অন্নপ্রাশনের সময়ই হবে, কেও একজন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসারগ প্রনীত বর্ণপরিচয় আমাকে উপহার স্বরূপ দিয়েছিলেন, তো সেখান থেকেই আমার প্রেমের শুরু। “ই” কে…
কারন ‘অ’ বা ‘আ’ কে এক অক্ষরে টুক করে উচ্চারন করা যায়, কিন্তু হস-সই দিয়ে ‘ই’ এর উচ্চারন করতে হয়। স্বরবর্নের এ এক মহান জ্বালা। কোনো কারন ছারাই। পরে ঈ, উ,ঊ, ও লি ও এসেছিল। কিন্তু ওই লাভ এট ফার্ষ্ট লুক। ‘ই’ আমার ঠিক তাই।
সেই থেকেই প্রেয়সীর উপরে যেমন নজর থাকে, আমার ও ‘ই’ এর উপর তেমন ই নজর থাকতো। অনেক সময় যমজ সমস্যার মত , জ্ঞানের অন্ধকারে ঈ কে ই ভেবে আপন করতে গিয়ে দেখি নিচে একটা অতিরিক্ত অঙ্গ, আমাকে ঠিক অকুস্থল জাইগা মতই খোচাচ্ছে, ঝটপট ছেরে দিয়ে কোন মতে প্রানে বাঁচা, এবং সেটা বারে বারে।
যখন জন্মালাম, দেশের দায়িত্বে ‘ই’ন্দিরা গান্ধী। স্ট্রং লেডি। মানে ই এর রাজত্বেই তো জন্ম। আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠতে লাগলাম। ক্রমে সেই বর্নপরিচয় টা হাতে পেলাম, যদিও ওটাকে দিন দুয়েকের মধ্যেই উদরস্ত করেছিলাম, আক্ষরিক অর্থেই। গোটা পাঁচেক বর্ণপরিচয় শহীদ হয়ে অবশেষে অ আ টপকে ই এ পৌছালাম। এর পর ভয় পাওয়া ইঁদুর ছানা কেও দেখলাম। রান্না ঘরে, বাবার দোকানে আক্ষরিক ইঁদুর ও দেখলাম। শিখলাম ‘ই’য়ার মানে নাকি কান হয়। ‘ই’উ মানে তুমি রা ‘ই’য়োর মানে তোমার, ‘ই’য়লো মানে হলুদ... ‘ই’ত্যাদি ‘ই’ত্যাদি...
এছারাও, বেশকিছু শব্দ যেগুলো জাতে ইংরাজি, আসলে কিন্তু ভারতীর রেশন কার্ড পেয়ে গেছে। মানে যাকে বলে অ্যাংলো ইন্ডিয়ান আর কি। যেমন, ইন, ইন্টারন্যাশ্যানাল, ইন্টারপোল, ইনেকটিভ, ইমপ্লান্ট, ইমপর্টেন্ট, ইমপোজ, ইমিডিয়েট, ইনকমপ্লিট, ইনোসেন্স, ইনসিস্ট, ইরেকসন, ইনক্রেডিবেল, ইনডিড, ইনডেক্স, ইনসাইড, ইনপুট, ইনফ্যান্ট, ইনফিনিটি, ইমিগ্রেসন, ইকুইটি, ইন্সট্যান্ট, ইন্টারেষ্ট, সহ এমন শত সহস্র শব্দবন্ধের সাথে পরিচিত হলাম।
পড়া শোনা জোর কদমে শুরুহলো, ‘ইংরাজি ভাষায় নাকি কথা বলতে শিখতে হবে, কারন দেশে ওটাই প্রধান অফিসিয়াল মাধ্যম। এটা ইংরেজরদের বহুদিন দেশ শাষন করার ফল, যদিও তখন স্বাধীনতা-পরাধীনতার মানে নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা ছিল না। মজা হল ‘ই’ না থাকলে “অফসয়াল” হয়ে যেত। হল না, আর হবেও না। ওই ইংরাজীর চক্করেই জানলাম যে আমাদের দেশের ভালো নাম ও একটা আছে ‘ই’ন্ডিয়া। পরে জেনেছিলাম ওটাই দেশের আসল আই ডি, ক্রিকেটের মাঠে। বাকি গুলো, মানে ভারত বা হিন্দুস্থান ইত্যাদি গুলোও দেশের ই নাম, কিন্তু আমারই মত ফেক আইডি। পরিচিত মন্ডলের বাইরে ফেক আইডি। এখন ;ই; এর মহিমা না থাকলে ন্ডিয়া ক্রকেট খেলতো, সেটা বলাই বাহুল্য। যদিও আমি ‘ই’কিরমিকির চামচিকি... এই সবই খেলতাম।
আরেকটু বড় হতেই তৎকালীন এক যন্ত্রনাময় ‘ই’... ইস্কুল। জীবনের এক নতুন অধ্যয় শুরু হলো। এখানে আ-কারের সাথে সাথে ‘ই; কারের ও দুর্দান্ত ভাবে পরিচয় ঘটলো। মন আর মিনির মাঝে ফারাক করতে শিখলাম। ইস্কুলের সময় দীর্ঘায়িত হবার সাথে সাথেই, বাংলা ‘ইং’রাজীর পাশাপাশি আরেক মূর্তিমান বিভীষিকা ‘ই’তিহাস হাজির হলো। যদিও এটা আমার বা আমার সমগোত্রীয়দের জন্যই প্রযোজ্য। যদিও তাঁর অনেক আগেই শাকের আঁটির মত ‘গন-ইত’ (গনিত) জীবনের রস অনেকটা তেতো হয়েই গেছে। যদি ‘ই’ না থাকতো গনিত টাই তো গনৎ হয়ে গেলো। তবুও ‘ই’ প্রেম অটুট রইলো। ততদিনে ভূগোলের পাঠ আসতে শুরু করেছে, ‘ই’উরোপের নাম ও শুনে ফেলেছি। আর বৃহত্তর অর্থে সাহেবদের দেশ ‘ইং’ল্যান্ডের। এদিকে পাড়ায় মহল্লায় তখন একটাই ধ্বনি ‘ই’নক্লাব জিন্দাবাদ।
তখন টিভির এতো রমরমা যুগ ছিলো না, মানে এখনকার মত। বিকালে মাঠে খেলতে যেতাম, ছুটির দিনে সার্কাস মেলা ‘ই’ত্যাদি ‘ই’ত্যাদি...... তাঁর মধ্যে জাদুখেলার টান ছিল অমোঘ, এখানেও ‘ই’ এর মাহাত্ব। মানে ইন্দ্রজাল। যাতে আচ্ছন্ন হয়ে থাকতাম পুরো বাল্যকাল ও কৈশরের মধ্যভাগাবধি। জানলাম ‘ই’ন্দ্র দেবের কথা, ঐরাবত যার বাহন, এবং বজ্রচালনা করে থাকেন, বাল্যকালে এইসকলই পূরাণ তথা রুপকথার রাজ্যে পাড়ি লাগাতাম, ওই ইন্দ্রধনুষে ভর দিয়ে, মানে যাকে আমরা রামধনু হিসাবে জানি।
কল্পনারা তো আর বাঁধ মানে না, বেশ জাকিয়ে তাঁরা রাজ্যপাট করে আমার মনের রাজত্বে। সেখানে ‘ই’চ্ছা শক্তির বারবার সংঘাত চলতো, ওই কল্পনাদের সাথে। আলপটকা মন্তব্যও হয়তো করে ফেলতাম, যার জন্য ইঁচড়ে পাকা উপাধীও লাভ করেছিলাম, খুব অল্প পরিশ্রমেই। দু চার জন ব্যাতিক্রম বাদের প্রায় সকলেই বোধহয় আমার মতই বড় হয়ে উঠেছেন, এই কল্পনা-ইচ্ছা-রামধনুদের ইট সাজিয়ে সাজিয়ে।
তখন নলকূপের চল এই গ্রামবাংলার দিকে ততটা ছিলনা, পুকুর দিঘী বা নদীর জলই ভরষা।তবে কিছু কিছু স্থানে ইঁদারা বা কুয়ো দেখা যেতো। যেগুলো নিয়েও প্রচুর সাহিত্য আছে। সেই সব শান বাধানো ইঁদারার পাড়ে বসে কাঠফাটা জৈষ্ঠের রোদে, নিবিষ্ট মনে কাঁচা আম, সামান্য নুন লঙ্কা সহযোগে, চেটে ও চুষে সহ আর কত ভাবে, রেখে রেখে খাওয়ার প্রণালি যে ছিল, মানে যাতে দ্রুত শেষ না হয়ে যায় ওই যখের ধনটি, তার আর ‘ই’য়াত্তা নে‘ই’। এর থেকে ভালো সময় জীবনে কি আর কখনো এসেছে! না ওতটা মনযোগ দিয়ে আর কতগুলো কাজ করেছি! খুব হিংসে হয় সেদিনের আমিকে।
ই না থাকলে তো জীবনে মিষ্টতা বলে কোন বস্তুই থাকতো না। গুড় বলুন বা চিনি, ইক্ষু ছারা সেটার উৎস কি! হ্যাঁ আপনি বলতেই পারেন আঁখ, বা আজকাল সিন্থেটিক চিনি কি বাজারে নেই? নিশ্চই আছে, আমি আমি ই এর প্রেমিক, তাই আমি তো ইক্ষু ই বলবো। ছোট বেলায় মায়ের হাতের ইক্ষুপেটা, মানে লাঠিপেটার বদলে আর কি, আমাদের দুই ভাইবোন কেই ইক্ষুর ঠ্যাঙান হজম করতে হয়েছিল, যদিও সেটা মোটেই মিষ্ট স্বাদের ছিলনা। কতদিনিই এমন হয়েছে, ইক্ষুর ছাল ছারাতে গিয়ে ঠোঁট ও জিভের ছাল ছারিয়ে ফেলেছি তারও লেখাজোখা নেই। তবে সেটা বেশ উপভোগ্যই ছিল। ইগল নিয়ে মতভেদ থাকবে, ওটা ই না ঈ, আমি ই বিলাসী, তাই কটু গঞ্জনাতে প্রেমের ঘাটতি হতে দিই কি করে! এই বিলাসের কথাতে রসনা লকলক করে উঠে, তার জন্য ঘটি বাঙাল ভেদাভেদ খুব কম। ইলিশ..................
নামটা উচ্চারনের সাথেসাথেই মুখ লালাঝোলে ভর্তি, চারপাসে সর্সে বাঁটার একটা ঝাঁঝালো সুগন্ধে গরে উঠে আশপাশ, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের মতই। ইলিস ‘ই’ ছারা অন্য কিছু দিয়ে শুরু হচ্ছে, এটা তো দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করা যায় না। ধরুন কষ্ট কল্পনা করেও নিলেন, তবে সেটা আর ওই রসনাতৃপ্তি দেবে বলে মনে হয় না। সেটা নরম বালিস হতে পারে, ময়দাতে জলিস হতে পারে, বা মগজে পালিস... মালিস ও হতেপারে, ইলিশ হবেনা ভায়া। এটাই ই এর মহিমা। এতো শুধু ইলিশ। আর কবিরা! বা প্রেমিক-প্রেমিকারা! ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিই তো তাদের মনজানলাতে দখিনা বাতাস বয়ে আনে। সবই ই এর কৃপা... ই এর কৃপা জানেন না?? ভগা দা মানে আমাদের ইশ্বর(ঈ ও মতান্বরে) ... তিনি সর্বাসের্বা হয়েও ই এর মোহ ত্যাগ করতে পারেন নি, আমি আপনি তো কোন ছার।
তবে বলতেই পারেন আমি গরীব, ইলিশ সুখ আমাদের দেখতে নেই, না দেখুন ক্ষতি নেই, ইচে আছে তো। আপনি বাঙালী তো? তাহলেই ই এর উত্তেজনা আপনার জীবনে ঠিকিই আছে। ফুটবল। হয় আপনি মোহনবাগানের সমর্থক বা অন্য দলের... তাহলে কি সেই দল!! বলুন বলুন!! ইস্টবেঙ্গল......... মাইরি কেটে বলুন তো ই না থাকলে ইষ্টবেঙ্গল কোথায় পেতেন! পেতেন ৪-০ এর সুখ! আর মোহনবাগানীরা কাকে হারিয়ে এতো উল্লাস করতো, বা কার কাছে হেরে এতো মুষড়ে পড়তো!! ভাবুন কোথায় খরচ করতো বাঙালী তার এই আবেগ! নিরামিষ হয়ে যেত জীবন ই না থাকলে।
বসন্ত এসে গেছে, মানে সবে যৌবনের নীল দরজা দক্ষিনাকাশের দিগন্তে ভাষা ভাষা দেখা দিয়েছে, বুঝলাম ‘ই’জ্জত নামের একটা বস্তু ও ধরাধামে আছে। পরে পরে বুঝেছি ওইটা আসলে দুর্মূল্যই। বহু কিছুই ওটার জন্য ত্যাগ করা যায়। যৌবনের দোরে পা রাখতেই ‘ই’ঙ্গিত বিদ্যারা কেমন যেন স্বাবলীল হয়ে গেলো, বহু কিছুই ওই মাধ্যমে সম্পন্ন হতো, তখন ও দেশে ফোন আসেনি কি না, তাই... ইমোটির কাজ গুলো নিজের ইন্দ্রিয় দিয়েই আকারে ইঙ্গিতে করতে হতো। ‘ই’মোটির কথায় আবার ‘ই’মোশন চলে আসে। এখন বাংলিশের যুগে অনুভুতিগুলো সব ইমোশন আকারেই তো প্রকাশ পায়। ইতঃপূর্বে অনুভুতিরা এখন রাগ ঝাল দুঃখ আনন্দ বেদনা খুশী সবই এখন ইমোটির জাঁতাকলে, আর টুক করে বোঝানোও যায়।
এর পর উচ্চমাধ্যমিক তো কোনক্রমে পাশ করলাম, বাড়িথেকে ‘ই’ঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন ও চাপ দুইই রইলো। যদিও সেই মেধা বা ভালোলাগা কোনকালেই ছিলাম না, তাই টুক করে অল্পদিনের মধ্যেই কেমন যেন ‘ই’তর সম্প্রদায়ের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করলাম। মানে বাকি সকলের ব্যাবহারের ধরন দেখে। আমার ‘ই’ঞ্জিনের ক্যাপাসিটি না দেখেই লোড চাপানোর প্রচেষ্টা সমুলেই উৎপাটটিত হল সে যাত্রায়। সেই থেকেই জীবন নিয়ে কিছুটা ‘ই’তঃস্তত বোধের মধ্যে ছিলাম। নিজের সিদ্ধানে অবিচল থেকে নিজের কাছে নিজের ‘ই’জ্জত রক্ষা হলেও, বাপ মায়ের ইচ্ছানুরুপ না গিয়ে তাঁদের ইজ্জত কথাঞ্জলী দিলাম।
ইত্যাবসরে ইউনিভার্সিটি নামক নতুন ই এর জগতে প্রবেশ করলাম। অচিরেই দুটো হালকা ফুরুফুরে ইচ্ছেডানার উদ্গম হলো। রোজনামচাতে ‘ই’স্ত্রি করা পোষাকের ঘনঘটা বৃদ্ধিপেল। প্রেমান্দ্রিয় সজাগ হতে বেশি দেরি হল না। ললনা দেখলেই ‘ই’দের চাঁদের মত, এটাই বোধহয় আমার জন্য সৃষ্টি বলে ঝাপাতাম, যথারীতি ফেলিওর হয়ে তার চরিত্রের নানা অ-গুন গুলো বিশ্লেষনের মাধ্যমে মনকে শান্তনা দিয়ে, পরবর্তীর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতাম। অনেক সময় ‘ই’জের ফাটিয়েও ‘ই’জারা দিতে হয়েছে, প্রেমসঙ্কুল ওই দিন গুলোতে। এর জন্য বন্ধু মহলে কম ‘ই’য়ার্কি হয় নি। কিন্তু সেগুলো আমি কখনই ‘ই’য়াদ রাখিনি। আমি সেই পুর্ন ‘ই’ন্দুর অপেক্ষার কালাতিপাত করতে লাগলাম।
‘ই’নাম যদিও তেমন কিছু পাইনি, তবে ওই যে বলে না... ব্যার্থতা মানুষকে শিক্ষাদান করে। আমার ওই প্রভুত ব্যার্থতা তথা শিক্ষার চোটে প্রায় সেমি বুদ্ধিজীবিতে পরিনত হয়ে গেলাম। যাই হোক ভবঘুরে জীবনে আদপে পিছিয়েই পড়েছিলাম, কিন্তু একটা বিয়য়ে উন্নাসিক ছিলাম, যে বাকিদের মত ‘ই’দুর দৌড়ে আমি সামিল হইনি। এছারা নিজেকে সান্তনা দেবার শর্টকার্ট আর হয় না বোধহয়। সে এক আশ্চর্য ‘ই’ন্দ্রাগার পরিস্থিতি।
দুচোখ বুজলেই ‘ই’ন্দ্রগোপের সন্ধান, চোখ খুললেই ফরসা। সকলসময় এক ধরনের ‘ই’লিউসন, ঘিরে থাকতো। অনেকেই বললেন ‘ই’ন্দ্রমনি ধারন করলে নাকি, জীবনে উন্নতি অবশ্যম্ভাবী। জ্যোতিষি ভবিষ্যৎবানী করলেন, যে আমার ভি আচ্ছেদিন আয়েগা, উনি দেখতেও পাচ্ছেন, কারন ওটা ‘ই’নামেলের মত চকচক করছিল নাকি। শুধু কিছু জড়িবুটি আর মন্ত্রতন্ত্রের ‘ই’ন্ধন প্রয়োজন। কিন্তু আমি বললুম , আমার ট্রেন কোন এক ‘ই’ষ্টিশনে বেশিক্ষন দাড়াতেই পারেনা। ঠাকুর বললেন, সেই লাগাম ই লাগাবো রে পাগলা। বেশ চিন্তায় পরে ডবল শিওর হবার জন্য এক ‘ই’মাম সাহেবের কাছে গেলাম। উনিও প্রায় একই দাওয়াই দিলেন, শুধু বাড়তি বললেন- বেটা ‘ইমানদার হয়ে খোদার ‘ই’বাদৎ কর সব ঠিক হয়ে যাবে।
মেসেই থাকি, কোলকাতায় ‘ই’য়ার দোস্তদের সাথে মিলেমিশে, ‘ই’জের বাদে প্রায় সকল দ্রব্যই একে অপরের ‘ই’স্তেমাল করি। দিন সারা এফএম রেডিও আর বাকি সময়ে কলব্রিজ বা টয়েন্টি নাইন, বা বিবি পাসানো, যদিও ‘ই’স্কাবনের বিবির প্রতি টান ষোলআনাই ছিল। ‘ই’য়ে দোস্তি হাম নেহি তোরেঙ্গে, এটাই তখনকার মূল মন্ত্র। মেসের প্রথমিক বা ‘ই’নিশিয়াল দিনগুলো পূর্বের মতই ‘ই’ল্লতপনা করে কাটছিল। আসলে বয়সটাই বেড়েছিল, আদপে ‘ই’মম্যাচিওর ই ছিলাম। ‘ই’মব্যালান্স লাইফস্টাইল হলে যা হয় আর কি। ‘ই’মিটেট করার মত সামনে কেউ তেমন ছিলো ও না। জীবনটাই একটা ‘ই’মমেটিরিয়ালে পরিনত হয়েগেছিলো, ‘ই’নফ্যাকচুয়েসনের কারখানা। তবে ‘ই’ম্পিরিয়াল ব্লু বা তার স্বজাতীয়রা মাঝে মাঝে কিছুমুহুর্তের জন্য জীবন রঙিন করে তুলতো।
ফ্যামিলির সাথে ‘ই’লাস্টিসিটি টা ই কেমন যেন নষ্ট হয়ে গেছিলো। তখনও গ্রামের বাড়িতে ‘ই’লেকট্রিক আসেনি। সন্ধ্যায় ‘ই’মনকল্যান রাগ, ভোরে ভৈরবী। সন্ধ্যা নামলেই পৈতৃক ‘ই’মারত হানাবাড়ির মত ‘ই’ন্দ্রালোকে থমথম করে। আধবুড়ো বাপ-মা ছারা আর কেও থাকতো না যে। বাড়ি থেকে কেও খোঁজও নিত না, ‘ই’য়াদ ছিলো কিনা তাই বা কে বলতে পারে! তবে সেই নজরুলগীতির ‘ই’রানীর বালিকার খোঁজ কিন্তু অব্যাহত ছিল, ‘ই’শক এর মায়াজালে কোন ইশানী বা ইশিকা ধরা দেয় তারই অনন্ত প্রতীক্ষায়। ‘ই’তিমধ্যে জঙ্গীব্যাবসা ফুলেফেপে উঠেছে, সন্ত্রাসী, ‘ই’সলাম, ‘ই’হুদী, খ্রিষ্টান হিন্দুত্বের চরম ধ্বজা পৎপৎ করে উড়ে চলেছে, নিচে উলুখাগড়ার দল পিষে মরছে। ‘ই’রাক থেকে ‘ই’উএসএ হরেক ই দের দাপাদাপি শুরু হলো। মুক্তমনা হয়ে বলিতে গেলেই ‘ই’বলিসের খাতায় নাম উঠে যাওয়ার ভয়। সাহষ না থাক, ‘ই’ডিওলজি তো ছিলো। তাই এ সব দেখে সকলসময় ই মনটা ‘ই’ষদুষ্ণ থাকতো, আর ভারাক্রান্তও, সোশ্যাল ‘ই’লনেস যাকে বলে আর কি।
মান্ধের জোরে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করে, পড়াশোনার পাঠ সেই যাত্রায় শেষ হল, এবার রুজীর ধান্দা... করতেই হতো। অগতির গতি সেই ব্যাওসা... এখানে জানলাম হ্যাপ্পি নিউ ‘ই’য়ার এর আগের দিনই শুধু ‘ই’য়ার এণ্ডিং হয় না, মাঝপথে বা ৩১শে মার্চ ও ওটা হয়। নগদ আমদানির সাথে সাথেই জীবনের মোড় ঘুরে গেলো, আগামির জন্য এই প্রথম একটা ‘ই’স্তিহার বানালাম। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার। সেই প্রথম প্রতি ‘ই’ঞ্চির মাপ নেওয়া শুরু করলাম। প্রেমে ব্যার্থতার পুরাতন ‘ই’য়াদে কিছু রিনরিনে ব্যাথাটা জারি রেখেছিল।
নতুন ‘ই’ষ্টমন্ত্রে দীক্ষিত হলাম। ইহলোকে শুধু সেই স্বপ্নচারিনীর খোঁজ জারি থাকলো। কালক্রমে ভুল হলো, সেখান থেকে মামলা, পুলিস, ‘ই’ন্সপেক্টরের আনাগোনা বাড়লো জীবনে। কিছুকাল পরেই ‘ই’প্সিত কন্যের খোঁজ পেলাম, সুদুর কল-‘ই’ঙ্গে, ‘ই’গলু বানাবার সাধ পেয়ে বসলো। শুরুহলো মেলামেশা, অনেকেই ‘ই’র্ষান্বিত হলো। তবে ‘ই’তনি খুশী আজ তক মজে নেহি মিলা গোছের ভাব, পার্টনারের গোবিন্দার মত পোঁটা মুছে। ইহজগতের বাকি সকলকিছুকেই ‘ই’গনোর করা শুরু হলো। এর পর সেই সামাজিক বিপ্লবের ছোঁয়া আমাদের দেশেও এলো, মানে ছিলোই সেটা, আরো সহজলভ্য হলো। দৈনন্দিন জীবনে ‘ই’ন্টারনেটের আগমন ঘটলো কিছুকালের মধ্যেই জীবন সম্পূর্ন অন্যখাতে বইতে শুরু হলো।
এটা শুধু মাত্র আমার লা’ই’ফের ঘটনা নয়, সামান্য পরিবর্তন ঘটিয়ে নিলেই দেখাযাবে প্রায় সকলেরই একই রকম। তাছারা সকলেই এখন ই এই বুঁদ... সেটা ই-টেন্ডার থেকে ই-লার্নিং, ই-গভর্নেন্স থেকে মাট-ই উৎসব, সে ইডি হোক বা ইবোলা, ইয়াকুব মেমন থেকে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, ইসলামিক স্টেট ইরাক থেকে ইন্দ্রানী বরা। গোটা জীবনটাই ই ময় হয়ে গেছে। এখন সব কিছুকেই ছাপিয়ে গেছে ইন্টারনেট... এই আপাতত ই নামা।
No comments:
Post a Comment