আপাদমস্তক ভারতীয় লেবুদাও একসময় ভীষণ
আমেরিকা প্রেমী ছিলেন। এটা অবশ্য তার গোপন কিছু নয়। তার জীবনের অন্যতম চরম আক্ষেপ
যে, ব্যক্তি স্বাধীনতার মক্কা হল গিয়ে ওই আমেরিকা, অথচ গ্রহের ফেরে ভীষণভাবে
ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এই শর্মা এই দেশে জন্মেছেন। আর সেই ভাবনা থেকে এমন
মুষড়ে পড়েছিলেন যে, তার অভিঘাত প্রতিটি বড় পীক্ষার রেজাল্টে চিরকালের জন্য ছাপ
ফেলে গেছে। অন্যের গোলামী করার মত রেজাল্ট তিনি বানাননি, মতান্তরে যোগ্যতা ছিলনা।
কিন্তু এটা তার গর্ব। তাই আজ তিনি স্বনির্ভর এজেন্ট।
বেশ কয়েক দশক আগের কথা, লেবুদা তখন
সামান্য ছাত্র মাত্র। ওনার স্বর্গীয় পিতার প্রথম ও একমাত্র চারচাকা গাড়িটার
কোম্পানী ছিল ফোর্ড। এবং পিতার সেই সিদ্ধান্তের পিছনে তার জেষ্ঠ্যপুত্র দর্পনারায়ণ
ওরফে লেবুর প্রকাশ্য হস্তক্ষেপ ছিল। কারন সেই সময়কার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিল
জেরাল্ড ফোর্ড। সেই শুরু। লোকে আজকাল যখন হলিউডি সিনেমা নিয়ে আদিখ্যেতা করে
বেরাচ্ছে, লেবুদা সেই কালেই, বুকে 'জিম কার্টার' লেখা গেঞ্জি পরে কলেজ গেছেন। তাতে
অভিনেতা জিম কার্টারের পাশাপাশি তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টারকেও ধরতে
পেরেছিলেন একমুঠোতে।
আজকের ছেলেছোকরার দল রোলান্ড রোনাল্ড
করে পাগল। অথচ সেই আশির দশকের শেষে থেকেই লেবুদা রোনাল্ড ভক্ত। রোনাল্ড রেগন। এর
পর কলেজের পাঠ চুকেবুকে গেলে, কিছুদিন পেশাসন্ধানে অতোটা আন্তর্জাতিক খেয়াল রাখতে
পারেননি তিনি। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে একটু থিতু হতেই, আবার সেই আমেরিকা প্রেম
চাগাড় দিয়ে উঠল। বাবার মত গাড়ি কেনার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু সীমিত রোজগার। অথচ আমেরিকা
প্রেমের স্বারক কিছুতো একটা চাই, তাও সর্বক্ষণের জন্য।
অগত্যা......
গ্যালিফ স্ট্রটের পোষ্যবাজার থেকে, স্বস্তাতে একটা খাঁটি দেশীয় কিন্তু তাগড়াই নেড়ি কিনে বাড়ি ফিরলেন। বাড়িতে যে অশান্তি এক্কেবারেই হয়নি তা নয়, কিন্তু তখন যুবক লেবু ‘জল চিবিয়ে খায়’, সুতরাং যাবতীয় বিদ্রোহ কড়াহাতে মোকাবিলা করে আদরের পোষ্যটির নাম দিল ‘বুশ’ । জর্জ হার্বার্ট ওয়াকার বুশ তখন প্রেসিডেন্ট। এর পর থেকেই লেবুদা মানসিক তৃপ্তি লাভ করত ভীষন। বুশ তার উচ্ছিষ্ট খায়, আদরে গাল চেটে দেয়, সোহাগে গররর... গররর... করে ইত্যাদি। সবচেয়ে প্রসন্নতার বিষয়টা ছিল বুশের সাথে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে এক ঘরে বাস। এতোটা তৃপ্তি জীবনে তিনি কমই পেয়েছেন।
গ্যালিফ স্ট্রটের পোষ্যবাজার থেকে, স্বস্তাতে একটা খাঁটি দেশীয় কিন্তু তাগড়াই নেড়ি কিনে বাড়ি ফিরলেন। বাড়িতে যে অশান্তি এক্কেবারেই হয়নি তা নয়, কিন্তু তখন যুবক লেবু ‘জল চিবিয়ে খায়’, সুতরাং যাবতীয় বিদ্রোহ কড়াহাতে মোকাবিলা করে আদরের পোষ্যটির নাম দিল ‘বুশ’ । জর্জ হার্বার্ট ওয়াকার বুশ তখন প্রেসিডেন্ট। এর পর থেকেই লেবুদা মানসিক তৃপ্তি লাভ করত ভীষন। বুশ তার উচ্ছিষ্ট খায়, আদরে গাল চেটে দেয়, সোহাগে গররর... গররর... করে ইত্যাদি। সবচেয়ে প্রসন্নতার বিষয়টা ছিল বুশের সাথে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে এক ঘরে বাস। এতোটা তৃপ্তি জীবনে তিনি কমই পেয়েছেন।
হাজার হোক, নেড়ি তো। বছর ঘুরতে না
ঘুরতেই, পাড়ার এক মেদ্দির সাথে বুশকে ভয়ঙ্কর আপত্তি জনক অবস্থায় আবিষ্কার করলেন
লেবুদা স্বয়ং। প্রথমে ভয়ঙ্কর রাগ হলেও, ভাবনা চিন্তা করে ব্যাপারটা মেনে নিলেন।
কারন হাজার হোক নামটা তো আমেরিকান, তাই একটু আধটু বহুগামিতা না থাকলে যে চরিত্রটা
খোলতাই হবেনা প্রবাসী মার্কিনি হিসাবে। কিন্তু পরের ভাদরেও সেই একই দৃশ্য, আর
বিশ্রী রকমের অহরহ। ঘরের ভালমন্দ খেয়ে দেয়ে উনি পাড়াময় রাসলীলা করে বেড়াচ্ছেন। নাহ
এবার আর রেহাই দেয়নি লেবুদা। সোজা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। যাকে বলে
ত্যাজ্যপুত্র।
বছরখানেক প্রায় মনমরা চুপচাপ থাকার পর,
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আবার আমেরিকান প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন নিয়ে মহা শোরগোল
তখন। লেবুদাও সেই সুযোগেতে গা ভাষাতে দেরি করলেননা। এবার আর নেড়ি নয়, সদ্য বিয়ের
বছরে, এক্কেবারে সাদা চুলের স্পেনিয়াল কিনে সোজা বাড়ি এসে বৌদির কোলে গিফট করলেন।
আহ্লাদিত বৌদি কিছু একটা নাম দিতে যাচ্ছিলেন বটে, লেবুদা তার আগেই জানিয়ে দিলেন এর
নাম ‘ ক্লিন্টন’।
ছোট্ট ক্লিন্টন সবার আদরের হয়ে উঠতে
সময় নিল না। আসেপাশের বাড়ির ছোট ছোট ছেলে মেয়ে আর বুড়োদের সময় কাটানোর সাথী হয়ে
উঠল ক্লিন্টন। ব্যাস কিছুদিন যেতে না যেতেই নানান গোপন কীর্তি ফাঁস হতে লাগল তারও।
লেবুদার আর আনন্দ ধরেনা। দত্তবাড়ির সুন্দরী স্পেনিয়াল কন্যাটির সাথে ক্লিন্টনের
পরিনয়ও ঘটিয়ে দিলেন, যাতে কোন পরকিয়াতে না জড়িয়ে পরে। কিন্তু ক্লিন্টন এর পরেও
বেপরোয়া হয়ে উঠল। বিরক্ত লেবুদা তাকে সেই, বাজারেই বিসর্জন দিয়ে স্বস্তি পেলেন। আর
সিদ্ধান্ত নিলেন খুব হয়েছে, আর আমেরিকা প্রীতি নয়, সব ব্যাটা লুজ ক্যারেক্টার।
ততদিনে লেবুদা দুই মেয়ের বাবা। একদিন
সকালে সদর দিয়ে বেরোচ্ছেন, একটা ছোট্ট গাট্টাগোট্টা নেড়ি পায়ের কাছে কাঁওকাঁও করতে
লাগল। পোষ্যপ্রীতি তো একটা ছিলই। তাই মনে মায়া জেগে উঠল। ওটাকে বাড়িতে টেনে
তুললেন। রাত্রে অফিস থেকে বাড়ি ফিরলে বৌদি খবর দিল যে, লেবুদার প্রথম নেড়িটার
ছেলেই নাকি এই পাপ্পিটা। একেই বলে অদৃষ্ট। তাই লেবুদা না চাইলেও 'জর্জ বুশ' বহাল
তবিয়তে যে যার জাইগা দখল করল।
মুংলা আর জর্জবুশ এখন খেলার সাথী।
মাঝেমাঝে ছোট্ট বুশের সাথে, তার মা দেখা করে যায়। বৌদি তাকেও খেতেটেতে দেয়। এমনি
করে সেও লেবুদার বাড়ির স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গেল। কালো দোভাষী জাতের নেড়িটা।
খাবারের লোভে সিনিয়র বুশ বাড়ির আসেপাশে ঘোরাঘুরি করলেও, লেবুদা তাকে ঘরে তোলেনি,
বৌদি খেতে দিলে অবশ্য কিছু বলতেননা। লেবুদা মনে মনেই হাসেন। বুশের বাবা মা, ওর
বাবা মা , ওবামা...
কি সুন্দর মিলে যাচ্ছে। চোখে মুখে একটা
প্রশান্তির ছায়া। মেলালেন, এবার লেবুদা নিজেই মেলালেন। চরৈবেতি ......
এরই মধ্যে দত্তবাড়ির ছেলে ভাল চাকরি
পেয়ে আমেরিকাতে প্রতিষ্ঠিত। বৃদ্ধ বাবামা কে সেখানে নিয়ে যেতে এসেছে। যাবার
বেলাতে, দত্তজা সেই মেয়ে স্পেনিয়ালটিকে লেবুগিন্নিকে গিফট করে দিয়ে গেলেন। হাজার
হোক কুকুরসম্পর্কীয় বৌমা তো বটে, তাই ওনার থেকে ভাল আর কে বাসবে ছোট্ট মাদি স্পেনিয়ালটিকে।
লেবুদা আবার হাসলেন। মেলালেন তিনি
মেলালেন। তিমি আমেরিকা ভুলতে চাইলে কি হবে! লেডি ক্লিন্টন আবার হাজির।
এরপর কয়েক বছর এমনিই নিস্তরঙ্গ জীবন
কাটছিল। কিন্তু এখন ছেলে মুংলা বড় হয়েছে। তারও বাবার মত পোষ্যে ভীষন ঝোঁক। রঙিন
মাছ, পায়রা, গিনিপিগ কি না বাড়িতে নেই। কদিন আগেই বাবার কাছে আবদার করল- বাবা আমার
ডোনাল্ড চাই” । লেবুদা আজকাল আমেরিকা নিয়ে অতো খোঁজ রাখেননা। ভাবলেন ছেলে কার্টুন
ভক্ত, তাই ডোনাল্ড ডাকের প্রেমে পরে একটা হাঁস টাস হয়ত বাড়িতে আনবে।
আজ সকালে খানিক আগে লেবুদার মাথায় হাত।
এক বড়লোকের বখে যাওয়া, ঘেয়ো বয়স্ক
গোল্ডেন রিট্রিভার নিয়ে হাজির মুংলা।চেল্লানির চোটে গোটা পাড়াতে ত্রাহি ত্রাহি রব।
রাগের চোটে লেবুদা ঘরে গিয়ে টিভিটা খুলে বসলেন।
খবরের চ্যানেল অন হতেই নিচের স্ক্রলে
দেখলেন –
Donald
J Trump, elected 45th President of the United States
লেবুদা বিড়বিড় করতে লাগলেন.........
“মেলালেন, আবার তিনিই মেলালেন”
“মেলালেন, আবার তিনিই মেলালেন”
স্বাগতম ডোনাল্ড ট্রাম্প।
No comments:
Post a Comment