Monday, 22 April 2019

।। ভোটের ডিউটি ।।


ভোটের ডিউটিতে যাবার আগে এটা করে যান, নতুবা হারিয়ে গেলে তার জন্য আপনিই দায়ী থাকবেন।

To whom it may concern

বিধিঃ পচাশৎ অর্থমূল্যমানের একটি রাষ্ট্রীয় মোহর মুদ্রাক্ষিত বিশিষ্ট পত্রে লিপিবদ্ধ করিতে হইবে, অতঃপর দলিলপত্র হিসাবে সম্পাদনের কল্পে কারণিক হাকিমের দস্তখৎ আবশ্যক।   

উপক্রমণিকাঃ
কস্য সাধারণ আম-হলফনামা মিদং কার্যাঞ্জে, পরম করুণাময় (নিজ নিজ ঈশ্বরের নাম লিখিবেন, নাস্তিকেরা এড়াইয়া যান, শষ্প বংশীয়েরা লিখিবেন ‘তাঁহার অনুপ্রেরণায়’) নামে শপথ করিয়া ঘোষণা করিতেছি যে-

রাষ্ট্রীয় পরোয়ানা হেতু, রাষ্ট্রীয় অভিভাবক নির্বাচনের নিমিত্ত, আমি রাষ্ট্রীয় অঙ্গরাজ্যের সোপর্দ কতৃক কর্মবিশেষ দায়িত্ব সনদপত্র প্রাপ্ত করিয়াছি। তৎসুত্রীয় এই নিষ্কণ্টক কার্মিকেয়র অবতারণা।

অঙ্গীকারনামাঃ

১) আমি শ্রীযুক্ত ‘অমুক’, শ্রীযুক্ত ‘অমুকের’ ঔরসজাত সন্তান, সাকিন ‘তমুক’। চুরান্ত অনিহা স্বত্বেও, রাষ্ট্রীয় বলপূর্বক স্নায়ুচাপজনিত নানাবিধ আতঙ্ক, ত্রাস, ভীতি, আশঙ্কার অভ্যন্তরে, সর্বপরি সরকারী চাকুরীটি বাঁচাইবার লক্ষ্যে, আমি এই কার্যে আসিবার জন্য সম্মত হইয়াছি। অন্যথায় রাষ্ট্ররোষে কুপিত হইতে পারি।

২) আমার কোনো প্রকারের মানসিক দুর্বলতা ও অবসাদ নাই।

৩) আমার পারিবারিক অশান্তি নাই, থাকিলেও উহাকে প্রলম্বিত রাখিবার দায়ে আমার গৃহে প্রত্যাবর্তন জরুরী

৪) আমার উত্তমর্ণ দ্বারা বিপদগ্রস্থ নই, ভ্রান্তিবসত থাকিলেও উত্তমর্ণগণ আমার অবর্তমানে আমার অপত্য ও আস্থাস্থাপকের উপরে অধমর্ণহেতু গঞ্জনা বর্ষন করিলে উহা আমার নিকট মোটেই সুখকর বিষয় হইবেনা, সেইহেতু রাষ্ট্রীয় কর্ম সমাপ্তিতে আমার গৃহে প্রত্যাবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৫) বিশ্বসমাজের সৃষ্টিকর্তা, পুরুষ জাতিকে সৃষ্টিই করিয়াছেন বহুগামিতার সর্বপ্রকারের গুণ দিয়া। ইহার পরেও আমার, কহিবার মত সুস্পষ্ট ও তীক্ষ্ণ অন্তরটান বিশিষ্ট পরকিয়া না, অতএব গৃহত্যাগী হইতে আমি অক্ষম। পড়শিতুতো সম্পর্কজালের দ্বারা সৃষ্ট অগ্রজজায়ার প্রতি কিঞ্চিৎ আকর্ষণ থাকিলেও সেক্ষেত্রে গৃহে পুনরাগমন আবশ্যিক।

৬) ই মধ্যবয়সে আসিয়া, দুর্মূল্যের দুর্বিপাকে কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানাত্ত্বে বিশ্বাসী নই, উহা মনে মনেআমার জন্য সঠিক, গুরুদেবের লেখনি সার্থকতাতে আমরা দায়বদ্ধ। নিরুদ্দেশ যাত্রা এমনিতেই জাতি বাঙালির গঠনতন্ত্রে অনুপস্থিত।

৭)  “কর্ণকুহরে সঞ্চালিত একাকী সঙ্গীত বাসর যন্ত্রে” উন্মত্তের মত গীতসুধা শুনিতে শুনিতে রেলপথ বা সড়কে পারাপার করিতে কোনোকালেই স্বচ্ছন্দ্য ছিলামনা বর্তমানেও নেই।

৮) আমি কোনো প্রকারের গুপ্ত ব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত নই যে সামান্য পলায়নের সুযোগ আসিবা মাত্রই আমি উন্মত্তের মত সেই পথে ধাবিত হইব, সভ্য সমাজ ত্যাজিয়া।

৯) হিন্দিভাষ্যে নির্মিত চলচ্চিত্র মিস্টার ইন্ডিয়ার মত নীলিন হইবার মত ক্ষমতা করায়ত্ত করিতে পারিনাই।

১০) স্বল্পাহারী আমার এমন কোনো প্রকারের ক্ষুধা ব্যারাম না, যেখানে গোটা 'আমি' টাকেই উদরস্থ করিয়া সম্পূর্ণ পরিপাক করিয়া ফেলিব, সামান্যতম উচ্ছিট্ট ব্যাতিরেকে।

১১) এই সরকারী চাকুরিটির হেতু বড় কায়ক্লেশে করিয়া অমন একপিস নধর, তত্বাবধায়ক, নীতিশিক্ষক, বাক্যবাগীশ জীবনসঙ্গিনী, বিশ্বনিষ্কাষণ করিয়া অর্জন করিয়াছি। সেইহেতু, দ্বিতীয় কোনো প্রকারের  প্রেমজনিত কার্যকলাপের প্রতিশ্রুতি দিতে অক্ষম, যাহাতে চাঁদে চলিয়া যা বা কোনো নির্জন দ্বীপে যাইবার বাসনা জাগ্রত হইবে

১২) ইন্ট্রিগেশন ক্যালুলাস অনুশীলনের অভ্যাস নাই, কিন্ত ১৭ ঘরের নামতা যোগ করিয়া করিয়া মুখস্ত বলিতে পারি। আমি সুস্থ ও স্বাভাবিক তাহার একটি নমুনা ইহা।

১৩) সনাতন ধর্মের পূর্নজন্মের লোভ বা ইসলামে উল্লেখিত মৃত্যুর পর প্রাপ্ত ৭২ হুরের লোভে আমি লোভাতুর মোটেই নই, শাস্ত্রে আছে তাই পাঠ করি মাত্র। আমি বাঙালী পুরুষ, ঘরের দেবী ছিন্নমস্তা/রণচন্ডী স্ত্রীরূপী অভিভাবকই আমার উপরে সৌন্দর্য আরোপিত করিয়া থাকেন তাঁহার সুমিষ্ট আঁচলের তলেই আমার যাবতীয় সুখানুভূতি ও বিশ্ব ক্রীড়াক্ষেত্র।

১৪) মহার্ঘভাতার বৃদ্ধি সেই তিমিরে, পরিভৃতি অন্যন্য অঙ্গরাজ্য কিম্বা কেন্দ্রের তুলনাতে বিপুল বৈষম্যান্বিত। তাই ইলিশ মৎস, নপুংসক পুরুষ ছাগ মাংস, বিরিয়ানি, অসময়ে পক্ক অমৃতফল, সরভাজা, গলদা চিঙিড়ি খাবার মত সামর্থ্য নেই- যাহার দরুন অম্লশূল, ভেদবমি, শিথিলান্ত্র, আন্ত্রিক ইত্যাদির মত বিত্তশালী পীড়াহত হইয়া বনেবাদারে মরিবার মত সঙ্কুলান নাই, তথাপি আমি আমৃত্যু পরিবারের সহচর্যেই থাকিতে চাই।

১৫) জঙ্গি নাম শুনিবামাত্রই আমার পক্ষি সদৃশ্য স্বেতবর্ণের মলত্যাগ করি, অতএব জঙ্গিদলে নাম লেখাইবা হেতু আমি গৃহত্যাগে অক্ষম।

১৬) শত্রু প্রতিপালনের মত পরাক্রমতা আমার রক্তে কোনো কালেই ছিলনা। অবশিষ্ট যাহা কিছু তাহার নির্বীজকরন করিয়াই আমি আজ এই স্থানে পৌছাইয়াছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রদর্শিত বীরত্ব অনুসারে আমাকে বিবেচনা করা অহেতুক, ওই পরিসরের শত্রুরাও বাগ্মী জগন্নাথ। বাস্তবে ওই পরিমন্ডলের আমরা নিতান্তই ছাপোষা। অতএব আমি অজাতশত্রু।

এদত মর্মে পুনরায় অঙ্গীকার পূর্বক স্বজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে, পত্নী ও শ্বশ্রূমাতা প্ররোচনা ব্যাতিতই ঘোষণা করিতেছি; আমি একজন ভারত রাষ্ট্রের বিশ্ববাংলা অঙ্গরাজ্যে তাঁহার অনুপ্রেরণায় একজন আম নাগরিক।

ঘোষণাকারীর সাক্ষরঃ
তারিখঃ

মুসাবিদা কারকের নামঃ
সাক্ষরঃ

সনাক্ত কারকের নামঃ
সাক্ষরঃ


প্রামাণিক ইশাদীর নামঃ
সাক্ষরঃ
_______________________
রাষ্ট্রীয় আইনব্যবস্থায় স্বীকৃত হাকিম কতৃক নিশ্চয় রূপে জ্ঞাত করণের উদ্দেশ্যে প্রত্যায়িত করা হইল।

@উন্মাদ হার্মাদ


Friday, 19 April 2019

।। উপেক্ষা ।।

ফুলে গেলে আমার নাম উন্নয়ন
ভুলে (মূল্যবোধ) গেলে আমারই নাম চাড্ডি
খুলে গেলে (মুখোশ) ছা পোষা বাঙালি
ঝুলে (হৃদিয়ের কার্নিশে) গেলে প্রেমিক
গুলে (প্রাণের অন্দরে) গেলে বন্ধু
শুলে পরে (বিছানাতে) .... রঙধনু নই নিশ্চিত
ছুঁলে পরে (অঙ্গে)- শীতল
মুলে গেলে (নাক কান)- ফক্কা
রুলে গেলে (ইংরাজি আইন)- ভেঙে দিয়ে সুখী
শূলে দিলে (সমবেত বিচার) - মৃত্যু
হুলে বিঁধলে (মিথ্যা)- প্রত্যয়ী
কুলে গেলে (পরিচয়) প্রলেতারিয়েত
চুলে গেলে (শুধু মাথা) টাক
তুলে নিলে (কোলে) কোমরে ব্যাথা
ধুলে পরে (সর্বাঙ্গ) কয়লা
থুলে পরে (সাথে) কর্মের
ভুলে গেলে?
নতুন শুরু।
***********
তাই সমমানের না হলে অহেতুক তর্ক করে লেভেল নষ্ট করার যুক্তি নেই। আমি জানি আমি কে ও কি! কতটা আমার যোগ্যোতা ও কতটা এক্তিয়ার। এমন কেউ যে- শিক্ষা, সামাজিক পরিচয়, ভাবনাগত মান, ভাব প্রকাশের ক্ষমতা সাদা কালোতে, অর্থনৈতিক স্ট্যাটাস, পেশাগত সম্মান ও অবস্থান ইত্যাদি.... সবেতেই সর্বত্র পিছিয়ে, সে বা তাদের সাথে লড়াই চলেনা। তাদের জন্য কেবলমাত্র একরাশ অবজ্ঞা, বেদনা মিশ্রিত হাহাকার আর চরম উপেক্ষা। খানিক ঘেউ ঘেউ করবে, হালে পানি না পেয়ে কেটে উঠবে। কুত্তা... কামড় ওই হাঁটুর নিচে। ছেই করলেই লেজ গুটিয়ে কুঁইকুঁই করে অন্যত্র আশ্রয় খুঁজবে। করুণা করে এই পোষ্টটা আসলে বাড়তি 
সুখে থাকুন 
উল্লাস। 
যদিও উল্লাসে আর থাকা হয় কোথায়।
আপাতত ঠিকানা- ঢাকা ( খোলাও) 

Sunday, 14 April 2019

।। হে রাম ।।



"ধার্মিকেরা নিজ ধর্মের আচার পালনে মগ্ন থাকে, ধর্ম ব্যবসায়ীরা অন্য ধর্মের প্রতি আক্রমন করে ধর্মাচার্য পালন করে"। এটাই আপ্তবাক্য।
আজকের দিনে এই যে রামনবমী নামের একটা হাল উৎসব নিয়ে এতো অস্ত্রের মাতামাতি, ঝঙ্কার, ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি, সমাজে অস্থিরতা, এর শিকড় কোথায়? কিইবা এর আসল ইতিহাস? চলুন একটু শাস্ত্র ঘ্যেটে দেখা যাক।
ঋগ্বেদে (১০-৯৩-১৮) সর্ব প্রথম ‘রাম’, নাম হিসাবে শব্দটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। সুতরাং রামায়ণের অনেক পূর্ব থেকেই রামনাম্নী অনেকের উল্লেখ রয়েছে শাস্ত্রে। যদিও তারা একই ব্যাক্তি বা আলাদা কিনা সবটা সুস্পষ্টভাবে জানা যায়না। শ্রী বিষ্ণুর অবতার ‘পরশুরাম’, বা মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণের ভাই ‘বলরাম’ এবং দশরথ পুত্র রঘুবংশীয় ‘রাম’ এমন অনেক বিশিষ্ট রাম হিন্দু ধর্মে আরাধ্য।
সূর্যবংশীয় তথা রঘুনাম্নী রাজার নামানুসারে রঘুবংশীয় রাজা দশরথের জ্যাষ্ঠ পুত্র শ্রী রামচন্দ্র। আর্য রাজা, তৎকালীন দিনে আজকের মত পদবী গুরুত্ববাহী ছিলনা তাই শুধুই রাম। রাম কাহিনী সম্পর্কিত এক আধটা উপাখ্যান বাদ দিলে সবগুলোকেই রামায়ন নামে অবিহিত করা হয়েছে। রামায়ণ নিঃসন্দেহে মহাভারত আখ্যানের অনেক পূর্বে লিপিবদ্ধ হয়েছিল, কারন মহাভারতে রামায়ণের কথা উল্লেখ থাকলেও রামায়ণের কোথাও মহাভারতের ছিটেফোঁটা নেই। মহাভারত প্রায় সমস্তটাই নগরজীবনের কথা বলে, অনেক বেশি জটিল, এখানের সকল বড় চরিত্র গুলোই আর্য। সেদিক থেকে রামায়ণ অনেকটা অরণ্য কেন্দ্রিক, অনারম্বর, আর্য অনার্যের লড়াই।
পতঞ্জলি মুনির ‘ত্রিমুনিব্যকরণ’ অনুযায়ী ‘লৌকিক সংস্কৃত’ ভাষাতে, রাম শব্দের আক্ষরিক অর্থ সম্ভবত ‘শুরু’; অবশ্য আদি শঙ্করাচার্যের মতে রাম মানে হল- ঋষি বা তাপসেরা যার সাথে রমণ তথা ধ্যন করে সর্বোচ্চ তৃপ্তি লাভ করেন তিনিই রাম, শ্রীবিষ্ণুর সপ্তম অবতার। সংস্কৃত ভাষায় রচিত আদি রামায়ণের রচয়িতা হিসাবে মহর্ষি বাল্মিকীর নাম আমরা সকলেই জানি, কিন্তু এই সংস্কৃত ভাষাতেই আরো বেশ কয়েকটি রামায়ণের সন্ধান মেলে; যেমন আধ্যত্ব রামায়ণ, আনন্দ রামায়ণ, যোগ রামায়ণ, ভুশন্ডি রামায়ণ ইত্যাদি।
যেহেতু সংস্কৃত ভাষার নির্দিষ্ট কোনো বর্ণমালা ছিলনা, (আজও নেই, নাগরী বা দেবনাগরীই বেশি ব্যবহৃত হয় সংস্কৃত লিখনে) তাই শ্রুতি পদ্ধতিতে সংরক্ষিত রামায়ণ মূল কাঠামো অপরিবর্তিত রেখে স্থান কাল পাত্র ভেদে, বারে বারে পরিবর্তিত হয়েছে। নানা যুগে নানা দেশে কবিরা তাদের মনের মাধুরী মিশিয়ে, তাদের নিজস্ব কল্পনাতে রামকে এঁকেছেন। বাল্মীকির রামায়ণের রাম মহাশক্তিধর পরাক্রমশালী, তুলসীদাসী রামায়ণের রাম রক্তমাংসের মানুষ, যাকে চাইলেই ধরা যায় এতটাই সার্বজনীন। আবার কৃত্তিবাসী রাম নয়নাভিরাম সুন্দর পুরুষ, অপরিসীম করুণার ধারা, অলৌকিক শক্তিতে ভরপুর ও ভীষণ প্রজাবৎসল রাজা। রামায়ণের বিখ্যাত গবেষক কেমিল বাঙ্ক, 1950 সাথে প্রকাশিত “Three Hundreds Ramayana’s” নামক বইটিতে তিনি সারা বিশ্বে প্রায় ৩০০ টি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের রামায়ণের কথা উল্লেখ করেছেন। যেখানে বৌদ্ধ রামায়নে রাম-সীতা ভাইবোন, জৈন রামায়নে রাবন ভীষণ সৎ একজন রাজা, নেপালি কবি ভানু ভক্তের ‘নেপালি রামায়ণ’, কন্নর ভাষায় ‘তোরবেয় রামায়ণ’ এখানে সীতার পিতা রাবণ, যিনি হাঁচির মাধ্যমে জন্মগ্রহন করেছিলেন। অহমিয়া ভাষাতে ‘মাধব কণ্ডলীর’ রামায়ণ, তামিল কোম্বন ভাষাতে ‘ইরামবাতায়ম’, আর বাংলাতে কৃত্তিবাসী রামায়ণ ভীষণ প্রসিদ্ধ।
বিদেশের মাটিতে মানে এশিয়ার অন্যান্য দেশেও রামায়ণের হদিশ পাওয়া গেছে। শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যাণ্ড, ফিলিপিন্স সহ অনেক দেশেই রামায়ণের অস্তিত্ব ও চর্চা আজও বিদ্যমান। মূল রামায়ণকে কেন্দ্র করে যেমন অনেক ভাষায় রামায়ণ লেখা হয়েছে, ঠিক তেমনই রামায়ণের অংশ নিয়ে প্রচুর গ্রন্থ লেখা হয়েছে। মনের রঙে মাধুরী মিশিয়ে রচিত হয়েছে নতুন নতুন কাহিনি। রঘুনন্দন গোস্বামী, রামানন্দ ঘোষ, জগৎরাম, রামপ্রসাদ প্রমুখ এরকম অনেকেই রামায়ণ অবলম্বনে কাব্য রচনা করে প্রভূত খ্যাতি লাভ করেছেন। কালিদসের ‘রঘুবংশম্’, ভাসের ‘প্রতিমা’ ও ‘অভিষেক’, ভবভূতির ‘মহাবীরচরিত’ ও ‘উত্তররামচরিত’, ভট্টির ‘রাবণবধ’, কুমারদাসের ‘জানকীহরণ’, মুরারির ‘অনর্ঘরাঘব’, ক্ষেমেন্দ্রর ‘রামায়ণমঞ্জরী’, রাজশেখরের ‘বালরামায়ণ’, জয়দেবের ‘প্রসন্নরাঘব’, ভোজের ‘চম্পূরামায়ণ’, ঈশ্বরচন্দ্রের ‘সীতার বনবাস’, রবীন্দ্রনাথের ‘বাল্মীকির প্রতিভা’, রামশঙ্করের ‘রামায়ণ’, দ্বিজলক্ষ্মণের ‘শিবরামের যুদ্ধ’, মাইকেল মধূসূদনের ‘মেঘনাদবধকাব্য’ ইত্যাদি গ্রন্থগুলি রামায়ণের অংশ নিয়েই রচিত হয়েছে এবং ভারতীয় সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
কোথাও অস্ত্র সহযোগে মিছিলের বিবরণ নেই। এই মিছিল কি রামকে সন্তুষ্ট করার সাধনা? কোনো মুনিঋষিই এই তান্ডব সাধনা করেছেন বলে শাস্ত্রে নেই। ক্ষত্রিয়ের ধর্ম অস্ত্রচালনা, যেটা আজকের দিনে পুলিস বা সেনার কাজ, নাগরিকের নয়। যদি নাগরিকের হয় তাহলে রাজ্যের (পড়ুন দেশের প্রধানমন্ত্রী/মুখ্যমন্ত্রী) চুরান্ত অপদার্থ ও অযোগ্য। তাদের মুখোশ খুলে দিয়ে ওদের বদলে দিতে আবার শাস্ত্রে ফেরা যাক।
এতদ সকল কিছুকে ছাপিয়ে তুলসীদাসি রামায়ণ সবচেয়ে জনপ্রিয়। এক বাঁদরের/কপির মুখে একটা দোঁহা শুনে শ্রীরামের প্রতি তীব্র অনুরাগ জন্মায়। যুবক তুলসীদাস গোস্বামী বারানসির কুটিরে প্রভু রামের নিমিত্ত একান্ত সাধনা করে চলেছেন, তার ইচ্ছা প্রভু রামের সাক্ষাৎ লাভের। কিন্তু কোনো প্রচেষ্টাই ফলপ্রসু হচ্ছেনা, ঠিক এই সময় একদিন কাশীর উপবনে প্রাত্যঃকৃত করে অবশিষ্ট জলটুকু প্রতিদিনের ন্যায় একটি একটি নির্দিষ্ট গাছের গোঁড়ায় ঢালার সময় সেই গাছ থেকে নেমে আসে একটি প্রেতযোনি। সাধক তুলসীদাসের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে শ্রীরামের সাক্ষাতের উপায় বাতলে দেন সেই প্রেতযোনি।
দশাশ্বমেধ ঘাটের নিকট কর্ণঘন্টায় প্রতিদিন যে রামায়ণ পাঠ হয় সেখানে এক বৃদ্ধ সাধুর বেশে স্বয়ং অঞ্জনীপুত্র মহাবীর হনুমান আসেন। সেই মত সাধক তুলসীদাস মহাবীরের সাক্ষাৎ পেলেন, এবং হনুমান তুলসীদাসকে চিত্রকূটে যাবার পরামর্শ দিলেন। সেই মত চিত্রকূটে গিয়ে আরো দীর্ঘ তপস্যার পর মন্দাকিনীর তীরে, রাম-লক্ষণ জুটির সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে তুলসীদাসের দাবী অনুযায়ী আরো দুইবার দেবসাক্ষাৎ এর সৌভাগ্য তার হয়েছিল। কখনই তাঁকে গদা আস্ফালন বা গলার শিরা ফুলিয়ে শিশুদের হাতে তরোয়াল দিয়ে জয় শ্রীরাম ধ্বনিতে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে দিতে হয়নি। অবশ্য তাঁকে MLA বা MP হতেও হয়নি কখনো, বাসনা ছিল বলেও জানা যায়না।
এদিকে আমাদের সাধক শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জীবনী থেকে জানা যায়, তিনিও বুঝেছিলেন তাদের কূলদেবতা রঘুবীরের দর্শন পেতে শুধু ‘মা’কে ধরলেই চলবেনা, তাই তিনি মহাবীর হনুমানের স্মরণাপন্ন হয়েছিলেন। সে সময় হনুমানের আশির্বাদ লাভের জন্য, তার ধ্যনে বিভোর হয়ে মানবসত্তা পরিপূর্ণ রূপে লোপ পেয়ে গেছিল। সেই সময় তিনি বৃক্ষেই বসবাস করিতেন, ফলমূল খেতেন ও সেখানেই শুতেন। রঘুবীর-রঘুবীর বলে নিরন্তর গম্ভীর ভাবে শ্রীরামের অন্বেষণ করতেন। ঠাকুরের নিজের জবানিতে- “আমার মেরুদণ্ডের শেষভাগ প্রায় ইঞ্চিখানেক বৃদ্ধিও পাইয়াছিল, পরে যা কালের নিয়মে যবে মনের উপরে মহাবীরের ভাবের প্রভাব চলিয়া গেছিল, তবে পুনরায় উহা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়া আসে”। সুতরাং ইনিও অস্ত্র মিছিল করেননি।
শ্রী চৈতন্য ও স্বামী বিবেকানন্দও রামভক্ত মহাবীর হনুমানের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধালু ছিলেন। স্বামীজির কথায়- “মহাবীরের চরিত্রকে তোমরা আদর্শ করে নাও। তার জীবন মৃত্যু সংক্রান্ত ভয়কে তিনি জয় করেছিলেন, নিজের বিচার বুদ্ধির উপরে ওনার সম্যক ধারণা ছিল ও সেটাকে কিভাবে সত্যের পথে চালনা করতে হয় সেটা তিনি জানতেন। গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি ও কঠোর ব্রহ্মচর্য তাঁর সাফল্যের কারন। তাই তোমরা তোমাদের জীবনকে তাঁর আদর্শে গড়ে তোলো, যাতে অন্যান্য আদর্শ ও ভালগুলো নিজ নিজ জীবনে নিশ্চিত হয়”। আমরা এগুলোর একটাও না মেনে শুধু গাড়লের মত কিছু নেতাদের অন্ধ ভক্ত হয়ে বসে আছি।
অলৌকিকতা, অপ্রার্থিবতা, জনসাধারনের কাছে রহস্যাবৃত আর কুহেলিকাময় কারনবসত অকারন যুদ্ধের কারনে, ‘রামায়ণ ও মহাভারত’ অতি উচ্চমানের রচনা- ধর্মীয়ভাবে পূজিত ও সমাদৃত হয়ে রইলেও, ঐতিহাসিক দলিল হিসাবে মোটেই স্থান করে নিতে পারেনি। ধর্মীয় জাতিগত আবেগ ও বিশ্বাস দিয়ে ইতিহাসকে ব্যাখ্যা করা যায়না। রামায়ণ বা মহাভারতের ইতিহাসের প্রতি দায় না থাকার কারনে সহজেই একে পরিবর্তন করে দেওয়া যায়, সনাতন ধর্মের উদারতার নামে। যুক্তিযুক্ত নিরপেক্ষ বিচার বিশ্লেষণ পৃথিবীর কোনো ধর্মই চাইনা। ধর্ম মানেই প্রশ্নহীন আনুগাত্য। ভোটের কারবারিরা এই ব্যাথার স্থানটাকেই ধরে ‘রামরাজ্য’ প্রতিষ্ঠার জন্য উদগ্রীব। এখানে শম্বুক বা বালির দোষ জানতে চাওয়া মানেই ধর্মের শত্রু। তাই এ লেখার ক্ষেত্রেও সংঘাতের সম্মুখীন হলে তা মোটেই আশ্চর্যের কিছু নয়।
ব্রাহ্মন্যবাদীদের অত্যাচারে অতিষ্ট ভারতীয় নিম্নবর্ণের হিন্দুরা যখন মুক্তির পথ খুঁজছে ঠিক তখনই উত্তর ভারতে এই তুলসীদাসি রামায়ণের আবির্ভাব। সময়টা ১৫০০ শতকের শুরুর দিকে, যখন এই বঙ্গ দেশেও ব্রাহ্মণ্যবাদীদের মৌরিশপাট্টায় কুঠার হেনেছেন শ্রী বিশ্বম্ভর মিশ্র তথা শ্রীচৈতন্য (ফেসবুকের ভাষায় ফেক একাউন্ট) নামের যুগপুরুষ সমাজ সংস্কারক। তখন প্রতিনিয়ত মিথ ভেঙে তৈরি হচ্ছে নতুন সামাজিক ইতিহাস।
তুলসীদাস সেইসময়ের কথ্য ব্রজবুলি, পালি বা প্রাকিত ভাষাতে তাঁর রামকে বর্ণনা করতে যাননি, বরং সহজিয়া লৌকিক সংস্কৃতের ছন্দে তিনি রামকে শূদ্রের ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিলেন। তুলসীদাসের রাম মোটেই বাল্মিকীর রামের মত অতিপ্রাকৃত নয়। উচ্চবর্ণের হিন্দুর ঘরে যখন শিব, নারায়ণ, বিষ্ণু, কালী, চন্ডীতে একচেটিয়া আধিপত্য; হরেক ছুঁইছাতের মাঝে তুলসীদাসের রাম হয়ে উঠে সধারনের ঘরের ছেলে। দ্রুত নিম্ন বর্ণের হিন্দু সমাজের কাছে উচ্চবর্ণের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়ার প্রতীক হয়ে উঠে রাম। গননার শুরু থেকে বা পরস্পরের দেখা হলে, কিম্বা মৃতকে সৎকারে নিয়ে যাবার সময় , প্রায় প্রতিটি ‘ছোটলোকেদের’ নামের মাঝে রাম শব্দটি ভীষণ ভাবে জুড়ে যায়। আজও চামার বা দলিতদের মাঝে রাম নামের প্রচলন ব্যাপক অর্থে। এখানেই তুলসীদাসের কৃতিত্ব, এখান থেকেই রামের একচেটিয়া জনপ্রিয়তা গোটা উত্তরভারত জুড়ে। বাংলায় এই প্রভাব না পরার কথা আগেই বলেছি, কারন তখন বৈষ্ণব মতবাদীয় ধারা ঐ রামের কাজটাই এই অঞ্চলে করেছিল শ্রীচৈতন্যের দ্বারা।
গোস্বামী তুলসীদাস ৪ নারীকে দেবী লক্ষ্মীর অবতারস্বরূপা জ্ঞান করেছেন। এবং জানিয়েছেন, এই চার প্রকার নারীকে অবমাননা করলে পুরুষের সর্বনাশ অবশ্যম্ভাবী।
• পুত্রবধূ— পুত্রবধূ সংসারের শ্রীকে ধরে রাখেন। বংশকে গতি প্রদান করেন। সেই কারণে তিনি শ্রদ্ধেয়া। তাঁর প্রতি কোনও রকম অসম্মান প্রদর্শন সংসারকে ছারখার করে দিতে পারে।
• ভ্রাতৃজায়া— বড় ভাইয়ের স্ত্রীর প্রতি অসম্মান প্রদর্শন বস্তুত নিজের মা-কে অপমানেরই সামিল। আর কনিষ্ঠ ভ্রাতার স্ত্রী পূত্রবধূরই তুল্য। সে কারণে এঁদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন মহাপাপ।
• ভগিনী— ভগিনীকেও তুলসীদাস মাতৃসমা বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁকে অসম্মান করা মানে নিজের কুলকে অসম্মান করা।
• কন্যা— তুলসীদাস কর্তৃক প্রদত্ত তালিকার সব শেষে রয়েছে কন্যা। পিতা ও কন্যার সম্পর্ককে পবিত্রতম বলে মনে করছেন কবি তুলসীদাস। তাকে অবমাননা করার অর্থ নিজেকেই অবমাননা করা, এমনই মত গোস্বামীজির।

আমরা অস্ত্র মিছিল করি, কিন্তু ঘরে ঘরে এই সম্মান নারীদের দিই তো যারা রামকে মানেন ভগবান হিসাবে?
‘রামচরিতমানস’-এর মূল কাহিনি কাঠামোতেও বার বার উঠে এসেছে এই প্রসঙ্গ। শ্রীরামচন্দ্রের জীবনকে সামনে রেখে গোস্বামী জানিয়েছেন নৈতিক বিধানগুলিকে। নারী তাঁর কাছে অতি পবিত্র। তাঁর রামকথা-তেও তাই সেই দৃষ্টিভঙ্গি অব্যাহত।
চন্দ্রাবতী রামায়ণ বা সুকুমারী রামায়নে কোথাও রামজন্মের তিথি পালনে হিংসা বা শৌর্যের প্রকাশের উল্লেখ নেই। ডাঃ আম্বেদকরের ‘হিন্দুধর্মের হেঁয়ালি” গ্রন্থের একটা বঙ্গানুবাদ রয়েছে পয়ার ছন্দে, শ্রী সুধীর রঞ্জন হালদার মহাশয় অত্যন্ত নিপুণ ভাবে ‘রামচরিত কথা’ বর্ণনা করেছেন তীব্র শ্লেষের সাথে। শ্রী হালদার আরেক ব্রাহ্মণ শোষিত হিন্দু সমাজ মতুয়া সম্প্রদায়ের।
শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব নিজেও রামের দেখা পাননি, তবে সীতা মায়ের মাতৃরূপের দর্শন পেয়েছিলেন। সুতরাং প্রভু রামের সান্নিধ্য পেতে এই সকল মহাপুরুষেরা কঠিন ব্রহ্মচর্য থেকে আরো কঠিন সাধনার মাধ্যমে সেই লক্ষ্য পূর্ণ হয়েছিল। ডিজে বাজিয়ে বাইকে চড়ে গদা নাচিয়ে নয়।
প্রশ্নটা এখানেই, শাস্ত্রে এই অস্ত্র প্রদর্শনের কথা কোথায় উল্লেখ রয়েছে? যদি না থাকে তাহলে পুনরায় রামায়ণ লিখিত হয়েছে আজকের সমাজের প্রয়োজন অনুসারে। সেই রামায়ণের লেখক কে? মাথায় ফেট্টী বেঁধে হাতে খোলা তরিবারি আসলে মহরমের সময় শিয়া মুসলমানদের করা নিকৃষ্ট আচারের অনুপন্থী, এটাই চুম্বকে আজকের এই রামনবমীর বিকৃত উল্লাস চিত্রের ধাত্রী।
এই রাম একান্তই RSS এর কল্পনাপ্রসূত। এই ‘বিভেদকামী রাম সংস্কৃতি’ বিজেপি নামের দলটি বাস্তবায়ন করেছে অর্ধেক দেশে। খোদ অয্যোধ্যা, ইলাহাবাদ সহ গোটা উত্তর ভারতে এমন উন্মত্ত রামনবনীর দেখা মেলেনা, যেটা আজকাল বাংলার রাস্তায় দেখা যাচ্ছে। অনেক স্থানে রামনবমী উপলক্ষে আবীর খেলা হয়। আসলে এটা তো ভগবানের জন্মদিন উৎসব পালন। শিয়া’রা হাসান হোসেনের মৃত্যু শোক যে উপায়ে পালনের সংস্কৃতি দেশে আমদানি করেছে, রামের জন্ম উপলক্ষে সেই একই সংস্কৃত হল আজকের রামনবমী। বাংলার আকাশ কলুষিত করেছে এই দুই দূষিত সংস্কৃতি।
খুব সুস্থ ভাবে ভাবুন, আমার আপনার বাড়িতে কেউ জন্মালে বা কারো মৃত্যু হলে আমরা লোকদেখানো তলোয়ার, গদা, আগ্নেয়ান্ত্র নিয়ে সদলবলে মিছিল করি? অন্য ধর্মের মানুষদের হুঁশিয়ারি দিই? দিইনা, তাহলে ঈশ্বরের নামে এই অনাচার কিসের স্বার্থে?
রাজ্যের শাসক দল তৃনমূল কংগ্রেস, আজ নিজেদের হিন্দু প্রমান করতে মরিয়া, তারাও সম উদ্যোমে RSS সংস্কৃতির অনুশীলন করছে বিজেপিরিই দেখানো পথে। কার মিছিল কতটা লম্বা, কে কত জোরে জয়-শ্রী-রাম নাদে হৃদকম্প তুলতে পারে তারই ঘৃণ্য কসরৎ চলছে রাজ্যজুড়ে। এদের স্যাঙাৎ হচ্ছে টেলিভিসন মিডিয়া। কোনটা ধর্ম আর কোনটা ধর্মের নামে ভাঁওতা বাজি সেটার ফারাক করার মত শক্তি একটা ফ্যাসিবাদি দলের কাছে থাকেনা। তার উপরে ভুকা মানুষগুলোর সামনে উৎসব আর রাষ্ট্রীয় শাস্তির চাবুক যারা ঝুলিয়ে রেখে শাসন করে, ধর্মের নামে এমন নেশাদ্রব্য কেউ কিভাবে ছেড়ে দেয়!
যারা নাকি বুদ্ধিজীবি, তারাও আজ প্রতিবাদ ভুলে রাষ্ট্রের গুডবুকে আছে, ঝঞ্ঝাটমুক্ত আগামীকালটা ভাল থাকার দায়ে। বড় অল্পে এনারা আজকাল বিকিয়ে যান, এটাই আজ বাংলার সংস্কৃতি।
নিকৃষ্ট দেউলিয়া রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ধর্মের মুখোস পরে। জাতি হিসাবে বাঙালী তরতর করে অবনমনের রাস্তায় ধাবমান। এবাংলা থেকে ওপাড় বাংলা, ফলাফল একই। এখানে RSS, ওখানে জামাত। নিচুতলার দুষ্কৃতীরা আজকের রাজনীতিকে তোলার/চাঁদার বিনিময়ে নিয়ন্ত্রণ করছে, যার ফলে অশিক্ষিত লুম্পেনরা ধর্মের জিগিরে পেশি আস্ফালন করে চলেছে। বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি আজ সঙ্কটে।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে কৌশলে হাসিল করার জন্য এক শ্রেনীর লোভী নিকৃষ্ট ‘হিন্দু’ নাম নিয়ে এই ঘৃণ্য চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। হিন্দু ভোটব্যাঙ্ককে প্রথমে ভীত করে দাও, যে ২০% মুসলমান তোমাদের ৮০%কে ভয়ানক বিপদের মাঝে রেখে দিয়েছে। অতএব অস্ত্র তুলে নাও। শুধু বললে কি আর কেউ অস্ত্র নেয়! অতএব শাস্ত্রের ষোড়শপাক রেঁধে তাঁর উচ্ছিষ্ট গুলো দিয়ে নিজেদের স্বার্থমত ধর্মগ্রন্থকে খোলনাচলে বদলে যেটাকে শাস্ত্র বলে চালানোর প্রচেষ্টা হচ্ছে, তা ভয়াবহ। এটাই আজকের রামনবমী, হিন্দু ভোট BJP এর পক্ষে যাক, মুসলমানগুলো TMC এর দিকে ঝুঁকুক। বামেদের থেকে রক্ষা করার জন্য দেশদ্রোহী শব্দটাই যথেষ্ট।
আজ দেশীয় মুসলমানেরা ভাবুক, বিজেপি বিরোধী শক্তি হিসাবে তৃনমূল অদৌ বিশ্বাসযোগ্য? তৃণমূলকে ভোট দেওয়া মানেই পরোক্ষে RSS এর দুর্গার হাত শক্ত করা। দেশের জন্য বিপদের নাম RSS, এরাই আফগানিস্থানে তালিবান, সিরিয়াতে ISIS, অতীতে নাৎসি। দেশপ্রেমের নামে দেশে এক মারন বিচ্ছিন্নতাবাদের খেলা শুরু হয়েছে। রামনবমীর এই অস্ত্র মিছিল সেই খেলারই মুখরা বা অন্তরা।
আমরা তো আবার বামপন্থী, ধর্ম শব্দেই এলার্জি। আমরাও সেই ভক্তদের মত কপিপেষ্টের ভরষাতে থাকি, নিজেদের পড়াশোনার যে কৃষ্টি, সেটা জলাঞ্জলি দিয়ে ওদের লেভেলে নেমে আসি। ওদের ভাষাতে কথা বলে নিজেরা ভাবি জিতে যায়, মোটেই সেটা হয়না। বরং নিরপেক্ষ মানুষেরা খুঁজে পায়না বামপন্থীদের ব্যাবিহারিক ও আদর্শগত সৌন্দর্য। ভক্ত আর কড়া বামেদের মাঝে মৌলিক কিছু ফারাক খুঁজে পাওয়া যায়না দৃশ্যত। ওরা রামের নামে খিস্তি মারে, আমরা বামের নামে, সোশ্যাল মিডিয়া বাম-অবাম কৃষ্টির ফারাকটা অনেকটা ঘুচিয়েছে। আসলে কি জানেন, আমাদের নুন্যতম এই জ্ঞানের অভাবের জন্যই মানুষকে বোঝাতে পারিনা, যে এটা ধর্ম নয় যেটা বিজেপি-RSS-তৃনমূল রামধনু জোট বাংলার বুকে সর্বনাশের খেলাতে নেমেছে। এমনতো নয় যে ধার্মিক মানুষের ভোট বামেদের প্রয়োজন নেই। সুতরাং জেনে রাখলে লাভটা বামেদের, আর বামেরা জিতে গেলে সমাজ জিতে যাবে। ভবিষ্যৎ ভয়ঙ্কর যদি না এদের রোখা যায়।
নিখুঁত প্রেক্ষাপট। কুশীলবেরাও দুর্দান্ত অভিনয় করে চলেছে। আমরা ঠূটো জগন্নাথ হয়ে রয়েছি। সামনেই ভোট, আপনি ঠিক করবেন আপনি কার পক্ষে? রামের পক্ষে না রামকে যারা কলুষিত করেছে তাদের পক্ষে?
না শাসক মানছে রামের আদর্শ, না পারিষদেরা মানছে মহাবীরের জীবনী ধারা। গোটা সমাজটাই আজ বোবা হয়ে রয়েছে। কোনো কিছুতেই আর এর বিবেক জাগ্রত হয়না, উৎসবাক্রান্ত শবের দল। ঐহিত্যপূর্ণ সনাতন ধর্ম আজ সত্যিই সঙ্কটে। গোঁড়া মুসলমানদের জন্য আজ গোটা জাতিকে পরিকল্পিতভাবে বদনাম করা হয়। সেই দিন খুব দূরে নয়, যখন হিন্দু জাতিকেও পৃথিবীর হিংস্র জাতি হিসবে তকমা লাগিয়ে দেবে। নাস্তিকেরা চিৎকার করে প্রতিবাদ করুন, ধার্মিকেরা ধর্মকে রক্ষা করুন এই ধর্মব্যাবসায়ীদের হাত থেকে, যারা গোমাতার পুজো করে ভোট ভিক্ষা করে আর দেশকে ১ নম্বারে নিয়ে যায় ওই গোমাংশ রপ্তানি করে।
ধিক এই মৃত সমাজকে।
তথ্যসুত্রঃ বাংলাপিডিয়া
উইকিপিডিয়া
ডেইলি হান্ট নিউজ
এবেলা
চরৈবেতি ব্লগ

Saturday, 13 April 2019

।। বাংলা সংবাদ মাধ্যমগুলোর দাবিটা কি? ।।


লাগাতার রামনবমীর অস্ত্র মিছিলের ছবি দেখিয়ে কি প্রমাণ করতে চাইছে? যারা খবর রাখতনা তারাও ভাবছে বোধহয় গোটা রাজ্যের প্রতিটি রাস্তা জুড়ে শুধুই স্বশস্ত্র চাড্ডি বাহীনি। সারা রাজ্যে গুনে গুনে এক আধটা স্থানে গেরুয়া সন্ত্রাসীদের নৌটঙ্কি চলছে, হিন্দুত্বের নামে। এটাই প্রচারের মুখ্য বিষয় এদের।
RSS আর বিজেপি ছাড়া যেন কেউ হিন্দু নয়। উত্তর ভারতীয় রামই ভরষা। আমাদের শিবের গাজন, নীলের পুজো...
কিন্তু এতে যে টাকা কামানো হবেনা সংবাদ চ্যানেল গুলোর। তৈরি করে দেওয়া স্ক্রিপ্টেড সংবাদ পরিবেশন হচ্ছে।

রাজ্য সরকার তথা তৃণমূল দলটি RSS পোষিত, ও ঘোষিত। তাই তারা কোথাও বাঁধা দেবেনা। বরং সংবাদ মাধ্যম গুলো চেষ্টা করছে, যেখানে যেখানে এখনও মিছিল শুরু হয়নি সেটা শুরু করার জন্য লাগাতার উৎসাহিত করে চলেছেন। তৃণমূল চাইছে একটা ভয়ের পরিস্থিতি তৈরি হোক মুসলমানেদের মধ্যে। যে ভোটটা ওরা নিজেদের পক্ষে নেবে। সুপরিকল্পিত প্লট রচনা।
আসলে মোদীর ডায়লোগের কিছুই খাচ্ছেনা, দাঙ্গা করা এই মুহুর্তে ভীষণ কঠিন। তাই হিন্দুত্বের জিগির তুলে যতটা পোলারাইজেশন করা সম্ভব। মানেকা গান্ধী থেকে উন্নাওয়ের ষাঁড়ের অভিশাপের লিপ্সা - সবই ওই অক্ষমের বিলাপের অংশ। যেমন মিমি, প্রচারে আসার জন্য "আল বাল ছাল" কোনো কিছু করতে কসুর করছেনা।
হিজরেদেরও পুরুষালী দাড়ি গোঁফ গজায়, চাড্ডিরাও অস্ত্র মিছিল করে। সব গরুর বাচ্চা গুলোকে আপাতত কাশ্মীরে অথবা বীরভুমে ভোটের ডিউটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হোক। তাই এই সব নিয়ে ভীত হবার কিছু নেই।
ছেই করলেই নেই হয়ে যাবে।
বাংলার মাটি বামেদের চারণভূমি। এ ভুমিতে নপুংসক চাড্ডিবাহীনির জং ধরা অস্ত্রে পাড়ার নেড়ি গুলো পর্যন্ত ভয় পায়না। টিভি সংবাদ মাধ্যম এদের বাঘ প্রমান করতে মরিয়া। ওদের হারিয়ে দিন পালটা প্রচারে। আপনার এলাকাতে একটাও ধর্মীয় উন্মাদদের দেখেছেন কি? যারা মিছিলে যাচ্ছে তারা অদৌ সুস্থ? এরা ধার্মিক?
উত্তরপাড়ার তৃণমূল কাউন্সিলর, শুভেন্দু অধিকারীর আমসত্ব মার্কা মুখ যুক্ত ভাই দিব্যেন্দু, বলিপ্রদত্ত পাঁঠার মত মালা পরে বসে আছে। কোলকাতায় স্মিতা বক্সী, প্রমুখেরা রামনবমীর পালটা মিছিল শুরু করেছে। দেশীয় হিন্দুরা গাজন বোঝেন, অন্নপূর্ণা পূজা বোঝেন, হালখাতা বোঝেন, এরা খেউর আর তর্জা দিয়ে রাজনৈতিক ভাবে বাঙালীর সংস্কৃতির উপরে গুটগা খোরেদের খোট্টা সংস্কৃতি আমদানি করেছে।
দুই ফুল, ওরা মরিয়া লড়াই চালাচ্ছে, চাকরি নেই তাই ধর্মের বেদনানাশক দিচ্ছে যাতে আমরা ভুলে থাকি। সংবাদ মাধ্যমই ওদের মুখপাত্র। তারা প্রচার করছে, আমাদের মূল সমস্যা খাদ্য, বস্ত্র, রোজগারের সুরক্ষা, স্বাস্থ্য পরিসেবা, শিক্ষার অধিকার নয়। রাম কার বিজেপির না তৃণমূলের! এর প্রশ্নের জবাব পেলেই যেন আমাদের পেট ভরে যাবে।
এদের ফিক্সিং ঝগড়া দেখে শুধু হাসুন, কারন ওটাও দরকার। ওদের মিথ্যা ঝগড়াঝাঁটি দেখিয়ে আপনার মৌলিক দাবিদাওয়ার আওয়াজকে চাপা দেওয়ার প্রচেষ্টা। তবে, এবারে মানুষ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, শুধু আমরা "বামেরা" আছি সেই ভরষাটুকু দিন, ইতিহাস নতুন করে লেখা হবে। লড়াই চাই বলে নেট অফ করে দিলে হবেনা কমরেড, লড়াই দিয়ে সেটার ছবি নেট অন করে দিন, যাতে অন্য কমরেড উৎসাহিত হয়।
কল্পিত রাম নয়, পরিক্ষিত বামে ভরষা রাখুন। সংসদে রাম নিশ্চুপ, বামেরা আপনার কথা বলবে। রাম (পড়ুন মহরমের উন্মাদ মুসলমান) অসহায় তাকে অস্ত্র হাতে নিতে হয়, বামেদের সহস্র নির্ভীক কণ্ঠই ওদের অস্ত্রের চেয়েও ধারালো।

Monday, 8 April 2019

।। দলতন্ত্রের চাটুকার মূলধারা মিডিয়া, ক্ষমতার স্তাবক ।।



২০১৯ লোকসভার মোট ভোটার ৯০ কোটি, দেশে ২৯টা রাজ্য, ৫৪৩টা নির্বাচন কেন্দ্র, কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী হয়ে অরুনাচল থেকে ভুজ। প্রায় কয়েকশো রাজনৈতিক দল, কয়েক হাজার প্রার্থী। আলাদা রাজ্য ভেদে আলাদা ঈশ্যু, আলাদা চাহিদা।
আমি গতকালই লিখেছিলাম সমীক্ষকেরা আপনাকে সংখ্যা জানাবেনা। জানিনা কেন আজই একটা মিডিয়া হাউজ হঠাৎ স্যাম্পেল সংখ্যা জানান দিল সমীক্ষকদের হয়ে, দেশের অন্যতম বড় সংবাদ সংস্থা আনন্দবাজার ঘোষণা করেছে স্যাম্পেল সংখ্যা। তাতে তারা কত মানুষের কাছে পৌছেচে? মাত্র ৪৫০০০, হ্যাঁ পঁয়তাল্লিশ হাজার মাত্র। এটাকে যদি সত্য হিসাবে ধরে নিই তবেই নিন্মোক্ত বাকি আলোচনা, ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি এই ঘোষিত স্যাম্পেল সংখ্যাটাও একটা বড় ছলনা।
একটা লোকসভা এলাকাতে গড়ে ৬টা বিধানসভা এলাকা, একেকটা বিধানসভাতে ৮ থেকে ১৫টা পঞ্চায়েত, গড়ে ১২টা। মিউনিসিপ্যাল এলাকা ওই অনুপাতেই ওয়ার্ড ভিত্তিক জনসংখ্যার হিসাব। সুতরাং লোকসভা পিছু গড়ে ৬x১২= ৭২টা পঞ্চায়েত/ওয়ার্ড কমপক্ষে। এই তালেবর সমীক্ষকেরা পৌছালো কত জনের কাছে? লোকসভা কেন্দ্র পিছু এবারে সাড়ে ষোল (১৬.৫০) লাখ ভোটার ধরে ০.০০৫% হারে মাত্র ৮৩ জনের কাছে। পঞ্চায়েত বা ওয়ার্ড পিছু ১ জনের কাছে।

শতাংশের হিসাবে ০.০০৫ %, প্রতি ২০ হাজার জনে ১ জন। বহু কেন্দ্রে এর চেয়ে কম মার্জিনে এইবারের ভোটে হারজিতের নির্নয় হবে। সুবিশাল ভারতবর্ষের এত ভাষাভাষী, বয়সভেদ, জাতিভেদ, বর্ণভেদ, ধর্ম ভেদ, অঞ্চলভেদ, প্রার্থী পরিচয়...... আরো কতো শত বৈচিত্র।
বিকৃত ও বিক্রিত মাধ্যম আজকাল নির্লজ্জের মত ক্ষমতাবানেদের হয়ে তোষামোদিতে মত্ত। কে কাকে নির্লজ্জতাতে টেক্কা দেবে সেই ঘৃন্য প্রতিযোগিতা চলছে দেশ জুড়ে। ‘সাংবাদিক’ পেশাটা কিছুদিনের মধ্যেই পতিতা শব্দের কাঁচা খিস্তি হিসাবে মানুষ ব্যবহার করবে। পয়সার জন্যই পতিতারা শরীর বেচছে, সাংবাদিকেরা লাজলজ্জা, পেশাদারিত্ব সহ সর্বস্ব।
ভাই, আমরা সাধারণ পাবলিক অঙ্ক বা সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্র না হলেও ভক্তদের মত গোসন্তান অন্তত নই। সাদা আর কালোর হিসাবটা বুঝি। ঠান্ডাঘরে বসে ট্যাব আর ল্যাপটপে অনলাইন থেকে ভোটার লিষ্ট নামিয়ে যার খুশি র্যা ন্ডম নাম লিখে দিয়ে জনসমীক্ষার নামে ধাপ্পাবাজির নামও সাংবাদিকতা। এটাই ডিজিটাল ভারতবর্ষ, আসলে রিঙটাল। উন্নত বিশ্বে সাথে আমাদের এখানেই ফারাক। তৃতীয় বিশ্বের সাংবাদিক কতজন খাগেসি হয়, অর্ণবদের সংখ্যাই বেশি।
গলদটা হল, সাংবাদিকদের ও কাগজ/চ্যানেল মালিকদের কোনো দায় নিতে হয়না। গণনা লাগলে তুক, না লাগলে তাক। প্লাস মাইনাস ৫% বিসদৃশ্য হলে যদি সাংবাদিক রেজিষ্ট্রেশন বাতিল করে দেওয়ার আইন আনইয়ন করা যায়, তাহলে সব দালাল কটার পিছন হলুদ হয়ে যাবে। এই ধরনের জনমানসে প্রভাবিত করা সমীক্ষা দিয়ে মেরুকরনের প্রচেষ্টা কেন বরদাস্ত করা হবে গণতন্ত্রে?

আজকের ভারতেও নিরক্ষরতার হার ২৬% এর উপরে, শিক্ষিতদের ৬৯% ভারতবাসিই মাধ্যমিকের যোগ্যোতামান পেরোয়নি। গণতন্ত্রে উচ্চশিক্ষিত ও নিরক্ষর উভয়ের ভোটের মূল্যমান সমান। এছাড়া হার ও জিতের মাঝে অধিকাংশ ভোট শতাংশের পার্থক্য থাকে মাত্র কয়েক শতাংশের। প্রান্তিক ভোটারকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ভবিষ্যৎবাণীর মত সমীক্ষা শুনিয়ে কেন বিভ্রান্ত করা হবে? এটা কি একটা সংঘঠিত দুষ্কর্ম, বৃহত্তর ভ্রষ্টাচার নয়? IPC chapter 09A, অনুযায়ী 171(C, F & G) ধারাতে পরিষ্কার ভাবে এক্তিয়ারের উল্লেখ রয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি ধারা মোতাবেক এটা সমবেত অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র। কেন এগুলো বন্ধ হবেনা? 
এক্সিট পোলের মত, প্রি ইলেকশন পোলও বাতিল করার দাবি উঠুক। মিডিয়া নামে এক শ্রেনীর দালালের করে খাওয়ার পথ হয়েছে এই সিস্টেম। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা আওয়াজ তুলুন, নতুবা শাসক নিজের মত করে এই ঘৃন্য ‘Paid news’প্রচার করতেই থাকবে।

গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ আজকাল গাঁজা খেয়ে শূণ্যে ভাসছে। আর গণতন্ত্র তেপায়া অটোরিকশার মত কাটা তেলে ট্রাফিক না মেনে পাঁই পাঁই করে ছুটছে।
বলছিলাম এরা কি গাঁজা চিবিয়ে খায়? না সেলাইনে নেয়!!

।। মিডিয়া প্রোপাগান্ডা ।।

মিডিয়ার জন্য ৪০০০ কোটি, আর সার্ভেয়ার কোম্পানির মালিকদের জন্য দূর সম্পর্কের শালার মুম্বইতে ফ্ল্যাট, শ্বশুরের ভাই এর নামে মার্সিডিজ, হাওয়ালার মাধ্যমে নগদ-
এমন লপসি আয়োজন থাকলে শুধু C-Voter কেন, আমি বা আপনিও কি এমন সমীক্ষা করে দিতে পারতামনা?
প্রতিটি চ্যানেলের মালিক আছে, যারা খবর সরবরাহের ব্যাবসা করে। অর্ণব, সুমন, রবীশ এনারা বেতনভুক কর্মচারী মাত্র। পেশাগত দায়ের চেয়ে চাকুরি বাঁচাবার দায় ও নিজেদের মোটা বেতনের লোভ চরিতার্থ করার দায় আছে। এদেরকে তাই মালিকের নির্দেশ মত কাজ করে যেতে হয় মাত্র। আগেকার দিনে মাদারির খেলা হত ডুগডুগি বাজিয়ে, নাচত মর্কটের দল। এখন টিভি এঙ্করেরা নাচে।
আসলে আজকের এই মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডার জন্যই আগামী দিনে এই সমীক্ষার আর কোনো দাম থাকবেনা। যেমন সিনেমা হল আজ প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে, টিভি হারাচভহে মোবাইলের কাছে।
এগুলো সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে দেবার প্রচেষ্টা। যাতে মানুষ ভাবে -কেন বাবা অন্যকে ভোট দেব যখন এরাই আবার ফিরবে। গোয়েবলস তত্বে বারবার মিথ্যার প্রচার চললে মুহুর্তের জন্যও সেটাকে সত্য বলে ভ্রম হয়। এর জন্যই বিজ্ঞাপনের দরকার হয়।
এরা কখনও কোথায় বলছেনা স্যাম্পেলের সাইজ কত ছিল। সমীক্ষকেরা যে ডেটা দিয়েছিল, সেটা দেখানোর সময় কতটা অক্ষত রাখা আছে? ঠান্ডা ঘরে বসে এ এক নয়া টিয়াবাজির খেলা।
ভোট দেবার সময় খেয়াল রাখুন গত পাঁচ বছরে কি পেয়েছেন, কি পাবার কথা ছিল, কি পেতে চান? কে আপনার ও দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখবে! আপনার সন্তানের জন্য কেমন দেশ রেখে যাবেন? কালকে রোজগার থাকবে তো?
পাকিস্তান সেই ৪৭ সাল থেকেই আছে, এই বিজেপি সরকারের আমলে যতটা ওরা ক্ষমতাবান ততটা আগে কখনও হয়নি। তার পাকিস্তানকে পুনঃ মুষিক ভবঃ করতে হলে আগে এই সরকারকে তাড়াতে হবে। জঙ্গি দমনেও তাই, যত রমরমা শেষ পাঁচ বছরে।
আজকে হিন্দুরা কত বড় বিপদের মধ্যে আছে, যেটা এই ধর্মের ৪০০০ বছরেও এতোটা বিপন্ন বোধ করেনি। তাই হিন্দু ধর্মকে রক্ষা করতে এই টিম মোদীকে রাজনৈতিক ভাবে বিসর্জন দেওয়াটা জরুরী।
এই বাজারে ধর্মীয় উন্মাদেরা সুবিধা করতে পারেনি, দাঙ্গা আসেনি। যুদ্ধ বাজারে খায়নি, আচ্ছেদিনের ফানুস মাটিতে লুটাচ্ছে। পাইনচোৎ বর্তমানে কাঁচা খিস্তি। অন্তরীক্ষের সাফল্য ওখানেই হারিয়ে গেছে। আচ্ছে দিন আসেনি, মন্দিরও ওখানে তৈরি হয়নি, কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি, কাশ্মীরে পন্ডিতেরা ফেরেনি, জঙ্গি হামলা বন্ধ হয়নি। অতএব চৌকিদারের তত্ব এসেছে চৈত্র সেলের বাজারে। বহুরুপীর নতুন অবতার।
IPL এর ভরা বাজারে নিউজ চ্যানেলের প্রাইম টাইম গুলো সব আস্তাকুঁড়ে বাসর সাজাচ্ছে। অতএব নিয়েলশন, চানক্য, সি-ভোটার প্রমুখেরা কিছু কামিয়ে নিচ্ছে এই বাজারে, হারামের ধন থেকে -
৪০০০ কোটির প্রত্যুত্তরে কয়েককোটি বাম সমর্থকের ৪০০ টাকার রিচার্জ ৪০ হাজার কোটির পাবলিক ফান্ডিং হয়ে পালটা জবাব দিচ্ছে স্বার্থন্বেষী মৌলবাদীদের। একদম আম মানুষের অন্তঃস্থল থেকে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠছে স্বতোপ্রনোদিতভাবে। এটাই গণতন্ত্রের শেষ ভরষা।
সাধু সাবধান। চোখ কান খোলা রাখুন।

Sunday, 7 April 2019

।। পুরীষ খোশনাম ।।





সাম্য বিষয়টা কি? সারা পৃথিবীতে সর্বত্র শুধু এরই ভজনা করা হয়ে থাকে। মহাজ্ঞানীরা বলে থাকে মদের ঠেক আর বেশ্যালয় নাকি সাম্যের আঁতুড়ঘর। এই দুই স্থানে কেউ কারো জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়, বয়স ইতাদি জিজ্ঞাসা করেনা। শ্রেনীহীন, শোষনহীন, ব্যাক্তি মালিকের জবরদস্তিহীন একটা ক্ষেত্র, কিন্তু এর পরেও এর মাঝে রাষ্ট্র ও পুঁজিবাদের একটা ভয়াল ভ্রূকুটি দুই ক্ষেত্রকেই গ্রাস করে রাখে। তাহলে সত্যিকারের সাম্য কোথায়?
সাম্য একমাত্র ব্যাহ কর্মে; মানে আমরা যাকে পায়খানা-প্রস্রাব বলি। পায়খানা ও প্রস্রাব ধনী গরীব, সাদা কালো, লম্বা বেঁটে, কুৎসিত সুন্দরী, শত্রু বন্ধু, বুর্জোয়া প্রলেতারিয়েৎ, শাসক শোষিত, বুদ্ধিজীবী গন্ডমুর্খ ইত্যাদি নির্বিশেষে সকলের উদরে এই বিষ্ঠা কারখানা রয়েছে। কেউই এই বিষ্ঠা সংরক্ষণ করেনা, প্রত্যেকের গু-মুতই বিশ্রী একটা ঘিনিঘিনে ব্যাপার। নির্দিষ্ট কারো গু-মুত আলাদা করে চিহ্নিত করা যায়না। পৃথিবীতে কখনো কোথায় ব্যাহসঙ্কট নামে কোনো জরুরী অবস্থা তৈরি হয়নি, পৃথিবী বহু বিপ্লবের সাক্ষী থেকেছে কিন্তু বিষ্ঠাবিপ্লব শব্দটিও সম্ভবত আমিই প্রথব বাংলা সাহিত্যে আমদানি করলাম, যা কখনই কোনোও কালে সংঘটিত হয়নি। পাতলা পায়খানা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বহুমুত্র, স্বল্পমুত্র ইত্যাদি লক্ষনগুলো কেউ কখনো ইচ্ছাকৃত ঘটিয়েছে বলে ইতিহাসে উল্লেখ নেই, এর জন্য নির্দিষ্ট পথ্য ও চিকিৎসকও রয়েছে। পৃথিবীতে কোথাও কখনোও গোপনে বা প্রকাশ্যে পুরীষসমিতি নামের সংগঠন গড়ে উঠেনি। অথচ মলত্যাগ আমাদের দৈনন্দিন একটা অতিপ্রয়োজনীয় শরীরবৃত্তীয় কর্ম।
কেউ কখনও গেয়ে উঠেনি- “আমাকে আমার মত হাগতে দাও... আমি নিজেকে নিজের মত ছুঁচিয়ে নিয়েছি” ইত্যাদি। ‘মম ব্যাহে নিতে নৃত্যে কে যে নাচে টুপা টুপ টুপ টুপা টুপ’ বলে কেউ নাচেনি। পিকু নামে একটিই সিনেমা পায়খানার উপরে নাকি তৈরি হয়েছিল, কিন্তু আসল হিরো গুএর দেখা কখনই মেলেনি, কয়েকটি ক্ষেত্রে উচ্চারিত হয়েই রয়ে গেছে মাত্র। মলকালচার নামে যেটা বিশ্ব সমাজে গড়ে উঠেছে, তার দুর দুরান্তেও গুয়ের ছিটেফোঁটা গন্ধটুকু থাকেনা, এতবড় ধোঁকা। বিশ্বজুড়ে প্রত্যেকের মলমুত্রই এক স্থানে গিয়ে তাদের অন্তিম ক্রিয়া সম্পন্ন করে, নর্দমাতে। বিরিয়ানিতে উচ্চমার্গীয় গু আর শাক শুঁটকিতে উৎপাদিত গু অবরশ্রেনী ভুক্ত এমনটা ভাবার কোনো কারন নেই। এখানে কবর, চিতা, কফিনের মত শ্রেণীবিন্যাস নেই। বিশ্বজুড়ে ভোগের কতশত লেখাজোখা হিসাব, ত্যাগের জন্য শুধুই মহাপুরুষ আর মুনিঋষিরা বরাদ্দ; কিন্তু আমাদের নিত্য যে ত্যাগ তার হিসাব আমরা আমমানুষেরা কখনো রেখেছি কি? আরো অনেক কিছু বক্তিমে লেখাই যেত, বড় হয়ে গেলে পড়বেনা এই ভয়ে এখানেই ভূমিকাতে ক্ষান্ত দেওয়া হল। তবে জন অনুরোধ এলে আবার এ শর্মা- কলম থুড়ি কি বোর্ড তুলতেই পারে। চলুন তাহলে বিষয়ে ফেরা যাক।
পৃথিবীর এক ভাগ স্থল আর তিন ভাগ জল। পৃথিবীতে মোট জল গোটা গ্রহের ৭১ শতাংশ, মানে ৩২.৬০ কোটি কিউবিক মাইল পরিমাণ (৩)। এর মধ্যে মাত্র ০.৫% ই পান যোগ্য জল। ১ কিউবিক মাইল মানে ৪১৬৮১৮২০০০০০০ লিটার পরিমাণ, পানীয় জলের পরিমাণ সে তুলনাতে খুবই নগণ্য।
বন, জঙ্গল, পশু, পাখী, কীট পতঙ্গ বাদ দিলে শুধু মানুষেরই সংখ্যাই ৭৩৪ কোটিরও বেশি। শুধু জানার জন্য জেনে রেখে দিতেই পারেন যে পৃথিবীতে শুধু স্থলজ প্রানীর প্রজাতিই আছে ১ লক্ষ ৯০ হাজার প্রকারের (১); আর যদি সমুদ্রের আণুবীক্ষণিক প্রানীদের গ্রাহ্য করা হয় তাহলে সেটা কম করেও ২০ লক্ষ পেরিয়ে যাবে হাসতে হাসতে(১)। বুঝতেই পারছেন জীবজন্তুদের সাথে তুল্যমূল্য বিচারে আমরা ওই ২০ লক্ষের একটি মাত্র।
তাহলে ওই পেয় জল শুধু মাত্র যদি মানুষই পান করে, তাহলে কত বছর লাগত ওই মজুদ পানীয় জল শেষ হতে সেটার হিসাব নাহয় আপনারাই করুন, এখানে জনপ্রতি দিনে মাত্র ২ লিটার জলই বরাদ্দ হিসাবেই ধরবেন যেন।
আমাদের বেঁচে থাকা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মূলত আমাদের দু-তিনটে কাজই নিজে থেকে উদ্যোগ নিয়ে করতে হয়। বড় হওয়া, ঘুম, নিঃশ্বাস নেওয়া আর মরে যাওয়া এমনি এমনিই হয় আমাদের, মানে এর জন্য আমাদের আলাদা করে মেহনত করতে হয়না।
বাকি যেটা করতে হয় সেটা হল দু তিনটি জৈবিক কার্যের জন্য লড়াই, আর এতেই জীবন ফুরিয়ে যায়। এর প্রথমেই আসে খাদ্য, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এটা লাগেই, পানীয় সহ; না পেলে মৃত্যু অবধারিত। দ্বিতীয় হচ্ছে যৌনতা, কৈশোর বেলার শেষ থেকে পুরুষের জন্য প্রায় শেষ বয়স পর্যন্ত ও মহিলারা শেষ মধ্যবয়স পর্যন্ত এর পিছনেই ছুটতে থাকে খাদ্যের পর। এর পর বাসস্থান, নাহলে সুস্থ থাকা যাবেনা। বাকি সকল কিছুই এর পরে পরে আসবে। কিন্তু অত্যাবশ্যকীয় নয় উপোরোক্তগুলোর মতন।
এই যে আমরা সকলে খায়, শরীর নামের মেশিনটা চালাবার জন্য, বেড়ে উঠার জন্য বা বুড়ো হওয়ার জন্য শক্তি বাবদ ক্ষয় স্বরূপ ও চর্বিরুপে কিছুটা জমিয়ে রাখা বাবদ বাদে, বাকি সকল পাচ্য ও অপাচ্য সকল খাদ্য ও পানীয় বর্জ্য রূপে এই পৃথিবিতেই সকল প্রানীরা ফিরত দিয়ে থাকি। এই বর্জ্য উদ্ভিদের কাছে খাদ্য, প্রানীদের মধ্যে কিছু নিকৃষ্ট শ্রেনী এই বর্জ্য খাদ্য হিসাবে গ্রহন করে (যেমন কৃমি, গুবরে পোকা, গিনিপিগ, নেড়ি কুত্তা, শুয়োর, RSS ইত্যাদি)।
চলুন এবার ব্যাহ্যালোচনাতে আসি। শুধু মাত্র মানুষ দিনে কত পরিমাণ বর্জ্য পরিত্যাগ করে জানেন কি? একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ দিনে গড়ে প্রায় ৫০০ গ্রাম মলত্যাগ করে। যারা বেশি খায় তারা বেশি ত্যাগ করেন, সেদিকে শিশুরা অল্প খেয়ে অল্প মলত্যাগ করে গড়টা মোটামুটি একটা বিশ্বজনীন রেখে দেন। এই ত্যাগের হিসাবটা সপ্তাহে প্রায় সাড়ে তিন কিলোর মত ও বছরে ১৮০ কেজি প্রায়। যেগুলোর মধ্যে ৭০% সেমি সলিড, ও ৩০% তরল পদার্থ থাকে। মানুষ পায়খানা ঘরে যাবার ১২-১৫ সেকেন্ডের মধ্যেই মলত্যাগ সম্পূর্ণ করে ফেলেন স্বাভাবিক ক্ষেত্রে(২)। অবশিষ্ট সময়টা আসলে ত্যাগের সুখানুভুতি গ্রহণ করি।
মুত্রের ক্ষেত্রে এটার গড় পরিমাণ প্রতি দিন প্রায় ১৫০০ মিলিলিটার (রেঞ্জ ৮০০-২০০০ মিলি)। বছরে প্রায় সাড়ে ৫০০ লিটার।
অতএব একজন মানুষের ৭০ বছর গড় আয়ু ধরে নিলে কমবেশি প্রায় ১২৬০০ কেজি মত মলত্যাগ করে। মুত্রের হিসাবটা ৩৮৫০০ লিটার মানে ১০১৭০ মার্কিন গ্যলন (৪)।
৭৩৪ কোটি মানুষ রোজ ৩৬ লক্ষ ৭০ হাজার টন মলত্যাগ করে। বছরে যেটার পরিমাণ প্রায় ১৩৪ কোটি টন। হিসুর হিসাবটা বছরে ১১০১০০০০০০০ লিটার, কথায় লিখলে এক হাজার একশত এক কোটি লিটার ।
এই গু-মুতের বাইরে মানুষের ঘাম, থুথু, পোঁটা, পিঁচুটি, কফ, বমি, পুরুষের বীর্য, নারীর ঋতুস্রাব, ঘায়ের পুঁজ, হাজা, কান্নার জল ইত্যাদি সহ পশু পাখিদের বর্জ্য, মরা চামড়া, মৃত মানুষ, মৃত পশু, মৃত বাকি সবকিছু, কাপড় কাচা ও শরীর ধোয়ার সার্ফ-সোডা-সাবান, কারখানার দূষিত রাসায়নিক ইত্যাদির পরে আসলে পরিশ্রুত বাঁচে কতটুকু? আমরা কি পরিশ্রুত মলমুত্র বর্জ্যই খেয়ে চলেছি?
ছোট বড় সকল শহরের নর্দমাগুলোই প্রবাহিত হয়ে নদীতে এসে পরে, যা সমুদ্রে গিয়ে মেশে। খুব অল্প ক্ষেত্রেই নর্দমাগুলো সরাসরি নদীতে মেশেনা, নতুবা যারা আমরা নদীর জলে জলকেলি করি বা সরাসরি বলা ভাল যারা গঙ্গাস্নানে যায় নিজেকে পবিত্র করার অভিপ্রায়ে; তারা কিসে যে ডুব দিয়ে আসেন সেটা কেবল ভগাই জানত, আজ আপনিও জানলেন।
প্রসঙ্গত বলে রাখি, আমাদের বাতকর্মের পরিমানটাও নেহাত কম কিছু নয়, রোজ গড়ে আমরা দেড় লিটারের মত গন্ধবায়ু পরিত্যাগ করি। হ্যাঁ, মহিলারাও, ওনারা একটু আড়ালে আবডালে করেন এই যা শুধু ফারাক।
রাষ্ট্র সংঘের হিসাব মতে ২০১৮ সালেও ৬১.৩০% মানুষই পরিচ্ছন্ন ও নির্দিষ্ট স্থানে মলমুত্র ত্যাগ করেনা, খোলা স্থানে পাছায় আলো বাতাস লাগিয়ে মলত্যাগের মজাটা বোধহয় কেউ ছাড়তে চাইনা। সংখ্যাটা প্রায় ৪৫০ কোটি মানুষের খোলাস্থানে ত্যাজিত মলমুত্র, প্রত্যক্ষ ভাবে নদী নালা ডোবা হ্রদ হয়ে সমুদ্রে মেশে। ১৮০ কোটি মানুষের পানীয় জলের উৎসও এই নদ, নদী, নালা ও হ্রদ গুলিই। বুঝতেই পারছেন তৃতীয় বিশ্বে মহামারীর আগমনের কারন।
কোলকাতা শহরে ৫৮ লক্ষ মানুষের বাস ও শহরতলীতে আরো দেড় কোটিরও বেশি। ঢাকা শহর ও শহরতলীতে সংখ্যাটা প্রায় আড়াই কোটির একটু বেশি। শুধু কোলকাতার এই ২ কোটি মানুষের রোজকার পরিত্যাজ্য বর্জ্য, মল ও মুত্রের পরিমাণ ১ কোটি কেজি মানে ১০ হাজার টন প্রায়, আর মুত্রের পরিমাণ সাড়ে ৯৪.৩৪ লক্ষ মার্কিন গ্যালন পরিমাণ। স্বাভাবিক ভাবেই ঢাকা শহরে এই পরিমানটা আরো বেশি।
সামান্য বৃষ্টিতে যখন রাস্তা ছাপিয়ে গোড়ালি ডুবো জলে ‘নাচুঙ্গি ম্যায়- ছম ছম ছম, ছম ছম ছম’ করে নাচেন, বুঝবেন ওটাতে মিশে রয়েছে শহরের নর্দমার জল; আর নর্দমার জল মানে কি পরিমাণ গু-মুত যে মজুত রয়েছে সেটার অনুমান এর পর থেকে নিজেই করে নিতে পারবেন।
১ টন মল দিয়ে ১৬ বর্গ মিটার স্থান ভরাট করে দেওয়া সম্ভব, আর দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা আয়তনে ৩০৯৪৭৩ বর্গ মিটার ফ্লোর এরিয়া। হিসাবটা হচ্ছে ১ কিউবিক মিটার মুত্র মানে ২৬৪.১৭ গ্যালন মুত্র। এবার বুঝে নিন, আমাদের কোলকাতা আর ঢাকা শহরের মুত্র দিয়েই প্রতিদিন ২৩ খানা বুর্জ খলিফা ভরে দেওয়া সম্ভব; পাশাপাশি কোলকাতা আর ঢাকা শহরের মানুষদের মলের পরিমাণ দিয়ে রোজ একখানা করে বুর্জ খলিফা বানানো বা ভরাট করে দেওয়া যাবে। একটা এভারেষ্ট বানানোও কি খুব কঠিক কিছু কাজ!
ভাবুন ভাবুন, ভাবা প্র্যাক্টিস করুন। কতটা পরিশ্রুত ও পরিচ্ছন্ন আপনি বাঁচছেন এই গুয়ে ভরা পৃথিবীতে।
পায়খানা সংক্রান্ত ফুটনোটঃ
ক) জানেনকি গু’এর ৭৫% ই জল। বাকি ২৫% মৃত ব্যাক্টিএরিয়া, খাবারের পাচিত অংশ, চর্বি, প্রোটিং ইত্যাদি।
খ) পিত্তরসের কারনেই গু’এর রঙ হলুদ বর্ণের হয়।
গ) দিনে একবার হাগু করাটাই সুস্থতার লক্ষণ। একমাত্র যুবতী মেয়েরাই এই বিষয়ে ধারাবাহিক। 
ঘ) বসার অভ্যাসের তারতম্য ঘটলে আমাদের হাগুনুভুতি আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
ঙ) আমরা প্রায় প্রত্যেকেই কতটা পরিমাণ আর কি ধরনের হাগলাম সেটা একবার না দেখলে আত্মায় তৃপ্তি পৌছায়না, সেটা স্বীকার করুক বা না করুক। 
চ) নীল আমস্ট্রং চাঁদ থেকে কি এনেছেন সেটা আমরা জানি, কিন্তু এটা জানিনা যে উনি প্রায় চার প্যাকেট ভর্তি ‘গু’ রেখে এসেছিলেন চাঁদের মাটিতে। 
ছ) মানুষের পরিবর্তনশীল মানসিক অবস্থা অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াদের প্রভাবিত করে, এর প্রভাবে আমাদের মল-সংস্কৃতিরও পরিবর্তন ঘটে দ্রুত। টেনশনে চুন হাগা আরকি- 
জ) ঋতুস্রাবের সময় মহিলাদের স্বাভাবিক মলত্যাগের নিয়মে অনেকটা পরিবর্তন আসে।

মুত্র সংক্রান্ত ফূটনোটঃ(৫)
ক) আমরা দিনে মোটামুটিভাবে সাতবার হিসু করি।
খ) স্বাভাবিক ভাবে গড়ে আমরা ৭-১২ সেকেন্ডের মধ্যে মূল হিসি সম্পন্ন করি। মহিলাদের ৫ সেকেন্ড ও পুরুষদের সর্বোচ্চ ১৮ সেকেন্ড।
গ) আমাদের তলপেটে অবস্থিত মুত্রাশয়ে ৩০০-৫০০ মিলি পর্যন্ত তরল মজুদ থাকতে পারে।
ঘ) যৌবন পরবর্তী বয়স বাড়ার সাথে সাথে হিসুর বেগ কমতে থাকে আর পরিমাণ বাড়তে থাকে। 
ঙ) অনেক মহিলাদের মধ্যে ‘হিসু করব করব’ ও ‘অকারণে হিসু চেপে রাখব’ টাইপের কিছু মানসিক রোগ এর লক্ষণ দেখা যায়।
চ) গর্ভবতী মায়েরা ‘চলন্ত মুত্র উতপাদনকারী মেসিনে’ পরিণত হয়, কারন বর্ধিত ইউটেরাস মুত্রাশয়কে সঙ্কুচিত করে রাখে।
ছ) যৌনক্রীড়া করার পর অবশ্যই হিসু করা উচিৎ, বিশেষ করে মহিলাদের তো অবশ্যই। 
জ) হিসুতে প্রায় ৩০০০ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যদিও এর ৯৫% ই জল। বাকি ৩% ইউরিয়া ও ২% ওই ২৯৯৮ ধরনের পদার্থ, যা আমাদের শরীরের অপ্রয়োজনীয় রেচন। 
ঝ) অতি চরম যৌন অনুভূতির সময়ে, বিশেষত অনেক মহিলাই প্রচন্ড বেগে স্বল্পপরিমান মুত্রত্যাগের মাধ্যমে নিজেদের চুরান্ত মানসিক যৌনসুখের (অর্গাজম) দৈহিক বহিঃপ্রকাশ করে থাকে।