Monday, 3 April 2017

।। লোকাল ট্রেন ।।

একটি অভিজ্ঞতার ধারাবাহিক
-------------------------------

হাঁফাতে হাঁফাতে হাওড়া ষ্টেশনে ঢুকতেই বর্ধমান লোকালটা বেরিয়ে গেল। ঘড়িতে চোখ রাখতেই দেখি ঘড়ির কাঁটা আটটা দশ ছাড়িয়েছে। অতএব ছটা আটান্নর বর্ধমান লোকালের আর কি দোষ! অগত্যা এই সাতসকালে বিফল মনোরথে কী আর করি, পাঁচ নং প্ল্যাটফর্মের সোজাসুজি ওয়েটিং প্লেসের সামনে উত্তর দিকের হুইলার বুক স্টলের দিকে হাঁটা জুড়লাম। হৃদয়ে মস্তিষ্কে এখন শুধুই সেই পত্রিকা, নিরুপায় হয়ে দিবারাত্র স্বপনে জাগরনে পত্রিকা খাই, ওতেই শুই সব কিছুই জুড়েই, মানে পুরো একটা কেলেঙ্কারিয়াস পুদিচেরি আর কি! সাথে খালি বোতলটাও ব্যাগে গোঁজাই ছিল, সামনেই অ্যাকোয়া গার্ড ওয়াটার ফিল্টার দেখে ঠান্ডা জল নেওয়ার কথাটা বেমালুম মনে এসে গেল।
আচ্ছা করে সাতসকালে পেট ও মন দুটোই ভরে জল খেয়ে হুইলারের সামনে গিয়ে দেখি তখনও সেটা বন্ধ। পাশেই সার দিয়ে দোকান। গোরক্ষপুর প্রেসের স্টলের পাশের দোকানটাতে চা চাইতেই ওই টি-ব্যাগ ওয়ালা চা হাতে ধরিয়ে দিল। "ছ্যাঃ ছ্যাঃ এই চা আবার মাইনসে খায়!!" জানিনা বাপু কার কেমন লাগে, আমার আবার ফুটে ফুটে গজ না হলে চা এ টেষ্টই খোলে না। অগত্যা নাতজামাই ভাতার, ওই ই খেলাম নাকমুখ ভেংচে। দেরী যখন হয়েইছে, তাহলে কিছু কাজ করে নিই। রোব্বারের সকাল, অতএব ষ্টেশনে অন্যদিনের মত তেমন তারা নেই। ধীরে সুস্থে হেঁটে গিয়ে গজচালে বড়ঘড়ির নীচে গিয়ে বসে মোবাইলের দোকানটা খুলে বসলাম। সাথে গোটা চারেক এন্ড্রোয়েড ফোন।
ডিজিটাল দেশের রিংটাল আতাক্যালানে পাব্লিক আমি। এক এক করে সবকটাতে ফ্রির হাইস্পিড ওয়াইফাই করার জন্য গুগুল ষ্টেশনে গিয়ে মোবাইল নম্বর ভেরিফিকেশন করে কানেকশন জুড়ে ফোন কটার সাবতীয় সকল অ্যাপসের আপডেটেশন স্টার্ট করে দিলাম। ফ্রির এই ইন্টারনেট কার কী কাজে লাগে জানিনা, প্রেমিকদের চ্যাট আর পানু বিলাসীদের ডাউনলোডের স্বর্গোদ্যান এই সব স্থান। যদিও পাটনা এদের মধ্যে পানু ডাউনলোডে অগ্রগন্য- দেশের মধ্যে। মোটামুটি চারটে মোবাইলের সফটওয়্যারের যাবতীয় আপডেটেসনের চক্করে কখন যে সময় ফক্কা হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি, সাথে একটা ফোনে অকপট তো আছেই। সাধারনত এতো সকালে কোনোদিনই অনলাইনে আসিনা, আজ এসে মজা নিতে গিয়ে সুকন্ঠী ঘোষিকার আটটা পাঁচের লোকালও যায় যায়। পড়িমড়ি করে কোনোমতে ৪ নং প্ল্যাটফর্ম থেকে লেডিসের আগের কামরাতে চড়তেই মোটরম্যানের হুইসেল কানে এলো।
ভিতরপানে ঢুকতেই একটা মাতাল দায়িত্ব নিয়ে বেশ বমি করে একটা এদিক ওদিক গ্যাপের চার প্লাস চারটে সিটের স্থান ফাঁকাই রেখে দিয়েছে আমার জন্য। বমিটা এক্কেবারে সামনে, তাই চাপ না নিয়ে ওটাকে দেখে, ডিঙিয়ে জানালার ধারটা দখল করে বসলাম। হালকা গন্ধ যে ছারছেনা তা নয়, কিন্তু সেটাকে বাকি ভিড়ের তুলনাতে উপেক্ষা করাই যায়। কারণ এই মালটাই লোকটার পেটে থাকলে কী আর তার পাশে বসতাম না ! বোম তো আর নয় যে ফেটে যাব।
...ক্রমশঃ


No comments:

Post a Comment