মাঝে মাঝে ভাবি এই ভিসুয়াল দুনিয়াটা না থাকলে কিছু জনের কি গতি হত... ইয়ে, মানে আমিও
তার বাইরে নয়। তবুও চোখ আছে তাই দেখি, কান আছে তাই শুনি, আর কাজ নেই
তাই ভাবি। কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন পুরাতন প্রবাদ, বরং নতুন কিছুর সন্ধান করা যাক। তো
সেই মোতাবেক পুজোর ছুটিতে ল্যাদ খেয়ে সময় সারণী বেয়ে বিজয়ার মিষ্টি, অষ্টমীর ভোগ, সপ্তমীর
সেলফি, ষষ্ঠীর
বৃষ্টি, তারও
আগে মহরমের তাজিয়া ও বিসর্জনের কাজিয়ার পোষ্ট গুলোকে ড্রিবল করে খোঁজ পেতে কম বেগ
পেতে হয়নি।
ছেনা
-----
ভালনাম হরিসাধন গুঁই। তা বাপের বহু টাকা ধ্বংশে বহু গুঁইগাই করে কোনো মতে
মাধ্যমিকটা দিয়েই ছেনা বাবুর হেব্বি বিয়ে পেছিল। তো যেমন ভাবা তেমন কাজ। মোদক
বাড়ির বড়াইও তখন সে পাড়ায় রীতিমত সিগনালিং এর টাওয়ার বসিয়েছে, পাড়া
বেপাড়ার ছেলেদের ভিড় বড়াইয়ের বাপের তেলেভাজার দোকানে। বড়াই ঘুটে দেয় কোমরে ওড়না
জরিয়ে, বাড়ির
সামনের পুকুরে কাপড় কাচে ভিজে নাইটি গায়ে। সুষ্পষ্ট বক্ষ বিভাজিকা , কিঞ্চিৎ
দৃশ্যমানও বটে অতএব পাড়ার চুম্বক সাধন মোদকের তেলেভাজার দোকাান। ছেনাও সাইকেল নিয়ে
জোলা পাড়ার মফির সাথে গিয়ে প্রথম বার বড়াই কে দেখে। হতেই পারে বড়াই এর কুঁতো কুঁতো
চোখ, শীল
পানা গাঁয়ের রং। ছেনাই বা কি! জন্ডিস হয়েছিল বলে পাকা বেলের মত মাঝে একবার রঙ
ধরেছিল, বাকিটা
তো সেই ড্রেনে ভাসা মড়া ছুচোর মতই।
বাঙালী ছেলে আচলের নিচেই পৌরুষত্ব খুঁজে পায়। বড়াই কে দেখে ছেনার হৃদয় ট্রেনের
মত হুইসেল দিতে পাগল। অমন ডাবকা মালকে না পেলেই শালা জীবনই বেকার, একথা মফিকে
বলেই দিল। ২-৪ দিন আশেপাশে ফিল্ডিং করার সময় ছেনার হাবভাব চোখমুখ দেখে বিষয়ী সাধন
তক্কেতক্কে থেকে একদিন বলে উঠলেন- "এই ছেলে তুই ভজা দালালের ছেলে না?" । ভজা মানে
ভজন গুঁই ছেনার বাপ,
জমি কেনাবেচার দালালি করে, সাথে আছে তেজারুতির ব্যাবসা। আর তারই একমাত্র গুনধর ছেলে
ছেনা। এমন ছেলে হাতছারা করা অপরাধ সেটা সাধন জানে।অতএব তাকে ডেকেডুকে কদিন এমন চপ
ও ঢপ খাওয়ালো যে হেগেমুতে বমি হয়ে এক সপ্তাহ বিছানাতে।
ফলত বড়াই ছানা নিয়ে ছেনাকে দেখতে এল তার মায়ের সাথে, ছেনাদের বাড়ি। সেই ফাঁকেই
ছেনা বাপকে মনের কথাটা ঝুপ করে বলে দিল-
-' বাবা আমি দিদিকে বিয়ে করব'।
-বাঞ্চোত ছেলে বলে কি! দিদি বলছিস
আবার একে করবি বিয়ে?
তুই ওর হাটুর বয়সী মদন
-তাতে কি! তুমিও তো আমার থেকে বড়। তা
বলে কি বাবা বলিনি?
-ওরে শুয়োর, বাপ হলে তো
বড় হবোই। দেশে আর মেয়ে নেই?
- অতশত জানিনা, আমি ওকেই বে
করব। মা............
-"কেন!! কচি ছেলেটা একটা বায়নাক্কা
করেছে আর আপনি তার মনে কষ্ট দিচ্ছেন? আপনি বাপ না সাপ। তাছারা কি বা আমার
কমতি আছে?" - বড়াই
ফোঁস করে উঠে।
কমতি কিছুই ছিলনা তার এটা সত্য, বয়সেও দেড় কুড়ি। চর্বি প্রয়োজনের
তুলনায় ৩-৪ গুণ বেশি,
রং পাকা ও নিরেট। সেই মানানে বুদ্ধিও। তার নামে বেশ কিছু জমিজমাও আছে বিলের
মাঠে। অতএব...
২৯ এর বড়াই এর সাথে ১৬ এর ছেনার বিয়ে হয়ে গেল। আর ১১ তম মাসেই বড়াই এর উর্বর
জমিতে ফসল ফলে গেল। উন্নজ বীজ ও উন্নত জমি, পরবর্তী ৭ বছরে আর চারটে ফসলের পর
তেজী বড়াই এর শরীর ভাঙতে ডাক্তারের কাজে গেল এবং বড়াই থলে কেটে এলো। এবারে যতই
স্প্রে হোক, মুচি
আর বাধবেনা।
ধীরে ধীরে বড়াই ৫ টি আন্ডাবাচ্চা নিয়ে ব্যাস্ত, থুরি ৬ টা হবে। ছেনা নিজেও তো সবে
২৬। ওদিকে বছর যায়, বড়াই
এর আঁচ নিভু নিভু প্রায়। আর বাপমরা ছেনা ব্যাবসা দেখে বৌ এর কড়া নজরে ও শাসনে, আর ১০ ঘড়া
ইঞ্জিন নিয়ে মাঠে ঘাটে হ্যান্ডেল মারে।
অবশেষে একদিন এলো ফেসবুক, মানে ছেনার জীবনে। গতবছর পল্টুর বিয়েতে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে
একটা কোট দিয়েছিল, সেটা
পড়ে ছেনার একটা ছবি আছে। প্রথমে হরিসাধন নামে কালী দু্গগা শনি ঠাকুরের ছবি শেয়ার
করত। একবার মোবাইলের ফ্রন্ট ক্যামেরা দিয়ে দেখে নাকের ময়লা সাফ করছিল, সেই ছবিটাই
উঠে যেতে সে ফেসবুকে ছেরে দিল। ব্যাস ওই একটা ছবিই ছেনা কে ফেমাস করে দিল। পাবলিক
ধরতেই পারলনা কিসে ছবি,
প্রশংসার বন্যাতে ছেনা রসগোল্লা হয়ে গেল।
ছেনা ফেম বুঝল, সেই
কোট পোড়া ছবিটা দিয়ে ডিপি বানালো, সাথে নাম পরিবর্তন করে রাখল হ্যারি জি। হরিসাধন গুই এর ফেবু
ভার্সন, এবাউটে
ফটোগ্রাফার ও প্রাইভেট ফাইনান্সার। ব্যাস এর পর একটা DSLR কিনে তাতে
পরমানু বোম থেকে বগলের লোম যা পেত যেখানে পেত সেই ছবিই ফেবুতে দিয়ে আজ তার সাড়ে
ছশো ফলোয়ার। আর কমেন্ট করে শুধু নির্বাচির মামনিদের পোষ্টে, ইনবক্সে নৈব
নৈব চ। মাধ্যমিকের জ্ঞানে দানবাক্স ভরেনা তো ইনবক্স কোত্থেকে ভরবে! তাতে নিজেকে
অত্যন্ত ভদ্র হিসাবে বাজারে প্রতিষ্টিত হতে সাহায্য করল।
______________
নির্যাসঃ ঘরে জাঁদরেল বিগত যৌবনা ঝাঁঝালো বৌ। অগত্যা ফেসবুকে এসে কচি মেয়েদের
কমেন্টের মাঝে রমন সুখ খোঁজা। কিভাবে? যেভাবে আপনি আমি পানু দেখে স্খলন করি
ঠিক সেই ভাবে। ফেবু না থাকলে ৩০ টাকায় ঘন্টা খুজতো কোনো অন্ধকার গলিতে, এখন ফেসবুক
করে।
...ক্রমশ
No comments:
Post a Comment