শিশুকালে মনের
খেয়ালে আকাশ পানে ঢিল ছুড়তাম, রাগ হলেই। তখন খিস্তি নামক রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে
মুক্ত ছিলাম। সেই সময়ের আশা আকাঙ্ক্ষা গুলোও ছিল বড্ড শিশুসুলভ। সর্বোপরি
কোনোকিছুতে অসফল হলেই সবচেয়ে মজবুত ও কার্যকরী হাতিয়ার প্রস্তুত থাকত, যেটার মোক্ষম প্রয়োগ হত, - "কান্না"।
যেটা প্রায় বিগত
২২ বছরের অনভ্যাসে প্রায় ভুলতে বসেছি। তবে সেই অলীকে বিশ্বাসটা আজও রয়ে গেছে। আজও
ঢিল ছুরি, বিশ্বাসের, ভরষার। লাগলে তুক আর না লাগলে তাক। তবে
এখন আর কাঁদতে পারিনা, লজ্জা লাগে বা হয়ত লজ্জাটাই নেই।
তাছারা চোখের জল মুছিয়ে কোলে টেনে নেবার মতও আর কেও নেই। যারা আছেন তারা সকলেই
শুকনো পিড়িতের। থুথু দিয়ে ছাতু মাখার দল। হ্যাঁ, মা অবশ্য
আছেন আজও। কিন্তু তার সামনে কাঁদলে তবেনা! তার শুশ্রূষা করতেই একজন লাগে, আশক্ত তার সামনে অনুভুতি লুকাতে হয়।
তাছারা পুরুষ
মানুষকে নাকি কাঁদতে নেই। কিন্তু যদি সে পুরুষ হল ঠিকিই, কিন্তু যদি মানুষ না
হয়? আমি আমি আমি- আমিটাই দামি। অন্ধকারে নিজের ছায়াও সাথ
ছেরে দেয়, এটা বিশ্বাস নয় সত্য, নির্মম
সত্য। নিখুঁত অভিনয় গুন করায়ত্ব যে করতে পারে, সম্ভবত সেই
সবচেয়ে সুখী। সাথে কিন্তু চড়া ইমোশনাল সংলাপ আবশ্যিক। বাজার আজকে হিট চায়, মেলোড্রামা চাই, হোক না সে অন্ত:সার শূন্য। অন্তর কে
দেখে! বহিঃরঙ্গ নিয়েই ব্যাবসা..... অনন্তসুখের খোঁজ।
প্রাণপ্রনে মানুষ
না হবার চেষ্টা করেছি। অসভ্য ইতর অন্ধকারটা হতে দিলনা, ঠিক গাল বেয়ে টুপ
করে বুকের উপরে একটা ফোঁটা। কে জানতো এই একটা ফোঁটার ওজন কয়েক টন! আর প্রতিটি
বু্কই কত শত টন ভার বয়ে চলেছে হাসি মুখে সমাজের চোখে। অন্যে কি ভাববে সেই ভাবনাতে
সেই অনুভুতিগুলো শুষ্ক বরফের মত পান্ডুর চোখের কোনে দোল খায়, নিস্তরঙ্গ অপলক অভিপ্রায়।
বেঁচে থাকার
প্রথম শর্ত যদি শ্বাস হয়,
দ্বিতীয়টি অবশ্যই বিশ্বাস। যদিও এটা অনেকটা নখ বা চুলের মত। আপনা
নিয়মেই বাড়ে, তাতে টান পরলে আঘাত লাগে, রক্তাক্তও হতে হয়। কিন্তু কেও মারা যায়না। তবে ঘা হয় বটে, দগদগে ঘা। সেই লোম বা নখ বা বিশ্বাস, স্বযত্নে
একটিবার কেটে ফেললে সেই কর্তিত অংশটি অসার হয়ে পরে থাকে, আবর্জনাভূমে
স্থান পাবার জন্য। তাই বিশ্বাস করতে হয়, ঠকতে হয়। ঠকতে ঠকতে
একটিবার জেতার আনন্দ অসীম। কি পেলাম কি পেলাম হিসাবে ভুলি কি দিলাম।
সস্তা মানুষের
কাছে ভরষা বা বিশ্বাস করতে নেই, এটা মহাপুরুষদের বানী। তবুও মানুষ বিশ্বাস করে
কারন আমি বা আপনার মত সস্তা লোকেদের ভাগ্যে কি জ্যাক মা না বিল গেটস জুটবে?
রোজ সকালে পিচুটিপরা ম্যাড়ম্যাড়ে চোখে একরাশ স্বপ্ন ফ্লোরাইডের
ঝাঁঝে বেসিনের নল দিয়ে বয়ে চলে যায়, তবুও আশার শেষ কোথায়?
বিন্দু বিন্দু
করে জমে চলা অবিশ্বাসের পুঁজগুলো গোটা শরীরে কর্কট রোগের বাঁসা বেঁধে ফেলে
অজান্তে। হালকা চুলকানি তথা সুড়সুড়ি আপাত সুখ দিলেও পরবর্তীতে সেটাই মারণ ঘা এর
কারন হয়ে দাঁড়ায়। তবুও মানুষ ভরষা বা বিশ্বাস করে। পাত্রে অপাত্রে।
মানুষের মনের
দুটো দশা। একটা অধিকাংশই ব্যাক্তির নিজের দখলে, সেটার নাম সচেতন মন। অন্যটি সম্পূর্ন
আমাদের প্রতক্ষ্য খবরদারির বাইরে, যেটার নাম অবচেতন মন।
সচেতন মনের কাজগুলোর একটা প্রতিলিপি আমাদের মস্তিষ্ককোষে জমা হয়। ক্রম অনুশীলনের
ফলে সেটার একটা ভাবনাগত ত্রিমাত্রিক রূপও আমাদের অন্তরস্থলে তৈরি হয়। ঠিক যে কারনে
শিশু বয়সে আমরা রূপকথাককে সত্য ভাবি। বা অন্ধ ধর্ম বিশ্বাসীদের যেটা মূল হাতিয়ার।
এই রূপের চক্করেই
যাবতীয় আগামীর বিশ্বাসে জন্ম নেয়। অবচেতন মন অন্যে অবলোকন বা প্রতক্ষ্য করতে
পারেনা, তাই
সামনের মানুষটিও বোঝেনা তার সামনের মানুষটির মনে ঠিক কি চলছে। কথা ও কাজের ফারাকের
মূল কান্ডারিই হল অবচেতন মন।
এই অবচেতন মনই
আমাদের ভবিষ্যই নিয়ন্ত্রন করে। আমাদের স্বপ্ন দেখায়। যা অধিকাংশ মানসিক সুখ বা
অশান্তির কারন। ভিড় ট্রেনে কোন কিশোর বয়সের প্রেমিক প্রেমিকা যুগলকে দেখে আপনি
সহসা আপনার সেই বয়েসে চলে যেতেই পারেন অবচেতন মনের হাত ধরে। এদিকে সচেতন মন জানে
যে আপনি ট্রেনে বসে আছেন,
আর গন্তব্য পর্যন্ত সময়টা এমন কিছু করেই কাটাতে হবে। তাই নিশ্চিন্তে
নিজেকে অবচেতন মনের হাতে তুলে দিয়ে পরিতোষ লাভ করছেন।
এদিকে অবচেতন মন
আপনার কিশোর বয়েসের প্রেমিক বা প্রেমিকা বা প্রেমিকা দল দের নিয়ে ভাবনাতে বিভোর
মানে শরীর ট্রেনে থাকলেও আসল আপনি টাইমমেসিনে চড়ে অতীতে অবস্থান করছেন। এ এক
অদ্ভুত ধাঁধা। কোনো আপেক্ষিত তত্বই একে বিশ্লেষন করতে অক্ষম।
কেন এমনটা হয়? আমরা তো জানি এগুলো
অলীক, তার পরেও কিসের সুখ?
জানতে হলে পড়ুন
আমার লেখা সম্পূর্ন ছোট প্রবন্ধ "মন ও বিশ্বাস", একমাত্র অকপট
সাহিত্য পত্রিকাতে।আসছে আগামী
কবিপক্ষে।
ছবিঃ ইন্টারনেট
No comments:
Post a Comment