাদশী
পিপীতকী
তচতুর্দশী নৃসিংহচতুর্দশী
তস্য কৃষ্ণাষ্টমী
ত্রিলোচনাষ্টমী
তস্য রূষ্ণচতুর্দশী
সাবিত্রী
অনুচ্চারিত বৈদিক মন্ত্রে পবনে পবনে
অজানা শিহরন। এই ভাবেই উতকন্ঠার সহিত কয়েকটি প্রহর অপগত হইবার পর অবশেষে সেই
মহেন্দ্রক্ষন। ক্রমে ক্রমে কৃষ্ণবর্নের গগনপটে কালিমার পর্দা উন্মোচন করিয়া, শুক্লা দ্বাদশীর
চন্দ্র পসৃত হইল। অতৃপ্ত আত্মাদলেরা, নক্তচরের ন্যায় যারপরনাই
বিচলিত হইয়া উঠিল সহসা। সূক্ষাদর্শী বিবাচকগন আপন আপন জ্ঞান করণ্ড অসম্বাধ করিয়া
চকিতেই নিলাম কক্ষে রুপান্তর করিয়া দিল সমগ্র "অক্রূর" মলয় কাননটিকে। সে
এক সুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় নির্মাণশক্তিসম্পন্ন প্রজ্ঞা।
সে এক অসম যুদ্ধ। যথারীতি দূঢ়হ
কর্মটি সাধিত হইল ক্ষনিমতি বান্ধব দ্বারা। আরক্ষাবাহিনীর উপজীব্যে উচ্চপদে আসীন
ব্যাক্তিদ্বারাই প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত বিপরিতবুদ্ধিগামী চক্ষুতারার সহিত বিবাদে
জড়াইয়া স্ফুলিঙ্গের পত্তনটি সুচারু রূপে করিলেন। অবশেষে অনধিকারচর্চার বিষয়টি
অনুধাবিত হইবার পর তৎক্ষণাৎ পৃষ্ঠদর্শন। দিবি্যাদ্ধিপতি যথারীতি তূনিরের সম্মুখে
হাস্যমান।
বিভীষণ একটি চিরকালীন চরিত্র, যুগের চাহিদা মানিয়া
কেমলমাত্র নামগুলি বদলাইয়া যায়। এক্ষেত্রেও তাহার কোন অন্যথা ঘটিলনা। অন্যতম
অধীক্ষকই ধার্মিক বলীবর্দের ভুমিকায় সিং বাগাইয়া বাকি অন্যদের পশ্চাদদেশে দাম্ভের
প্রকাশ ঘটাইতে থাকিলেন, সম্পূর্ন অযোউক্তিক ও অকারনেই।
বৃহন্নলার রমনসুখ সম্ভবর এই পথেই সাধিত হয়।
সৃষ্টির অপার মহিমা, সাধুপ্রান হউক
কিম্বা তস্কর, স্যাঙাৎ জুটিতে বেশি সময় ব্যায় হয়না। সেই অমোঘ
নিয়মের পৃষ্ঠে সাওয়ার হইয়া, সর্বজ্ঞ মহিয়সী- কুচক্রে
বৈদগ্ধ্যতা প্রাপ্ত ও সবলা 'দু:খাপনোদন দেবী', তাহার চূর্ণকুন্তল প্রত্যায়িত করিয়া বায়ুমন্ডল মৃত্যুয কনাদ্বারা পরিপূর্ণ
করিলেন।
আপাত দৃষ্টিতে আনুরক্তি সর্বশ্ব
মাতৃরূপেন সংস্থিতা, তিনিও ভক্তকুলের প্রহ্লাদ সাজিয়া কীর্তনিয়া দলে আপন খোরাকের নিমিত্তে
প্রত্যহ খঞ্জনি বাজাইতেন। পরিচিত আস্তাকুরের পরিবেশে অন্তরের যাবতীয় কালিমার
পূনর্জাগরন ঘটায়। অতএব তিনি কাব্যসংহারক হইয়া প্রানত্যাগের মত কঠিন ব্রতের নিদান
দিয়া উপস্থিত সকলজনকে বিস্ময়াভিভূত করিয়া তুলিলেন।
যুদ্ধ বিদ্যার সর্বোতকৃষ্ট রীতি হইল, সম্মুখসমর। শক্তি ও
প্রত্যুৎপন্নমতিতার সহিত বুহ্য রচনা, পরিশেষে গুপ্তচরবৃতির
মোক্ষম বানে একে একে সকল বীর ও বীরাঙ্গানা পলায়নে ব্রতী হইলেন। উলুধ্বনি সহযোগে
পূর্বক্তো সেই মাতৃরূপেন নব কলেবরে মেনকা- রম্ভা সদৃশ্য উল্লম্ফন করিবার নিমিত্ত
দেহ ধারন করিয়া লুব্ধকের ন্যায় পরিখার চারিপাশে নাসিকা দ্বারা খোসবু আরোহণে
ব্যাস্ত।
পারাঙ্গানা না জানি কোহার সমিপে
তাহার জ্ঞানশলাকা প্রজ্বলিত করিতেছেন। নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সাধুতা সম্বলিত আরক্ষা
উবজীব্য পরিজনের স্ব-চিত্র সম্বলিত প্রজ্ঞাপন নাজানি কাহার দুয়ারে নিষ্ফল ক্রন্দনে
রত।
মহেঞ্জোদড়ো সভ্যতার সেই অন্তিম বীর, যার পূর্বে তাহার
ন্যায় না কেও জনমিয়া ছিলেন, না আর কেহ জন্মাইবেন। আপন
উপকন্ঠে বিষাগ্নি বরষিয়া আজি ক্ষান্ত দিয়াছেন, সুহৃদের
অনুকম্পা ধীরে ধীরে মৃয়মান।
আজি আর্ধপাক্ষিক কাল অতিক্রান্ত, সময়ের রতিক্রিয়াতে
নব নব শুভার্থীর আগমন ঘটাইয়াছে। অজেয় আত্মা বিজয়ী হইয়া আপন গুহ্যদ্বারে স্বমেহনে
তৃপ্ত।
উল্লাস, সম্মুখে কৃষ্ণপক্ষ।
কালের গহ্বরে কালিমা বিসর্জিত হইয়া নবচন্দ্রের উদযাপনে শোনিত তরল পান করিয়া আগামির
দিশারী হইতে হাতছানি দিতেছে। অগ্নিক্রীড়াতে ত্রসন রহিয়াছে বলিয়াই না উহা বলীদের
জন্য সংরক্ষিত।
উপেক্ষা করিবার
সাধ্য কাহার আছে?