ছবিঃ ইন্টারনেট
~সূচনা পর্ব~
দূর,
দূর...
ঘেন্না
ধরে গেল জীবনে মোহায়, আজকাল আর কেও যোগ্যি লোককে চিনতে পারে না। শ্লা যদি ৪৭ এর
আগে যুবক হতাম, নির্ঘাত এই শর্মা যে বিপ্লবী হত, সে কথাটা কেও একবার বিচারই করলো
না! এই জন্যই এ দেশের কিস্যুটি হলনা।
কথা
কটা বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেই আধগ্লাস ঠান্ডা লিকার চায়ে একটা লম্বা চুমুক দিয়ে,
ভেংচিকাটা মুখ করে এক ঢোকেই উদরস্থ করে নিল আমাদের লেবুদা।
লেবুদা,
মানে আমাদের হাড়কাটা গলির মল্লিক বাড়ির বড়কর্তা শ্রীযুক্তবাবু দর্পনারায়ন মল্লিক
মহাশয়। অবিশ্যি এ নাম ইস্কুলের রেজাল্টের পর একবারই এ নাম একবারই কালিতে ছাপা
হয়েছিল, আর সেটা তাঁর বিয়ের নিমন্ত্রন পত্রে। শ্রীমতি বিঘ্নেশ্বরী দেবীর সাথে
বিবাহ হইবার কাল সেটা। হুম ঠিকিই পড়েছেন, বিঘ্নেশ্বরীই। যদিও লেবুদার মতে, তার
জীবনের সকল কিছুতেই ওনার ভার্যার বিঘ্নতা অবশ্যম্ভাবী, গোঁড়াতেই বিঘ্ন করা সু বা
কু অভ্যাসেই জন্য, এইনাম উনি চরিত্র গুনেই পেতেন। যে যাই হোক এ সকলই বেদনাদায়ক
সাংসারিক ইতিহাস, ক্রমশ প্রকাশ্য।
লেবু
দার লেবু নামটি পৈতৃক বা মাতৃক সম্পত্তি নয়, মাতুলালয়ের থেকেও প্রাপ্ত নয়, ঠিক
কিভাবে যে এনামের প্রাদুর্ভাব হয়েছিল , তাহা এখন সময়ের গর্ভে। বাকিরা তো
প্রকাশ্যেই, এমনকি একমাত্র পুত্র বিল্বমঙ্গল মল্লিক ওরফে মুঙলা , বা কন্যারত্নদ্বয়
লহনাকুমারী ও বিদ্যাসুন্দরীও তাকে পিছনে ওই লেবুদা বলেই ডাকেন। পিতার নাম শুধালেই
বলে- আজ্ঞে আমরা লেবুদার ছেলে বা মেয়ে ইত্যাদি। পুত্রকন্যত্রয় তাদের ওমন খটমট ‘সেকেলে”
নামের কারনে এমনিতেই বাপের উপরে যথেষ্ট খাপ্পা, তাহার উপর আজকাল তো ইস্কুলে কলেজে
পর্যন্ত এমন নাম শুনে অনেকেই প্রকাশ্যেই হাসাহাসি করে। তবে এই নামের ব্যাপারটা লেবুদা
কখনই গায়ে মাখেননা।
দ্বীজমোহন
তর্কালঙ্কার মহাশয় বর্ধমানের মানুষ ছিলেন, পেশাগতভাবে মোক্তারি করতেন চুঁচুড়া
আদালতে। তাঁর ও যোগমায়া দেবীর ছয় সন্তানের জ্যেষ্ঠজন হলেন আমাদের লেবুদা। পরবর্তী
তিন ভাই ও দুই ভগ্নীর মধ্যে একজন ভাই রেলের অপিসে চাকুরি করেন, একজন পুলিশের
হাবিলদার, বাকি একজন পোষ্টমাষ্টার। প্রথম ভগিনী নামজাদা উকিলের স্ত্রী এবং নিপাট
সাংসারিক গৃহবধু, অপরজনও বিবাহিতা এবং তিনিও প্রাথমিক শিক্ষিকা। দ্বীজমোহন বাবুর অল্পআয়ের টানাটানির সংসার হলেও সন্তানদের
শুশিক্ষিত করেছিলেন, এবং সকল কে যোগ্যোত্যা অনুযায়ী চাকুরিতে বহাল করিয়েই
ছেরেছিলেন।
বড়
ছেলে হবার দরুন, পিতার নিকট থেকে লেবুদা আত্মসম্মান ও স্বাধীনচেতার পাঠটা একটু
বেশিই পেয়েছিলেন। সুতরাং সারা জীবনে তিনি কোথাও চাকুরির আধখানা আবেদন পর্যন্ত
করেননি। ব্যাবসা করার মত যথেষ্ট পুঁজি, পিতা দ্বীজমোহনের দেবার সমর্থ ছিল না। তাই
এক্কেবারে স্বাধীন পেশা হিসাবে দাদালি কে ই বেছে নিয়েছিলেন। অবশ্য আমাদের
বিঘ্নেশ্বরী ওরফে বাঘাবৌদির সাথে পরিনয় হবার রাত থেকেই, যাবতীয় গৃহগত স্বাধীনতা
স্ত্রীর জিম্মায় রাখিয়া প্রানে বাঁচিয়াছেন।
লেবুদা
শুধু মেয়েছেলের লেনদেন ছাড়া, ইডেনের টিকিট-গানের জলসা- বা দীপাবলী বাম্পার লটারির
টিকিট থেকে শুরু করে আধুনা ফ্ল্যাট বাড়ি, মোটরগাড়ি সহ সব কিছুর দালালি করেন। একবার
তো সস্তায় পাওয়া চোলায় মদও কয়েকড্রাম মজুদ করার অপরাধে, শেষে মুচলেকা দিয়ে হাকিমের
থেকে রেহায় পেয়েছিলেন। তবে দাদাল শব্দে ওনার যারপর নাই আপত্তি। উনি বরং নিজেকে,
সামান্য অর্থের বিনিময়ে মধ্যস্থতাকারী বলতেই ভালবাসেন। এবং এই পেশাকে উনি পরোক্ষে
সমাজসেবাও বলে থাকেন ঘনিষ্ট মহলে।
.............ক্রমশ
উন্মাদ হার্মাদ
No comments:
Post a Comment