-------
সপ্তম পর্ব- গ্রেটার ইজরায়েল পরিকল্পনা
****
আজ আপনাদের ইহুদিজাতির এক গভীর স্বপ্নদোষের কথা শোনাবো, যার নাম গ্রেটার ইজরায়েল প্রকল্প। আর এই প্রকল্পের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল আরব ভুখন্ডের বড় রাষ্ট্রগুলোকে ছোট অংশে ভাগ করে দেওয়া ও তার সাথে পঙ্গু করে দেওয়া। তারা ইউরোপিয়ান উদ্বাস্তু হয়ে প্যালেস্টাইন ভূখন্ডে এসে আজ প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রটিকেই প্রায় মুছে দিয়েছে। তার আগে মাঝে মাঝে ধর্মীয় কেচ্ছা-কাহিনী গুলোতে মননিবেশ করি চলুন।
ইহুদি ধর্মমতে প্রফেট মোজেস বা মুসা (আঃ) এর এক ভাই তাঁর সহকারী ছিলেন, যার নাম এ্যারন বা হারুন(আঃ)। এখন ফ্যারাওদের খপ্পর থেকে প্রফেট মোজেস ইহুদিদের নিয়ে প্যালেস্টাইন তথা সাবেক কেনান প্রদেশে প্রবেশ করতে চাইলে, তৎকালীন সেখানকার প্রতাপশালী রাজার ভয়ে ইহুদীজাতি ভীত সন্ত্রস্ত হয়; এবং কেনানে ঢুকতে অস্বীকার করে। (Deuteronomy 1:35) লিঙ্ক-(১) তারা দাবি করে মোজেস ও তার ঈশ্বর আগে যুদ্ধ করে জয়লাভ করুক, তার পর ইহুদিরা সুরক্ষিত পবিত্রভূমিতে প্রবেশ করবে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, ইহুদি জাতি তাদের ধর্মগ্রন্থ মতেই তারা ‘যে পাতে খায় সেই পাতে ফুটো করে’ এমন জাতি। বৈষয়িক স্বার্থে এরা যা খুশি তাই করতে পারে, সে গল্পও বলব। এমতাবস্থাতে প্রফেট মোজেস ৪০ দিনের জন্য সিনাই পর্বতে গিয়ে ঈশ্বরের আরাধনাকালে তাঁকে দুটো পাথরের খন্ড প্রদান করেন স্বয়ং ঈশ্বর, যেখানে ইহুদিজাতির জীবন বিধান লিপিবদ্ধ ছিল। এই সিনাই পর্বত হতেই ঈশ্বর মোজেসকে ‘টেন কমান্ডমেন্টস” প্রদান করেছিলেন।
কিন্তু সেই ৪০ দিন পর ফিরে এসে মোজেস দেখেন ইহুদিরা একেশ্বরের পরিবর্তে সোনার বাছুর মুর্তির পূজা করছে (Exodus 32:4)। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ইহুদিরা মিশরে থাকার দরুন সেখানকার ধর্মীয় রীতিনীতি কিভাবে রাতারাতি ভুলে যাবে? আর প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতাতে ষাঁড়ের পূজার চল ছিল। লিঙ্ক- (২)।
কিন্তু এতে মোজেস রাগান্বিত হয়ে সেই ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রস্তরখন্ডকে ভেঙে ফেলেন, যা পরে ঈশ্বর আবার পুনঃনির্মান করে দেন(৩) (Exodus 32:19)। এমতাবস্থায় এই ঈশ্বরবিমুখতার জন্য খোদ ঈশ্বর, মিশর ফিরৎ ইহুদিদের শাস্তি স্বরূপ ৪০ বছর মরুভূমির মধ্যেই আবদ্ধ রেখে দেন। ইহুদিরা ‘ট্যবটেল অফ স্টোন’ দুটিকে একটি বাবলা কাঠের হাতলবিশিষ্ট সিন্দুক তৈরি করে সেই পাথরখন্ডকে সুরক্ষিত করে রেখে দেয়। পরে অবশ্য এই সিন্দুককে সোনা দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়। যাকে আমরা “আর্ক অফ দ্য কেভেনেন্ট” নামে চিনি। লিঙ্ক পড়ুন- (৪)
বর্তমানে এই আর্ক বা সিন্দুকটির খোনো খোঁজ নেই প্রায় ২০০০ বছর যাবৎ বা তারও বেশি। ইহুদিরা বিশ্বাস করে যে- তৃতীয় মন্দির নির্মান হলেই সেই সিন্দুক খুঁজে পাওয়া যাবে ঐশ্বরিক উপায়ে। ইহুদি ধর্ম মত অনুযায়ী- যাদের কাছে এই সিন্দুক থাকবে, তারাই পৃথিবী শাষন করবে। যদিও এই সিন্দুকের ভিতরে যে কি গুপ্তধন আছে, তা মানুষের আজও অজানা- ইহুদিদেরও। অনেক গুজবই রটে এই সিন্দুককে নিয়ে, নানান কল্পকাহিনীরও শেষ নেই। জিম্বাবোয়ের লেম্বা সম্প্রদায় থেকে ইথিওপিয়ার হান্টু সম্প্রদায়, এমনকি রোম, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, মিশর প্রমুখ অনেক দেশের রাজা বা সরকারও বিভিন্ন সময়ে দাবি করেছে যে এই পবিত্র সিন্দুক তাদের হেফাযতেই আছে। প্রচুর হলিউডি সিনেমাও হয়েছে এই রহস্যে মোড়া সিন্দুককে নিয়ে, যেমন- ‘ডেভিড এন্ড বাথসিবা’, ‘দ্যা টেন কমান্ডমেন্টস’, ‘সলোমান এন্ড সিবা’, ‘ইন্ডিয়ানা জোনস এন্ড লাষ্ট ক্রুসেড’ ‘এন্ড অফ দ্যা ক্রিষ্টাল স্কাল’, ‘মেগামাইন্ড’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এর পর কালের নিয়মে এ্যারন ও মোজেসের মৃত্যু হলে, সেই মিশর ফিরৎ প্রজন্মের মধ্য হতে মাত্র দুইজন বেঁচে ছিলেন, তাঁরা যথাক্রমে জসুয়া ও সেলিব। ইজরালাইটরা এই জসুয়াকে তাদের নেতা নির্বাচিত করে পবিত্র ভুমি উদ্ধারের চেষ্টাতে ব্রতী হলেন; জাসুয়া, ইসলামে তালুত নামে পরিচিত। আর সেই পবিত্র ভূমি হল আজকের এই প্যালেস্টাইন বা ইজরায়েল ভূখণ্ড। আরো মজা আছে, এই সমগ্র পবিত্র ভূমির সীমানা কতটুকু? ইজরায়েলই পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যার কোনো নির্দিষ্ট লিখিত সীমা নেই। এ সীমা রোজ বাড়ছে, বৃদ্ধির নিয়মেরও কোনো বাপ-মা নেই। লিঙ্ক-(৫ & ৬) ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ ‘তৌরাত’ বা ওল্ড টেস্টামেন্ট অনুসারে ওই পবিত্রভূমির সীমা- মিশরের নীলনদের অববাহিকা অঞ্চল থেকে ইরাকের ফোরাত তথা ইউফ্রেটিস নদীর সীমানা পর্যন্ত। যার মধ্যে গোটা লেবানন, গোটা জর্ডন, গোটা সিরিয়া, ৭০% ইরাক, গোটা প্যালেস্টাইন, সৌদি আরবের এক চতুর্থাংশও পড়ছে। লিঙ্ক- (৭) বাইবেল- Genesis 15:18–21
এবারে আজকের মধ্যপ্রাচ্যে দেখুন- কোন অংশটুকুতে সমস্যা; আরব ইজরায়েল ৬ দিনের যুদ্ধ, ইরাক-ইরান যুদ্ধ, ইরাক-কুয়েত যুদ্ধ হয়ে আজকের সিরিয়া গৃহযুদ্ধ। আর এটা দেখে মোটেই আশ্চর্য হবেননা, যে এর মধ্যে ইরান বা সাবেক পার্শিয়াতে জঙ্গিবাদের অভিযোগ তেমন নেই। যার জন্য ইরানে পরমাণু বোমা থাকা সত্বেও তাদের উপরে হামলা হয়নি আমেরিকা, ন্যাটো, বা জাতিসঙ্ঘ নামের পোষ্য সারমেয় দ্বারা, অথচ ইরাকে পরমাণু অস্ত্র আছে- এই অভিযোগে তাদের দেশকে ধুলোতে মিশিয়ে দেওয়া হল; এবং আজকে ওই যায়োনিষ্টদের পোষ্য-সরকার(নখদন্তহীন) রাজত্ব করছে। অথচ দুটো দেশের ক্ষেত্রেই পরমাণু সীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ ছিল মাত্র, প্রমাণিত কিছু ছিলনা। তাহলে ইরান আক্রমন না করে শুধুই ইরাক কেন লক্ষ্য হল? এছারাও ইরানে হামলা না করার আরো কারন আছে যা পরের পর্বে নিশ্চই বলব। ইরাক রাষ্ট্র ইতিমধ্যে ৩ খন্ডে বিভক্ত হয়ে গেছে কুর্দি, সিয়া আর সুন্নিদের মাঝে। এর পর লক্ষ্য অবশ্যই সৌদি আরব, এই দেশ চার খন্ডে ভাগ হবে বা বিভক্ত করা হবে- আর সে দিন অত্যন্ত নিকটে।(৮)
২০০৬ সালে তৎকালীন মার্কিন সেনেটর ও পরবর্তীতে মার্কিন ভাইস প্রেসেডেন্ট ‘জো বাইডেন’ সর্বপ্রথম মার্কিন কংগ্রেসে ইরাককে তিনটি ভাগ করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন, যা ‘নন-বাইন্ডিং রেজুলেশন’ নামে পরিচিত। এখানে শুধুমাত্র কুর্দিদের স্বাধীনতার পক্ষে সাওয়াল করা হয়, এবং এটা ৭৫-২৩ ভোটে মার্কিন কংগ্রেসে জয়ী হয়। অথচ খ্রিষ্ঠান, মান্দিয়ান, ইয়াজিদি, তুর্কম্যান, ইহুদি, জোরাষ্ট্রিয়ান, বাহাই, কাকাই, সাবাক এমনকি নাস্তিকরাও ইরাকে ছিলেন ও আছেন। এই বাইডেন নামক মানুষটি কিন্তু ঘোষিত যায়োনিষ্ট। লিঙ্ক ভিডিও- (৯) সুতরাং, মধ্যপ্রাচ্যে কোনো কিছুই দুম করে হচ্ছেনা, সবটাই নির্দিষ্ট পরিকল্পনার সুক্ষ রুপায়ন মাত্র।
সবটাই আসলে ধর্মীয় কারনে অগ্রাসন, গ্রেটার ইজরায়েল গঠনের লক্ষ্যে। আইসিস বা ইসলামিক স্টেট নামের ক্যান্সারটি আসলে ইজরায়েলি গুপ্তচর মোসাদের তৈরি বাহিনী; যারা আমেরিকার অস্ত্রে সজ্জিত এবং এদের স্পনসর করছে সৌদ রাজবংশ। এলাকার দুর্নীতিগ্রস্থ নেতা যেমন পাড়ায় পাড়ায় মস্তানবাহিনী পোষে, এলাকাতে ত্রাস সৃষ্টি করে সন্ত্রাসের আবহে নিজের ক্ষমতা জাহির করা ও একচ্ছত্রভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা; এবং আর্থিক ভাবে অনৈতিক ভাবে লাভবান হওয়া। এই তালিবান-আলকায়েদা-আইসিস- বোকো হারাম-ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন ইত্যাদি সেই একই মস্তানি সন্ত্রাস। মৃত লাদেনের লাশ বিশ্ব জনগণের সমক্ষে আনলনা মার্কিন সরকার, যার জন্য CIA প্রচুর যুক্তি অবশ্য দিয়েছে। কিন্তু যেটা সত্য হল- ওসামা-বিন লাদেনের মৃতদেহ কেউ দেখেনি। সবাই আমরা দেখেছি একটা ছবি। বর্তমানে সিরিয়া সংক্রান্ত ভুয়ো ছবি দেখার পর এটা মনে হতেই পারে- সেটাও আসলে ভুয়ো। ওই ‘লাদেন মৃত’ কেচ্ছার মাধ্যমে আফগানিস্থান থেকে পালিয়ে বাঁচে আমেরিকা।
কিন্তু প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, আফগানিস্থান এদের ‘সরাসরি’ প্রথম লক্ষ্য হল কেন? আফগানিস্থান তো আর গ্রেটার ইজরায়েলের অন্তর্ভুক্ত নয়। সেখানে আমেরিকা বা যায়োনিষ্টরা কেন পরিকল্পনা মাফিক তালিবান বা আল কায়েদা সৃষ্টি করল? এর উত্তর লুকিয়ে আছে আফগানিস্থানের সাবেক নামের সাথে জড়িয়ে, আর রয়েছে ভয়। আপনি জানেন আমি আপনার ক্ষতি করব, এখন আপনার দাদুও যদি এই কাহিনী জানত আর আমার দাদুকে তিনি হত্যা করে দিতেন- তাহলে আমার বাবা’ই জন্ম নিতনা। সুতরাং আমার জন্ম নেওয়ার প্রশ্নই নেই। অতএব আপনার দাদুর বংশ নিরাপদ রইল। আফগানিস্থান অঞ্চলের প্রাচীন নাম- খোরাসান। অবশ্যই আমি পরবর্তীতে এই কেচ্ছা নিয়ে আসব।
তাহলে পাকিস্থানকে কেন আমেরিকা জঙ্গিবাদের ধাত্রীভূমিও বলে আবার জঙ্গিবাদ নিকেশ করার নামে বিপুল আর্থিক অনুদান দেয়? যেখানে তারা লাদেন বা দাউদের মত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক! আসলে পাকিস্থান নামক ফোঁড়াটা না রাখলে ভারতকে এতো কোটি কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি কিভাবে সম্ভবপর হবে? সুতরাং পাকিস্থান নামক দেশটা আসলে যায়োনিষ্ট অস্ত্র ব্যবসায়ীদের ভারতের সীমান্তে ‘ভয়ের দোকান’ শোরুমের মত খুলে রেখেছে। যেখানে রোজ সন্ত্রাসের প্রদর্শন হয়, আর ভারত কোটি কোটি ডলার দিয়ে অস্ত্র কেনে আমেরিকা, ইজরায়েল, ফ্রান্স, রাশিয়া ইত্যাদি দেশের কাছ থেকে। এর পাশাপাশি পাকিস্থা নিয়ে যায়নিষ্টদের দুই ‘শত্রু’- চিন ও রাশিয়ার অগ্রাশনের ভয় তো আছেই। আমেরিকা সাথ ছাড়লেই অন্য দুয়ের যে কেউ দখল করে নেবে। একটা লিঙ্ক দিলাম দেখুন পড়ে- (১০)
...ক্রমশ
(উন্মাদীয় বানানবিধি)
No comments:
Post a Comment