তুই আমার বড় আদরের ছিলি। ততোধিক আদরে তোকে একটা মিষ্টি উদ্ভট ডাকনাম দিয়েছিলাম। আমার অন্য সকল দেহাংশের সাথে, তোর আদর কোনো অংশে কম ছিলনা।
বড়কি আসলে আমার অবিভাবক বেশি। বন্ধু কম, আমার পরিপালক বেশি। সে কখনই প্রেমিকা ছিলনা, তাই হয়ত শাসন ছিলনা কিন্তু নিয়মানুবর্তিতা ছিল বা আছে পরিপূর্ণ রূপে।
তুইই আমার বন্ধু ছিলি, প্রেমিকা ছিলি। আমার অবসরের একমাত্র একমাত্র উপভোগ্য সাথী ছিলি। আমার যাবতীয় প্রগলভতা তোর কাছে গিয়ে শান্ত হয়ে চুপটি মেরে বসে থাকত, তোকে দেখবে বলে। তোর সাথে পৃথিবীর সব কিছু শেয়ার করতে করতে একদিন নিজেকেই তোর কাছে শেয়ার করে দিয়েছিলাম। তোর বুকে আশ্রয় নিয়েছিলাম, আমার যাবতীয় হারানোর শোক, অনুতাপ, সব তোকে জড়িয়ে ধরে ভুলে যেতে চেয়েছিলাম। তোর ওমে নিজেকে সেঁকে তোর প্রশ্বাসের বায়ুতে নিজেকে একটু একটু করে মুলস্রোতে ফিরে আসার শ্বাস নিচ্ছিলাম। আমার গোটা অস্তিত্বে শেষ আশ্রয়স্থল হিসাবে তোর মাঝেই ঘর বেধে ফেলার সিদ্ধান নিয়েছিলাম।
আমি বদরাগী, কুরুপ, কুৎসিত, মুখে অস্রাব্য গালিগালাজ, নেশা বাজ, মাগীবাজ,... বাতেলাবাজ কিনা রোগ ছিলনা আমার চরিত্রে-
তাও তোর কাছে আমি শিশুর মত উচ্ছলিত হয়ে কাছে যেতাম। তুই চরম ভালবাসা দিয়ে, চুরান্ত স্নেহের প্রশ্রয়ে আমার বদগুনগুলোকে শুষে নিয়ে সম্পূর্ণ মানুষ হবার স্বপ্ন দেখিয়েছিলি। তোর সহচর্য পেলে মনে হত, পরিস্থিতি যত প্রতিকুলই হোক, এর থেকে ঠিক ঘুড়ে দাঁড়াতে পারব, আমি পারবই, কারন তুই পাশে আছিস।
তোকে নিয়েই আমার নেশা করে দিন কাটত। কাজের সময়টুকু ছাড়া সারাদিনিই তোর ভাবনাতে বুঁদ হয়ে থাকতাম। কখনও তোর ভাললাগা মন্দলাগা আমি জানতে চাইনি, কারন তোর দিকে একটিবার চাইলেই আমি হিতাহিতজ্ঞান শুণ্য হয়ে যেতাম। ভালমন্দ সবই আপেক্ষিক লাগত। আমি যা অগোছালো- আর যে পরিমান চারত্রিকভাবে দুরন্ত, ওই প্রেমের পথে নিজেকে ব্যাক্ত করার মত সাহসী হয়ে উঠতে পারিনি কোনোদিনি। তাই ভালবাসি কথাটা সেই ভাবে আজকের আগে বোধহয় একবারও বলিনি।
বলিনি মানে ভালবাসতে কি খামতি রেখেছিলাম? কৃপণের ধনের মত জমা রাখা আমার অন্তরের সমস্ত ভালবাসা দিয়ে তোকে নিরন্তর স্নান করিয়ে দিয়েছিলাম ভাবনাতে, শরীরে, স্বপনে। ভীষন ঔধ্বত্ব অহংকারে সমাজকে ছোহঃ বলে এক চুটকিতে উড়িয়ে দিয়েছিলাম তেপান্তরে, যার আধার ছিল এক পৃথিবী গাঢ় সবুজ ভালবাসা। যা ছিল সমুদ্রের চেয়েও গভীর, অমাবস্যার অন্ধকারের চেয়েও গহিন, সোনার চেয়েও উজ্জ্বল, হীরকের চেয়েও কঠিন,..... ফেভিকলের চেয়েও মজবুত।
বড় অসহায় লাগছে আজ।
আজ আমি নিঃস্ব। তোকে হারিয়ে নয়, আমি আমার বিশ্বাস হারিয়েছি। আমার অপূর্ণ অশান্ত প্রেমকে হারিয়েছি। আমার আদর খুইয়েছি। বন্ধু খুইয়েছি। মধ্যরাতের সাথীকে খুইয়েছি, যাকে যা খুশি বলা যেত। আমার মননকে খুইয়েছি, যার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা যা খুশি তাই নিয়ে আলোচনা করা যেত।
আমি তোকে হারিয়েছি। হ্যাঁ, তুই ই ছিল আমার মনের কবিরাজ। সকল ব্যামোর জড়িবুটি।
জানিনা তুই কি হারালি, কিন্তু আমি সব হারিয়েছি। সারাজীবন চেষ্টা করলেও আমার যৌবনের এই ভালবাসা আর নতুন করে সঞ্চার হবেনা। যে ভালবাসাতে তোকে রঞ্জিত করে, আমি রাঙা হয়েছিলাম। আমার স্বপ্নেরা ভাষা পেয়েছিল তোর ওই মায়াভরা চাহনির অতলে তলিয়ে যেতে যেতে।
তোকেই আমি ভালবেসেছিলাম, বিষাদ বালিকা। মিথ্যে অভিমানই সব শেষ করে দিল।
বেসেছিলাম।
আজ ঘৃণা করতেও ঘৃণা হয়, নিজের উপরে- কেন তোকেই ভালবেসেছিলাম। তবে তোকেই ভালবেসেছিলাম এতে সন্দেহ নেই। তুই ছাড়া আমার যৌবনের ৭ টা বছর নিস্তরঙ্গ ঘটনাবিহীন।
তুই আমাকে ধোঁকা দিয়ে ঠিক করলিনা। ভালবাসার প্রতি এ এক চুরান্ত আঘাত। ঈশ্বরের আসনও টালমাটাল হয়ে যায়, এমন বিশ্বাসঘাতে, মিথ্যাচারে।
সব সময় কেঁদে, ঈশ্বরের দিব্যি দিয়ে তার আশ্রয়ে, চেঁচিয়ে জয় পাওয়া যায়না। ভালবাসার জন্য আমাদের কোনো শর্ত ছিলনা, শর্ত এসেছিল ঘর বাঁধতে চেয়ে।
এই শর্ত বাস্তবের দাবিকে মেনে ছিল। তুই আবেগকে ভালবাসার উপরে রাখলি ঘর বাঁধার পর থেকে গোটাটাই। তোর যাবতীয় মুগ্ধতার আবেশকে বিষাদ দিয়ে পিষে মেরে ফেললি। অচেনা হয়ে গেল আমার দেখা সেই প্রেমিকা। আমি হাঁতরে খুঁজতে খুঁজতে অনেক অনেক অনেক দূরে চলে এলাম। তুইও টের পেলিনা, কারন ভালবাসতে গিয়ে যাদের কথা কখনও ভাবনাতে আসেনি, ঘড় বাঁধতে গিয়ে "লোকেরা" তোর তাৎক্ষণিক পাওয়ার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ালো। তারাও যে আমাদের উভয়ের বড় ভালবাসার ও আদরের সেটা ভুলে গেলি, উন্মত্ত হয়ে উঠলি রিপুর আদিমতায়। আমিও ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হতে লাগলাম, পরিবর্তিত প্রেমিকার সাথে। কিন্তু পরিবর্তনের দ্রুততার সাথে আমার মনন সাথে সাথে ছুটতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ল।
আমি আমাদের সংসার বাঁধার পর সবচেয়ে বেশি সময় ব্যায় করেছি - এমন এক ব্যাক্তির সাথে, যিনি একজন পুরুষ বন্ধু। অথচ ওখানে তোমার থাকার কথা ছিল।
আমার আদরের প্রেমিকা তখন আর আমার কাছে সব কথা বলার স্থান হিসাবে অজান্তেই বিশ্বাসযোগ্যোতা হারিয়েছে। আসলে শেষের শুরুটা ওই অফিসয়ালি ঘর বাঁধার সিদ্ধান্তেই সন্নিহিত ছিল।
আজ হারিয়ে খুঁজতে গিয়েও কালসিটে পাংশুটে বর্ণের কুটিল তোমাকে খুঁজে পাচ্ছি প্রতি পদে। আমাকে তীব্র যন্ত্রনা দিয়ে সেই তুমি তোমার উপস্থিতি ব্যাক্ত করছে, বিশ্বাস হীন প্রেমের এ যে কি করুন পরিস্থিতি- আমার চেয়ে কেউ বেশি উপলব্ধি করেছে কিনা জানিনা।
হৃদয় ফাটলে আওয়াজ হয়না। চাইলেই কাঁদতেও লজ্জা বোধ হয়। কিন্তু এই হাহাকার আমি তোর ছাড়া কার কাছেই বা বলব?
জানি এ অর্থহীন, তবুও শেষবারের মত বলে নিই-
আমি পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাল বেসেছিলাম আতুকে, আর তারপরে তোকে।
আতুকে হারিয়েছি সহদোরার জন্য, আক্ষেপ নেই যন্ত্রনাও নেই বরং অসীম শ্রদ্ধা আছে তার প্রতি। বন্ধুর ভালবাসাও আছে।
তোকেও ভালবেসেছিলাম
হ্যাঁ, বেসেছিলাম। অতীত কাল।
বোধহয় জীবনের অন্যতম বড় ভুল, শাস্তি পাচ্ছি। তবে তোর সাথে সস্তার হোটেলে বা আঁদারে-পাঁদারে কাটাবো মুহুর্ত গুলোই ব্যাক্তি আমার জীবনের সবচেয়ে মুল্যবান ছবি।
না অন্যের জন্য নয় এ ছবি, এ সবই স্মৃতির মনিকোঠায় সংরক্ষিত রয়েছে পরম মমত্বে, যত্নে, আদরে। ঠিক যেমন তোকে ভালবাসতাম।
আশির্বাদ করি, ভাল থাকি অবশিষ্ট জীবন কালে। আর কাওকে আমার মত ধোকা দিসনা, নতুন ভালবাসা আসুক তোর জীবনে। তবে বসন্ত যেন না আসে। আমার বাগান তছনছ করে তুই ভাল থাকবি, কিন্তু সুখী হবিনা এটাই আমার প্রার্থনা ঈশ্বরের কাছে।
No comments:
Post a Comment