Saturday, 28 October 2017

।। আত্মকথা ।।

শুরুটা কিভাবে করা যায় সেটা ভাবতে গিয়ে একটু ছ্যাকা খেলাম। তবুও ভাবলাম যদি না দিই এই ট্রেন্ডে, সমাজ কি আমায় মেনে নেবে!
ইতিহাস বলে কোনো এক ঘোষ অমাবস্যা তিথিতে 'তুকুড়ি' লগ্নে জন্ম। তার পর বাকিরা যা যা করে আমিও তেমনটাই করেছি। ফারাকটা হল তখন, যখন সকলের বাল দশা ঘুচে বোধি প্রাপ্ত হয়ে উঠল, আমি সেই আবাল দশাতেই রয়ে গেলাম। জন্মের পর দিদা মুখে গুঁড়ো বাতাসার পরিবর্তে সম্ভবত ভুল করে গ্যামাক্সিন দিয়েছিলেন, তাই কথাবার্তাতে কোনো তার শোয়াদ নেই। গরীবের সংসারে মধু না থাকার প্রত্যক্ষ কারন।
এর পরও অন্যদের অনুকরণ ও অনুসরণ করে বাকিরা যেমনটি যেমনটি করে ইশকুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যায়য়ের গণ্ডি টপকেছে আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
ছোট বেলায় ইচ্ছা ছিল বাবা হব, কারন জানিনা, পরে বাবা হবার কারন হব এমন ভাবনাতে স্টে করেছিলাম।
আমি ছবি আঁকতে পারিনা, গান গাইতে পারিনা, মদ খাইনা, মামনি বাজিতে পাত্তা পাইনা। কবিতা আসেনা, গল্পে গরু গাছে তুলে ফেলি, প্রবন্ধের পাঠক কবন্ধেরা। তবে টেরাই মারি, পিসির মত সব কিছুতেই। ঝাড়ি মারিনা কারন ভুলে যাওয়া রোগ আছে, পরে নিশ্চিত ধরা খেয়ে যাব। আমি পোষ্ট পড়ি কম, মন্তব্য বেশি পড়ি। আমার মতে ওখানেই বেশি মনিমানিক্য থাকে ফেবু পাড়াতে। চায়ের দোকানে বসে নাসা থেকে আমাশা, যে কোনো বিষয়ে মতামত দিতে পারদর্শী , যেমনটি বাঙালিরা দেয়। উৎসব দঙ্গলে হেদিয়ে পরি, বই পাড়াতে উদাস সাজি, বিডন স্ট্রিটে সবজান্তা।
ঘরের খেয়ে বনের মোষ তারানোটাই একমাত্র পোর্টফোলিও।
বিদঘুটে নাম, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির সাথে সাযুস্য হলেও; আদতে কিন্তু সেই দুর্বল স্পেনীয় বীর্যজাতই। আদ্যোপান্ত মাছেভাতে বাঙালী, কড়ে আঙুল দিয়ে নাক খুঁটি, গঙ্গা স্নানে গেলে হিসি পায়ই পায়, দুপুরে ভাতঘুম আছে, পরকীয়া দেখতে শুনতে ও করতে হেব্বি এন্থু পায়। স্ট্যাটাসকে কাব্য ভাবি, যাদপুরকে বিপ্লব। ভ্রমণ মানে পুরী- দার্জিলিং-পুরী এই ট্রায়ো। আরং এ নাচি, ল্যাদ খেয়ে বাঁচি। সেক্সো কবির রোমিও থেকে, ট্রেনের কামরার হোমিও, ডি কে লোধের পোষ্টার থেকে চটি সব পড়ি। এর মাঝে জীবনানন্দ, সুনীল, গুরুদেব, সুকুমারী, হুমায়ূন যা আছে পেলেই পড়ি।
মা চেয়েছিলেন ছেলে মানুষ হোক, বাবার চাহিদা ছিল মুনিষ। মাঝামাঝি তকাই, বিস্কুট হয়ে লটকাচ্ছি এদিকে ২৬ ওদিকে ২৬ নিয়ে। পেশাতে ব্যাবসায়ী, নেশাতে 'ইয়ে'।
এই নিয়েই রসেবসেতে কেটে যাচ্ছে দিন।
সাথের সেলফিটা দিলাম। উন্মাদের ছবি যখন তখন সেরা উন্মাদের ছবিটাই বেষ্ট।

Wednesday, 25 October 2017

।। সীতার বনবাস ।।



তখন গড়িয়াতে মেসে থাকি আমরা ১১ জন মিলে। ৫ জন ক্লাসমেট, তাই এক সাথেই যাতায়াত করতাম বা যাবতীয় রুটিন প্রায় একই ছিল। একজন কাজের মাসি ছিল, কিন্তু তিনি শুধুই ঘর মোছা, থালা ধোয়া আর কেটে-বেঁটে দিয়ে যেতেন। রান্না নিজেদেরই করতে হত পালা করে। এক সন্ধ্যাতে আমাদের পাঁচজনের রান্নার পালা, হঠাৎ করে সীতানাথ দা এসে খবর দিল যে; সে প্রেমে পরেছে। এই ধরনের খবর মেস বাড়িতে নতুন কিছু নয়, খাওয়া হাগার মতই রোজকার স্বাভাবিক বিষয় প্রেমে পরা ও ছাড়া। কিন্তু সীতানাথ দা তো আর আমাদের মত কলেজ পড়ুয়া লম্পট ছিলনা, তিনি তখন সদ্য বছর খানেক দীনবন্ধু এন্ড্রুজ কলেজে লেকচারার হিসাবে জয়েন করেছে।

ভীষণ একাগ্র মেধাবী ছেলে ছিলেন সীতাদা, আর তার প্রতি আমাদের সকলের একটা গভীর প্রেম বা অনুরাগ ছিল। কারনটা ততোধিক নচ্ছার। মেসে ওনারই একমাত্র কম্পিউটার ছিল, আর ফি শনিবার তাতে প্রায় হোলনাইট পানু প্রদর্শন হত। আশেপাশের মেস থেকেও সম্মানীয় অতিথিরা তাতে অংশ নিতেন চাট ও বোতল সহ। মেসের মালিক যতীন বিশ্বাস পূর্ববঙ্গীয় মানুষ, মধ্য পঞ্চাশের অকৃতদার। উনিও গলাখাকারি দিয়ে এসে রীতিমত সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করতেন। প্রথম প্রথম চক্ষুলজ্জার খাতিরে ব্যাপারটা হজম না হলেও পরে সয়ে গেছিল। মানে ওই একটা দিন আমাদের সাপ্তাহিক পিকনিক ছিল। আমরা জানতাম সীতাদা স্বমৈথুন করে, পানু দেখে, আর পড়াশোনাও করে। তা বলে প্রেম! হরপ্পা সভ্যতা আমলে বহরমপুরের স্কুলে পড়াকালীন একটা প্রেমিকা ছিল বটে, আজও তার জন্য রোজ কাঁদে এটাই জানি। উল্টে আমরা যারা নিয়ম করে রোজ প্রেমে পরতাম তাদের মধ্যমা প্রদর্শন করত। তাই ওনার প্রেমিকার খোঁজটা আমাদের কাছে বেশ কৌতুহলেরই ছিল।

তো সীতাদা বলে বসল বাচ্চেলোগ, বিড়ি লাওসীতাদা আর বিড়ি! যাই হোক আমার ভাণ্ডারে ভগাদা বিড়ি কখনই অপ্রতুল রাখেনি। সেখান থেকে একটা বিড়ি সীতাদাকে দিতে, তিনি ধরিয়ে টান দিতেই চোখ নাক দিয়ে জল বের হতে শুরু হল। অনভ্যাসের গলা সইতে পারবে কেন! তার পর শুরু হল বিশাল ভণিতা পর্ব, কিন্তু কি হয়েছে আর বলেনা। পাবলিক উসখুক করছে, এই পর্ব শেষ হয়ে কখন আসল শো শুরু হবে। ধৈর্য নিয়ে বসে আছে, কিন্তু সীতাদা ভাবছে তাঁরা বোধহয় তার প্রেমের গল্পেই মশগুল। শেষে যখন আজ আর পানুশো হবেনা ভেবে, খাওয়া দাওয়া সেরে যে যার মত শুয়ে যাবার উপক্রম করছে; সীতাদা বুঝল পাবলিক আকর্ষন হারিয়েছে। তখন আবার তোড়জোড়ে দ্বিতীয় কনক্লুসন পার্টের ঝাঁপি খুলে বসল।

বিশদে সে অনেক কথা, কিন্তু চুম্বকে যেটা জানা গেল, উনি যে মেয়েটির প্রেমে পড়েছে সেটি পুলিসের মেয়ে, তারই কলেজের তথা ক্লাসের ছাত্রী। তাই ভয়ে তাকে বলা তো দুরঅস্ত ভাবলেই যেন ক্লীব হয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি দলেই একটা হোৎকা টাইপের হুপোমার্কা বন্ধু থাকে, যারা সবেতেই হ্যাঁ বলে। যথারীতি বাবাই বলে বসল, চলো গুরু তুলে আনব। কারন এর আগে এমনই এক-দুটো কেসে সাফল্য এসেছিল তাই ঝাঁপিয়ে পরতে দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়নি। শো শুরুর আগেই পলিটবুর‍্যোর মিটিং বসল, পরদিন রবিবার। অতএব কালই হোক, অভিযানের নেশাতে দুম করে বাবাই এর প্রস্তাব লুফে নিলাম। ৬ জন বাড়ি চলে যাবে পরদিন, সীতাদা বাদে বাকি থাকবে চার। আমি, বাবাই, পার্থ, প্রদীপ। ঠিক হল আমরাই প্রস্তাব নিয়ে মেয়ের বাড়ি যাব, চরৈবেতি।

পর দিন সকাল থেকেই চরম বৃষ্টি, সে কি ভীষণ জোশ সহ বেড়িয়ে ষ্টেশনে এলাম। মেয়ের বাড়ি বালিগঞ্জের এলিট পাড়ায়। সারারাত বৃষ্টিতে বাস ট্যাক্সি প্রায় নেই, শেয়ালদা ষ্টেশনে জল জমে ট্রেন চলাচলও সেই সময় বন্ধ। তখন আমরা ট্যোটাল বিপ্লবী মুডে, এই সব অবরোধ থোড়াই কেয়ার। হেঁটেই পৌছালাম বালিগঞ্জ ষ্টেশনে রেললাইন ধরে ধরে। এড্রেস চিনে চিনে ঠিক বাড়ির সামনে পৌঁছে কলিং বেল টিপতেই একজন পরিচারিকা এসে দরজা খুলে দিল।

- কাকে চাই
- সাহা বাবু বাড়িতে আছেন?
- আছেন, কি বলব?
- বলুন খুব গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে কথা আছে।

খানিকক্ষণ পর সেই পরিচারিকা আমাদের ভিতরের বসার ঘরে বসিয়ে রেখে আরো অন্তঃপুরে চলে গেলেন। ফ্যান চলছিল, বাইরে বৃষ্টিটা বেশ জোরের সাথেই আবার এলো তাই ঠান্ডা লাগতে শুরু করেদিল। আসলে আমরা প্রায় চার জনেই কাকভেজা অবস্থাতে ছিলাম। দেখি মধ্য বয়স্ক এক ভদ্রলোক এলেন, দেখেই মনে নয় যেন কোষ্ঠকাঠিন্যের পেসেন্ট। খেকুশে মার্কা চেহারা, মেজাজ তিরিক্ষে হয়েই আছে। ৪০-৪৫ এর মধ্যের বয়স, দশাসই চেহারা। ইনিই যে সেই পুলিস বুঝিনি, পরে নিজেই নিজেকে এড্রেস করতে বুঝলাম। সটান আমি শুধালাম

- অনিন্দিতা আপনার আত্মিয়া?
- হ্যাঁ, বলুন কি বিষয়ে এসেছেন!
- আমরা একটা গুরুত্বপূর্ন প্রস্তাব নিয়ে এসেছি
- কি বিষয়ে সেটাই তো শুধাচ্ছি? কি করো তোমরা?
- সেটা না জালনলেও চলবে- প্রদীপ দীপ্ত ভঙ্গীতে জবাব দিল।
- বুঝলাম, কি বিষয়ে বলুন, আমিই ওর লিগাল গার্জেন
- আগে ওকে ডাকুন, সামনাসামনি ছাড়া কথা বলা যাবেনা- বাবাই বেশ জোরের সাথে কথাকটা বলল
- অনি.........

একটা ভীষণ গোলগাল মোটাসোটা ও স্কার্ট পরিহিতা মেয়ে প্রায় গড়াতে গড়াতে সসামনে এলো। চোখের ফিতে দিয়ে ৫-৬ বার মাপলাম পা থেকে মাথা পর্যন্ত, নাহ প্রতিবারই পাঁচফুটের নিচেই পরিমাপ দাঁড়ালো। ফোলাফোলা গালের আড়ালে থাকা চাইনিস চোখগুলো দিয়ে কুতুকুতু করে আমাদের দেখতে লাগল। তবে যতই অখাদ্য মত গড়ন হোক, সীতানাথের পছন্দ আমাদের তাতে কি! তার বর্ণনার সাথে হবহু মিল দেখে বুঝলাম এনিই তিনি।

- সীতানাথকে চেনো?- আমি শুধালাম
- কোন সীতা?
- এন্ডুজ কলেজের প্রফেসর সীতানাথ পাল
- হ্যাঁ চিনবনা কেন, আমাদের স্যার তো
- আর বাকিটা? - প্রদীপ শুধালো
- কি বাকিটা?
- এই ছোকরা যা বলবে সোজাভাবে বলো- সেই বয়স্ক ভদ্রলোক রাগত স্বরেই বললেন
- শুনুন, আমরা অনিন্দিতাকে তুলে নিয়ে যেতে এসেছি, তার প্রেমিকের আদেশে। এই জালিম দুনিয়া...
মানে এর পর হিন্দি, বাংলা, ইংলিশ, ও পানু সিনেমার বিভিন্ন ডায়লোগকে একত্রে পাঞ্চ করে একটা নতিদীর্ঘ ভাষণ দিতে শুরু করল। আমরা তাতে মগ্ন হয়ে ছুলাম, শেষ হতেই বুঝলাম সেই ভদ্রলোক আমাদের সামনে নেই। এদিকে অনিন্দিতা রেগে কাইমাই করছে বিচিত্র ভাষাতে। বাইরের দিক থেকে আওয়াজ এলো, “কলেজের নামে তুই এইসব করছিস?”

কানে অনুভব করলাম পালাবার গেটে তালা পরে গেল। যথারীতি ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে পুলিসের জিপ এসে আমাদের তুলে নিয়ে গেল। তারপর? জীবনে প্রথববার লালবাজারের লকাপ দর্শন। আর ক্যালানি!! শুধু পাছাতে, আজও আয়নাতে পাছা দেখলে শিউরে উঠি। পরদিন আমাদের মেসের মালিক ব্যাক্তিগত বন্ড দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে এলেন আমাদের।

আমাদের মামাবাড়ি যাবার খবর মেস পর্যন্ত পৌছাতেই সীতা বনবাস নিয়ে গায়েব হয়ে গেছিল।

পরে তাকে কলেজে গিয়ে একবার শুধিয়েছিলাম- সীতা দা তুমি কি জানতেনা যে অনিন্দিতা পুলিসের মেয়ে নয়, বয়স্ক পুলিসের তরুনী স্ত্রী। আমরা না হয় জোশের বসে প্রায় না থাকা সিঁদুর খেয়াল করিনি ওই অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরে, কিন্তু তুমি?”!

সীতাদার একটাই জবাব ছিল- কম্পিউটারটা আমি আর নিয়ে আসছিনা বুঝলি, তোরা ব্যবহার করতে পারিস

~সমাপ্ত
উন্মাদ হার্মাদ

  

Monday, 23 October 2017

।। কি জানি কেন! ।।

ছোটলোকেদের জন্য ছবিটা নয়, বার্তাটা। যারা কথার আগে পরে ও মাঝে ভিকিরির মত খুচরোটাকার আওয়াজ করে, তারা সম্ভবত চুঁইয়ে পরা বীর্যজাত। কারন ফিনকি দিয়ে নির্গত হত তেজী বীর্যবত্তারা নিজের ক্ষমতা সম্বন্ধে সম্যক ধারণা রাখেন
আর আছেন একশ্রেনীর জারজের দল, যারা সেই পিঁপড়ের দল। চিটেগুড় হোক বা ধ্যারন্ত গু, টাকার গন্ধ থাকলে অটোমেটিক জিভেজল এসে যায়।
দুই সম্প্রদায়ের জন্যই করুণা। এখন মধুমাস, পায়ুমর্দনের সুখ। বীর্য শক্তিশালী হলে গর্ভসঞ্চার হবে পাকস্থলীতে, অন্যথায় অর্শ।
দুটোই তারা জানে যারা সয়েছে, দেখে ও চেখে। সেই পর্যন্ত আমি নির্বাক দর্শক।
হাউই বা তুবরি জ্বলে গেলে খালি খোলটাকে লাথ মেরে ড্রেনে ফেলাটাই দস্তুর। আর ড্রেনজীবিরা ড্রেনে পৌছে মোক্ষলাভ করে।
শিব শম্ভু.....
এক ছিলিম বাবা খায় বরং।

Saturday, 21 October 2017

।। ক্ষুধার বিজ্ঞাপন ।।

কোটরগত কিছু চোখ, কঙ্কালসার দেহ
তাতে অতল কিন্তু নিষ্পাপ চাহনি;
সামনে সাজানো কিছু খাবারের পসরা
চেয়েথাকা লোলুপ দৃষ্টি, সামনে মাহাদানী।
খিদের কাজলে চোখ সাজো সাজো
জঠর পারেনা করতে ফারাক,
কোনটা দয়ার দান, কোনটা উচ্ছিষ্ট
নিকুচি করেছে বিপ্লব, ক্ষুধা নিপাত যাক।
গোগ্রাসে গেলে কন্ঠ, এঁটো হাত অভ্যাসে যায় মুখে;
সন্ধানী দাতা, আপন ডঙ্কা বাজিয়ে
আঁকে অসহায়তার ছবি, এঁটো হাত খুঁজে ফেরে ছুঁতো
বিনিময় সুখের লেনদেন, ইজেল সাজিয়ে।
মুখের স্বাদে মন ভরে, পেটে চেনে শুধু দানা;
খিদের জ্বালা মিটলে, সইতে রাজি
দাতারূপী দানব কুলের ধর্ষকামী হানা।
শরীর তো কোন ছার, গোটা জীবনটাই বাজি।
খেয়ে সুখ! নাকি খাইয়ে? বিবাদ চিরন্তনী
বৃহন্নলার দল খুঁজে ফেরে আত্মরতি
বিজ্ঞাপনে ক্ষুধার সাথে ছবি, ফলাও করে-
আসলে বেশ্যালয়ের সিঁদুরমাখা সতী।

Thursday, 19 October 2017

।। আপনজনে চিঠি ।।

To,
The Admin (কার্যকরী  )
আমার ক্যারেক্টার নিয়ে কোশ্চেন তোলার ঠিকে এখনও যাবৎ কাওকে দিইনি। দিলে ওপেন টেন্ডার ডাকব। ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ নিজ দায়িত্বে স্বয়ং সেবা করতে এলে... চন্দ্রবিন্দুর চাঁদ দর্শন করাবো অমাবস্যা রাত্রে। ওখানে সবটাই ট্রাম্প কার্ড, নো হলুদ সবুজ, আর সেটা এই গ্রুপের বাইরে। অনেক অর্ধচন্দ্র আমার পাল্লায় হাম্বা ডেকেছে, তাই কনফিডেন্স আছে।
কার কি পজিশন জানিনা, আমার টাইমলাইনে মহিলা "ফ্যান ফলোয়িং" না ভুল লিখিনি, ঠিকিই পড়লেন "মহিলা ফ্যান ফলোয়িং" সংখ্যাটা এই গ্রুপের মোট বন্ধু সংখ্যার দ্বিগুনেরও বেশি। যাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রোজ, এই ভার্চুয়ালিই। "মহিলাদের সাথে ব্যাবহার" শীর্ষক ন্যাকামো না করাই উত্তম। অনেকের থেকে "বেশি জানি"।
আমি সেলফিজীবি নই, আহা-উহু কমেন্ট বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী নই, কবি নই, পেন্টার নই, আমার পরিচিতিতে একাডেমিক যোগ্যোতার বিজ্ঞাপন নেই, পেশা পরিচিতি নেই। আক্ষরিক অর্থেই হনু নই, জাতি ধর্ম লিঙ্গ নিয়ে ফলাও করে "সততার প্রতীক" নেই। তার পরেও বেশ কিছু মানুষের স্নেহ ভালবাসা প্রশ্রয় পায়। আগে উন্মাদকে চিনে পরে পিছনের মানুষটাকে সকলে চিনেছেন যারা যানেন আমি কে। তাই আমি অনেক বেশিই জানি "ফেক" নামে কিভাবে টিকে থাকতে হয়। তার জন্য ঠিক কি কি মেনটেন করে চলতে হয়।

Thursday, 12 October 2017

।। প্রসঙ্গ ঋতব্রত ।।

ঋতব্রত নামের ব্যাক্তির সাপোর্টে এই পোষ্ট নয়। নয়, কিন্তু এগুলো প্রকাশের মাধ্যমে কি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা? #নির্ভীক_উত্তর নামের একটা সংবাদ গোষ্ঠী সোশ্যাল মিডিয়াতে দুটো ভিডিও প্রকাশ করেছে।
১) দ্বীতিয় ব্যাক্তির উপস্থিতি নেই।
২) প্রায় প্রত্যেক জনের বন্ধুদের কাছে প্রায় প্রত্যেকেরই এমন পাগলামির ছবি পাওয়া যাবে।
৩) বাচ্চাদের আদর করার সময়ও এমন অঙ্গ বা মুখভঙ্গি খুব খুব স্বাভাবিক। পার্টিতে মস্তিমুডে থাকলে তো কথাই নেই।
৪) বাকি সমগ্র পৃথিবিতে প্রেম বা যৌনতা যারা করেন, করেন তো অবশ্যই। যারা ছিঃ ছিঃ গেল গেল রব তুলছেন সকলের জন্মের কারন Ritabrata Banerjee এর যৌনবিকৃতি নয়। তারা বৌ বা বান্ধবীর কাছে লুঙ্গি বা পাজামা খোলার পর নিশ্চই মন্ত্রোচ্চারণ করে চোখ বুজে ধ্যানস্থ হয়ে যাননা। নাকি বাকিরা সেই ময়ুর থিওরি অনুযায়ী, কাঁদলেই মিলন হয়!
৫) সকল ঘৃণাকারী যিশু সম বরপুত্রদের বাপমায়ের, অপাপবিদ্ধ নিষ্কাম রতিদৃশ্য কল্পনা করছি।
৬) অধিকাংশেই বলছেন এটাইটাই CPM। সে কেন সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত? না এটা কারো উত্তর নয়। তাই তাদের বলি, যারা আসল তৃণমূল বা আসল বিজেপি বা আসল অরাজনৈতিক মানুষ বা ফেবু বিপ্লবী। আপনারা একটা পালটা ভিডিও পোষ্ট করে দেখান শুদ্ধ যৌনাচারের নমুনা।
৫) যিনি ছবিটা তুলেছেন, তিনি ফাঁস করবেন এই উদ্দেশ্যেই তুলেছেন। নচেৎ আপনি আমি কি এমন ছবি তুলি?
~চরিত্রহীন উন্মাদ হার্মাদ

Wednesday, 4 October 2017

।। খাস ।।

মুহুর্মুহু বিষের কামড়, বুকে হলুদ শিটে;
মিষ্টি মধুর যন্ত্রনা সুখ, কাটছে পিরিত কীটে।।
সারাটা রাত ভীষণ রমন, শরীর রতিক্লান্ত
নিঙ্গাড়ান বা ফুলেল সজ্জা, সবটাই দুর্দান্ত।।
এক পশলা বমির ভয়ে, ঘাবরে গেলি 'মন"!
লাশটা, তোরই ছোঁয়া খোঁজে -আজও সারাক্ষণ।।
কেন যে তুই হারিয়ে গেলি, আমায় ফেলে একা
শুকনো চোখে স্বপ্ন বাঁচে, মিলবে চোখের দেখা।।
তোর জন্যই দিন গুনছি, বাঁচিয়ে রেখে শ্বাস;
জীবন জুড়ে বর্গা চাষে, নিজের জমিই খাস।।

Tuesday, 3 October 2017

।। উন্মাদ নামা - ৩০ ।।

কার্নিভাল কড়চা
------------------
বেশ কয়েককোটি টাকা দিয়ে দুপাশের মঞ্চসজ্জা হয়েছে। আলোয় ধুয়ে যাচ্ছে রাজপথ, মাস শুরুতেই বাজার থেকে ঋণের টাকা এসে গিয়েছে। ৬৮টা দল সেই ঋণের টাকার দানে পুষ্ট, তারা ৬৮ বার যাবে তাদের দল সহ, সামনে পতাকাবাহী একজন। সামনে রবিঠাকুর থেকে বিবেকানন্দ, পিছনে চর্বিওয়ালা ‘পেটি প্রদর্শিত’ বৌদির দল লাল পাড় সাদা শাড়িতে সজ্জিতা; গলায় ফিতে দিয়ে ঝোলানো বিশ্ববাংলা কার্ড। থুক্কুরি ঝিঙ্কু মামনির দলও আছে, ঋতুপর্ণা আছে, পাহাড়ি সান্যাল নেই পাহাড়ি মানুষ আছেন আংরেজদের সাথে। ছৌ আছে, ক্ষমতালোভী মৌ আছে। ত্রীধারা আছে, সাথে চোরা স্রোত। টেনসনের। সাথে হাতে হাতপাখা, তবে বেদ নেই সোহম আছে, আর আছে সাইকেল, ছাতা, আদিবাসী, বড় স্ত্রীন। নেই এর লিষ্টটা অনেক বড় তাই দিলাম না।
ফ্রেঞ্চকাটে গম্ভীর দাদাবাবু জানেন এটা বাজারী টিভিতে লাইভ চলছে তাই মাঝেমাঝেই হাতটা নেরে দিচ্ছেন। সামনে পিছনে আশেপাশে ক্রমগত ঘোষণা, ইংরাজী ও বাংলা ভাষাতে। নীল সাদা পাঞ্জাবিতে কেন্দুয়ার উদ্যোগতারা ভীষণ উৎফুল্লিত নিজেদের থিম সং এ তাল মিলিয়ে। তবে মূল চমকটা দিয়ে গেছে ৬৪ পল্লী, টুনি লাইট দিয়ে ‘তাঁর’ মুখ। সাথে কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, এমপ্লয়েন্টমেন্ট ব্যাঙ্ক। নজরে যেটা এলোনা সেটার নাম বিদ্যূত ব্যাঙ্ক, আর সবকিছুকে ঘিরে থাকা সেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভিখারি ব্যাঙ্ক।বাউল আসতেই তার মুখের উপরে ফোকাস, সাথের গানটা বাজছে মুকুলের।
'মিলন হবে কত দিনে!'
ধুপ ধুনোতে মাতৃ আরাধনা, মুর্তি ৬৮ টি ই আছে, কিন্তু তিনি ? তার মুর্তী এখনও আসেনি বাজারে তবে ছবি আছে, সেটা ৬৮ এর বেশ কয়েকটা গুনিতকহারে। দেবতাও ভীষণ অসহায়, মর্তের দেবী হিজাব ছেরে হিন্দু হয়েছেন। যদিও সিজিনাল, তাতে কি। ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা উন্মাদের দলের যোগ্য প্রতিদ্বন্ধী। ফুলমালা বেলপাতায় চশমা পরিহিতা তারই কার্নিভাল, একপাশে ফ্রেঞ্চকাট অসুর অন্যপাশে নন্দী-ভৃঙ্গীর মর্ত্য রূপ।
পাঁচু পচাই খেয়ে কার্নিভালের মজা নিতে গেছিল। নববর্ষে টিভেতে ব্রাজিলের কার্নিভ্যাল ভেবে গিয়ে দেখে কোথায় কি!সেই তো তিনোমুল, আর এবারে সত্যিই নিজের ঢাক নিজে পেটাচ্ছে চরাম চরাম করে।
ভুঁড়ো পুলিশ কাকুকে একটা কথা শুধাতেই ঠাস করে ঠ্যাটানো চড় খেয়ে নেশাটাই ছুটে গেল বেচারার।
নিরীহ প্রশ্ন-
“এই কার্নিভাল ও তার সম্প্রচার কি তাপস পাল ও তাদের উত্তরসূরিদের জন্য”?
উৎসব ব্যাঙ্ক।

ফেবু মাহাত্ম্য - ২

টেঁপি সমাচার

আমি আর ইস্কুলে যাবনা মা...
এ কি অলিক্ষুনে কথা, কেন
যাবনা তাই যাবনা
ভয়ঙ্কর চাপে কুলোদারানী দেবী। আর চাপে পরবেই না ই বা কেন! পারুলবাবার মতি সুবিধের ঠেকছে না। রাত্রে কত্তা পুলিন বাবু ঘরে এলে তাকে কথাটা খুলে বতলেই তিনি ঝাঁঝিয়ে উঠলেন।
“আজ পোরজোন্তো কোন সুবিদার কতা আমাকে বলেচো যে আজ সমোসসার কতা কইতে এসেচো? যাও তোমার গুনোধর ভাইকেই ডেকেই বলো” - বলে ‘জড়োয়ার ঝুমকোতে’ মন দিলেন।
কেঁদো মিনসে, মেয়ে যেন আমার একার
সেটা জানিনে, তবে আমার ভূমিকা ছিল কিনা জানিনা...
স্বামী-স্ত্রীর ঝামেলাতে আর ঢুকে লাভ নেই আমাদের

পরেশ মাইতি ইনস্যুরেন্সের দালাল, খাঁটি মেদনীপুরিয়ান হলে বর্তমানে একযুগ ফরাসডাঙাতেই ঘাঁটি গেঁড়ে আছেন। সকালে বোন কুলোদারানীর ফোন পেয়েই সাইকেল হাঁকিয়ে অফিস ফেরতা পরেশ সোজ্জা বোনের বাড়ি।

হ্যাঁ মা পারুল, তা ইশকুলে কি কেউ কিচু বলেচে?
পারুলবালা চুপ করে নখ খুঁটছেআশেপাশে ভাইবোনেরা ছিটিয়ে ছরিয়ে খেলা করছে।
কিচু তো বল মামামাকে বলবিনা তো কাকে বলবি!
ব্যাকগ্রাউন্ডে কুলোদারানীর ফ্যাচ ফ্যাচ করে কান্নার সাবটাইটেল।
পারুল...
আমি যাবনা মানে যাবনা।
আহা , কেনো সেটা তো বল
লতিকা, বাঁশরী, শঙ্করী... – বলতে বলতেই পারুলবালা ফুপিয়ে কেঁদে উঠতেই কুলোদারানী বুকে টেনে আঁচলে নাকের পোঁটা মুছিয়ে দিলেন। এবং দিতেই আবার শুরু করল পারুলবালা
আমার মান সম্মান কি কিছু নেই মামা
আলবাত আছে, কোন শুয়োরের বাচ্চা কি করেছে বল

এই কথাতেই চিৎকার করে ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠল পঞ্চদশী পারুলবালা, সাথে মেয়ের কাঁদন দেখে কুলোদারানী ও বাকি চুনো বাটখারা গুলোও “ ও বাবাগো আমার কি হবে গো” বলে গেয়ে উঠল। আশেপাশের পড়শি বাড়ির জানালা ফাঁক হল বটে কিন্তু তারা মা-মেয়ের যুগলবন্দী চণ্ডীরূপ সম্বন্ধে ভীষণ ভাবে ওয়াকিবহাল, তাই ওই ফাঁক টুকু দিয়েই মজা নেওয়া।
“আমি জানতাম এমনটাই কিছু হবে, যেখানে মায়ের শাসন নেই সেখানে ভালটা হয় কি করে”- ক্লান্ত পুলিন বিহারী অফিস থেকে ফিরে ফ্যানটা ফুল স্পিডে খুলে সিলিং এর দিকে তাকিয়েই বলে ফেল্লো কথা কটা।
অন্য সময় হলে ঝাঁ ঝাঁ করে উঠত কুলোদারানী, এখন কান্না মোড থেকে চণ্ডী মুডে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন না।
বল পারু, বিষয়টা তোর মা-মামাকে বল। আমি বাতরুম থেকে শুনচি
“সারাজীবনটা খেয়ে, হেগে আর টিভি খবরের কাগচেই কাটিয়ে দিল মরণটা” – কেন কেন কেন! কেন বিয়ে দিয়েছিলি দাদা এই অনামুকোর সাথে
পারুল বুঝলো তার সাসপেন্সের চোটে সে আজও গুরুত্বহীন হয়ে যাবে, জেঁকে বসবে বাপ মায়ের রোজকার কুকুর কেত্তন। রিস্ক না নিয়ে বলে ফেললো-  
আমাকে মা কালীর বাচ্চা বলেচে। ওদের সবার ছেলে বন্ধু আছে, আমারও মদনকে পচন্দ। কিন্তু সে বল্লো আয়নাতে মুক দেকে আয় কামিনী ...

আরো অনেক কথাবার্তা বেশ কয়েকদিন ধরে হয়েছিল। যার মধ্যের মোদ্দা কথাটা হল, পারুলবালাকে কোনো ছেলে ঘাস দেওয়া তো দুরস্থান ফিরেও তাকায় না। পারুল চায় তাকে দেখেও ছেলে পিলের দল সিটি মারুক, চোখ মারুক, আড়াল আবডাল খুঁজে কারনে অকারণে একটু ছুঁয়ে দিক যেখানে যেখানে ছোঁয়া মানাএ সকল কিছু হয়না বলেই তার যার পর নাই কষ্ট। অথচ লতিকার ভরন্ত শরীর দেখে ছেলের দল গোয়ালার গাই বলে ডাকে, শাড়ি পরে স্কুলে যাবার সময় আদুরীর খোলা পেট দেখে ‘চিতলের পেটি’ বলে ছেলেরা তারাই বাঁশরীর স্নিগ্ধ রূপের জন্য মা দুর্গার সাথে তুলনা করে। আর সেখানে পারুলবালাকে ছেলে বুড়ো নির্বিশেষে সবাই টেঁপি বলে ডাকে, এমনকি মেয়েরাও; তাও প্রকাশ্যে। এই দুঃখ সে রাখে কোথায়! সে ও ‘টিজ” হতে চাই।

লাগাতার ডিপ্রেশনের ধাক্কায় বারোক্লাস টপকে আর কলেজে যাওয়া হলনা চার বারের চেষ্টার পরেও। ঘরে তার পরে আরো ২টে বোন ২ টো ভাই আছে। এবার বড় মেয়ের বিয়ের তোরজোর শুরু করলেন পুলিন-পরেশ জুটি। মাস ছয়েকের মধ্যে নিরাশ হয়ে গেলেন, এবং বছর তিনেকের মধ্যে ক্লান্ত। অষ্টম বছরের মধ্যে বাকি বোনেদের হাত হলুদ হল। পুলিন বাবু উদাসীন হলেও, বোনের চাপে তখনও শেষ চেষ্টা চালাচ্ছিলেন পরেশ

জিতেন রাজবংশী কোচবিহারের মানুষ, বদলির চাকরিতে হুগলীর এই প্রান্তে এসেছেন। ভুমি ও রাজস্ব দপ্তর। পরেশ বাবু বিমা বেচতে গিয়ে ক্রমে আবিষ্কার করলেন জিতেন অবিবাহিত। ব্যাস, লাগ ভেল্কি লাগ। মাঝে অনেক ঘটনা ঘটেছিল ইত্যাদি ইত্যাদি ও ইত্যাদি। ৭ মাসের মধ্যেই মিস টেঁপি, মিসেস রাজবংশী হয়ে গেলেন। দুপক্ষই অনেক কিছু লুকিয়েছিল। বাড়ির ইলেকট্রিক ফল্ট বলে প্রায় অন্ধকারে পারুলকে দেখিয়েছিল পাকা দেখাতেজিতেন পারুলের মায়ের থেকে বছর খানেকের বড় হলেও নিজেরাই শুনতে চাইনি কন্যাপক্ষ, শোনার আংটি আবার বাঁকা।

অভাগা যেদিকে যায়, সাগর শুকায়ে যায়। শত ভায়াগ্রাতেও এক বুন্দ জিন্দেগিকি ঝড়লনা, নায়াগ্রা শুকানো। বিয়ের পরে না জুটোলো স্বামীসুখ না দেওরশুধু টাকা এলো হাতে পদবীর সাথে সাথে।

রয়ে গেল অক্ষত কুমারিত্ব।

১৫ বছর অতিক্রান্ত, মোনোপজ পারুলবালা ফেসবুকে এসেছেন বেশ কিছু দিন হল। নাম “আমিই সেই পারু”, ডিপিতে শরৎচন্দ্র। প্রথমে কমেন্ট করতেন এখন টুকটাক লেখেনও বটে, যেমনটি দেখেন। হাত আর কল্পনা নেহাত মন্দ না। কিন্তু এর পর তিনি পেয়ে গেলেন সেলফি ক্যাম –B16প্রথমটা নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলনা, এটা কে? এতো সুন্দরী সে? ফর্সা, কোঁকড়ানো চুল, গোলাপি ঠোঁট, দীঘল কালো চোখ, গালে রুজ এফেক্ট, সাথে টোনড ফেস। আর কি চাই!  আয়না দেখা সেই কবে ছেরে দিয়েছছিলএকটা লেখার সাথে সেই ছবিটা ছেরে দিতেই, লেখা বিষয়বস্তু ভুলে ফেবু ভাষায় প্রশংসার ঝড়। অসাধারন , অনবদ্য, অপূর্ব, সৌন্দ্ররযের সংজ্ঞা, মোহময়ী ব্লা ব্লা ব্লা। এভাবেই দিন কাটছিল, তাল কাটল ফেবুদলের সাথে এপো টেপোতেও মাঝে মধ্যে যাওয়া শুরু করাতেসামনা সামনি দেখে গ্রুপের সুজন একবার বলেই বসল –“মাসি, ওটা কি আপনার যুবক বয়সের ছবি?” দাঁতে দাঁত চেপে পারুলবালা বলল- “ছোট বেলায় এক ভয়ঙ্কর এক্সিডেন্টে আমায় মুখে পাছার চামড়া লাগানো হয়েছিল, তাতেই মুখটা এমন বেহদ্দ হয়ে গেছেনচেৎ আমি হেব্বি সুন্দরী”এই পর্যন্ত ঠিকিই ছিল, মাসিটাও সহ্য করে নিয়েছিল। কিন তু রাত্রে একটা পোষ্টে খোকন লিখল টেঁপিদি কেমন আছো ব্যাস... বাকিটা ইতিহাস।  

__________________
নির্যাসঃ অতৃপ্ত নারী আত্মা, যাদেরকে পাড়ার নেড়িটা পর্যন্ত ছুঁয়ে দেখেনি কোনো দিন। মাতালের দল মাল খেয়ে বাওয়াল বাজি করতে গিয়ে শেষে মালের নেশাই কেটে গেছে যাদের রূপেরচ্ছটায়, সেই সকল অতৃপ্ত চিরকুমারীরা পূর্বে বৃন্দাবনে যেতেন বালকৃষ্ণের খোঁজে। একটিবার তো কেউ তাদের কুমারিত্ব হরন করুক, এখন ফেসবুকে মীরাবাই সেজে রমন খোঁজেন।      


...ক্রমশ 

Monday, 2 October 2017

ফেবু মাহাত্ম্য - ১


মাঝে মাঝে ভাবি এই ভিসুয়াল দুনিয়াটা না থাকলে কিছু জনের কি গতি হত... ইয়ে, মানে আমিও তার বাইরে নয়। তবুও চোখ আছে তাই দেখি, কান আছে তাই শুনি, আর কাজ নেই তাই ভাবি। কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন পুরাতন প্রবাদ, বরং নতুন কিছুর সন্ধান করা যাক। তো সেই মোতাবেক পুজোর ছুটিতে ল্যাদ খেয়ে সময় সারণী বেয়ে বিজয়ার মিষ্টি, অষ্টমীর ভোগ, সপ্তমীর সেলফি, ষষ্ঠীর বৃষ্টি, তারও আগে মহরমের তাজিয়া ও বিসর্জনের কাজিয়ার পোষ্ট গুলোকে ড্রিবল করে খোঁজ পেতে কম বেগ পেতে হয়নি।

ছেনা
-----

ভালনাম হরিসাধন গুঁই। তা বাপের বহু টাকা ধ্বংশে বহু গুঁইগাই করে কোনো মতে মাধ্যমিকটা দিয়েই ছেনা বাবুর হেব্বি বিয়ে পেছিল। তো যেমন ভাবা তেমন কাজ। মোদক বাড়ির বড়াইও তখন সে পাড়ায় রীতিমত সিগনালিং এর টাওয়ার বসিয়েছে, পাড়া বেপাড়ার ছেলেদের ভিড় বড়াইয়ের বাপের তেলেভাজার দোকানে। বড়াই ঘুটে দেয় কোমরে ওড়না জরিয়ে, বাড়ির সামনের পুকুরে কাপড় কাচে ভিজে নাইটি গায়ে। সুষ্পষ্ট বক্ষ বিভাজিকা , কিঞ্চিৎ দৃশ্যমানও বটে অতএব পাড়ার চুম্বক সাধন মোদকের তেলেভাজার দোকাান। ছেনাও সাইকেল নিয়ে জোলা পাড়ার মফির সাথে গিয়ে প্রথম বার বড়াই কে দেখে। হতেই পারে বড়াই এর কুঁতো কুঁতো চোখ, শীল পানা গাঁয়ের রং। ছেনাই বা কি! জন্ডিস হয়েছিল বলে পাকা বেলের মত মাঝে একবার রঙ ধরেছিল, বাকিটা তো সেই ড্রেনে ভাসা মড়া ছুচোর মতই।

বাঙালী ছেলে আচলের নিচেই পৌরুষত্ব খুঁজে পায়। বড়াই কে দেখে ছেনার হৃদয় ট্রেনের মত হুইসেল দিতে পাগল। অমন ডাবকা মালকে না পেলেই শালা জীবনই বেকার, একথা মফিকে বলেই দিল। ২-৪ দিন আশেপাশে ফিল্ডিং করার সময় ছেনার হাবভাব চোখমুখ দেখে বিষয়ী সাধন তক্কেতক্কে থেকে একদিন বলে উঠলেন- "এই ছেলে তুই ভজা দালালের ছেলে না?" । ভজা মানে ভজন গুঁই ছেনার বাপ, জমি কেনাবেচার দালালি করে, সাথে আছে তেজারুতির ব্যাবসা। আর তারই একমাত্র গুনধর ছেলে ছেনা। এমন ছেলে হাতছারা করা অপরাধ সেটা সাধন জানে।অতএব তাকে ডেকেডুকে কদিন এমন চপ ও ঢপ খাওয়ালো যে হেগেমুতে বমি হয়ে এক সপ্তাহ বিছানাতে।

ফলত বড়াই ছানা নিয়ে ছেনাকে দেখতে এল তার মায়ের সাথে, ছেনাদের বাড়ি। সেই ফাঁকেই ছেনা বাপকে মনের কথাটা ঝুপ করে বলে দিল-
-' বাবা আমি দিদিকে বিয়ে করব' 
-বাঞ্চোত ছেলে বলে কি! দিদি বলছিস আবার একে করবি বিয়ে? তুই ওর হাটুর বয়সী মদন
-তাতে কি! তুমিও তো আমার থেকে বড়। তা বলে কি বাবা বলিনি? 
-ওরে শুয়োর, বাপ হলে তো বড় হবোই। দেশে আর মেয়ে নেই?
- অতশত জানিনা, আমি ওকেই বে করব। মা............
-"কেন!! কচি ছেলেটা একটা বায়নাক্কা করেছে আর আপনি তার মনে কষ্ট দিচ্ছেন? আপনি বাপ না সাপ। তাছারা কি বা আমার কমতি আছে?" - বড়াই ফোঁস করে উঠে।

কমতি কিছুই ছিলনা তার এটা সত্য, বয়সেও দেড় কুড়ি। চর্বি প্রয়োজনের তুলনায় ৩-৪ গুণ বেশি, রং পাকা ও নিরেট। সেই মানানে বুদ্ধিও। তার নামে বেশ কিছু জমিজমাও আছে বিলের মাঠে। অতএব...

২৯ এর বড়াই এর সাথে ১৬ এর ছেনার বিয়ে হয়ে গেল। আর ১১ তম মাসেই বড়াই এর উর্বর জমিতে ফসল ফলে গেল। উন্নজ বীজ ও উন্নত জমি, পরবর্তী ৭ বছরে আর চারটে ফসলের পর তেজী বড়াই এর শরীর ভাঙতে ডাক্তারের কাজে গেল এবং বড়াই থলে কেটে এলো। এবারে যতই স্প্রে হোক, মুচি আর বাধবেনা।

ধীরে ধীরে বড়াই ৫ টি আন্ডাবাচ্চা নিয়ে ব্যাস্ত, থুরি ৬ টা হবে। ছেনা নিজেও তো সবে ২৬। ওদিকে বছর যায়, বড়াই এর আঁচ নিভু নিভু প্রায়। আর বাপমরা ছেনা ব্যাবসা দেখে বৌ এর কড়া নজরে ও শাসনে, আর ১০ ঘড়া ইঞ্জিন নিয়ে মাঠে ঘাটে হ্যান্ডেল মারে।

অবশেষে একদিন এলো ফেসবুক, মানে ছেনার জীবনে। গতবছর পল্টুর বিয়েতে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে একটা কোট দিয়েছিল, সেটা পড়ে ছেনার একটা ছবি আছে। প্রথমে হরিসাধন নামে কালী দু্গগা শনি ঠাকুরের ছবি শেয়ার করত। একবার মোবাইলের ফ্রন্ট ক্যামেরা দিয়ে দেখে নাকের ময়লা সাফ করছিল, সেই ছবিটাই উঠে যেতে সে ফেসবুকে ছেরে দিল। ব্যাস ওই একটা ছবিই ছেনা কে ফেমাস করে দিল। পাবলিক ধরতেই পারলনা কিসে ছবি, প্রশংসার বন্যাতে ছেনা রসগোল্লা হয়ে গেল।


ছেনা ফেম বুঝল, সেই কোট পোড়া ছবিটা দিয়ে ডিপি বানালো, সাথে নাম পরিবর্তন করে রাখল হ্যারি জি। হরিসাধন গুই এর ফেবু ভার্সন, এবাউটে ফটোগ্রাফার ও প্রাইভেট ফাইনান্সার। ব্যাস এর পর একটা DSLR কিনে তাতে পরমানু বোম থেকে বগলের লোম যা পেত যেখানে পেত সেই ছবিই ফেবুতে দিয়ে আজ তার সাড়ে ছশো ফলোয়ার। আর কমেন্ট করে শুধু নির্বাচির মামনিদের পোষ্টে, ইনবক্সে নৈব নৈব চ। মাধ্যমিকের জ্ঞানে দানবাক্স ভরেনা তো ইনবক্স কোত্থেকে ভরবে! তাতে নিজেকে অত্যন্ত ভদ্র হিসাবে বাজারে প্রতিষ্টিত হতে সাহায্য করল।
______________
নির্যাসঃ ঘরে জাঁদরেল বিগত যৌবনা ঝাঁঝালো বৌ। অগত্যা ফেসবুকে এসে কচি মেয়েদের কমেন্টের মাঝে রমন সুখ খোঁজা। কিভাবে? যেভাবে আপনি আমি পানু দেখে স্খলন করি ঠিক সেই ভাবে। ফেবু না থাকলে ৩০ টাকায় ঘন্টা খুজতো কোনো অন্ধকার গলিতে, এখন ফেসবুক করে।

...ক্রমশ