ধান্দাসে বড়া কোই ধরম নেহি হোতা...
এটাই চুম্বকে রইস সিনেমার সারবত্তা।
কি রকম দাঁড়ালো তাহলে ব্যাপারটা? আসলে এখানে সেটা দেখানো হয়েছে সেটাকেই কাঁঠালের আমসত্ব বলা হয়।
বহু অভাবী তৃতীয় বিশ্বের আর পাঁচটা মফঃস্বলের
মত গরীব মানুষের বস্তি, পেটের টানে সেই অন্ধকারের অন্ধগলিতে মাথা
খুঁটে মরা। গুজরাটের কোন একটা মুসলিম অধ্যুষিত মহল্লা, যেখানে অবৈধ দেশী মদের কারবার। মোটামুটি এটাই কাহিনীর শুরু ও একে কেন্দ্র করে
আবর্তিত ঘটনাপঞ্জী। আর পাঁচটা বলিউডি মশালা সিনেমার সাথে যার কোন ফারাক নেই। সেই
একটা গান বা পলকেই দুম করে নায়কের বড় হয়ে যাওয়া,
তারপর শুরু
হিরোগিরি। কিছু অতিমানবিক স্ট্যান্ট,
হিরোর হিরোইজম
থুরি শাহরুখইজম, এবং একদা দুষ্কৃতী তথা রাজনীতিতে নেমে
পাপস্খলন ও একটা শুটআউট। শেষে সেই মৃত্যুটাকে একটা আত্মত্যাগের মতন করে পরিবেশনা।
ব্যাস,
সিনেমা
এইটুকুই। তবে যেটা পাওনা সেটা হল গান। অরিজিতের গলায় “ ...ও জালিমা...” গানটা সেই থেকেই কানে সমানে বেজে চলেছে। বাকি
সবটার কিছু কাহিনীর দাবি মেনে, কিছু মশালার দাবী মেনে, একআধটা এক্কেবারেই অপ্রয়োজনীয়,
সানি মামনির
মতই।
কাঁঠালের আমসত্বটা তাহলে কোথায়? মিডিয়ার দৌলতে সকলেই জানে এই রইস নামের চরিত্রটা আসলে গুজরাটের মাফিয়া
দুষ্কৃতী তথা তৎকালীন অবৈধ চোলাই ব্যারন আব্দুল লতিফের আদলে গড়া। আমরা পাবলিক তেমন
কিছুই জানি কি এই ব্যাক্তিটির বিষয়ে,
কিন্তু রইসের
সুত্রেই আবার লোকমুখে। যেমনটা দেখালো,
একটা মানুষ যে
যাবতীয় অপকর্ম করেন, তবুও মহান। মুসলমান অধ্যুষিত মহল্লা, কিন্তু সকলেই প্রায় মদ ব্যাবসার সাথে যুক্ত,
যদিও ওই
ধর্মবাদের হিসাবে মদ তাদের জন্য নিষিদ্ধ ও গর্হিত পাপকার্য, তারা খান ড্রেস পরে, নাচাগানা করে,
সেখানে মহরম
ছাড়া আর কোন উৎসবও হয়না। সবটাই মুসলমান কালচার,
অবশ্য ৯৩ এ
বিস্ফোরণের পর্যায়টি পর্দায় আসার পর রইসকে দিয়ে একটা সম্প্রীতির বানীও বলিয়ে নেওয়া
হয়েছে। পুলিশের চরিত্রটির মদে এলার্জি রয়েছে বোঝা গেল, কিন্তু তার রইসের সাথে শত্রুতাটা ঠিক ওই পর্যায়ে কেন গেল, সেটা ব্যোমকেশ বক্সীরও উন্মোচনের অসাধ্য।
শাহরুখের অভিনয় নিয়ে কারো কিছু বলার থাকতে
পারেনা, আমি তো কোন ফুটো মস্তান। তবে নাওয়াজউদ্দিন
সিদ্দিকি অভিনয়ে শাহরুখের চেয়েও কিছুটা এগিয়ে এ সিনেমাতে। বাকি চরিত্রগুলো বেশ
জীবন্ত ও যথাযত কেবলমাত্র অভিনেত্রী নামক প্রানিটি ছাড়া।
মাহিরা খান। বাজারে প্রচুর হাওয়া গরম হয়েছিল
এই পাকিস্থানি অভিনেত্রিটির কারনে। সিনেমাটা দেখার পরও বুঝলাম না একে ঠিক কি কারনে
সিনেমাতে নেওয়া হয়েছিল। না আছে সৌন্দর্য,
না কমনীয়
শরীরি হিল্লোল, না ডায়লোগ থ্রোয়িং এ সাবলীলতা। তাহলে আছেটা
কি, যার জন্য শাহরুখ খান প্রোডাকশন একে সিনেমাতে
নিল? সৌন্দর্য বা অভিনয় গুন বিচার্য হলে আমাদের
যেকোন টিভি চ্যানেলের, যেকোন ডেলিসোপের লিড হিরোইন এর থেকে সর্ব দিক
থেকে উত্তম ছিল।
বিষয়টা সেই সিনেমার মূল প্রতপাদ্য, ধান্দা। আর মাহিরা খানের আছে পাকিস্থানি ট্যাগ,
তথা
পাকিস্থানের জনগনের নিজের সম্পদ। পাকিস্থানের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি কখনওই বলিউডের
পড়শিটুকু হবার যোগ্যোতা রাখেনা, কিন্তু দর্শক তো দর্শক। বৈভব, চাকচিক্য, মুচমুচে স্বাদ সকলেই বোঝে। তাহলে ধান্দার
হিসাবে পাকিস্থানের জনগন একটা বিশাল বাজার বলিউডের জন্য। সেটাকে ধরতেই হবে, খবরে দেখুন গেল সপ্তাহেই ভারতীয় সিনেমার প্রদর্শনির উপর থেকে পাকিস্থান ব্যান
তুলে নিয়েছে। না কাকতালীয় নয় মোটেই। সবটাই
পরিকল্পিত মার্কেটিং এর অঙ্গ। হিন্দি সিনেমা হলেও,
দেশপ্রেম
দেখানোর জন্য কোন তামিল বা মাল্লু মফস্বলে কেও শাহরুখ খান দেখেনা, কাবিলও নয়। সেখানে শাহরুখ আর কুনাল খেমু দুজনেই সমান, মানে একজন হিন্দি ফিল্মের অভিনেতা মাত্র,
বাকি কিছু
তারা জানেননা জানার চেষ্টাও করেননা,
কারন তারা
হিন্দি জানেওনা, তাই হিন্দি দেখার দায়ও নেই। অগত্যা খোঁজো
মার্কেট। দেশপ্রেম আর দেশবিরোধী যায়ে ভারমে। ধান্দা সে বড়া কৈ ধর্ম নেহি, কোথায় লাগে হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রীষ্টান...,
ধান্দাওয়ালাদের
কাছে! সিনেমা নান্দনিকতা হলেও, বিক্রি করতে পারলে ব্যাবসা হিসাবে যে মুনাফার
আখারা, সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
আসল ইতিহাসটা কি ছিল সেটা ইতিহাসই জানে, তবে রাজনেতারা যে বৃত্তিতে বেশ্যাদেরও অধম সেটা আবারও প্রমানিত এ সিনেমায়।
পুরোপুরি মসালা বিনোদন সিনেমা, সারাটা সময় ধরে আপনাকে টানটান করে বসিয়ে
রাখবে, নিশ্চিত। দেখলে মনটা বেশ ফুরফুরেই লাগবে।
কিন্তু সাবধান , পরে অন্য কিছু দেখলেই ভুলে যাবেন কি
দেখেছিলেন তার আগে। যেটা ভুলতে পারবেননা,
সেটা হল...
ও জালিমা... ও জালিমা...
No comments:
Post a Comment