Monday, 8 April 2019

।। দলতন্ত্রের চাটুকার মূলধারা মিডিয়া, ক্ষমতার স্তাবক ।।



২০১৯ লোকসভার মোট ভোটার ৯০ কোটি, দেশে ২৯টা রাজ্য, ৫৪৩টা নির্বাচন কেন্দ্র, কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী হয়ে অরুনাচল থেকে ভুজ। প্রায় কয়েকশো রাজনৈতিক দল, কয়েক হাজার প্রার্থী। আলাদা রাজ্য ভেদে আলাদা ঈশ্যু, আলাদা চাহিদা।
আমি গতকালই লিখেছিলাম সমীক্ষকেরা আপনাকে সংখ্যা জানাবেনা। জানিনা কেন আজই একটা মিডিয়া হাউজ হঠাৎ স্যাম্পেল সংখ্যা জানান দিল সমীক্ষকদের হয়ে, দেশের অন্যতম বড় সংবাদ সংস্থা আনন্দবাজার ঘোষণা করেছে স্যাম্পেল সংখ্যা। তাতে তারা কত মানুষের কাছে পৌছেচে? মাত্র ৪৫০০০, হ্যাঁ পঁয়তাল্লিশ হাজার মাত্র। এটাকে যদি সত্য হিসাবে ধরে নিই তবেই নিন্মোক্ত বাকি আলোচনা, ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি এই ঘোষিত স্যাম্পেল সংখ্যাটাও একটা বড় ছলনা।
একটা লোকসভা এলাকাতে গড়ে ৬টা বিধানসভা এলাকা, একেকটা বিধানসভাতে ৮ থেকে ১৫টা পঞ্চায়েত, গড়ে ১২টা। মিউনিসিপ্যাল এলাকা ওই অনুপাতেই ওয়ার্ড ভিত্তিক জনসংখ্যার হিসাব। সুতরাং লোকসভা পিছু গড়ে ৬x১২= ৭২টা পঞ্চায়েত/ওয়ার্ড কমপক্ষে। এই তালেবর সমীক্ষকেরা পৌছালো কত জনের কাছে? লোকসভা কেন্দ্র পিছু এবারে সাড়ে ষোল (১৬.৫০) লাখ ভোটার ধরে ০.০০৫% হারে মাত্র ৮৩ জনের কাছে। পঞ্চায়েত বা ওয়ার্ড পিছু ১ জনের কাছে।

শতাংশের হিসাবে ০.০০৫ %, প্রতি ২০ হাজার জনে ১ জন। বহু কেন্দ্রে এর চেয়ে কম মার্জিনে এইবারের ভোটে হারজিতের নির্নয় হবে। সুবিশাল ভারতবর্ষের এত ভাষাভাষী, বয়সভেদ, জাতিভেদ, বর্ণভেদ, ধর্ম ভেদ, অঞ্চলভেদ, প্রার্থী পরিচয়...... আরো কতো শত বৈচিত্র।
বিকৃত ও বিক্রিত মাধ্যম আজকাল নির্লজ্জের মত ক্ষমতাবানেদের হয়ে তোষামোদিতে মত্ত। কে কাকে নির্লজ্জতাতে টেক্কা দেবে সেই ঘৃন্য প্রতিযোগিতা চলছে দেশ জুড়ে। ‘সাংবাদিক’ পেশাটা কিছুদিনের মধ্যেই পতিতা শব্দের কাঁচা খিস্তি হিসাবে মানুষ ব্যবহার করবে। পয়সার জন্যই পতিতারা শরীর বেচছে, সাংবাদিকেরা লাজলজ্জা, পেশাদারিত্ব সহ সর্বস্ব।
ভাই, আমরা সাধারণ পাবলিক অঙ্ক বা সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্র না হলেও ভক্তদের মত গোসন্তান অন্তত নই। সাদা আর কালোর হিসাবটা বুঝি। ঠান্ডাঘরে বসে ট্যাব আর ল্যাপটপে অনলাইন থেকে ভোটার লিষ্ট নামিয়ে যার খুশি র্যা ন্ডম নাম লিখে দিয়ে জনসমীক্ষার নামে ধাপ্পাবাজির নামও সাংবাদিকতা। এটাই ডিজিটাল ভারতবর্ষ, আসলে রিঙটাল। উন্নত বিশ্বে সাথে আমাদের এখানেই ফারাক। তৃতীয় বিশ্বের সাংবাদিক কতজন খাগেসি হয়, অর্ণবদের সংখ্যাই বেশি।
গলদটা হল, সাংবাদিকদের ও কাগজ/চ্যানেল মালিকদের কোনো দায় নিতে হয়না। গণনা লাগলে তুক, না লাগলে তাক। প্লাস মাইনাস ৫% বিসদৃশ্য হলে যদি সাংবাদিক রেজিষ্ট্রেশন বাতিল করে দেওয়ার আইন আনইয়ন করা যায়, তাহলে সব দালাল কটার পিছন হলুদ হয়ে যাবে। এই ধরনের জনমানসে প্রভাবিত করা সমীক্ষা দিয়ে মেরুকরনের প্রচেষ্টা কেন বরদাস্ত করা হবে গণতন্ত্রে?

আজকের ভারতেও নিরক্ষরতার হার ২৬% এর উপরে, শিক্ষিতদের ৬৯% ভারতবাসিই মাধ্যমিকের যোগ্যোতামান পেরোয়নি। গণতন্ত্রে উচ্চশিক্ষিত ও নিরক্ষর উভয়ের ভোটের মূল্যমান সমান। এছাড়া হার ও জিতের মাঝে অধিকাংশ ভোট শতাংশের পার্থক্য থাকে মাত্র কয়েক শতাংশের। প্রান্তিক ভোটারকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ভবিষ্যৎবাণীর মত সমীক্ষা শুনিয়ে কেন বিভ্রান্ত করা হবে? এটা কি একটা সংঘঠিত দুষ্কর্ম, বৃহত্তর ভ্রষ্টাচার নয়? IPC chapter 09A, অনুযায়ী 171(C, F & G) ধারাতে পরিষ্কার ভাবে এক্তিয়ারের উল্লেখ রয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি ধারা মোতাবেক এটা সমবেত অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র। কেন এগুলো বন্ধ হবেনা? 
এক্সিট পোলের মত, প্রি ইলেকশন পোলও বাতিল করার দাবি উঠুক। মিডিয়া নামে এক শ্রেনীর দালালের করে খাওয়ার পথ হয়েছে এই সিস্টেম। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা আওয়াজ তুলুন, নতুবা শাসক নিজের মত করে এই ঘৃন্য ‘Paid news’প্রচার করতেই থাকবে।

গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ আজকাল গাঁজা খেয়ে শূণ্যে ভাসছে। আর গণতন্ত্র তেপায়া অটোরিকশার মত কাটা তেলে ট্রাফিক না মেনে পাঁই পাঁই করে ছুটছে।
বলছিলাম এরা কি গাঁজা চিবিয়ে খায়? না সেলাইনে নেয়!!

No comments:

Post a Comment