ফেউ
~~~
অঙ্ক বড়
গোলমেলে তাদের জন্য, যারা সন্ধিক্ষনে দাঁড়িয়ে থাকেন। অবশ্য বর্তমান এই সময়ের মাঝে
বাঁচার একটা আলাদা উতকর্ষতা আছে। জীবন সকলে যাপন করেননা, কেউ কেউ করেন; বাকিরা
বেঁচে থাকেন। সন্ধিক্ষণের মানুষেরা যাপন করেন, ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত।
গুটেনবার্গ সাহেবের ছাপাখানা আবিষ্কার করবার পূর্বে হাতে লেখা পুঁথি আর শ্রুতিপাঠ্যই
ছিল অধ্যয়নের একমাত্র উপায়। যখনকার দিনে আজকের ব্যবহৃত কিছু লিপি থাকলেও আজকের এই
বুলি অবশ্যই ছিলনা, প্রাচ্যে হোক বা প্রাশ্চাত্যে। ক্রমে ক্রমে প্রযুক্তি এসেছে,
সেই মোতাবেক সকল কিছুই সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আধুনিকিকরন হয়েছে, যারা পারেনি তারা
হারিয়ে গেছে। এটাই বিবর্তনের নিত্যতা সুত্র।
গত
শতাব্দিতেও মনোরঞ্জনে ও জ্ঞানার্জনের একমাত্র উপায় ছিল বিভিন্ন লেখকদের দ্বারা
লিখিত বই বা পুস্তক ও অনেক লেখকদের দ্বারা লিখিত পত্রিকা। এখন পত্রিকা কথাটির
সাত্থে পত্র কথাটি অঙ্গাঙ্গভাবে জড়িত। কারন হয়তবা পত্র মারফৎ লেখা পাঠানো হত বলে,
অন্য গ্রহণযোগ্য কারন থাকতেই পারে, হয়তবা সেটাই ঠিক। আমাদের আলোচনা সেটা নিয়ে নয়।
একসময়
কলেজস্ট্রিটের কফিহাউজ ছিল সাহিত্যাড্ডার অন্যতম পীঠস্থান, বড়বড় লেখক কবি
সাহিত্যিকের প্রাক্তন আড্ডাখানা। অবশ্য যখন তাঁরা যেতেন, তাঁরা নিতান্তই সাহিত্য
জগতের অঙ্কুর মাত্র। এমন অনেক অঙ্কুরেরই বাস ছিল ওই অলিন্দে, তাঁদের গুটি কয়েকজন
বটবৃক্ষ হয়ে পেরেছেন। বাকিরা হারিয়ে গেছেন সময়ের গর্ভে কালের নিয়মে।
তখন সোশ্যাল মিডিয়া ছিলনা, তবুও।
এই
কফিহাউজটা আসলে কি? কফি খেয়ে কি সাহিত্য প্রতিভা খোলে? নাকি ওই পুরাতন উঁচু
বাড়িটার দেওয়ালে পিঠ ঘষলে কলমের ডগে লেখা আসে? আসলে হল কিছু সমমনষ্ক মানুষের ঠেক
ওটা, ওখানের টেবিলে কেন্দ্রীভুত হত বা হয় নানান তরতাজা ভাবনারা। সেই ভাবনা থেকে
জন্মানেয় আত্মবিশ্বাস আর তাতে ভর দিয়ে চলে সাহিত্যচর্চা।
আজকের
ট্যেকস্যাভি যুগে কি মানুষ আড্ডা ভুলে গেছে? মোটেই না। সেই কফিহাউজের সোনালি দিন
এখন অতীত, জনপ্রিয় আড্ডা এখন ভার্জুয়াল জগতেই ব্যাপক বিস্তার লাভ করছে। ঘরাণাটা
বদলেছে, আঙ্গিক বদলেছে, নামটাও হয়ত। মূল বিষয়টা কিন্তু সেই একই আছে। তাহলে অনলাইনের
আড্ডার সাহিত্যচর্চা থেকে যদি নির্যাস রূপে দু দশটা পত্র-পত্রিকা বাজারে আসে, তাতে
সাহিত্য সমৃদ্ধ হওয়ারই কথা। আপনার কি কোনো সমস্যা আছে? না নেই। কারন
সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরে যেগুলো ছাপা হয় সেগুলোরও একটা বড় অংশ খাজা মানের। আপনি
পাঠক, আপনি ভাল লেখা খোঁজ করেন। সেটা যেখানে
পাবেন, পড়বেন। সেক্ষেত্রে উৎস সেটাই হোকনা কেন, পত্রিকা মান ধরে রাখতে পারলে টিকে
থাকবে, নাহলে কালের নিয়মে হারাবে। কারন বিনামূল্যে বা বিনাশ্রমে তো আর কিছু হয়না,
জ্ঞান দেওয়া ছাড়া।
কিছু
পত্রিকাকে হিসাবের মাঝে আনছিনা কারন তাঁদের গন্ডি খুবই ছোট। শিল্পী মনের
বহিঃপ্রকাশের বাস্তবরুপ সেই গুলো। কোলকাতার পাঠক জানেননা বর্ধমানের সম্পাদক কি
পত্রিকা নতুন ছেপেছে, তামনই পুরুলিয়ার আদ্রা শহরের পাঠক জানেননা আলিপুরদুয়ারে কোন
পত্রিকা কবে মার্কেটে আসছে। এগুলো ১০০
বছর আগেও ছিল, আজও আছে , কালও থাকবে; স্বমহিমায়। শুধু নামগুলো বদলে বদলে যায় বাকি
একই থাকে, তবে হ্যাঁ পুজো উদ্যোগতাদের বিজ্ঞাপন ক্রোড়পত্রগুলোকে আবার ম্যাগাজিন
ভেবে বসবেননা যেন।
তাহলে কি
সমস্যা নেই? অবশ্যই আছে। যারা এই বাজারের বড় মাথা, গোটা পত্রপত্রিকার বাজারটাকে
একচ্ছত্রভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন বা করতেন তাঁদের ‘ফাটছে’। কি রকম ও কেন? চলুন দেখা
যাক।
এই সোশ্যাল
মঞ্চ থেকে শারদীয়াতে সব মিলিয়ে ১০০-১৫০ পত্রিকা বাজারে এসেছে। যাদের মধ্যে পাতে
দেবার মত হাতে গুণে ১০-১৫ টি। আমি নিজে কয়েকদিন আগে কলেজস্ট্রিট আঁতিপাঁতি করে ঘুরেছি,
কলেজ স্কোয়ারের ধ্যানবিন্দু থেকে কলেজ স্ট্রিটের পাতিরাম। তারও আগে শেষ ৬টি মাসধরে
নতুন বাংলা ম্যাগাজিন দেখলেই কিনেছি, রাজ্য তথা দেশের যে প্রান্তেই গেছি। শুধু
শেখার জন্য যে, কেমন করে কাগজের অক্ষরে লেখকের ভাষা প্রাণ পায়! সেই ধারা আজও
বহমান, যদিও এ শিক্ষার কোনোদিনও শেষ হবেনা সেটা আমি মোক্ষোম বুঝে গেছি।
সমস্যা
“আমাদের”কে নিয়ে, যারা এখনও পর্যন্ত নুন্যতম পেশাদারিত্ব দেখাতে পেরেছি। মানে ওই ১০-১৫ জন উদ্যোক্তা আর কি। যাদের
একেকজনের পত্রিকার নুন্যতম বাজার কাটতি কমবেশি প্রায় পাঁচ হাজার সংখ্যা। সকলের মিলিত ভাবে সংখ্যাটা লক্ষকপির আশেপাশে। এটা
শুধু সাহিত্য পত্রিকার কথা হচ্ছে। রান্না, গসিপ, ভ্রমণ, মেডিকেল বিজ্ঞান, জ্যোতিষঃ
ইত্যাদিগুলো আলাদা হিসাব। তাহলে এই লক্ষাধিক কপি মোট বিক্রিত সংখ্যার বাজারের
অর্ধেকের সমপরিমাণ প্রায়। অতএব বাজারি মিডিয়ার মাথা খারাপ হবে
এটাই স্বাভাবিক। রীতিমত গাত্রদাহও হচ্ছে, নিশানা বানিয়ে ঝামেলা বাঁধানোর
প্রচেষ্টাও হচ্ছে সযত্নে।
নির্দিষ্ট
কিছু ‘লেখক-সাহিত্যিক-কবি’দের বহাল করেছেন ‘তাঁদের’ বিবেকের বাণী প্রচার করতে,
বুদ্ধিজীবি বেশে। অবশ্যই বিক্রিত বিবেক, কারন দেশে এতো
কিছু ঘটে যাচ্ছে যখন, তখন এনাদের বিবেক সারা দেয়না।
এখন দিচ্ছে; ঠিক কেমন দিচ্ছে? শ্রদ্ধেয় এক বড় মাপের প্রতিষ্ঠিত ‘কবি ও সাহিত্যিক’
মহাশয় যেমন, তিনি নাকি কোথাও বলেছেন “সাহিত্যের নামে এই জঞ্জালের ভবিষ্যৎ কি? এতো
জঞ্জাল আগে দেখিনি, সবই তো পরস্পরের পিঠ চুলকানি”।
আমি একটা জিনিস জানতে চাই, জঞ্জাল শব্দে আপনি ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছেন? পাঠককে আপনি
বা আপনারা মুষ্টিমেয় কয়েকজন মিলে ঠিক করে দেবেন তাঁরা কি পড়বে? এতদিন অবশ্য বাজারি
মিডিয়ার বাবুরা তেমনটাই করে এসেছেন। বাজারি মিডিয়া প্রতিবছর অনেককেই তোলেন,
অধিকাংশই হারিয়ে যান। আপনিও হয়ত খাদের কিনারায় হয়ত, কলমে লেখা আসেনা আর তেমন তাই
বুদ্ধিজীবির বাজারে নিজেকে লঞ্চ করলেন। প্রভুভক্তের মত শেখানো কোটেশন বাজারে ছেরে
কিছু রোজগারপাতি মন্দ কি? বাজারি বাবুরা জানেন এই সোশ্যাল মাধ্যম ‘ঘন্টাখানেক’
করার উপযুক্ত স্থান নয়। সোশ্যাল মিডিয়া মুক্তমঞ্চ, এবং উভমুখী। এখানে সরাসরি
জবাবদিহি চাইবার সুযোগ আছে, পছন্দ অপছন্দ সবটাতেই কড়া প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়।
বংশবদ কিছু দালালকে দিয়ে টিভি চ্যানেল হোষ্ট করা নয় এই সোশ্যাল মিডিয়া।
তারা ১০টা বেতনজীবি লোক পুষে তাদের দিয়ে নানান ট্রল বানিয়ে , উষ্কানি লাগাতে
চেষ্টা করছে। তব্র এখানে কিভাবে ওই সব ভাড়াটে টাট্টূদের মোকাবিলা করতে হয় জানা
আছে।
একটা সংবাদ
পত্র চালাতে প্রচুর আর্থিক বিনিয়োগ সাথে একটা শক্তিশালী নেটওয়ার্ক দরকার, কিন্তু
পত্রিকা চালাতে তার অনেক অনেক গুণ কম ইনফ্রাস্ট্রাকচার হলেও চলে। যখন
সোশ্যাল মিডিয়া নামক প্লাটফর্ম ছিলনা, তখনও নানাভাবে এরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করত।
ফলশ্রুতি হসাবে অল্প দিনেই পাততারি গুটাতো সংশ্লিষ্ট সংস্থা। আমারই বাবার এক বন্ধ
শ্রদ্ধেয় মনোহর ঘোষাল বাবুকে জেলে পর্যন্ত পাঠিয়েছিল মিডিয়া বিধাতারা। কিন্তু
সেটা এক যুগ আগে, এটা ২০১৭; সেই পরিস্থিতি সেই মোনোপলি আর নেই। মাননীয় লেখক সৈয়দ
মুস্তাফা সিরাজ সাহেব বাজারি পত্রিকাতে চাকরি করলেও তার অধিকাংশ জনপ্রিয় লেখা
অখ্যাত ‘ছোট’ পত্রিকাতে ছেপেছিলেন। যেগুলো পরে বই আকারে সঙ্কলিত হয়েছিল।

পত্রিকা
টিকে থাকে তার মধ্যে থাকা লেখার (কন্টেন্ট) মানের উপরে। তারও পরে রঙে- রুপে- যেচে-
গচিয়ে "আমাদের" মত ১০-১৫ জনেদের পত্রিকা সংখ্যা লক্ষ কপি
"বিক্রি" হচ্ছে বলেই বাজারি পত্রিকা- আষাঢ় মাসে শারদ সংখ্যা প্রকাশ করে
দিয়েছে। যারা ভগবানকে ছাড়া কাওকে ভয় পাননা
তাঁরাও নির্ভয়ে শ্রাবন মাসে ‘সেফ’ খেলেছেন। বাকি প্রতিষ্ঠিতেরা শুরুর ভাদরে। কাকে
ভয়? কিসের ভয়? সম্প্রতি দেশ পত্রিকা লিখিত বিজ্ঞপ্তি ঘোষণা করেছে যে তাঁদের
পত্রিকার লেখা যেন সোশ্যাল মিডিয়াতে কখনই প্রকাশ করা না হয়। প্রচ্ছন্ন ধমকি আর কি।
কড়ায়ের তরকারি পুড়লে তলদেশ পর্যন্ত দেখার ক্ষমতা থাকার দরকার নেই, গন্ধ শুকেই বোঝা
যায়।
আসলে এনারা
পাক্কা ঝানু ব্যাবসাদার। সাহিত্যপ্রেম আমার আপনার থাকতে পারে, আর সেটাই ওনাদের
পুঁজি। ওনাদের রুটিরুজি ও বিলাসবসন সবকিছুর উপায় আমাদের সাহিত্য প্রেম। এতদিন
একচ্ছত্রভাবে ওনারা কিছু নির্দিষ্ট জনের লেখা ছেপে গেছেন, তাতে পাঠকের ভাল লাগুক
বা না লাগুক। যতজনের পাঠক রিভিউ যায় বা গেছে, ওনারা কি সেগুলো অকপটে প্রকাশ করেন?
কিছু জন লেখক সাহিত্যিক তো আবার রীতিমত এনাদের বংশবদ। চাটুকারিতার চুরান্ত
প্রতিফলন ছত্রে ছতে। দেশের প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দিচ্ছেন সোশ্যাল
মিডিয়াতে। সংবাদমাধ্যম, গায়ক, নায়ক, ইউটিউব, শর্টফিল্ম কনসেপ্ট, হটস্টার,
নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইম সহ সকলেই নতুন মঞ্চ আনছেন বা এনেছেন। আমরা সাহিত্য
পত্রিকা আনলেই সেগুলো জঞ্জাল? তাঁরা বুঝেছেন যে এই সুখের দিন খুব বেশিদিন আর নেই।
তাই দাঁত নখ বেড় করতে শুরু করে দিয়েছে, প্রভুর আদেশে।
নতুন
লেখকেরা পত্রিকাতে লেখা ছাপাবার জন্য একটা সময় এনাদের পায়ে হত্যে দিয়ে বসে থাকতেন।
স্বাভাবিক ভাবেই এখন সেটা ৫% হলেও কমেছে। আর এটা যে দিনে দিনে বাড়বে সেটা বলাই
বাহুল্য। সাহিত্য পত্রিকার নামে বিজ্ঞাপন ক্রোড়পত্র বেচে বাজারি মিডিয়া ব্যারন
মহাশয়গণ, তাতে কতটুকু সাহিত্য থাকে? ইয়া ঢাউস বইতে গুণে গুণে ১০-১২টা লেখা , বাকি
সবই বিজ্ঞাপন। যে আয় থেকে প্রভুরা বংশবদদের সামান্য কিছু ছুঁড়ে ফেলে দেন কুড়িয়ে
নেবার জন্য, বাকিটাতে তাঁদের বিদেশে প্রমোদভিলা তৈরি হয়।
এই সোশ্যাল
মিডিয়ার জঞ্জাল বাবুদের প্রত্যেকেরই ভদ্রস্থ জীবনধারন করার জন্য স্থায়ী রোজগার
আছে, প্রানের টানে ও কিছুটা যশলাভের আশাতে পকেটের পয়সা আর সময় খরচা করে অনেকে মিলে
নিজেদের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করে একটা কাঠামো খাঁড়া করে চলেছেন। আর
এখানেই ফারাকটা গড়ে দিচ্ছে। আমরা যারা
সোশ্যাল মিডিয়াতে পত্রিকা প্রকাশ করছি। আমাদের সামনে কোনো মডেল ছিলনা, গোটাটাই
আমাদের নিজেদের প্রচেষ্টা। তাই আমাদের হারানোর কিছু নেই, কারন লাভ করতে আসিনি। তবে
একটা সম্ভাবনার বীজ বপন করতে সক্ষম হয়েছি।
৫০, ৬০, বা
৭০ এর দশকেও বাজারি পত্রিকার যে মান ছিল আজ তা তলানিতে। কিশোরবেলার পোড়া আনন্দমেলা,
সন্দেস বা সমগোত্রীয় পত্রিকার সুখস্মৃতি
কি আজকের 'চালু'
পত্রিকাতে খুঁজে পান?
একটানা ১০ জন আধুনিক এইসময়ের লেখকের নাম মনে করতে পারবেননা। কেন? সোশ্যাল মিডিয়া
তো এসেছে আজ ৫ বছর, মানে এই পত্রিকা নিয়ে মার্কেটে আসার কথা বলছি। আসলে পুঁজিবাদের
লোভ আর তাঁদের ঘিরে থাকা বংশবদ উমেদার নামক সাহিত্যিক কবির দল বাজারি মিডিয়ার ছায়ায়
নিজেদের কবর দিয়েছেন। সেই ঘুরে ফিরে একই মুখ আর তাঁদের লেখা। মানুষ আলাদা টেষ্ট
খুঁজছে, আমারা তাই পাঠকের দরবারে সুযোগ পাচ্ছি নিজেদের প্রমান করবার।
টানা
দু-তিনটে শতক ধরে প্রতি বছর ১২টা করে পত্রিকার সংখ্যাতে ৫ জন করে নতুন লেখক সুযোগ
পেলেও বছরে ৬০ জন হয়। আর ত্রিশ বছরে ওই ১৮০০ লেখকের মধ্যে ১৫-২০ জন নিয়মিতের দলে
টিকে যান ও ৫-৭ জন সেলিব্রিটি হয়ে উঠেন। এটাই সিস্টেম। হাতে গোনা কয়েকজনকে বাদ
দিলে, বিখ্যাত লেখক সাহিত্যিকেরাও সম্ভবত বলতে পারবেননা সারা জীবনে যেগুলো লিখেছেন
সেগুলোর সব কটা নাম, কবিদের অবস্থা আরো খারাপ। নিজেরই মনে আছে নেই ২ বছর আগে কি
লিখেছিলেন, পাঠকের মনে থাকা তো দূর। তবে সেগুলোকে আমরা জঞ্জাল বলব সেই আস্পর্ধা বা
অধঃপতন এখনও হয়নি , ভবিষ্যতেও হবেনা। সোশ্যাল মিডিয়াকেও সময় দেওয়া হোক, সবে তো
শিশু। এরও দুটো দশক কাটুক তবে না ভাল মন্দ বিচার। অনেকে বলছে এখানে পরস্পরের পিঠ
চুলকে দেওয়ার প্রসঙ্গ।
মশাই আপনাকে
বলি, আমি যদি প্রতিষ্ঠিত ‘কবি ও সাহিত্যিক’বাবুর
সাথে হ্যাতে হ্যাঁ মিলিয়ে শেয়ালের মত চিল্লিয়ে উঠি তাহলে আমি বিপ্লবী প্রগতিশীল আর
নিজেরা কিছু আলাদা করে করার চেষ্টা করলেই পিঠ চুলকে দেওয়া নরসুন্দর কানাই শীল?
আপনার মতের সাথে আমার মত না মিললেই সেটা বাতিল মত? পিঠচুলকানির বড় এম্বাসেডর তো
মশাই আপনি নিজে। বড় মিডিয়া হাউজের হয়ে দালালি করতে লেগে পরেছেন। কিছুদিন আগে
দেখছিলাম, মাননীয় সৌমিত্র বাবুও টিভিতে হুনুমান চালিশার অলৌকিক ক্ষমতার বিজ্ঞাপন
দিচ্ছেন। আসলে পয়সা বড় বিষম বস্তু, যেখানে শিল্পী হোক আ শিল্প সবটাই হয়ে যায়
বাজারি মিডিয়ার পন্য। যেখানে পিঠোপিঠি করে শরৎচন্দ্রের দেবদাস, জাপানী তেল দিয়ে
বাসর সাজায়। এ লজ্জার দায় কার প্রতিষ্ঠিত ‘কবি ও সাহিত্যিক’বাবুদের দল? এখানে বিবেক জাগেনি?
ফেসবুকেও
কিছু স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবি রয়েছেন, যাদের ভীষণ চুলকানি হয় স্যোশাল মিডিয়ার
প্ল্যাটফর্ম থেকে বই বার করলে। এমনকি চিল্লিয়ে দু-কষ বেয়ে থুতুর বন্যা বইয়ে দেন।
মশাই আপনার নাভির নিচের লোম পাকলে সেই খবর ফলাও করে বিজ্ঞাপিত করেন, নিজের ছেঁড়া
ইজেরের ১৭ তম রিফুর খবর গর্বের সাথে প্রজ্ঞাপিত করেন। কিছুটা যৌনতা কিছুটা পরকীয়া
সাথে কিছু বাংলা চুল্লু মার্কা অর্ধ খিস্তি কাহিনীও সেঁটে বেড়ান দেওয়াল জুড়ে। নিজে
গু-গোবর যাকিছু পাচ্ছেন সেঁটে দিচ্ছেন পাঠককে পড়ানোর জন্য, আপনি কিন্তু লেখক নন
তবুও দিচ্ছেন, কেন দিচ্ছেন? বলবেন পারেন বলে দিচ্ছেন। সেখানে কেউ একটা বই প্রকাশ
করলেই দোষ? আপনাকের পড়তে বলেনি, আপনার কাছে সাহায্যও চাইনি। তাহলে আপনার গুহ্যদেশে
জ্বালা ধরার কারন কি? কোন নাপিতে আপনাদের চিকিৎসা করে বলুনতো? চারটে লাইক আর ১১টা
খিল্লি কমেন্ট নিয়ে লুঙ্গি ঝেড়ে উলটো কাতে শোয়ার তৃপ্তি পেতে অবশ্য এতটুকুই
যথেষ্ট। সেটাও বলুন, বিকৃত কামের কি আর শেষ আছে! উদ্যোক্তারা চেষ্টা করে প্রানে
সুখ পাচ্ছেন, আপনারা শুঁকে।
পরিশেষে
বলি, আজ ‘আমাদের’ হাতে সময় রয়েছে তাই ‘আমরা’ এই মাধ্যমে সেই সময়টা ব্যায় করতে পারছি। কাল
সময় না দিতে পারলে আমাদের পত্রিকা থাকবেনা। কিন্তু এর মাধ্যমেই একটা ঘরানা তৈরি
হয়ে যাচ্ছে, মডেল তৈরি করে দিতে সক্ষম হয়েছি যেটা নতুন যুগের সন্ধিক্ষন বৈকি। এখানে
বড় দাদাদের যেকোনো চোখরাঙানি কে উপেক্ষা করাই যায় কাঁচ কলা দেখিয়ে, মুক্ত বাজার।
প্রয়োজন শুধু একটু পেশাদারিত্ব আর উপযুক্ত কন্টেন্ট। জঞ্জাল- পিঠ চুলকানি ইত্যাদি
নানা ধরনের কথাবার্তা বলে ফোকাস নষ্ট করার চেষ্টা করলেও লাভের লাভ কিছু হবেনা,
সেটা আমরা জানি; ওনারাও। আমাদের সম্মিলিত এই প্রচেষ্টা থেকেই
নানান ভাঙাগড়া উঠাপড়ার মধ্যেদিয়ে আগামীদিনের সেরা লেখক কবি সাহিত্যিকেরা বেড়িয়ে
আসবে বলেই বিশ্বাস করি। যারা সোস্যাল মিডিয়ার এই বিশাল মঞ্চে নিজেদের ঢেলে দিতে
পারবেন বা পারছেন শ্রীজাত বা সায়ন্তনী পুততুন্ড প্রমুখের মত; তাঁরা টিকে যাবেন।
বাকিরা সংখ্যালঘু হতে হতে ডোডো পাখির মত তাঁদের পুরাতন স্মৃতিতেই বন্দি থেকে
যাবেন। প্রসঙ্গত এনারা কেউ গুরুদেব রবিঠাকুর নন, নিদেন পক্ষে বঙ্কিমচন্দ্র,
শরৎচন্দ্র বা বিভুতিভূষনও নন যে শতবর্ষ পরেও তাঁদের নিজস্ব প্রভাতে অম্লান থাকবেন।
আমরা
প্রতিযোগী হতে আসিনি, আপনারা প্রতিযোগী করে দিচ্ছেন। আমাদের লড়াই আমাদের সাথে, যেহেতু
কোনো মডেল ছিলনা তাই প্রতিবার নিজেদেরকে ছাপিয়ে যাবার প্রয়াসটাই আমাদের পাথেয়।
তবে, আমদের দয়াকরে লিটিলম্যাগ বলবেননা। লিটিল কথাটার মধ্যে যেন একটা দৈন্য, গরীবি লুকিয়ে
আছে। আমরা সাহিত্য পত্রিকা। কোনটা সাহিত্য
আর কোনটা অপসাহিত্য সেটাও প্লিজ আপনি ঠিক করবেননা বা বাজারি মিডিয়ার তাবেদারেরা
ঠিক করে দেবেনা। আমরা টিকে থাকব কি না,
সেটা পাঠকেরা ঠিক করবেন। কারন দিনের শেষে অবিক্রিত সংখ্যাগুলো দিয়ে ঘরসজ্জা করা
যায়না, আর সেগুলো ছাপাতে খরচা হয়। সংগ্রহ, সম্পাদনা, বিপণন, মোটেই সহজতম কার্য
গুলোর মধ্যের একটা নয়। পত্রিকা বিক্রি হলে স্পনসর আসবে, পত্রিকা টিকে থাকবে। কোনো
বাজারি মিডিয়ার দালালেরা ঠিক করে দেবেনা সোশ্যাল মিডিয়ার প্লাটফর্ম থেকে জন্ম
নেওয়া পত্রিকার ভবিষ্যৎ। আমার এক অগ্রজ দাদা যিনি এই প্ল্যাটফর্মের একজন কর্মী,
তিনিই যথার্থ শব্দটি বলেছেন এনাদের সম্বন্ধে-“আরে ছারো তো এসব ন্যাষ্টি মালদের কথা,
যার হাতে কাজ আছে তার বকার সময় কোথায়? এমন
‘ফেউ’ অনেক লাগবে। প্রশ্নটা ওদের রুজির সাথে জড়িত”। সত্যিই
তো এগুলো আমাদের শখ বিলাস, কিন্তু ফেউদের সরাসরি পেট সম্পর্কিত। তাই বিকৃত ও
বিক্রিত প্রভুভক্তির প্রকাশ আগামী কয়েকবছর চলবেই চলবে। যতক্ষন না হাফিয়ে গিয়ে হাল
ছেরে দিচ্ছে।
নদীর জলের
উৎস প্রবাহ যদি ঠিক থাকে, তাকে বাঁধ দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করলে সভ্যতা ভাসিয়ে দিয়ে প্লাবন
তৈরি করে। আর সেই ধংসের মধ্য দিয়েই তার নতুন গতিপথ সূচিত হয়। সাহিত্য জগত এখন সেই
সন্ধিক্ষণে। আমরা সেই বিপ্লবের গর্বিত পদাতিক সৈন্য।
~উন্মাদ হার্মাদ