Tuesday, 23 May 2017

।। সুখ ।।

সুখ; তুই ছিলি ভীষন দামী
একলা মনের ঠাঁই 
আজ, জ্যান্ত শুধু কাগজেকলমে 
মেখে সোহাগের ছাই।

সুখ; তোর মনের ভাঁজে; খাঁজে খাঁজে 
লুকিয়ে রাখা উষ্ণতা
কিভাবে তোকে বোঝায়! আমার
ফুরিয়ে গেছে কথা।

সুখ; চাইনা তোর গঠনমূলক 
আদরের কথা বলতে
মানমন্দির আঁধার কালো
শ্মশানভূমির সলতে।

সুখ; আজ শুধু হাঁতরে খুঁজি
কোনখানটাতে ভুল
ফারাকটা শুধু বড্ড বেশি
মিলবেনা দুই কুল।

।। মু-ক্ত ।।

মুক্ত আমি ভুবনডাঙায়

প্রযত্নে: স্বাধীনতা
যেথা খুশি সেথা যাব
ভাবনা অযথা।

আমি সমর্থ আমিই সত্য
মোর পিছে অবশিষ্ট
খামবন্দি অভিভাবক ছাপ
আত্মিক সন্তুষ্ট।

অর্থ আছে গুনও আছে
রয়েছে রূপের জোর
অভীষ্ট লক্ষ্য পূর্ণ যখন
প্রয়োজন কি তোর?

Sunday, 21 May 2017

।। হাটে বাজারে ।।

চলতে চলতে - ৩

একে ছাল ক্যেলানো গরম। সকাল থেকেই মনে হচ্ছে, যে মোমো প্যানের ভিতর গ্যোঁত হয়ে বসে আছি। আমার সিল মাছের ব্লাডারের গুঁতো, চর্বিতে চর্বিতে টের পাচ্ছি। বগলে পাওডারের পুরু স্তর প্রবাল প্রাচীরের মত শক্ত হয়ে যাচ্ছে।
তার উপর সক্কাল সক্কাল ধামাধরা দলের কেষ্টু বিষ্টুদের আনাগোনা। শ্লাদের সারা বচ্ছরই মোচ্ছোব; আজ রোববার ঠিক জানে বাড়িতে থাকবো, তাই আমার আপনার মত ম্যাঙ্গো পিউপিলের কাছে চাওয়াটা তাদের তো গনতান্ত্রিক অধিকারজুত অবশ্য খুব একটা হলো না, একটু অসম্মানেই বিদেয় হলো। তার মধ্যে একটা ছিনাল ও ছিলো। ইচ্ছা হচ্ছিলো ওটাকেই একটা কিছু দিই, নিদেনপক্ষে একটা ঝিঙ্গালিলাকি উৎকট পোষাক রে বাওয়া; যৌবনের টায়ারের দাগ টাও মিলিয়ে যাবার পথে, কিন্তু সেটাকে দৃশ্যমান করে রাখার কি আপ্রান প্রচেষ্টা অন্তত একটা ডিও দেবার ও ইচ্ছা শেষমেশ হয়েছিলো। যা ঘামের গন্ধ, আঁতুড়ের স্যারেলাক উঠে আসার যোগার
আমারই বা কম কি!!  একবার মাথা মুছলে এক জামবাটি ভর্তি ঘাম বেড় হচ্ছে, সত্যিকারের হিসু বলতে রাত ছারা গোটাদিনে মোটেই হচ্ছেনা। কিডনির পরিশ্রুত বদ জল সবটাই ঘামের জন্য ব্যবহার হচ্ছে, হিসির ট্যাঙ্কিতে তাই সাপ্লাই নেই। কাজ শুরুর কাজ চলছে, সাইটে একবার রাউন্ড দেবো কি; আধা পথে যেতেই পায়ের জুতো ভিজে সপসপ। অনেকেই লক্ষ্য করছে, সাহস করে বলতে পারছে না, ভাবছে প্যান্টে মুতেছি।
ওরে পাগলা, ওটা ঘামের গঙ্গা যমুনা। মাথার গড়ানো মাল, বুক পিঠ থেকে কালেকসন করতে করতে সরস্বতীর ফল্গু ধারা নিচের দিকে নামছে। যার জন্য অস্বস্তি ঠিকিই আছে, কিন্তু সে রকম কষ্ট নেই। ওটাই কলেবরকে শীতলতা যোগাচ্ছে; তবে চাঁদি ফাটছে। মাথার চুলও শ্লা হালকা হয়ে গেলো, জাষ্ট ঘেমে ঘেমে। লিটার লিটার জল গিলছি, শরবত বৎসর বৎস বাৎসায়ন এক্কেবারে নরকগুলজার। এই গরমেই কেন জামাইষষ্টি হয়? আর সন্ধ্যের কালবোশেখিতেই যত্ত বিয়ের নেমন্তন্ন। একে তো গাড়িতে গাড়িতে পথে ঘাটে ট্রেনে বাসে হাঁসফাঁসে জীবন জেরবার, তার ওপর ফোন! কেন যে এটা আবিষ্কার হয়েছিল কে জানে, মুষ্ঠিযন্ত্র কম, মিথ্যা যন্ত্র বেশি... জ্বলে গেলো জীবনটা।
সকালে উঠে কি খাবো কি খাবো এ একটা ভীষণ যন্ত্রণা। ঝিঙ্কু মামনি বা ডাম্বেলওয়ালা বীরপুরুষ নিদেনপক্ষে মেনিমুখো স্ত্রৈণ মাতৃভক্ত নেকুপুসুটিও নই; যে আধ বাটি দুধে বাইশদানা কর্ণফ্লেক্সের সাথে কুচি কুচি করে কাঁঠালি কলা আর হলুদ কিসমিস ফেলে সাঁটবো। দই চিঁড়ে পোষায়না, মুড়ি চেবানোর সময় নেই। বাকি ম্যাগি, পাস্তা দিয়ে নাস্তা করার মত পকেট সায় দেয়না। পরোটা খাবো তার উপায়ও নেই, সারাটাদিন বদ ঢেঁকুর উঠবে। পেটে বুদ্ধি না থাক, অম্বলের কমতি নেই। অগত্যা দুটো মারি বিস্কুট, চিনি ছারা ঘন দুধচা ই সম্বল, সেটাই এক মগ পুরো। ভারী খাবার মানেই সুজির বিস্বাদ হালুয়া। জলখাবারে লেবু বিট লবন দিয়ে একড্রাম ছাতুর শরবত। আহা, যতই কোন্ডড্রিংকস, রাসনা, গ্লুকনডি বাজারে আসুক ঘোল বা ছাতুর সরবতের কোনো বিকল্প নেই।
এরপর আধা ঘন্টার কমোড সাধনা, আগে আনন্দবাজার নিয়ে ঢুকতাম, সাথে দুটো সিগারেট; এখন মোবাইল। আজ সাদা দাড়ির সুদীপদাকে দেখে বেশ আমলাশোলের মত লাগছিল, বেশ একটা শান্ত পরিতৃপ্ত হয়ে সুকর্মটি করছিলাম, বাইরে থেকে শৌচাগারের লাইট আর এক্সহষ্ট টি বন্ধ হতেই বুঝলাম বেড়োতে হবে ঘড়ির কাঁটা নটার ঘর ছাড়িয়েছে, হাতে বাজারের থলে। পটল আর উচ্ছেতে মানা, তাজা বাটা বাছ আর কাটা পোনার হুকুম হল। বাইকে স্টার্ট দিয়ে পিচ রাস্তাতে নামতেই টের পেলাম, জৈষ্ঠ কাহারে কয়। কোনোক্রমে বাজারের সম্মুখে বাইকটি স্ট্যান্ড করলাম, একটু ছায়া দেখে রাখলয়ামনতুবা কালো সিট রোদের তাপে পুরো তাওয়া হয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করবে; আর তাতে নধর পাছাটি ঠেকলেই ওটি পুড়ে তুন্দুরি হয়ে চকিতেই ওরাংওটাং সদৃশ্য হয়ে যাবে।
ছোটবেলায় দাদুর হাত ধরে বাজারে যাবার পায়েখড়ি। বাজারে যাবার প্রথম আকর্ষন ছিল প্যাঁদানি পরোটা আর জিলাপি। কারন মায়ের কড়া শাসনে ঘরে ওগুলোর কোনো এন্ট্রি ছিলনা। দাদুর সামনে মা কাকিমারা যেতেননা, তাই ওনার সাথে করা যাবতীয় কর্ম মাফ। তখন সপ্তাহে দুদিন বাজার বসত, বাড়িতে ফ্রিজও ছিলনা তাই কাঁচা শব্জি আর কিছু নির্দিষ্ট প্রজাতির মাছই বাড়িতে আসত। পোলট্রি মাংস দেশে আসেনি। বাজার থেকে মাংস এসেছে মানেই পাঁঠার মাংস বুঝতাম। বাকি মাছের প্রয়োজনে পুকুরে জাল ফেললেই হত, সপ্তাহে ২-৩ বার জাল টানা হত ভোরের দিকে। বেশ কয়েকটা পুকুর ছিল তারাই যাবতীয় মাছের যোগান দিত, ইলিশ আর চিংড়ি ছারা। সব্জিও নিজেদের জমিতেই মুনিষ দিয়ে সারা বছর চাষ করা হত; কারন তখন একান্নবর্তী পরিবারে কমবেশি একেকবারে ১০০ পাত পড়ত এক বেলাতে কাজের লোক নিয়ে। পথে কত লোকের সাথে আলাপ হত দাদুর, কত কথাবার্তা আলাপ কুশল বিনিময়। সাথে দুজন লোক, একজন ছাতা ধরে, অন্যজন ব্যাগ আর আমাদের ধরে। আমরা সংখ্যায় জনা চার পাঁচ তো থাকতামই।  হিরে থেকে জিরে কিনা জিনিস বিক্রি হত বিস্তর দামদড়ের সাথে। বাজারের মাঝে দাদুর ভুষিমালের গদিঘর, সেখান থেকে বসে বসেই বাজার সারা। সে এক দিন ছিল, আজকাল আর সেই দিন নেই, সকলেই ব্যাস্ত, ভীষন ব্যাস্ত। বাইক হাঁকিয়ে এক দৌড়ে কাজ সেরেই ঘরে ফিরে কাজ আর কাজ, হুম ফেসবুক করাটাও কাজই বটে।  
বাজারের মুখেই খারকোন পাতা, কচুর লতি, কচি নিমপাতা, বুড়ো পাটশাক, ছালউঠা তালের শাঁস, ন্যাতানো লাউ শাক, ব্রাহ্মী শাক, অনাথ পুঁই ডাটারা যেভাবে স্বাগত করল, তাতে মনে হল কৃপণ বাড়ির ভোজে এসেছি। চার কেজি আলু ৩৬ টাকা, দুকেজি পেয়াজ ২৪ টাকা, আর শুধাইনি, আদা, রসুন, কাঁচা লঙ্কা, কাঁচা আম, লালশাক, ঝিঙে, ধনেপাতা, পাতিলেবু, ভেন্ডি, একটা ছাঁচিকুমড়ো, এক ফালি মিষ্টি কুমড়োর সাথে, টমাটো, বরবটি, বেগুন, কাঁচকলা, বাঁধাকপি, কাঁকরোল, মাচার শশা ও কেজি দুয়েক কচু। এ দিকের সব্জি বাজার শেষ। মাথার উপরে কালো ত্রিপল চাঁদি ছুঁয়েছে, তার যেন হাত খানেক উপরেই সূর্য বাবাজীবন রোদের শোরুম খুলেছেন। বাজারের সেই ঠিক এক হাত সরু হাঁটা পথের দুপাশে ঝাঁকা নিয়ে শব্জি বিক্রেতারদল শব্জি শিকারীদের সাথে অদৃশ্য যুদ্ধে নিয়োজিত। গোটা চারেক খাসির লাশকে পাশ কাটিয়ে, খাঁচায় বন্দি মুরগী গুলোর ভবিষ্যতকে অগ্রাহ্য করে, গুণে গুণে ১৯ কদম পর পৌছালাম তীব্র আঁশটে গন্ধ ওয়ালা মাছের বাজারের দিকে।
মাছের বাজার, পৃথিবীর এক আশ্চর্য শোরুম। কিনবে লোকে একটিই প্রজাতি, কিন্তু দেখবে গোটা বাজার আর দামদড় করে আর্ধেক বাজারের; নতুবা বাঙালী বাজুরেদের আত্মা শান্তি হবেই না। শিলভারকার্প আজও যথারীতি সস্তা, ৮০ টাকা কেজি ওটাই বেশি বিকোচ্ছে; তার পরেই লোটে, ভোলা, পাঙ্খা ইত্যাদি গঙ্গার চিঙড়ি ৩০০ টাকা কেজি, মোটামুটি ৫০-৬০ গ্রাম সাইজের একেকটা ও ছোট মাথাযুক্তঅন্ধ্রের রুই, একেকটা ১০-১৫ কেজি সাইজের, ভিড় ওখানেও। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ভিড় জ্যান্ত কাতলার কাছে, একেকটার সাইজ ৬০০ গ্রাম সাইজের। জল থেকে তুলতেই দেখি আমারই মত মুখ হা করে খাবি খাচ্ছে; সুতরাং স্বজাতীয় ভেবে এদের অগ্রাহ্য করতে পারলাম্না। খান তিনেক নিলাম, ২০০ টাকা করে কেজি। পাশের মাছওয়ালার আমাকে দেখে হাঁকাহাঁকি শুরু করেছে, তার কাছে কিছু গঙ্গার মিক্স-চুনো, কিছু ডোবার ল্যাঠা ও শিঙ্গি রয়েছে। একটা মৃদু হাসি দিয়ে বোঝালাম আজ তোমার দিন নয় আমার জন্য। আরেকটুদুর এগোতেই দেখি ইলিশ... নোলা ছোঁকছোঁক করে উঠল। পাশে বড় পুঁটি, মৃগেল, চিতলও আছে।
অসময়ের ইলিশের দামদড় করাটা ঠিক স্ট্যাটাসে খাপ খায় কি খায়না বুঝে উঠতে পারছিলামনা। ‘দে পচা দুটো ইলিশ দে’ বলতেই পচার হাজা ওয়ালা হাতটা তুলে আমাকে থামানোর ভঙ্গিতে হেসে বলল, কাকা- ইটা ইলিশ লয় গো, চোকটা দেকোনা কেনে...
সত্যিই তো মড়া মাছ গুলো আমাকে বেশ বড় বড় করে চোখ দিয়ে ভর্তসনার ভঙ্গিতে দেখছে, ইতি মধ্যেই পচার ভাই উজো বলে দিয়েছে এটা খয়রা মাছ, কিন্তু বড় সাইজের। যাই হোক ওটাও নিলাম দু পিস, সাড়ে আটশো গ্রাম। ধনেপাতা দিয়ে পোড়াপোড়া চচ্চড়ি বেশ জমে এই মাছের। ঘেমেনেয়ে বাজার সেরে বেড়োচ্ছি, এক্কেবারে গেটের মুখে পাকরাও করল মাতাল সাহেব। আগে ও ছিঁচকে চোর ছিল, পুলিসের ক্যালান খেয়ে আজকাল আর ছুটতে পারেনা। তাই আম বাগান পাহাড়ার কাজ করে, তাদের হয়েই সম্ভবত আম বেচতে এসেছে।
ভাইপো তুমি বাজারে? ছেলেটা আসেনি বুঝি? বুঝলামনা বাজারে আসতে আমার মানা কোথায়। সে আমার বাবার বয়সী, বাপকে নিয়ে একগাদা কথার ফাঁকেই বেশ কয়েক কেজি আম আমার থলেতে দিল। বেছে বেছে কিছু আঁটির আম আর হিমসাগর; এক্কেবারে গাছপাকা। একটা আমের একটা সাইড কালোহয়ে পচ ধরেছে, সেটাকে হাতে দিয়ে বলল, ভাইপো এটা খা; কোকিলেপাদা আম। আমি বুঝে পেলামনা কোকিলের পাদে এমন কালো হয়ে যাবার কারনকি? আর কোকিল বেছে বেছে আমেই বা কেন পাদ দিতে আসবে? অদৌ কি কোকিল পাদ দেয়? বললাম ব্যাগে দাও খুড়ো, হেব্বি গরম, বাড়ি ফিরে খাবো। কুড়ি টাকা কেজি আম, সাথে একগাদা ঝাড় পাতা সমেত লিচুও আছে। টাকা মেটাতে গয়ে প্রমাদ গুনলাম। টাকা শেষ, মুখ দেখে খুড়ো বলল বাড়ি যা, আমি বিকালে গিয়ে নিয়ে আসব।
বাড়ির মহিলাদের এ এক চিরন্তন কীর্তি। সুযোগ পেলে পকেট মারাটা যেন জন্মগত অধিকার, আর তারই ফলাফল উপরের ঘটনা। বাইকে স্টার্ট দিয়ে গিয়ে একটা সিগারেট মুখে নিলাম, তাতেই আবিষ্কার করলাম পকেটে দেশলাই নেই। ছাতা সাইকেলের পর এই দেশলাই। আমার চিরাচরিত অভ্যাস, দেশলাই হারাবেই। শ্লা দরকারের সময় আর খুঁজে পাবো না। যে পকেটেই হাত দিই সিগারেট ১-২ প্যাকেট বেড়োবেই। কিন্তু দেশলাই বা লাইটার!!!! কোন মতেই না। কোথায় যে ফেলি, না কি যে হয় কিছুই জানি না। ওদিকে নেশা মাথায় চড়ে নেত্ত করছে, বাড়িতে অপিসে সর্বত্র লোকে খিস্তি খাচ্ছে......

সারমর্ম:- দেশলাই না হারানোর কৌশল জানা আছে কারো?
Please help me, এবার মনে হচ্ছে উন্মাদই হয়ে যাবো।


।। সুখে রাখুন ও সুখে থাকুন ।।

যখন কেও সুখের প্রাচুর্যে থাকে তখন সে বাস্তব ভুলে যায়; দু:খকে চিনতে পারেনা। সামান্য অহেতুক কারন গুলোকে এমন ভাবে উপস্থাপন করে যেন এর থেকে ভয়ঙ্কর কিছু আর পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। আসলে নেই নেই করাটা একধরনের মানসিক সঙ্কীর্ণতা ও স্থুল বুদ্ধির পরিচায়ক।
রিপুর চাহিদার শেষ নেই তার সে স্বপ্ন দেখে, যার কোনো সীমা নেই। এই স্বপ্ন দেখাটা এক সময় এমন অবাস্তব পর্যায়ে চলে যায় যে কল্পনা আর বাস্তবের ভেদাভেদটা চর্মচক্ষুতে উপলব্ধ হয়না। যে কোনো কিছুতে সেই চরম ফ্যান্টাসি প্রয়োগ হতে থাকে। সেই মুহুর্তগুলো আপন বোঝেনা, পর বোঝেনা, ভাল বোঝেনা, মন্দ বোঝেনা, পরিস্থিতি বোঝেনা, সমাজ, ধর্ম, রাষ্ট্র, সম্পর্ক কিচ্ছু বোঝেনা। তৈরি হয় এক বিচিত্র প্রকারের মানসিক স্থিতি। যেন যেনতেন প্রকারে নিজেকে নির্যাতিত প্রমান করতে পারলে তবেই আত্মসুখী হওয়া সম্ভব।
বুঝিয়ে, পরামর্শ দিয়ে, গল্পচ্ছলে বন্ধুবেশে এই পরিস্থিতিগুলোকে নিয়ন্ত্রন করা সাধ্যাতীত। অথচ সেই সময় উক্ত ব্যাক্তি দ্বারা এমন নেগেটিভ এনার্জি প্রবাহিত হয় অন্য ব্যাক্তি সেই স্রোতে খেই হারিয়ে উদভ্রান্ত হতে খুব বেশি সময় নেবেনা।
এই ধরনের মানসিক বিকারগ্রস্ত ব্যাক্তিরা কোনো অবস্থাতেই তার দোষ বা খামতি খুঁজে পাবেনা, এটা এই প্রাদুর্ভাবের প্রথম লক্ষণ ; কারন দোষগুন নিয়ে মানুষ হলেও এরা সেটা মানেনা। সর্বক্ষন ক্ষমাপ্রার্থনার ঢঙে স্টিমরোলার চালিয়েই আত্মতৃপ্তি। নিজেকে হেরো প্রমাণিত করেই শান্তি, যেন তার সাথেই যাবতীয় অন্যায় গুলো ঘটছে।
সর্বক্ষণ এদের পায়ের তলার মাটি খসে যায়, এতোটাই ভঙ্গুর জমিতে এরা বাস করে, যেখানে যেখানে আছাড় খাওয়া, হাত পা মাথা সহ গোটা শরীর টনটন ভনভন ও বনবন করে ঘোরা ইত্যাদিস্থানীয় নানা রকমের উপসর্গ হাজির করে ফেলে, সাথে অজস্র অশ্রুধারা। অথচ এদের কোনো পিছুটান সেই অর্থে থাকেনা, সামনে সোনালী ভবিষ্যত গড়া যায় একটু এডজাষ্ট করলেই, খাওয়া পরার সমস্যা হয়ত নেই অন্তত এই জীবনকালের জন্য, সারাটিক্ষন মাথার কাছে টিকটিক করার কেও নেই, স্বাধীন স্বচ্ছন্দতা যুক্ত স্বচ্ছল জীবনে একটাই প্রোমোদ.....
দু:খ বিলাস।
তাহলে এই রোগ থেকে মুক্তি কি?
না মেরে ধরে বা লক্ষবার বুঝিয়ে সুঝিয়ে কোনো লাভ হয়না বা হবেনা। কুত্তার ল্যাজের মত এ অপরিবর্তনীয়।
তবে একটা চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। বহু রোগের ক্ষেত্রে অব্যার্থ প্রমানিত "শক থেরাপি"। রোগটা মানসিক, মানে স্নায়ু সংক্রান্ত। তাই অত্যন্ত স্বযত্নে মানসিক ভাবে একটা দারুন আঘাতের প্রয়োজন, যাতে সেই রূপকথার কল্পরাজ্য থেকে বাস্তবের আলো-বাতাসে ফিরতে পারে। আর আসল যন্ত্রনা কাকে বলে সেটা হাড়েহাড়ে টের পায়। তাহলেই নকল বুঁদির কেল্লাটা ভাঙতে পারে নচেৎ নয়।
নাহ, মোটেই শারিরীক আঘাত নয়, ওটা সেরে যায়। আঘাত সকল সময় বিলো-দ্যা-বেল্ট হওয়া উচিৎ; এবং সেটাই বলুন যেটা সত্যি সত্যি আপনি করার হিম্মৎ রাখেন। চরম আঘাত করুন, এতে রোগ বা রোগী দুইয়েরই বিনাশের সম্ভাবনা, কিন্তু নিরুপায়।
এইবারে সেই ব্যাক্তি চরম উপলব্ধি করতে পারবে যে, চলমান নাটকের ঠিক আগের অঙ্কে জীবনটা ঠিক কতটা সুখের ছিল।
সুখ, বড় অভিমানি। সে থাকাকালীন তাকে অবজ্ঞা করলে, সে মুখে প্রস্রাব করে বিদায় নেবে।
যার ভালবাসাটা পাগলের মত হয়, ঘৃণার প্রকাশও সেই অনুপাতেই প্রকট হয়। যে টুকরো সুখের মালা গাঁথতে শেখেনি তার জীবনে কান্না ছাড়া কিচ্ছু অবশিষ্ট থাকেনা। সে না নিজে সুখী হয় আর অন্যকে সুখ দেবার তো কোনো প্রশ্নই নেই।
যার জন্যই তারা জিজ্ঞাসা করে...
"সুখ পাচ্ছো?"
আরে বাবা সন্দেহ দিয়ে গোয়েন্দাব্যাবসা চলতে পারে, সংসার নয়।
আসুন তাদের মানসিক শান্তির উদ্দেশ্যে কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করি। সে যদি আপনার নিকট আত্মীয় হয় তাহলে তার সত্যিকারের কঠিন মানসিক যন্ত্রনার সাথে আপনার দৈনন্দিন সুখ ঠিক সমানুপাতিক। অতএব এদের জন্য যন্ত্রনার পরিসর তৈরি করুন, এরা যন্ত্রনা বিলাস করে; তাই আসল যন্ত্রনা দান করাটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
সুখে রাখুন ও সুখে থাকুন।


Saturday, 20 May 2017

।। রূপচর্চা ।।

(লেবুপূরাণ)
অতঃপর সুজি দিয়া পায়েস রন্ধন করিয়া রোগীনির খাবার পরিবেশন করিবার জন্য প্রস্তুত হইতে লাগিলাম। রোগীনি আমার গৃহিনী, তাহার রুগ্ন হইবার যথাযথ কারণ রহিয়াছে সর্বপ্রথম কারনটি অবশ্যই আমি তাহার ভর্তা। আনুষ্ঠানিক ভাবটি অন্য, কয়েকদিন যাবৎ শ্রীমতী বিঘ্নেশ্বরী দেবী আটা-ময়দা-সুজি ইত্যাদি না মাখিতে পারিয়া, আমার উপর অভিমান স্বরূপ আহারাদি পরিত্যাগ করিয়াছেন। না খাইবার সেই তুমুল প্রচেষ্টার কারনে ক্রমশই সে অসুস্থতার দিকে ধাবিত হইতেছে এদিকে আমি মরিয়া যাই অভাবের তাড়নায়, খাদ্যের প্রয়োজনে আটা-ময়দা-সুজির সংস্থান করিতে না পারিয়া; আর সে মরিতে চায় সেই সকল খাদ্য দ্রব্যাদি মুখমন্ডল ও গ্রাত্রে মাখিতে না পারিয়া।
সে যত পারে গলাধঃকরণ করুক, তাহার খাবার প্রতি আমার কোনো আপত্তি নাই; কিন্তু সেই খাদ্যদ্রব্য মাখিবার নামে অপচয়ের প্রতি আপত্তি রহিয়াছে, এবং ঘোরতর প্রবল আপত্তি। এখন ঘোর গ্রীষ্মকাল, বয়স বাড়িইয়াছে; প্রত্যুষ ১০ ঘটিকার পর রুদ্র রবির দহন তেজে মাথার ব্রহ্মতালু অবধি শুকাইয়া কাষ্ঠলন্যায়, উচ্চরক্তচাপজনিত কারনে এই প্রখর তপ্ত দিবসে বীমাপত্রের মুৎসুদ্দি গিরি করিলে, নামোল্লেখন বলে অচিরেই শ্রীময়ী আমাকৃত বীমারাশির যে মালকিন হইবেন, তাহা বলাই বাহুল্য। অর্থের অনটনে যখন তাহার রূপচর্চার নিমিত্তে আটা-ময়দা-সুজি, মুসুরডাল, বেসন, অন্ড ইত্যাদি প্রভূত দ্রব্য খরিদারি করিতে অসমর্থ হইলাম; তখনই সে অভিমান করিয়া, না খাইয়া, ঝগড়া-ঝাটি করিয়া দিনাতিপাত করিতে লাগিল সাফল্যের সহিত।
সপ্তাহান্তের অভ্যন্তরেই জামাইষষ্ঠী, সুতরাং সেই হেতুই যে এই বায়না তাহা সহজেই অনুমেয়। নাভিকুন্তল উদ্গমের পরবর্তী অধ্যয়ে পুরুষের বয়স উক্ত বস্তুর সমহারে বাড়িতে থাকে, এক্ষেত্রে স্ত্রীধনটি স্বামীর প্রতি যত্নশীল হইলে তাহা পরিচর্যাগুনে দৃশ্যত নিয়ন্ত্রণে থাকে, অন্যথা সমবয়সী হইবা সত্বেও অকাল বৃদ্ধের ন্যায় চেহারার রংরূপ পরিবর্তিত হয়। আমি শ্রী দর্পনারায়ন মল্লিক, ওরফে হাড়কাটা গলির সুবিখ্যাত মল্লিক বাড়ির জ্যেষ্ঠ সন্তান লেবু। বছর দুয়েকের মধ্যেই ধরাভুমে অবতীর্ণ হওয়ার অর্ধশত বৎসর পূর্ণ করিব, গৃহিণী আমা হইতে মাত্র ছয় বৎসরের ফারাকে জন্মগ্রহণ করিয়াছিল, তথাপি আজিকের দিবসে তাহার বয়স ত্রিশের কোঠা অতিক্রম করে নাই ভাবনাতে, মননে যাহা আরো নিন্মমুখী। এদিকে মুংলার কিশোরবেলা মধ্যাহ্নক্রমে। অতএব সহজেই অনুমেয় যে, আসন্ন জামাইষষ্টি উপলক্ষে পিত্রালয়ে গমন হেতু দৃশ্যমান বয়সের মুখে উজ্জ্বল্য আনয়নের ব্যার্থ প্রয়াসের তরে এই সকল মুদিখাদ্যাদ্রব্যাদি বিলাস।
এমতাবস্থায় আমার শ্বশুরকুল্যের বোধোদয় ঘটিল, শ্বশুরমহাশয় স্বয়ং আসিয়া নিজ কন্যাকে স্বগৃহে লইয়া গেলেন। ভাবটি এমনতর যেন, সর্বসাকুল্যে আমার দোষ নির্ধারন করিয়া জনসমক্ষে কর্ণ মলিয়া দিতে চান। শ্বশুর আমার অবসরপ্রাপ্ত, তাহার অবস্থা বর্তমানে আমা অপেক্ষাও অতি দীন, তাই তাহার তুলনায় অবস্থাপন্ন আমাকেই তিনি তাহার একমাত্র কন্যাকে পাত্রস্থ করিয়াছিলেন। সুতরাং ধনী স্বামীর নিকটে রূপচর্চার আবদার করাটা স্ত্রীর মৌলিক অধিকারের অন্তর্গত, এবং সেটা পূরণ করাই যেন স্বামিদিগকের একমাত্র দায়িত্ব  কিন্তু এই চল্লিশ উত্তীর্ণ জীবনে সেই কিশোরী রূপের আনয়ন কিভাবে সম্ভব?
আমার স্ত্রীকে আমি প্রচণ্ড ভালোবাসি নিঃসন্দেহে, কিছুটা স্ত্রৈনও বটে; তাই গৃহে তাহার অভাবে অন্তরে অন্তরে কাঁদিয়া-কাঁটিয়া বেড়াইতেছিলামতাহাকে পিত্রালয় হইতে আনয়নের উদ্দেশ্যে যতবার ভেউভেউ করিয়া কাঁদিতাম সেই অকুস্থলে; তৎক্ষণাৎ তিনি রুদ্ররূপিনী সাজিয়া আমাকে ঘেউঘেউ করিয়া তাড়াইয়া দিত। এদিকে গৃহ আমার প্রতিক্ষনে চুরান্ত অগোছালো অবস্থার মধ্য দিয়ে প্রায় ভাগারে রুপান্তরের দশা উপস্থিত হইল। অবস্থার বেগতিক দেখিয়া আমি বুদ্ধি আঁটিলাম যে, পুরাতন মুখমন্ডল পরিষ্কারক চুঙ্গিতে আমার সমস্ত ক্রন্দনের জল আর তরল নাকের সর্দি জমা রাখিব এবং উহাই ভেষজ ও প্রাকৃতিক উপাদান বলিতা তাহার সম্মুখে উপহার স্বরূপ প্রদান করিব। তাহাই করিলাম, চুঙ্গিটি পূর্ণ হইলে বিদেশী প্রযুক্তির দেশীয় মুখমন্ডল পরিষ্কারক আনিয়াছি ইত্যাদি বলিয়া তাহাকে আনিয়া লইলাম বটে; তবে কথা লইয়াছিল তাহার আটা- ময়দা-সুজির-ডিম্ব-মুসুর দানা ইত্যাদির অভাব অপূর্ণ রাখা যাইবেনা। তৎক্ষণাৎ মনে মনে ভাবিলাম, প্রয়োজনে দশ টাকা দিয়া এক প্যাকেট চক(খড়ি) কিনিয়া তাহা পিষিয়া তাহাতে দুফোটা সুগন্ধী মিশাইয়া পাউডার বলিয়া চালাইয়া লইব। কারন পোড়া মুখে খড়ি হউক বা ল্যকমে , ফলাফল সেই একই। আর বৌ এর রোগটাও যখন মানসিক, সেক্ষেত্রে এটাই যথেষ্ট। অতএব, আমি বলিলাম, আচ্ছা-তাহাই হইবে। যাহাই হউক, বাড়িতে ফিরিয়া মুখমন্ডল পরিষ্কারক পাইয়া অতি খুশিতে বউ আমার লক্ষী হইয়া উঠিল, নিত্যদিন মনের আনন্দে সেই ফেসওয়াস মাখিয়া চলিল; কিছুটা আক্ষেপ ছিল , ইহাতে নাকি কোন খুশবু নেই।
আমি অতি ক্লেশে দিনের খাবার দিনে যোগাড় করিয়া যাই, পায়ের ঘাম মাথায় তুলিয়া সারাদিনে যাহা রোজগার করি, তাহাতে সুজির লোনা পায়েস আর আটা-ময়দার পোড়া রুটিই কেবল গলাধঃকরণ করার জন্য জুটিতে পারে। তবুও ঠিক মতো যোগাড় করিতে পারিনা- দাম অতি চড়া, তুলনায় রোজগার অতি সামান্য। আর রুটিও পোড়াই জোটে, কারন আমার বউয়ের বারবার আয়না দেখিবার জন্য সময়ের বেঘাত ঘটে, অগত্যা...
আটা-ময়দা-সুজি,হলুদ, অন্ড, বেসন, ফলমাকর আর মুসুরির ডালের দাম কেবলই বাড়িয়া চলিয়াছে। যার অন্যতম কারন নিশ্চিন্তে স্ত্রী জাতীর রূপচর্চা জনিত বাড়তি অপচয়; ফলস্বরূপ দ্রব্য সীমিত হইয়া অর্থনীতির হিসাব অনুযায়ী দাম বাড়িয়া গিয়াছে। আমাদের মতো স্বামীর পক্ষে রূপচর্চা তো দূরে থাকুক; খাইবার জন্যও তাহা কিনিবার সামর্থ্য ক্রমে হারাইতেছি। তাছাড়া খাইবার জন্য যখন এইসমস্ত দ্রব্য কিনিয়া আনি, তখন আমার বউ আর আমার সহদোরা তাহা হইতে অধিকাংশ টাই ঊঠাইয়া আলাদা করিয়া রাখিয়া দেন, আর তাহাতে পোড়া বেগুনের মত ক্ষত ভরা মুখমন্ডলের রূপচর্চা হইয়া থাকে- প্রথমে মাখিবার জন্য ও পরে খাইবার জন্য, যদি অবশিষ্ট থাকে।
আমি যখন বিষয়টা বুঝিতে পারিলাম, বোনকে মৃদু ভর্তসনা করিলাম কারন বৈকে ভর্তসনা করা যায় না এই পরিস্থিতিতে। সহোদরাকে যথাসাধ্য বোঝাইলাম যে, সে যেন এই সকল খাদ্য দ্রব্যের অপচয় করা থেকে বিরত থাকে। ইহাতে সে ক্রুদ্ধ হইল, এবং সে স্বদর্পে তাহার বৌদির নিকট সেই আমাকতৃক মুখমন্ডল পরিষ্কারক তৈরির গোপন ফর্মুলা ফাঁস করিয়া দিল। ব্যাস ভুকম্পের আর কোন কারন অবশিষ্ট ছিল না। সেই যাবৎ না খাইয়া, ঝগড়া-ঝাটি করিয়া আমার স্ত্রী রত্নটি অসুস্থ রহিয়াছে। ভাবিয়াছি- আগামী কাল্য হইতে আমার রুটি- পায়েসের ভাগে যে আটা-ময়দা-সুজি ডাল, ডিম্বপাক ব্যয় হয়, সেসমস্ত তাহাদের রূপচর্চার তরেই ব্যয় করিব। তাহাদিগকে খুশি রাখিতে, প্রয়োজনে আমি না খাইয়া থাকিব তাহাতেও আক্ষেপ নেই, এবং যদি তাহাদের কিছু অবশিষ্ট থাকে তাহাই আমি ভক্ষন করিব।
কোন কূলবধু হয়তো বলিবেন, স্বামীর সুস্থ থাকার জন্য ইহার অতি প্রয়োজন রহিয়াছে, কারন বেশি খাইলে মেদ বাড়িয়া যাইবার প্রবল ঝুঁকি, সুতরাং কম খাইবার দরুন খেলো না হওয়াই শ্রেয়। এক্ষনে কেহ বলিবে স্বামীর মনে শান্তি না রাখিয়া শুধু রূপ দেখাইয়া সুখ দিতে যাওয়া অনেক নিম্নবর্গের কর্ম, কিন্তু আমি বলি প্রথমে পেটে শান্তি প্রয়োজন মানসিক শান্তি তো পরবর্তী পরিচ্ছদের পাঠ্য। বউ আমাকে ছাড়িয়া বাপের বাড়িতে যাইয়া থাকিতে পারিবে; কিন্তু আটা-ময়দা-সুজি, ডাল, বেসন, ডিম্ব ইত্যাদি ছাড়িয়া রহিতে পারিবে না, এ সত্য প্রমানিত। পাশাপাশি আমিও বউ বিনা রহিতে পারিব না।
একেক সময় ভাবি, কোনটা স্ত্রীজাতির অঙ্গ। শুভ্র সজ্জা বিশিষ্ট বহিরাঙ্গ? নাকি জন্মগত সুত্র প্রাপ্ত চর্ম সম্বলিত একটি কোমল স্ত্রী হৃদয়।

যে যাহাই হউক, পেটে ও মন দুটোই অভুক্ত। কারন ঘরে ও মনে কোথাও আপাতত স্ত্রী নাই, আছে শুধু অনেক অনেক বেশী রোজগারের প্রয়াস। তাহাতে প্রান বাঁচুক আর না ই বা বাঁচুক সেই পায়েস বর্তমানে প্রস্তুত, জামাইষষ্টির পূর্বে বউকে উতসর্গ করিয়া আমিই গ্রাসাচ্ছাদন করি। 

Thursday, 11 May 2017

যাতা...

পুরানো সেই দিনের কথা....
তখন সময়টা বড় গোলেমেলে। সেক্সোকবি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে সুমিষ্ট আঙুরের রস এনেছেন ডারউইনের সেই জাহাজে, উপলক্ষ্য বিশ্বকবির অনশন ভঙ্গ। চারিদিকে লোকে লোকারন্য, মাঝখান কে যেন যুদ্ধবিমানের হস্তমৈথুনের কথাটা প্রকাশ্যে হাতমাইকে ঘোষনা করে দিতেই সন্ত্রস্ত লোকজন ছিঃ উৎসবের আয়োজন করতে শুরু করেদিল।
পিসি তখন নিতান্তই কাঁচা বয়েস, তাতেও তিনি অন্যপক্ষের হয়েও টুক করে ধরে নিলেন যে এটা কুৎসা... তবে তিনি সম্যকভাবে বুঝলেন যে, ওই আঙুরের রস গেঁজে গেছিল, আর ভাবী চেয়ারম্যান হিসাবে যুদ্ধবিমান সেটা চাখতেই নাকি এই প্রকোপ। তিনি পরদিনিই গুরুদেবের সাথে আলোচোনা করতে বসলেন কিভাবে এই আঙুরের রস না গেঁজিয়ে টাটকা রাখা যায়। গুরুদেবের সাথে বুনিপ বেদ আর অরূপকে সাথী করে জাপানে পাঠালেন।
এদিকে এই ঘটনাতে তরুন বিপ্লবী " গুঁফো মন্ডা"র বৈপ্লবিক চেতনাতে আঘাত হানলো। গেরিলা নাম ছিল "গুঁফো মন্ডা" (মন্ডলের অপভ্রংশ)। তিনি মলমোদ্দিন থেকে সোজা তৎকালীন রাজ্যের মুখ্য কার্যালয় "ভাদু" তে গিয়ে যুদ্ধবিমানের কুৎসার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলেন। পিসি তখন তাকে গুরুদেবের সাথে একই জাহাজে গুঁফো মন্ডাকেও জাপান পাঠালেন।
জাহাজ মাঝ সমুদ্রে ঝড়ের কবলে পড়ল, এক অজানা দ্বীপের তীরে ঠেকতেই জলদস্যুদের কবলে পরল। বিপ্লবী গুঁফো মন্ডা ইতিমধ্যেই সেই গেঁজে যাওয়া আঙুরের রস খেয়ে চুড় ছিল, পকেট থেকে দুম করে বোম চার্জ করে বসল।
পরে অবশ্য বিচারে জজসাহেব পুরো অমরেশ পুরি মুডে, ভিলেন মদনপুরি র মত ভেবে গুঁফোকে এক্কেবারে তরীপার।
জেল হওয়ার কারন ছিল, পকেটে কালিপটকা নিয়ে মহান মেদিনীপুরী বলে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন সেই অনাম্নী দ্বীপ রাষ্ট্রে।
সেই দ্বীপের মহান বিজ্ঞানীরা সেই আঙুরের রস নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাতে তাতে মেশালেন নবরত্ন তেল আর ডার্মিকুল পাওডার। ব্যাস তৈরি হল এক যুগান্তকারী প্রোডাক্ট।
কবিগুরু দেশে ফিরে এলেন। এদিকে রানী ভিক্টোরিয়া, মাউন্টব্যাটেন, নাত্থুরাম আর বরকতির সাথে গ্রুপ চ্যাট করে পিসি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, জাহাজ জাপানে না পৌছানোর বিষয়টা চেপে যাওয়া হবে, আর অবশিষ্ট হার্মাদ গুলোকে মেরে বালি চাপা দেওয়া হবে। এই ডাইলোগটাই রণিদা পাগলুতে ব্যবহার করেছিল।
জাপান ফিরত সেই তেলের নামকরণ করলেন পিসি নিজে, একটি ঘন্টাখানেক অনুষ্ঠানে। অতিপরিমান নবরত্ন তেল সেই আঙুরের রসের সাথে মিশে যে নতুন শালসাটা তৈরি হয়েছিল তার নাম দিলেন " জাপানী তেল" আর পাওডারের থিতিয়ে যাওয়া মণ্ড দিয়ে তৈরি হল রকেট ক্যাপসুল। এর ফলে দেশে সকলের সাইজ বেড়ে যেতে লাগল, সর্বপ্রথম সেই তেল যিনি বুকে মালিশ করেছিলেন, আর তাঁর ছাতির সাইজ ৫৬ ইঞ্চি। বাকিটা ইতিহাস...
দস্যুদের সেই দেশের নাম পিসি দিলেন "উন্নয়ন"। আর সেই ফিরতি জাহাজের অবশিষ্ট হার্মাদের বংশধর হিসাবে ইতিহাসের অবহেলিত সত্যকে আজ আমি হাজির করলাম। সাথে দিলাম মহান বিপ্লবী "গুঁফো মন্ডা"র সেলুলার জেলে থাকাকালীন একটা দুষ্প্রাপ্য ছবি। এখন অবশ্য সেলুলার জেলের সেলুলোজ খেয়ে খেয়ে চর্বি জমিয়েছেন। তবে....
গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, গোঁফ দিয়ে যায় চেনা।


Tuesday, 9 May 2017

।। চলতে চলতে~ ২ ।।



দুপাশে কিশোর পাটগাছের ক্ষেতের ভয়ানক গুমোট গরম সাথে করে, ধুলোউড়া গ্রামের পথে যতক্ষনে বাইক চালিয়ে প্রান্তিক নদীয়ার হল্ট স্টেশনটিতে এসে পৌছালাম, ততক্ষনে ডাউন ট্রেনের খবর হয়ে গেছে। ফাঁকা ধু ধু মাঠের মাঝে একটি ছোট্ট বর্ধিষ্ণু চাষী গ্রাম, আর তার মানানসই আরো ছোট স্টেশনটি।
এখানে প্রতি বছর বন্যার জল ওঠে, এবং বলা যেতেই পারে গঙ্গা কয়েক হাতের মধ্যে। তাই স্টেশনটা অদ্ভুত ভাবে মাটি থেকে কমপক্ষে শহুরে ফ্ল্যাটের সাইজের ৩ তলা উপরে। শুনেছি এই স্টেশনে নাকি জনা চারেক রেলের স্টাফ আছে, আজ পর্যন্ত আমার দর্শনে ২ জন ছাড়া কাওকে পাইনি। একজন দিনে অন্যজন রাত্রে। যিনি ডিউটিতে থাকেন তিনিই ঘোষক, টিকিট ভেন্ডার, সিগন্যাল ম্যান ও চেকার। প্রয়োজনে প্রথমিক এ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা, হাত দেখা সহ নানান পরিষেবা, তুলনামূলক যুবক চাকুরে ভদ্রলোকটি শুনেছি দিয়ে থাকেন।
গাড়িটা স্টেশনের নিচের গ্যারেজে রেখে চাবিটা একটা লোপ্পা ক্যাচে গ্যারাজওয়ালার হাতে গচ্ছিত রেখে প্রায় দৌড়ে গিয়ে একটা রিটার্ণ টিকিট কাটলাম। দুপুর ১১:১৭ এর ট্রেন, কাঠের বগি বা কয়লার আমলে এটা নাকি ক্যাশ গাড়ি ছিল, জানিনা বর্তমানে কি স্ট্যাটাস। স্টেশনে কিছু শব্জি বিক্রেতা দেহাতি মহিলা, কয়েকজন হকার, কিছু পাশের ইঁটভাঁটা শ্রমিকের ছেলেপুলের দল আর গোটা তিনেক বাস্তু ভবঘুরে আর হাতে গোনা কয়েকজন প্যাসেঞ্জার রীতিমত ধুঁকছেন। আসে পাশের গাছ গুলোর মাথা প্ল্যাটফর্ম থেকে ছোঁয়া যায়, তাই ছায়ার প্রশ্নও নেই, ফুট ওভার ব্রিজের নিচে এক চিলতে ছায়া, সেখানেই গোটা স্টেশন আশ্রয় নিয়েছে। হাওয়া চলছে ঠিকিই কিন্তু সে হাওয়া ভীষন উষ্ণ। পকেট থেকে রুমাল বের করে ঘাম মুছে একটা সিগারেট জ্বালালাম, সুখটান পর্যন্ত পৌছানোর আগেই হুইসেল দিতে দিতে ১২ বগির অফ হোয়াইট আর বেগুনীর বর্ডার দেওয়া আধুনিক মডেলের উইন্ডস্ক্রিন যুক্ত নতুন EMU ট্রেন প্ল্যাটফর্মে ঢুকে পড়ল।
হকার ভাইদের তৎপরতাকে টেক্কা দিয়ে ট্রেনে চড়তেই ট্রেন ছেরে দিল। এই দুপুরের ট্রেনেও বেশ ভাল ভিড়, সিট নেই মোটেও। তবে দাঁড়িয়ে যাওয়া যায়। দুপুরের ট্রেনগুলোর সুবিধা হচ্ছে এখানকার যাত্রীগুলো সব ঘরোয়া মানুষজন, ডেলিপ্যাসেঞ্জার নামের কলঙ্ক ওই অসভ্যগুলোর প্রাদুর্ভাব থাকেনা। আত্মীয়স্বজন বাড়িগামী বা ঘরমুখো মানুষজনের সাথে বড় বড় লাগেজে ঠাসা বগি। স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরাও আছে, মাঠের মুনিশ আছে, বাউল, ঢাউস বালতি সহ দুধ বিক্রেতা, আর বেচারামুখো স্বামীতে থিকথিক করছে।
মাথার ঘাম মেরুদন্ডের নদী বেয়ে ভায়া জাঙ্গিয়া পাছায় পৌঁছে প্যান্ট আর দাপনা ভিজিয়ে রেখেছিল। ট্রেনটা চলতেই দমকা হাওয়া.... প্রানে নির্মল শান্তি প্রদান করল। কাঁধ থেকে ব্যাগটা উপরের তাকে রেখে সেই প্যাসেজেই ঢুকে গেলাম। ঘামে মাথাটা ভিজেই ছিল, তীব্র হাওয়াতে, চোখের পাতাদুটোকে নিয়ন্ত্রনের বাইরে নিয়ে চলে যাচ্ছিল প্রায়, এমন সময়....
-' ও দাদা, কামড়াবেন নাকি! এক্কে বারে কচি দেহ। 
ছাল ছাড়িয়ে দিচ্ছি, বিট নুন দিয়ে.....'
তন্দ্রা ছুটে গেল। বুঝলাম শশা বিক্রেতার বিপণন কৌশল।
-.... ও দাদা, গরমে ঠান্ডা। খাবেন নাকি! পোড়া আম দিয়ে বানানো ঠান্ডা সরবৎ....
.... জল, সিল প্যাক ঠান্ডা জল, জল......
.... রুমাল সংগ্রহ করবেন নাকি! শান্তিনিকেতন এর তাঁতের কাপড়, পিওর সুতি.....
নাহ, ঘোড়ার মত দাঁড়িয়ে ঘুমানোটা আজ আর হচ্ছেনা। হঠাৎ পায়ের উপরে আরেকটা জুতোর চাপ,... আ... করে মুখ দিয়ে ব্রজবুলি বেড় হতে হতে থেমে গেলাম। একটি ৫-৬ বছরের বাচ্চা তার মায়ের কাছে কিছু একটার জন্য ঝোঁক ধরেছে। সুতরাং অতি উৎসাহে আমার পা অগ্রাহ্য করাই যায়.....
....পেপসি, দই চিনি আর বারো রকমের লবন ও মশালা দিয়ে, গরমে আরাম..... মাত্র ৫ টাকায়.... পেপসি....
বাচ্চাটি পেপসি পান করছে, ট্রান্সপারেন্ট পলিথিনের লম্বা প্যাকে হালকা হলুদাভ 'পেপসি'। বাচ্চাটি খাচ্ছেনা, পাছে তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়। এর পর দেখলাম সরু স্ট্র করে টেনে কিছুটা পানীয় মুখে নিল, খানিকক্ষন মুখে সেটা রেখে সম্পূর্ন সুখ নিয়ে সেই স্ট্র দিয়েই আবার চিকচিকেতে ফিরৎ পাঠালো। দারুন জমে উঠা খেলা। এই মুহুর্তে কোটি টাকাও ফেল এই অনবিল সুখের কাছে। চিকচিকির বাইরে বিন্দু বিন্দু জল জমা হয়ে সেগুলো আমারই পায়ে টোপা টোপা হয়ে ঝড়ছে।
আমি একজনকে ফোনে পাবার চেষ্টাতে ব্যাস্ত। তাকে ফোনে পেতেই শুনলাম তিনি নাকি রাস্তায় দাঁত কেলিয়ে পরেছিলেন গরমের চোটে। হঠাৎ পায়ে কিছু একটা কিলবিল করছে, এক ঝটকাতে পাটা সরাতেই আওয়াজ...
-এজ্ঞে, আমিমি। ছিলাটা তুমার পায়ে লুংরা ফিলেছে, তাই পুচে দিচ্চি।
- আরে না না, ধুর কি করছেন। পথে ঘাটে চলতে চলতে এমন তো হয়েই থাকে।
সে যাত্রায় ভদ্রমহিলা ব্যার্থমনোরথে ক্ষান্ত দিলেন। আমার চোখে সানগ্লাস, সুতরাং প্রতক্ষ দেখতে মানা নেই, অবশ্য মন পারমিট করলে তবে। দেখলাম....
সদ্য কুড়ি পেড়োনো এক উচ্ছল যুবতী। আশ্বিনের নদীর মত ভরা শরীর, অথচ শান্ত। কর্মঠ অবশ্যই, নতুবা এমনতর নির্মেদ হওয়া সম্ভবপর নয়। এবারে আমি গোটা কামরাটা একবার প্রদক্ষিণ করলাম চোখ দিয়ে, যতটা করা সম্ভব। তাতে করে এক আশ্চর্য উপলব্ধি হল।
কামরাতে শিশু থেক বৃদ্ধা অনেক সুন্দরীর উপস্থিতি, জীবনে কম সুন্দরীদের সহচর্যে আসিনি, তবুও কেন জানিনা এই মেয়েটিকেই আমার দেখা অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুন্দরী মনে হল। পাকা জামের মত গায়ের রঙ, তা সত্বেও কাটারির মত মোটা ভ্রু সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে শতগুণ। নাকটা চাপা, আর নাকের পেটিগুলো ফোলা ফোলা, যেমনটা আমাদের আদিবাসী রমনীদের হয়, ইনিও তার ব্যাতিক্রম নন। চোখগুলো ছোট ছোট কোটরে বাই ডিফল্ট ঢোকা। কর্নিয়া অস্বাভাবিক রকমের সাদা, যেমন দাঁত গুলো। খেয়াল করলাম হাসলে মাড়ি দেখা যাচ্ছে।
এর সৌন্দর্য আসলে এর সাবলীলতাতে। মুখে নুন্যতম প্রসাধনী কারুকার্য নেই। হয়ত পুকুরে স্নান করার সময় লাইফবয় সাবান দিয়েই মুখ ধুয়েছে। নাহ এদের নিম ফেসওয়াস লাগেনা। সম্ভবত হালখাতার মিষ্টির প্যাকেটের রঙিন গাডারে চুলটা বাঁধা। আকর্ষনীয় সাজ, যেখানে অন্যে কি ভাববে তার বালাই নেই, আত্মাকে শান্তি দিতে নুন্যতম পরিমান ভাবের ঘরে চুরি নেই। দুনিয়া যা ভাবে ভাবুক, সে তার মত সেজেছে। শুরুটা পা দিয়েই করি। নিশ্চিত ভবে ইনি স্কুলে যাননি, তবে একটা শখ হয়ত মনে ছিল। পায়ে উজালা দিয়ে নীল করা কাপড়ের ফিতে বাঁধা কেডস। নাহ, মোজা ছিলনা।
একটা গোলগলা কলারওয়ালা জয়পুরী প্রিন্টেড ব্লাউজ, হাফ হাতা। এনার সান্সক্রিমের পরতে মোড়া 'ফর্সা' পিঠ পৃথিবীকে দেখানোর দায় নেই। পোষাক লজ্জা নিবারণের জন্য, অন্য সকলকে আকর্ষিত করার জন্য নয়। ইনি সেটা না বুঝেও বোঝেন, বোদ্ধারা যুক্তির মোমবাতি জ্বালান।
বাজুতে একটা রুপোর তাগা। বেশ পুরাতন, হয়ত স্মৃতিরক্ষার পরম্পরা ওইটি। পরনে একটা উজ্জ্বল ডিপ গোলাপি সিফন শাড়ি, যার জমিতে ও আঁচলা জুড়ে সোনালি জড়ির কাজ। হাতের নখে ঘসে যাওয়া নখপালিশ। সেটা আবার গাঢ় সবুজাভ। হাতের লালচে সাদা তালুতে সে কি অনবদ্য সুন্দর দৃশ্য।
নাহ, লোকে কি বলবে সেই ভয়ে এ মেয়ে ভীত নয়। অশ্লীল কিছু নয় এমন সকল শখ সে পূরন করেছে। আত্মাকে প্রশান্তি দিয়েছে, এ মেয়ে ছারা কে হতে পারে স্বাধীনচেতার নমুনা!
আধা ঘন্টা পরেই সিট পেয়ে গেলাম। আমি জানালার পাসে, মাঝে বাচ্চাটি তার পাশে সেই রমনী। চোখের ইশারাতে বাচ্চাকে শাষনে রাখার ব্যার্থ চেষ্টা সযত্নে চালু রয়েছে মায়ের। আচ্ছা আমরা যারা নাকি আধুনিক বলে দাবি করি, তারা কি বিশ্বায়নের দাস নই? বিজ্ঞাপণ সর্বস্ব পৃথিবীতে সাজানো চমকের ফাঁদে তলিয়েও মজন্তালি সরকারের মত জিতে যায়।
সৌন্দর্য কি বহি:রঙ্গে? মাটির প্রতিমার মত অপূর্ব মুখশ্রীর এক বৌদি ঠিক আমায় পিছন করে সমুখপানের জানালা দখল করে বসে আছেন। ট্রেন সামনের দিকে চলছে, স্লিভলেস বৌদির বগলের "সিক্রেট টেম্পটেশন ট্যাল্ক" আমার কানের পাশ দিয়ে নাকে ঢুকছে। নামার সময় সেই সুগন্ধ প্রদান হেতু তাকে খানিক দেখলাম, রোদচসমার ফাঁক দিয়েই। জারদৌসি শাড়ি নাভির নিচ থেকে শুরু হয়েছে। মাঝের উন্মুক্ত লোভনীয় চর্বিযুক্ত পেটিদেশ ও নাভিকূপ এটা পৌষমাস হলেও অনেককেই ঘামিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট ছিল।
ভাবছিলাম, তাহলে ভারতমাতার রূপ কোনটা? সন্দেহের কোনো অবকাশই নেই যে, ভারত মাতার আধুনিক সন্তানেরা কোন রূপটির আরাধনা করবেন। নির্মল স্বকিয়তাতে ঠাসা একজন মা, যিনি নিজের রূপ সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল, তবুও সে নিজের ভাবনাতেই একনিষ্ঠ। নেটের দুনিয়াতে বিভোর এক আধুনিকা মামনি নুডুলস স্ট্রিপের টপের চারিবেড়ের ঘামাচি চুলকাতে চুলকাতে পাশের বন্ধুটির সাথে খিল্লি নিয়ে ব্যাস্ত, উদ্দেশ্য অবশ্যই আমার পাশেরজন। তাকে ঘামাচি লুকাবার জন্য মেকি রূপচর্চার সময় ব্যায় করতে হয়না। উন্মাদের চোখ বলে কিনা জানিনা, রামকিঙ্কর বেজের কাদা পাথরের ভাষ্কর্য কি এদেরকে হুবহু নকল করে বানানো নয়?
চলতে চলতে কোন একটা স্টেশনে নেমে যাওয়ার আগে আরেকবার আমার কাছে অন্যায়কারীসুচক চোখে তাকিয়ে ভিড়ের মাঝে মিশে গেলেন। আমার মনে ভারতমাতৃকার একটা ছাপ রয়ে গেল।
আজ গুরুদেবের জন্মদিন, সাধে কি তিনি বলেছিলেন-
"কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি......"
ধন্য কবিগুরু, তুমি নাহলে কোনো শেষটাই শেষ করতে পাতামনা, এবড়োখেবড়ো করেও।

।। স্বরচিত "রোবিন্দ-কাব্বো" ।।

দিদিগো, এবার ছুটি নিতে চল্‌,
কবিতার নামে ছড়িয়েছো যে মেলা।
এখন আমি ভগার কাছে বসে
সহ্য করছি আজব-ছড়ার জ্বালা।
তুমি লিখেছে কথাঞ্জলী সবে,
ভুলেও যেন আর না লিখো ভাই,
একবারও কি পুরী মন্দির দেখে
সুভদ্রা রূপী মনে করতে নাই?
তুমি তো বেশ ভাবতে পার মনে
কবি, লেখক, চিত্রকরের বেশে
এদিকে, চাওয়ালা ফকির ৫৬ ইঞ্চি নিয়ে
উন্নয়ন পাঁকে পদ্ম লাগায় এসে।
আধার পেল গো- মাদারের গলা
ভুবনডাঙায় গজায় শপিংমল
আসাম থেকে ব্রাত্য করল মোরে।
উল্লাসেতে দেশপ্রেমীর দল।
মনে কোরোনা ডুববে চুরির সাজা,
মনে কোরোনা সেটিং বাঁচাবে যেন।
গর্মেন্ট যদি চোরের দলের হয়
তোমায় নিয়ে খিল্লি হবে না কেন।

Monday, 8 May 2017

।। আরশি ।।

কখনও কি মুখ দেখেছো আরশিতে!
বেগুনি আলোর আলোয়ান পরে!
আদুর গায়ে কোন জোৎস্না ভেজা রাতে
আচম্বিত শিহরণে; ধু ধু চরাচরে।
 
কাছ থেকে দেখো, মনযোগী হয়ে অন্তত একবার 
ভরষা হারানো এ মুখে হাজার ক্ষত
আত্মাহুতি হয়তবা হবে, বেদনার বিষাক্ত উপসম
কি এসে যায় খোয়ালে একে, মিলবে কতশত।
 
প্রানে সুখ নাই, তাই লিখি এ কাঁদুনিগাথা
সেটা হারাবে কালের অন্তরালে,
ধিকিধিকি বাঁচা, সুদিনের আশে অনন্ত অপেক্ষা;
নিরবে কিস্তিমাৎ, অসংখ্য ভুল চালে।
সীমাহীন ক্ষুধা জঠরে জ্বলে, শুন্য ভাঁড়ারখানি
সোহাগের ডালি ফেঁপেছে অকারণ
নিষ্পাপ ফুল অবুঝ তারা, জানেনা কি মরণ
শুষ্ক চোখে গুজরান করে, শুকানোর দিনক্ষণ।
কালবোশেখি চাল কেড়েছে, হাল করেছে দৈন্য
এই অপেরার দর্শকেরা, নির্বাক ও মৌন;
ফিরলে সুদিন আসবে সবে, যিনি পাঁজরার অংশ
মনে মনে মিল, মননে মননে; বাকি সবটাই যৌন।


Sunday, 7 May 2017

।। মন ও বিশ্বাস ~ ভণিতা ।।

    
শিশুকালে মনের খেয়ালে আকাশ পানে ঢিল ছুড়তাম, রাগ হলেই। তখন খিস্তি নামক রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্ত ছিলাম। সেই সময়ের আশা আকাঙ্ক্ষা গুলোও ছিল বড্ড শিশুসুলভ। সর্বোপরি কোনোকিছুতে অসফল হলেই সবচেয়ে মজবুত ও কার্যকরী হাতিয়ার প্রস্তুত থাকত, যেটার মোক্ষম প্রয়োগ হত, - "কান্না"।
যেটা প্রায় বিগত ২২ বছরের অনভ্যাসে প্রায় ভুলতে বসেছি। তবে সেই অলীকে বিশ্বাসটা আজও রয়ে গেছে। আজও ঢিল ছুরি, বিশ্বাসের, ভরষার। লাগলে তুক আর না লাগলে তাক। তবে এখন আর কাঁদতে পারিনা, লজ্জা লাগে বা হয়ত লজ্জাটাই নেই। তাছারা চোখের জল মুছিয়ে কোলে টেনে নেবার মতও আর কেও নেই। যারা আছেন তারা সকলেই শুকনো পিড়িতের। থুথু দিয়ে ছাতু মাখার দল। হ্যাঁ, মা অবশ্য আছেন আজও। কিন্তু তার সামনে কাঁদলে তবেনা! তার শুশ্রূষা করতেই একজন লাগে, আশক্ত তার সামনে অনুভুতি লুকাতে হয়।
তাছারা পুরুষ মানুষকে নাকি কাঁদতে নেই। কিন্তু যদি সে পুরুষ হল ঠিকিই, কিন্তু যদি মানুষ না হয়? আমি আমি আমি- আমিটাই দামি। অন্ধকারে নিজের ছায়াও সাথ ছেরে দেয়, এটা বিশ্বাস নয় সত্য, নির্মম সত্য। নিখুঁত অভিনয় গুন করায়ত্ব যে করতে পারে, সম্ভবত সেই সবচেয়ে সুখী। সাথে কিন্তু চড়া ইমোশনাল সংলাপ আবশ্যিক। বাজার আজকে হিট চায়, মেলোড্রামা চাই, হোক না সে অন্ত:সার শূন্য। অন্তর কে দেখে! বহিঃরঙ্গ নিয়েই ব্যাবসা..... অনন্তসুখের খোঁজ।
প্রাণপ্রনে মানুষ না হবার চেষ্টা করেছি। অসভ্য ইতর অন্ধকারটা হতে দিলনা, ঠিক গাল বেয়ে টুপ করে বুকের উপরে একটা ফোঁটা। কে জানতো এই একটা ফোঁটার ওজন কয়েক টন! আর প্রতিটি বু্কই কত শত টন ভার বয়ে চলেছে হাসি মুখে সমাজের চোখে। অন্যে কি ভাববে সেই ভাবনাতে সেই অনুভুতিগুলো শুষ্ক বরফের মত পান্ডুর চোখের কোনে দোল খায়, নিস্তরঙ্গ অপলক অভিপ্রায়।
বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত যদি শ্বাস হয়, দ্বিতীয়টি অবশ্যই বিশ্বাস। যদিও এটা অনেকটা নখ বা চুলের মত। আপনা নিয়মেই বাড়ে, তাতে টান পরলে আঘাত লাগে, রক্তাক্তও হতে হয়। কিন্তু কেও মারা যায়না। তবে ঘা হয় বটে, দগদগে ঘা। সেই লোম বা নখ বা বিশ্বাস, স্বযত্নে একটিবার কেটে ফেললে সেই কর্তিত অংশটি অসার হয়ে পরে থাকে, আবর্জনাভূমে স্থান পাবার জন্য। তাই বিশ্বাস করতে হয়, ঠকতে হয়। ঠকতে ঠকতে একটিবার জেতার আনন্দ অসীম। কি পেলাম কি পেলাম হিসাবে ভুলি কি দিলাম।
সস্তা মানুষের কাছে ভরষা বা বিশ্বাস করতে নেই, এটা মহাপুরুষদের বানী। তবুও মানুষ বিশ্বাস করে কারন আমি বা আপনার মত সস্তা লোকেদের ভাগ্যে কি জ্যাক মা না বিল গেটস জুটবে? রোজ সকালে পিচুটিপরা ম্যাড়ম্যাড়ে চোখে একরাশ স্বপ্ন ফ্লোরাইডের ঝাঁঝে বেসিনের নল দিয়ে বয়ে চলে যায়, তবুও আশার শেষ কোথায়?
বিন্দু বিন্দু করে জমে চলা অবিশ্বাসের পুঁজগুলো গোটা শরীরে কর্কট রোগের বাঁসা বেঁধে ফেলে অজান্তে। হালকা চুলকানি তথা সুড়সুড়ি আপাত সুখ দিলেও পরবর্তীতে সেটাই মারণ ঘা এর কারন হয়ে দাঁড়ায়। তবুও মানুষ ভরষা বা বিশ্বাস করে। পাত্রে অপাত্রে।
মানুষের মনের দুটো দশা। একটা অধিকাংশই ব্যাক্তির নিজের দখলে, সেটার নাম সচেতন মন। অন্যটি সম্পূর্ন আমাদের প্রতক্ষ্য খবরদারির বাইরে, যেটার নাম অবচেতন মন। সচেতন মনের কাজগুলোর একটা প্রতিলিপি আমাদের মস্তিষ্ককোষে জমা হয়। ক্রম অনুশীলনের ফলে সেটার একটা ভাবনাগত ত্রিমাত্রিক রূপও আমাদের অন্তরস্থলে তৈরি হয়। ঠিক যে কারনে শিশু বয়সে আমরা রূপকথাককে সত্য ভাবি। বা অন্ধ ধর্ম বিশ্বাসীদের যেটা মূল হাতিয়ার।
এই রূপের চক্করেই যাবতীয় আগামীর বিশ্বাসে জন্ম নেয়। অবচেতন মন অন্যে অবলোকন বা প্রতক্ষ্য করতে পারেনা, তাই সামনের মানুষটিও বোঝেনা তার সামনের মানুষটির মনে ঠিক কি চলছে। কথা ও কাজের ফারাকের মূল কান্ডারিই হল অবচেতন মন।
এই অবচেতন মনই আমাদের ভবিষ্যই নিয়ন্ত্রন করে। আমাদের স্বপ্ন দেখায়। যা অধিকাংশ মানসিক সুখ বা অশান্তির কারন। ভিড় ট্রেনে কোন কিশোর বয়সের প্রেমিক প্রেমিকা যুগলকে দেখে আপনি সহসা আপনার সেই বয়েসে চলে যেতেই পারেন অবচেতন মনের হাত ধরে। এদিকে সচেতন মন জানে যে আপনি ট্রেনে বসে আছেন, আর গন্তব্য পর্যন্ত সময়টা এমন কিছু করেই কাটাতে হবে। তাই নিশ্চিন্তে নিজেকে অবচেতন মনের হাতে তুলে দিয়ে পরিতোষ লাভ করছেন।
এদিকে অবচেতন মন আপনার কিশোর বয়েসের প্রেমিক বা প্রেমিকা বা প্রেমিকা দল দের নিয়ে ভাবনাতে বিভোর মানে শরীর ট্রেনে থাকলেও আসল আপনি টাইমমেসিনে চড়ে অতীতে অবস্থান করছেন। এ এক অদ্ভুত ধাঁধা। কোনো আপেক্ষিত তত্বই একে বিশ্লেষন করতে অক্ষম।
কেন এমনটা হয়? আমরা তো জানি এগুলো অলীক, তার পরেও কিসের সুখ?
জানতে হলে পড়ুন আমার লেখা সম্পূর্ন ছোট প্রবন্ধ "মন ও বিশ্বাস", একমাত্র অকপট সাহিত্য পত্রিকাতে।আসছে আগামী কবিপক্ষে।

ছবিঃ ইন্টারনেট


Friday, 5 May 2017

।। যতীন ।।

বড়ে আচ্ছে লাগতে হ্যায়...
না, আমার বা আপনার মোটেই তেমনটা লাগছে না এই ছালওঠা ও ঘামে স্নান করা গরমে। তবে কারো কারো লাগছে।
"যে করে খনিতে শ্রম
জেনো তাকে ডরে যম......"
আর সেই খনিজের যিনি মালিক হন, তিনি? তার অবস্থাটা কি? 

তাকে যমের বাবা মানে স্বয়ং ৫৬ ইঞ্চিও ডরে।
আসলে বখরা আর কি!! গুজ্জু গুজ্জু ভাই ভাই, লুটে খাও যা পাই।

ভণিতা শেষ, কাজের কথায় আসি, ভারতের মুকুটে নতুন পালক সংযোজন হল। কিংফিসারের মালিকের 'পার্টনার ফর গুড টাইম' এ সংযজিত হল নতুন নাম যতীন মেহতা।
যতীন, এ যতীন অবশ্য সেই মহেশ মান্নার চামচা যতীন নয়। ইনি হলেন গিয়ে জাতীয় বেয়াই। ইয়ে মানে মন কি বাতের থুড়ি গৌতম আদানীর বেয়াই। হিরের ব্যাবসাদার গুজরাতি। অবশ্য অন্যায় অবচার ফুল দমে।
বর্তমানে ইনি সেই ক্রিকেট নষ্টালজিয়ার দেশ ওয়েষ্ট ইন্ডিজের ( ক্যারাবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ) সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস নামক দ্বীপের বাসিন্দা। যেমনটি বিজয় মালিয়া লন্ডনের।
তবে যাওয়ার আগে, হ্যাঁ... মিরাক্কেল স্টাইলে...
যাবার আগে...

এদেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্কে কমপক্ষে ৭ হাজার কোটি টাকা লোন নিয়েছিলেন। অতঃপর... স্বস্ত্রীক চম্পট ( এটা অনুমান, অন্যের স্ত্রী যে নিয়ে যাননি, সেই প্রমান জোরালো নয়)
এর আগেও অবশ্য পাঞ্জাব ন্যাশানাল ব্যাঙ্ক, বিজয়া ব্যাঙ্ক ও সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ককে বেশ কয়েক হাজার কোটি টাকা প্রতারণা করে হাত পাকিয়েছিল। সেখান থেকে দেশপ্রেমিদের নেকনজরে সম্ভবত।
আচ্ছেদিনের স্বপ্নদেখানো কারবারিরা প্রকাশ্যে গরু আর সীমান্তের ছায়া যুদ্ধ নিয়ে ব্যাস্ত। আর গোপনে অস্ত্র কেনাবেচার বখরা। সাথে মনকি বাত, এদিকে হাইজ্যাক পিসিও নিজের প্রতিভা রাখছেন
নোট বাতিলে সন্ত্রাসবাদ শেষ হয়ে যাবার কথা ছিল, দুদিন আগেও পাকিস্থানি সেনা দুজন ভারতীয় বীর জওয়ানের মুন্ডু কেটেছে। কথাছিল দেশের অর্থনীতি পুঁই শাকের মত বাড়বে লকলকিয়ে, আজ সম্ভবত সেই পুঁই চারা বনসাই এর মত বনপুঁই হয়ে গেছে।মাঝখান থেকে আমি আপনি হয়রান হলাম। দেশপ্রেমিক গোসন্তানেরা অবশ্য বাঁদরের লেজ লাগাতে ব্যাস্ত, সাথে অস্ত্র নিয়ে নিকৃষ্ট মুসলমানিত্বের মহরমকে নকল।
ওয়াক থু...
এই সাত হাজার কোটির রিকভারি কিসে হবে বন্ধুরা??
৫৬ ইঞ্চি নতুন কি গল্প ফাঁদে সেই প্রতিক্ষায়, কারন ওই দ্বীপ রাষ্ট্রের সাথে ভারতের বন্দি বিনিময় চুক্তি নেই। অতএব হোলবোল।