Saturday, 22 April 2017

।। সাধর্ম্যনীক ।।

কপাটরুদ্ধ দ্বিপ্রহর, সোঁ-সোঁ ধ্বনিতে ম্লেচ্ছ বাতাস দিশাহীনভাবে দুয়ারে কষাঘাত করিয়া চলিতেছে। আশেপাশে দর্শককুল কমবেশি উৎকণ্ঠাতে, কি হয় কি হয়, ভাবিতে ভাবিতে ঘামিতেছেন, ঘামিতে ঘামিতে ভাবিয়া ক্লান্ত হইতেছেন পুনরায়। কণ্ঠনালী শুকাইয়া জৈষ্ঠমধুর ন্যায় কাষ্ঠল, সামান্য রসের সঞ্চার হইলেই মিষ্টতার আগমন ঘটে।
   বৈশাখস্য শুক্লাভূ তীযাযাঅক্ষত্তীষাব্রত
      তস্য শুক্লা দ্বাদশী পিপীতকী 
        তচতুর্দশী নৃসিংহচতুর্দশী
      তস্য কৃষ্ণাষ্টমী ত্রিলোচনাষ্টমী
       তস্য রূষ্ণচতুর্দশী সাবিত্রী

অনুচ্চারিত বৈদিক মন্ত্রে পবনে পবনে অজানা শিহরন। এই ভাবেই উতকন্ঠার সহিত কয়েকটি প্রহর অপগত হইবার পর অবশেষে সেই মহেন্দ্রক্ষন। ক্রমে ক্রমে কৃষ্ণবর্নের গগনপটে কালিমার পর্দা উন্মোচন করিয়া, শুক্লা দ্বাদশীর চন্দ্র পসৃত হইল। অতৃপ্ত আত্মাদলেরা, নক্তচরের ন্যায় যারপরনাই বিচলিত হইয়া উঠিল সহসা। সূক্ষাদর্শী বিবাচকগন আপন আপন জ্ঞান করণ্ড অসম্বাধ করিয়া চকিতেই নিলাম কক্ষে রুপান্তর করিয়া দিল সমগ্র "অক্রূর" মলয় কাননটিকে। সে এক সুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় নির্মাণশক্তিসম্পন্ন প্রজ্ঞা।
সে এক অসম যুদ্ধ। যথারীতি দূঢ়হ কর্মটি সাধিত হইল ক্ষনিমতি বান্ধব দ্বারা। আরক্ষাবাহিনীর উপজীব্যে উচ্চপদে আসীন ব্যাক্তিদ্বারাই প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত বিপরিতবুদ্ধিগামী চক্ষুতারার সহিত বিবাদে জড়াইয়া স্ফুলিঙ্গের পত্তনটি সুচারু রূপে করিলেন। অবশেষে অনধিকারচর্চার বিষয়টি অনুধাবিত হইবার পর তৎক্ষণাৎ পৃষ্ঠদর্শন। দিবি্‌যাদ্ধিপতি যথারীতি তূনিরের সম্মুখে হাস্যমান।
বিভীষণ একটি চিরকালীন চরিত্র, যুগের চাহিদা মানিয়া কেমলমাত্র নামগুলি বদলাইয়া যায়। এক্ষেত্রেও তাহার কোন অন্যথা ঘটিলনা। অন্যতম অধীক্ষকই ধার্মিক বলীবর্দের ভুমিকায় সিং বাগাইয়া বাকি অন্যদের পশ্চাদদেশে দাম্ভের প্রকাশ ঘটাইতে থাকিলেন, সম্পূর্ন অযোউক্তিক ও অকারনেই। বৃহন্নলার রমনসুখ সম্ভবর এই পথেই সাধিত হয়।
সৃষ্টির অপার মহিমা, সাধুপ্রান হউক কিম্বা তস্কর, স্যাঙাৎ জুটিতে বেশি সময় ব্যায় হয়না। সেই অমোঘ নিয়মের পৃষ্ঠে সাওয়ার হইয়া, সর্বজ্ঞ মহিয়সী- কুচক্রে বৈদগ্ধ্যতা প্রাপ্ত ও সবলা 'দু:খাপনোদন দেবী', তাহার চূর্ণকুন্তল প্রত্যায়িত করিয়া বায়ুমন্ডল মৃত্যুয কনাদ্বারা পরিপূর্ণ করিলেন।
আপাত দৃষ্টিতে আনুরক্তি সর্বশ্ব মাতৃরূপেন সংস্থিতা, তিনিও ভক্তকুলের প্রহ্লাদ সাজিয়া কীর্তনিয়া দলে আপন খোরাকের নিমিত্তে প্রত্যহ খঞ্জনি বাজাইতেন। পরিচিত আস্তাকুরের পরিবেশে অন্তরের যাবতীয় কালিমার পূনর্জাগরন ঘটায়। অতএব তিনি কাব্যসংহারক হইয়া প্রানত্যাগের মত কঠিন ব্রতের নিদান দিয়া উপস্থিত সকলজনকে বিস্ময়াভিভূত করিয়া তুলিলেন।
যুদ্ধ বিদ্যার সর্বোতকৃষ্ট রীতি হইল, সম্মুখসমর। শক্তি ও প্রত্যুৎপন্নমতিতার সহিত বুহ্য রচনা, পরিশেষে গুপ্তচরবৃতির মোক্ষম বানে একে একে সকল বীর ও বীরাঙ্গানা পলায়নে ব্রতী হইলেন। উলুধ্বনি সহযোগে পূর্বক্তো সেই মাতৃরূপেন নব কলেবরে মেনকা- রম্ভা সদৃশ্য উল্লম্ফন করিবার নিমিত্ত দেহ ধারন করিয়া লুব্ধকের ন্যায় পরিখার চারিপাশে নাসিকা দ্বারা খোসবু আরোহণে ব্যাস্ত।
পারাঙ্গানা না জানি কোহার সমিপে তাহার জ্ঞানশলাকা প্রজ্বলিত করিতেছেন। নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সাধুতা সম্বলিত আরক্ষা উবজীব্য পরিজনের স্ব-চিত্র সম্বলিত প্রজ্ঞাপন নাজানি কাহার দুয়ারে নিষ্ফল ক্রন্দনে রত।
মহেঞ্জোদড়ো সভ্যতার সেই অন্তিম বীর, যার পূর্বে তাহার ন্যায় না কেও জনমিয়া ছিলেন, না আর কেহ জন্মাইবেন। আপন উপকন্ঠে বিষাগ্নি বরষিয়া আজি ক্ষান্ত দিয়াছেন, সুহৃদের অনুকম্পা ধীরে ধীরে মৃয়মান।
আজি আর্ধপাক্ষিক কাল অতিক্রান্ত, সময়ের রতিক্রিয়াতে নব নব শুভার্থীর আগমন ঘটাইয়াছে। অজেয় আত্মা বিজয়ী হইয়া আপন গুহ্যদ্বারে স্বমেহনে তৃপ্ত।
উল্লাস, সম্মুখে কৃষ্ণপক্ষ। কালের গহ্বরে কালিমা বিসর্জিত হইয়া নবচন্দ্রের উদযাপনে শোনিত তরল পান করিয়া আগামির দিশারী হইতে হাতছানি দিতেছে। অগ্নিক্রীড়াতে ত্রসন রহিয়াছে বলিয়াই না উহা বলীদের জন্য সংরক্ষিত।
উপেক্ষা করিবার সাধ্য কাহার আছে?


Friday, 21 April 2017

নামহীন

দ্বন্দ্বের শুরুটা খুব ছোট্ট করে শুরু হয়, যখন প্রত্যাশার পারদ আকাশ ছোঁয়।

Monday, 17 April 2017

। উন্মাদীয় প্রলাপ ~ ৩০ ।।

চাকুর ধার সুযোগ পেলেই কাটবে, সে জাত চেনেনা। ফুলও গন্ধ ছারে আপন খেয়ালে, সেও মানুষের দ্বন্দ্ব বোঝেনা। শিশু নিজমনেই অনবিল হেসে উঠে অকারনেই, কেঁদেও উঠে কারন সে শিশু। কুকুরও কোথাও থেকে পাছাতে লাথ থেকে, ন্যাজ গুটিয়ে নিজের পাড়াতে গিয়ে বেশ খানিক্ষন চিল্লিয়ে পাড়া মাথায় তোলে।
আদতে বুদ্ধিমান নামের বস্তুটা পাতি মানুষের মাঝে খুঁজে পাওয়া যায়না। পারিবারিক সম্পর্কের মাঝের বিবাদটা সর্বজনবিদিত, উচ্ছিষ্টভোগিরা ভদ্রবেশে সাথে বসলেই চারিত্রিক উন্নতি ঘটে না। বংশ পরিচয় অবশ্যই একটা পরিচয় বহন করে, কিন্তু সবটা নয়। নিন্মরুচির কাক, যতই ময়ুরের পালক পরে নাচাগানা করুক, আস্তাকুর দেখলেই ঘৃন্য চরিত্র প্রকট হয়ে যায়। অযোগ্য অক্ষমের একটাই হাতিয়ার, নিপীড়িতের অভিনয়, আর শীৎকার।
নিজের সাবজেক্টের উপরে দখল কমবেশি সকলেরই থাকে, নাহলে ডানহাত বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেটা বুদ্ধিমত্তা নয়। কথিত আছে স্বস্তা মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা আশা করা অন্যায়। মুশকিল হল, এই বুদ্ধিভ্রমের জন্য শক্ত খোলস দেখে ঘরে তুলে দেখা যায়, ভিতরটা জাষ্ট ভটভটে পচা।
আত্মবিশ্বাস আর আত্মঅহংকার, মাঝের ফারাকটা খুব কম। অহংবোধ না থাকা মানুষ জড়বৎ, আবার অতি অহং দ্রুত বিচ্ছেদ ঘটায়।
আবেগ দিয়ে পেট ভরেনা, মন ভরে তাও সর্বক্ষেত্রে নয়। মূল বিষয় বেগ। এটাই দরকার। চলন্ত গাড়িতে সাওয়ারি করলে এগোনো ছাড়া উপাই নেই।


Monday, 3 April 2017

।। লোকাল ট্রেন ।।

একটি অভিজ্ঞতার ধারাবাহিক
-------------------------------

হাঁফাতে হাঁফাতে হাওড়া ষ্টেশনে ঢুকতেই বর্ধমান লোকালটা বেরিয়ে গেল। ঘড়িতে চোখ রাখতেই দেখি ঘড়ির কাঁটা আটটা দশ ছাড়িয়েছে। অতএব ছটা আটান্নর বর্ধমান লোকালের আর কি দোষ! অগত্যা এই সাতসকালে বিফল মনোরথে কী আর করি, পাঁচ নং প্ল্যাটফর্মের সোজাসুজি ওয়েটিং প্লেসের সামনে উত্তর দিকের হুইলার বুক স্টলের দিকে হাঁটা জুড়লাম। হৃদয়ে মস্তিষ্কে এখন শুধুই সেই পত্রিকা, নিরুপায় হয়ে দিবারাত্র স্বপনে জাগরনে পত্রিকা খাই, ওতেই শুই সব কিছুই জুড়েই, মানে পুরো একটা কেলেঙ্কারিয়াস পুদিচেরি আর কি! সাথে খালি বোতলটাও ব্যাগে গোঁজাই ছিল, সামনেই অ্যাকোয়া গার্ড ওয়াটার ফিল্টার দেখে ঠান্ডা জল নেওয়ার কথাটা বেমালুম মনে এসে গেল।
আচ্ছা করে সাতসকালে পেট ও মন দুটোই ভরে জল খেয়ে হুইলারের সামনে গিয়ে দেখি তখনও সেটা বন্ধ। পাশেই সার দিয়ে দোকান। গোরক্ষপুর প্রেসের স্টলের পাশের দোকানটাতে চা চাইতেই ওই টি-ব্যাগ ওয়ালা চা হাতে ধরিয়ে দিল। "ছ্যাঃ ছ্যাঃ এই চা আবার মাইনসে খায়!!" জানিনা বাপু কার কেমন লাগে, আমার আবার ফুটে ফুটে গজ না হলে চা এ টেষ্টই খোলে না। অগত্যা নাতজামাই ভাতার, ওই ই খেলাম নাকমুখ ভেংচে। দেরী যখন হয়েইছে, তাহলে কিছু কাজ করে নিই। রোব্বারের সকাল, অতএব ষ্টেশনে অন্যদিনের মত তেমন তারা নেই। ধীরে সুস্থে হেঁটে গিয়ে গজচালে বড়ঘড়ির নীচে গিয়ে বসে মোবাইলের দোকানটা খুলে বসলাম। সাথে গোটা চারেক এন্ড্রোয়েড ফোন।
ডিজিটাল দেশের রিংটাল আতাক্যালানে পাব্লিক আমি। এক এক করে সবকটাতে ফ্রির হাইস্পিড ওয়াইফাই করার জন্য গুগুল ষ্টেশনে গিয়ে মোবাইল নম্বর ভেরিফিকেশন করে কানেকশন জুড়ে ফোন কটার সাবতীয় সকল অ্যাপসের আপডেটেশন স্টার্ট করে দিলাম। ফ্রির এই ইন্টারনেট কার কী কাজে লাগে জানিনা, প্রেমিকদের চ্যাট আর পানু বিলাসীদের ডাউনলোডের স্বর্গোদ্যান এই সব স্থান। যদিও পাটনা এদের মধ্যে পানু ডাউনলোডে অগ্রগন্য- দেশের মধ্যে। মোটামুটি চারটে মোবাইলের সফটওয়্যারের যাবতীয় আপডেটেসনের চক্করে কখন যে সময় ফক্কা হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি, সাথে একটা ফোনে অকপট তো আছেই। সাধারনত এতো সকালে কোনোদিনই অনলাইনে আসিনা, আজ এসে মজা নিতে গিয়ে সুকন্ঠী ঘোষিকার আটটা পাঁচের লোকালও যায় যায়। পড়িমড়ি করে কোনোমতে ৪ নং প্ল্যাটফর্ম থেকে লেডিসের আগের কামরাতে চড়তেই মোটরম্যানের হুইসেল কানে এলো।
ভিতরপানে ঢুকতেই একটা মাতাল দায়িত্ব নিয়ে বেশ বমি করে একটা এদিক ওদিক গ্যাপের চার প্লাস চারটে সিটের স্থান ফাঁকাই রেখে দিয়েছে আমার জন্য। বমিটা এক্কেবারে সামনে, তাই চাপ না নিয়ে ওটাকে দেখে, ডিঙিয়ে জানালার ধারটা দখল করে বসলাম। হালকা গন্ধ যে ছারছেনা তা নয়, কিন্তু সেটাকে বাকি ভিড়ের তুলনাতে উপেক্ষা করাই যায়। কারণ এই মালটাই লোকটার পেটে থাকলে কী আর তার পাশে বসতাম না ! বোম তো আর নয় যে ফেটে যাব।
...ক্রমশঃ