(সব চরিত্র কাল্পনিক)
------------------------
------------------------
গ্রামে গ্রামে সেই বার্তা রটি গেল ক্রমে
সহস্র তার অর্ধ, অবৈধ করেছেন নমে
কালাধন লাগি। ভক্তদল গেল জুটি
কত আবালবৃদ্ধ উমেদারি; আঁতেল-গুটি
প্রস্তুত হইল পথে।
মহা ধনপতি
মুকেশ কহিল আসি, "হে ছাপ্পান্নঠাকুর,
আমি তব কোথা যাই।' শিলপো পতি,
দুখানি শাসিত আঁখি মানে না যুকতি,
কেবল ফরমান করে--হুকুম তার
এড়ানো কঠিন বড়ো--"উপাই কোথা আর'
আমোদী কহিল তারে- "পায়ে ধরি তব'।
মুকেশ কহিল ভাবি "পাচার করি লব
যেকোনোমতে এক ধারে।' ভিজে গেল মন,
তবু দ্বিধাভরে তারে, শুধালো আমোদী জন,
"নাবালক
ভাইটির কী করিবে তবে?'
উত্তর করিল মুকু, "অনিল? সে
সরাবে
আপন বিদেশি খাতে। তারও পরে
বহুজন ভুগিবেন অনর্থক জ্বরে,
বাঁচিবার থাকিবে না আশা; আদানি এখন
আপন মাথা কুটিতেছে প্রাচীরে ঘনঘন;
মানুষ করেছে যত্নে যারা- তুমি ঘরের ছেলে;
আদরে বাঁদর করেছে সকল কর্ম ফেলে।
সুধীরও মানিবেনা বারন, করিলে শাসন
পদচ্যুত হইয়া অশ্রুজলে ভরিবে নয়ন
কোলে তারে টেনে লও। আমরা থাকিলে সুখে
রাজ্যপাট চলিবে তোমার ভারতের বুকে।
সম্মত হইল নরেন। মুকেশ সত্বর
প্রস্তুত হইল বাঁধি পয়সা-পত্তর,
সুইস ব্যাঙ্ক দ্বারে, সখাদলবলে
ভাসাইয়া সম্পদ সব-স্থলেজলে।
পোতে আসি দেখে--সেথা আগেভাগে ছুটি
যোগবাবা রুধিয়া আছে দুয়ার-'পরে উঠি
প্রাণায়াম রবে। "তুই হেথা কেন ওরে'
অমিত শুধালো; সে কহিল, "যাইব
সাগর পারে।'
"যাইবি
সাগরপারে! ওরে অনু-লোম ছেলে,
নেমে আয়।' পুনরায় দৃঢ় চক্ষু মেলে
সে কহিল দুটি কথা, "যাইব সাগরপারে।'
যত তার শ্মশ্রু ধরি টানাটানি করে
রহিল সে বিমান আঁকড়ি। অবশেষে
নরেন করুণ স্নেহে কহিলেন হেসে,
"থাক্
থাক্ সঙ্গে যাক্।'
জেটলি রাগিয়া বলে
"চল
তোরে দিয়ে আসি সাগরের জলে!'
যেমনি সে কথা গেল আপনার কানে
অমনি নরেনের বক্ষ অনুতাপবাণে
বিঁধিয়া কাঁদিয়া উঠে। মুদিয়া নয়ন
"নাগপুর
নাগপুর'
করিল স্মরণ।
শ্মশ্রু ধরি কৈপিন তুলি, তার সর্বদেহে
করুণ কল্যাণহস্ত বুলাইল স্নেহে।
আমোদীয় তারে ডাকি ধীরে চুপি চুপি কয়,
"ছি
ছি ছি এমন কথা প্রকাশ্যে বলিবার নয়।'
রামাও যাইবে সাথে স্থির হল কথা--
রতন লোকের মুখে শুনি সে বারতা
ছুটে আসি বলে, "বাছা, কোথা
যাবি ওরে!'
নরেন কহিল হাসি, "চলিনু সাগর পারে,
আবার ফিরিব, টাটা!' পাগলের
প্রায়
রতন কহিল ডাকি, "মন্ত্রইমশায়,
বড়ো যে যাচ্ছেন সেথা ফেলিয়া আমার,
কে মোরে সামালিবে? জন্ম হতে যার
করেছি লালন, সামান্য চাঁদা কোথাও--
দিইনি এমন নাই , সেগুলি ফিরৎ দিয়ে যাও।'
নরেন কহিল, "রতু, যাইছি
সাগর পারে,
আবার ফিরিব আমি।' বিপ্র স্নেহভরে
কহিলেন, "যতক্ষণ আমি আছি ভাই,
তোমার রাখাল আমি, কোনো ভয় নাই।
এখন নলখাগড়ার ভীর ক্ষিপ্ত জনপদ,
অনেক কালাধনীর মেলা, পথের বিপদ
শেষ নাই; যাতায়াত একটি হপ্তা কাল,
তোমারেও লইয়া যাব, আমি তোমারও রাখাল।'
অলীক ভাষনবাজ, জাপান দিল পাড়ি,
হয়রান হইল সবে যত নরনারী
অশ্রুচোখে। হেমন্তের প্রভাতশিশিরে
হা হুতাশ করে দেশ গঙ্গানদীতীরে।
**************************
(কবিগুরু
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেবতার গ্রাস উন্মাদের গ্রাসে)
No comments:
Post a Comment