মনুষ্য।
মনুবংশীয় জাতক যারা, তারাই
মনুষ্য হিসাবে গণ্য হয়ে থাকে। সেই সুদূর অতীত থেকে বর্তমান হাতেগরম অন্তর্জালের
বিশ্ব নাগরিকের সভ্যতা। অত্যন্ত সমৃদ্ধ সেই ইতিহাস। যুগ যুগান্ত ধরে সেই সভ্যতা
বিবর্তনের মধ্যে অতিবাহিত হয়ে বর্তমান দিনে এসে পৌঁছেছে। এই উন্নত উন্নাসিক সমাজের
পিছনের ইতিহাসে দিকে তাকালে দেখতে পাই, তৎকালীন
সময়ের প্রাচীন উন্নত সমাজ ব্যবস্থার যে মূল সংবিধান ছিল, তার নাম বেদ। আরো ভালো করে বললে ঋগ্বেদ সংহিতা।
ভারতবর্ষের সনাতন বিধিপন্থী ব্যতিরেকেও প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্যের
আর্য ও ইন্দো-আর্য সমাজ, বেদ নামক অনন্ত জ্ঞান সমুদ্রের মধ্যে
নিজেদের নিমজ্জিত করে সেখান হতে অর্জিত প্রাজ্ঞতাকে বক্ষে লালন করেই এই বর্তমান
সমাজের জন্ম দিয়েছে। যাহাকিছুই আজ নুতন বলে দাবি করা হোক না কেন, আসলে সে সকলই বৈদিক অনুপিলি মাত্র। যেখানে অভিনবত্ব মানে
বিস্মৃত অতীতের পুনরাবৃত্তি মাত্র। বেদই হল আধুনিক সমাজের সুতিকাগাহ।
ছিদ্রান্বেষীর দল ক্রমাগত, যত কটূ শ্লেষাত্মক অম্লভাষণে জর্জরিত
করার প্রচেষ্টা করেছে, বেদ নিজস্ব মহিমায় নিজেকে ঠিক ততটাই
সমালোচোনার উর্দ্ধলোকে স্থাপন করেছে।
ঠিক এই কারনেই আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল আণবিক সমাজ কাঠামোতেও, বেদ সমান প্রাসঙ্গিক।
এখন বিষয় বেদ কি? কাকে বলে? এটা কি শুধু মাত্র কিছুমাত্র সংস্কৃত শ্লোকের সমষ্টি? যাগ-যজ্ঞাদির সংবিধান! আসলে আমাদের এই বর্তমান
শিক্ষাব্যবস্থার বিদ্যার্থীরা পেশাভিত্তিক ও কেবলমাত্র সুউপার্জনক্ষম শিক্ষা
ব্যবস্থার ফসল। সেখানে জ্ঞান-মার্গ-অনুভব-চেতনার স্থান খুব কম। তাই শুনতে অপ্রিয়
হলেও আমাদের এই প্রজন্ম বেদ পুরানের বিষয়ে প্রায় অজ্ঞ। যাঁরা জানেন বা চর্চা করেন
তাঁরা শতাংশের বিচারেও আসেন না। এর জন্য চাই ধৈর্য, ইতিহাদের
প্রতি আগ্রহ, আর শাস্ত্রবিদ্যা সম্বন্ধে নিগুঢ়
প্রেম। একবার এই জ্ঞানের ভান্ডারের সঠিক হদিশ পেয়ে গেলে, বাকি সকল নীতিবাক্যকে বেদের অপত্য বলে মনে হতে বাধ্য। তাছাড়া মূল গ্রন্থ বাংলা বা ইংরাজীতে লিপিবদ্ধও নয়, বা যেগুলি আছে সেগুলি আবার তুলনামূলক ভাবে সহজলভ্য নয়।
ব্যাকরণগত ভাবে ‘বিদ’ নামক ধাতু-শব্দ থেকে বেদ নামটির উৎপত্তি। 'বিদ' মানে হলো, জানা বা শেখা বা অবগতি প্রাপ্ত হওয়া। সুতরাং বেদ এর মানে হলো
জানা, বাহ্যিক-ঐহিক জ্ঞানের আহরণ স্বত্বিক ও
পরত্রিক জ্ঞানের আহরণের নামই বেদ। পরমাত্মার সাথে পরমেশ্বরের মিলন ঘটানো, অর্থাৎ সত্যের সাথে আত্মার মিলন ঘটাতে গেলে যে জ্ঞান বিনা
গতি নেই তা হল বেদ। হিতকর উদ্দেশ্যে যাহা কিছু তাহাই জ্ঞান, জ্ঞানই সত্য, জ্ঞানই
নিত্য। বৈদিক মতে জ্ঞানী আত্মাই শুদ্ধ, শুদ্ধ
জ্ঞান হল সনাতন, সনাতনই কেবলমাত্র সিদ্ধিলাভ করতে
পারে। সনাতন শুদ্ধতার নামই ধর্মচারণ। তাহলে জ্ঞানই হল ধর্ম। আর বেদের অপর নাম
জ্ঞান। ধর্ম আর বেদ একে অপরের পরিপূরক, শুধু নামের
ভিন্নতা মাত্র। যাহা কিছু ধর্মের পরিপন্থী তাহা জ্ঞানের পরিপন্থী, জ্ঞানের পরিপন্থী মানেই অজ্ঞানতা, জ্ঞানের বিরুদ্ধাচারণ মানেই ধর্মের বিরুদ্ধাচারণ। সুতরাং
অজ্ঞানতা-অধর্ম সেখানেই বিরাজ করে যেখানে বেদের আলোক পৌঁছায়নি।
সুসময়ের অন্বেষণে আমরা দিগ্বিদিগ জ্ঞানশুণ্য হয়ে উদভ্রান্তের মত ছুটে চলেছি। সনাতন ধর্মালম্বী মানুষেরা কেন একক ভাবে রাজত্ব তথা দেশ শাষনের ভার পেতে অসফলকাম হচ্ছে! কেন সেই সুবর্নযুগ ফিরে আসছে না! সেই ৩০০-৬৫০ খ্রীষ্টাব্দের ধ্রুপদীযুগ। যেখানে গুপ্ত সাম্রাজ্য থেকে হর্ষসাম্রাজ্য ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। এই সময়েই সর্বপ্রথম হিন্দু মন্দির স্থাপিত হয় (তর্কের অবকাশ থাকরেই পারে)। আসলে এই যুগের প্রান্তিক রাজারা সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিজেদের স্থাপন করে ফেলার দরুন এই সাম্রাজ্য অচিরেই ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।
নিজেদের প্রায় দেবতার স্থানে নিয়ে চলে যান , সাধারন প্রজাদের নজরে। আসলে তারা জ্ঞানবিমুখ হয়ে পড়েছিলেন, ধর্মজ্ঞান খুইয়ে পথভ্রষ্ট হয়েছিলেন, কারন বেদের পথ থেকে সরে গেছিলেন। আজও সেই ধারা প্রবাহমান। কিছু মুষ্টিমেয় জ্ঞানী, বিদ্বান, অন্বেষণকারী ও মুনিঋষি গন ব্যতিরেকে বেদের চর্চা কোথায়! বেদের আদর্শ শুধু মুনিঋষিরা মানবেন তা নয়, বেদ সার্বজনীন। এই জ্ঞানের বিকাশ সমাজের সর্বস্তরে প্রসার না ঘটাতে পারলে, সমাজের উন্নতি অসম্ভব। কি আছে বেদের অভ্যন্তরে, কতটাই বা প্রাসঙ্গিক এই বেদ, আজকের সমাজচেতনার সাথে কতটুকুই বা খাপ খাওয়াতে পারবে বেদের আদর্শ!! এগুলো জানতে হলে , বেদ পাঠই হল একমাত্র বিকল্প।
জ্ঞানার্জনের কোন শর্টকার্ট নিয়ম হয় না, সুতরাং বেদ কে আবিষ্কার করার কোন রেডিমেড নিয়ম নেই, সেই আদি সনাতন পন্থা। পাঠ করতে হবে। বেদ স্বপ্রমানিত এবং
স্বতঃসিদ্ধ, ইহাই বেদের মাহাত্ব্য। বেদকে অজ্ঞানরা
অভক্তি করতেই পারেন, কারন তাঁরা ওই সুধার সন্ধান পাননি। তাঁকে
যদি কোনভাবে একবার সঠিক টিকা ও বিশ্লেষণ সহ বেদের গুঢ় অর্থ বর্ননা করা যায়, সে বেদের প্রেমে পড়ে সাধু চেতনায় উদ্ভাষিত হতে বাধ্য। বেদপাঠ
মোটেই সহজকার্য নয়, তবে তার মর্মদ্ধার করা ততোধিক কঠিন।
সঠিক জ্ঞানবান পন্ডিতের নিকটই দীক্ষাগ্রহণ করা উচিৎ।
বেদই এতই পুরাতন , যে তখনও কাগজ বা লিখিত সংরক্ষন
প্রণালী আবিষ্কারই হয়নি। শুনে শুনেই বেদকে আয়ত্তে রাখা হয় সেই বৈদিককালে। যার জন্য
বেদকে শ্রুতি নামেও অবিহিত করা হয়। গুরুশিষ্য পরম্পরায় সে প্রবাহ অবিচ্ছিন্ন
থাকতো। বিভিন্ন জ্ঞানদ্রষ্টা বৈদিক ঋষিরা আধ্যাত্বিক জ্ঞানবলে বেদের মন্ত্র গুলিকে
প্রত্যক্ষ করেন, যাঁদের মধ্যে বিশ্বামিত্র, ভরদ্বাজ, বিশ্ববারা, লোপামুদ্রা প্রমুখ মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিগণ অগ্রগন্য। তাঁরাই
বেদের বিভিন্ন মন্ত্র ও সুক্তগুলিকে সংকলিত করেন। কিন্তু একে অপৌরুষেয় অর্থাৎ
ঈশ্বরের বানী হিসাবেই মানা হয়। বেদের ব্যবহার শুধুমাত্র মঙ্গলজনক কার্যেই
সীমাবদ্ধ। কারন অজ্ঞতার অন্ধকারে বেদ বসবাস করতে পারেনা।
বিধিসম্মতভাবে বেদ চতুবর্গ, মানে চার
ভাগে বিভক্ত। ঋগ্বেদ- যজুর্বেদ- সামবেদ-ও অথর্ববেদ। যদিও অনেক মুনিঋষিরা একে ত্রয়ী
নামে অবহিত করেন, কারন মিতত্ব, অমিতত্ব ও স্বরত্ব এই তিন ধরনের স্বরলক্ষন দ্বারা সজ্জিত হল
বেদের বিন্যাস। যজ্ঞকার্যে সুবিধার জন্য শ্রীকৃষ্ণদ্বৈপায়ন শ্রীব্যাসদেব বেদকে
চারিখন্ডে বিভক্ত করেন, যাহা ‘বেদব্যাস’ নামে পরিচিত। বেদ শুধুমাত্র জ্ঞানকান্ডের সম্ভার নয়, কারন কর্মকান্ড ছারা জ্ঞানকান্ড প্রতিষ্ঠা পায়না। যজ্ঞস্তুতি, দেবস্তুতি ও প্রার্থনাপ্রনালী নিয়েই বেদের মূল মন্ত্রাংশ
পদ্যাকারে সজ্জিত, বাকি অংশ গদ্যাকারে। বেদের বিভিন্ন
অংশ বিভিন্ন রুপে বর্নিত, সংহিতা ও আরণ্যক অংশে জ্ঞানাশ্রয়ী
নীতিকথার সম্ভার বর্নিত। আর জ্ঞানাংশই বেদের সারাংশ। ব্রাম্ভণ অংশে বেদের মন্ত্রের
কর্মাশ্রয়ী ব্যখ্যা পাওয়া যায়। আর সমাজবিধি, শিক্ষা, শিল্প, ব্রম্ভ, জগতের সৃষ্টি রহস্য, রাজনীতি
ইত্যাদির পরিপূর্ন উল্লেখ তথা নির্দেশ আমরা উপনিষদ অংশে পাওয়া যায়। এই ভাবেই
দৈনন্দিন সনাতন হিন্দু সমাজ বিকাশ লাভ করে। তাই বেদ শুধুমাত্র প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ
নয়, এটা আমাদের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন
সামাজিক দলিলও বটে।
বেদের বাণী অবিনিশ্বর, কারন
যাহা সনাতন তাহা তো অপরিবর্তনীয়।সকল শাস্ত্রের মন্থন করলে যে মজ্জাংশ অবশিষ্ট থাকে
তাকেই বেদ বলে। বেদের দর্শন সম্বন্ধে আমরা কিছু জানার চেষ্টা করবো।
আমাদের তৃতীয় বিশ্বের এক বড় সমস্য হল জন বিস্ফোরণ। বিশেষ করে চীনদেশ
ও ভারত উপমহাদেশ। অনিয়ন্ত্রিত জন্মহার সৃষ্টি করেছে খাদ্য ও বাসস্থানের অভাব। যার
জন্য অপরিকল্পিত যৌন জীবন অনেকাংশেই দায়ী। যৌন পীড়নে আমাদের সমাজ আজ জর্জরিত। নানা
বুদ্ধিজীবিদের দল নিজেদের নিজেদের মতন করে নানা প্রচেষ্টার পরেও সারা দেশে তেমন
উল্লেখযোগ্য আইন প্রনয়ন করতে পারেননি। যেখানে অথর্ব বেদের ৬.১৩.৮ অধ্যয়ে ও ৯.১০.১০ অধ্যয়ে যৌন নিপীড়ন মুলক কুৎসিত বিষয়
ও সেই অপরাধ সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খ শাস্তিবিধানের উল্লেখ আছে। কিন্তু আমরা তো বেদ
জানিই না। তাই সেখানে যে বিধান দেওয়া আছে যে বিষয়েও অজ্ঞাত।
কোন একজন ব্যক্তির উন্নয়নকে কখনোই প্রকৃত উন্নয়নের সূচক হিসাবে
চিহ্নিত করা যায় না। কারন মানব সমাজবদ্ধ জীব। সমাজের সার্বিক উন্নয়ন না ঘটাতে
পারলে নাগরিক জীবনে স্বস্তি বিরাজ করতে পারেনা। আর সার্বিক সামাজিক উন্নয়নের জন্য
প্রয়োজন প্রতিষ্ঠিত সমাজকল্যাণ ব্যবস্থার প্রমানিত স্মারকলিপি। আর সেটার জন্য
বেদের থেকে প্রমানিত আর কিই বা থাকতে পারে, যাহা
হাজার হাজার বছর ধরে প্রমানিত। সমাজকল্যাণের বিষয়ে বিশদে উল্লেখ আছে ঋগ্বেদের
১০.১১৭ অধ্যয়ে। আর আমরা অন্ধের মত সমগ্র দুনিয়া ঘুরে মরছি, বেদ অজ্ঞানতার জন্য।
গনতন্ত্র ব্যবস্থার মূল মন্ত্রই হল স্বাধীনতা, যেখানে থাকবে বাক্ স্বাধীনতা, তথ্য
জানার অধিকার, গনমাধ্যমের অধিকার। এইগুলোর সামান্যতম
বিচ্যুতি ঘটলেই গণতন্ত্রের উপর প্রশ্নচিহ্ন উঠে যায়। পাশবিক গুণের জন্য মানব, চরিত্রগত ভাবেই স্বার্থপর। যাহার জন্য দূর্নীতি মানব
চরিত্রের অন্যতম বদগুণ। সন্ত ব্যতিত এই দোষের থেকে উত্তীর্ন হওয়া মুশকিল। আর এর
জন্য প্রয়োজন সকল প্রকার কর্মযজ্ঞে স্বচ্ছতা। জনমানসে স্বচ্ছতার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে
জ্ঞান খুব পরিষ্কার ভাবে ছড়ানো প্রয়োজন, সেটা আজ
আমরা বুঝি, নতুবা সামগ্রিক স্বচ্ছতা আনয়ন অসম্ভব।
অথচ হাজার হাজার বৎসর পূর্বেই আমাদের স্বাস্ত্রে তথা অথর্ব বেদের ৫-১৮ ও ৫-১৯
অধ্যয়ে, খুব পরিষ্কার ভাবেই উপরোক্ত সকল
গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্তম্ভ গুলির ব্যাপারে বিশদে দিক নির্দেশ তথা বর্ননা করা
আছে ও গণতন্ত্রের সুষ্পষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছে।
সুতরাং আধুনিক যে গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সেটা সেই প্রাচীন বেদের আবর্তেই সীমাবদ্ধ। এটাই বেদের
মাধুর্য। এবং এখানেই বেদ প্রশ্নাতী ভাবে কাল সীমানার গন্ডি অতিক্রান্ত।
আবার এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতে সমান অধিকারের ফলে দ্বন্দের উদ্ভব
ঘটে। কারণ প্রত্যেক মানুষের সহনশীলতার মাত্রা আলাদা আলাদা। ক্ষমতা কুক্ষিগত করে
রাখার এক নীচ প্রয়াস সকল সমাজেরই এক অতি পরিচিত অঙ্গ। তাই গণতন্ত্রকে সঠিক মর্যাদা
দিতে ও দীর্ঘস্থায়ীভাবে টিকিয়ে রাখতে সমাধান সূচক জ্ঞানের প্রয়োজন, যাহার দ্বারা সুস্থতার সাথে দ্বন্দের মীমাংসা হবে। আর তার
সবিস্তার ব্যাখ্যা যজুর্বেদের ১৬.৯-১৬.১৪ অধ্যয়ে বর্নিত। যে মন্ত্রে গণতন্ত্র
প্রতিষ্ঠা পায়, তার নামই হল বেদ।
সারা পৃথিবীর রাষ্ট্রনায়করা স্বীয় স্বীয় দেশের বৃদ্ধির জন্য কতই না
পরিকল্পনা গ্রহণ করে চলেছে। সেখানে উন্নত বিশ্ব গুলো ইচ্ছা বা অনিচ্ছাতে শোষণ করে
চলেছে দূর্বল রাষ্ট্রগুলিকে। আর আমাদের মত দ্রুত উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মাথারা এখনো পর্যন্ত
দীর্ঘমেয়াদি দিশা দেখাতে ব্যর্থ। ররাজনীতির চক্রবূহ্যে ডান-বাম-রাম সকলেই এক ভূমে
লীন। আচ্ছে দিনের প্রতিশ্রুতিই সার, কোন
কার্যকরী পরিকল্পনাই নেই। অথচ শ্রুতির মানে ঋগ্বেদের ৮.৭৪ অংশে দীর্ঘমেয়াদী
সমৃদ্ধির যে রূপরেখা রয়েছে, কজনের কাছে সেই বিদ্যার খোঁজ আছে!
সুতরাং দিশাহীন তো হতেই হবে আমাদের সমাজকে এতে আর আশ্চর্যের কি!
আজকের যুগে আমরা সবুজায়ন নিয়ে মাথা ঘামিয়ে মাথায় টাক করে ফেলছি। সৌর বিকিরন সম্বন্ধে গবেষনার অন্ত নাই। হাড় ও হৃদয়ের বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য সবুজায়ন ও সুর্যের উপকারিতা সন্বন্ধে ঋগ্বেদের ১.৫০ অধ্যয়ে বিশদে বর্ণনা করা আছে। এটাই বেদ।
আজকের দিনে সংবাদমাধ্যম বা সামাজিক মাধ্যম সেটা কাগজ বা বৈদ্যুতিম
যে মাধ্যমই হোক না কেন, খুললেই খুন, রাহাজানি হানাহানি ইত্যাদি খবরেরই ঘনঘটা। সেটা পারিবারিক
থেকে সামাজিক সর্বস্তরে সহিংস আকার নিয়েছে। প্রশাসন হাজার রকমের নীতি গ্রহন করছে, এগুলোকে রোখার। কিন্তু এই সমস্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধিই পেয়ে
চলেছে। কন্যাভ্রূণ হত্যা বর্তমান সমাজের জ্বলন্ত সমস্যার অন্যতম। গর্ভস্থ ভ্রুনের
লিঙ্গনির্ধারন পদ্ধতি বন্ধ করে হয়ত বা কিছুটা কন্যাসন্তান রক্ষা করা যাচ্ছে।
কিন্তু তাদের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ পালনপোষনে বহুলাংশেই ঘাটতি থেকে যাচ্ছে, লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছে ক্রমগত একটা বৃহত্তর নারী সমাজ সর্বদা, শোষিত হচ্ছে।
মহিলারাই তো সমাজের মা, তাই কন্যা শিশুদের সঠিক শিক্ষা থেকে সামাজিক সুরক্ষার জন্য
সমাজের সর্বস্তরে মহিলাদের প্রতি অসহিষ্ণুতার মাত্রা নির্মূল করার জন্য যে সামাজিক
সচেতনতা প্রয়োজন তাহার যাবতীয় বিধান রয়েছে আমাদের প্রাচীন রত্নভাণ্ডার বৈদিক
শাস্ত্রের অভ্যন্তরে। “কন্যাশ্রী” থেকে “বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও” ইত্যাদি নানা সরকারি প্রকল্প কিছুদিন হল কন্যা শিশুদের জন্য
চালু হয়েছে বটে, অথচ ঋগ্বেদের ১০.৮৫.৪ অধ্যয় ও অথর্ববেদের
৫.১৭, অধ্যয়ে সবিস্তারে উপরোক্ত সমস্ত
প্রকারের সমস্যার সুস্পষ্ট সমাধানের বিধান লিপিবদ্ধ আছে।
শরীর হল মন্দির স্বরূপ এবং এটি একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রও বটে।
সুতরাং সেটির নূন্যতম ও যথাযত পরিচর্যা প্রয়োজন। নিয়মিত শরীরচর্চার পাশাপাশি সঠিক
ও পরিমিত খাদ্যাভাস অত্যন্ত জরুরি, যেখানে
সঠিক পরিমানে কার্বোহাহড্রেট, প্রোটিন, লিপিড, ইত্যাদিসহ রক্তের সংবহন প্রণালী
এবং অসুদ্ধি ক্ষতিকারক কোলেষ্টেরলের মাত্রার বিষয়ে সেই যগেও একটা পরিচ্ছন ধারনা
দিয়ে গেছে বেদ। যাহা ঋগ্বেদের ৪.৫৮ ও অথর্ব্ বেদের ১২.৪ অধ্যয়ে বর্নিত।
এই হল সমুদ্রের সম্মুখে কপোতাক্ষির অশ্রুসম ব্যাখ্যা। বেদকে আরো
জানতে জলে বেদ পড়ুন, নিজে। আর জানুন নিজেকে। কারন বেদই হলো
জ্ঞান। যাহা আর পাঁচ জনের সাথে আপনাকে আলাদাকরে দেবে, জ্ঞানের গরিমায়। বেদ এই জন্যই আজও প্রাসঙ্গিক, আছে ও ভবিষ্যতেও থাকবে।
________
উন্মাদ হার্মাদ
No comments:
Post a Comment