ভূতের রাজা দিল বর, জবর জবর তিন বর। অকপট নামটা আমাদের কাছে এমনই; একত্রিত হওয়া, ভাবনার সঙ্গম ও শুরুর শুরু এই তিনটে অকপট বর বৈকি। হঠাৎ করে কতকগুলো সমমনষ্ক মানুষের কাছাকাছি আসা থেকে বাস্তবের মাটিতে নিজেকে প্রকাশ করার আধুনিক নামকে যদি অকপট বলা হয়, নিশ্চয়ই সেটা অত্যুক্তি হবেনা। নেই এর দুনিয়া, যেখানে একজন মানুষ মানে কতকগুলো সাদা কালো অক্ষরে ছাপা শব্দমালা, প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত, প্রতি সপ্তাহে জুড়ে সেই অক্ষরমালার আদানপ্রদান চলা কয়েকটা বছর জুড়ে। হাসি, ঠাট্টা, আড্ডা, আমোদ, প্রমোদ, আলাপ, প্রলাপ, রাজনীতি, ধর্ম, সামাজিকতা, রাগ, অভিমান, বৈঠকি, সম্মিলনী, চড়ুইভাতি ইত্যাদিতে সাওয়ারি হয়ে শুধুমাত্র নিখাদ বন্ধুত্বের সম্পর্কের উপরে লগ্নি করে সাহিত্য দুনিয়ায় বালি কাঁকড় রূপে আত্মপ্রকাশ করার মাঝে আগামীর ভবিষ্যৎ দিশা খুঁজে নিয়েছে।
অকপট নামটা একসময় ছদ্মনাম হিসাবে স্বয়ং কবিগুরু নিজে ব্যবহার করেছেন, অকপটচন্দ্র ভাস্কর। অকপট মানে ঋজু, অকৃত্রিম, ছলাকলাহীন স্পষ্টভাষ। আজকের কৈতববাদ সর্বস্ব সমাজে সকল কিছুকেই প্রায় পণ্য করে তুলেছে তথাকথিত আধুনিক সমাজ। কিন্তু সাধারণ ছাপোষা খেটে খাওয়া মানুষের দল দিনের শেষে পেটে একটু শান্তি চায়, আর মনে অনন্ত সুখ। অকপট এমন একটা সমাজের স্বপ্ন দেখে যেখানে ঐশ্বর্যের ঝকমারির চেয়ে কুড়িয়ে পাওয়া টুকরো টুকরো খুদকুঁড়োর মুহূর্ত সুখ দিয়ে বোনা একটা স্বস্তির আসিয়ানা বানিয়ে একসাথে বসবাস করার।
আজকের এই দ্রুত গতির জীবনধারাতে অখন্ড অবসর বলে কোনো শব্দগুচ্ছের স্থান নেই, বরং কার্যকরি কর্মমুক্তিই হল হাল নগদ আধুনিকতা। শিক্ষা আনে চেতনা, চেতনা আনে বিপ্লব আর বিপ্লবই আনে মুক্তি। শুধুমাত্র কেতাবি শিক্ষা দিয়ে কাগুজে বাঘ তৈরি করা সম্ভব, একজন চেতনা সম্পন্ন মানুষের প্রয়োজন অকপট শিক্ষাতে দীক্ষিত হওয়া। যার জন্য প্রয়োজন সামাজিক শিক্ষা। সমাজের নানান ধরনের মানুষের সংস্পর্শে এসে দৈনন্দিন অভিজ্ঞতাগুলো ভাগ করে নেওয়া। কিন্তু বাড়ি বাড়ি গিয়ে তেমন মানুষদের সাথ পাওয়া তো আর চাইলেই পাওয়া যায়না; অতএব মুশকিল আসান হল তাদের ভাবনাগুচ্ছের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া সেই ভাবনার লিখিত রূপে ডুব দিয়ে। সেটা যদি হয় কাব্যিক ভাষার মোড়কে অবশ্যই সেটাকে অকপট আস্তানা বলা যায়।
এটাই অকপট।
লক্ষ্য
****
আমরা সবার আগে মানুষ, তাই সামাজিক রীতিতে গোষ্ঠীবদ্ধ। সেই সূত্রেই আমরা সবার আগে বাঙালী, তার পরে যাবতীয় সকল পরিচয়, এটাই অকপট বিশ্বাস। আমরা বিশ্বাস করি একটা পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে, পরিবর্তনে বিশ্বাস রাখাটাই অকপটুতা তথা আধুনিকতা। স্থবিরতা কখনই অকপটের পরিচয় বহন করতে পারেনা, সময়ের দাবীকে মান্যতা দিয়ে জ্ঞান, বিজ্ঞান, ধর্ম, রাজনীতি সহ গোটা সভ্যতাকে জনগণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে প্রভাব সৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করাটাই আমাদের প্রাথমিক ও অকপট লক্ষ্য।
সামাজিক সংস্কারের লক্ষ্যে সর্বদা একটা নিঃশব্দ বিপ্লবের অদৃশ্য ফল্গুধারা সমাজেরই মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে। যেখানে যদি সমাজের সকল স্তরের মানুষের ভাবনার মেলবন্ধন ঘটে, তবেই তা ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করতে সক্ষম। সভ্যতার সমোয়োযোগী জরুরী সংস্কারের লক্ষ্যে প্রয়োজন, সমাজের মধ্যে শত শত অনুসমাজের নিজস্ব মতাদর্শগুলোকে একটা সাধারণ লক্ষ্যে বেঁধে অগ্রসর হওয়া। অকপট বিশ্বাস করে ‘আমরা’ প্রত্যেকে স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে ওই সংস্কারের পতাকা বহন করার শক্তি ধারণ করি তথা অঙ্গীকারবদ্ধ। বার্ট্রান্ড রাসেলের একটা একটা বিখ্যাত উক্তি -“আমি আমার বিশ্বাস নিয়ে মরতে চাইনা”; অকপটও সেই ভাবধারাতেই সম্পৃক্ত। সৎ ভাবনাকে বিশ্বাসের পর্যায়ে উন্নিতকরণ ও তার ক্রমঅনুশীলনের জন্য প্রয়োজন মঞ্চ। নিয়মিত আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কর্মসূচী গ্রহন ও রূপায়নের মধ্যেই সফলতার আসল চাবিকাঠি, আর অকপট সেই মঞ্চ প্রদান করতে বদ্ধপরিকর, যেখানে গঠনমূলক সমালোচোনার উপরে ভিত্তি করে পৃথক ভাবনাগুচ্ছর পরিস্ফুটন হবে, পারস্পরিক আলাপ আলোচোনার মাধ্যমে। যার উপরেই অকপট উদ্যোমী পদক্ষেপের বুনিয়াদি ভূমি প্রস্তুত হবে।
দর্শন
****
গভীর জীবনবোধের সাথে প্রকৃত শিক্ষার সঙ্গমই, সুচিন্তার অধিকারী সম্পন্ন ও নিরীক্ষণ ক্ষমতাপূর্ণ দর্শনবোধ জাগ্রত করে। দুটি মানুষের ফারাক আসলে তাদের দর্শনে। যে দর্শন তাদের ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের পাঁচটি অকপট দর্শন-
১) স্বেচ্ছাসেবক – মানবসম্পদের চেয়ে বড় সম্পদ আর কিছু হতে পারেনা। একাগ্র, কর্মদক্ষ, সৎ ও সাহসী স্বেচ্ছাসেবার মধ্যে দিয়ে একটি দিনের সময়কে বহু দীর্ঘায়িত করা সম্ভব বৃহত্তর পরিসরে, যা কল্যাণকর কর্মের মধ্যে দিয়ে নিজেদের মেধা ও প্রতিভার ছাপ রাখবে।
২) অপরাজেয়ঃ- নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, গঠনমূলক সমালোচনা এবং প্রগতিশীল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে নিজেদের অপরাজেয় হিসাবে তুলে ধরা, যেখানে প্রত্যেকের জয় অন্যজন উপভোগ করবে ও পরাজয় থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে।
৩) অসাধারনত্বঃ- দ্বন্দ্বের সাথে চির সখ্যতা বজায় রেখে, যেকোনো প্রকার গঠনমূলক কর্মে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ।
৪) উত্তরাধিকারঃ- সফল মানুষদের সৎ কর্মধারা ও জীবনবোধকে নিজের মধ্যে গ্রহণ করা ও ভবিষ্যৎকে একটি সদুপায়ী সুচিন্তাধারার বিশ্বাসী সমাজ উপহার দেওয়া উত্তারিকার স্বরূপ।
৫) জবাবদিহিতাঃ- আমরা আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে অনুসরণ করে নিজের কাছে জবাবদিহি করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
No comments:
Post a Comment